নতুন বইয়ের ঘ্রাণে অন্যরকম একটা মাদকতা আছে। স্কুল জীবনে নতুন ক্লাশের নতুন বই হাতে পাওয়া মাত্র সেই বইয়ের সৌরভে মুখরিত হয়ে উঠত আমার চারপাশ। নতুন বইটি হাতে নিয়ে পাতা উলটেপালটে দেখতে গেলে কাগজ-কালি এবং বাইন্ডিং এর লেই-র সংমিশ্রণে তৈরি একটা গ্রন্থ গ্রন্থ ঘ্রাণ নাকে এসে ধাক্কা দিত। খুব প্রিয় ছিল সেই ঘ্রাণটি। এখনো আমি নতুন একটি বই হাতে নিয়ে প্রথমেই তার সুবাসটুকু গ্রহণ করি।
নতুন বই আমার কাছে রহস্যময়ী নারীর মতো।
ঘোমটা টানা বধুর মতো।
২.
১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো আমার প্রথম ছড়ার বইটি। এই বইটির পাণ্ডুলিপি থেকে ক্রমশ বই হয়ে ওঠার ধাপগুলো আমি অবলোকন করেছি গভীর আগ্রহের সঙ্গে। হ্যান্ডকাস্টিং কম্পোজ সিস্টেম ছিলো তখন। একজন কম্পোজিটর ছোট্ট একটি টুলের ওপর বসে তার সামনে-ডানে-বাঁয়ে উঁচু একটু এঙ্গেলে রাখা খুদে খুদে খোঁপওয়ালা কাঠের বক্স থেকে একটি একটি অক্ষর তুলে নিয়ে তার সঙ্গে আকার হ্রস্যইকার দীর্ঘউকার ইত্যাদি যুক্ত করে একেকটি শব্দ লম্বাটে গড়নের গ্যালিতে সাজিয়ে একটি বাক্য নির্মাণ করতেন পরম নিষ্ঠায়। সেই গ্যালিতে কালি মাখিয়ে নিউজপ্রিন্টের কাগজে জলের ছোপ লাগিয়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল পরা পায়ের চাপ দিয়ে ম্যাটারের ছাপ তুলে নিয়ে দেখা হতো প্রুফ। তারপর সেই ম্যাটারকে ট্রেডল্ মেশিনে বেঁধে নিয়ে তারপর ছাপা হতো ম্যানুয়ালি। মেশিনম্যানকে একইসঙ্গে তার হাত এবং পা-কে ব্যাবহার করতে হতো মেশিন চালনার সময়। রুটি বেলা বেলুনের মতো একটি রোলার মেশিনের ওপর দিকের খোলা কৌটায় রাখা কালি বা রঙের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে কিছুটা রঙ তুলে এনে সেটা মাখিয়ে নিতো থালার মতো গোল একটা মসৃণ-সমতল লোহার প্লেটের ওপর। সেই রোলারটা ওপর নিচে দৌড়ে দৌড়ে তার শরীরের সর্বত্র সমপরিমাণ কালি মাখিয়ে সেই কালির প্রলেপ মাখিয়ে দিতো সিসার হরফ সাজানো ম্যাটারের গায়ে। মেশিন সেই ম্যাটারকে চেপে ধরে ছেপে নিতো কাগজের ওপর। একটি শাদা কাগজে বিস্ময়করভাবে ফুটে উঠতো ছড়াটির মুদ্রিত অবয়ব। নির্ভুল ছন্দে বাম হাতে মুদ্রিত কাগজটি তুলে নিয়ে ডান হাতে সেখানে একটি সাদা কাগজ রেখে দিতেন ম্যাশিনম্যান, অপরূপ দক্ষতায়। এক সেকেন্ডের হেরফের হলেই কিন্তু একটি কাগজে ডাবল ছাপ লেগে যাবে সুতরাং মেশিনম্যানকে থাকতে হতো খরগোসের চাইতেও সতর্ক। চমৎকার একটি ছন্দোময় দেহ ভঙ্গিমায় দুলতে দুলতে মেশিনম্যান ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে এই ছাপার কাজটি সমাধা করতেন। আমার ছড়াগুলোর গ্রন্থাকারে মুদ্রিত অবয়ব প্রাপ্তির সূচনার সেই লগ্নটি আমার কাছে আজও বিস্ময় উদ্রেককারী ঘটনা। একটি পাণ্ডুলিপির বই হয়ে ওঠাকে আমার তখন মনে হয়েছিলো একটি শুঁয়োপোকার প্রজাপতি হয়ে ওঠার মতোই বিস্ময়কর এবং মনোমুগ্ধকর ঘটনা।
আমার বইটি ছাপা হচ্ছিলো কবি আবিদ আজাদের প্রেসে। আজিমপুরের নবাবগঞ্জে ছিলো তখন আবিদের প্রেসটি। আবিদ আজাদ কবি ছিলেন বলেই আমি ওয়ারীতে বেশ কয়েকটি প্রেস থাকা সত্ত্বেও নবাবগঞ্জে ছুটে গিয়েছিলাম। প্রকাশকরা পাত্তা দিচ্ছিলেন না। নিজের লেখা জীবনের প্রথম বইটি নিজের টাকায় বের করছি। সুতরাং কোথাও সামান্য একটু সহানুভূতির সম্ভাবনা থাকলে সেখানেই হামলে পড়াটা স্বাভাবিক ছিলো আমার মতো নবীন একজন লেখকের। আবিদ কবি। তিনি আমার আবেগটাকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করবেন। চাই কি দু’চারশো টাকা হয়তো কমও নিতে পারেন। যদিও আবিদ একটা টাকাও কম নেননি। তার প্রেসে তখন বিড়ির লেবেল ছাপার কাজ চলছিলো। টকটকে লাল এবং ক্যাটক্যাটে নীল কিংবা ধ্যাদ্ধেড়ে সবুজ এবং ম্যাড়ম্যাড়ে হলুদ রঙে ছাপা হচ্ছিলো বিড়ির লেবেল—হাজারে হাজারে, লাখে লাখে। আবিদ আমাকে কুবুদ্ধি দিচ্ছিলেন প্রতি আট পৃষ্ঠার ম্যাটারকে ওইসব রঙে ছাপাতে। (তাতে তাঁর সুবিধে হতো। রোলার ধোয়া এবং রঙের কৌটা পরিবর্তন করার ঝামেলা এবং সময় দুই-ই বাঁচতো।) কিন্তু আমি রাজি হইনি। কালোতে ম্যাটার আর চকোলেটে ব্লকের ছবি ছাপার সিদ্ধান্ত থেকে আমাকে একটুও নড়াতে পারেননি আবিদ। আহারে আমাদের বাংলা কবিতার অসাধারণ এই কবি আজ বেঁচে নেই। আমার বইটি ছাপার সময় আবিদ আজাদ মুদ্রিত ম্যাটার থেকে কয়েকটি ছড়া পড়ে প্রশংসা করেছিলেন প্রচুর। বিনিময়ে আমিও তাঁর কিছু কবিতার পঙক্তি মুখস্ত শুনিয়ে তাজ্জব বানিয়ে দিয়েছিলাম আবিদ আজাদকে।
আমার বইয়ের প্রচ্ছদপটটি আমি নিজেই এঁকেছিলাম। শিল্পী বন্ধু মাসুক হেলালের পরামর্শে জোনাকী সিনেমা হলের নিচ তলার একটি প্রেসে ছাপা হয়েছিলো প্রচ্ছদ। প্রেসটি ছিল পুলিশ ডিপার্টমেন্টের, পলওয়েল প্রিন্টিং প্রেস। ওই প্রেসে ছাপা হতো ডিটেকটিভ নামের পুলিশ বাহিনীর একটি মাসিক পত্রিকা। আমার বইয়ের প্রচ্ছদটির ছাপার মান ছিলো অসাধারণ। ছাপানো প্রচ্ছদটির রঙ দ্রুত শুকানোর জন্যে অটো সিস্টেমে একটি ছোট্ট পাইপ থেকে ভুস করে বেরিয়ে আসতো পাউডার। সেই পাউডারের কল্যাণে প্রচ্ছদটির ভেজা রঙ শুকিয়ে যেতো মিনিট ত্রিশের মধ্যেই।
ছাপানো প্রচ্ছদ আর ছাপানো ছড়ার ম্যাটারগুলো নিয়ে আজিমপুর শেখ সাহেব বাজারের একটি বাইন্ডার প্রতিষ্ঠানে গেলাম। আমাকে ওখানে নিয়ে গেলো আমীরুলের বন্ধু মোহসীন। বাইণ্ডিং প্রতিষ্ঠানের মালিক ভদ্রলোক খুবই অমায়িক। মুখে তাঁর আসাদুজ্জামান নূরের মতো সুন্দর দাড়ি। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত সেই মানুষটি বাজারদরের চাইতে অনেক কম দামে আমার বইগুলো বাঁধাই করিয়ে দিলেন। আমার ব্যক্তিগত খরচে জীবনের প্রথম বইটি বেরুচ্ছে, সেখানে তিনি কিছুটা কন্ট্রিবিউট করতে চান।
সদ্য বাঁধাই হওয়া বইয়ের একটি কপি তিনি আমাকে দিলেন। তারপর বললেন—বাকিগুলো একদিন পরে এসে নিয়ে যাবেন। পুরো একটা দিন ভারী বস্তুর চাপে না রাখলে বাঁধাই বেঁকে যাবে।
সদ্য বেরুনো নতুন বইটি হাতে পেয়েই আমি নাকের সামনে ওটা মেলে ধরে খুব বড় একটি নিঃশ্বাস নিলাম। নতুন বইয়ের সৌরভে মনটা উৎফুল্ল হয়ে উঠল।
রাতে রিকশায় বাড়ি ফেরার পথে কতোবার যে উল্টেপাল্টে দেখলাম বইটির সবকটা পাতা! খুবই আলতো ছোঁয়ায় বইটি নাড়াচাড়া করছিলাম যেনো বইটি কোনো রকম ব্যথা না পায়।
গভীর রাতে যখন শুতে গেলাম তখনো বইটা আমার হাতে। বিছানায় শুয়ে বইটাকে বুকের ওপর রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম আসছিলো না কিছুতেই। ঘুমের মধ্যে আমি যদি পাশ ফিরি! বইটা যদি পড়ে যায় বিছানায়! মধ্যরাতে বইটাকে বালিশের ওপর শুইয়ে দিলাম। বালিশের পাশে মাথা রেখে নিজে বালিশবিহীন কাটিয়ে দিলাম প্রায় নির্ঘুম একটি রাত। অবশ্য রাতে বার দুই বিছানা থেকে উঠে লাইটের সুইচ অন করে দেখে নিয়েছি বইটা ঠিকঠাক আছে কী না। আলতো করে ছুঁয়ে দিয়েছি বইটার প্রচ্ছদের হাস্যোজ্জ্বল ছেলেমেয়েদুটিকে। বুক ভরে নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করেছি নতুন বইয়ের অপূর্ব সৌরভটুকু।
দুদিন পর একটা ব্যাগের ভেতর পঞ্চাশ ষাটটি বই নিয়ে হাজির হলাম বইমেলায়। পাঁচটি করে বই রাখার জন্যে এই স্টল সেই স্টল কতো স্টল যে ঘুরলাম কিন্তু অধিকাংশ স্টলই আমার বইয়ের পাঁচটি কপি রাখার ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করলো চরম নিষ্ঠুরতার সঙ্গে। সাকুল্যে চারটা স্টলে পাঁচটা করে বই রাখার অনুমতি পাওয়া গেলো। একজন তরুণ লেখকের প্রথম বইটি তাঁরা যে দয়া করে তাদের স্টলে রাখতে দিচ্ছে তাতেই আমি খুশি। কোনো বই আদৌ বিক্রি হবে কীনা কিংবা বিক্রি হলে আদৌ আমাকে টাকা দেয়া হবে কীনা সেই চিন্তা একবারও করিনি। নতুন লেখক হিসেবে যতোটা অপমান অবজ্ঞা আর অনাদর পাওয়া যেতে পারে তার পুরোটাই আমি পেয়েছিলাম প্রকাশক আর স্টল মালিকদের কাছ থেকে। মাত্র পাঁচটি বই ডিস্প্লেতে রাখার জন্যে কাকুতি মিনতি করার পর নির্দয় প্রকাশক ও স্টল মালিকের পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়েছে—‘আরে ভাই যান তো! নিজেদের বই রাখারই জায়গা নেই...... তাছাড়া আপনার বই কিনবে কে? কেউতো কিনবে না। সুতরাং ঝামেলা না করে যান তো ভাই’......।
অপমানের অশ্রু মুছে হতদরিদ্র ফেরিঅলার মতো এরপরও আমি চেষ্টা চালিয়ে গেছি—কেউ যদি সদয় হয়!
চারটি স্টলের বাইরে একটিমাত্র স্টলেই আমার জায়গা হলো সম্মানের সঙ্গে। সেই স্টলের নাম ছিলো দ্রাবির। কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কামাল চৌধুরী, জাফর ওয়াজেদ, মুহম্মদ নূরুল হুদা, ইসহাক খানরা ছিলেন সেই স্টলের হর্তাকর্তা। সকলেই আমার পরিচিতজন। কোনোরকম অপমান আর অবজ্ঞা ছাড়াই ওরা আমার পাঁচটি বইকে জায়গা করে দিলো। আর ওদের স্টলটি ছিলো বাংলা একাডেমীর বটতলার পাশে। সুতরাং খুবই জমজমাট ছিলো স্টলটি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আমার পাঁচটি বই বিক্রি হয়ে গেলে উল্লসিত ইসহাক খান আরো কিছু বই ওখানে দেয়ার জন্যে আমাকে তাগিদ দিলেন। শুধু তাই নয়, বই বিক্রি বাবদ কমিশন কেটে রেখে বেশ কিছু টাকাও আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন ইসহাক ভাই। টাকার পরিমাণটা খুব বেশি ছিলো না যদিও। কারণ বইটির গায়ের দাম ছিলো মাত্র সাত টাকা। কিন্তু ইতোমধ্যে সংগঠিত অবজ্ঞা আর অনাদরসমূহের তীব্র দহনে ক্ষতবিক্ষত আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কোনো স্টলেই আর বই রাখতে যাবো না আমি। মেলায় আগত পরিচিত অর্ধপরিচিত আর কতিপয় বিখ্যাত লেখকদের মধ্যে বিনামূল্যেই বিতরণ করবো নিজের প্রথম বইটি। অবিক্রিত বইগুলো বাড়িতে গুদামজাত করে রাখার চেয়ে ওগুলো বিলিয়ে দেয়াই উত্তম। সিনিয়র আর বিখ্যাত লেখকরা আমার মতো তরুণ একজন নবীন লিখিয়ের বই পড়বেন না জেনেও আমি পরম নিষ্ঠায় বিতরণ করেছি শত শত কপি। আমার সমসাময়িক একজন বন্ধুও বাদ পড়েনি সৌজন্য কপির অধিকার থেকে। মেলার এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত চষে বেড়িয়েছি বন্ধু আর লেখকের খোঁজে। প্রার্থিতজনকে পাইবা মাত্র তাঁর করকমলে বিনয়ের অবতারের ভঙ্গিতে অর্পণ করেছি একটি নতুন বই। সিনিয়র কেউ কেউ ভদ্রতা প্রকাশ করে বিনিময় মূল্য দিতে চাইলে লজ্জায় জিভ কেটে সটকে পড়েছি দ্রুত। সবাইকে আমার বইটি বিনামূল্যেই দিয়ে দিয়েছিলাম বলে বড় ধরণের আর্থিক দেনায় পড়লেও মুখে মুখে বইটির প্রচার প্রাপ্তি ঘটেছিলো অভাবনীয় পরিসরে।
কয়েকদিন পর বিকেলে মেলায় হাঁটছি। যে চারটি স্টল আমার বই রেখেছিল দয়া করে তারাও দেখি আমাকে ডাকাডাকি করে—‘আরে ভাই আপনি কোথায় হারিয়ে গেলেন! আপনার বইতো শেষ। আরো কিছু কপি দিয়ে যাবেন।’
বিস্ময়কর ঘটনা তারাও আমাকে বিক্রির টাকা হাতে ধরিয়ে দিলেন। এই চারটি স্টলে এরপর আমি আরো কুড়ি পঁচিশটি করে বই দিতে পেরেছিলাম। বিক্রি হয়েছিলো সবকটাই। স্টলের বিক্রেতারা অবশ্য এমনতরো ঘটনায় যে তারা অবাক হয়েছেন সেটা আমার কাছে গোপন করলেন না। বিস্ময়মেশানো কণ্ঠে তারা জানতে চেয়েছেন—‘ঘটনা কী? আপনার বই লোকে কিনছে, কিন্তু কেনো কিনছে?’
আমি বলেছি—‘আমার বই তো কেউ কেনে না। আমিই লোক পাঠিয়ে কিনে নেই ভাইজান...।’
৩.
দৈনিক পত্রিকায় একটা নিউজ পড়ে খুবই আগ্রহী হয়ে উঠলাম। সিকান্দার আবু জাফরের মৃত্যু দিবসটি উদযাপনের জন্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সিদ্ধান্ত—এখন থেকে প্রতি বছর একজন তরুণ লেখককে তার রচিত ও প্রকাশিত সাহিত্যের যে কোন শাখার সাম্প্রতিকতম বইয়ের জন্যে পুরস্কৃত করা হবে। দুটি বই জমা দিতে হবে কমিটি বরাবর। ডাকযোগে পাঠিয়ে দিলাম দুটি বই। আগস্ট মাসে সিকান্দার আবু জাফরের স্মরণসভার অনুষ্ঠানটি হলো শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে। দুরু দুরু বক্ষে অনেক দর্শকের ভিড়ে চুপচাপ বসে আছি। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী সৈয়দ নাজিমুদ্দীন হাশিম। সৈয়দ আলী আহসান বক্তৃতা করতে দাঁড়ালেন। এক পর্যায়ে তিনি দুই তরুণ লেখকের দুটি বই দর্শকদের দিকে উঁচিয়ে ধরে বললেন—পুরস্কারের জন্যে আমরা তরুণ লেখকদের কাছ থেকে বই আহবান করেছিলাম। বেশ কিছু মানসম্পন্ন বই আমাদের হাতে এসেছে। ওখান থেকে বাছাই করে দুটি বইকে আমরা প্রতিযোগিতায় প্রথম সারিতে রেখেছিলাম। পরে এই দুটি বই থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছে লুৎফর রহমান রিটন নামের একজন তরুণ ছড়াকার। তার বইটির নাম ধুত্তুরি। তুমুল করতালিতে মুখরিত হলো অডিটোরিয়ামের দর্শকেরা। অনেক অভিনন্দন পেলাম দর্শক সারিতে বসেই। আশপাশের কেউ কেউ চিনতে পেরেছিলেন তরুণ সেই ছড়াকারকে। কিন্তু তাদের সংখ্যা খুব বেশি ছিলো না। পরদিন সব কটা পত্রিকায় খবরটি ছাপা হয়েছিলো খুবই গুরুত্বের সঙ্গে।
প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থানে আসা বইটির নাম ছিল লিন্ডা জনসনের রাজহাঁস। গল্পের বই। লেখক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। চট্রগামের বন্ধু। খুব ভালো ছড়াও লিখতেন। সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কারটি বিশ্বজিৎ পেলেও আমি খুশি হতাম। কারণ বিশ্বজিৎ খুব ভালো লিখতেন তখন। বিভিন্ন পত্রিকার ছোটদের পাতায় আমাদের দুজনের লেখা ছাপা হয়েছে পাশাপাশি, বহুবার। সেই বিশ্বজিৎ এখন কবি ও সাংবাদিক হিশেবে খ্যাতিমান।
প্রথম বইটি প্রকাশের ছ’মাসের মাথায় এরকম একটি পুরস্কার আমার ছড়াকার পরিচিতিকে খ্যাতিতে পরিণত করেছিলো। এমনিতেই আমি সাহসী ছিলাম, এই পুরস্কারটি আমার সাহসকে আরো বাড়িয়ে তুলেছিল। এই স্বীকৃতি আমার মতো নবীন ছড়াকারের জন্যে ছিল অপ্রাপ্তমুকুটে একটি সাফল্য-তিলক।
প্রেসক্লাবে পুরনো পত্রিকার ফাইল ঘাঁটতে গিয়ে একটি খবরের দিকে দৃষ্টি আকর্ষিত হলো। অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কারের জন্যে পাঁচ কপি বই চাওয়া হয়েছে। শিশু একাডেমী বই পাঁচটি কিনে নেবে। তারিখ দেখে বুঝলাম সময় প্রায় শেষ। আগামীকাল দুপুর বারোটা হচ্ছে শেষ মুহূর্ত।
পরদিন পাঁচ কপি বই নিয়ে হাজির হলাম শিশু একাডেমীতে। এক ভদ্রমহিলার কাছে জমা দেবার কথা। তাঁর রুমটি খুঁজে বের করে দরোজায় গিয়ে দাঁড়ালাম। অনুমতি প্রার্থনা করলাম কক্ষে প্রবেশের। অনুমতি পাওয়া গেলো কিন্তু আমার আগমন হেতু জানার পর ভদ্র মহিলা বিরক্ত হয়ে বললেন—আপনার বই নিতে পারবো না। সময় শেষ। বিনয়ের সঙ্গে আমি বললাম
--কিন্তু আপা আজই তো লাস্ট ডেট। আমি তো ঠিক দিনেই এসেছি।
এইবার রেগে গেলেন ভদ্র মহিলা
--ঠিক দিনেই এসেছেন মানে? একদিন দেরীতে এসেছেন। গতকাল এলে নিতে পারতাম কিন্তু আজ আর নিতে পারব না। ডেট ঠিক আছে কিন্তু টাইম ঠিক নেই। শেষ সময় ছিল দুপুর বারোটা।
নাছোরবান্দা আমি হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিশ্চিত হয়ে বললাম—বারোটা বাজতে এখনো দশ মিনিট বাকি আপা।
ভদ্রমহিলা ঘাড় বাঁকিয়ে তার ডানদিকের দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে খুবই হতাশ হলেন। চেহারায় যথাযথ বিরক্তি ধরে রেখে ফ্লোরের দিকে আঙুল নির্দেশ করে তিনি বললেন,
-- ঠিক আছে আপনি বইগুলো ওখানে রেখে যান। আমি কিন্ত বইগুলোর দাম দিতে পারবো না।
বইগুলো দেয়াল ঘেঁষা ফ্লোরে রাখতে রাখতে আমি বললাম
--বইয়ের দাম দিতে হবে না আপা। আপনি যে দয়া করে বইগুলো রাখতে রাজি হয়েছেন তাতেই আমি খুশি।
দিন যায়।
মাস যায়।
এক সকালে পত্রিকার পাতায় ৮২ সালের অগ্রণীব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত বই এবং লেখকের নামের তালিকায় নিজেকে আবিস্কার করে কী যে আনন্দ পেলাম! ভালোবাসার মেয়েটিকে বিয়ে করার অপরাধে আমি তখন বাড়ি থেকে বিতাড়িত। স্ত্রী শার্লিকে নিয়ে থাকি আমি যাত্রাবাড়ির একটি কলোনিতে, ছড়াকার সিরাজুল ফরিদের আশ্রয়ে। বাড়ি থেকে বেরুনোর সময় পকেটে ছিলো মাত্র সতেরোটি টাকা। এই পুরস্কারের পাঁচ হাজার টাকা সেই মুহূর্তে আমার জীবনকে অর্থকষ্টের কঠিন বিপর্যয়ের অকুল দরিয়া থেকে উদ্ধার করেছিলো। পুরস্কারের চেকটি এক বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে আমার হাতে অর্পণ করলেন নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম এ খান। মনে আছে, সদ্য কৈশোর পেরুনো আমি আর শার্লি পাঁচ হাজার টাকার চেকটি নিয়ে বিস্তর গল্প করতে করতে শিশু একাডেমী থেকে হাঁটতে হাঁটতে যাত্রাবাড়িতে চলে গিয়েছিলাম! কতো যে গল্প করেছিলাম সেদিন! চেকটা ভাঙিয়ে জিপিওর উল্টোদিকের গ্যানিজ বিল্ডিঙের পাবনা স্টোর থেকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম শার্লিকে। কী যে খুশি হয়েছিলো শার্লি! এরপর কতো দামি দামি শাড়ি কেনা হলো কিন্তু সেই সূতি শাড়ির কথা শার্লি আজো ভোলেনি।
এই পুরস্কারটি পাবার পর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো আমার ছড়াকার খ্যাতি। আমার আগে এই পুরস্কারটি পেয়েছিলেন কবি আল মাহমুদ। কবি নির্মলেন্দু গুণ তখন বাংলার বাণীতে কাজ করেন। আমার একটি ছবিসহ নিউজটি ছাপিয়ে দিলেন গুণদা। সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা তখন আমাদের অন্যতম প্রিয় চারণক্ষেত্র। কিশোর বাংলাতেও বেশ বড় করে গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হলো এই পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদ। একজন তরুণ লেখকের প্রথম প্রকাশিত একটি বইয়ের জন্যে এরকম দু’দুটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার অর্জনকে সৌভাগ্য হিসেবে চিহ্নিত করলেন অনেকেই। ধুত্তুরি নামের প্রথম বইটিই আমাকে ছড়াকার হিসেবে দাঁড়ানোর জন্যে পায়ের তলায় শক্ত মাটির ভিত্তিটি তৈরি করে দিয়েছিল।
আজ আমার বইয়ের সংখ্যা শতাধিক কিন্তু প্রথম বই ধুত্তুরি এখনো আমার সবচে আদরের বই। এই বইটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক অপমান অনাদর অবজ্ঞা আর কষ্টের স্মৃতি। অনেক অনেক আনন্দের স্মৃতি। সরল শৈশবের স্মৃতি। টগবগানো তারুণ্যের স্মৃতি। অনেক স্বপ্ন আর ভালোবাসার স্মৃতি। এই বইটি এখনো আমার করোটিকে নতুন বইয়ের সজীব ঘ্রাণের মাতাল করা অনুভূতিতে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
ক্যাপশনঃ ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ছড়ার বই ধুত্তুরির প্রচ্ছদ
মন্তব্য
দারুন লাগলো পড়তে রিটন ভাই। আপনার ছড়ার মতই উপাদেয় হয়েছে। আর প্রথম বই নিয়ে আপনার অনুভূতিটুকু হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পেরেছি। নিজের কেনা প্রথম বইগুলোর জন্যই আমার কতনা মায়া, আর নিজের লেখা হলে সেই মায়ার পরিমান কতটা বাড়তে পারে তা তো বলাই বাহুল্য।
ধন্যবাদ সহৃদয় অনুভবের জন্যে।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
#ভালবাসা নিন প্রিয় লিটন স্যার, স্যার বলে সম্ভোধন করলাম এ কারনে যে আমার জন্ম ১৯৮১ সালে আর সেসময় থেকেই আপনি কোয়ালিটি সম্পন্ন লেখক। প্রথমেই অভিনন্দন জানাচ্ছি আপনাকে।
নতুন বইয়ের সৌরভ, এ এক অন্যরকম ভাললাগা, অন্যরকম অনুভূতি, লেখকের বইয়ের নূতন কপি লেখকের হাতে পৌছানোর পর অন্যরকম শিহরণ বয়ে যাবে এটা ঐ লেখক ব্যতীত আর কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়, সে অনুভূতিটাকে ভালবাসা।
#ভাল থাকুন সবসময়, সুন্দর প্রতিটি মুহুর্তের শুভেচ্ছা
অনেক
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
#আপনাকেও অনেক অনেক লেবুপাতা, আর কোন কড়া ঘ্রানযুক্ত পাতা খুঁজে পাচ্ছিনা
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
#সুন্দর, অনেক সুন্দর অত:পর ভয়ঙ্কর রকমের সুন্দর তারপর? ইহা সবকিছুকে অতিক্রম করিয়াছে
রিটন ভাই, আপনার লেখাটি পড়ে আবেগের দোলায় দুল্লাম!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আমিও আবেগের দোলায় দুলতে দুলতে লিখেছি
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
চমৎকার লেখা আর অসাধারণ স্মৃতিচারণ. আপনার জন্য শুভকামনা রইলো. চালিয়ে যান আপনার কর্মযজ্ঞ আর আনন্দে কাটুক আপনার প্রতিটি ক্ষণ
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
হারানো ঢাকা শহর, হারানো সময়ের গদ্য।
রিটন ভাই বইটা থেকে একটা ছড়া দেন না, পড়তাম।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ঠিকাছে দেবো।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
দারুণ লাগলো পড়তে। আপনি প্রথম বই নিয়ে যা করেছেন, সবাই বোধহয় নিজেদের প্রথম বই নিয়ে তাই করে।
আমারও তাই মনে হয়।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
রিটন ভাই,
রুদ্ধশ্বাসে প্রথমবারের মত পড়লাম একটি বইয়ের জন্মকথা। একান্ত ব্যক্তিগত স্মৃতি হলেও, একজন নবীন লেখকের সংগ্রাম অসাধারণ ভাষায় চিত্রিত হয়েছে, পেয়েছে চিরন্তনতার ব্যাপ্তি। ছোট থেকেই আমরা যারা আপনার ছড়া পড়ে ও শুনে বড় হয়েছি, তাদের কাছে বিষ্ময়কর লাগতে পারে জেনে যে রিটন ভাইকেও বই নিয়ে স্টলে স্টলে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে, বাংলাদেশের শিশুদের সবচেয়ে প্রিয় ছড়াকারের বই ফেলে রাখতে হয়েছে শিশু একাডেমিরই ফ্লোরে!
বইয়ের জন্য নিজের বালিশ ছেড়ে দেয়ার অংশটি পড়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম। নতুন বইয়ের গন্ধ আমাকেও মাতাল করে দেয়। মেলা থেকে নতুন কেনা বইগুলো আমিও শোয়ার সময় বালিশের পাশে রাখি, যদিও জানি এক রাতে সবগুলো পড়া হবে না, তবে কোন অজানা কারণে নতুন বইগুলো কিছুক্ষণ পর পর নেড়েচেড়ে দেখতে আমার অদ্ভুত ভাল লাগে।
অনেক মামুন।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
অসাধারণ লাগল রিটন ভাই, (গুড়) কি স্বচ্ছ আবেগের ছোঁয়া।
ইয়ে, মানে ছিটেফোঁটা বইটার কি হল? ঐটার লেখার জন্য অপেক্ষায় আছি।
facebook
ছিটেফোঁটা-ই তো ধুত্তুরি নাম নিয়ে বেরুলো!
তবে মাঝখানের বি-শা-ল একটা অধ্যায় লেখকের স্বাধীনতায় পারিবারিক হস্তক্ষেপের কারণে রচিত হয়নি।
আমার কন্যা নদী প্রায় নিয়মিত সচলায়তনে আসে, স্ত্রী মাঝে মধ্যেই আমাকে নজরবন্দী রাখে এখানে এলেই। কন্যার নিষেধাজ্ঞা তার ছেলেবেলার বন্ধু অনিতার বাবা(আলী ইমাম)-র বিরুদ্ধে ''কিচ্ছু লিখবানা।''
স্ত্রীর নিষেধাজ্ঞা ভাবীর স্বামীটির বিরুদ্ধে ''কোনো কথা নয় খবরদার!''
আমার অবস্থাটা কী অনুমান করতে পারছো অনু?
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
পারছি কিছুটা , আমি আলী ইমামকে নিয়ে একটা লেখা পোস্ট করার চিন্তা করছি ( লেখাটি লিখেছিলাম অনেক বছর আগে, তাই একটু চিন্তার মধ্য আছি)
facebook
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
আপনার একটা বড়দের ছড়ার বই আছে না - "ফর অ্যাডাল্টস ওনলি" ? - ওটা পড়তে গিয়ে ধরা খেয়ে কী যে ঝাড়ি খেয়েছি
আমি অবশ্য সেই ছোটদের কাগজ থেকেই আপনার ভক্ত। আপনার প্রথম প্রকাশিত বইয়ের গল্প শুনে খারাপ লাগল, আবার ভালোও লাগল। ঝুলি থেকে এমন আরো বের হোক।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
নামটা কি এডাল্ট্স অনলি ছিল? নাকি অন্য কোন বড়দের ছড়া বা মধ্যরাতের ছড়া এমন কিছু? যাই হোক, তখন আমি স্কুলে পড়ি, বইমেলায় বাবার সাথে যেয়ে এই বই কেনার আব্দার ধরলাম। খেলাম রাম ঝাড়ি। একদিন ইস্কুল থেকে ফেরার পথে, জ্ঞানকোষ থেকে কিনেই ফেল্লাম বইটা। কিন্তু বাসায় নেওয়ার সাহস ছিলোনা। তাই সোবহানবাগ থেকে কলেজগেট পর্যন্ত রিকশায় পড়তে পড়তে গেলাম, আর যেই বন্ধুর সাথে বাসায় ফিরি (সে থাকত কল্যাণপুর) তাকে দিয়ে দিলাম এক রাতের জন্য রাখতে। পরদিন স্কুলে যেয়ে সবার আগে বই নিয়ে পড়ে শেষ করলাম। এর পর বইটা অন্য এক বন্ধুকে উপহার হিসেবে দিয়ে দিয়েছিলাম। পরে অনেকদিন আমাদের বন্ধুমহলে বইটা উপহার উপহার করে ঘুরেছিল। ঘরে রাখার সাহস আমাদের কারোরই তেমন ছিলনা বোধ হয়।
যতদূর মনে পড়ে - শিরোনামটা "ফর অ্যাডাল্টস ওনলি" ছিল। সাদা মলাট, কার্টুন আঁকা। ছড়াগুলো বড়ই পাজি পড়তে পড়তে প্রায় পুরো বইটাই আমার মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল।
---
ইশ, আগে সোবাহানবাগ থেকে কলেজগেইট রিকশায় যাওয়া যেত। এখন মনে হয় আর যায় না।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
হ্যাঁ, ফর এডাল্টস ওনলি-ই ছিলো। ফাহিম। ঝাড়ি খাওয়ার মতো বই-ই ছিলো ওটা!
সাফি--প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে লেখা আমার আরেকটি বইয়ের নাম ছিলো 'মধ্য রাতের পদ্য'
ছড়াগুলো পাজি-ই ছিলো!
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
এডাল্টস ওনলি আমি দেশ ছাড়ার সময় নিয়ে এসেছি। এখনো বাসায় আছে । মাঝে সাঝে ওটা থেকে লাইন ঝেড়ে দেই
চমৎকার লাগলো স্মৃতিচারণ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
লেখাটা খুব ছুঁয়ে গেল রিটন ভাই!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
লেখাটা খুব ভাল লাগলো রিটন ভাই।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
ধুত্তুরি দিয়েই আপনাকে চিনেছিলাম রিটন ভাই। এটা পড়তে পড়তে পুরানা দিনগুলার কথা মনে পড়লো।
অটঃ এই ঘটনা আগে কোথাও পড়েছি মনে হচ্ছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনি কি আগের পর্বের কথা বলছেন মুস্তাফিজ ভাই?
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
চমৎকার লেখা, পড়তে পড়তে আমি যেন প্রতিটি দৃশ্যকে চোখের সামনে দেখতে পাই---।
আমিও আগে পড়েছিলাম, সম্ভবতঃ পত্রিকায়। @ মুস্তাফিজ ভাই ।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
সব সফলতার পেছনের গল্পই বোধহয় এরকম। রিটন ভাইকেও বই নিয়ে স্টলে স্টলে ঘুরতে হয়েছে!
চমৎকার লাগল আপনার স্মৃতিচারণ রিটন ভাই।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
লামন্তব্য রিটন ভাই
আপনার ছড়া ভালু পাই
আপনি প্রিয় ছড়াকার, আমাদের সবার।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
বিরাশি সালের প্রেসের কথা পড়ে কেমন জানি একটা অনুভূতি হলো। এতো কষ্ট করে তবে বই বের করতে হতো!
যে 'ধুত্তুরি'র কারণে আমরা ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন'কে পেলাম, সেই ছড়ার বইটা ছড়াকারের হাত থেকে গ্রহণ করার গোপন ইচ্ছাটা প্রকাশ করে গেলাম এ যাত্রা।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঠিকাছে, দেবো তোমাকে। কিন্তু সেটা করতে হলে তো আমাকে জার্মানি আসতে হবে কিংবা তোমাকে আসতে হবে কানাডায়। কোনটা সহজ?
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
কানাডা যাওয়া যাবে না গো রিটন ভাই। খাল পাড়ি দিতে আমার ডর করে। আপনি নিশ্চয়ই চান না আমি খালের পানিতে হাবুডুবু খেতে খেতে আপনার নাম ধরে চিল্লাচিল্লি করতে থাকি। আপনার দিলে নিশ্চয়ই পুলিশ-আর্মি-বিডিআর-র্যাব ইত্যাদির ডরভয় আছে! তাইলে এইবার আপনেই বলেন, কোনটা সহজ!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
টিকিট পাঠিয়ে দেন। সাথে উনার সেক্রেটারীর জন্যও একটা।
...........................
Every Picture Tells a Story
হে হে হে, আপনেও নিশ্চয়ই চান না যে কানাডাগামী বিমানে চড়ার আগে আমি খালে পড়িয়া হাবুডুবু খাইলে দায়ী ব্যক্তিবর্গের লিস্টি করে একটা চিরকুটে রিটন ভাইয়ের সাথে আপনের নামও লিখে রাখি!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
চমৎকার লাগল।
স্মৃতিকাতর হলাম। বইটা এখনও আছে 'দেশের বাড়িতে'।
তাই নাকি? আছে তোমার কাছে? খুশি হলাম জেনে।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
লেখাটা কি ভীষণ ভালো লাগলো। প্রথম প্রকাশিত লেখার খুব আলাদা এক ভালোলাগা থাকে। ব্লগে সাধারন এক লেখা পোস্ট হলেই যেভাবে তাধিনধিন আনন্দ হয় আর এতো রীতিমত মলাটবন্দি বই। ভালোলাগা তো টু দা পাওয়ার ইনফিনিটি হয়ে যাবারই কথা।
হা হা হা ! তাও তো কথা !
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
কোন প্রথমই আসলে ভোলা যায় না মনে হয়!
বেশ লাগলো প্রিয় ছড়াকারের স্মৃতিচারণ
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
কোনো প্রথমই ভোলা যায় না।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
অনেক অনেক অনেক স্মৃতিকাতর করে দিলেন। আমি তখন ক্লাস নাইনে। ত্রিশ বছর পার হয়ে যাচ্ছে মনে হয় এই সেদিন। আপনার কথা প্রথম শুনেছিলাম বোধহয় আমার ঢাকার কাজিন কাজী আজমের কাছ থেকে। উনি আপনাকে চেনেন বলেছিলেন যদ্দুর মনে পড়ে। আপনি কি কিশোর বাংলায় লিখতেন নাকি? ওটা ছিল সারা সপ্তাহের প্রতীক্ষার প্রিয় সাপ্তাহিক।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
লিখতাম নিয়মিত কিশোর বাংলায়।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
আপনার খুব বেশী ছড়া পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। যা পড়েছি, আপনাকে জেনেছি এই সচলায়তনের মাধ্যমেই। এই সামান্য অনুভূতিতেই সবকিছু এক অদ্ভুত আলোলাগার আবেশে পরিণত হয়ে গেছে।
আর তাই এই লেখাটার কথাও আলাদা করে বলার মতো নয়। বেশী ভালো লাগলে কি করে বোঝাতে হয়, তা জানিনা।
ডাকঘর | ছবিঘর
অনেক তাপস।
আমি অনুভব করতে পারছি তোমার অনুভূতি।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
লেখাটা পড়ে চোখ ভেজা ভেজা হয়ে গেলো।
আজকের একজন সফল আর ভীষণ জনপ্রিয় মানুষের পেছনের কথাগুলো এরকম হবে, ভাবিনি।
প্রথম বই, প্রথম সন্তানের মতো, তাই না? সবচেয়ে বেশি আবেগমাখা।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
প্রথম বই প্রথম সন্তানের মতোই আসলে।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
চমৎকার লেখা।
চমৎকার স্মৃতিচারণ।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
স্রেফ গিললাম রিটন ভাই
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
দারুন লাগল!
****************************************
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
৭০-৮০ দশকের আমাদের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিঘেরা ঢাকা শহরটা নিয়ে কিছু লিখুন না প্লিজ! আপনার এই লেখায় সেই সময়ের কিছুটা আভাস পেলাম বটে, কিন্তু লেখার লক্ষ্য ভিন্ন হওয়ায় স্বাভাবিক কারনেই সেটা অত প্রমিনেন্ট ছিল না - কিন্তু ঐ একটুখানি আভাসই আমার পিপাসা বাড়িয়ে দিল। সে সময়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, নাগরিক-সামাজিক আর পারিবারিক চালচিত্র, নগর ও নাগরিক প্রকৃতি... ইতিহাস বা রাজনীতি না, আপনার নিজের অভিজ্ঞতা আর অনুভূতির রসে চোয়ানো বিবরণ চাইছি। অনেকটা এই লেখার মতই, তবে 'সময়'টা যেখানে আরেকটু প্রমিনেন্স পাবে। লিখবেন?
****************************************
কঠিন দায়িত্ব। আমি খুব আলস্যপ্রিয়। অনেক লেখার ছক আর পরিকল্পনা নিয়ে খালি হাই তুলি আর ঘুমাই আর খাই। চেষ্টা করবো মন মাঝি।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
অদ্ভুত ভালো লাগার একটা অনুভূতি হলো।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
আপনার অত্যাচারে, না মানে, কিছু কাল আগে আপনার লেখা ছড়ার বই কিনে দেবার বায়নায় আমার মতো ছাপোষা মধ্যবিত্তের জীবন অতীষ্ঠ করে তুলতো আমার সন্তানেরা। আর এখন এই বেকার 'আমি'কে আমার নাতি-নাতনিরা।
আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার! বেকারদের ঝামেলায় ফেলাতেই তো আনন্দ!
ছেলেমেয়ে নাতি-নাতনিদের 'ছাপোষা-বেকার' দাদাভাই নানাভাই জিন্দাবাদ
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
অনেক আবেগ, অনেক আলো আর বাকিটা ইতিহাস
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
সহজ সবুজ আবেগে স্নাত হতে হতে আপনার মধুরতম স্মৃতিচারণ আমাদেরও অধিকার করে নিল। শুভেচ্ছা নিরন্তর!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
স্যার।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
আপনার সাথে আমার পরিচয় বাংলা একাডেমীর ধান শালিকের দেশ এর মাধ্যমে আর প্রথম দেখি বিটিভিতে একটা অনুষ্ঠানে। আপনার এই ছড়ার বইটি পড়া হয়নি কিন্তু খুব আপন মনে হচ্ছে, আপনার লেখাটি পড়ে।
অনেক আপনাকে।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
চমৎকার লাগলো
নতুন মন্তব্য করুন