আবির বলল,আপনারা যান,আমি এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাব,ওর বাসা কাছেই ।
রুমকিরা চলে যাবার পর আবার সে ফিরে আসে তার চিন্তার ভুবনে । সেদিনের পর আর ঐ বাড়ির সামনে যায়নি সে। ভয় ছিল,বাবার অনুগত দারোয়ান যদি বাবাকে এই ঘটনা বলে তাহলে তা থানা পুলিশ পর্যন্ত চলে যাওয়াটা অসম্ভব কিছু না। এটা তো আর নাটক সিনেমা না যে এতোবছর পর বাবা ছেলেকে দেখেই চিনতে পারবেন আর নিজের ভুলের জন্যে অনুতপ্ত হবেন। তার বদলে উঠতি কোন চাঁদাবাজ কিংবা সন্ত্রাসীকে আইনের হাতে সোপর্দ করে পুর®কৃতও হতে পারেন । আর এই ঘটনা মায়ের কানে গেলে মা মুখে কিছুই বলবেন না কিন্তু তার মনটা ভেঙ্গে যাবে সেটা আবিরের অজানা নয়। একমাত্র ছেলের মুখের দিকে তাকিয়েই তিনি তার জীবন সংগ্রামে টিকে আছেন ।
মাঝে মাঝে আবিরের খুব ইচ্ছে করে বাবা মাকে জিজ্ঞেস করতে কী অপরাধ ছিল তার ? কেন তাদের নিজেদের ভুলের জন্যে তাদের সন্তানকে কষ্ট পেতে হচ্ছে ? কেন সে কাউকে বলতে পারে না সে একটা “ব্রোকেন ফ্যামিলির ছেলে।”
এসব ভাবতে গেলেই ওর বুকের ভিতর প্রচন্ড যন্ত্রনা হয় । তখন সে হাতড়ে বেড়ায় সুখের কোন স্মৃতিকে । ছোট্টবেলার একটা ঘটনা ওর বড় বেশি মনে পড়ে । সুখের স্মৃতির মজুদ খুব কম বলেই হয়তো এটাই বরাবর মনে পড়ে ।
বাবা সেই সময় ওদের সাথেই থাকতেন ময়মনসিংহে । এক বিকেলে ওরা বেড়াতে গিয়েছিল ব্রহ্মপুত্রের তীরের পার্কটাতে। হঠাৎ ওর খুব শখ হলো নৌকা করে নদী পার হবার । কিন্তু তাতে বাধ সাধল মা। আবির বাধ্য হয়ে বাবার শরনাপন্ন হলো।
বাবাকে বলতেই বাবা বললেন,ছেলেটা এতো করে বলছে চলো যাই ।
মা তখন কপট রাগী স্বরে বললেন,তোমার জন্যই ছেলেটা মাথায় ওঠেছে ।
বাবা বললেন,মাথায় উঠল কোথায় ? সবেমাত্রতো নৌকায় ওঠেছে ।
মা বললেন,তুমি রসিকতা ছাড়া কোন কথা বলতে পারো না ?
বাবা বললেন,শোনো,অফিসের বস্রা যেমন বেরসিক পিএ পছন্দ করে না ঠিক মেয়েরাও তেমনি বেরসিক স্বামী পছন্দ করে না । তাই ইচ্ছে করেই মাঝে মাঝে রসিকতা করার চেষ্টা করি । যেন তুমি আমাকে অযোগ্য মনে করে তাড়িয়ে না দাও ।
মা বললেন,তোমার তাই মনে হয় ?
বাবা বললেন,বাস্তবতা তো অন্তত তাই বলে । তাছাড়া আমি এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই করতে পারিনি আর তুমি অনেক ভালো চাকুরী কর । এই ভালোবাসা কতদিন থাকবে তোমার কে জানে ।
মা বললেন,আপাতত এইসব নীতি কথা বাদ দাও । মানুষের জীবনে অবস্থানতো স্থির কিছু না । সময়ের সাথে সাথে তা পরিবর্তিত হবে এটাই স্বাভাবিক ।
বাবা বললেন,ঠিক আছে তোমার কথা মেনে নিলাম ।
তখন ছিল শরৎকাল। নদীর তীর জুড়ে ফুটে ছিল অসংখ্য সাদা কাশফুল আর আকাশে ছিল সাদা মেঘমালা। এই দেখে আবির খুশিতে আত্মহারা। নৌকা তীরে ভিড়ার সাথে সাথেই লাফিয়ে নামল সে। তারপর দৌড়িয়ে উঠতে লাগল খাড়া ঢাল বেয়ে। আর উঠেই সে সোজা ছুটতে শুরু করল কাশ বনের দিকে।
সাথে সাথেই মায়ের উৎকণ্ঠিত চিৎকার,আরে কি করো তুমি,ছেলেটাকে ধর। পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙ্গবে তো ।
বাবা বললেন,আহা,ওকে ছুটতে দাও না । মুক্ত বাতাসে একটু ঘুরাঘুরি করুক ।
মা বললেন,এমনিতেই আবির খুব দূরন্ত ছেলে । আর তুমি যদি ওকে সাপোর্ট কর তাহলে তো কথাই নেই ।
বাবা বললেন,তোমার মনে আছে আমাদের বিয়ের অল্প কিছুদিন পর আমরা এখানে এসেছিলাম ।
মা বললেন,এটা কি ভুলে যাওয়ার মতো কোন ঘটনা ?
বাবা বললেন,সেদিন কিন্তু তোমারও উচ্ছ্বাস কম ছিল না ।
বাবার কথা শুনে মা লাজুক ভাবে হাসলেন ।
আবির বেশ খানিকটা দূরে চলে গেছে। বাবা পিছন থেকে আবিরকে থামতে বললেন কিন্তু সে থামল না বরং আরো জোরে দৌড়াতে শুরু করল। উপায়ন্তর না দেখে বাবাও ছুটলেন ছেলের পিছন পিছন। আবির দৌড়াচ্ছে আর হাসছে তার পিছনে বাবাও দৌড়াচ্ছেন। কিন্তু দূরন্ত ছেলেটাকে তিনি কিছুতেই ধরতে পারছেন না। ছেলের কাছে দৌড়ে পরাজিত হয়ে তিনি মোটেও ক্লান্ত হচ্ছেন না কিংবা রেগেও যাচ্ছেন না । উল্টো তার সারা মুখে ছড়িয়ে পড়েছে তৃপ্তির হাসি । বাবা আর ছেলের সেই হাসির শব্দ সেদিন ব্রহ্মপুত্রের তীর ছেড়ে আরও বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। আর পৃথিবীর সেই সুন্দরতম দৃশ্যটার দিকে তাকিয়ে ছিলেন মিসেস আশরাফ,আবিরের মা ।
নস্টাল্জিয়া আচ্ছন্ন করে ফেলে আবিরকে। কপালের ঘাম মুছতে মুছতে আকাশের দিকে তাকায় সে । আজও আকাশে অসংখ্য সাদা মেঘের ভেলা। সেদিনের সেই আকাশ আর আজকের এই আকাশের অনেক মিল। কিন্তু মিল নেই তার জীবনের। প্রতিটি সন্তানের মতো সেও চেয়েছিল বাবা মায়ের মাঝখানে থেকে সুখী হতে। আর এ চাওয়াটা অমূলক কিংবা অসম্ভব না হলেও পুরণ হয়নি।
হলে ফিরতে ইচ্ছে করছে না তার। ফুটপাত ধরে হাঁটছে। ফুটপাতে বেশ কিছু পরিবার ঘুমানোর আয়োজন করছে । আবির ওদের পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার হাঁটতে শুরু করল। অবশেষে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত আবির যখন ফজজুল হক হলের সামনে এল তখন রাত ১১টা।
হলের গেইটে রাসেলের সাথে দেখা হতেই তার উৎকন্ঠিত স্বর শোনা গেল,কি-রে,কোথায় ছিলি সারাদিন?
আবির বলল,এই তো একটু কাজ ছিল ।
রাসেল বলল,কি এমন কাজ যে মোবাইলটা পর্যন্ত বন্ধ রেখেছিস?
আবির বলল,চার্জ ছিল না ।
রাসেল বলল,ফোনে কারো সাথে কথাও তো বলিস না ,চার্জ শেষ হয় কিভাবে ? ঠিক আছে রুমে যা আমি একটু চা খেতে যাব ।
আবির রুমে না গিয়ে রাসেলের সাথে আবার বের হলো। সারাদিন সে যে কিছুই খায়নি এতক্ষণে তার মনে পড়ল । তবে চা খেয়ে খিদেটা একদম মরে গেছে।
রুমে ঢুকতেই রাসেল র্যাপিং পেপারে মোড়ানো একটা প্যাকেট ওর হাতে দিয়ে বলল,এটা অর্পিতা তোকে দিয়েছে। তোর সাথে দেখা করার জন্য রাত ৯টা পর্যন্ত বসে ছিল।
আবির বলল,এটা কী ?
রাসেল বলল,তা আমি কী করে বলব বল ? এটা খোলার অধিকারতো আমার ছিল না। তাই অতিকষ্টে নিজের কৌতুহলকে মাটিচাপা দিতে বাধ্য হয়েছি।
একটু থেমে আবার বলল,আর তুই তো ব্যাটা একটা আস্ত ফাজিল,আমাকে উইশ পর্যন্ত করতে দিলি না ! ঠিক আছে ,হাতমুখ ধুয়ে আয় একসাথে খাব ।
আবির বলল,তুই এখনো খাসনি? তোর না ৯ টা বাজলেই খুব ক্ষুধা লাগে !
জবাবে রাসেল কিছু না বলে শুধু হাসল ।
খুব ছোট একটা ঘটনা তবুও আবিরের খুশিতে প্রায় চোখে পানি চলে এসেছে ।
আবির ধীরে ধীরে প্যাকেটটা খুলছে। সে জীবনে কারো কাছ থেকে কোন উপহার পেয়েছিল কি-না তা মনে পড়ে না। তাইতো গভীর মনোযোগ আর যতœ নিয়ে সে প্যাকেটটা খুলল। নীল রংয়ের একটা শার্ট দেখে খুবই অবাক হলো। কারণ এই রংটা তার খুব পছন্দের। আর তার পছন্দের কোন জিনিস সে কারো কাছ থেকে উপহার পেতে পারে তাও আবার এমন কারো কাছ থেকে যাকে সে কখনো বলেনি এটা তার প্রিয় রং ! এটা কিভাবে সম্ভব ?
মন্তব্য
ভালো লাগল। তবে শেষ হয়ে গেলো নাকি? আবীরর এর সাথে অর্পিতার ভালোবাসা একটু বিস্তারিত করুন। প্রেমের এই সেতুবন্ধ পড়তে ভালোই লাগে...
ডাকঘর | ছবিঘর
গল্পটা অনেক দিন আগে লিখেছিলাম । এখন আপনার কথায় তো চিন্তায় পড়ে গেলাম । দেখি প্রেমের সতেুবন্ধনটা আরকেটু বাড়ানো যায় ক-িনা ।
অসংখ্য ধন্যবাদ তাপস দা ।
শেষটা খুবই ভালো লাগল । আবির আর অর্পিতার প্রেমটা আরেকটু দেখানো যায় না ? মানে আরেকটা পর্ব যোগ কারা যায় কি ?
শুভ কামনা আপনার জন্য ।
এবং আপনার লেখালেখির জন্যও ।
ধন্যবাদ রাতুল ।
গল্পটা আমি এখানেই শেষ করেছিলাম ।
এখন আপনারা তো আমাকে চিন্তায় ফেলে দিলেন ।
একটা কথা বলতে চাই
আপনার গল্প লেখার স্টাইল অনেক সুন্দর প্লাস বিষয় নির্বাচনও যথেষ্ট ভালো ।
তবে আপনাকে প্রতিবাদী মূর্তিতেই যেন বেশি মানায় । আপনার
‘বিয়ে করা ,বিয়ে বসা এবং ......’
‘ আমি কী অবরোধবাসিনী ?’
এই টাইপের আরও কিছু পোস্ট দিন না । আবারও ব্লগ তোলপাড় হোক ।
ও আচ্ছা ,এই তাহলে আপনার মনে ।
ব্লগ তোলপাড় করতে চাইছেন আমাকে দিয়ে তখন আমার অবস্থা কি হবে ?
সমস্যা নেই । এরকম আরও কিছু পোস্ট দিব অল্পদিনের মধ্যেই ।
আমি ও রাতুল ভাইয়ার সাথে একমত ।
‘বয়িে করা ,বয়িে বসা এবং ......’অচেনা পথিক
‘ আমি কী অবরোধবাসনিী ?’
এই টাইপের আরও একটা লেখা খুব তাড়াতাড়িই যেন পাই । ঠান্ডার মধ্যে একটু পরিবেশটা গরম হবে তাহলে ।
ডাক্তাররা তো আবার খুব ব্যস্ত থাকে । রিমাপু ও খুব ব্যস্ত না-কি হাসবেন্ড, বাচ্চাকাচ্চা আর রোগী নিয়ে ?
আপনি আর রাতুল এই দুজনে মিলে আমাকে বিপদে ফেলার ধান্ধায় আছেন দেখছি ।
দেখি কি করা যায় ।
আর হ্যাঁ আমি ব্যস্ত শুধু রোগী নিয়েই বাচ্চাকাচ্চা আর বাচ্চাকাচ্চার বাপ ছাড়াই ।
পরের পর্ব আছে নাকি এখানেই সমাপ্তি?
এখানেই সমাপ্তি হয়তো ।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ অনার্য সঙ্গীত ।
ও মা কি বলে! শেষ নাকি?! সে কি?!!...কেবল পেহলা পেহলা প্রেম শুরু হলো...
সুন্দর ঝরঝরে ভাষায় লেখা গল্পটি ভাল লেগেছে, রিমা
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
উচ্ছলা ,প্রেমের গল্প আমি বেশিদূর নিয়ে যেতে পারি না । তাইতো পেহেলা পেহেলা প্রেমেই সমাপ্তি টানতে বাধ্য হলাম ।
এতো ভালো ভালো কথার জন্য কি আর দিব
অপেক্ষায় থাক্লাম.........।।বাকিটুকুর জন্য
কিন্তু গল্পতো শেষ !! কি করি এখন
facebook
ধইন্যা দিয়ে রান্নাবান্না করে উদ্যমী হউন এবং সারা পৃথিবী চষে বেড়ান ।
আমিও তাপস দার সাথে একমত। এখানেই সমাপ্তি চাই না। আপু প্লিজ। ভালো লেগেছে খুউউউব
আমি নিজেই তো বিপদে পড়ে গেলাম । কি যে করি এখন....
বিপদ ভাবলেই বিপদ । পাঠকের আবেগ বলে কথা । আপনি বেশ ভাল ভাবেই পারবেন।
উহু উহু, মোট্টে গল্প শেষ হয়নি। চিউইং গামের মত টেনে বড় করে দিন।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
এই ব্লগে প্রথম আপনার গল্পটা পড়লাম ভালো লাগল; তবে কি যেন একটার অভাববোধ করলাম; লেখকরা মনে হয় এমনি হয় শেষ করেও শেষ করে না। ।
নতুন মন্তব্য করুন