বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৪ : আকন্দ

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল গাফফার রনি [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০১/০৪/২০১৩ - ১১:০১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আকন্দের ফুলকুড়ি আমাকে খুব টানত। ফুলকুড়িগুলো যেন ফুল নয়, প্লাস্টিকের তৈরি কোনো বড় বড় পুঁতি। তাই আকন্দ গাছ দেখলেই ছুটে যেতাম। ছিঁড়ে আনতাম অফোটা কুড়ি। ফোটা ফুলে তেমন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু এই আকন্দফুলেই একদিন এমন এলার্জি হয়ে গেল, বহুদিন পর্যন্ত আকন্দ গাছের ছায়টিও মাড়ায়নি। এলার্জি শুরু হয়েছিল আকন্দে অসম্ভব সুন্দর ফল তুলতে গিয়ে। দেখি একধরনের শুয়োপোকা আরামে শুয়ে আছে আকন্দের ফুলে-ফলে। আসলে পোকাটা দেখতে বিশ্রি। তার ওপর ওর গায়ে চটচটে এক ধরনের তরল মাখানো যেন। দেখলেই গা ঘিন ঘিন করে। সেই থেকে আমি আর আকন্দগাছের আশপাশে হাঁটিনি বহুদিন। পরে অবশ্য এলার্জি কেটে যায়।

আকন্দ গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এরা ভাঁটফুল বা কালকসুন্দার মতো জমাট ঝোপ কম পছন্দ করে। গাঁয়ের পথের দুপাশে এদের দেখা মেলে সবচেয়ে বেশি। আবার খুব বেশি ছায়াও এরা পছন্দ করে না। তাই বড় বড় গাছের নিচে, কিবা বাঁশবনে, বাগানে এদের কম দেখা যায়। তবে ছোট-ছোট গুল্মের ওপর নিজের বাহাদুরিটা ফলাতে পারে বলেই বাঁছড়া জাতীয় জমিতে এদের দেখা মেলে। আরেক জায়গাও এদের দেখা যায়। উঁই ঢিবি। আসলে উঁই ঢিবিটা মনে হয় সব গুল্মদের একটু বেশি পছন্দ। উঁই ঢিবির মাটি একটু বেশি উর্বর কিনা!


আকন্দ বাসকলতা ঘেরা এক নীল মঠ-- আপনার মনে
ভাঙিতেছে ধীরে ধীর; -- চারদিকে এইসব আশ্চর্য উচ্ছ্বাস—
জীবনান্দ দাশ

আকন্দ গাছ ৬-৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কিন্ত এদে কাণ্ড নরম হওয়ায় ফুল আর ফলের ভারে হেলে পড়াভাব দেখা যায়। তাই পূর্ণ বয়স্ক আকন্দের উচ্চতাটা চোখে দেখে ঠিক অনুমান করা মুশকিল। আকন্দের কাণ্ডের রং সাদাটে সবুজ। কাণ্ড বেশ নরম। ফল ধরতে শরু করলে কিছুটা শক্ত হয়ে যায়। ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদ হলেও এর কাণ্ড থেকে কোনো ডালপালা বের হয় না। মূল থেকে একাধিক কাণ্ড বেরিয়ে ঝোপ তৈরি করে। কাণ্ডের বেড় ১-৩ ইঞ্চি হতে পারে।

আকন্দের পাতা দেখতে অনেকটা বটের পাতার মতো। বটের পাতার মতোই পুরু। বটের পাতা ভাঙলে যেমন সাদা আঠা বের হয়, আকন্দের পাতা ভাঙলেও সাদা আঠা পাওয়া যায়। তবে বটের পাতার সাথে এর বড় পার্থক্য হলো, এর পাতা খুবই নরম। পাতা মসৃণ। সরল। উপবৃত্তাকার। আকন্দের পাতা লম্বায় ৬-৮ ইঞ্চি হতে পারে। ঠিক মাঝ বরাবর পতার প্রস্থ ৩-৪ ইঞ্চি। আকন্দের পাতা হালকা বা সাদটে সবুজ।


আকন্দ ফুলরে কালো ভীমরুল এইখানে করে গুঞ্জরণজীবনান্দ দাশ
(ছবি: উইকিপিডিয়া)

আকন্দ দুই রকমের। একটার ফুল সাদা রঙের, অন্যটার ফুলের রং সাদাটে বেগুনি। সাদাটে বেগুনি আকন্দগাছই বেশি দেখা যায়। আকন্দ ফুলে চারটি পাঁড়ড়ি থাকে। এর পাতার মতো ফুলের পাঁড়ড়িও বেশ পুরু। ফুলের ব্যাস ১-১.৫ ইঞ্চি। ফুলে হালকা গন্ধ আছে। চৈত্র মাসে আকন্দগাছে ফুল আসে।


সাদা আকন্দ


আকন্দের ফল সবুজ রঙের। লম্বাটে। ফল চার ইঞ্চি লম্বা হয়। ফলের ভেতর তুলোর মতো আশ থাকে। তবে এই আশ স্তরে স্তরে সাজানো থাকে থাকে। প্রতিটা স্তরে মাঝে একটা করে পাতলা বিঁচির স্তর থাকে।


মূলত ফলের গায়ে পাখনার মতো লেগে থাকে আঁশগুলো। ফল পাকার পর বিঁচি সহ বাতাসে উড়ে দূরে চলে যায় আকন্দের আশ।


অর্থাৎ আকন্দের বংশবিস্তারে আশ এবং বাতাসের ভূমিকা বিরাট।


আকন্দের ফল পাকে জৈষ্ঠ্য মাসে ফল পাকার পর আকন্দ গাছ মারা যায়। আকন্দ গাছ এক বর্ষজীবি।

ছবি : রাজামশায়
আকন্দের বৈজ্ঞানিক নাম Calotropis gigantea

--------------------------------
এই সিরিজের অন্য লেখাগুলো
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-১ : শিয়ালকাঁটা

বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-২ : ভাঁটফুল
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৩ : কালকসুন্দা / কালকসিন্দা


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক চেনা একটি গাছ আকন্দ। ফুলগুলি আমার কাছে কেমন যেন স্বর্গীয় স্বর্গীয় মনে হতো।
আপনার সিরিজটি ভাল লাগছে। চালিয়ে যান।

-সিরাজুল লিটন।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আকন্দের মায়াবী হাতছানি উপেক্ষা করা সম্ভব!

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

রংতুলি এর ছবি

এই গাছটা দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়, মনে পড়ে কোলে তিন-চারটা বালিশ নিয়ে তারউপর ভর দিয়ে উপুর হয়ে বসে আছে নানা, আর আম্মা, নানী বা খালারা কেউ আগুনে আকন্দপাতা গরম করে পিঠে সেঁক দিচ্ছে। নানা মারা যায় ৯০ এ, লাঙ্গস ক্যানসার হয়েছিলো, ডায়াগনজ হওয়ার পর খুব অল্প ক'দিন বেঁচে ছিল। কি-জানি এতে তার আরাম লাগত কিনা, আমি অনেক ছোট ছিলাম এখান-সেখান থেকে এই পাতা যোগাড় করে এনে দিতাম...

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

তারেক অণু এর ছবি

সিরিজটা খুবই প্রয়োজনীয়, কিন্তু ভাই ছবির দিকে আরেকটু নজর দিয়েন, বিশেষ করে ফুলের রঙ ভাল আসছে না মাঝে মাঝে।

চলুক

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

আকন্দ গাছের একটা উপকারিতার কথা বলে যাই । গ্রামে লোকেরা এর পাতা গরম করে সেঁক দেন বাতের ব্যথায় । আমাদের অঞ্চলের কথা বলছি । পাতার বিশেষত্ব কিছু আছে কি না জানি না । তবে, পুরোত্বের কারণে পাতা তাপমাত্রা ধরে রাখে বলে আমার বিশ্বাস ।

লেখা চলুক । তবে ছবির ব্যপারে অণুর কথাটা খেয়াল করুন । ছবিগুলো আকর্ষনীয় করাটা জরুরী । সচলায়তনে এক এক জন এমন গুনী ফটোগ্রাফার, যে ভয়ে আমি কখনোই ছবির ধারে কাছে নেই হাসি

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপু, এ বিষয়ে গত পোস্টেই আমার দুর্বলতার কথা বলেছি। আজ আরও ভেঙে বলছি। প্রথমেই জানিয়ে রাখি আমি ফুটোগ্রাফার হিসাবে আনাড়ীর চেয়েও কম বলা যায়। দ্বিতীয়ত, আমার কমদামি মোবাইর ফোনের ক্যামেরায় খুব বেশি পরিষ্কার ছবি তোলা সম্ভব নয়। তাছাড়া ছবি গুলো তুলেছিলাম একেবারে খেলাচ্ছলে। তখন এমন কোনো সিরিজ করব--ব্যাপারটা মাথায়ই ছিল না। একন যদি আমাকে কুব ভালো ছবি পোষ্ট করতে হবে তাহলে আমাকে অন্তত দুটো কাজ করতে হবে যা দৈনতার কাছে পরজিত। এক, একটা ভালো মানের ক্যামেরা কিনতে হবে। দুই-আবারো আমাকে গ্রামে যেতে হবে। এখানে রাখঢাক না করে একটা কথা জানিয়ে রাখি--আমি ক্ষু্দ্র একটা কোম্পানির ছা-পোষা কর্মচারী। এই দুটি কাজের কোনোটা করার সাধ্য আমার নেই। এখন যেটা করতে পারি, সেটা হলো ভালো ছবির অভাবে সিরিজটা বণ্ধ করে দেয়া।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

রণি, ভালো ছবির জন্য সিরিজ বন্ধ হবে না । সিরিজ চলবে । ঠিক আছে, ভাই ?

আর হ্যা, কেউ “ছাপোষা” না । সবাই “রাজা” আমাদের এই রাজার রাজত্বে ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

গানটা শুনে মনটাই ভালো হয়ে গেল। অজস্রবার শোনা। তবু মনে প্রথম শুনছি। ধন্যবাদ আপু.......গরুজিকে গুরু গুরু

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

হাসি

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার যা হাতিয়ার আছে তাই দিয়েই চালিয়ে যান। চলুক

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
ভরসা পাইলাম

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

কুমার এর ছবি

রনি ভাই, সিরিজ দৌড়াক। বন্ধ করার কথা স্বপ্নেও ভাইবেন না। কখনও ভাল ছবি পেলে তখন না হয় সংযুক্তি দিয়ে দিলেন এখানে।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

সেটাই ভাবছি।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

রু  এর ছবি

সময় করে আপনার সব লেখা পড়া হয়নি। খুব দরকারী লেখা। চালিয়ে যান।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ধন্যবাদ
চালিয়ে দিচ্ছি

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।