মানুষের জয় হোক, ন্যায় হোক আর শুভ হোক।
আমি এক শিক্ষক, অতিশয় দরীদ্র লোক ।
চিরকাল শিখিয়েছি শুধু হয় সত্যের জয়
মানবের কাছে জানি দানবেরা মানে পরাজয়।
শিখিয়েছি গুরুজনে চিরকাল দিতে সম্মান
শিখিয়েছি মানবতা নম্রতা মমতার গান।
মানবজন্ম বৃথা যদি তাঁর নাহি থাকে দান—
শিখিয়েছি দেশ-মাটি-মানুষের কিসে কল্যাণ।
দারিদ্র্য আমাদের চেহারায় এঁকে দেয় ছাপ
পেশাটা মহান তবে এ পেশায় আসাটাও পাপ!
তাইতো পাপের বোঝা আমাদের কাঁধে চেপে থাকে
নীতি আর আদর্শ আমাদের অনাহারে রাখে।
আমাদের পোশাকেও দারিদ্র্য উঁকি দিয়ে যায়
ছেঁড়া জুতো-স্যান্ডেলে দারিদ্র্য চেপে রাখা দায়!
স্মার্ট নই, বোকাসোকা, ভীতু খুব,শক্তিও কম
চিৎকার করবো যে সে সাহস নাই একদম।
চুপচাপ বেঁচে থাকি, চাওয়া-পাওয়া খুব বেশি নাই
মানুষ গড়ার কাজ। মাস শেষে সামান্য পাই।
অভাবের দৈত্যটা গরিবের পেটে মারে ঘাঁই।
কেউ খোঁজ নেয় না তো তিন বেলা খাই কি না খাই!
একবেলা খেতে পাই! উপোসের আছে অভ্যেস।
মানুষের ভালো হোক ভালো থাক এই প্রিয় দেশ।
প্রাইমারী শিক্ষক কম দামি খাটো হওয়া লাগে
সবার খাওয়ার পরে ছিটেফোঁটা আমাদের ভাগে!
যুগে যুগে কালে কালে আমরাই অভাবের বলী।
ভাবলাম আর কতো! এইবার কিছু কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আমাদের কোনো গতি নাই
জায়গা তো একটাই ভাবলাম সেখানেই যাই।
স্মারকপত্র লিখে ‘হাসিনা’র কাছে দিয়ে আসি
বলে আসি—মা জননী তোমাকে যে কতো ভালোবাসি!
বিনিময়ে আমরাও সামান্য ভালোবাসা চাই
তা না হলে এজীবনে বাঁচবার কোনো আশা নাই।
অআকখ চিনিয়েছি এবিসিডি শিখিয়েছি যাঁরা
অবজ্ঞা অবহেলা অনাদর কেনো পাবে তাঁরা!
বিনিময়ে কেনো তাঁরা টেনে যাবে অভাবের ঘানি?
জবাব দেবে না কেউ জ্ঞানী আর সুশীলেরা জানি!
আমার মতোই কিছু শিক্ষক অভাগার দল
ঢাকা এসে জড়ো হই হাতে নিয়ে শেষ সম্বল।
শহীদ মিনারে এসে সব্বাই সমবেত হই
আমাদেরো দাবি আছে, আমরা আগন্তুক নই।
সামান্য কিছু দাবি মানবিক কিছু কথা লিখে
যাত্রাটা শুরু হলো পিএমের অফিসের দিকে।
শান্তিপূর্ণ ছিলো আমাদের সেই সমাবেশ
হইচই ভাঙচুর ছিলো নাকো হিংসার লেশ।
আচমকা পুলিশের তাণ্ডবে কামানের জল
পথেই ছিটকে পড়ে অনাহারী দেহ দুর্বল!
পুলিশের ছেলেগুলো আমাদেরই প্রিয় সন্তান
শিক্ষক পিতাসম! তাঁহাকেই করে অপমান!
পুলিশের পিটুনিতে শিক্ষক কাঁদে লজ্জায়
জীর্ণশীর্ণ দেহ রাজপথে গড়াগড়ি খায়!
নির্দয় লাঠিপেটা ভাঙাচোরা শরীরে কী সয়?
জখম আহত গায়ে রক্তের লাল ধারা বয়!
জামার কলার টেনে ঘাড় ধ’রে টানাহেঁচড়ায়
আমাদের অপমানে রাষ্ট্রের কীইবা আসে যায়?
গরম কামানজল লাঠিপেটা সইতে না পেরে
অপমানে জর্জর অবশেষে গেছি আমি হেরে।
সামান্য শিক্ষক আজিজুর মরে গেছি, হায়--
লিখিত এ অভিযোগ পোস্ট করি কোন ঠিকানায়!
প্রধানমন্ত্রী মাগো তোমাকেই চিঠি লিখিলাম
একদিন আমরাই তোমাদের গুরু তো ছিলাম!
আমাদের ছাত্ররা আছে কতো বড় বড় পদে।
কেহই তো আসিলি না স্যারদের ঘোর এ বিপদে!
তোদেরকে পিটিয়েছি। বকাঝকা করেছি যে কতো!
মানুষ হবি রে তোরা একদিন মানুষের মতো।
মানুষ হবি না তোরা? পড়া কেনো রেডি হয় নাই?
বেত দিয়ে পিটিয়েছি, মনে করে আজও ব্যথা পাই।
আমাদের ছাত্ররা কেউ কেউ আজকে পুলিশ!
মানুষ হলি না তবে! গুরুদের গায়ে হাত দিস!
ক্ষমা করো ঈশ্বর আল্লা ও গড ভাগবান
ছেলেগুলো নাবালক নালায়েক অবুঝ নাদান।
অভিশাপ দিচ্ছি না, প্রার্থনা করি দুই হাতে--
আমাদের ছাত্ররা থাকে যেনো দুধে আর ভাতে...
অটোয়া ২০মে ২০১২
মন্তব্য
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
কিছু অশ্রবিন্দু রেখে গেলাম........
হে মানুষ গড়ার প্রথম কারিগর,
যদি পারো ক্ষমা করো কভু!
এই রক্তের দাগ যে হাতে, তার নিরব পতন অনিবার্য হয়ে যেতে পারে, শুনে রাখো.........
_____________________
Give Her Freedom!
একই সাথে দুই রকমের অনুভুতি হোল। অসম্ভব ভালো লাগলো যেমন একই সাথে মন খারাপ হয়ে গেলো।
অনেক ভালো লিখেছেন , ভাই। আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এরকম একটি লেখার জন্য।
ধন্যবাদ বন্যা।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
বিধ্বস্ত হলাম..................
শ্রদ্ধা রইলো। এর বাইরে আর কিইবা বলার আছে!!
ডাকঘর | ছবিঘর
অসহায় একটা ক্ষোভে কেমন যে লাগে। মনে হয় রক্তের ভিতরে হাজারো শুঁয়োপোকা কিলবিল করছে আর উঁকুনের মতো রক্ত খেয়েই যাচ্ছে, খেয়েই যাচ্ছে।
--------
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
কেমন অনুভব করতেছি শব্দের ক্ষমতা নেই তা প্রকাশ করার।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
facebook
দারিদ্র্য আমাদের চেহারায় এঁকে দেয় ছাপ
পেশাটা মহান তবে এ পেশায় আসাটাও পাপ!
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
লজ্জায় চোখে পানি চলে এল, ভাই। এমন লজ্জার কথা বলতেও লজ্জা পাই।
লিখতে গিয়ে আমারও একই রকম অনুভূতি ছিলো।
অনেক কষ্ট হয়েছে লিখতে।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
চোখ হলো ছলছল মুখে নেই ভাষা
দেখে যাই সবই শুধু হাতখানি বাঁধা,
শিক্ষাগুরুর গায়ে উঠিল যে হাত
খসে যেন পড়ে তাহা দিলেম অভিসম্পাত।
---------
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
অশ্রু ছাড়া ভাষা নেই কোনো
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
-------
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
ধন্যবাদ
প্রধানমন্ত্রী চিনি, পুলিশ চিনি, শিক্ষক-নেতা? তাঁকেও চিনি। কিন্তু ভিক্টিম শিক্ষক? তাঁকে তো বুঝিনা। নিজেরা সারা জীবন ভয়ে কাটান, পোলাপানের মেরুদণ্ড সোজা করবেন কিভাবে? একটা মেরুদণ্ডওয়ালা ছাত্র ছিলনা সরকারী কুকুর ঠেকাতে?
ছিলো না।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
মর্মাহত
ছোটবেলায় বহু সময় নষ্ট করে ভাব সম্প্রসারণ শিখেছিলাম,অসির চেয়ে মসি বড়। ভুল জিনিষ শিখেছি মনে হচ্ছে।
চোখ ছলছল করে উঠলো। শেষ কয়টি লাইনের জন্য
ঘটনার জন্য তীব্র ধীক্কার জানিয়ে গেলাম।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
মনের মধ্যে এক ধরনের নিষ্ফল আক্রোশ জন্ম নেয়।
নির্বাক!!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনি নিজের চোখেই দেখেছিলেন "১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ছিলো অবরোধ দিবস। সারা দেশ থেকে দলে দলে মানুষ এসে জড়ো হয়েছিলো ঢাকায়।মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো সেদিন ঢাকা নগরী।গুলিস্তান-বংগবন্ধু এভিনিউ-বায়তুল মোকারম এলাকায় জনতার ভিড়ে, সমস্ত জনতাকে ছাপিয়ে বারবার একটি মুখই উদয় হচ্ছিলো। আর সেটি নূর হোসেনের।খালি গা। জিন্সের ট্রাউজার পরনে।বুকে পিঠে স্লোগান লেখা—স্বৈরাচার নীপাত যাক/গণতন্ত্র মুক্তি পাক।সে ছুটছিলো এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।থামছিলো না সে খানিকক্ষণের জন্যেও।ডিউটিরত পুলিশদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হচ্ছিলো তার কর্মকান্ডে।এক পর্যায়ে সেই পথ দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি যাচ্ছিলো।যুবকটিকে দেখে গাড়ি থামিয়ে তিনি তাকে ডাকলেন। বললেন,শিগগির জামা গায়ে দাও, পুলিশ তো তোমাকে গুলি করবে।উদোম-উদ্দাম বুকে পিঠে স্লোগান লেখা সেই যুবক তার প্রিয় নেত্রিকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। তারপর স্লোগান দিতে দিতে হারিয়ে গেলো জনতার ভেতরে।
এর কিছুক্ষণ পরেই গুলির শব্দ।বায়তুল "।
যে জননেত্রীকে কদম্বুসি করে নূর হোসেন শহীদ হল, সেই জননেত্রীর প্রতি আস্থা হারানোটা কি ঠিক হল?
একদম ঠিক হয় নাই। ভুল হয়া গেছে। এখন কী আর করা। গড়াগড়ি দিয়া কান্দি!
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
এক ভাষাহীন অদ্ভুত যন্ত্রণা ঘা মারল বুকে।
এত সুন্দর করে বল্লেন!!
_______
বুনোফুল
লজ্জা! কষ্ট!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
অনুভূতি বুঝানোর মত ভাষা জানা নেই
আমি কেঁদেছি! শেষ কথাগুলো হৃদয়ে শেলের মত বিধছেঃ
এমনই আমাদের শিক্ষক! 'নীতি আর আদর্শ' তাদের 'অনাহারে রাখে', ছেড়া জামা আর জুতোই তাদের সম্বল, তবু একটি শিশুর হাতে বর্ণমালা তুলে দেন পিতার স্নেহে, কণ্ঠে তুলে দেন, 'সদা সত্য বলিবে, সত্য বই মিথ্যা বলিবে না' বা 'গুরুজনকে সন্মান করিবে' প্রভৃতি মহামূল্যবান সম্পদ।
কৃতজ্ঞতা রিটন ভাই, এমন পিতৃতুল্য শিক্ষকদের নিয়ে লেখার জন্য!
ধন্যবাদ মামুন। অনেক কষ্টে লেখা হলো এই ছড়াটা। লিখতে গিয়ে সাধারণত কাঁদি না আমি। কিন্তু এইটা লেখার সময় কেঁদেছি।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনেক অনেক সুন্দর
আশরাফুল কবীর
কার আদেশে, কার বুকেতে
মারিস জলকামান
ভুলে গেছিস কাঁদের কাছে
পেয়েছিস শিক্ষাজ্ঞান।।
কিছুই বলার ভাষা নেই রিটন ভাই...
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন