আমরা দিন শুরু করি ফেসবুকে কয়টা নোটিফিকেশন আসলো তা দেখে - ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে খবর পড়ি - শাহবাগীদের গালি দেই - অফিসে যেতে যেতে সরকারের কাজে হতাশ হই - অফিসে বসে বিএনপির নির্বুদ্ধিতায় নির্বাক হই - তারপর আবার বাসায় এসে মশামাছি মারি - আনন্দে ফেসবুকিং করি - টকশোতে রাজা উজির মারি - বান্ধুবান্ধবীদের হাই হ্যাল্লো বলি - প্রিমিয়ার লিগ আর লা লিগা দেখে স্ট্যাটাসের বন্যায় হোমপেজ ভাসাই - মাঝে মধ্যে দুপুরে ভরপেট খেয়ে ভুড়ি দুলিয়ে একটা পাওয়ার ন্যাপ নেই - উইকঅ্যান্ডে মুভি দেখি - তারপর রাতের আড্ডাতে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দেশটা সম্ভাব্য কত প্রকারে রসাতলে গেল তা নিয়ে লম্বা বক্তৃতা দেই - দিতে দিতে কখন ভোর হয়ে যায় - সেই খেয়াল আর থাকে না - এরপর ঘুমের স্বল্পতার জন্য আবার শাহবাগীদের গালি দেওয়া শুরু করি।
মিনহোয়াইল অন্য আরেক জগতে - শাহবাগে জাদুঘরের কাছে এক কোণায় বসে সাতটা ছেলে আমরণ অনশন করে - পাশ দিয়ে লোকজন চলে যায় - কেউ হয়তো তাকায় - কেউ তাকায় না - এত ব্যস্ততায় কার সময় আছে প্রশ্ন করার - 'ভাই কেন অনশন করেন?' দরকার কি বাবা, দুইদিন আগেই বজ্জাত শাহবাগীদের জ্বালায় রাস্তাটা এক নাগারে কতদিন বন্ধ ছিল। শহীদ রুমি স্কোয়াড এর ব্যানারে এই 'বুকা'র দল ভাবে দুই-চার দিন না খেয়ে থাকলেই সরকারের টনক নড়বে - পাবলিকের 'চেতনা' ফিরে আসবে - মহাত্মা গান্ধীর অনশনের মত। এই 'বুকা'র দলকে ধিক্কার জানাই। আর ধিক্কার জানাতে জানাতে আসুন আর এক কাপ চা হয়ে যাক।
শহীদ রুমী স্কোয়াডের 'বুকা'দের কথা (অনুবাদ করেছেন নাঈম)
এই ছেলেগুলির পাশে দাড়ানোর মত মানুষ খুব বেশি নাই। তারা আন্দোলনের একটা এক্সট্রিম কিন্তু অহিংস পথ বেছে নিয়েছে। তাদের দাবীতে কোন ভুল নাই এবং এটা আমাদের সবার দাবী। গণজাগরণ মঞ্চ যদিও বলেছে এদের দাবী আর তাদের দাবী অভিন্ন কিন্তু একাত্মতা ঘোষনা তারা করবে না। সূতরাং এরা প্রায় নিঃসঙ্গ এবং এই কারনে র্যাব, পুলিশ, ডিবি, এনএসআই, ডিজিএফআই সবাই এদের হয়রানি করবে। সকাল থেকে সব কয়টা চ্যানেলের নিউজ ফলো করার চেষ্টা করলাম। সময় আর একাত্তর চ্যানেলে এক লাইন বলা ছাড়া আর কোন কাভারেজ তারা পাচ্ছে না। তাই আমাদের এই মুহূর্তে এদের পাশে দাঁড়ানো খুব জরুরী। লেটস স্প্রেড দেয়ার ওয়ার্ড। যতভাবে পারা যায়।
(এর থেকে বেশি কিছু করার ক্ষমতা আমার নাই। অত্যন্ত লজ্জা আর গ্লানি নিয়ে স্বীকার করছি এদের সাথে যেয়ে অনশনে যোগ দেয়ার মত সাহস কিংবা অবস্থা আমার নাই।। )
কার্টেসিঃ "শঙ্খচিল"
মন্তব্য
প্রথম প্যারায় যা লিখেছেন,ওই জীবন শীঘ্রই শেষ হবে। সব সময় আতঙ্কে থাকবেন। অনশণকারীদের বলছি, যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছো, অনশণ দিয়ে ওই যুদ্ধ হয় না।শক্তি সঞ্চয় কর, মাথা খাটাও।
ক্ষুধার তীব্রতার কাছে ঠিকই হার মানবে, আবেগ উবে যাবে... অনেকেই হয়ত এভাবে চিন্তা করে বিষয়টাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, কিন্তু এই ছেলেগুলো যে সাহস, দেশপ্রেম আর প্রতিজ্ঞায় ভর করে এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে, তার প্রতি যথার্থ সম্মান জানানোর ভাষা নাই। সমন্বয়ক যে ছেলেটা, তাকে দুইতিনবার দেখেছি পরিচিত আড্ডায়।
আশা করব সরকার এবং মিডিয়ার দ্রুত টনক নড়বে। এক দাবিতে আবার সবাই সরব হবে এবং সেটার বাস্তবায়নে একাত্ম হবে।
আমার মনে হয় এটা শেষ পদক্ষেপ হওয়া উচিত ছিলো। তবে যুক্তিহীন আবেগ না থাকলে কবেই বা কী অর্জন হয়েছে। এদের সাথে গিয়ে বসতে পারলে অসাধারন হতো... কিন্তু শিকলে বাধা জীবন
হাসি?! আপনি হাসির কি দেখলেন?
কয়েকজন 'দেশপ্রেমিক(দলপ্রেমিক)' এটা নিয়ে রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে।
শহীদ রুমি স্কোয়াডের ছেলেগুলোর জন্য মায়া লাগছে। না খেয়ে বসে আছে, সারাদিন এরা পানি পর্যন্ত খেতে চায়নাই, পরে জোর করে পারনি খাওয়ানো হয়েছে। অথচ তাদের নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের সত্যিকারের উদ্দেশ্য কী, সেই নিয়ে সন্দেহ বেড়েই চলেছে। বিএন্পির মত ভোটের রাজনীতিতে তাদের কাছে জামাতও একটা এসেট। দিনশেষে এইটাই সত্যি।
ফেসবুকে অনেককেই দেখেছি, "সাথে আছি" জাতীয় পোস্ট দিয়ে এই উদ্যোগের সাথে সংহতি জানাতে। এই প্রেক্ষিতে, আমরা নিজেরা চিন্তা করি, আমরাও ওদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে, একদিন সারাদিন না খেয়ে থাকব। বিধাতা আমাকে দূর্বল মানুষ করে পাঠিয়েছেন, আমরণ অনশনের সংকল্প নেওয়ার মত শক্তি এবং সাহস কোনটাই নাই। তাই আপাতত একদিনের প্রতীকি অনশন করার লক্ষে আগামী শুক্রবার আমরা দিন ঠিক করেছি। শারীরিক বা অন্যান্য অনেক সমস্যার কারণে অনেকের পক্ষেই হয়ত ইচ্ছে থাকলেও একদিন অনশন করা সম্ভব হবেনা, তাদের কাছে অনুরোধ শুক্রবার সমস্যা হলে, আপনার সুবিধে মতন একদিন করুন। একদিন না পারলে এক বেলা করুন। কিন্তু আপনার অবস্থান জানান দিন।
ইভেন্ট পেজের লিঙ্ক।
অনেকেই বলছেন যুক্তিহীন আবেগ, ঝোঁক ইত্যাদি , কিন্তু ওদের দেশপ্রেম আর নিষ্ঠার কাছে যে কোন যুক্তিই তুচ্ছ। নিজে করতে পারছি না বলেই ওদের প্রতি সম্মান আরও বেশী হচ্ছে। জানিনা সরকার তার ভোটের রাজনীতি থেকে বের হয়ে এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিবে কিনা, কিন্তু আশা করতে দোষ কি!
শ্রদ্ধা জানাই এই বোকা তরুণদের। লজ্জ্বাবনত হয়ে স্বীকার করছি, বাংলাদেশে থাকলেও সশরীরে সংহতি জানাতে পারতাম না সম্ভবতঃ। আশা করি গণজাগরণ মঞ্চ তাদের অবস্থান থেকে সরে আসবে
শহীদ রুমী স্কোয়াড- এর ফেসবুক পেজ থেকে
দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে কিছু করতে গেলে যুক্তির সাথে কিছুটা আবেগের সমন্বয় থাকতে তো হবেই ।
নতুন মন্তব্য করুন