বাংলার তরু-লতা-গুল্ম-২১ : ঢেঁড়শ

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল গাফফার রনি [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২০/১২/২০১৩ - ৫:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঈদের ছুটিতে গাঁয়ে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল অনেক অনেক ঝোপঝাড়ের ছবি তুলব। কিন্তু গুড়ে বালি দিল অসময়ের বৃষ্টি। একটানা বর্ষণে দু’দিন ঘর থেকে বেরুতেই পারলাম না। তৃতীয় দিন সকালে লাল জামা গায়ে দিয়ে রবিমামাকে যখন পূব আকাশে হামা দিতে দেখলাম, তখন খুশির ঝিলিক খেলে গেল মনে। কিন্তু সেই রেশ মিইয়ে যেতে সময় লাগল না।
আমার কমদামি মোবাইলে ছবি তুলতে গেলে একটু ঝক্কি পোহাতে হয়। যথেষ্ট রোদ না থাকলে ছবি হয় যাচ্ছেতাই। তাই সূর্য যখন মেঘের আড়ালে মুখ লুকায়, তখন আমাকেও থামতে হয়।
যাইহোক রোদের লুকোচুরি খেলার মাঝেই আমার পিচ্চি বাহিনি আর ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম উত্তর মাঠে। উদ্দেশ্য ছিল কাশফুলের ছবি তোলা। কিন্তু হতাশ হতে হলো। টানা বর্ষণে ডাঁটা থেকে পচে খসে পড়েছে কাশের শুভ্র রেশম-কোমল ফুল। মন ভাল হতেও সময় লাগল না। এক সব্জি ক্ষেতের মাঝখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বেশ ক’টা ঢেঁড়শ গাছ। সূর্যের বোধহয় আমার জন্য করুণা হলো তখন, হঠাৎ করেই কিছুক্ষণের জন্য মেঘের আড়াল উঁকি দিল। মিনিট দুয়েকের ব্যবধানো আবার যখন মাঠে ছায়া ভর করল, ততক্ষণে আমার কাজ শেষ। পটাপট তুলে ফেলেছি ঢেঁড়শের প্রয়োজনীয় কিছু ছবি।


ঢেঁড়শ বাংলাদেশের অতি পরিচিত সব্জি। দেশের শুষ্ক সমতলভূমির প্রায় সর্বত্র দেখা মেলে। ঢেঁড়শ গুল্ম জাতীয় মৌসুমি উদ্ভিদ। শীতকালীন ফসল। জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই উঁচু ও শুকনো জমিতে চাষ করতে হয়। শীতকালীন ফসল হলেও আজকাল ঢেঁড়শের কিছু উন্নত জাত এসেছে, এগুলো শরৎ-হেমন্তকালেও পাওয়া যায়। শীতকালীন ঢেঁড়শ শরৎকালে বীজ রোপন করা হয়।


ঢেঁড়শ গাছ ৪-৭ফুট পর্যন্ত উচু হয়। ঢেঁড়শের কাণ্ড ফাঁপা, হালকা-পলকা। কাণ্ডের রং লালচে সবুজ, সুক্ষ্ম লোমযুক্ত। কাণ্ড পুরোপুরি সোজা, বাহ্যিক কোনো কারণে বিকৃতি না ঘটলে কাণ্ড বাঁকা-ট্যারা হয় না। তবে কাণ্ডের এক ফুট ওপর থেকেই ডালপালা গজাতে শুরু করে। কাণ্ড ১.৫-২.৫ ইঞ্চি পর্যন্ত মোটা হতে পারে।


ঢেঁড়শের পাতা যৌগিক। একপক্ষল, অর্থাৎ একটা বোঁটায় একটাই পাতা থাকে। পাতা দেখতে হাতের পাঞ্জার মত। একটা পাতায় পাঁচটা পত্রফলক থাকে। পাতার ব্যাস মোটামুটি ৪ ইঞ্চি। বোঁটার দৈর্ষ্য ২-৩ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। পাতার রং গাঢ় সবুজ, সুক্ষ্ম লোমযুক্ত। মরা পাতা হলুদ রংয়ের।


ঢেঁড়শ গাছের তুলনায় এর ফুল বেশ বড়ই। অনেকটা মাইকের মত দেখতে। ফুলের পাঁচ-ছয়টি বড় বড় পাঁপড়ি আছে। পাঁপড়ি অত্যন্ত পাতলা। ফুল খাকি (ঘিয়ে) রংয়ের। ফুলের মধ্যভাগ গাঢ় বাদামি। মাঝখানে খাকি রংয়ে কিশোর থাকে। ফুলের ব্যাস ২-২.৫ ইঞ্চি। পুরো মৌসুম জুড়েই ফোটে ঢেঁড়শের এই অপরূপ ফুল।


ঢেঁড়শের ফল লম্বাটে, হাতের আঙুলের মত দেখতে। ফলের গায়ে চারটে শিরা থাকে। ফল ৩-৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। ফলের ভেতরটা ফাঁপা। পুরু পর্দা দ্বারা পাঁচটা চেম্বারে ভাগ করা। প্রতিটা চেম্বারের ভেতর ছোট্ট ছোট্ট গোলাকার বীজে ভরা থাকে। ফল গাঢ় সবুজ রঙের। পাকা ফলের রং বাদামি। ১.৫-২ ইঞ্চি মোটা হয়।
ফল বেশ নরম। মূলত ফলই সব্জি হিসেবে খায় মানুষ। ঢেঁড়শের বীজ মোটর দানার চেয়েও ছোট। কাঁচা বীজ সাদাটে ঘি রংয়ের, পাকা বীজ বাদামি রংয়ের। শরৎকালে শীতকালীন ঢেঁড়শের বীজ রোপন করা হয়।
ঢেঁড়শের ইংরেজি নামঃ Lady’s Finger। বৈজ্ঞানিক নাম: Abelmoschus esculentus

ঢেঁড়শের পাতা মানুষে খায় না, তবে গরু-ছাগলে খায় না, পাকি রাম ছাগল আর এদেশের ব্ল্যাক-বেঙ্গলদের আমন্ত্রণ রইল ইহা ভক্ষণের।
------------------------------------------------------------

এই সিরিজের অন্য পোস্টগুলো—
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-১ : শিয়ালকাঁটা
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-২ : ভাঁটফুল
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৩ : কালকসুন্দা / কালকসিন্দা
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৪ : আকন্দ
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৫ : আশশেওড়া
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৬: কচুরিপানা
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৭ : বৈঁচি
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৮ : শেওড়া
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-৯ : শিমুল
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-১০ : ভেরেণ্ডা / কচা
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-১১ : হাতিশুঁড়
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-১২ : বট
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-১৩: শিয়াকুল
বাংলার গুল্ম-তরু-লতা-১৪ : বাঁশ
বাংলার তরু-লতা-গুল্ম-১৫ : তেলাকুচো
বাংলার তরু-লতা-গুল্ম-১৬ : শাপলা
বাংলার তরু-লতা-গুল্ম-১৭ : মানকচু
বাংলার তরু-লতা-গুল্ম-১৮ : হলুদ
বাংলার তরু-লতা-গুল্ম-১৯ : বাবলা
বাংলার তরু-লতা-গুল্ম-২০ : ডুমুর


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

"পাকি রাম ছাগল আর এদেশের ব্ল্যাক-বেঙ্গলদের আমন্ত্রণ রইল ইহা ভক্ষণের।" হাসি থামে না

ভালো লাগলো

- রাসেল জামান

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

দীনহিন এর ছবি

ঢেঁড়শ সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। অনেক ধন্যবাদ।

ফুল খাকি (ঘিয়ে) রংয়ের।

ছবির ফুল তো সাদাই দেখলাম। কি জানি, হয়ত চোখের সমস্যা। নয়তো মনিটরের।

ঢেঁড়শের পাতা মানুষে খায় না, তবে গরু-ছাগলে খায় না, পাকি রাম ছাগল আর এদেশের ব্ল্যাক-বেঙ্গলদের আমন্ত্রণ রইল ইহা ভক্ষণের।

এইটা দারুণ বলেছেন। অনেকেই পাকি-রাজাকারদের ছাগলের সাথে তুলনা দেয়, কিন্তু মানুষ তো দূরের কথা, ছাগলের খাদ্যও ওদের উপযুক্ত নয়, বরং গরু-ছাগলের অখাদ্যই ওদের ঠেসে খাওয়ানো দরকার।

ঢেঁড়শের ফল লম্বাটে, হাতের আঙুলের মত দেখতে।

হাতের আঙুলের মত তো বুঝলাম, কিন্তু কেন 'লেডিস ফিঙ্গার' নাম?

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ধন্যবাদ, ফুল ঘি রনয়েরি, ছবিতেও ঘি রং আছে। আমদের দিলে দয়া-মায়া আছে না, তাই অদেরকে ছাগুদের খাবারের আমন্ত্রণ জানালাম।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

ওয়াইফাই ক্যানসার এর ছবি

ঢেড়শের ফুল আমার খুব পছন্দ। মাইকের সাথে তুলনা পছন্দ হয়েছে। আপনার লেখা আগ্রহ নিয়ে পড়ি।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ধন্যবাদ, আগ্রহ নিয়ে পড়ার জন্য।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

ঢেঁড়শের পাতা মানুষে খায় না, তবে গরু-ছাগলে খায় না, পাকি রাম ছাগল আর এদেশের ব্ল্যাক-বেঙ্গলদের আমন্ত্রণ রইল ইহা ভক্ষণের।।

চলুক
ছাগুদের জন্যে আমিষ হলো গুজব আর নিরামিষ হিসাবে তারা ঢেঁড়শ পাতা খেতে পারে। গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

মাসুদ সজীব

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ছাগুদের জন্যে আমিষ হলো গুজব আর নিরামিষ হিসাবে তারা ঢেঁড়শ পাতা খেতে পারে।

হো হো হো গড়াগড়ি দিয়া হাসি

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

দীনহিন এর ছবি

ছাগুদের জন্যে আমিষ হলো গুজব আর নিরামিষ হিসাবে তারা ঢেঁড়শ পাতা খেতে পারে।

উত্তম জাঝা! চলুক

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।