কারো কারো ক্ষেত্রে মারফি’স ল যে কতটা কার্যকর উদাহরণ হতে পারে, তা আরো একবার প্রমাণিত হলো অক্সফোর্ড রোডের সেলুনগুলো রোববার বন্ধ থাকার মধ্যে দিয়ে। দু’তিন সপ্তাহের গড়িমসি শেষে যখন সময় এবং সম্মতি দুটোই জুটলো ওদের বাবা ছেলের কাকের বাসা, বাজারের ঝাঁপিসম চুলগুলো ভদ্রস্থ সমাজোপযোগী করার, ঠিক সেদিন মাইলকয়েক পথ হেঁটে এসে জানা গেলো গুণেগুণে কেবল সেলুনগুলোই আজ বন্ধ থাকবে, যদিও আশেপাশের অন্য সব দোকান বহাল তবিয়তে খোলা। কি আর করা, এসেই যখন পড়েছি এদিক ওদিক ঢুঁ মেরে যাই ভেবে ঢুকলাম পাশের চাইনিজ দোকানে। এ দোকানগুলোতে সস্তায় কাজের জিনিস পাওয়া যায় শুনি। কথা সত্য পুঁইশাক, কচুর মুখি থেকে শুরু করে ঝাঁটা, বাড়ুন কি নেই?! আমি কি নেব অথবা কোনটা টেনে বাসা পর্যন্ত নিতে পারব ভাবতে ভাবতেই আমাদের একমাত্র বাহক মেয়ের প্রামের ধারণক্ষমতার বেশী জিনিস ভরে গেলো বাপ-বেটার ঝুড়িতে। চুল কাটার বদলে শপিং সই। গাদাখানেক কাজের অকাজের সদাই নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। যার মধ্যে উল্ল্যখযোগ্য হলো - মুখে বাতাস খাওয়ার দুই ব্যাটারির মিনি ফ্যান, ডলার পাউন্ডের ছবি আঁকা সাইজে লম্বা পিগি ব্যাংক, স্টিকি প্যাড, কালারফুল ক্রেয়ন আর একটা রুবিক’স কিউব।
রুবিক’স কিউবটা দেখামাত্র আমার গলা দিয়ে চিৎকার মতো বেরিয়ে আসে, আরে এটা কই ছিল, কে নিলো?
জামাই তার চিরাচরিত মিসকে হাসি দিয়ে বলে, নিলাম আরকি। তবে চাইনিজ জিনিস, ভরসা নাই।
আমি কথা না বাড়িয়ে নিজের মনে পাইলাম ইহা পাইলাম বলে তা হাতে তুলে নিই। ডানে-বাঁয়ে, উপরনিচ ঘুরিয়ে দেখি। অতো স্মুথ না। কায়দামতো না ঘুরালে বাঁধছে। তবে খারাপ না, চলবে।
রুবিক’স কিউবের সাথে আমার সম্পর্ক পুরোনো। ২০০৫ এ বিলাত পাড়ি জমানো ননাসের সংসারের ফেলে যাওয়া ছোট-বড় নানা স্মৃতি সংকলনের একটা অংশ ছিলো রুবিক’স কিউব। বহুদিন সেটা বাসায় এমনিই পড়ে ছিলো। এক ননাসপুত্র ছাড়া এই বস্তুর প্রতি বাড়ির অন্য সদস্যদের আগ্রহ শূন্য। বিষণ্ণতার সাথে নারীসম্পর্কও পুরোনো। ছেলে পেটে আসার প্রথম দিকটায় যখন শরীরময় হরমোন হুটোহুটি বাঁধিয়ে হুলস্থুল কর্মযজ্ঞ শুরু করে ফেলছে, এবং শরীরের আকস্মিক সে পরিবর্তন আমার মনকে বড় খানাখন্দ ভরা কোন রাস্তার লক্করঝক্কর এক ট্রাকে ঝুলন্ত বাক্স-পেটরার সাথে বেঁধে ফেলছে, তখন কোন এক বিষণ্ণ সময়ই হবে সে রুবিক’স কিউবটা হাতে তুলে নিয়েছিলাম।
আমি ছিলাম ওয়ান সাইড সলভার। তিন স্তর (৩x৩x৩) কিউবের ছ’রঙা (লাল-কমলা, নীল-সবুজ, হলুদ-সাদা) পিঠের যেকোন এক পিঠ বেশ ভালই মিলাতে পারতাম, এরপর বহু কাঠখড় পুড়িয়ে কিউবের মাঝের স্তরটা পর্যন্ত মিলিয়েছি, কিন্তু বরাবর উপরটায় এসে ভয়ানক ভজঘট পাকিয়ে মিলানো পিঠটাই আবার বেড়াছেড়া করে ফেলতাম, তারপর আবার যে কে সেই, শুরু থেকে শুরু, বিন্দু দিয়ে সিন্ধু... যা চলতেই থাকত রাতদিন বিরামহীন। একে প্রথম প্রেগন্যান্সি তার উপর তুচ্ছ রুবিক’স কিউবের কারণে পেটের গুটলা’র প্রতি মাত্রাতিরিক্ত অনিয়মে নিজের উপর বোধহয় নিজেই বিরক্ত হচ্ছিলাম, যেকারণেই হোক তখন কিউবটা চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলেছিলাম। এরপর মায়ের বাসা, পড়াশুনা, ছেলে হওয়া। ছেলে আসার পর বাড়ি বদল, সবশেষে দেশ ছাড়া। তবে নিশ্চিত খুলনার আদি বসতবাড়ির উপরের ঘরগুলোর অসংখ্য পোঁটলাবন্দি স্মৃতি সংকলনের কোন একটাতে এখনো সে রুবিক’স কিউবটা রয়েছে।
নতুন রুবিক’স কিউব হাতে পেয়ে পুরোনো দক্ষতায় আবার এর এক পিঠ মিলিয়ে ফেলি। তা দেখে আমার জুনে দশ বছরে পা রাখা ছেলে এতোটাই অবাক হয় যেন আমি হিমালয় না হলেও মৈনাক পর্বত জয় করে ফেলেছি। এবার শুরু হয় মাঝের স্তর মিলানোর যুদ্ধ। যার এককোণ মিলে তো আরেক কোণ ছুটে যায়, প্রতিটা কোণ জায়গামতো আনা গেলেও মেলানো পিঠটাই এলোমেলো হয়ে যায়। অসাধ্য সাধন করে এক সময় মাঝের স্তরও মিলিয়ে ফেলি। এবং সে পর্যন্ত ঠিক আছে, এরপর যখন উপর পিঠ মেলানোর পালা আসে তখন আমার মতো মস্তিস্কবিহীন উন্মাদের আক্ষরিক অর্থে মাথার চুল টেনে ছিঁড়া ছাড়া উপায় থাকে না। সকালে উঠতে হবে জেনেও শেষরাত অব্দি এই বস্তুর পিছনে লেগে থেকে একূল ওকূল সব কূল হারিয়ে জীবনেও আর হাতে নিব না – এ অখণ্ড ব্রত নিয়ে ছুঁড়ে ফেলি। আবার সকালে উঠে পায়ের কাছে ছোট বাবুর মতো গড়াতে দেখে, সব ভুলে আদরের হাত বাড়িয়ে দেই। ফের আদাজল খেয়ে উঠে পড়ে লাগি। চুলোয় রান্না, লণ্ড্রী’র কাপড়, ছেলে-মেয়ে দু’টোর দ্বারা ঘরময় অবিরাম ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প, ঘুর্ণিঝড়, সাইক্লোন কোনো কিছুই আমার মনোযোগ ফেরাতে পারে না। এবং দিনশেষে অর্জন বিশাল এক শূন্য, তা থেকে অন্তহীন ব্লাকহোল।
শীঘ্র রুবিক’স কিউব আমার ব্যাগে মেয়ের ডায়াপারের মতো পাকাপোক্ত জায়গা করে নেয়, ছেলেকে স্কুল থেকে নিতে গিয়ে বেল দেয়ার দু’মিনিটের মাঝেও এটা ব্যাগ থেকে বেরিয়ে পড়ে। ছেলে বলে, ‘লুক্স লাইক মা গট আ টয়।‘
আমি বলি, ‘হ্যাঁ পণ্ডিত, মা’রও টয় লাগে।‘
কোথাও বেড়াতে গেলেও সুযোগ বুঝে ঠিক এটা ব্যাগ থেকে বেরিয়ে হাতে চলে আসে। জনৈকা সুন্দরী সাইকোলোজিস্টের সাথে কথা বলার সময়ও এটা আমার হাতে থাকে। যদিও এটা দেখে সে (সেন্সর) বাগড়া দিয়ে বলেছিলো, ‘মেক শিওর, এটা তোমাকে বেশী স্ট্রেস না দেয়। আমি একবার এটা সল্ভ করার চেষ্টা করেছিলাম, আর আমার মেজাজ ভায়ানক বিগড়ে গিয়েছিলো।‘
আমি বলি, ‘আরে না, আমি এটা শুধুই ফান হিসেবে নিচ্ছি। অন্তত কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকা, অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় থেকে মন সরাতে।‘
পরের শনিবার ছেলে’র চুল কাটার সময়টা সেলুনে বসে রুবিক’স কিউবের তিন স্তর ছ’পিঠ প্রায়ই মিলিয়ে ফেলেছিলাম। পাশে বসা আমার ছেলের বয়সী দু’টো ছেলে খুব আগ্রহ নিয়ে তা দেখছিলো। মাঝে মাঝে ‘ইয়েস, গো অন’ এরকম টুকরো শব্দ দিয়ে আমাকে চিয়ার করে যাচ্ছিল। ভেতরে ভতরে আমি চেনা এক ভয় টের পাই, প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার ভয়, শেষমেশ ছেলে দু’টোকে হতাশ হতে হবে এই ভয়। Anxiety disorder, panic attack শব্দগুলোর সাথে আমার পরিচয় খুব বেশী দিনের না। কষ্টের চেনা প্যাটার্নে নতুন শব্দের সংযোজন এর মাত্রার খুব বেশী হেরফের ঘটায় না যদিও। বড়জোর কষ্টগুলোকে সমস্যা হিসেবে দেখে সমাধানে কষা লাগে অঙ্ক, জানা লাগে সূত্র, মেলানো লাগে কোনো রুবিক’স কিউব। অথচ দূর্বল মাথায় অতশত আঁটে না বলেই না যত গরমিল! আমি প্রায়ই গুছিয়ে আনা সমীকরণ আবার ভুল করি। এক পর্যায়ে খেলা বন্ধ করে কিউবটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলি। সেলুনের বড় আয়নায় নির্বিকার নিজেকে দেখতে থাকি।
সাইকোলোজিস্ট বেটিকে ধুনফুন যাই বোঝাই না কেন, এ পর্যায়ে এসে রুবিক’স কিউবকে আমি মোটামুটি জীবনদর্শন হিসেবে দাঁড় করে ফেলেছি - রুবিক’স কিউব হলো জীবনের মতো। ধরা যাক, এর ছ’দিকে আছে জীবনের ছ’রং। জীবনের রঙগুলোও তো কখনো নিয়মতান্ত্রিক ছকে মিলে আসে না, আসে খাপছাড়া ভাবে। সামান্য কিছু জন্মলব্ধ প্রতিভাধর অথবা সৌভাগ্যবান মানুষই হয়তো হাতের মুঠোয় জীবনের সব রং নিয়ে খেলতে পারে, সহজে ছকে সাজাতে পারে, ছ’পিঠের উপর সমান দখল বজায় রাখতে পারে। আর বাকিরা যারা আমার মতো জীবনের এক পিঠ মিলিয়ে বাকীগুলোর জন্য কষ্ট করে যায়, তাদের হাতে বারবার তুচ্ছ সমীকরণ ভুলে একরঙা মিলানো পিঠটাও ছুটে যায়।
মন্তব্য
কিউব মেলানো সহজ হয়ে যাবে যদি সূত্রটা ধরতে পারেন। এই লিঙ্ক দেখে একবার মিলিয়ে নিলেই পরবর্তিতে আর সমস্যা হবেনা।
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই। সূত্র বোধহয় ধরে ফেলেছি, এখন অন্তত খেই হারালেও শুরু থেকে শুরু করা লাগছে না, কিউব মিলে যাচ্ছে শেষমেশ। সূত্র জানা থাকলে কষ্ট একটু কম হতো আরকি। মা-ছেলে মিলে সারাদিন নতুন এক খেলা খেলছি, মেস আপ অ্যান্ড সল্ভ গেম। সে মেস করে আমি সল্ভ করি। এখন সময় বেশী লাগছে, আরেকটু প্রাকটিস করে নেই তারপর আগাগোড়া মেলানো ভিডিও করে তা পোস্টের সাথে জুড়ে দিব।
অনেক দিন আগের কথা ঢাকায় তখন মাত্র এর দেখা মেলেছে, সে সময় শিখেছিলাম, দ্রুততম সময় ছিলো সাড়ে তিন মিনিটের একটু কম, অনেকের জন্য এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং সময় যদিও ইন্টারন্যাশনাল রেকর্ড আরো কম সময়ের। সেসময় বিটিভির সেরা এক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে দেখানোর জন্য মেলানোটা রেকর্ড করা হয়েছিলো, পরে অজানা কারণে দেখায়নি।
...........................
Every Picture Tells a Story
আমাকে দিয়ে হবে না।
দ্রুততম বিশ্ব রেকর্ডটা আগেই দেখে নিয়েছিলাম, সেই ভাবনা মাথায়ও আনি নাই। কিউব মেলানো নিজের কাছে মজার একটা খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকা ছাড়া আর কিছু না।
দুঃখজনক!
'যদি কিছু মনে না করেন'-এ একজনেরটা দেখিয়েছিল। সেটা কি আপনি ছিলেন? ঐ অনুষ্ঠানে আমি প্রথম বিটিভিতে একটা চলমান দৃশ্যের সাথে (মঞ্চে ফজলে লোহানী ও রুবি'স কিউব মাস্টার) ইনসেটে আরেকটা চলমান দৃশ্য (মাস্টার দুহাতে পাজল মেলাচ্ছেন) দেখেছিলাম।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অথবা ফাঁকিবাজি পদ্ধতিতে চাইনিজ কিউব মেলাতে চাইলে সবগুলো টুকরো খুলে রঙ মিলিয়ে ফেরতা জোড়া দিন।
আপনার ধৈর্য্য আর বুদ্ধি আছে, জীবনের সব রঙ পিঠগুলি নানভাবে ঘুরিয়ে পেচিয়ে ছকে ফেলবার চেষ্টা করছেন। আমার বোধ হয় সেই ধৈর্য্য বা বুদ্ধি নেই তাই সব ভেঙ্গেচুরে একাকার করে সমাধান করতে চাই।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
সমস্যার মূল যে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে সমাধান করতে চাইনি, তা নয়। জিনিসটা চায়নিজ হলেও, বেশ কয়েকটা আছাড় সহ্য করে ফেলল। অবস্থা এমন যে, হাত দিলেই এটা অটো পার্ট বাই পার্ট খুলে আসতে চাচ্ছে। তবে এখন কিউবটার প্রতি সত্যি সত্যি মায়া পড়ে গেছে।
রুবিক'স কিউব জীবনেও মেলানোর চেষ্টা করিনি। আমি জানি আমার ধৈর্য কম। কোন সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তাই সমস্যারা যার যার মতো থেকে যায়। কোনটা সময়ের সাথে সাথে আপনা আপনি সমাধান হয়ে যায়, বাকিগুলো যেমনটা ছিল তেমনই থেকে যায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বাচ্চাগুলোর সাথে সাথে যেই জিনিসটা ফ্রি পেয়েছি, সেটা বোধয় ধৈর্য। আমি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করছিলাম, কখনো সন্তানের উপর জোর খাটাবো না। সে প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গিনি, তবে এতে প্রতিনিয়ত ধর্যের সেই মাত্রায় অনুশীলন হয়ে যায় আরকি।
আর সমস্যার সমধান, এ কি চাইলেই নিজের হাতে থাকে নাকি।
আমার অনেক বিষয়ে অসীম ধৈর্য আছে। আবার কিছু বিষয়ে একেবারেই ধৈর্য নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
রুবিক'স কিউব কিনেছিলাম সমাধান সূত্র সমেত। লাইনের পর লাইন মুখস্ত রাখতে হত। হয়ে গিয়েছিল। সেই বয়সে হয়ে যেত। এতে আমার তিনটে উপকার ঘটেছিল।
উপকার-১ঃ বারে বারে মিলিয়ে ফেলে অপার আনন্দ লাভ - নিজের, দর্শকের।
উপকার-২ঃ জীবনে একবারই প্রেমিকাকে নিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে গিয়েছি। বসেছি, কাঁধের ঝোলা ব্যাগ নামিয়েছি। এক ভিখিরি এসে দাঁড়িয়ে গেল। কিছু না নিয়ে যাবে না। দিলে বিপদ, বাকিরা আসবে। ভিখিরিকে বললাম, একটু সময় দিতে হবে হবে। ব্যাগ থেকে রুবিক'স কিউব-টা বার করে ঘোরাতে শুরু করলাম, আর তার সাথে সাথে ওকে সূত্রগুলো বোঝাতে থাকলাম। সে লোক মিনিট কয়েক মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে আস্তে আস্তে উঠে চলে গেল। সেদিন আর কেউ আমাদের ধারে কাছে আসে নি।
উপকার-৩ঃ চাকরীতে যোগ দিয়ে ঘণ্টা খানেকের মাথায় কিউবটা বার করে ঘোরাতে থাকলাম। দাদারা কেউ কেউ উঠে এসে পাশে দাঁড়িয়ে গেল। কেউ টেবিলের উল্টো দিক থেকে নজর করতে রইল। ধীরে ধীরে পুরোটা মিলে যেতেই সমবেত খুশীর উল্লাস শোনা গেল। এর পর যে আহ্লাদ ঐ প্রিয় মানুষদের থেকে বরাদ্দ হয়ে গেল, যতদিন সেখানে কাজ করেছি, তার আর কোন কমতি হয়নি।
এই লিঙ্কটা কেমন? আমি এইরকম কোন একটা কাগজ পেয়েছিলাম।
http://www.wikihow.com/Solve-a-Rubik's-Cube-(Easy-Move-Notation)
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বাহ! রুবিক’স কিউবের বহুমুখী উপকারীতার কথা জানতে পেরে বেশ লাগলো। নিজের, দর্শকের, প্রেম, চাকরী জীবনের সব মোক্ষম পয়েন্টেই তো দেখি আপনি রুবিক’স কিউব দিয়ে বাজী মাত করেছেন, আপনি নমস্য!
সদয় মন্তব্য ও লিঙ্কের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, কিউব মিলিয়েছি। তারপরেও আক্ষেপ থেকে গেল, যদি ঐ বাচ্চা ছেলেদুটোকে একবার মিলিয়ে দেখাতে পারতাম!
একসময় বহুত মিলাইছি
লাইন গুলি খুব সুন্দর।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ তাহসিন রেজা
এই রুবিক'স কিউব জিনিসটা সবার কাছে এত জটিল লাগছে কেন বুঝতে পারলাম না! আমি তো পিচ্চিকালে (ইশ্কুলে থাকতে) এটার সবগুলি পিঠই হরহামেশাই মিলাতাম - কোনরকম সূত্র-ফুত্র ছাড়াই। স্রেফ আন্দাজের ওপর। অথচ আমার মতো ভোদাই তো দুনিয়াতে কমই আছে! ঘটমাটা কি!
****************************************
আন্দাজের উপর আমিও মিলাইলাম। পিচ্চিকালে (ইশকুল বেলায়) মগজ তরতাজা থাকে, আর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এতে ভোদাইনেসে’র কয়েক আস্তর বেশী পড়ে। ঘটমা এই।
ধৈর্য্য কম ৷ আন্দাজে মাঝে মাঝে মিলবারও পারে কিন্তু ৷ এই ফাঁকে কয়খান ট্রিক্স শিখলাম ৷
---ঝিঁ ঝিঁ পোকা
হু, ট্রিক্স জানা হইলো, তবে আন্দাজের মজা ভিন্ন।
হে হে, আমার এত ধৈর্য নাই। মেজাজ খারাপ হলে টুকরা করে সুন্দর মত মিলায় দেই, ব্যাস- কেস ডিসমিস! (আহা, জীবনকেও খুলে জায়গামত জোড়া দিতে পারতাম খালি)
শেষ অনুচ্ছেদটা চমৎকার লিখেছেন, ছুঁয়ে গেল
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
জীবনকে খুলে জায়গামত জোড়া দেয়ার তাগিত থেকেই তো সব নচ্ছার খেয়ালীপনার জন্ম।
অনেক ধন্যবাদ।
আজও মিলাইতে পারি নাই। নিজে নিজে চেষ্টা করে অল্পের জন্য টার্গেট মিস হতো। সমাধান সূত্র হাতে আসার পর আর মেলাতে ইচ্ছা করে নাই। তবে আমার এক বন্ধু সর্বশেষ ৬/৬ নিয়ে পড়ে আছে। সল্ভ করেছে কিনা জানি না। আগেরগুলো সময় বেঁধে নিয়ে মেলায়।
লেখার শেষটা ভালো লাগলো বেশ।
স্বয়ম
'অল্পের জন্য টার্গেট মিস' এই করেই না রুবিক'স কিউবের ভুত ঘাড় থেকে মাথায় চাপলো। তা আরেকবার চেষ্টা করে দেখলে কেমন হয়?! সূত্র ফুত্র ছাড়াও তো মিলতে পারে, কিউব আগে না সূত্র তা কে জানে!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
রুবিক'স কিউব জিনিসটা নিয়ে আমার ছেলেবেলার একটা গুপ্ত আক্ষেপ জমা ছিল। স্কুলে পড়ার সময় ভাগ্যবান কোন বাচ্চার কাছে দেখে বাবার কাছে বায়না ধরেছিলাম কিনে দিতে। কিন্তু তখন এতটা সহজলভ্য ছিল না বলেই বোধহয় বাবা কিনে দিতে পারেনি। পরে বাবাও ভুলে গেছে, আমিও ভুলে গেছি। আরো বহুবছর পর বুড়ো হবার পর একদিন আমার কন্যার খেলনা কিনতে গিয়ে জিনিসটা চোখে পড়লো দোকানে। ওর তখনো রুবিকস নিয়ে খেলার বয়স হয়নি, তিন চার বছর বয়স মাত্র। তবু কিনে ফেললাম দেখে বউ বড় বড় চোখে তাকালো। লজ্জিত হেসে বললাম, ছোটবেলার একটা অপূর্ণ শখ এই সময়ে এসে পুরণ করলাম। তারপর বাসায় এসে সারাদিন ধরে রং মেলানোর চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু দুই দিনেও মেলাতে পারিনি ছয়টা দিক। পরে হাল ছেড়ে দিলাম। সেদিন ভিনদেশী টিভির এক অনুষ্ঠানে দেখলাম বাচ্চারা মাত্র এক মিনিট দেড় মিনিটে কিভাবে যেন মিলিয়ে ফেলছে সবগুলো রং। ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। আর এখন উপরের মন্তব্য পড়ে বুঝলাম এটা মেলানোর কায়দা কানুন আছে, সেই কায়দা জানতাম না বলে ফায়দা হয়নি এতদিন
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
জীবনটা বোধহয় এরকম গুপ্ত আক্ষেপ আর না মিলানো ধাঁধার সংমিশ্রণ। সুযোগ পেলে সে লুকানো ছাইয়ে একটু হাওয়া দিতে ক্ষতি কি। বড় না হয়েও তো জীবন চলে যায় দিব্যি, শুধু শুধু ঐ চক্রে পা দেয়া কেন! আর হালের বাচ্চাগুলা! এদের কথা আর কি বলব, এরা ভিনগ্রহ থেকে আসা আজিব চিজ একেকটা, ঐযে কথায় আছে না - বারো হাত বাকড়ের তের হাত বিচি, ঠিক তাই! এদের সাথে পারা যাবে না।
কায়দা-কানুন সমেত ও কায়দা-কানুনের বাইরে জীবনের সব অপূর্ণ শখ মিটিয়ে ফেলুন। শুভ কামনা!
লেখাটা ছুঁয়ে গেল। রুবিকস কিউব খানা বের করে বসতে ইচ্ছে হচ্ছে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
অনেক ধন্যবাদ। বসে পড়ুন, কি আছে জীবনে!
রুবিক'স কিউবের মাঝে যেভাবে জীবনের সূত্রটাকেই টেনে এনে মিলিয়ে দিলেন; অসাধারন। আসলেই তো, সব রঙ মিলে না। কেউ যদি কিউবের ওই টিউটোরিয়ালগুলোর মত কোন সূক্ষ্ম কারচূপি বের করতো জীবনের রংগুলো মেলানোর জন্য। তা হয় না বোধ করি।
নিশাচর রোদ্দুর
বড় বড় ঋষি-মহাঋষি ঘর ছেড়ে হিমালয়ে গিয়েও বোধকরি সে রঙ মেলাতে পারেনি। আমরা সাধারণ মানুষ মনকে প্রবোধ দিয়ে ভুলিয়ে রাখার সূক্ষ্ম কারচুপি খুঁজে ফিরি।
হা হা হা। দারুণ মজা পাইলাম। এটা আমার উনার অসংখ্য নিক-এর একটা। এই নিক দিয়ে অধুনা বিলুপ্ত শব্দনীড় ব্লগে লিখতেন তিনি। তারে বইলা দেখতে হবে, এই তিনি সেই তিনি কিনা।
আর আমার মন্তব্যটাও দিয়ে যাই, আপনার লেখনীশক্তি শুধু তাকিয়ে দেখার মতই না; হাতে তালি দিতে দিতে তালু লাল করে ফেলার মতন। অ সা ধা র ন।
অন্তরা রহমান
সচলের বাইরে আমি কিছু চিনি না। একে তো কূপমন্ডুক, তারুপর আবার চরম অলস। আপনার তিনিটা বুঝি নিশাচর রোদ্দুর? সচলে লিখতেন কি? উনার মন্তব্যে লিখার পর খেয়াল করলাম প্রায় তিন বছর আগে তিনি মন্তব্যটি করেছিলেন।
লিখাটা যে সময়ের তখন একটা তীব্র ট্রানজেকশন পিরিয়ডের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। নিতান্তই সাধারণ একটা লিখা। হাততালি পাওয়ার মতো তেমন কিছু না। তখনকার ভেতরের অগোছালো অবস্থা/অস্থিরতা হয়ত ফুটে উঠেছে কিছুটা।
অনেকেই আছেন নির্দিষ্ট ব্লগের বাইরে আর ঘোরাফেরা করেন না, আমার কাছে সেটাই বরং আদর্শ মনে হয়। কারণটাও সহজ, একই লেখা দশ ব্লগে দিয়ে লাভ কি? সচলে লেখার চেষ্টা করতেন, কিন্তু তখন তো সচলে আর যাই হোক "কবিতা" প্রকাশ পাওয়া দস্তুরমতন কঠিন ছিল। আশা করি এখন সব গুছিয়ে এসেছে আপনার জীবনে, সেদিকে আমার এখন তীব্র ঘূর্ণায়মান জীবনযাপন। ভালো থাকবেন আপু।
নতুন মন্তব্য করুন