বছর সাতেক আগে প্রথম যখন টেলিটকের সিম বাজারে ছাড়া হলো, আমার বন্ধু-বান্ধবরা অনেকেই প্রায় চব্বিশ থেকে ছত্রিশ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে একটি সিম সংগ্রহ করেছিল। এমন না যে সেই সময় মোবাইল ফোন একটা দূর্লভ বস্তু ছিল, বা অন্য অপারেটরদের কল-রেট অনেক বেশি ছিল। তবে টেলিটকের একটা সংযোগ কেনার জন্য কেন এত ব্যাকুলতা? ফ্রি টিএন্ডটি ইনকামিং, অতিরিক্ত চার্জ না দিয়েই টিএন্ডটি আউটগোয়িং ইত্যাদি নানা কথা বলা যেতে পারে। কিন্তু আমার কাছে যেটি সবচেয়ে বড় কারন মনে হয়েছিল তা হচ্ছে "এটা আমাদের ফোন!" সম্পূর্ণ দেশি এবং সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নিজেদের ফোন! নতুন প্রজন্মের দেশপ্রেম নিয়ে আমরা সহসাই প্রশ্ন তুলি। কিন্তু সেদিন লাইনে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়েছিল স্বার্থের পাশাপাশি দেশপ্রেমও একটা বড় কারন এই রাতভর অপেক্ষার!
তারপর আরো অনেক পদ্মা সেতু বা আরো অনেক হতাশার মাঝে যুক্ত হয় টেলিটকের নাম। অন্যান্য অপারেটরগুলো যখন আমাদের দেশপ্রেম আর সামাজিক দায়িত্ববোধের রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হয়, প্রতিনিয়ত স্মার্টনেস আর আধুনিকতার ছবক দিতে থাকে সেখানে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না টেলিটককে। শেষ কবে টেলিটকের বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম সেটা একটা গবেষণার বিষয়। প্রায় তিনবছর পর একদিন মহাখালির এক বিলবোর্ডে দেখলাম টেলিটকের বিজ্ঞাপন, সদ্য এস এস সি পাস করা জিপিএ পাঁচ পাওয়া ছাত্রদের জন্য তাদের পাশের বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে কিছু গোল্ডেন নাম্বার সিরিজ ছেড়েছে। ০১৫২০১১... এরকম আরকি! ইম্প্রেসড হয়েছি এমন কথা জোর দিয়ে বলতে পারছি না!
এরমাঝে আশান্বিত হই গত বছর থ্রিজি সংক্রান্ত একটি ঘোষণায়। রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান হিসাবে টেলিটককে সবার আগে থ্রিজি লাইসেন্স দেয়া হবে এবং তারা ছয় মাস একক ভাবে থ্রিজি সার্ভিস দিতে পারবে অন্যান্য অপারেটরগুলো লাইসেন্স পাবার আগেই। প্রতিযোগিতার বাজারে কোন অপারেটর অন্যদের একসপ্তা আগেও যদি লাইসেন্স পায় তবে সেটা তার জন্য বিরাট সু্যোগ। সেখানে টেলিটক ছয় মাস আগে লাইসেন্স পেয়ে যাওয়াটা নিঃসন্দেহে খুশির খবর। কিন্তু সত্যি কথাটা হলো টেলিটকের এই আগাম লাইসেন্স পেয়ে যাওয়া নিয়ে কেউই তেমন একটা বিচলিত নয়। কারনটা টেলিটক নিজেই। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে এবং পরবর্তীতে ২০১২ এর ২৬শে মার্চ থ্রিজি লঞ্চ করার কথা থাকলেও তা দফায় দফায় পিছিয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারা অফিসিয়ালি থ্রিজি’র ক্যাম্পেইনিং শুরু করলেও স্বভাবজাত ভঙ্গিতে বাধিয়ে ফেলেছে এক মহা তুঘলকি কারবার। থ্রিজি’র এলিট ক্লাবে (!) ঢুকতে গেলে আপনাকে রীতিমত তিনমাসের বিরক্তিকর বাছাই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। প্রতি মাসে ৫০০ টাকা দিয়ে তাদের একটা বান্ডল অফার কিনতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে সেটাকে জীবিত এবং পুনঃজীবিত করে তিনমাস কাটিয়ে দেয়ার পর আপনি যোগ্যতা অর্জন করবেন একটি থ্রিজি সিম-কার্ড কেনার!!! জ্বী, ঠিকই শুনেছেন, থ্রিজি’র জন্য আপনাকে নতুন আরেকটি সিম-কার্ড কিনতে হবে! টেলিটক আশা করছে ছ’বছর আগে মানুষ যেভাবে ঝাঁপিয়ে পরে তাদের সিম কিনেছিল, এবারো তাই হবে। আর এ কারনেই থ্রিজি লঞ্চ করার আগে তারা এক্সিস্টিং নেটওয়ার্কে কিছু আয় করে নেয়ার চেষ্টা করছে। তাতে দোষের কিছু নাই, কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। তিন মাস ধরে যোগ্যতা অর্জন বা বাছাই প্রক্রিয়াটিকে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দূর্নীতি এবং কালোবাজার বান্ধব বলে জানি। দফায় দফায় সময় পেছানো টেলিটক যথেষ্ট সময় পেয়েছে থ্রিজি’র জন্য তাদের ব্যান্ডউইথ ডাইমেনশনিঙের। শুরুতে এই সেবাটি দেয়া হবে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় - ঢাকা, চিটাগাং, সিলেট এবং কক্সবাজার। এইসমস্ত এলাকায় টেলিটকের বর্তমান গ্রাহক কতজন এবং তাদের মধ্যে কতজন থ্রিজি সেবা নিতে আগ্রহী তা জরিপের মাধ্যমে বের করা কঠিন কিছু ছিল না। জানি না তারা এই কাজটি করেছে কিনা। বিদ্যমান আগ্রহী গ্রাহকদের জন্য যন্ত্রনাদায়ক তিনমাসব্যাপী নির্বাচনপ্রক্রিয়া টেলিটকের ব্যাবসায়িক সদিচ্ছাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে!!
এরপর আসা যাক নতুন গ্রাহকের প্রসঙ্গে। এব্যাপারে তারা কোন ঘোষনা দেয়নি এখন পর্যন্ত। তবে ধারনা করছি বরাবরেই মতই খুব অল্প কিছু সিম ছেড়ে একটা ভজঘট পাকানোর দিকেই যাচ্ছে তাদের চিন্তাভাবনা। তাদের সদ্য ওড়ানো বিজ্ঞাপনটিও সেই ঈঙ্গিতই দিচ্ছে!!(তারা ধরেই নিয়েছে ধাক্কাধাক্কি মারামারি হবেই) এতে সুবিধা অনেক, ক্রাইসিস তৈরি করে কালোবাজারি করা যায়, কোম্পানির কতিপয় মাথার পকেট ভারি হয় এবং কর্মকর্তাদের আত্মীয়-বন্ধুরা গুটিকতক সৌভাগ্যবানের শ্রেণীভুক্ত হতে পারে।
পরবর্তী আলোচনায় যাবার আগে একটু জেনে নেয়া যাক এই থ্রিজি প্রযুক্তিতে আমরা আসলে কি কি সুবিধা পেতে পারি। উল্লেখযোগ্য কিছু সেবা হল -
→ দ্রুতগতির ইন্টারনেট
→ ভিডিও কল
→ মোবাইল টিভি
→ জিপিএস নির্ভর বিভিন্ন সেবা
→ টেলিমেডিসিন (এটাকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর একটা প্রয়োগও বলা যায়) ইত্যাদি।
বলাবাহুল্য, সেবাগুলো প্রাথমিক/মৌলিক প্রয়োজনের কিছুটা উপরের স্তরে অবস্থান করছে (দু'একটা ছাড়া)। এর উপর আপনার প্রয়োজন হবে একটি থ্রিজি উপযোগী স্মার্টফোন। ভিডিও কল করার জন্য থাকা চাই ডুয়াল ক্যামেরা। তবে নিঃসন্দেহে যে সেবাটির জন্য থ্রিজি সবচেয়ে আকর্ষনীয় হতে পারে তা হলো দ্রুতগতির ইন্টারনেট। মোবাইলে টিভি দেখার চাহিদা হয়তো খুব বেশি থাকবে না। ভিডিও কলের আকর্ষনও একদিন কমে যাবে, ক্ষেত্র বিশেষে তা প্রাইভেসির জন্য এমনকি হুমকি হয়েও দেখা দিতে পারে! কিন্তু দ্রুতগতির ইন্টারনেটের চাহিদা কমার কোন কারন নেই। টেলিটক থ্রিজিকেও টু জি’র মত সিম-নির্ভর সেবা বানিয়ে ফেললে সেটা হবে আরেকটা ভুল। কারনটা উপরেই বললাম, থ্রিজি’র বেশিরভাগ সেবা বেশ লুক্রেটিভ হলেও দৈনন্দিন জীবনে তার উপযোগিতা সীমিত এবং সেগুলো তেমন একটা রেভিনিউ-জেনারেটিভ নয়। পক্ষান্তরে তাদের উচিৎ সিমের পাশাপাশি Dongle/3G Modem এর দিকে বেশি নজর দেয়া। থ্রিজি’র মূল রেভিনিউ জেনারেটর হলো ডেটা-সার্ভিস, সেটাই হওয়া উচিৎ প্রধান ফোকাস।
তবে এত কথা বলে আসলে তেমন কোন ফায়দা নেই। রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান টেলিটকের সমস্যা তার উপরওয়ালাদের মধ্যেই। বিটিসিএল থেকে আসা কর্তারা আমলাতন্ত্র পছন্দ করেন। তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে তাদের কোন দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহিতা নাই, টেলিটকের ব্যবসা মুখ থুবরে পরলেও তারা ঠিকঠাক বেতনটা পাবেন। খুঁটির জোরে আকড়ে ধরে থাকবেন নিজের অবস্থান। হতাশ কর্মী বাহিনী তাদের মাথা ব্যাথার কারন হয় না। অন্য অপারেটরদের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনবিহীন একটা দিনও যেখানে কল্পনা করা যায় না, সেখানে তারা তিন বছরে করেন একটা বিজ্ঞাপন, সেটাও নিতান্তই দায়সর্বস্ব। ব্যবসার কৌশলগত কোন পরিকল্পনা ছাড়াই এগিয়ে যান নিধিরাম সর্দারের মত। আর কত!!?? এবার শুভবুদ্ধির পরিচয় দিন অথবা এখানেই থামুন। নিজেরা না পারলে অন্তত তরুন প্রজন্মকে সুযোগ দিন হাল ধরার।
মন্তব্য
ঊটি টাইটেল
. কিন্তু যে মূল ফিচার 3g র ডাটা স্পীড , অয়াইমাক্স গুলা সেটা ভাল রকম কাভার করছে। 3g বাজার দেশে আসলে কেমন হবে আগ্রহ ভরে দেখার অপেক্ষাই, জিপি তো মনে হয় এগুলা বুঝেই গাঁইগুঁই শুরু করছে। কারণ বাইরে 3g/lte র ব্যবসা মূলত বিভিন্ন ধরনের ডাটা সার্ভিস র ( শুধু দ্রুত গতির ইন্টারনেট না) উপর টিকে আছে। এটাও থিক খাওয়া দেখলে খুদা পায়।
//সারাজীবন
থ্রিজি আসলে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন এর ঠিক করে দেয়া একটা স্ট্যান্ডার্ড। ফাস্ট মুভিং ডিভাইসের জন্য ১৪৪ কিলোবিট/সে এবং স্লো-মুভিং ডিভাইসের জন্য ৩৮৪ কিলোবিট/সে ডেটাস্পিড নিশ্চিত করলেই সেটাকে থ্রিজি'র মর্যাদা দেয়া হবে। বুঝতেই পারছেন তুলনামূলক বিচারে এটা আসলে মোটেও তেমন ফাস্ট বলা যাচ্ছে না। তবে বাইরের বিশ্বে প্রায় সব অপারেটরই এর থেকে অনেক বেশি ডেটা স্পিড দেয়। বাংলাদেশে যেহেতু শুরুতে সীমিত পরিসরে এই সেবা দেয়া হবে সূতরাং আশা করা যায় ডেটা স্পিড ভালোই থাকবে। কমপক্ষে ৫১২ আশা করছি আমি
জিপি বা অন্যান্য অপারেটরের অনাগ্রহের মূল কারন এর আনুসাঙ্গিক খরচ। লাইসেন্স কেনার পাশাপাশি থ্রিজি'র জন্য নতুন স্পেক্ট্রামও কিনতে হবে। বাংলাদেশের ডেটা ইউজার নিয়ে তারা সন্দিহান যে থ্রিজি আদৌ লাভজনক হবে কিনা। আমি যতটুকু বুঝি যে বর্তমান রমরমা পরিস্থিতে তারা থ্রিজি'র এই নতুন বিনিয়োগে কিছুটা নারাজ। যেহেতু টেলিটক নিয়ে তারা মোটেও উদ্বিগ্ন নয় তাই রয়েসয়ে যতটা সময় পার করা যায় সেটাই তাদের লাভ। একারনেই টেলিটকের অগ্রগতি খুব জরুরী। নিরবিচ্ছিন্ন সার্ভিস দিতে পারলে অন্য অপারেটরগুলো চাপের মুখে পরতে বাধ্য।
টেলিটক যতদিন সরকারের মালিকানায় থাকবে ততদিন এটি থেকে আশানুরূপ সেবা পাওয়ার আশা করা বৃথা। তাই টেলিটককে বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন।
উতপাখির হৃদয়
বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দিলে অন্য অপারেটরের সাথে পার্থক্য কি থাকলো? বরং পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়া যেতে পারে, শক্তিশালি এবং যোগ্য বোর্ড অব ডিরেক্টর নির্বাচন করা দরকার, উপরওয়ালাদের জন্য দায়বদ্ধতা/জবাবদিহিতার ব্যাবস্থা করা উচিৎ। সরকারি মালিকানায় রেখেও টেলিটককে লাভজনক করা সম্ভব, দুনিয়ার বেশিরভাগ দেশেই রাষ্ট্রীয় অপারেটররা রমরমা ব্যবসা করছে। সদিচ্ছাটাই মূল।
টেলিটকের মার্কেটিং পলিসি বুঝা মুশকিল! একটি মোবাইল সংযোগের জন্য হুমড়ি খেয়ে পরবে- মানুষ সম্ভবত ওই যুগ থেকে বেরিয়ে এসেছে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
টেলিটকের মার্কেটিং পলিসি থেকে মনে হয় সাইফুরসের আবাল পলিসি অধিক কার্যকরী
সাইফুরস নিয়ে কোনো কথা বলবেন না জনাব, আমি এখন ইংরেজিতে হাঁচি দিতে পারি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ক্যামতে বস!! ইক্টু যদি দেখাইতেন!
গত তিন বছরে মোট গ্রাহক বেড়েছে সাড়ে চার কোটি আর টেলিটকের বেড়েছে ৫ লাখ। এতেই বোঝা যায় তাদের দৌড় কতোখানি।
-সুমন
ভালো লাগলো। পড়বার পর দোয়েল ল্যাপটপের বর্তমান অবস্থা নিয়েও সচলায়তনে পড়তে ইচ্ছে করছে।
সৌরভ কবীর
সেল ফোন দিয়া আমি যা যা করি- ১) কথা বলা, ২) অ্যালার্ম বাজানো, ৩) সময় দেখা।
খুব বিপদে না পড়লে এসএমএস-ও করি না...
ছবি তুলি না
এই কাজের জন্য থ্রিজি লাগবে না, টুজিও ফেরত নিয়ে আমারে একটা ওয়ানজি দেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এটা ছিলো টেলিটকের সিম বাজারে আসার সেই প্রথম দিনের একটা মন্তব্য। লাইনে দাঁড়ানো উত্তেজিত এক যুবকের কথা। আজ মাগনা দিলেও নেবো কিনা ভাবতে হবে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
কথা সত্য।
বাংলাদেশ সরকারের লাইসেন্সিং পলিসির লীলা বোঝা দায়। আমি তো এইটাই বুঝতেসি না- কোন বুদ্ধিমান কোম্পানি কেন এখন থ্রিজি লাইসেন্স নিবে যখন সারা পৃথিবীজুড়ে ইউনিফাইড প্ল্যাটফর্ম হিসেবে LTE তে যাওয়ার তোড়জোড় করতেছে ?
লেটেস্ট টেকনোলজিতে যেতে সমস্যা কি সরকারের ? বুড়ি ছুঁয়ে যাওয়ার মতো করে প্রতিটা টেকনোলজিই কেন ছুঁতে হবে ? নাকি ভেন্ডর যাতে প্রচুর ব্যবসা করতে পারে সেইটা দেখার দায়িত্ব সরকার নিলো ?
অলমিতি বিস্তারেণ
সিটিসেলের জন্য LTE তে যাওয়াটা হবে সবথেকে লাভজনক। অন্য অপারেটররা অনেকদিন আগে থেকে থ্রিজি'র জন্য কম্পিটিবল ইকুইপমেন্ট, ব্যাকবোন ইত্যাদি বানায় বইসা আছে। এখন LTE তে যাইতে গেলে তারা ব্যাপক ধরা খাবে। থ্রিজি'র জন্য রেডিও লেভেলে বিটিএসে যেখানে একটা কার্ড বসায় স্রেফ সফটওয়্যার আপগ্রেড করলেই চলে সেখানে LTE এর জন্য তাদের সম্পূর্ণ নতুন বেস স্টেশন বসাইতে হবে। সেইসাথে কোরেও করা লাগবে ব্যাপক পরিবর্তন। সবমিলায় ইনভেস্টমেন্টের পরিমান এ যাবতকালের সব ইনভেস্টমেন্ট ছাড়ায় যাওয়ার কথা। তবে সেইটা অপারেটরদের সমস্যা। সরকারের উচিৎ একবারে LTE এর লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া। তার ফলে মার্কেটে যে আগুন লাগবে তাতে আল্টমেট ফায়দা কাস্টমারের। অপারেটররা সেক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে LTE দিয়া শুরু করে আগাইতে পারে। এই পরিস্থিতি দেখতে মঞ্চায়
পরিচিত একজন বাংলালয়নে কাজ করে, সে আমাকে বলল তাদের নেটওয়ার্ক নাকি LTE তে যাওয়ার প্ল্যান করে বানান হয়েছে। আর একটা জিনিস আমি বুঝিনা ১৪২ গিগা ব্যান্ডউইডথ ফালায়া রাইখা কি লাভ হইতাসে, তবে কেও কেও কয় ওইটা দিয়া নাকি VOIP বিজনেস চলতাসে। আমারা যে কবে MBps স্পীড পামু?
টেলিটক যে দেশের জন্য বোঝা, সেটা সরকারের অনেক আগেই বুঝা উচিৎ ছিলো। আর আমি আশা করি, দেশে এমন বহু দেশীয় প্রতিষ্ঠান আছে যারা টেলিটকের দায়িত্ব নির্দ্বিধায় নিতে পারবে। তখনও কিন্তু দেশের টাকা দেশেই থাকবে। তাহলে অন্তত একটা দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগীতায় দেখতাম। আর গ্রাহকরাও একটা মানসম্মত সেবা পেত।
আ'তা ঠাকুর।
রুমমেটের সিম রিপ্লেসমেন্ট করার জন্য টেলিটক এর উত্তরা অফিসে গেসিলাম। গিয়া দেখি লোডশেডিং। আর অফিসের সবাই ২টা হারিকেন নিয়া বইসা রইসে!!! জিগাইলে উত্তর পাওয়া গেলো- "ভাই ৩-৪দিন ধরে আইপিএস টা নষ্ট। কালকের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি!"
আর এরা দিবো থ্রিজি???
টাকার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ব্যবসা করা যায় না। গ্রামীণফোন যখন প্রথম এসেছিল তখন তারা গ্রাহক সেবা দিয়েই ফোন ব্যবহারকারীদের মন জয় করে নিয়েছিল। হাল আমলে এয়ারটেল কলরেট নাটকীয়ভাবে মাটিতে নামিয়ে এনে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের বিরাট একটা অংশকে মাত করে নিয়েছিল। পরবর্তীতে দেখায় দুটো কম্পানি-ই কলরেট অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয়। ব্যবসার সূত্রটা এমনই: প্রথমে মন জয় কর, পরে টাকা মার। টেলিটকের চিন্তা হল একেবারে উল্টো!
মিনহাজ.রাতুল
নতুন মন্তব্য করুন