দুপুর বেলা গরুর গোস্তো দিয়ে ভরপেট খেয়ে একটা ভাত ঘুম দিয়েছিলাম। দিনে দুপুরে মশার অত্যাচারে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ডেঙ্গু মশা নিয়ে ক'দিন চিল্লাপাল্লা করেই সেই আন্দুলন থেমে গেছে বলে একটু মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। রাগ কমাতে রওনা দিলাম বইমেলার পথে। একটু আয়েশ করে যাওয়ার আশায় সিএঞ্জি দাম দর করতে যেয়ে আরেক দফা মেজাজ খারাপ। শেষমেষ ভাঙ্গা হাত নিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে বিহঙ্গতে উঠলাম। শাহবাগে নেমে ভাবলাম টিএসসি পর্যন্ত এই দীঈঈর্ঘ পথ হেঁটে যাওয়া ঠিক হবে না। বহু কাকুতি মিনতি করার পর এক ব্যাক্তি আমাকে তার রিক্সায় ওঠার অনুমতি দিলেন। বার দশেক প্যাডেল চাপার জন্য তাকে দশটি টাকা গুনে গুনে দিতে হলো।
আজকেও মেলার উদ্যান অংশেই যাওয়া হয়েছিল। বাংলা একাডেমির অংশে কেন জানি যাওয়ার আগ্রহ পাচ্ছি না তেমন। অথচ লিটল ম্যাগ চত্তরটা প্রতিবার আড্ডার জন্য একটা চমৎকার যায়গা ছিল। দ্বিখণ্ডিত মেলার জন্য কিছুটা বেদনা অনুভব করি। ঢাকা শহরে শীতকাল হুট করে একদিন চলে যায়। আজকে ছিল সেইদিন। শীত চলে যাবার তিন চারদিন পরও রাস্তা ঘাটে কিছু মানুষকে দেখা যায় ভারী শীতবস্ত্র পরে থাকতে। তারা আসলে মানসিক ভাবে শীতটা তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেন নি বা কাটিয়ে ওঠার সাহস সঞ্চয় করতে পারেন নি। এবারের বইমেলারও অনেকটা সেই দশা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল পরিসর থাকা সত্ত্বেও বইয়ের স্টলগুলো সেই পুরাতন ফরম্যাটটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সামনে নিশ্চয় পারবে।
মেলায় ঢোকার মুখেই পুলিশের কন্ট্রোল রুম। সেখানে সারি সারি চেয়ার পাতা, আর তাতে বসে আছেন সারি সারি পুলিশ। অনেকেই দেখলাম সেই কন্ট্রোলরুমের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে অসংখ্য পুলিশ রেখে একটা ছবি তুলছেন। এই মুহূর্তে মোস্ট হ্যাপেনিং প্লেস অন আর্থের একটা লিস্ট করলে ঢাকা বইমেলা তাতে অবশ্যই প্রথম দিকে থাকবে।
গতদিন মেলায় ক্লকওয়াইজ চক্কর দিয়েছিলাম। আজ তাই অ্যান্টিক্লকওয়াইজ চক্কর দেয়া শুরু করলাম। ছায়াবীথির সামনে যেয়ে দেখি পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য মহামতি তারেক অণু দন্ডায়মান। এতদিন শুধু ভার্চুয়াল জগতেই তার সাথে ইন্টার্যাকশন হয়েছিল বলে অনেকের মত আমারও ধারনা ছিল "তাড়েকাণু মিডিয়ার সৃষ্টি"। আজকে বুঝলাম ঘটনা তা নয়। প্রকৃতপক্ষে "তাড়েকাণুকে ঘিরেই মিডিয়ার সৃষ্টি"।
প্রফেসর হিজিবিজবিজ এসেছিলেন তার বড় ছেলেকে নিয়ে। অণুর "জমজ বড়ভাই" অপু ভাইও ছিলেন। বেশ একটা আড্ডা জমে উঠলো সেখানে। এর মাঝেই খেয়াল করলাম নিয়মিত বিরতিতে কেউ না কেউ এসে এক কপি "পৃথিবীর পথে পথে" কিনে তাড়েকাণুর থেকে অটোগ্রাফ নিয়ে যাচ্ছে। ঘটনা ইট্টু সন্দোজনক মনে হলেও এক পর্যায়ে চক্ষু লজ্জার খাতিরে আমাকেও এক কপি কিনতে হলো। বইটা কিছুক্ষণ উল্টেপাল্টে লেখককে পরবর্তী সংস্করণের জন্য কিছু "গঠন মূলক পরামিশ" দিয়ে ভাব ধরলাম।
আমাদের আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসছিলেন চরম উদাস, হিমু, মুখফোড় ইত্যাদি ফ্যাসিবাদী ব্লগারের পাশাপাশি আইভরি কোষ্ট ফেরত ঔপন্যাসিক আমিষুল হক পুটুন্দা। আড্ডার দ্বিতীয় পর্যায়ে অতন্দ্র প্রহরী এলেন নারীকুল পরিবেষ্টিত অবস্থায়। তার এই জনপ্রিয়তায় প্রভাবিত হয়ে টিভি চ্যানেলগুলো ইন্টারভ্যু নিতে ছুটে এল। তিনি নিজের অমায়িক হাসিটি অক্ষুণ্ণ রেখে ইন্টারভ্যু দিতে লাগলেন। বুনোহাঁসের সাথেও ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাইরে আজই প্রথম দেখা। তিনি তার "সদ্য সন্ত্রাস কবলিত চৌকষ মুঠোফোনটি" আমাদের এক নজর দেখার সুযোগ করে দিলেন।
এর মধ্যেই কখন যেন বেশ রাত হয়ে গেছে। তখন আমরা সবাই লাইন ধরে চরম উদাসের "লাইনে আসুন" বইখানা এক কপি করে খরিদ করে বাড়ি ফেরার লাইন ধরলাম।
মন্তব্য
"তাড়েকাণু মিডিয়ার সৃষ্টি" - আমি তো এটাকেই সত্য বলে মনে করতাম।
আমি তো ভেবেছিলাম পৃথিবির বিভিন্ন জায়গার পোস্টার নিউমার্কেট থেকে কিনে এনে দেয়ালে টাঙিয়ে, একই টি শার্ট পড়ে, ক্যামেরার দিকে পিঠ দিয়ে কতিপয় ব্যাক্তি 'তারেক অণু' নামে ছবি প্রকাশ করে। একই পোষাক, একই টুপি-পরচুলা, মানুষগুলে আলাদা। অনেকটা 'ডেথ রেস' মুভি সিরিজের ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের ম্ত।
আর, হাত ভাঙলেন কি করে? নাকি "দুর্নীতির কালো হাত -ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও" এর সময় ধরা খেয়েছেন?
[রসিকতা করলাম, তারাতারি সেরে উঠুন]
শুভেচ্ছা
[মেঘলা মানুষ]
আপনার ধারনা সঠিক হবার এখনো সম্ভাবনা আছে। আলাদা আলাদা মানুষদের মধ্যে হয়ত শুধু একজনের সাথেই আমার দেখা হয়েছে কাল। শুনলাম আগামী তিন বছর তাড়েকাণু নামক কনফেডারেটেড ক্যারেক্টারটি আফ্রিকা মহাদেশ চষে বেড়াবে। আজকেই তার ফেসবুক ওয়ালে গেলে দেখবেন তিনি এখন হাকালুকি হাওরে। এদিকে আবার বইমেলাতেও ললনা পরিবেষ্টিত হয়ে ছবিতে পোজ দিয়ে যাচ্ছেন। সূতরাং একথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে তাড়েকাণু কোন একক ব্যাক্তি নন, এটি একটি অ্যালায়েন্স!
আপনি তো আরও সন্দেহ ঢুকিয়ে দিলেন মনের ভেতর! আসলেই, এত অল্প সময়ে এত জায়গায় লোকটা কিভাবে যায়। এটা একটা অ্যালায়েন্স।
এরপর বইমেলায় গেলে তারেক অণুর অটোগ্রাফের সাথে ফিংগারপ্রিন্ট নিয়ে আসতে হবে।
শুভেচ্ছা
[মেঘলা মানুষ]
আমি ও বই মেলাতে গিয়েছিলাম , অনুদার সাথে দেখা হয়ছে ; অটোগ্রাফও নিয়েছি। এইরকম একজন সেলিব্রেটিকে দেখে বেশ একটা ভাবের উদয় হল । আর কাউকে চিনি না তাই বুঝতে পারলাম না সচলের অন্য কেউ ছিল কিনা । কিন্তু চরম উদাসে বইটা বিনা অটোগ্রাফ কিনতে হল, সেই বান্দাকে দেখার বড় শখ ছিল
ইসরাত
মানে আপনি তারেক অণু অ্যালায়েন্সের একজন মেম্বারকে দেখেছেন বইমেলায়, তাই তো?
আপনার বই মেলানিয়ে লেখাগুলো দারুণ হচ্ছে। আরো নিয়মিত পোস্ট করুন।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
অতন্দ্র প্রহরী আর বুনোহাঁসকে তো তাহলে মিস করেছি হে!
"সদ্য সন্ত্রাস কবলিত চৌকষ মুঠোফোন" - পেছনে কাহিনি আছে মালুম হচ্ছে !!
হবে নাকি আরেকটা পোষ্ট?
তোমার বইমেলা সিরিজটা চালিয়ে যাও হে - অন্তত দেশের বাইরে যাঁরা আছেন তাঁরা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারবেন।
____________________________
অঃপ্রঃ আর বুনোহাঁস ছাড়াও আরো অনেক সচল এসেছিলেন। আমি একটু অসামাজিক টাইপ বলে সবার সাথে পরিচিত হতে পারিনি।
বুনোহাঁসের সেলফোনটা ক'দিন আগে সিএঞ্জির কাভার কেটে ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তারা শুধু ফোনের কাভারটাই নিতে পেরেছে। এ নিয়ে বুনোহাঁস ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন।
মনের মধ্যে কত বিশাল পাথর চাপা দিয়ে লেখাগুলো পড়ি, কেউ যদি জানত।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
দারুন হচ্ছে লেখা। আরও নিয়মিত আপডেট আসুক বইমেলার। আর তো কিছুদিন মাত্র।
সবাই এত ধুমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন দেখলেই হিংসা হিংসা লাগে।
ঠিক আছে, ব্যপার না, আমিও একদিন .........
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
বইমেলাতে কোনদিকে গেলে তারকানুর দেখা মিলবে?
যেকোন একদিকে গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই তারেক অণুকে দেখিয়ে দেয়ার কথা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তা বটে। তবে মেলায় অণুর একটি 'জমজ বড়ভাই' আছে। সেদিন উনার সাথে দেখা হতেই আমি বিরাট একটা হাসি দেয়ার পরও অন্ধকার মুখ দেখে টের পেয়েছিলাম ইনি উনি নহেন। কাজেই নকল হইতে সাবধান।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আপনার এই সিরিজটা আসলেই ভালো লাগছে। আগেরটায় আলসেমি করে বলা হয়নি।
সেদিন কিন্তু অতন্দ্র প্রহরী, বুনোহাঁস বা অণু ছাড়া আরও সচল ছিলেন মেলায়। নজরুল ইসলাম, পান্থ রহমান রেজা, নিবিড়, যাযাবর ব্যাকপ্যাকার, রোয়েনা, খেয়াদি, দুষ্টুবালিকা, সুমিমা ইয়াসমিন সুমি সকলেই সবান্ধবে মেলা গুলজার করছিলাম।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আহ!! আমি তো তাহলে সেদিন বিরাট মিস করেছি দেখি!!
রিসালাত বারী আর তারেকাণু ছাড়া শুধু এস এম নিয়াজ মাওলা ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিল সেদিন।
____________________________
সঠিক
তারেকাণু মিডিয়ার সৃষ্টি নাকি মিডিয়াই তারেকাণুর সৃষ্টি সে অমীমাংসিত জটিলতায় না গিয়ে আপনাকে একটা প্রশ্ন করি,
বই মেলা নিয়ে লিখবার কুবুদ্ধিটা দিলো কে আপনাকে? হাতভাঙা নিয়েও মেলায় যেতে হবে! এটা কোন কথা হলো
( হাত ভাঙলেন কিভাবে? দ্রুত সুস্হ হয়ে উঠুন ভাই) তাও আজকের পোস্টে পাঁজা পাঁজা বই কেনার(প্রথম পোস্টের কেনা বইগুলো গোটা আছে তো? আমি কিন্তু ব্যাপক নজর দান করিয়াছি ) আহ্লাদ নাই সেভাবে দেখে ভালো লাগছে উদাসদার বই বের হয়েছে নাকি? রকমারিতে পাওয়া সম্ভব হবে ওটা? যাইহোক, গরুর গোস্তো দিয়ে ভরপেট ভাত খেয়ে একটা সেইরাম ঘুম না দিয়ে বইমেলাতে যাবার বদবুদ্ধির জন্য তীব্রধিক্কার জানিয়ে গেলাম। তওবা করি বইমেলা যাওয়া তো আর ছাড়বেন না বললেই! যাবেন এবং সেটা নিয়ে সাতখান করে লিখবেনও। আর সেসব মুখ বুঁজেই সহ্য করতে হবে! এ ঘোর অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কেউ নেই সচলে? কেউ না
রকমারিতে পাবেন। আর আপনের জন্য সমবেদনা
ময়নামতি রক্স!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বড় মিস করতেছি এবারের বইমেলা
আন্নের না আসার কথা মেলায়? কবে আইবেন? লাইনে আসুন এক কপি কিনে এক দোস্তরে গিফট করে দিসি। সে আজকেই ইউ এন মিশনে আইভরি কোস্ট যাইতেছে। সূতরাং আমিষুলের মত আইভরি কোস্ট ফেরত লেখক হইতে না পারলেও আপনার বই কিন্তু আইভরি কোস্ট পৌঁছায় গেছে
কইচ্ছেন টা কি!
আমি কি তাহলে নিজেকে এখন আইভরিকোষ্ট ফেরত লেখক হিসেবে দাবী করতে পারি?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এবার বই মেলায় সচলের অনেকের লেখা বেরিয়েছে, মেলা হচ্ছেও বড় জায়গা নিয়ে, আড্ডা, মোড়ক উন্মোচন তারেকানুৰ ক্ষণে ক্ষণে বইয়ের প্রচার সব মিলিয়ে বই মেলা মিস করছি খুব.
বইমেলা মিস করি :(। আপ্নার পোস্টটা কলিজায় ঘা দেবার জন্য দারুণ ।
এমন ফাপরে আছি যে এর মধ্যে দুই দিন ক্যাম্পাসে গেলেও বই মেলায় ঢোকার ফুরসত পাই নি!!!!
তয় দুই একদিনের মধ্যে যামুই যামু।
লেখা
সুবোধ অবোধ
নতুন মন্তব্য করুন