অফিসে ঢুকতেই, অনেকদিন পর, স্কুলজীবনের বন্ধু হাসানের ফোন পেয়ে বেশ অবাকই হলো কবির। অনেক বছর বিরতির পর কথা হয়েছিল একদিন কিছু সময়ের জন্য। সেটাও প্রায় কয়েক মাস আগে। অবাক হলেও কিছুটা ইতস্তত বোধ করে ফোনটা রিসিভ করে কবির। তারচেয়েও ওকে বেশি অবাক করে দিয়ে স্বাভাবিক কিছু কথাবার্তা বলে ফোন রেখে দেয় হাসান।
হাসান যে খুব ভাল বন্ধু ছিল কবিরের, তা না। আবার খুব খারাপও বলা যাবে না। পারিবারিক অবস্থা খুব একটা ভাল না হওয়ার কারণে ভাল জায়গায় পড়াশুনা করার সুযোগটা হাসান পায়নি। তখনই একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেটা ঘোচানোর সুযোগ আর পায়নি দুজনের কেউই। অন্য আরেক বন্ধুর কাছ থেকে ফোন নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করেছিল ও।
কিছু কাজ শেষ করতেই ফ্লোরা এসে হাজির। অফিসের অন্যতম সুন্দরী ও এবং যথারীতি সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান। খুব অল্পদিনেই দুজনের সখ্যতা গড়ে ওঠায় অনেকের চক্ষুশূলে পরিণত হতেও সময় লাগেনি কবিরের। অবশ্য ব্যাপারটাকে বেশ উপভোগই করে ও, বলা চলে।
- কবির ভাই, অনেকদিন খাওয়ান না! চলেন আজ বাইরে খাই। আপনি খাওয়াবেন।
- বাহ, আপনি খেতে চেয়েছেন আর আমি খাওয়াবো না, তাই কি হয়! কোথায় খাবেন বলেন!
- আপনি খাওয়াবেন, আপনিই ঠিক করেন না!
এভাবে কিছুক্ষণ খুনসুটি করার সময় হঠাৎই আবার হাসানের ফোন! উপভোগ্য কথার মধ্যে ফোন আসায় কবির খানিকটা বিরক্ত হয়। শুকনো মুখে 'হ্যালো' বলল। ওপাশ থেকে হাসানের নার্ভাস গলার আওয়াজ পাওয়া যায়। দুএকটা কথার পরই হাজার দুয়েক টাকা ধার চাইল ও। কারণটাও ব্যাখ্যা করা শুরু করল। কিন্তু তাতে খুব একটা কান দিল না কবির। মন তখন যে ওর অন্য জায়গায়!
দ্রুত চিন্তা করে নিল কবির যে, ধার দিলে কবে নাগাদ টাকা ফেরত পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। তাই ওসবে না যাওয়াই ভাল মনে করল ও। নিজের কিছু অসুবিধার কথা বানিয়ে বানিয়ে বলে এড়ানোর চেষ্টা করল। কিন্তু হাসানের কাতর নরম স্বরের বিপরীতে পুরোপুরি না করে দিতে কোথায় যেন বাধল! তাই কয়েক ঘন্টা সময় চেয়ে নিল যে অন্য কোনভাবে ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটা দেখবে ও।
আবার গল্পে মেতে উঠল ও। লাঞ্চ বাইরে করার কথা পাকা করে ফিরে গেল ফ্লোরা। কবিরও মহানন্দে কাজে ডুব দিল।
অফিসের কাছাকাছি নতুন একটা রেস্টুরেন্ট খুলেছে। ওখানেই যাবে বলে ঠিক করল ওরা। রেস্টুরেন্টের সাজ-সজ্জা দেখে যা অনুমান করেছিল মেনু দেখে তা পোক্ত হল! সবকিছুর দামই অত্যধিক চড়া!
খাওয়ার মাঝখানে আবারও হাসানের ফোন এল! প্রথমবার না ধরলেও দ্বিতীয়বার প্রবল অস্বস্তির সাথে ফোন ধরল কবির। তারপর খুব করে দুঃখপ্রকাশ করে জানাল যে টাকার ব্যবস্থা করতে পারেনি! টাকাটা পেলে খুব উপকার হত, এটা বলার সময় চেষ্টা করেও কিছুটা হতাশা গোপন করতে পারল না হাসান। কবিরও বিরক্তি গোপন করে অপারগতা প্রকাশ করল।
খাওয়া শেষে বিল এল প্রায় আড়াই হাজার টাকার মত। বিল মিটিয়ে ফ্লোরাকে নিয়ে বের হল কবির। বিরক্তি কেটে গিয়ে মুখে আবারও তখন ওর আকর্ণ বিস্তৃত হাসি!
মন্তব্য
খাওয়া শেষে বিল এল প্রায় আড়াই হাজার টাকার মত। বিল মিটিয়ে ফ্লোরাকে নিয়ে বের হল কবির। বিরক্তি কেটে গিয়ে মুখে আবারও তখন ওর আকর্ণ বিস্তৃত হাসি!
এরকমই নিয়ম বোধহয়?
ভাল-লাগলো প্রকাশটা ...।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
আসলেই, এমনটাই বোধহয় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে!
ধন্যবাদ
বলা চলে না, নিশ্চিত করে!
সুন্দর গল্প
হাহাহা। ঠিকই বলেছেন। 'নিশ্চিত করে' বলাটাই হয়ত বেশি যুক্তিযুক্ত হতো!
ধন্যবাদ
জীবন থেকে নেয়া সুখপাঠ্য কাহিনী। তবে মেদ ঝরিয়ে অণুগল্পে রূপান্তর করলে পড়তে আরও বেশি ভালো লাগতো বলে আমার ধারণা।
নিজের মতামত জাহিরে আমি অক্লান্ত
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি তুষ্ট আত্মপ্রেমেই। এর সুবিধে হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
হুমম, কারো জীবনের সাথে মিলে যেতেও পারে এই কাহিনী! আপনার ধারণার সাথে আমি পুরোপুরি একমত! লিখতে গেলে অপ্রয়োজনীয় বর্ণনাগুলো কেন যেন বাদই দিতে পারি না! আরো চর্চার দরকার
আপনার কামরাঙা ছড়া বা ছোট্ট গোল রুটি কোথায়!
আটা-ময়দার দাম কি খুব বেড়েছে নাকি!
আমি আপনার সিগনেচার লাইনগুলার (একগামী, নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব, আত্মপ্রেম) বিশাল ফ্যান! এমন দারুন সব কথা কিভাবে লেখেন বলেন তো!
আমার মন্তব্যগুলোকে "উপদেশ" বা "অবশ্য করিতব্য" ধরে না নিয়ে শুধু একজন পাঠকের মতামত হিসেবে গ্রহণ করলে সবচেয়ে খুশি হবো।
বেমক্কা প্রশ্নটি করে দিলেন তো হাটের মধ্যে হাঁড়ি ভেঙে!
টুকলিফাই একটা টার্ম আছে না?
এ যাবত্ যে-চারটি স্বাক্ষর-বাক্য (সিগনেচার লাইন) ব্যবহার করেছি, তার ভেতরে দুটো (একগামী ও নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব) স্বরচিত, দুটো রুশ থেকে অনুবাদ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি তুষ্ট আত্মপ্রেমেই। এর সুবিধে হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সুন্দর জীবনধর্মী গল্প।
খাওয়া-দাওয়া পর্বটা একটু তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল! শেষের দিকে গল্পটা খুব তাড়াহুড়ো করে শেষ হয়ে গেল মনে হল।
ফেরারী ফেরদৌস
হুমম, তা বলতে পারেন। খাওয়া-দাওয়ার পর্বটা তাড়াতাড়িই শেষ হয়েছে কারণ মূল বিষয়টা ছিল ধার না দেওয়ার বিষয়টা। তাছাড়াও লিখেছি সরাসরি সচলায়তনের ব্লগ লেখার জায়গায়। আগে থেকে কোন ড্রাফট করিনি। তাই লেখার সময় কয়েকবার বিরতি, ফোন রিসিভ, আইপিএল, হাবিজাবির জন্য মনোযোগ কিছুটা তো নষ্ট হয়েছেই! তাই হয়ত তাড়াহুড়ার ছাপ দেখা গেছে। যাই হোক, আপনাকে ধন্যবাদ
- ঠিক।
তামাম দুনিয়ার লগে হোমরাচোমরা ভাব দেখালেও ঘরে গিয়ে ঠিকই সম্মানিত কর্পোরেট বউয়ের পেটিকোট ইস্ত্রি করে দেয়!
স্কুলের দোস্ত টাকার জন্য হাউমাউ করলেও টনক নড়েনা কবির মিয়ার অথচ ফ্লোরা নামক লেডি গেস্টের জন্য তার পকেট সবসময় থাকে টগবগে। হালায় ফাউল জানি কোনহানকার।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঠিকি কইছেন গোধূদা, দুনিয়াটা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে! সবাই দিল্লীর লাড্ডু খাওয়ার জন্য কেমন উঠে পড়ে লাগছে!
- দিল্লীকা লাড্ডু? এইডা কাহাছে আইলো?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মজার গল্প।
খুব ভালো কথা!
চক্ষুশূল হতে খরচতো একটু হবেই।
ঠিক কথা!
জীবনধর্মী গল্প। আমরা প্রতিদিন তো এমনটিই করে যাচ্ছি! না হলে কারো অভাব থাকতো কি? ভাল লাগলো!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ঠিক। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তীরুদা
সত্যিই তাই...
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।
ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।
হুমম।
সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হইছে না? এইখানে কেন!
ভেবে দেখলাম, এখানে যতই হাহুতাশ করি "সমাজ রসাতলে গেল" বলি ,,,, কবীরের জায়গায় আমি হলেও তাই করতাম ,,, কোনযুগে স্কুলের সহপাঠী, তাও অত ঘনিষ্ট বন্ধু না ,,, তাকে টাকা ধার দিয়ে হবু প্রেমিকার সাথে লাঞ্চে যাবার সুযোগ হারাবো নাকি?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
এক্কেরে খাঁটি কথা কইছেন বস!
আমিও ভেবে দেখলাম 'জ্বিনের বাদশা' র কথা টা আমারো মনের কথা!! হয়তো কবিরের মতই করতাম।
গল্পটা দারুণ লেগেছে।
---
স্পর্শ
বেজার হইয়েন না। সত্যি কথাই তো বলছেন
অসংখ্য ধন্যবাদ।
ঠিক তাই!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ঠিক!
নতুন মন্তব্য করুন