‘সুবেহ্ সাদিক’,শব্দ দুটির জোর এত বেশী যে সমস্ত অশুভ শক্তি পরাভূত এবং পরাজিত হয় তার কাছে । আর ঊষার পূর্বাভাস মানেই সমস্ত অন্ধকার দাপিয়ে আলোর জগতের আমন্ত্রণ । তবে সবার কাছে ঊষার পূর্বাভাস হয়তো সবসময় আনন্দবার্তা বয়ে নিয়ে আসে না । বিশেষ করে নাইট ডিউটিরত কোন চিকিৎসকের কাছে আর সেটা যদি হয় এডমিশন নাইট তাও আবার নিউনেটের মতো জায়গায় ।
‘সুবেহ্ সাদিক’,শব্দ দুটির জোর এত বেশী যে সমস্ত অশুভ শক্তি পরাভূত এবং পরাজিত হয় তার কাছে । আর ঊষার পূর্বাভাস মানেই সমস্ত অন্ধকার দাপিয়ে আলোর জগতের আমন্ত্রণ । তবে সবার কাছে ঊষার পূর্বাভাস হয়তো সবসময় আনন্দবার্তা বয়ে নিয়ে আসে না । বিশেষ করে নাইট ডিউটিরত কোন চিকিৎসকের কাছে আর সেটা যদি হয় এডমিশন নাইট তাও আবার নিউনেটের মতো জায়গায় ।
পাখির কিচিরমিচির ঘুমন্ত মানুষের এলার্ম ঘড়ির দায়িত্ব পালন করলেও জাগ্রত মানুষের জন্যে তা মোটেও সুখকর কোন কিছু নয় । যারা ঘুম কাতুরে কিংবা যাদের বালিশ ঘুমের বাতিক আছে তাদের কথা ভিন্ন । তবে ইনসমনিয়া যাদের নিত্য সঙ্গী তাদের কাছে ভোরের আলো ফোটা মানে আরও একটা দীর্ঘশ্বাস- আরও একটা নির্ঘুম রাত আর তার সাথে মিশে থাকে কিছুটা হতাশা আর একরাশ বিরক্তি । আর আমার কাছে এখন তা হতাশা,বিরক্তি এই সবকিছু ছাপিয়ে মোটামুটি অসহনীয় পর্যায়ে পদার্পন । নাইট ডিউটিতে আমার খারাপ লাগাটা শুরুই হয় শেষ রাতের দিকে। এর কারণ হতে পারে আমি এখনো পরিপূর্ণ ডাক্তার হতে পারিনি। কারণ স্যার ম্যাডামরা বলেন,যেদিন নাইট ডিউটি করার পরও দেখবে কোন খারাপ লাগছে না সেদিন বুঝতে পারবে তুমি পরিপূর্ণ ডাক্তার হয়েছ। আর পরিপূর্ণ ডাক্তার হবার কোন লক্ষণ আমি আমার মাঝে খুঁজেও পাচ্ছি না। যতই দিন যাচ্ছে খারাপ লাগার পরিমানটাও বাড়ছে বৈ কমছে না।
নিউনেটে ডিউটি তাই টেনশানটাও একটু বেশি । এতো ছোট ছোট বাচ্চা,কখন কোনটা খারাপ হয়ে যায় কিছুই বলা যায় না । একটা বাচ্চা ভর্তি হয়েছে রাত সাড়ে দশটায় । বাবা মায়ের প্রথম সন্তান । আমি কিছুক্ষণ পরপর তাদের চিন্তিত মুখগুলো দেখছিলাম । যদিও নতুন অতিথির আগমন উদযাপনে তাদের কোন কমতি নেই । বেশ কিছু আত্মীয় স্বজন এসেছে তাকে দেখতে সাথে নতুন পোশাক । অক্সিজেন দেয়া অবস্থাতেও তার গায়ে একটা নতুন জামা জড়ানো হলো । বাচ্চার মা গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তি তাইতো বাবা,নানী সাথে আরও আত্মীয় স্বজন বাচ্চার পাশে ।
শিশুর প্রথম কান্না - যা শোনার সৌভাগ্য এদের হয়নি। তবুও আশা থেমে থাকে না আর তার ব্যপ্তিও কম না । তাইতো ওরা আশার সমুদ্রে ভেলা ভাসিয়েছে । বাচ্চাটা যেকোনো মুহূর্তে খারাপ হয়ে যেতে পারে ,একথাটা আমি তাদেরকে যতবার বলতে গিয়েছি ততবারই উল্টো তাদের কাছ থেকে শুনে এসেছি ‘বাচ্চার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো এবং ভোর নাগাত তারা চলে যেতে পারবে কি-না?’। কারণ এটা তাদের বংশের প্রথম বাচ্চা।
প্রথম সবকিছুর গুরুত্বই আলাদা। জীবনের প্রথম কান্না,প্রথম কথা বলা,প্রথম হাঁটতে শেখা,প্রথম হোঁচট খাওয়া,প্রথম ভালোলাগা,প্রথম প্রেম,এমনকি প্রথম বিরহ........সবকিছুই মনে আলাদা দাগ কাটে আর সেই দাগগুলোও অমোচনীয় কালি দিয়ে কাটা । তাইতো ইচ্ছে করলেই তা মুছে ফেলা যায় না বরং মুছতে গেলে তা আরও ঘনীভূত হতে থাকে । এটা হয়তো প্রথম অনুভূতিগুলোর রক্ষণশীলতা ।
বেশ কয়েকবার আমি বাচ্চাটার কাছে গেলাম এবং তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কী নিষ্পাপ মুখখানা। প্রতিটি শিশুরই আলাদা সৌন্দর্য থাকে । স বচেয়ে কালো যে শিশুটি ত্যাবড়ানো নাক নিয়ে জন্মায় তার চেহারায়ও কি কম আকর্ষণ থাকে । তবে বড় হবার সাথে সাথে চেহারার কমনীয়তা কমতে থাকে হয়তো কুটিলতা বাড়ে বলে ।
বাচ্চাটা মারা যাবার তিন ঘন্টা পরও আমি তাদেরকে কথাটা বলতে পারলাম না । ব্যাপারটা এমন না যে,আমি এর আগে কখনো মৃত্যু দৃশ্য দেখিনি কিংবা মৃত্যুর প্রমাণপত্র লিখিনি । তবুও কেন জানি বলতে পারছি না ।
বারবার মনে হচ্ছিল,এই শিশুটির আগমন উপলক্ষে বাড়ির সবাই অনেক আয়োজনে ব্যস্ত ছিল । অতিথিকে বরণ করার পূর্বপ্রস্তুতিও নিতান্তই সাধারণ ছিল না। তার নানী,দাদী অনেকগুলো নকশীকাঁথা সেলাই করেছিল হয়তো। হয়তোবা তার জন্যে ছোট্ট একটা বালিশ,একটা ছোট্ট দোলনাও বানানো হয়েছিল। আর মা সে নিশ্চয়ই কাজল বানিয়েছিল নিজ হাতে অনেক যত্ম করে,অনাগত সন্তানকে নজর ফোঁটা দিতে।
যার জন্যে এতো আয়োজন,এতো প্রতীক্ষাÑতাকে কেন এভাবে চলে যেতে হলো ? তার মুখের আধো আধো কথা,গুটিগুটি পায়ে সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়ানো,লুকোচুরি খেলা,জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলে সঙ্কিত হওয়া আর বকার বদলে মায়ের আদরের আলিঙ্গনে খিলখিল করে হেসে উঠা,হোঁচট খেয়ে কান্না আবার মায়ের কোলে নিরাপদ আশ্রয়ে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়া।
এখনো সে ঘুমাচ্ছে । ঘুমন্ত রাজকন্যা। যার ঘুম আর ভাঙ্গবে না । তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,ঘুমন্ত রাজকন্যা ,তুমি এতো আয়োজন উপেক্ষা করে চলে যেও না। তুমি না থাকলে এসবই তো অর্থহীন । এতোদিন তুমি তোমার মায়ের নিরাপদ আশ্রয়ে ছিলে ,সেই মা তোমাকে সারাজীবন আগলে রাখবে,তাকে ফেলে কেন তুমি চলে যাবে ?
তবে এটাও তো ঠিক ডাস্টবিনও মাঝে মাঝে কেঁপে উঠে সদ্যজাত শিশুর কান্নায় । তখন কী আমরা তাকে কোলে তুলে নেয়ার সাহস দেখাই ? তার কান্নার স্বরে শুধুতো আশ্রয় প্রার্থনা থাকে না তার সাথে মিশে থাকে প্রতিটি মা বাবার প্রতি ঘৃনা আর ধিক্কার । মিশে থাকে এই সভ্যসমাজের কিছু মুখোশধারী মানুষের প্রতি অভিযোগ,অনুযোগ। এই শিশুটিও তো আগের শিশুটির মতোই মায়ের গর্ভেই বেড়ে ওঠেছে এবং তারও একজন পিতা রয়েছে। কিন্তু তার জন্যে তো কেউ নকশী কাঁথা সেলাই করেনি । আর তার মা নজর ফোঁটা দেয়ার জন্য কাজলও বানায়নি । অন্যের বদ নজর থেকে সন্তানকে রক্ষা করার বদলে তাকে করেছে কুকুরের এক বেলা তৃপ্ত আহারের সামগ্রী ।
কী অদ্ভুত ব্যাপার ,একজনকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা আমরা করছি অথচ পারছি না। সে চলে যাচ্ছে। আর অন্যজন তারস্বরে চিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে তার জন্যে আমরা কিছুই করছি না । তারও তো সুন্দর স্বাভাবিক জীবনের অধিকার রয়েছে। সেই অধিকারতো আমরা তাকে দিতে পারছি না । তাহলে এ দায় কার ? তবে কী এতো আয়োজন উপেক্ষা করে এই শিশুটির চলে যাওয়া আর ডাস্টবিনে পড়ে থাকা শিশুটির মাঝখানে কোন যোগসূত্র আছে ? না-কি এটা প্রকৃতির প্রতিশোধ ?
মন্তব্য
শাফি।
(কতকি মনে পড়ে গেল )
কি মনে পড়ে গেল শাফি ?
এই লিখাটা কি আগে কোথাও পড়েছি?
সকাল সকাল মনটা খারাপ হল... গল্পে
মূলত মন খারাপ থেকেই লেখাটা । ভাবলাম মনটা শুধু আমার কেন খারাপ হবে সবাই বিষয়টা নিয়ে মন খারাপ করুক আর ভাবুক ।
"আর অন্যজন তারস্বরে চিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে তার জন্যে আমরা কিছুই করছি না । তারও তো সুন্দর স্বাভাবিক জীবনের অধিকার রয়েছে। সেই অধিকারতো আমরা তাকে দিতে পারছি না । তাহলে এ দায় কার ?"
...অপাংক্তেও এতিম শিশুদের ভবিষ্যত গঠনের দায় রাষ্ট্রের। সেই সাথে আপ্নার আমার মত নাগরিকদেরও এদেরকে দত্তক নেয়ার ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত। সবকিছু তো আর রাষ্ট্রের উপর ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে চলবে না।
আপ্নার পেশাগত জীবনের সাফল্য কামনা করছি
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
উচ্ছলা,আপনার যুক্তি মানলাম । কিন্তু অপাংক্তেয় শিশুদের সুস্থ সুন্দর জীবন যাপনের ব্যবস্থা করার চাইতে এটাই কি বেশি ভালো না আর কোন অপাংক্তেয় শিশুর জন্মদাতা কিংবা জন্মদাত্রী না হওয়া ?
ভালো থাকবেন ।
"কিন্তু অপাংক্তেয় শিশুদের সুস্থ সুন্দর জীবন যাপনের ব্যবস্থা করার চাইতে এটাই কি বেশি ভালো না আর কোন অপাংক্তেয় শিশুর জন্মদাতা কিংবা জন্মদাত্রী না হওয়া ?" --একমত
একমত.........
মাথা আমাদের ঘামাতে হবে কারণ এই পরিস্থিতি গুলো আমরাই তৈরী করি ।
তবে প্রকৃতি যদি কিছুটা প্রতিহিংসা পরায়ন না হয় তাহলে এসব ঘটনা কেন ঘটে ?
প্রকৃতি এসব ছোটখাট বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় বলে মনে হয় না। এসব আমাদের বিষয়, মাথাও বোধহয় আমাদেরই ঘামাতে হবে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
মাথা আমাদের ঘামাতে হবে কারণ এই পরিস্থিতি গুলো আমরাই তৈরী করি ।
তবে প্রকৃতি যদি কিছুটা প্রতিহিংসা পরায়ন না হয় তাহলে এসব ঘটনা কেন ঘটে ?
আপনার বলা প্রতিটি কথায় যে আবেগ ফুটে উঠে তাকে সম্মান জানিয়েই বলছি- আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এটা রোজকার রুটিন ঘটনা।
আপনার আপনাকে ব্যাক্তিগত ভাবে বলছিনাঃ
প্রথা ভাঙার কথা সবাই বলেন। কিন্তু যারা ভাঙেন ওরাই জানেন এর জন্য কতটুকু মাশুল গুনতে হয়। কোল বালিশ বুকে চেপে দেশ উদ্ধারের চিন্তা তো বহুত হল; একবার প্রথা ভেঙে দেখুন কেমন লাগে।
ডাকঘর | ছবিঘর
@ তাপস শর্মা
আপনি একটু ঝেড়ে কাশুন প্লিজ । কি প্রথা আপনি ভাঙার কথা বলছেন ? কোন প্রথা ভেঙে কে যন্ত্রণা পোহাচ্ছে ?
পাঠক ভাই এই পোষ্টে কি বিষয়ে কথা বলেছেন লেখক? সেই কথাই আমি বলতে চেয়েছি। বলেছি আমরা সবাই সেই শিশুদের কথা জানি কিন্তু প্রয়োজনীয় কোন উদ্যোগই আমাদের দ্বারা নেওয়া হয়না। বলেছি ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত চেষ্টায় জন্ম নেওয়া এই মানুষ গুলির প্রতি আমাদের রক্ষনশীল মানসিকতা কত দূর ?? যন্ত্রণা পোহানোটা বুঝেন না আপনি। যন্ত্রণা সেই মানুষটির যে একটা পরিচয়হীন শিশুকে আশ্রয় দেয়, যন্ত্রণা সেই শিশুটির যাকে আমার আর আপনার সমাজ পদে পদে মনে করিয়ে দেয় সে একটা স্খলিত জীব।
কি বুঝাইতে পারছি।
জনাব আর ক্যামনে কাশতাম বলেন। এইবার আপনি কাশেন। আপনার সমস্যাটা কী? তারপর আবার কাশুম্নে।
ডাকঘর | ছবিঘর
ভালো ভাবে বুঝানোর জন্য মোবারক বাদ ।
সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কোনো পোস্ট দিলে তো আবার ঝগড়া শুরু হয়ে যায় তাই বললাম ।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
মন খারাপ করে দেয়ার মতো একটা লেখা ।
সত্যিই আমরা জঘন্য একটা শ্রেণী । নিজেদের পাপ আর অন্যায়কে ঢাকতে আমরা নিষ্পাপ দেব শিশুদেরকে খুন করি । এদের প্রতি ছি .. দেয়া ছাড়া আর কি আছে ।
আপনার উপলব্দির জন্য খুব ভালো লাগল ।
আপনার পেশাগত জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবন লেখালেখি সব অনেক ভালো আর আনন্দে কাটুক ।
অফটপিক প্রশ্ন : বাচ্চাটা মারা গেল কেন? কিছুই কি করার ছিলো না?
বাচ্চাটার অবস্থা অনেক খারাপ ছিল যেটা আমি বলেছি । আর তার ওজন ছিল খুবই কম এবং তার birth asphyxia . । এখান থেকে ভালো কিছু খুব কম আশা করা যায় ।
মন খারাপ হয়ে গেল ...........
মন খারাপ হওয়ার মতোই ব্যাপার ।
এই লেখাটা এর আগে কোথাও পড়েছি বলে মনে হচ্ছিল। সার্চ করে http://m.somewhereinblog.net/blog/shamimarima595/29472318 এই লিঙ্কটা পাওয়া গেলো। আগেই প্রকাশিত লেখা প্রথম পাতায় ভাল দেখাচ্ছে না।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩