শিরোনামের প্রথম অংশ দেখে কেউ যদি ভাবেন আমি কোন মিষ্টি প্রেমের কাহিনী বলতে যাচ্ছি, তাহলে তাদের জন্য শুরুতেই সতর্কবাণী। অভিজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রই জানেন যে বেশির ভাগ প্রেমের অভিজ্ঞতাই সুখকর নয়। আর সুখ তো দূরে থাকুক, এটাকে আদৌ আমার প্রেমের অভিজ্ঞতা বলা যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে যথেষ্ট। কেন, তা ধৈর্যশীল পাঠকরা সহজেই বুঝতে পারবেন আশা করি।
ঘটনা আমার কলেজ জীবনের। সময়কাল বা পাত্রপাত্রীর প্রকৃত নাম এখানে মুখ্য নয়। তাই সেসবে যাব না। সরাসরি মূল প্রসঙ্গে চলে যাই।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে পরিসংখ্যান নেবার কারনে আমাকে ক্লাস করতে হতো মানবিক বিভাগের সাথে। কারন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে শুধু তিনজন নিয়েছিলাম আমরা পরিসংখ্যান। তাই স্যার ঝামেলা না বাড়িয়ে আমাদের তিনজনকে মানবিক বিভাগের সাথে ক্লাস করতে বলেছিলেন। ওর সাথে আমার পরিচয় এই পরিসংখ্যান ক্লাস করতে যেয়েই।
ও ছিল খুব হাসিখুশি, খোলামনের একটা মেয়ে। শিশুসুলভ সারল্য ছিল চোখে পড়ার মত। খুব তাড়াতাড়ি মিশে যেতে পারত যে কারো সাথেই। কলেজে বেশ পরিচিতিও ছিল ওর। আর স্যারদের সাথেও ছিল ওর বেশ ভাল সম্পর্ক। তবে চঞ্চলতা আর ছটফটে স্বভাবের কারনে অনেকে আবার এটাও বলত যে ওর ভেতর পাগলামি ভাবটাও নাকি খুব প্রবল।
পরিচয়টা কোন এক ক্লাস পরীক্ষার পর। আমার খাতা স্যারের খুব পছন্দ হওয়ায় উনি ক্লাসে সবার কাছে প্রশংসা করেছিলেন আমার হাতের লেখা আর লেখার ধরনের ব্যাপারে। তারপর ক্লাস শেষ হওয়ার পর ও এসেছিল আমার কাছে। খাতাটা নিয়ে কিছুক্ষণ দেখল। এরপর পরিচয়পর্ব এবং হালকা কিছু কথা হল। আমিও চলে এলাম নিজের ক্লাসে।
তারপর থেকে নিয়মিতই কথা হতে থাকল। পরিচয়ের পালা এক অধ্যায় থেকে গড়িয়ে পরবর্তী অধ্যায়ে পৌছুল। মানে বন্ধুত্ব আর কি। তবে এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, মানবিক বিভাগে আমার খুব ঘনিষ্ট একজন বান্ধবী ছিল। বুবলি। ক্লাসের বাইরে তো বটেই, ওর সাথে নিয়মিত আড্ডা দিতাম পরিসংখ্যান ক্লাস করতে গিয়েও। পাঠক, এতটুকু পড়ে থাকলে নামটা মাথায় রাখবেন, ওর প্রসঙ্গে পরে কিছু কথা আসবে।
দিন কাটতে থাকল এভাবেই। তবে খুব বেশি দিন না। একদিন ক্লাসের বিরতিতে করিডোরে হাঁটছিলাম। হঠাৎ ডাক শুনে দেখি ও। আমাদের রুটিনে প্রতিদিন ছয়টা ক্লাস ছাড়াও একটা ক্লাস বিরতি থাকত। খুঁটিনাটি সব মনে না থাকলেও এটুকু মনে আছে যে তখন বিজ্ঞান বিভাগে বায়োলজি ক্লাস চলছিল আর আমার ক্লাস না থাকায় আমি বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, হাঁটছিলাম একা একা, করিডোরে।
কাছে আসতেই দেখি ওর হাতে একটা খাতা। কথা বলার ফাঁকেই বুঝতে পারছিলাম কোন একটা কারনে ও বেশ বিচলিত। স্বাভাবিকভাবেই কথা শুরু করলাম। তবে ও খুব একটা মন দিয়ে কিছু শুনছিল বলে মনে হচ্ছিল না। হঠাৎই ও খাতাটা খুলে একটা পৃষ্ঠা বের করে দেখাল আমাকে। দেখলাম তাতে পুরো পৃষ্ঠা জুড়েই বেশ কিছু ছন্দ মেলানো ছড়া ('গাছের পাতা নড়ে চড়ে, তোমার কথা মনে পড়ে' গোছের), কবিতা, হয়তো গানের কিছু লাইনও। তবে পড়েই বোঝা যাচ্ছিল যে সবই ছিল রোমান্টিক ঘরানার। আমি তো কিছুটা অবাক এবং অপ্রস্তুত। বেশি অবাক হওয়ার কারন মূলত ওর অন্যান্য দিনের তুলনায় খানিকটা অস্বাভাবিক আচরণ। কিছুক্ষণ চোখ বুলালাম খাতার পৃষ্ঠাটাতে। ক্ষনিকের নীরবতা ভাঙল ও নিজেই।
- আচ্ছা, কেমন লাগল এগুলো?
- (কিছুটা অস্বস্তিতে ভুগলাম) হ্যাঁ, ভালই তো!
- যদি বলি এগুলো আমি তোমাকে বলছি, তাহলে তুমি কি বলবে?
এবার তো আমার আকাশ থেকে পড়ার পালা। অস্বীকার করব না যে অবচেতন মনে কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারছিলাম যে ও হয়ত কিছু একটা পাগলামি করে বসতে পারে। কিন্তু এমন কিছুর জন্য তো আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না! মাথার ভেতর কেমন এক শূন্যতা অনুভব করছিলাম। জবাব দেবার তাগিদও অনুভব করছিলাম, আবার একই সাথে বলার মত কিছু খুঁজেও পাচ্ছিলাম না। অপার্থিব, ব্যাখ্যাতীত এক অনুভূতি। বলে বোঝানোর মত নয়।
সামান্য কয়েক মূহুর্তকেও মনে হতে লাগল যেন অনেক লম্বা সময়। কালের ঘড়িতে যেন শুধু আমাদের দুজনের অপেক্ষার পালা। একজন একটি শব্দের আশায়, আরেকজন তা খুঁজে পাবার। ওর দুচোখে তখন দেখছিলাম অব্যক্ত এক ব্যাকুলতা যা আমাকে প্রবলভাবে নাড়াচ্ছিল ভেতরে, বারবার। মনে হচ্ছিল আমরা স্থির দাঁড়িয়ে আছি অনন্তকাল, আর বাকি সবকিছু যেন স্বার্থপরভাবে এক অস্তিত্বহীনতায় মেতেছে।
আমাকে ওই অবস্থা থেকে রক্ষা করল ক্লাস শেষের ঘন্টা। পরদিন কথা বলব আর সিদ্ধান্ত জানাব বলে চলে এলাম ক্লাসে। মন বসাতে পারলাম না কিছুতেই। হঠাৎ করেই যেন চেনাজানা জগৎটা অন্যরকম হয়ে গেছে। রঙ্গীন না বিবর্ণ, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ওকে আসলে কখনোই বন্ধু ছাড়া অন্য কোনভাবে চিন্তা করিনি। তাই বন্ধুত্বের সব সারল্য প্রশ্নবিদ্ধ করতে মনটা যেমন সায় দিচ্ছিল না তেমনি আবার সব পেয়েও অবলীলায় হারাতে টান অনুভব করছিলাম না এতটুকুও।
সময় গড়িয়ে বাড়ি ফেরার পালা চলে এল। থাকতাম চাচার বাসায়। দুই বছরের ছোট চাচাত ভাইয়ের সাথে বরাবরই সব বিষয়েই ঘনিষ্ট ছিলাম। বারবার ও জানতে চাইছিল কি হয়েছে আমার। হয়ত চেহারা দেখে কিছুটা বুঝতে পেরেছিল ও, যে কিছু একটা হয়ত হয়েছে আমার। খুলে বললাম ওকে সব। ও তো হেসেই উড়িয়ে দিল। বলে দিল যেন নির্দ্বিধায় সায় জানাই, রাজি হয়ে যাই। কিন্তু তারপরও কোন সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসাটা সহজ হল না আমার জন্য। সাতপাঁচ চিন্তা করতে লাগলাম।
নির্ঘুম কাটল সে রাতটা।
(পরবর্তী পর্বে 'হয়ত' সমাপ্ত)
মন্তব্য
লেখা সম্পর্কে মন্তব্য হলো-Morning shows the day.
চালিয়ে যান.........
ঠিক আছে, চলবে ...
হুমম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অতন্দ্র প্রেমিক
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেবো। কিন্তু কী পাবো তার বদলে?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
মন্দ বলেন নি!
- হায়রে বিডিআর!! ভাই।
অতো ভাবাভাবির কি আছে? আর বন্ধুর চেয়ে বেশি ভাবেন নাই মানে? এইটা এট্টা কথা হইলো? মিয়া এট্টা মেয়ে আলাভিউ কইয়া দিবেন টার লাইগা এতো সমীকরণ মিলাইতে গেলেতো পিরোবলেম। জীবনে কোনোদিন না দেইখাও কোনো মাইয়ারে আলাভিউ কৈয়া দেওন যায়। আর কেউ একজন গাছের সব পাতা নাইড়া ফেললো আপনের কথা মনে কইরা আপনে মিয়া ঐখানে দার্শনিক এরিস্টটল হৈয়া থোম মাইরা রৈলেন? দৌড়ানি যে খান নাই কপাল ভালো আপনের।
যাউকগা, পরদিন সকালে কিন্তু পয়লা কলেজে গিয়াই 'তারে' আলাভিউ কৈয়া দিবেন। হেরপরে বুঝুমনে বাকীটা।
জয় বাবা আলাভোলা নাথ।
___________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
গুরু, আপনের লগে কেন যে আগে পরিচয় হইল না! (
আপনার বলার (লেখার) ধরনটা খুব ভালো লাগল, খুব মনযোগ দিয়ে শুনছি, এরপর কি হল?
----------------------------------------------------
মূর্ছনা কেটে গেছে সুর
জোছনা ছড়ায় বেদনা, হৃদয় আনমনা ... চির চেনা তুমি অচেনা।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
ধন্যবাদ। এরপর? এই তো, দুই একের ভিতরেই জানতে পারবেন আশা করি
তখন যদি ধুসর গোধূলির সাথে আপনার পরিচয় থাকতো, তাহলে সিদ্ধান্ত নিতে কোনো সমস্যাই হতো না।
ঠিক বলছেন!
ওর দুচোখে তখন দেখছিলাম অব্যক্ত এক ব্যাকুলতা যা আমাকে প্রবলভাবে নাড়াচ্ছিল ভেতরে, বারবার। মনে হচ্ছিল আমরা স্থির দাঁড়িয়ে আছি অনন্তকাল, আর বাকি সবকিছু যেন স্বার্থপরভাবে এক অস্তিত্বহীনতায় মেতেছে
পিরিত গুরু! আপনে কি তারপর থেইকাই অতন্দ্র?
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
উমম, আসলেই তো, এমনে তো চিন্তা কইরা দেখিনি আগে! হইতেও পারে!
খালি প্রেম আর প্রে-ম। তাও ব্যর্থ ইতিহাস............
ইশ! নতুন করে যদি ইতিহাস লেখা যেত আবার!
ব্যার্থ প্রেমের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেল!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আগুন কই!
এই কথাটা দুইশ্রেণীর লোক বলে
০১ যারা প্রেম করতে ভয় পায় (হীনমন্যতার কারণে) তারা
০২ যারা পাত্তা পায় না তারা
আপনে মিয়া ওরে ধরে রাখতে পারবে না বলে বন্ধুত্বের নামে একটা সিকিউরিটি সিস্টেম বানিয়েছেন মাত্র
এভাবে তো আসলে চিন্তা করে দেখিনি। তবে দ্বিতীয়টা যে না, তা আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। আসলে আমারই হয়ত ইচ্ছার অভাব ছিল। কেন, সেটা অবশ্য জানি না! যাই হোক, পরের পর্বে লিখতে গেলে হয়ত বুঝতে পারব কিছুটা!
সিরিজের নামটা অসাধারণ। আপনার লেখা পড়তে অনেক আরাম লাগে।
কিন্তু মানুষ ছ্যাঁকা কেম্নে খায়?
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।
ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।
থেংকু!
আমিও জানি না, জানতে চাইও না!
নতুন মন্তব্য করুন