মুকুল ভাই

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি
লিখেছেন লুৎফর রহমান রিটন (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৬/০৬/২০০৮ - ৯:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের চতুর্দশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ, ২৬ জুন। আজ ২৬ জুন চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী এম,আর আখতার মুকুলের। গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি দ’ুজনকেই।

নিজের কাছে নিজেই আমি প্রতিশ্রুত ছিলাম-মুকুল ভাইকে নিয়ে কিছু একটা লিখবো, কিন্তু প্রবাস জীবনের ক্ষমাহীন যান্ত্রিকতা সে সুযোগ থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছে।
গত বছর এই দিনে জনকণ্ঠে মুকুল ভাইকে স্মরণ করেছিলাম। সচলায়তনের বন্ধুদের জন্যে সেই লেখাটি আজ এখানে-[/img]

মুকুল ভাই
পৃথিবীতে কিছু মানুষ নিজের জন্যে জন্মায়। কিছু মানুষ জন্মায় শুধুই তার পরিবারের জন্যে। কিছু মানুষ জন্মায় একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা এলাকার জন্যে। এবং কিছু মানুষ-তাঁর পরিবার,তাঁর এলাকার সীমানা ছাড়িয়ে গোটা একটা দেশের জন্যে জন্মগ্রহণ করেন। মুকুল ভাই এই শেষোক্ত গোত্রের।
আমি এম আর আখতার মুকুলের কথা বলছি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের চরমপত্রের মুকুল ভাই। আমি বিজয় দেখেছিসহ বহু ঐতিহাসিক গ্রন্থের লেখক মুকুল ভাই। কয়টার নাম বলবো? মুজিবের রক্ত লাল, একুশের দলিল,ভাসানী-মুজিবের রাজনীতি, কোলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা-এরকম অনেক মুল্যবান গ্রন্থ তিনি আমাদের জন্যে লিখে রেখে গেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিভিন্ন দৈনিক আর সাপ্তাহিকে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত লিখেছেন কলামের পর কলাম-অবিরাম। এ্যাতো লেখেন কি করে? জিজ্ঞেস করেছিলাম একবার। জবাবে মুকুল ভাই তাঁর নিজস্ব স্টাইলে ঢাকাইয়া ডায়ালেক্টে বলেছিলেন- ‘‘আরে হোনো মিয়া, বাংলাদ্যাশে ফুলটাইম লেখক তো একজনই আছে, হেইডা এই মুকুল। বাকী সবতে পার্টটাইম রাইটার....আমি লেখি রোজ। প্রত্যেকদিন। ঘড়িতে টাইম ধইরা। প্রত্যেকদিন। ল্যাখনের সময় ক্রেন দিয়া টাইন্যাও কেউ আমারে তুলবার পারেনা। রোজ কয় পৃষ্ঠা লিখুম সেইটাও হিসাব করা থাকে। টাইম টু টাইম, পৃষ্ঠা টু পৃষ্ঠা। এইটা মনে করো য্যান আমার চাকরি। এই চাকরিটা আমি নিজেই নিজেরে দিছি।.....ক্যালা দিছি? আরে মিয়া আমি মইরা গ্যালে বুঝবা।.....হালারা সবতে খালি টাউটারি করে। ভবিষ্যতের লাইগা আমি মুকুল তোমাগো কিছু জিনিষ দিয়া যাইতাছি। কামে লাগবো। ইতিহাস লেখনের সময় কামে লাগবো।.....আমারে বাদ রাইখা তোমরা ইতিহাস ল্যাখবারও পারবা না আবার ইতিহাস খুঁইজ্যা ভি পাইবা না।.....বাংলাদ্যাশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-হ্যারপরের ইতিহাস ব্যাবাক কিছু পাইতে হইলে মুকুলের কাছে আহোন লাগবো....।’’

মুকুল ভাইয়ের অপরূপ সান্নিধ্য আমার জীবনকে দীপান্নিত করেছে। তাঁর সান্নিধ্যের স্মৃতিগুলোর অধিকাংশই বিপুল আনন্দের উচ্ছ্বল হাস্যরসে টইটম্বুর। ‘‘নেপথ্য কাহিনী’’ নামে আমার একটি সম্পাদিত গ্রন্থ আছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয় ও ঘটনার জন্মকথা নিয়ে আগামী প্রকাশনী থেকে বইটি বেরিয়েছিলো ২০০১-এ, একুশের বইমেলায়। খবরের পেছনে যে খবর, ঘটনার পেছনে যে ঘটনা, কাহিনীর পেছনে যে কাহিনী-তারই মুদ্রিত রূপ ‘‘নেপথ্য কাহিনী’’তে মুকুল ভাইয়ের চরমপত্রের জন্মকথার সঙ্গে একাত্তরের ষোলই ডিসেম্বর প্রচারিত ‘‘কী পোলারে বাঘে খাইলো’’ শিরোনামের সর্বশেষ চরমপত্রটিও রয়েছে। উজ্জ্বল এক সন্ধ্যায় বেইলি রোডের সাগর পাবলিশার্সে গিয়ে এই বইটির পরিকল্পনার বিষয়টি জানিয়ে বইটিতে চরমপত্র ছাপার অনুমতি চাইতেই মুকুল ভাই বলেছিলেন-‘‘ছাইপা দ্যাও ছাইপা দ্যাও, মগর নিজের নামে ছাইপো না....।’’
২.
শুরুতে বলেছিলাম- কিছু মানুষ-তাঁর পরিবার,তাঁর এলাকার সীমানা ছাড়িয়ে গোটা একটা দেশের জন্যে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁরা তাঁদের মেধা মনন আর চেতনার সমন্নয়ে জাতিকে আলোকিত করেন,আলোকিত করেন দেশকে। এরকম গুণী মানুষদের কদর করতে হয় ব্যক্তিগত এবং রাষ্ট্রীয়,সকল পর্যায় থেকে। একক এবং সম্মিলিত ভাবে। নইলে কি হয় তা তো জ্ঞাণতাপস ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেই গেছেন-যে দেশে গুণীর কদর হয় না সে দেশে গুণীরা জন্মায় না। আমরা কি আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কদর করি? সম্মান করি? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তরটি ‘‘না’’ সূচক। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্ম কিংবা মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁদের পরিবারের সদস্যরাই কেবল স্মরণ করেন তাঁদের। দায়টা যেনো কেবল তাঁদেরই। আর কারো কোনোই দায় নেই। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে যে মানুষটির মেধা প্রজ্ঞা আর দূরদর্শী নেতৃত্ব একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে কাঙ্খিত সাফল্যের পরিণতিতে পৌঁছে দিয়েছিলো সেই তাজউদ্দীন আহমদের কথা বিস্মরণপ্রিয় আমরা তো ভুলেই যেতাম, যদি না তাঁর সুযোগ্য কন্যা সিমিন হসেন রিমি বছরের পর বছর ধরে তাঁর বাবাকে নিয়ে আবিরাম লেখালেখি এবং অন্যান্য কর্মকান্ড চালিয়ে না যেতেন। আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক প্রথিতযশা সাংবাদিক-লেখক সন্েতাষ গুপ্তকে নিয়ে লিখছেন তাঁর পুত্র-কন্যারা। শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনকে নিয়ে লেখেন তাঁর পুত্রদের কেউ কেউ-যেমন জাহিদ রেজা নূর। শহীদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীনকে নিয়ে তাঁর পুত্র সুমন জাহিদের লেখালেখির সুবাদে আমরা তাঁকে ভুলে যেতে পারিনি। মুক্তচিন্তার মুক্তবুদ্ধির অপরূপ রূপকার হুমায়ূন আজাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা প্রতিবছর হুমায়ূন আজাদের জন্ম এবং মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে নিয়ে লিখছেন, যেনো তাঁকে আমরা ভুলে না যাই। একই রকম ভাবে দেখি- প্রতিবছর এম আর আখতার মুকুলের জন্ম এবং মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে নিয়ে লিখছেন তাঁর ছোটবোন শামীম মমতাজ (সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল মমতাজ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী) কিংবা অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মুকুলকন্যা কবিতা অথবা কবিতার স্বামী কাইয়ূম পারভেজ। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়-এমনি ভাবে জাতির আরো অনেক অনেক কৃতি সন্তানকে স্মরণ করছেন শুধুই তাঁদের পরিবারের সদস্যরা! যাঁদের পরিবারের সদস্যরা লেখালেখি করতে সক্ষম নন কিংবা লিখতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে কি ঘটছে তাতো সহজেই অনুমেয়।

কথাগুলো বলছি বিপন্ন ও বিষন্ন এক বেদনাবোধ থেকে। অতি সম্প্রতি আমার উদ্দেশে লেখা মুকুল ভাইয়ের ছোটবোন শামীম মমতাজের একটি ই-চিঠি আমাকে আরো বেদনার্ত করে তুলেছে ‘‘....তাঁর (মুকুল ভাইয়ের)জীবনের সব কর্মকান্ড, রচনাবলী আজ ধীরে ধীরে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাচ্ছে। এখনকার নতুন প্রজন্ম চরমপত্র কি তা জানে না, বুঝতেও চেষ্টা করে না, পারে না চিনতে বিখ্যাত সাংবাদিক-কলামিস্ট-লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা এম আর আখতার মুকুলকে।’’-কী ভয়াবহ কথা! এই ২৬ জুন তাঁর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। মাত্র তিন বছরেই আমরা মুকুল ভাইকে ভুলতে বসেছি? মুকুল ভাইকে ভুলে যাওয়া অপরাধ। মুকুল ভাইকে ভুলে যাওয়া পাপ।
প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় মুকুল ভাই, আমাদের আনন্দ-বেদনায় অনিবার্য আশ্রয় রবীন্দ্রনাথ থেকে ধার করে বলি-‘‘নয়ন সমুখে তুমি নাই, নয়নের মাঝখানে নিয়েছো যে ঠাঁই....।’’

অটোয়া,কানাডা^ ২৫ জুন,২০০৭


মন্তব্য

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

রিটন ভাই লিখেছেন "নিজের কাছে নিজেই আমি প্রতিশ্রুত ছিলাম-মুকুল ভাইকে নিয়ে কিছু একটা লিখবো, কিন্তু প্রবাস জীবনের ক্ষমাহীন যান্ত্রিকতা সে সুযোগ থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছে।
গত বছর এই দিনে জনকণ্ঠে মুকুল ভাইকে স্মরণ করেছিলাম। "

আমি তখনই পড়েছিলাম তারপরও ধন্যবাদ
তবে সচলে মুকুল ভাইকে নিয়ে
আপনার ছড়া প্রত্যাশা ত' করতে পারি
চার লাইন হলেও
কোন অজুহাত কাম্য নয়

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

কথা ঠিক। ধন্যবাদ মানিক।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

কীর্তিনাশা এর ছবি

যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালী থাকবে ততদিন আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকুন - শ্রদ্ধেয় এম আর আখতার মুকুল, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সহ সকল কীর্তিবান মানুষ।

"মুকুল ভাইকে ভুলে যাওয়া অপরাধ। মুকুল ভাইকে ভুলে যাওয়া পাপ।"

এই কথার ওপর আর কিছু বলার থাকতে পারে না। রিটন ভাই আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ এমন লেখার জন্য। আমাদের বিবেককে এভাবে নাড়া দেবার জন্য।

ছড়ার দাবি বস আমারো রইলো।

------------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

তাঁর প্রয়াণের পর একটি ছড়া অবশ্য লিখেছিলাম মুকুল ভাইকে নিয়ে।
আবারো লিখবো না হয় কীর্তিনাশা।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

গৌতম এর ছবি

আমার পড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রথম বই হচ্ছে - আমি বিজয় দেখেছি।

একটা বিজয় আমি দেখি নি। সৃষ্টিকর্তা কাজটি ঠিক করেন নি- করে আমাকে সে সময় পৃথিবীতে আনেন নি। কিন্তু বইটি আমাকে বলে গেছে- মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে পারলে এরকম সহস্র বিজয়ে সাক্ষী আমাকে হতেই হবে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

আকতার আহমেদ এর ছবি

শ্রদ্ধা .. !

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আমরা যে ইতিহাস বিস্মৃত অসৎ আর অকৃতজ্ঞ জাতি। দোষ আমাদের মহান ব্যক্তিদের। কেন তাঁরা এমন একটি দেশে জন্ম নিলেন? তাঁদের জন্মভূমিটি বাংলাদেশ না হয়ে ভিন্ন কোনো দেশে হলে আমরা এবং আমাদের সন্তানরা অবশ্যই সঠিক ইতিহাস হাতে পেতাম। কিন্তু হায়- যে দেশে নূহের নৌকাকেও বদলে ফেলার মত হীন প্রকৃয়া চলে, সেই দেশে বিস্মৃতির বেশি কী আশা করা যায়!

পোস্টটির জন্য রিটন ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

মুশফিকা মুমু এর ছবি

পৃথিবীতে কিছু মানুষ নিজের জন্যে জন্মায়। কিছু মানুষ জন্মায় শুধুই তার পরিবারের জন্যে। কিছু মানুষ জন্মায় একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা এলাকার জন্যে। এবং কিছু মানুষ-তাঁর পরিবার,তাঁর এলাকার সীমানা ছাড়িয়ে গোটা একটা দেশের জন্যে জন্মগ্রহণ করেন।

কথাটি খুব সুন্দর আর সত্য
শ্রদ্ধেয় এম আর আখতার মুকুল ও শ্রদ্ধেয় শহীদ জননী জাহানারা ইমাম প্রতি শ্রদ্ধা।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

ঝরাপাতা এর ছবি

আকাশের চেয়েও বিশাল এই দুইজন মানুষ। বিনম্র শ্রদ্ধা তাঁদের তরে।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

সীমান্ত এর ছবি

এম।আর আখতার মুকুল এবং মা'কে শ্রদ্ধা । তাঁরা বেচে থাকুক আমাদের মাঝে ।প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ।

রিটন সাহেব কে এই পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ ।

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

অতিথি লেখক এর ছবি

'যে দেশে গুণীর কদর নেই সে দেশে গুণী জন্মে না।' গুণীর কদর করা তখনই হবে যখন আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তাদের কাজকে, তাদের মূল্যবোধকে, তাদের চেতনাকে সমগ্র জাতির চেতনায় ধারণ করতে পারবো। এজন্য প্রয়োজন শিশুপাঠ্যে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে, বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রেখে গুণীজনদের উপস্থাপন করা। সেটাতো হচ্ছে না। সবাই নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে গুণীজনদের গুণকীর্তন করেন। এম আর আখতার মুকুল যে বলেছিলেন 'নিজের নামে ছাইপো না' সেখানে তাঁর শ্লেষ প্রকাশ পেয়েছে। তিনি জানতেন ভালো কোন উদ্যোগ এদেশে কত বিপত্তি ডেকে আনতে পারে ব্যক্তির জীবনে। কিন্তু লেখা তিনি থামাননি। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন একদিন ওসব কাজে আসবে। আমি আশাবাদী একদিন আমরা গুণীজনদের কাছে শুন্য হাতে গিয়ে দাঁড়াব আমাদের জাতির আসল পরিচয়ের জন্য। তার আগে জঞ্জাল সরানো প্রয়োজন। কে সরাবে জঞ্জাল? দেখি যুদ্ধাপরাধীরা আবার কাছা মেরে রাজনীতি শুরু করেছে।
লুৎফর রহমান রিটনকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

জিজ্ঞাসু

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

ভালো বলেছেন অতিথি লেখক।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি তখন পাগলের মতো থিয়েটার করি। বেইলি রোড মক্কার মতো। আজীজ মার্কেট তখনো সেইরম দাঁড়ায় নাই। বই বলতেই বুঝতাম সাগর পাবলিশার্স। প্রায় প্রতিদিন মহিলা বা গাইড হাউজের আগে সাগরে এমনিতেই একটা ঢু মারতাম। বই কিনতাম... অথবা অযথাই। মানুষটা বইসা থাকতেন। আমি স্রেফ চিনতাম। বই কেনা সূত্রে টুকটাক আলাপ হইতো... বেশি না।
সেখানে প্রতি সন্ধাতেই আড্ডা বসতো ছোট্ট পরিসরে। প্রতিদিনের সেই আড্ডায় বোধহয় দেশের সব চিন্তামনস্করেই দেখায় পাইছিলাম।
কখনো বলতে পারি নাই আমি তার কত বড় ভক্ত। একবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটা বড় কাজের প্ল্যান করলাম... তার কয়টা বই কিনলাম তার সামনেই... তখন গলপ জমলো... সেই স্মৃতি অসাধারন।
আমার কাছে আজীজ মার্কেট না... বই কিনার বড় হাতিয়ার ছিলো সাগর। আমারে পরিচিতের সূত্রে সেইখানে বাকিতেও দিতো... একবার মনে আছে আমি প্রায় পাঁচ হাজার টাকার বই বাকিতে কিনছিলাম নতুন লট আসায়।
মুকুল ভাই মারা গেলো... তার কয় মাস যাইতে না যাইতেই সেই সাগর... সেই সাগর... আবারো বলি সেই সাগর বিক্রি হয়া গেলো...।
আপনি যে বলছেন সিমিন রিমিদের কথা... তখন আমি খুব কষ্ট পাইলাম... সাগরকে কি মুকুল ভাইয়ের রাখা যাইতো না? এই প্রশ্নের জবাব কে দিবো?
এখনো সাগর পাবলিশার্স আছে... কিন্তু সেটা দেহান্তরী... মুকুল ভাইয়ৈর মৃত্তুর ছয় মাস নাগাদ সাগর বিক্রি হইলো... তার পরিবারই বিক্রি করলো...
তার স্মৃতিতে আমরা আসলে কি করতে পারি?
সাগরকে (পাবলিশার্স না... জেনুইন লোক সাগর) এখনো মাঝে মাঝে বেইলি রোডে দেখি... বিদেশী পুরা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

মুকুল ভাই তাঁর ছোট ছেলে সাগরকে তো লন্ডন পাঠিয়েছিলো, পড়তে।
বড় ছেলে কবি এখন কানাডা থাকে। সাগর পাবলিশার্স বিক্রি-টিক্রি করে চলে এসেছে।
প্রথমে আমি যে শহরে থাকি সেই অটোয়াতেই এসেছিলো। একবার কথাও হয়েছিলো টেলিফোনে। কিন্তু আমার সঙ্গে দেখা না করেই চলে গেছে অন্য কোনো শহরে।
মুকুল ভাইয়ের মেয়ে সিডনি প্রবাসী কবিতা একদিন টেলিফোনে সাগর পাবলিশার্স বিক্রি নিয়ে খুব আক্ষেপ করছিলো ঠিক নজরুলেরই মতো।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অবশ্যই আমার আক্ষেপ কবিতার মতো হবে না... কিন্তু হয়তো ভাবি তার চেয়ে তীব্র কিছু...
তার কাছে যেটা অবশ্যই পাওয়া ছিলো সেটাই আমার কাছে পরম পাওয়া...
কসম বলতেছি... আমি সাগরে অনেক সময় হুদাই কাটাইছি... অযথাই বই দেখইখা বেড়াইছি,.,, আর আড়ে আড়ে বই দেখার ফাঁকে শুনছি তাঁদের আলাপ.... এই চুরি করা শোনাতেও যে কত জ্ঞান আমি পাইছি সেইটা আমি এখন কিভাবে বলি?
তাঁর নিজের পরিবার যদি ব্যাবসার কারনে তাঁরে বিক্রি করতে পারে... তইলে আমি আসলে কোথায় দাঁড়াই...
অবশ্যই আমি তার পরিবারের উচ্চতেই দাঁড়াই...
কিন্তু আমি দাঁড়ানোর পিছে কোনো ভবিষ্যৎ খুঁচে পাই না...
_____________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রণদীপম বসু এর ছবি

মাত্র তিন বছরেই আমরা মুকুল ভাইকে ভুলতে বসেছি? মুকুল ভাইকে ভুলে যাওয়া অপরাধ। মুকুল ভাইকে ভুলে যাওয়া পাপ।

আমাদের এই ক্ষমাহীন পাপের মাত্রা ও পরিমাণ বাড়ছেই কেবল। রিটন ভাই হয়তো আমাদের পক্ষে একটু প্রায়শ্চিত্তের উদারতা দেখালেন। কিন্তু এক সীমাহীন বিস্মৃতিপ্রবণ জাতির ততোধিক অযোগ্য সন্তান হিসেবে আমিই বা কী করে এড়িয়ে যাই যে, আমারও তো মনে ছিলো না ! অথচ কী অহঙ্কারটাই না করি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ! আহা, আমাদের সন্তানরা কার পাপ বইবে ?

ধন্যবাদ রিটন ভাই, পোস্ট দিয়ে অত্যন্ত ভালো কাজটির জন্য।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

ধন্যবাদ রণদীপম।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আঞ্চলিকতাবোধ আমার একেবারেই তীব্র নয়। তার পরেও এম আর আখতার মুকুল বগুড়ার "ছোল" বলে আমার এক ধরনের আলাদা গর্ববোধ আছে।

অসাধারণ এই ব্যক্তিত্বের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সুমন চৌধুরী এর ছবি

মা'কে শ্রদ্ধা।

এম.আর.আখতার মুকুলকে প্রথম খুব কাছ থেকে দেখি সম্ভবত: ১৪০০ সালে চারুকলার র্যালীতে। সেটা চারুকলার না সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের স্পষ্ট মনে নেই। তখন আসলে এই ব্যপারগুলি ব্যানারের উর্ধ্বে বলে মনে হতো, অন্তত আমার মত সদ্য কলেজে পা দেওয়া পোলাপানের কাছে। সেইর্যালী শহীদ মিনার থেকে রমনা ঘুরে জাদুঘরের সামনে আসতে নতুন করে ঢোলে বাড়ি পড়লো। এম.আর.আখতার মুকুলকে দেখা গেল নিজে নাচতে এবং পোলাপানকে নাচের উস্কানি দিতে।

তাঁর প্রয়াণের সময় দেশে ছিলাম না। বিদেশে বসে নেটে আঁতি পাতি করে খুঁজেছি ১৬ ডিসেম্বরের সেই চরমপত্র....

কী পোলারে বাঘে খাইলো! স্যাস্ , আইজ থিকা বঙ্গাল মুলুকে মচুয়া গো রাজত্ব স্যাস্...



ঈশ্বরাসিদ্ধে:

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।