সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে চায়ে চুমুক দিতে দিতে ল্যাপটপ ওপেন করতেই নিউজ ফিডে আওরঙ্গের ছবিটা ভেসে উঠলো। হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ। সন্ত্রাসী ছাত্রনেতা হিশেবে ব্যাপকভাবে পরিচিতি অর্জনকারী একজন বঙ্গবন্ধু প্রেমিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হলে আড্ডা পেটাতে গিয়ে আওরঙ্গ সম্পর্কে কতো কাহিনি যে শুনেছি! ইউনিভার্সিটি হলগুলোয় আওরঙ্গকে ঘিরে বহু কিংবদন্তি তখন মুখে মুখে ফেরে। সেই আওরঙ্গ আজ নিহত হয়েছেন মাওয়া সড়কে, এক মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায়।
সাল মনে নেই, (সত্তরের দশকে? আশির দশকে?) বিএনপি আওরঙ্গকে জেলখানায় আটকে রেখেছে। তাঁর মুক্তির দাবি সম্বলিত একটি বিবৃতিতে আরো কয়েকজন লেখক-শিল্পী-সাংবাদিকের সঙ্গে আমিও সাক্ষর করেছিলাম। তখনো আওরঙ্গের সঙ্গে দেখা হয়নি আমার। কিন্তু তাঁর সম্পর্কে বহু ইন্টারেস্টিং ঘটনা শুনে শুনে তাঁর ব্যাপারে একটা মিশ্র ধারণা আমার মধ্যে ছিলো। সেই বিবৃতিটি পত্রিকায় ছাপা হবার পর কেউ কেউ হতাশা প্রকাশ করেছিলেন—আমি কী করে একজন সন্ত্রাসীর পক্ষে বিবৃতিতে সই করলাম!
আওরঙ্গের সঙ্গে আমার দেখা হলো ১৯৮৯ সালে, কলকাতায়। মহানগর আওয়ামী লীগের একজন নেতার সঙ্গে দিন পাঁচেকের কলকাতা ভ্রমণের সময় আমরা আওরঙ্গের আতিথ্য গ্রহণ করেছিলাম। সদরস্ট্রিটের হোটেল টাইমস্টারে আমার পাঁচদিনের আওরঙ্গসান্নিধ্য একটা অভিজ্ঞতাই ছিলো বটে। দমদম এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি নিয়ে সন্ধ্যায় সদর স্ট্রিটের গলিতে ‘টাইম স্টার’ নামক পুরনোদিনের জংধরা একটা বিল্ডিং-এর সামনে নামতেই আমাদের অবাক করে দিয়ে অবাঙালি ট্যাক্সি ড্রাইভার বললো—‘আওড়াঙ্গো দাদার কাছে আইবেন আগে কাইবেন তো!’
--আপনি চেনেন তাঁকে?
--‘দাদাকে কে না চিনবে? বাহুতি ভালা আদমি আছে।’
আওরঙ্গের ডেরাটি অর্থাৎ সদরস্ট্রিটের হোটেল টাইমস্টার একটি অতি পুরাতন জংধরা মর্চেপড়া ভবনে অবস্থিত। অতিপ্রাচীন আমলে তৈরি বলে ইটসুরকি আর পলেস্তারার বেহাল অবস্থা। পলেস্তারা খসে গিয়ে বিল্ডিংএর কংকালের মতো এখানে ওখানে দাঁত বের করে আছে ভাঙাচোরা ইটের কাঠামো। বহুবছর চূনকাম করা হয়নি বলে রঙ করা হয়নি বলে কালের চিহ্নকে ধারণ করে থাকা ভবনটিকে হঠাৎ দেখায় মনে হবয়ে আগুনে ভষ্মিভূত কোনো ভবনের লাগোয়া ভবন এটি। পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে বেঁচেছে বটে কিন্তু আগুনের আঁচ লেগেছে পুরোপুরি। ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় কালচে হয়ে গেছে তাই ভবনটির দেয়াল ও ছাদ। প্রশস্ত কাঠের সিঁড়ি টপকে পৌঁছুতে হয় তিনতলায়। কাঠের সিঁড়িগুলোও ভবনের প্রাচীনত্ব ঘোষণা করছে বিপুল উদ্যমে।
মার্জিত শশ্রুমণ্ডিত সুঠাম দেহের উজ্জ্বল শ্যামল বর্ণের আওরঙ্গকে প্রথম দেখায় একজন মঞ্চ কিংবা টেলিভিশনের সাবেক নায়কের মতোই লাগছিলো। তরুণ এবং মাঝবয়েসী কয়েকজন তাঁকে পরিবেষ্টন করে ছিলেন। আমি এবং আওয়ামি লীগের নেতা ভদ্রলোক আওরঙ্গের গেস্ট হিশেবে ওদের কাছ থেকে আলাদা সম্মান ও সমীহ পাচ্ছিলাম খামোখাই। আওরঙ্গের ইশারায় আমাদের দুজনের জন্যে দুটি শীতল লিমকা এলো। সবাইকে না নিয়ে খেতে রাজি হচ্ছিলাম না বলে আওরঙ্গ আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন—আজ আপনারা প্রথম এসেছেন। তাই একটু আলাদা সম্মান না হয় গ্রহণই করলেন। কাল থেকে সব কিছু সমান সমান হবে। আজকের টুকু মেনে নিন। রাতের খাবার এলো। সবার সঙ্গে আমাদের খাবার মিলছে না। আমাদের দুজনার জন্যে মাংসের বাটিটা বাড়তি। অন্য সবার জন্যে ভাত অথবা নানরুটির সঙ্গে সবজি আর ডাল। পরেরদিন আমাদের দুজনার জন্যে দুপুরে এলো মাছ, বাড়তি আইটেম হিশেবে। কিন্তু সবার জন্যে এলো না। তৃতীয় রাতে একান্ত কথোপকথনের এক পর্যায়ে তাঁকে বললাম—বাংলাদেশে শুনে এসেছি আপনি এখানে রাজকীয় জীবন যাপন করেন। টাকা পয়সার কোনোই অভাব নেই আপনার। এখান থেকে চিরকূট পাঠালেই বাংলাদেশের ব্যাবসায়ীরা আপনার কাছে টাকার বাণ্ডিল পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু গত ক’দিনে আপনার লাইফ স্টাইল যা দেখছি তাতে আপনার পরিস্থিতি তো খুব সুবিধের মনে হচ্ছে না দাদা!
আমার কথায় খুব মিষ্টি করে হাসলেন আওরঙ্গ। হাসলে গালে খানিকটা টোলও পড়ে। বললেন—আপনার এই কথার জবাব কাল দেবো রিটন ভাই। আজ থাক। তবে বুঝতে পারছি এখানকার খাওয়া-দাওয়ায় আপনাদের কষ্ট হচ্ছে খুব। আমি কি আপনাদের জন্যে আলাদা ব্যবস্থা করবো? আপনিই কিন্তু আলাদা ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন।
আমি বললাম—আমি একটু ভোজনরসিক টাইপের মানুষ। কষ্ট যে হচ্ছে না তা বলবো না। তবে আলাদা ব্যবস্থা আমি কিছুতেই মানবো না। যা চলছে সেটাই চলুক।
শুভ রাত্রি বলে আওরঙ্গ চলে গেলেন আমার জন্যে বরাদ্দকৃত ছোট্ট সিঙ্গেল রুম থেকে। আমার রুম থেকে আওরঙ্গের রুমটা খুব বেশি দূরে নয়। একটা সেমি ডাবল রুমে আওরঙ্গ থাকেন। ইতোমধ্যে আমার জানা ও দেখা হয়ে গেছে যে তাঁর সঙ্গে একটা মেয়েও থাকে। মেয়েটি
বাংলাদেশের প্রবীন এক সাংবাদিকের কন্যা। মিস ক্যালকাটা বা ওইধরণের কোনো প্রতিযোগিতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন রূপসী। দৈনিক খবর হাউসে সেই প্রবীন সাংবাদিকের সহকর্মী আমি। মেয়েটির সঙ্গে কথা হলো। আমি তাকে বুঝতেই দিলাম না যে আমি তাঁর বাবাকে চিনি। ঢাকায় ফিরে তার বাবাকেও বলিনি যে তাঁর কন্যার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে আওরঙ্গের ডেরায়।
আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুব ভোরে কড়া নাড়ার শব্দে জেগে উঠে দরোজা খুলতেই দেখি আওরঙ্গ দাঁড়িয়ে আছেন হাসি হাসি মুখ করে। আমাকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্যে দুঃখ প্রকাশ করে বললেন—সাংবাদিক সাহেব একটু কি বাইরে আসবেন কাইণ্ডলি!
আমি বেরুতেই—‘একটু আসেন আমার সঙ্গে’ বলতে বলতে তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন দোতলায়, আমার রুমের একদম বিপরীত দিকের একটা রুমের দরোজার সামনে। ভেতর দিক থেকে বন্ধ থাকলেও বিশেষ কায়দায় সামান্য নড়বড়ে দরোজাটা হালকা মোলায়েম ভঙ্গিতে দুতিনটে ঝাঁকুনি দিতেই খুলে গেলো ওটা। রুমটা বেশ বড়সড়। ডাবল রুমের চাইতেও বড়। রুমের মাঝখানে বড় একটা চৌকি। চৌকিতে ঠাঁসাঠাঁসি করে পাঁচ-ছ’জন ঘুমিয়ে আছে। দেয়াল লাগোয়া ধেদ্ধেড়ে সোফাটায় ঘুমিয়ে আছে দু’জন। আর ফ্লোরে এর ঘাড়ে ওর পা ওর পায়ে এর মাথা এমনি পেজগি লাগানো অবস্থায় আরো সাত-আটজন যুবক ঘুমিয়ে আছে। ষোলো সতেরোজন যুবককে একটিমাত্র কক্ষে এরকম কাৎচিৎ ঘুমিয়ে থাকতে দেখে খানিকটা অবাক হলাম। আমি ঘরটাতে ছেলেগুলোকে ঠিকঠাক দেখেছি নিশ্চিত হবার পর আওরঙ্গ ফের নিপূণ দক্ষতায় দরোজাটা বন্ধ করার মতো করে ভেজিয়ে দিলেন। তারপর কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে বললেন—কাল আপনি জানতে চেয়েছিলেন কেনো আমি রাজকীয় জীবন যাপন না করে কলকাতায় প্রায় গরিবি হালে আছি। আসলে টাকা-পয়সা আমার যা আছে তাতে আমার একার জীবন এখানে রাজসিক ভাবে কাটানোরই কথা। কিন্তু একবার ভাবুনতো একলা একা জীবনের প্রাত্যহিক বাজেটে যদি আরো গোটা বিশেক জীবন এসে যুক্ত হয় তাহলে তো ভাই মাছ-মাংসের জায়গায় ভাজি আর ডালই জুটবে, নাকি!
--এই ছেলেগুলো কারা? এদের সবার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কেনো আপনার ঘাড়ে বর্তেছে? এরা কি আপনার পার্টির ছেলেপেলে?
--না, এরা সবাই আমার পার্টির নয়। এদের কাউকে কাউকে আমি চিনিও না জানিও না। এদের কেউ কেউ অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও জড়িত। খুবই বিপদে পড়ে দেশ থেকে পালিয়ে কলকাতায় চলে এসেছে। এখানে কাউকে চেনে না। যাবে কোথায় থাকবে কোথায় খাবে কি? অচেনা শহরে এসে এর ওর কাছ থেকে আমার ঠিকানা যোগাড় করে চলে আসে সরাসরি। হোক অচেনা। বাংলাদেশের ছেলে তো! তাই ফেলে দিতে পারি না। যতোদিন দরকার থাকে তারপর বিপদ কেটে গেলে এক সময় চলে যায়। চলে যাবার সময় জড়িয়ে ধরে অনেকে খুব কান্নাকাটি করে। এই ছোটভাইগুলোকে দেখতে হয় বলেই নিজের আরাম আয়েশকে কাটছাট করতে হয়। রোজ রোজ বিরিয়ানি খাওয়া হয় না। ও ভালো কথা আপনার বিরিয়ানি খাবার ব্যবস্থা হয়েছে। আপনাদের দুজনার একটা দাওয়াত আছে। ওই যে পাশের এস্টোরিয়া হোটেলে বাংলাদেশের ধনী এক যুবক থাকে। আপনাদের দুজনকে আপ্যায়ন করতে চায়। আমার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। আজ দুপুরে যান আপনারা।
আমি বললাম—নারে ভাই। বিরিয়ানির গুষ্ঠি কিলাই। আমি যাচ্ছি না কারো আপ্যায়নে শামিল হতে।
--আরে যান যান। আপনি তো লেখক মানুষ। নানান চরিত্রের মানুষ দেখতে পছন্দ করেন। এই মানুষটা ভেরি ইন্টারেস্টিং। মাসের পর মাস এয়ারকন্ডিশণ্ড রুম ভাড়া করে থাকে। কয়েকজন চ্যালাও জুটিয়েছে। অঢেল টাকা খরচ করে প্রতিমাসে। আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে। কিন্তু সম্মান ঠিকই করে। খুব বিনয়ের সঙ্গেই দাওয়াতটা দিয়েছে। বিরিয়ানির কথাটা ফান করে বলেছি। আপনি খুব মজা পাবেন ওর কর্মকাণ্ডে। এক বেলার অতিথি হয়েই দেখেন না। আর এইটুকু আস্থা আমার ওপর রাখতে পারেন যে আপনার মর্যাদার সামান্য হেরফের হবে এমন জায়গায় আমি আপনাকে যেতে বলবো না।
আওরঙ্গের একজন সহযোগী দুপুরে আমাদের নিয়ে গেলো হোটেল এস্টোরিয়াতে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আমাদের অপেক্ষাতেই ছিলেন আমাদের অচেনা হোস্ট। লম্বাচওড়া মোটাসোটা কৃষ্ণদেহী যুবকের চোখ দুটি বড় বড়। কথা বলে ঢাকার আঞ্চলিক ডায়ালেক্টে। নামটাও অদ্ভুত—ডিপু। মনোয়ার হোসেন ডিপজল ওরফে ডিপু। ডিপুর সঙ্গে বিরিয়ানি যোগেই দ্বিপ্রাহরিক আহার সমাপন হলো। আওরঙ্গ ঠিকই বলেছিলেন এই যুবক আসলেই ইন্টারেস্টিং। পরিচয়ের মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ডিপু আমাদের জানিয়ে দিলো মিরপুরে সনি সিনেমা হলের মালিক ওরা। ওর বড় ভাই কোটিপতি ব্যবসায়ী। ফিল্ম প্রডিওসার। বড় ভাইয়ের প্রযোজিত কয়েকটা ছবিতে অভিনয়ও করেছে সে। কিন্তু খুব একটা সুবিধে করতে পারছে না। তবে সে আশাবাদী একদিন সে বিখ্যাত নায়ক হবে। খবর হাউসের অপরাধ বিষয়ক সাপ্তাহিক ‘বর্তমান দিনকাল’এর ফটোসাংবাদিক ওয়াহিদ মুরাদের একটি রিপোর্টের কারণে একটি মার্ডার কেসের আসামী হিশেবে ডিপুর এই পলাতক জীবন, কলকাতায়। দেশে ফিরে ওয়াহিদ মুরাদকে খুন করে ফেলার একটা সুপ্ত বাসনার কথাও একফাঁকে বলে ফেললেন। আমি বললাম—সেটা পারলে ওকে খুন-টুন করেই পালাতেন। বিকেলে রিপন স্ট্রিটের ‘মির্জা গালিব’ নামের বার-এ নিয়ে গেলো ডিপু। আমি পান করি না তবুও গেলাম। ডিপু অনেক মজা করলো। আসলেই খুবই ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার এই যুবক। খুব অল্প সময়েই একদম ঘনিষ্ট বন্ধুর মতো হয়ে গেলো সে। ওর মনের বহু সুপ্তবাসনার কথা অকপটে বলে ফেললো। আমি ঘুরতে পছন্দ করি জেনে জিজ্ঞেস করলেন—আম্রিকা যাইবেন নাকি পেরিস যাইবেন? খর্চাপাতি আমার। আপ্নেরে আমি আম্রিকা ঘুরনের ব্যবস্থা কইরা দিমু।
(ঢাকায় ফেরার পর এযাবৎ আর দেখা হয়নি আমার ডিপুর সঙ্গে। ‘আম্রিকা’ও যাওয়া হয়নি ওর খর্চায়! পরবর্তীতে ঢাকাই ফিল্মের খলনায়ক হিশেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে সে।)
আমার কলকাতা অবস্থানকালে জননেত্রী শেখ হাসিনার চারপাঁচ ঘন্টার একটা যাত্রাবিরতি ছিলো দমদম এয়ারপোর্টে। তিনি নৈনিতালে তাঁর পুত্র কিংবা কন্যার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন কিংবা দেখা করে ফিরছিলেন। আওরঙ্গ যাবেন নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। আমাকেও নিয়ে যেতে চাইলেন। গেলাম। এয়ারপোর্টের ভেতরেই একটি বিশ্রামকক্ষে নেত্রীর সঙ্গে আওরঙ্গের অনেক কথা হলো। আপা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে কথা বলছেন। আওরঙ্গ একটা চেয়ার টেনে নেত্রীর কাছাকাছি খানিকটা কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে বসে খুব বিনয়ী ভঙ্গীতে তাঁর আনুগত্যের কথা প্রকাশ করছিলেন বারবার। উল্টোদিকের একটা চেয়ারে একটা পত্রিকা পড়ার ভান করে আমিও শুনছি তাঁদের কথোপকথন। আওরঙ্গ দেশে ফিরতে চায়। কিন্তু আপা কিছুতেই আওরঙ্গকে আস্থায় নিতে চাইছেন না। একাধিকবার প্রমিস করলেন আওরঙ্গ।
আমি আওরঙ্গের একটা ইন্টারভিউ করবো। ঢাকায় ফেরার আগের দিন আমরা দুজন বসলাম টাইমস্টারে আমার কক্ষে। আওরঙ্গ প্রশ্নগুলো একবার জানতে চাইলেন। আমি খসড়া নোট থেকে প্রশ্নগুলো বললাম। একটি প্রশ্নে আওরঙ্গ নড়েচড়ে বসলেন। তারপর ঢাকায় টেলিফোনে তাঁর কোনো এক নেতার সঙ্গে কথা বললেন। পাশের কামড়া থেকে আমি সব না শুনলেও মোটামুটি শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি আমার নাম বললেন অপর প্রান্তের নেতাটিকে। আমার নাম শুনে অপর প্রান্তের নেতা সম্ভবত আওরঙ্গকে নেতিবাচক ক্লিয়ারেন্স দিলেন। আওরঙ্গ খুব বিনয়ের সঙ্গে আমার কাছ থেকে লিখিত প্রশ্নপত্রটি রেখে দিতে চাইলেন। পরে তিনি উত্তর লিখে পাঠাবেন। (প্রশ্নের উত্তরগুলো তিনি পাঠাননি।) আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম—একটি বাক্যও লিখবো না আমি আওরঙ্গকে নিয়ে। সেই থেকে এ পর্যন্ত লিখিওনি। কিন্তু আওরঙ্গের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছিলো পরে। সে কথায় একটু পরে আসছি।
পরদিন রোদঝলমল সকালে টাইমস্টারের ছাদে গিয়ে কিছু ছবি তুললাম আওরঙ্গের। রুমে ফিরে এসে আওরঙ্গ আমাকে বললেন—আপনি জানতে চেয়েছিলেন আমি কেনো গোয়েন্দা বাহিনির একজন সদস্যকে হত্যা করেছি। এই যে দেখেন—বলতে বলতে গায়ের শার্টটি খুলে ফেললেন আওরঙ্গ। তারপর আমার দিকে পিঠ উন্মুক্ত দাঁড়ালেন তিনি। তাঁর উজ্জ্বল শ্যামলা প্রশস্ত পিঠে কয়েকটি দাগ। কিসের দাগ এগুলো? আওরঙ্গ বললেন—গুলির। সেদিন শেরাটন ক্রসিংয়ের বাঁদিকের সাকুরা বারের গলির মোটর গেরেজের ভেতর থেকে গোয়েন্দাবাহিনির সদস্যরা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলী করেছিলো। আহত অবস্থায় কোনো মতে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিলাম সেদিন। (আহত আওরঙ্গকে তখন পুত্রস্নেহে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন আমার খুব প্রিয় একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। এটা গতকাল জানলাম সেবা প্রকাশনীর বিখ্যাত এক লেখক-অনুবাদক রওশন জামিলের কাছ থেকে।) আত্মরক্ষার্থে পালটা লড়াইটা না করলে সেদিন ওখানেই আমার ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যেতো। আচ্ছা আপনি বলেনতো ভাই গোয়েন্দাবাহিনির একজন সদস্য আড়ালে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থেকে আমাকে গুলি করবে কেনো?
--দেশে তো আপনার ফেরা হচ্ছে মনে হয়।
--হ্যাঁ মনে হচ্ছে ফিরতে পারবো। আর ভাল্লাগে না এই প্রবাস জীবন। আমি আমার নিজের জীবনে ফিরে যেতে চাই। এখন যে জীবনটা যাপন করছি সেটা আমার জীবন নয়। আমি একটা শেষ চেষ্টা করতে চাই।
আওরঙ্গের পাঁচদিনের ডাল-রুটি-ভাজি আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণহীন পুরনো জংধরা হোটেলের আতিথ্য শেষে ঢাকা চলে এলাম। এবং এসেই নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। কাজের চাপে যথারীতি ভুলেই গেলাম আওরঙ্গের কথা। খবর গ্রুপের একটা সাপ্তাহিক পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব ও টেলিভিশনের কর্মকাণ্ড নিয়ে আমার তখন ব্যস্ত দিন কাটে।
কয়েক মাস পর তরুণ লেখক হালিম কিসমতের শিশুকিশোর উপযোগী একটা বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়া হলো। বাড়ির ভেতরকার সবুজ লনে চেয়ার টেবিল পেতে পেছনে একটা ব্যানার ঝুলিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হলো। আড়ম্বরহীন সেই চেয়ার টেবিলে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মধ্যমনি করে প্রফেসর মযহারুল ইসলাম সাংবাদিক হারুণ হাবিব এবং আমি বসলাম। আমাদের সামনে কিছু শিশুকিশোর ছিলো। হালিম কিসমতের বইয়ের ওপর ভিত্তি করে মূলত বঙ্গবন্ধুর শিশুপ্রীতি নিয়ে আমার বক্তৃতার কিছুক্ষণ পর অচেনা এক তরুণ(৩২ নম্বরের গৃহপরিচারক) আমার কানের কাছে ফিঁসফিঁস করে বললো—দাদা আপনারে সালাম জানাইছে। এই ন্যান। দেখি ওর হাতে ভাঁজ করা ছোট্ট একটা চিরকূট। আর তাতে লেখা—‘আপনার বক্তৃতা শুনলাম। খুব চমৎকার বলেন তো! আওরঙ্গ।’ ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম লোকটা কই? খুব নিচু কণ্ঠে ছেলেটা বললো দাদা আছেন ভিতরে।
দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থানজনিত কারণে তাঁর এলাকা শরীয়তপুর কেন্দ্রীক আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে খুব একটা সুবিধে করতে পারছিলেন না আওরঙ্গ। উপদলীয় আঞ্চলিক বিরোধ বিশেষ করে দলের ইনার পলিটিক্সের শিকার হয়ে এক ধরণের অপমান ও হতাশার ঘোরপ্যাঁচে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে যারা শ্লোগান দিতে শিখেছিলো, মিছিলে যেতে শিখেছিলো তারাই তাঁর ওপরে খবরদারি করছিলো। একদার দাপুটে ছাত্রনেতা হিশেবে সেই পরিণতি মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। আওয়ামী লীগের নমিনেশন না পেয়ে সতন্ত্র প্রার্থী হিশেবে নির্বাচন করেছিলেন।
অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় শেরাটনে তিনি ধরা দিলেন বিশেষবাহিনির হাতে। শুনেছি তাঁর সঙ্গে এক ধরণের প্রতারণা করা হয়েছিলো। কোনো একজন নেতার কথায় তিনি ধরা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নেতা কথা রাখেনি। তাঁকে আর রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। বিশেষবাহিনি তাঁকে অনেক টর্চার করেছিল। দুইহাত পেছনে বেঁধে মিডিয়ার সামনে তাঁকে হাজির করেছিল। সেই ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় দেখেছি এককালের দাপুটে আওরঙ্গের বিধ্বস্ত চেহারা। এরপর বহুকিছুই তো হলো। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম প্রতিবাদ মিছিলটি বেরিয়েছিলো যে আওরঙ্গের নেতৃত্বে, সেই আওরঙ্গকেই হতে হলো জিয়ার সৈনিক! নষ্ট রাজনীতি এভাবেই হত্যা করে একেকজন আদর্শবাদী যুবককে। মুজিব সৈনিক আওরঙ্গ নিহত হলেন বিএনপির সাংসদ পরিচয়ে!
আজ ফেসবুকে সড়ক দুর্ঘটনায় আওরঙ্গের মৃত্যুসংবাদ জানতে পেরে এবং খবরের সঙ্গে আওরঙ্গের ছবিটা দেখে এক ঝটকায় বহু স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে সত্তর ও আশি দশকের ছাত্ররাজনীতির একজন নায়কের এই রকম পতন ও প্রস্থান আমাকে ব্যথিত করেছে। আওরঙ্গরা সন্ত্রাসী হয় কেনো? বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে গুরু আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একদিন আমাকে বলেছিলেন ঢাকা কলেজে আওরঙ্গ নামে তাঁর এক অসাধারণ ছাত্রের কথা। স্যার বলেছিলেন—কুইজ অনুষ্ঠানে যে কোনো প্রশ্নের পর প্রথম হাতটি তুলতো হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ নামের ছাত্রটি। মেধাবী সেই ছাত্রটির সন্ত্রাসী হিশেবে বিখ্যাত বা কুখ্যাত হয়ে ওঠাকে একটা বিস্ময়কর ঘটনা বলেই মনে হয়েছে স্যারের কাছে।
রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের ফসল ও তার শিকার হতভাগ্য আওরঙ্গ, নায়কের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে ট্রাজিক পরিণতিতে। আপনি সেই ট্রাজিক হিরো। কলকাতার পলাতক জীবন থেকে দেশে ফেরার পর আপনি তো মৃতই ছিলেন আনঅফিসিয়ালি। এই সড়ক দুর্ঘটনাটি আপনার মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণারই সম্প্রচার করেছে মাত্র।
০৪ আগস্ট ২০১৩
মন্তব্য
আওরঙ্গ নামটি শুনলে একজন সন্ত্রাসী দাগী রাজনীতিকের চেহারাই ভেসে ওঠে। তার সম্পর্কে জানা ছিল না আর কিছুই। বাংলাদেশের রাজনীতির কুৎসিত সমীকরনটা একজন আওরঙ্গের বিবর্তনের মধ্যেই অনেকটা স্পষ্ট দেখা গেল। আরো হাজারো আওরঙ্গের রংবদলও ঘটছে এই সময়ে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নষ্ট রাজনীতির বলি, লেখা অসাধারণ লাগলো
ইসরাত
কী বলব; বুঝতে পারছি না কিছুই
তৃতীয় চোখে দেখা একজন মানুষের কথা। ভাল লাগলো লেখাটা।
আমার বাবার মুখে আওরংগের কথা শুনতাম অনেক। তাঁরা একসাথেই ভার্সিটিতে পড়তেন, একসাথেই রাজনীতি করতেন। বাবাকে দেখতাম আওরংগের খুব গুণমুগ্ধ।
-এস এম নিয়াজ মাওলা
রাজনীতির জটীল আবর্ত কাকে যে কোথায় নিয়ে যায়!
লেখা ভাল লাগল - মন ছুঁয়ে গেল।
- একলহমা
আপনার কল্যাণে অনেক অজানা কিছু জানতে পারছি, ধন্যবাদ রিটন ভাই।
facebook
আমি তো আওরঙ্গ বলতে সন্ত্রাসীই বুঝতাম। নতুন তথ্য দেবার জন্য ধন্যবাদ।
____________________________
চমৎকার আলাপচারিতা, মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।
আব্দুল্লাহ এ এম
এই লেখা পড়ে যা বুঝলাম তা হলো সন্ত্রাসী য্দি আওয়ামী লীগের হয় তাহলে ঠিক আছে।
যেই লোক দেশের ব্যবসায়ীদের চাঁদার টাকায় খায় তার টাকায় আতিথীয়তা গ্রহন করতে আপনার বিবেকে বাধলো না। ভাল। খুব ভাল।
রিটন ভাই লোক ভালো না কিন্তুক, সন্ত্রাসীদের সাথে উনার উঠাবসা। সাবধানে থাইকেন
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
দুই নামবার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া ১০০% হালাল
এর জন্য আগে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে সে দুই নম্বর ব্যবসায়ী।
অফটপিকঃ ছা-পোষা চাকরিজীবি ব্য্বসায়ী শব্দটি দেখলেই তেলে-বেগুণে জ্বলে উঠে।
ভাইজান কমপু গুতাইয়া মাসে ২ লাখ টাকা কামাই,কারো ধার ধারিনা,আপনার তারেকের পাও চাটিনা,হাছিনা আপার উপরেও নিরভর করতে হয়না,আপনার ভাইয়া তারেক আওরঙ্গের নখের সমানও হবেনা,ভালো থাকবেন।
বড্ড বেশি গতানুগতিক চিন্তাধারার মানুষ আপনি।
আফসোস আপনার ভাইয়া তারেকের মত আধুনিক চিন্তাধারার মানুষ হতে পারলামনা?
ভাল লাগল
বলদ মানুষ
কোথায় যেনো প্রচ্ছন্ন এক প্রশ্রয়ের সুর পাচ্ছি................রিটন ভাই আপনার লেখায়, সরি; যতো প্রতিভাবান আর মিষ্টভাষী হোক না কেনো, দিনের শেষে এই লোক দাগী খুনি আসামী ছিলো, পরিচয় এটাই, সত্য এটাই ।।
একটা গল্প শুনেছিলাম। আহত আওরঙ্গকে এম্বুলেন্সের ভেতর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিলো। হাসপাতালে নিলে পুলিশ ধরবে, তাই চলন্ত এম্বুলেন্সে অপারেশন।
সন্ত্রাসী শেষ পর্যন্ত সন্ত্রসীই। তার আর কোন পরিচয় থাকে না।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
এই জন্যই আপনাকে গতানুগতিক বললাম কারন আপনি ধরেই নিচ্ছেন তারেক আমার ভাইয়া। আমি কিন্তু ঘুণাক্ষরেও ভাবছি না জয় আপনের দাদা। এই চক্রটা বড্ড বেশি বোরিং। অথচ কথা হচ্ছিল আওরঙ্গের চাঁদার টাকায় আতিথীয়তা গ্রহণ করা উচিত কি উচিত নয়।
আমার নানার বাড়ি দাদার বাড়ি দুইটাই আওরঙ্গের নির্বাচনী এলাকায়। ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি সেই অঞ্চলে আওয়ামী লীগ কলাগাছকে নমিনেশন দিলে কলাগাছ পাশ করবে। কিন্তু যতদূর মনে পরে আওরংগ স্বতন্ত্র হয়ে পাশ করেছিলেন। সবচেয়ে অবাক বিষয় হলোঃ আওয়ামী লীগের অন্ধ সমর্থক পরিচিত শরীয়তপুরবাসীরা তাতে বিশেষ কিছু মনে করে নাই। তখন পর্যন্ত মানুষজন মনে হয় এটাকে হাল্কা মান অভিমান ধরে নিয়েছিল।
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
৮০র দশকে বড় হয়েছি। ছড়া পড়তাম। সেজন্য স্বভাবতই আপনার ছড়ার ভক্ত ছিলাম (এবং আছি)।
তবে দিনশেষে একজন আওরংগ বা একজন অভি যত মেধাবীই হোক, দিন শেষে তারা কেবলি সন্ত্রাসী। আর সন্ত্রাসীর কোন দল নেই। সেজন্য আওরংগ হয়ে যায় বিএনপির সাংসদ। অভি খালেদা জিয়াকে নিয়ে অশালীন উক্তি করে। একজন সন্ত্রাসী যে কারণেই সন্ত্রাসী হোক তার অপকর্মের দায় তারই। আওরংগ, অভিরা কেন সন্ত্রাসী হয় জানেন? কারণ আমরা সন্ত্রাসীদের প্রত্যাখান করিনা। যে কারণে আপনার এই পোস্ট। দুঃখজনক হলেও কথাটা সত্য।
নতুন মন্তব্য করুন