শহীদ জননী ডেকো না আমাকে, ওতে আমি পাই লজ্জা
এই বাংলার মাটিতে আমার পুত্র পেতেছে শয্যা-
অথচ জানি না সেটা কোনখানে, কোথায় ঘুমালো পুত্র?
দেশের মাটির সঙ্গে আমার রক্তের যোগসূত্র।
গত পঁয়ত্রিশ বছরে বাছারে ঘুমাতে পারি না রাত্রে
ছেলের ষ্পর্শ-গন্ধটা খুঁজি তার নীল শার্ট হাতড়ে।
খেতে বসলেই মানিকের মুখ ভেসে ওঠে চোখে, আহা রে
ও মানিক তুই কোথায় ঘুমালি? জিজ্ঞেস করি কাহারে?
যাকেই শুধাই বলে দেখি নাই, ওরা সব জ্ঞাণী বোদ্ধা,
অথচ ওরাই ছিলো তোর সাথী, ছিলো তোর সহযোদ্ধা।
ওরা কেউ কেউ আজকে জানিস ঘাতকের মহামিত্র
তিন দশকের মাথায় দেখছি বুক ভেঙে যাওয়া চিত্র-
এক মঞ্চেই বক্তৃতা করে তোদের বন্ধু খোকারা
ওরা বেঁচে থাকে, মন্ত্রীও হয়, তোরা মরেছিস বোকারা!
তোদের প্রাণের বিনিময়ে ওরা আখের নিয়েছে গুছিয়ে
ওরা কোনোদিন আসে নাই দিতে আমার অশ্রু মুছিয়ে......
সমুখ যুদ্ধে বুলেটে বুলেটে হয়েছিলি তুই ঝাঁঝরা
একই পরিণতি বরণ করেছে সুধাংশু আর হাজরা।
অথচ তোরা তো কোথথাও নেই, নেই কোনো স্মৃতিচিহ¡
স্মৃতি মুছবার সুদুর প্রসারী নীলনকশাটা ঘৃণ্য......
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া হাঁটি, পাই না কোথাও স্বস্তি
খুঁজি সারাদেশে,যদি পেয়ে যাই আমার ছেলের অস্থি !
সারা দিনমান তোকে খুঁজে ফিরি, কোথা পড়েছিলি লুটিয়ে?
স্বাধীনতা আর মুক্তি নামের রক্ত-গোলাপ ফুটিয়ে?
দাফন-কাফন? কবরও হয়নি? ঘাসের সবুজ চাদরে-
এই মাটি তোকে কোলে তুলে নিলো মায়ের পরম আদরে?
তাই এ মাটিতে কান পাতি, যদি শোনা যায় তোর কান্না
এই মাটিতেই তোর রক্তের যতো হীরে মোতি পান্না।
এই মাটিকেই চুমু খাই রোজ এই মাটি কতো লক্ষ্মী
এই মাটিতেই মিশে আছে আহা আমার ময়না পক্ষী!
একাত্তরের ঘাতকেরা আজ স্বাধীন দেশের মন্ত্রী
তোর কোনো কোনো বন্ধুকে দেখি ভয়াবহ ষড়যন্ত্রী!
তোর বন্ধুরা সাক্ষাৎ করে গোলাম আযমের সঙ্গে
মুজাহিদ আর নিজামীর সাথে মেতে ওঠে হাসি-রঙ্গে!
পত্রিকা আর টিভিতে সে ছবি প্রায়শই দেখি আমরা
আমরা সকলে গন্ডার যেনো, মোটা হয়ে গেছে চামড়া।
রাজনীতি-হাটে তোরা হচ্ছিস খুবই পপুলার পণ্য
কিছু কিছু লোকে রাজনীতি করে শুধুই তোদের জন্য।
তোদেরকে নিয়ে সিনেমা হচ্ছে কবিরা লিখছে কবিতা
লোকেরা দেখছে, লোকেরা পড়ছে, ভুলেও যাচ্ছে সবই তা......
অপরূপ কিছু কথা আর সুরে অপূর্ব কিছু গানেতে
তোরা রয়েছিস, সে গান শুনলে শিহরণ লাগে প্রাণেতে......
স্বাধীনতা আর বিজয় দিবসে আলোচনা আর নাটকে
তোরা শহীদেরা আটকে আছিস বিষ্মরণের ফাটকে।
মুক্তিযোদ্ধা অনাহারে থাকে কেউ কেউ করে ভিক্ষা
ধিক ধিক ধিক! অভাগা জাতির আর কবে হবে শিক্ষা?
রুমী বাছা তোকে চুপি চুপি বলি- আমিও তো খেতে পাই না
অনাহারে থাকি, তোর কথা ভেবে হাত পাততেও যাই না।
তোর সম্মান সবার ওপরে, আমার এ জীবন তুচ্ছ
বাছা তোর তরে এই অন্তরে রক্ত-গোলাপ গুচ্ছ ......
পুনশ্চ : নেতার প্রতি
তোমার তো নেই দায়বদ্ধতা শহীদের প্রতি মমতা
তুমি শুধু বোঝো নিজের আখের, তুমি শুধু বোঝো ক্ষমতা।
দেশের জন্যে যাঁরা প্রাণ দিলো তাঁদের রেখেছো অতীতে
বিষ্মরণের প্রতিযোগিতায় এগিয়েছো দ্রুত গতিতে।
আমি হারালাম কলিজার ধন আমার পুত্র রুমীকে,
ঘাতককে তুমি ক্ষমা করে দাও?? ক্ষমা করবার তুমি কে?
তোমার লোভের আস্কারা পেয়ে স্মৃতি সৌধেও যায় এরা
অভিশাপ দেই! অভিশাপ দেয় দুখী বাংলার মায়েরা ......
-----------------------
আমার লেখা পড়ে যাঁরা মন্তব্য করেছেন তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। প্রযুক্তিগত অক্ষমতার কারণে আমি নিজে মন্তব্যের জবাব দিতে কিংবা অন্যের লেখা পড়ে মন্তব্য করতে পারছিনা বলে খুবই বিব্রতকর পেরেশানিতে আছি। মাহবুব মোর্শেদ আমাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ও নিশ্চয়ই একটা পথ আবিষ্কার করে ফেলবে। এই লেখাটিও মোর্শেদের সহায়তায় পোস্ট করা গেলো।
মন্তব্য
...আমাদের ধমনীতে শহীদের রক্ত, এই রক্ত কোনোদিন পরাভব মানে না।...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
খুবই ভাল লাগল। অনেক নির্মম সত্য উঠে এসেছে লেখাটায়।
______ ____________________
suspended animation...
হুমমম। দীর্ঘশ্বাস।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ভাল লেগেছে!
ব্লগস্পট | অর্কুট | ফেসবুক | ইমেইল
লেখাটি ভালো লেগেছে।
মুর্শেদের উপর আস্থা রাখতে পারেন।
আমার মতো কম্পুকানাদের জন্য উনিই বড়ো ত্রাতা।
খুব ভালো লাগলো।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
এত ডরান কেন অযথা? আছি আমরা। বয়স হলে নির্ভয়ে ঘুম দেন। দেশ দেখে রাখবো।
ভালো লাগে না, কিচ্ছু ভালো লাগে না ... ।
হাঁটুপানির জলদস্যু
রিটন ভাই,আপনার স্বৈরাচার বিরোধী দুর্দান্ত ছড়াগুলো-সচলায়তনে চাই ।
না হলে কিন্তু আন্দোলন গড়ে উঠবে
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
এস এম মাহবুব মুর্শেদ তাড়াতাড়ি আপনার হাতে সব ক্ষমতা তুলে দেবেন আশা করছি। নিজে পোস্ট আর মন্তব্যের জবাব দিতে না পারলে ব্লগের অর্ধেক আনন্দই তো অধরা থেকে যাবে।
হাসান মোরশেদের দাবীর সাথে আমিও একমত।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
লুত্ফর রহমান রিটনের ছড়া পড়া গেল। এইটা কি ছয়মাত্রার মাত্রাবৃত্তে লিখিত?
............................................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
খুব ভালো লাগলো রিটন ভাই।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
রিটন ভাই,
দারুণ! জনকণ্ঠে নানান সময়ে প্রকাশিত এই জাতীয় ছড়া পড়ে আমার মুগ্ধতা জানাতে আপনাকে বারকয়েক মেইল করেছি। উত্তরও পেয়েছি প্রতিটি বার। এবার মুগ্ধতা জানাচ্ছি ব্লগে।
আরো চাই এই ধরনের ছড়া। আব্দার নয়, দাবি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
এটা কি নতুন লেখা? আগে কখনোই পড়িনি এটা। দুর্দান্ত......
হাসান মোরশেদের দাবীর সাথে সহমত জ্ঞাপন করছি।
কি মাঝি? ডরাইলা?
মাউস দিয়ে লিখতে গিয়ে জান শেষ।
আপনাদের ধন্যবাদ।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
আবার পড়লাম এবং আবার ভাল লাগলো।
মাঝে মাঝেই বুকের জমা ক্ষোভ উন্মাদ উদ্দামে শিখরের দিকে ধাবে, মনে হয় ভেঙে চুরমার করে দেই সব... পরমুহূর্তেই সেই উদ্দামতাকে টেনে মাটিতে আছড়ে নামায় আমার বাস্তবতা, তখন কি যে অসহায় লাগে রিটন ভাই!
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
নতুন মন্তব্য করুন