দাঁত ব্রাশ শেষ করেও বাথরুমের আয়নার সামনে বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল আবির। তারপর পুরনো অভ্যাসমতো মনে মনে বলল,‘শুভ জন্মদিন।’ এই অভ্যাসটা তার সেই ছোট্টবেলার যখন সে ক্লাস ওয়ান কিংবা টু’তে পড়ে তখন থেকেই। তখন একদিন বাবা বলেছিলেন,‘বুঝলি আবির,নিজের জন্মদিনে সবার আগে নিজেকে উইশ করার মজাই আলাদা।’ ব্যাপারটা আবির তখন বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারে এবং বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারে । কারণ তার জন্মদিনটা শুধু একজন মানুষই এখন মনে রাখে আর তিনি হচ্ছেন মা। আর বাবা নামীদামী ব্যবসায়ী হওয়ার চাপে এইসব ছোটখাটো বিষয়গুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। আর ঝেড়ে না ফেললেও একদিন ঠিকই বড় বড় বিষয়গুলোর আড়ালে এইসব ছোটখাট বিষয়গুলো হয়তো ঢাকা পড়ে যেত !
প্রায় দুই বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও বন্ধুবান্ধব খুব একটা হয়নি তার চাপা স্বভাবের জন্য। প্রতিদিনের মতো আজও সে ক্লাসে গেল। ক্লাস শেষে করিডোর ধরে হাঁটার সময় দেখল অর্পিতা এদিকেই আসছে। অর্পিতার সাথে তার প্রথম দেখা হয়েছিল ভর্তি হবার দিনে। সেদিন মেয়েটি অনেক গল্প জমানোর চেষ্টা করেছিল তবে বেশি একটা সুবিধা করতে পারেনি। কারণ আবির সব প্রশ্নের জবাব হ্যাঁ কিংবা নাতে দিয়েছে আর সম্ভব হলে মাথা নেড়ে বিনা বাক্য ব্যয়ে। তবে সেদিন অর্পিতার বেশিরভাগ প্রশ্নই ছিল এক কথায় জবাব দেয়ার মতো ।
যেমন,তুমি আবির ,তাই না ?
জবাবে আবির বলল,হু ।
আজ ভর্তি হয়েছ?
এবারও আবির বলল,হু ।
থাকবে কি হলে ?
এবার আবির কোন কথা না বলে উপরে নিচে মাথা নাড়ল ।
এভাবে একতরফা বেশিক্ষণ আলাপ চালানো সবার জন্যই বেশ কষ্টকর। তাই অর্পিতা সেদিন ওখানেই থামতে বাধ্য হয়েছিল ।
তবুও হাল ছাড়েনি এই মেয়ে। আবিরের সেল ফোনে কল দিয়েছে,নিজের জন্মদিনে আবিরকে নিমন্ত্রণ করেছে। তবে এতোকিছুর পরও আবির নির্বিকার। এরিমধ্যে এক সন্ধ্যায় সে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বেশ আয়েশ করে চা খাচ্ছে। এমনসময় তার পাশে একটা রিক্সা থামতেই দেখে অর্পিতা রিক্সা থেকে নামছে। আর আবিরও চায়ের টাকাটা না দিয়েই ওখান থেকে সটকে পড়ল একবার পিছন ফিরে তাকাল না পর্যন্ত। কিছুক্ষণ পর চায়ের দাম দিতে এসে দেখে তা দেয়া হয়ে গেছে।
অর্পিতার সাথে চোখাচোখি হতেই আবির সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলল। তবে আজ সে বেশ বেকায়দায় পড়েছে । এখান থেকে উল্টো দিকে চলেও যেতে পারছে না ব্যাপারটা খুব খারাপ দেখায় বলে । মনে মনে ভাবছে আজ তাকে কিছু একটা বলতেই হবে । তা না হলে মেয়েটা তাকে অভদ্র ভাববে। এটা তাকে কিছুতেই ভাবতে দেয়া যাবে না । তাইতো কিছু একটা বলার পূর্বপ্রস্তুতিও নেয়া শুরু করেছে। ঠিক তখনি আবিরের রুমমেট রাসেল দেবদূতের মতো উদ্ধারকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হলো। তাইতো একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে সেই দেবদূতের সাথে সে উল্টোদিকে হাঁটা দিল ।
এরপর সারাদিন প্রায় তার রুমেই কাটল। বিকেলে গেল টিউশনিতে । কিন্তু তার ছাত্রী রুমকির কোন হদিস নেই। তারও কিছুই করার নেই তাই সে বসে বসে রুমকিদের বিলাসবহুল ড্রয়িংরুমের সাজসজ্জা দেখছে ।
রুমকি এসে বলল,‘ভাইয়া আমি আজ পড়ব না,বাইরে ঘুরতে যাব।’
রুমকি শুধু তার মায়ের সামনে আবিরকে স্যার ডাকে আর বাকি সময় ভাইয়া বলে।
আবির ওর দিকে তাকাতেই রুমকি তার ছোট্ট চুলের ঝুটি দুটি দুলিয়ে বলল,‘কারণ আজ আমার জন্মদিন’।
আবির কথাটা শুনে বেশ লজ্জা পেল । কারণ এর আগে রুমকি বেশ কয়েকবার কথাটা তাকে বলেছিল আর সে ভুলে গেছে। তবে ভুলে গেছে ইচ্ছে করেই।
রুমকির মা এলেন কেক আর মিষ্টি নিয়ে ।
বললেন,আসলে আবির তোমাকে ফোন করে বলা উচিত ছিল এখন না এসে রাতে আসতে । কিন্তু দায়িত্বটা ছিল রুমকির বাবার উপর, তাইতো বুঝতেই পারছ...
আবির বলল,না সমস্যা নেই ।
রাতে পার্টি আছে আসবে কিন্তু ।
চেষ্টা করব ।
চেষ্টা করার কি আছে ? আসতে হবে । তা না হলে তোমার ছাত্রী মন খারাপ করবে ।
ঠিক আছে। আমি এখন উঠি ।
আমরাও বের হব । চল একসাথেই বের হই । তোমাকে নামিয়ে দিয়ে যাব ।
রুমকি বেশ সেজেগুজে বাবা মায়ের সাথে বের হচ্ছে। আবিরও তাদের সাথে হাঁটছে। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পা পিছলে পড়ে যেতে নিতেই রুমকির বাবা সাথে সাথে মেয়েকে ধরে ফেলে বললেন,‘ব্যথা পাওনি তো মা ?’
আবির খেয়াল করল ছোট্ট একটা বাক্য তবুও কী গভীর মমতা আর ভালোবাসার স্পর্শ মিশে আছে তাতে। সে ছোট্টবেলায় পড়ে গিয়ে কত ব্যথা পেয়েছে- তখন রুমকির বাবার মতো তার বাবা তাকে হাত ধরে তুলতে আসেনি কিংবা কখনো গভীর মমতা আর দরদ নিয়ে জিজ্ঞেস করেনি,‘ব্যথা পাওনি তো বাবা ?’ আবির যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ে তখন ওর বাবা মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তারপর বাবা আবার বিয়ে করেছেন। সেখানে আবিরের দুটো বোনও রয়েছে। থাকেন এই ঢাকা শহরের এক অভিজাত এলাকায়। আবির এর আগে বেশ কয়েকবার ঐ বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েও থেকেছে। একদিন দারোয়ান তার ওখানে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করায় সে বলেছিল বাড়িটা খুব সুন্দর, তাই দেখতে ভাল লাগে।
তখন দারোয়ান বেশ সন্দেহ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলেছিল,চেহারা দেখে তো বেশ ভাল ঘরের ছেলেই মনে হয়,তবে এইসব ধান্দাবাজি শুরু করছ কবে থেইক্যা ? অসুবিধা নাই,র্যাবের হাতে তুইল্যা দিলে প্যাঁদানি খাইয়া সব ধান্দাবাজি বাইর হইয়্যা যাইব এক নিমেষেই।
হঠাৎ চিন্তায় ছেদ পরে রুমকির বাবার কথায়,আবির গাড়িতে উঠো,কি এতো ভাবছ ?
মন্তব্য
অসাধারণ ++++
অপেক্ষায় রইলাম......
ধন্যবাদ বন্দনা ।
ঝুলাঝুলি বন্ধ , পরের পর্ব তাড়াতাড়িই চলে আসবে ।
শুরুটা ভালো হয়েছে, বেশীদিন ঝুলিয়ে রাখবেন না যেনো পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ধন্যবাদ বন্দনা ।
ঝুলাঝুলি বন্ধ , পরের পর্ব তাড়াতাড়িই চলে আসবে ।
কিছু জায়গা কী ঝুলে গেছে? পড়তে খারাপ লাগেনি
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
ঝুলতে শুরু করলো না-কি ?
ভালো লাগল। তবে কিছু কিছু জায়গায় সত্যিই একটু ঝুলে গেছে। আশা করি পরের পর্বে মেরামত হয়ে যাবে।
ডাকঘর | ছবিঘর
তাপস দা ধন্যবাদ আপনাকে ।
আশাকরি পরের পর্বে আরেকটু সচেতন হব।
তাপস দা ধন্যবাদ আপনাকে ।
আশাকরি পরের পর্বে আরেকটু সচেতন হব।
একটু পাকনামি করি?...আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছিঃ
লেখাটায় 'গতি'র অনুপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। আশা করছি পরের পর্বে ঘাটতিটুকু পুষিয়ে দেবেন। এম্নিতে কিন্তু আপনি চমৎকার গুছিয়ে লেখেন। আমার মত উড়াধুড়া টাইপ না আপনি; এই জন্য বিশাল একটা Hug পাঠিয়ে দিলাম
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
উচ্ছলা ,আমি কিন্তু আপনার লেখার শক্ত টাইপের ভক্ত ।
মন্তব্যেও জন্য ধন্যবাদ । ব্যাপারটা মাথায় থাকবে ।
ওফ্; মাত্র জমে উঠেছিল। আমিও প্রবল কৌতূহল নিয়ে পরের লাইনের জন্য স্ক্রল করতে গিয়ে ধাক্কা খেলাম। তাড়াতাড়ি বাকিটা পোস্ট করুন।
ধাক্কাটা একটু সামলে উঠেন !
পরের পর্ব নিয়ে আসছি ।
আরি, ম্রাত্মক মজার গল্প তো ! তাপ্পর তাপ্পর ?
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ধন্যবাদ দিদি।
তারপর আসছে .....
শীঘ্রই......
ধন্যবাদ আশাদি।
তাপ্পর আসছে ...খুব তাড়াতাড়ি...
তাপ্পর??
তাপ্পর??
চরম উদাস ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাল লাগলো... ..মেয়েদের ব্যপারে আমার অতীত দেখতে পাইতেছি...
কি অতীত দেখতে পেলেন ?
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম
আরেকটু অপেক্ষা করেন । আসতেছে
রিমাপু ,লেখা ভালু পাইছি । পরের পর্ব কই ?
নতুন মন্তব্য করুন