(হাবিজাবি ধরনের লেখা। কাল একবার পোস্ট করে স্পিডের কারনে আটকায় গেল, বুঝতে পারিনি পোস্ট হল কিনা। তাই আবার পোস্ট করলাম আজকে। যদি মডারেশন প্যানেলে গতকালই আটকে থাকে তবে আবারো পোস্ট করার জন্য দুঃখিত। মুছে দেয়ার অনুরোধ থাকলো।)
***************
পয়লা ফাল্গুন আমার ভাল্লাগেনা। শীতের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আমি। তার প্রস্থানে আমোদ করার কিছু নাই। কুয়াশা আমাকে নস্টালজিক করে। দুইফুটি দৃষ্টি অনুমোদক কুয়াশার সাথে লাইফের মিল খুজে পাই। কলেজের বারান্দায় বসে ঐরকম কুয়াশা দেখতেছিলাম। তখন মেয়েটাকে দেখলাম।
আমরা প্রতিদিন শরীর বৃত্তিয় নানান কাজ করি। তারমধ্যে যেইটা সবথেকে বেশি করি কিন্তু কখনো খেয়াল করি না বা পাত্তা দেইনা তা হল চোখের পাতা পিট পিট করা। মিনিটে তিন-চার বার তো হয়ই। মেয়েটারে দেখলাম একটু আলাদা। মিনিটে দুই-একবার কাজটা করে। একবার বন্ধ করার পর চোখ খুলতে দুই-তিন সেকেন্ড সময় নেয়। একটা আগ্রহ তৈরি হয় তখন পরের বার কাজটা করতে দেখার। এইভাবে দীর্ঘ সময় নিয়েই তাকায় আছি তার দিকে কিন্তু বুঝি নাই। হারায় গেছিলাম বোধহয়। কিন্তু পোলাপান বুঝলো, আর আমারেও বুঝায় দিল যে ব্যাপার সুবিধার না। কয়দিন পর নিজেরো মনে হতে থাকল আসলেই ব্যাপার সুবিধার না।।
তখন বয়স অল্প। নায়কোচিত কিছু করার নানা রকম ফ্যান্টাসি মাথায় ঘুরপাক খায়। করতে পারি না কোন কিছুই। লাস্ট বেঞ্চে বসে গান গাই আর চোখের পাতা ফেলা দেখার অপেক্ষায় থাকি। আর কিছু করার সাহস নাই। সাহসী হতে মন চায়। কিন্তু বাজারে প্রচলিত গুজব - এর আগে কোন ছেলে নাকি তার সাথে কথা বলতে গেছিল, কিন্তু কিছু শোনার আগেই মেয়ে কান্দা শুরু করছে। বিরাট রিস্কের ব্যাপার। ভাল ছেলে বলে যে ইমেজটা আছে তার বারটা বাজার ঝুকি নিতে পারি না। যদিও পোলাপানের কল্যানে সে ঠিকি টের পায়। তাতেও মনে মনে খুশি হয়ে উঠি। পড়ালেখায় ভাল এই বৈশিষ্ট্য ছাড়া আমার আর কোন গুন নাই। মেয়েরা নাকি একটু ড্যামকেয়ার আর ফাজিল টাইপ ছেলেদের পছন্দ করে। এইটা অবশ্য স্কুল কলেজের সময়ের কথা। নিজের মধ্যে বিপুল ভাবে এই কোয়ালিটির অভার বোধ করতে করতেই কলেজ লাইফ শেষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে একরাতে সেই মেয়ের ঘনিষ্ঠতম বান্ধবি ফোন করে জানালো - " শুনছো নাকি, আজ তো অমুকের বিয়ে!" আমি আপ্লুত হবার ভান করি, তার সাথে মস্করা করি, কিন্তু তেমন আলোড়িত হই না। চোখের পাতা ফেলা দেখার চাইতে তখন আমার কাছে প্রিয় বিষয় বুড়িগঙ্গায় নৌকায় ঘুরে বেড়ানো। থকথকে নোংরা, কালো বুড়িগঙ্গাকে রাত্রে মায়াবিনী মনে হয়। দুর্গন্ধটাকে মনে হয় না জানি কত দিনের আপন। কারণ ততদিনে সাহসীকতার মাইলফলক স্থাপন করে ফেলেছি। মোবাইল ফোনটা নানান ধরনের বর্ণ, গন্ধ আর স্পাইস নিয়ে হাজির হয়। আত্মবিশ্বাস তখন তুঙ্গে। রাত দশটা-এগারটায় সলিমুল্লায় হাজির হয়ে বলি চলো ঘুরতে যাই। বুড়িগঙ্গায় ঘুরতে ঘুরতেই একরাতে আবিস্কৃত হয় আমিতো ভেসে থাকতেই জানি না। আয় হায়!! জীবন তবে চলবে কিরূপে?? স্রোতের বিপরীতে সাত্রানো ছাড়া গতি কি?? তুমিতো ব্যাপক অপরিপক্ক।। দেড় মাসের মাথায় "বুড়িগঙ্গা দূষিত" বলে আমিও আর ওমুখো হই না। দ্রাক্ষাফল টক, তিতকুটে ও গুরূপাক।
তবে এইবার আর আগের মত সহজ নয় ব্যাপারটা। ফোনের বোতামে আঙ্গুল নিশপিশ করে টেপার জন্য। একটা বাদে অন্যান্য সব নাম্বারই টিপি। বিভিন্ন ধরনের তরলতা মিশে যায় জীবনে। বায়বীয় কিছু যোগাযোগ মাঝে মাঝে কঠিন আকার ধারণ করে। যা হয় হবে এই রকম একটা মনোভাব নিয়ে একরাতে সিলেট গামী উপবন এক্সপ্রেসে উপবিষ্ট হই। তখনো শীতকাল। সবকিছু এই শীতকালেই কেন হয় কে জানে।
ট্রেন থেকে নামলাম সকাল ছয়টায়। স্টেশনে টয়লেট নাই, হাতমুখ ধোয়ার জায়গা নাই। জীবনে কখনো সিলেট আসি নাই। যার ভরসায় আসা তার ব্যাপারে এখন আর ভরসা পাচ্ছি না। আবার ট্রেনে উঠে ট্রেনের টয়লেটেই কাজ সারলাম। আমার সিলেট ভ্রমন পরবর্তী পাচ বছর ছিল টয়লেট সঙ্কটময়। ছাত্র মানুষ, পকেটে টাকা পয়সা হাতে গোনা। হোটেলে উঠার সামর্থ্য নাই। যাইহোক শুধু এডভেঞ্চারের কারণে প্রথমবার সিলেট আসা। প্লাটফর্মে দুই ঘন্টা অপেক্ষার সময় নিজেকে বেশ উজবুক মনে হইলো। সকাল আটটার আগে নাকি বাসা থেকে বের হওয়া সম্ভব না। সে উপস্থিত হল সাড়ে আটটায়।
প্রথম দর্শনে আমার অনুভুতি হল 'সমকৌণিক'। এইটা ব্যাক্ষার প্রয়োজন আছে। দুইজন মানুষ যখন কথা বলে তখন তারা মুখোমুখি দাঁড়ায়, মানে সমান্তরাল রেখায়। এই বালিকা দাঁড়ায় উলম্বভাবে, মানে আমার সাথে নব্বই ডিগ্রী কোণ তৈরী করে, যাতে সরাসরি তাকানোর ঝামেলা এড়ানো যায়। ফোনে তাকে বেশ সপ্রতিভ মনে হলেও সামনা সামনি নার্ভাস। সে বোধহয় এক কুইন্টালের কিছু আশা করে নাই। আমি অবশ্য তার কেশরাজিতে মুগ্ধ। প্রায় হাটু ছোয় ছোয়।
নাস্তা করতে গেলাম প্রীতিরাজ নামক এক রেস্টুরেন্টে। খাওয়ার পরিমান বলে তাকে আর লজ্জায় না ফেলি। এরপরেই অবধারিত প্রশ্ন, এখন কই যাব, কি করব। সে বলল পর্যটন ভালো যায়গা, আপনিও পর্যটক, সেখানেই যাওয়া যাক। চা বাগানের ভিতর দিয়ে রাস্তা। সেই রাস্তাও নাকি পাহাড় কেটে বানানো। আশেপাশে অনেক বানর আছে। এই ধরনের তথ্য জানতে জানতে পৌছালাম পর্যটন। তখনো গেট খোলে নাই। এখন উপায়? জাফলং-এর অনেক নামডাক শোনা যায়। প্রস্তাব দিলাম সেখানে যাওয়া যাক। আর কবে সিলেট আসবো না আসবো। দেখে যাওয়াই ভাল। জানা গেল বাসে ২ ঘন্টার পথ। বাসে উঠে শুনলাম সে কখনও জাফলং যায় নাই। মক্কার সব লোক হজ্জ করছে এমন ভাবার কোন কারন নাই।
একসাথেই প্রথম জাফলং দেখলাম, নৌকায় চড়লাম, পাহাড়ে উঠলাম, আর হাসি দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তবে কমলার বাগান দেখতে যাওয়া হয় নাই। মানুষ জনের মুখের ভাষা কিছুই বুঝি না। বিকালে গেলাম শাবি'তে। সন্ধ্যায় আইস্ক্রিম পার্লার তারপর চিকেন হাট। রাতের ট্রেনে আবার ঢাকা ফিরবো। বিদায় মুহূর্ত সবসময় একটু বিষাদময়। মন নাকি দ্রবীভূত থাকে কিছুটা। ফিরতে একদমই ভাল্লাগতেছে না। জানা গেল তারও বাসায় ফিরতে ভাল্লাগতেছে না। অর্বাচীনের মতই জিজ্ঞেস করছিলাম, দূর্বল হয়ে গেলা নাকি? প্রশ্ন করেই তার হাসির অপেক্ষায় আছি। কিন্তু সে দেখি আর হাসে না। হায় হায় হায়!! ধরা দিলে তুমি এত অবলীলায়!! 'আবার কবে আসবেন?' 'আসবো'। আমি আবার ফিরে গেছি তার পরের মাসে, তার পরের মাসে, প্রায় প্রতি মাসে প্রায় ছয় বছর। অনেকবার যাবনা ভেবেও না যেয়ে পারি নাই, এখন আর না যেয়ে উপায়ও নাই।
**************
""ট্র্বেনে ফেরার পথে সেই রাতেই জানলাম 'একটেল' কোম্পানি তাদের কলরেট সাত টাকা থেকে সাড়ে তিন টাকা করেছে। সিলেটে গেলে এখন অবশ্য আর টয়লেট সঙ্কট নাই। একরাতে যেয়ে পরের রাতে ফেরার কষ্টও আর না করলেও চলে। চাইলেই দুই একদিন কাটানো যায় :)।।""
**************
মন্তব্য
খাইছে! এরকম ঘটনাও তাইলে জগতে ঘটে! হায় হায় [দেয়ালে মাথা ঠোকার ইমো!]
লেখা ভালো হয়েছে।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
খালি শেষের ঘটনাই দেখলেন জীবানুদা, হের আগে যে দু দু বার করে ছ্যাকা খাইলাম সেইটাও বিবেচনা কইরেন
পড়ার জন্যে শুকরিয়া।
সিলেটের ট্রেইনে উইঠা, একবার যে ঘুমাইতে ঘুমাইতে ঢাকা-সিলেট-ঢাকা ট্রিপ দিলি, ঐ কাহিনীও ছাড়
ঐ কাহিনীর অর্ধেক ঝাপসা আর ঘটনার পরের তিনদিন স্মৃতি থেইকা হারায় গেছে। কিছু লোকজনের সাক্ষাতকার নিয়া পুরা কাহিনী সাজাইতে হবে
বাহ!
শুকরিয়া
সফল ইনিংস!
--স্বপ্নাদিষ্ট
=============================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।
সব দোষ এই মোবাইল কোম্পানিগুলার
আপনার গল্পটা তো দারুন, এতদিন লুকিয়ে রেখেছিলেন কেন।আপনাদের জন্য অনেক শুভকামনা।
থেঙ্কু।
অনেকদিন পর সচলে এসে আপনার লেখার শিরোনামটায় চোখ আটকে গেলো প্রশ্ন করবেন কাঁদছি কেনো? কাঁদবো নাইবা কেনো! ঠিক এই নামে আমি একটা অতি অখাদ্য লেখা লেখেছিলাম যে! পোষ্ট করা হয়নি.......তবে আপনার লেখাটা এত্ত মায়ায় ভরা পড়ে মনটা ভরে গেল সুকেশি এবং আপনার জন্য অনেক শুভকামনা।
http://youtu.be/ea9vT17LktU
গানটার জন্য একরাশ
আমার আনুশেহ'র ভার্সনটা আরো ভালো লাগে-
http://www.youtube.com/watch?v=XO7sJ8DCemM&feature=player_embedded
(অফটপিকঃ আপনি তো অনেক আগেই হাচল হয়েছেন জানতাম। সমস্যার কি সমাধান হয়নি? আপনি এক কাজ করতে পারেন, যেহেতু বর্তমান মেইল এড্রেসে মেইল আসছে না কাজেই নতুন একটা মেইল একাউন্ট খুলে contact@সচলে মেইল করেন আপনার সমস্যা জানিয়ে।)
এই তাহলে গঠনা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
এইটারে দুর্গঠনা বলতে পারেন
অভিনন্দন!
বড়ই মধুময় লেখা। (গুড়)
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আফসোস!! ছ্যাকা খাওয়ার ঘটনা গুলারে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না
লাকি ম্যান! ভাল লাগল। সবাই শুধু বিরহের কথা লেখে। আপনাদের মিলন চিরসস্থায়ী হোক।
ধন্যবাদ হে কবি!
সেরাম কাহিনী!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
আচ্ছা ! তাইলে এই ব্যাপার !!!
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
জ্বী। ব্যাপার সুবিধার না
ভুল না হলে আপনি নজরুল হলের প্রদীপ ভাই। ভুল হলে মাপ চাই, নইলে কেমন আছেন ভাই?
ধরা খাইলাম নাকি
আছি ভালোই। কোন ব্যাচ?
এতো সুন্দর লেখাটা আগে পড়িনি কেন ভাবছি! ছ্যাক হচ্ছে টিকার মতো সময়মত না খেলে পরে ভয়াবহ ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নতুন মন্তব্য করুন