বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৯ : শিমুল

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল গাফফার রনি [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১৭/০৪/২০১৩ - ১০:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘একদিন সকালে একমনে খবরের কাগজ পড়ছি, বলাই আমাকে ব্যস্ত করে ধরে নিয়ে গেল বাগানে। এক জায়গায় একটা চারা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কাকা এ গাছটা কী।”
দেখলুম একটা শিমুল চারা বাগানের খোওয়া দেয়া রাস্তার মাঝখানে উঠেছে।’

বুঝতেই পারছেন ওপরের লাইন তিনটি রবিঠাকুর থেকে মেরে দেয়া। শিমুলকে নিয়ে কিছু লিখতে গেলে রবিঠাকুর কিংবা বলাইকে বোধহয় উপেক্ষা করা অসম্ভব। হয়তো ধৃষ্টতাও। প্রকৃতি বা বুনো গাছ-গাছড়ার প্রতি মানুষের দুর্ণিবার টান--সেটা পথের পাঁচালীর অপুর মতো করে আর কেউ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে নি। কিন্তু নির্দিষ্ট একটা গাছের প্রতি এতো মমতা, এতো ভালবাসা-- সেটা বোধহয় বলাইয়ের চেয়ে বেশি আর কেউ অনুধাবন করে নি।


ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা : চতুর্মাত্রিক
গ্রীষ্মে যদি কৃষ্ণচূড়ার শাখায় শাখায় রং লাগে, তো বসন্তে শিমুলের পাতাবিহীন ডালে দাউ দাউ করে জ্বলে কাটফাটা চৈত্রের লেলিহান শিখা। নয়ানাভিরাম ফুলের সাথে মনমাতানো সুবাস, সেই সাথে রাজকীয় গড়নÑ বাংলার ফুলরাজ্যে আলাদা করে ঠাঁই করে নিয়েছে গ্রামীণ এই মেঠোফুলটি।


ছবি : মুক্তধারা
একবার ভাবুন তো, এমন সাজানে গোছানো পুরু পাঁপড়ি তার ওপর ঘন্টার মতো চেহার আর শক্তপোক্ত গড়নÑ এমন পরিপূর্ণ ফুল কি আর আছে প্রকৃতি রাজ্যে? অনেকে হয়তো পলাশের উদাহরণ টানবেন। হ্যাঁ মানছি, পলাশের পাঁপড়িগুলোও আগুনরঙা, কিন্তু পাঁপড়ির বিন্যাসে কেমন যেন এলোমেলো ভাব। আর গন্ধ! বসন্তে আম, ভাটফুলের আর বাতাবি লেবুর ফুলের যেমন আলাদা রকম সুবাস, সেই সুবাসের কারণেই গড়ে ওঠে আলাদা আলাদা স্বপ্নালু জগত, শিমুলের সুবাসেও ঠিক তেমনই মন পাগল করা এমন একটা সুবাস আছে।


আর আকারে-আকৃতিতে, সংখ্যায় আর সবাইকে টেক্কা দিতে পারে বলেই হয়তো ঝরে পড়া শিমুলের ভারে গর্বিত হয় মাটির বুক।


‍‍'বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়।'-- প্রবাদটার ধার বোধ হয় শিমুল ধারে না। তাই শিমুল শব্দটা উচ্চারণ করলে সবার আগে এর রক্তরাঙা ফুলের কথাই মনে আসে। ফলের পরিচয়ে শিমুলকে কেউ তুলোগাছ বলে আখ্যায়িত করলে এর পরিচয়ের শতাংশ ভাগও কি প্রকাশ পাবে? কিন্তু শিমুল ফুল বললে, এক লহমায় চোখের সামনে ভেসে আসে আশ্চর্য সুন্দর এক কুসুমের অবয়ব।
অনেক ত্যানা পেচানো হলো, এবার আসল কথায় আসি--


শিমুল বহুবর্ষজীবি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। বাংলার মাঠে-ঘাটে, রাস্তার পাশে অনাদর-অবহেলায় বেড়ে ওঠে শিমুল গাছ। সাধরণত বর্ষাকালে পানি পেলে জন্মায়। দ্রুত বর্ধনশীল গাছ। মাত্র ৪-৫ বছরের মধ্যে উচ্চতায় আশপাশের আম-কাঁঠাল জাতীয় ২০-২৫ বছরের পূর্ণবয়স্ক বৃক্ষকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। বছরে ৬ মাস সবুজ পাতায় সুশোভিত থাকে শিমুলগাছ। হেমন্তের শুরতেই সবুজ পাতা হলদেটে হয়ে যায়। শীতের শুরুতেই সব পাতা ঝরে গাছ পুরোপুরি ন্যাড়া হয়ে যায়। বসন্ত কালে অন্যান্য বৃক্ষরা যখন নব পল্লবে সেজে ওঠে তখন শিমুল গাছে শুধু কুঁড়ি বের হয়। সেই বোধহয় ভালো। নইলে শিমুলের পাতার যে সৌন্দর্য, সেটা এর ফুলের কাছে একেবারে ফিকে হয়ে যেত। আবার উল্টো ঘটনায় ঘটতে পারত। শিমুলের পাতার যে বাহার, যে বিপুল তাদের সংখ্যা, হয়তো তার আড়ালে কিছুটা হলেও ম্লান হয়ে যেত শিমুলের সুন্দরী পষ্পকূল।


আগেই বলেছি শিমুল দ্রত বর্ধনশীল বৃক্ষ। তাই এর কাণ্ডের বৃদ্ধিটাই সবচেয়ে বেশি। শিমুলের কাণ্ডের রং ধূসর। অল্প বয়সী শিমুলগাছে কাণ্ডের গোড়ার দিকে মোটা মোটা বেঁটে ফোঁড়ার মতো কাঁটা থাকে। কাণ্ড পেরিয়ে যতই ওপরে ওঠা যায় যায়, ততই কাঁটা কমতে থাকে। কাণ্ডের শেষ পর্যায়ে গিয়ে মোটেও কাঁটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর ডালে তো নয়ই। যাই হোক কোন গাছের বয়স ১৫-২০ পেরিয়ে গেলে কাঁটা তখন গোড়াতেও থাকে না। শিমুলে কাণ্ড ও শাখা প্রশাখা বেশ নরম। তবে কাণ্ড একেবারে সোজা ও খাড়া হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়।


শিমুল গাছের কাণ্ড খাদযুক্ত। তারমানে কাণ্ডের একেবারে গোড়ার দিকে হাঙরের ডানার মতো ৩-৪ টি পায়া বের হয়ে মাটির সাথে মিশে যায় (ওপরের ছবির মতো)। একারণে বয়স্ক শিমুল গাছের কাণ্ড গোল হয় না। তবে তরুণ গাছের কাণ্ড গোলই হয়। ছোট্টকালে কাণ্ডের গোড়া থেকে ডাল বের হলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেসব নষ্ট হয়ে যায়। তাই শিমুল গাছের কাণ্ডের উচ্চতাও অনেক বেশি। মোটমুটি ২০ ফুটের ওপরে গিয়ে শিমুলের প্রথম ডালটার নাগাল পাওয়া যেতে পারে। কাণ্ডের বেড় শেষ পর্যন্ত কত হতে পারে, তা আমার জানা নেই। তবে আমাদের গাঁয়ে সবচেয়ে পুরোনো যে গাছটা ছোট বেলায় দেখেছি, তার বেড় আমাদের গাঁয়ের ২০০ বছরের পুরোনো অশ্বথ গাছটার বেড়ের কাছাকাছি হবে। অর্থাৎ ১০-১৫ ফুট।


শিমুল পাতার রং সবুজ। বোঁটা লম্বা, বহুপক্ষল। একেকটা বোঁটায় ৫-৮ টা পাতা থাকে। প্রতিটা পাতার যে আলাদা বোঁটা থাকে, সেটা মোটামুটি এক ইঞ্চি লম্বা। পাতা লম্বাটে, অনেকটা বর্শার ফলার মতো। পাতা ৪-৮ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে। মাঝ বরাবর পাতার প্রস্থ ২-২.৫ ইঞ্চি।


ছবি : মুক্তধারা
শীতের একেবারে শেষভাগে এসে ন্যাড়া শিমুল গাছের মঞ্জরিতে কুঁড়ি আসে। এর কুঁড়িগুলো দেখতে ভারি সুন্দর। ঠিক কুঁড়ি নয়, যেন সুস্বাদু ফল! শিমুলের মঞ্জরিও দেখার মতো। ছোটখাট একট ডাল যেন। ডালটার সারা গায়ে সার বেঁধে কুঁড়ি বের হয়। তার মানে মঞ্জরি বহুপুষ্পক। ফুলের কুঁড়ি আস্ত একটা সবুজ আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। ধীরে ধীর সবুজ আবরণ ফেটে বেরিয়ে আসে আসল ফুল। কিন্তু কুঁড়ির ওই সবুজ আবরণ থেকেই যায়। পরিণত হয় সবুজ পাঁপড়িতে। ফুলের বোঁটার বেড় প্রায় ১ ইঞ্চি।


ছবি : Lonely Travel
শিমুল ফুলের রং গাঢ় লাল। কখনো কখনো ফিকে লাল রঙের ফুলও দেখা যায়। তবে স্টো পানির অভাবের কারণেই। আবার সোনালি ধরনের একরকম শিমুল দেখা যায়। তবে সেটার সম্পর্কে আমার অল্পবিস্তর জানাশোনাও নেই, তার বর্ণনা এড়িয়ে যাচ্ছি। শিমুল ফুল ঘন্টাকৃতির। পাঁচটি পাঁপড়ি থাকে। পাঁপড়ি ঘন, সুসজ্জিত। ফুলের ব্যাস ৫-৭ ইঞ্চি হতে পারে। একটা পাঁপড়ি ছিঁড়ে নিয়ে মাপলে কমপক্ষে ৪ ইঞ্চি লম্বা হবে। পাঁপড়ি বেশ পুরু। অন্তত কাচের চায়ের কাপের মতো পুরু হবে। অতিরিক্ত পুরুত্বের কারণে শিমুল ফুলের ওজনও অনেক বেশি। একেকটা ফুলের ওজন ৩০-৫০ গ্রাম হবে। আমি মনে করি, শিমুলই একমাত্র বৃক্ষ যার ডাল ফুলের ভারেই নুয়ে পড়ে। পাঁচ পাঁপড়ির মাঝখানে একগুচ্ছ লম্বা কিশোর থাকে। শিমুল ফুলে পাখি ও পতঙ্গ আকর্ষক মধু থাকে। তারমানে এদের মাধ্যমেই শিমুলের পরাগায়ন ঘটে।


ছবি : timortreasures
বসন্তের শেষভাগে এসে শিমুল গাছে ফল আসে। শিমুলের ফল মোঁচাকৃতির। লম্বাটে। ফল ৪-৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। কাঁচা ফলের রং সবুজ।


ছবি : flickr.com
বৈশাখ মাসের মাঝমাঝিতে শিমুলের ফল ফাটতে শুরু করে। ততোদিনে অবশ্য শিমুল গাছ নতুন পাতায় ভরে ওঠে। ফলের রং সবুজ থেকে বাদামী হতে শুরু করে। ফলের ভেতরটা পাঁচটা চেম্বারে ভাগ করা থাকে।


ছবি : উইকিমিডিয়া
পাঁচটা চেম্বারে ঠাঁসা থাকে কোমল তুলো দ্বারা। তুলোটা শিমুলের বংশ বিস্তারে দুটো অবদান। প্রথমটা হলো তুলোর আবরণের নিচেই থাকে শিমুলের বীজ-- পোকা, পাখি, রোদ-ঝড়-বৃষ্টি থেকে সেই বীজকে আগলে রাখে এই তুলো। দিতীয়টা হলো, ফল সম্পূর্ণ যখন ফুটে যায়, তখন এর বীজগুলো সোজা নিচে পড়তে বাধা দেয় এই তুলোর তন্তু। তার বদলে প্রতিটা বীজের গায়ে লেগে থাকা কিছু তন্তুর সাহায্যে বাতাসে উড়ে বহুদূর গিয়ে পড়ে সেই বীজ। ফলে একই জায়গায় লক্ষ লক্ষ শিমুলে চারা না জন্মে, শিমুলের ভাবী প্রজন্ম ছড়িয়ে পড়ে দূর দূরান্তে। ছোট্টকালে হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো তুলোসহ বীজ ধরা ছিল আমাদের মহা আনন্দের এক খেলা।


ছবি : গ্যাক সিডস
একটা শিমুলের ফলে একশোরও বেশি বীজ থাকে। শিমুলের বীজের রং কালচে বাদামি। বীজের আকার একটা মসুর দানার সমান। তবে মসুর দানা হয় চ্যাপ্টা, আর শিমুলের বীজ মোটামুটি গোলকাকার। শিমুলের বীজ দ্বিবীজপত্রি।
আগে এদেশে কার্পাস তুলো চাষ হতো না। তখনই শিমুল তুলোই ছিল গৃহিনীদের একমাত্র ভরসা। শিমুল তুলো দিয়ে লেপ, তোশক, বালিশ বানানো হয়। মনে পড়ে, ছোট্ট কালে নানার বাড়ি ঘুমানোর কথা। আমাদের এলাকায় কার্পাস তুলোর চাষ হয়। তাই আমাদের লেপ তোশক বালিশও কার্পাস তুলো দিয়ে তৈরি। কিন্তু নানাবাড়িতে সব শিমুল তুলোর। কার্পাস তুলোর সুবিধা হলো এর বীজ তুলোর গায়ে এমন ভাবে লেপ্টে থাকে যে মেশিন দিয়ে ছাড়াতে হয়। ফলে ওই তুলোর লেপকাথা বালিশ একেবারে নিরাপদ। আর শিমুল তুলোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একেবারে অন্যরকম। এর বীজ তুলোর সাথে আলগা ভাবে লেগে থাকে। একট ঝাড়া-ঝুড়া দিলেই বীজ সরে পড়ে। কিন্তু কিছু বীজ থেকেই যায়। সেগুলোই করে জ্বালাতন। লেপ তোশক বনানো মানে স্থায়ীভাবে তুলোগুলো তার ভেতর ভরে ফেলা। মুশকিল হলো, এড়িয়ে যাওয়া বীজগুলো নিয়ে। বালিশ বা লেপ বানানোর পর মহাপাজী বীজগুলোর মনে পড়ে তুলো থেকে সরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তুলো থেকে সরে পড়লেও সেলাই করা লেপের ভেতর থেকে তো বেরুতে পারে না, তখন সবগুলো বীজ একত্রিত হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আর সেই বীজের পোটলা পিঠের নিচে, মাথার নিচে পড়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
বাংলায় একটা শব্দ আছে। আমার ধারণা এমন কোনো সচল নেই যিনি এই শব্দটা সাথে অপরিচিত। শব্দটা তুলোধুনা। শব্দটা এসেছে শিমুল তুলো থেকে। আগেই বলেছি লেপ-তোশকের ভেতর বীজদের বিদ্রোহের কথা। তাছাড়া শিমুল তুলোর ইলাস্ট্রিসিটি কম। কয়েক বছর ব্যবহার করলেই লেপ-তোশক-বালিশ চুপশে একেবারে ত্যানা হয়ে যায়। তাই গৃহিনীরা লেপ-তোশকের সেলাই খুলে তুলোগুলো বের করে বিছানায় রাখেন। তারপর একটা লম্বা লাঠি দিয়ে আচ্ছা করে পেটান সেগুলোকে। একেই বলে তুলোধুনা! এতে এক সাথে দুই কাজই উদ্ধার হয়। বেয়াদব টাইপের বীজগুলোও তুলো থেকে মানে মানে কেটে পড়ে আবার চুপসে যাওয়া তুলোও ফুলে-ফেঁপে নব যৌবন লাভ করে।
একটা শিমুল গাছ কত বছর পর্যন্ত বাঁচে তা আমার জানা নেই। তবে উচ্চতায় কয়েকশ ফুট হতে পারে।


শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম : Bombax ceiba


এই পৃথিবীর পরে/ কত ফুল ফোটে আর ঝরে/ সে কথা কি কোনোদিন / কখনো কারো মনে পড়ে...সবিনা ইয়াসমিন


এই ছবি দুটো একই গাছের। চার মাসের ব্যবধানে তোলা। প্রথমটা ঘোর লাগা সন্ধ্যায়। দ্বিতয়টা মধ্য দুপুরে। অবশ্যই দুটো ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। ইছামতীর পূর্ব কিনারস্থ মাঠ থেকে।

মাছ ধরিবার শখ অপুর অত্যান্ত বেশি। সোনাডাঙা মাঠের নিচে ইছামতীর ধারে কাঁচিকাটা এক খালের মুখে ছিপে খুব মাছ ওঠে। প্রায়ই এইখানটিতে গিয়ে নদীতীরে একটা বড় ছাতিম গাছের তলায় মাছ ধরিতে বসে। স্থানটা তাহার ভারি ভালো লাগে, একেবারে নির্জন, দুধারে নদীর পারে কত কি গাছপালা নদীর জলে ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে, ওপারে ঘন সবুজ উলুবন, মাঝে মাঝে গাছ দোলানো কদম শিমুল গাছ......পাখির ডাকে বনের ছায়ায় উলুবনের শ্যামলতায় মেশামেশি মাখামাখি স্নিগ্ধ নির্জনতা!
--পথের পঁচালী

এটা লিখতে গিয়ে শৈশবে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। ইছামতীর ঠিক পাড়েই ছিল একটা বড়সড় শিমুল গাছ। পাড় বলতে ভাঙা পাড়ে। তার মানে সমতল থেকে বেশ নিচুতে। তো বর্ষায় যখন ইছামতী টইটম্বুর তখন শিমুল গাছটা গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে যেত। একদিন আমি আর আমার এক বন্ধু বার বার ভরা ইছামতী সাঁতরে এপার ওপার (বাংলাদেশ-ভারত) করছি। একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আর সাঁতরাতে ভালো লাগছে না। তখন কী খেয়াল হলো বললাম, চল তো শিমুল গাছটা চারপাশটা একটু ঘুরে দেখি। শিমুল গাছের অর্ধেক ডালপলা পানিতে ডুবে। সেগুলো ধরে ধরে চলতে বেশ ভালোই লাগছিল। হঠ্যাৎ আবিষ্কার করলাম, কালো কী একটা বিরাট জন্তু শিমুলের ডালপালায় আটকে গেছে। ভালো করে খেয়াল করে দেখি, একটা মহীষের পচা গলা মৃতদেহ। তখন সেখান থেকে পালাব কী, বমির চটে নড়তেই পারছি না। আর কোনোদিন বর্ষাকালে শিমুল গাছটা ওদিকটা মাড়ায় নি। এর প্রায় বছর দশেক পর সেই শিমুল গাছটা কেটে ফেলা হলো। তখন ঠিকই গাছটার জন্য বুকের কোন কোণে লুকিয়ে থাকা একটা মমতা দীর্ঘশ্বাস হয়ে ভেতরটায় মোচড় দিয়ে উঠল।
স্বর্গ-নরক-অলৌলিককতায় আমার বিশ্বাস নেই, তাই পুর্নজন্মে বিশ্বাসের প্রশ্নই ওঠে না। তবু কেন জানি বার বার কেন জানি বার বার বলতে ইচ্ছে হয়Ñ


ছবি :thefavoriteflowers.blogspot.com

আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে--এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়, হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে;
....জীবনান্দ দাশ

-----------------------------------------------------
এই সিরিজের অন্য পোস্টগুলো--
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-১ : শিয়ালকাঁটা
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-২ : ভাঁটফুল
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৩ : কালকসুন্দা / কালকসিন্দা
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৪ : আকন্দ
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৫ : আশশেওড়া
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৬: কচুরিপানা
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৭ : বৈঁচি
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৮ : শেওড়া


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

প্রথম পাতা থেকে ভাঙ্গা ছবিটা সরিয়ে দিলাম। ভাঙ্গা ছবিগুলো শুধরে দিন প্লিজ।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

চেষ্টা তো করলাম, জানি না ঠিক হয়েছে কিনা। তবে আমার পিসিতে ছবি শো করছে

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ঠিকাছে এখন।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

দেঁতো হাসি

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

সুবোধ অবোধ

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

রংতুলি এর ছবি

শিমুল আমার ভয়ঙ্কর প্রিয় একটা ফুল!! চলুক চলুক

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

খাইছে ভয়ংকর প্রিয়!

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

রণি, শিমুল আমার খুব প্রিয় ফুল। খুব ভাল লাগলো। লেখা চলুক, ভাই।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ধন্যবাদ আপু, বড় কোনো অঘটন না ঘটলে সিরিজ চলবে।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

স্পর্শ এর ছবি

অনবদ্য একটা পোস্ট ভাই! খুব ছুঁয়ে গেল। শিমুল তুলোর বালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারি না। এই বিদেশ বিভুইয়েও সঙ্গে করে দুটো শিমুলতুলোর বালিশ বয়ে এনেছি বাড়ি থেকে। ফুলে সেজে থাকা শিমুল গাছ সবচেয়ে ভালো লাগে ভর দুপুরে। একেবারে আগুন লেগে গেছে বলে মনে হয়।

সিরিজটা থামাবেন না।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

শিমুল তুলোর বালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারি না। এই বিদেশ বিভুইয়েও সঙ্গে করে দুটো শিমুলতুলোর বালিশ বয়ে এনেছি বাড়ি থেকে।

আম্মো তাই করেছি ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

অথচ আমি ঢাকায় থেকেও সে সুবিধা নিতে পারিনি মন খারাপ

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

কিন্তু আমার কাছে এখন শিমুল তুলোর লেপ-বালিশ নেই মন খারাপ

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

কাডা রে ভাই, বেদম কাডা। এই গাছের ঠাইল্লা দিয়া কয়েকটা জানোয়াররে আইচ্ছা মতো ঠ্যাঙ্গানো গেলে বিরাত সুখ পাইতাম মনে। সিরিজ চমৎকার হচ্ছে রনি ভাই। গাছের ছবির পাশাপাশি এই সমস্ত গাছগুলোর শরীরের একটা করে ক্লোজ ছবি হলে ভালো হতো না? একটু ভেবে দেখবেন? ভালো থাকবেন, কী-বোর্ড চালু থাকুক।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ঠ্যাঙানোরও দরকার নেই, জামা-কাপড় খুলে নিয়ে গাছে উঠতে বাধ্য করলেই কাজ হতো।
ঠিকই কইছেন, কিন্তু ক্লোজ ছবি আমার কাছে নেই। ইন্টারনেটেও পাওয়া যায় না। মন খারাপ

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

তারেক অণু এর ছবি

চমৎকার, এবার শিমুলের কিছু ছবি পেয়েছিলাম, এত পরিশ্রম করে লিখছেন, অনেক অনেক ধন্যবাদ

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
কষ্ট ও সময় করে পড়ার জন্য

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিগুলী অত্যন্ত আকর্ষনীয় হয়েছে।
আঃ হাকিম চাকলাদার

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
তবে অধিকাংশ ছবিই আমার নয়।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

শাব্দিক এর ছবি

সাহিত্য আর বিজ্ঞান মিলেমিশে একাকার আপনার এই সিরিজে। চলুক

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

Mohiuddin Taher এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা। গল্পের মতো করে শিমুলের যাবতীয় তথ্য সাজিয়ে দেওয়ার কঠিন কাজটি সহজেই করা হয়েছে। ভীষণ উপকারি পোস্ট। অসংখ্য ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।