মাঝে মাঝে স্মৃতিরা ভিড় করে। বিষণ্ন হয়ে হয়ে ওঠে মন। শৈশব-কৈশোরের রঙিন জীবন হাতছানি দেয়। কিন্তু সময়কে তো আর পেছনো যায় না। তাই বর্তমানে বসেই অতীতকে খোঁজার মধ্যেও আলাদা সুখ। আর এই সুখের আশাই আমি সেলফোনটা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াই গাঁয়ের মাঠে, নদীর ঘাটে, ঝোপে-জঙ্গলে। কিশোর বেলার বন্ধুদের কারও সাথে দেখা হয়ে গেলেই ক্যামেরা বন্দি করে ফেলি।
বছর তিনেক আগের কথা। আমাদের গ্রামে আমাদের গ্রামে একটা পার্ক আছে, সেকথা আগেই বলেছি পাঠকদের। তো একদিন পার্কের মালিক কুদ্দুস কাকা ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে তাঁর পার্কে কোথায় কোন কোন বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ আছে তা দেখাচ্ছিলেন। হঠাৎ চোখে পড়ল অপরূপ এক বুনো ফুল। এক লহমায় বর্তমান থেকে চলে গেলাম ২০ বছরেরও বেশি আগের জীবনে। সেদিনই প্রথম পরিচয় হয়েছিল নিভৃতবাসী এই মেঠোফুলটার সাথে।
বর্ষার দিনগুলো একটু বড়ই হয়। অলস ঘরে বসে সময় কাটতেই চাই না। বৃষ্টির পর গোটা পৃথিবী ছেয়ে যায় মলিন আলোয়। আমরা খেলতে যাই আম বাগানে। দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, মার্বেল আর লাটিম খেলার আসর বসে। খেলতে খেলতে মার্কেল লাটিম অনেক সময় হাত ফসকে ছুটে যায় ভাট আর আশশেওড়ারা ঘন ঝোপের আড়ালে। খেলা ফেলে ছুটতে হয় আগে সেগুলো খুঁজতে। হঠাৎ সেদিন চোখে পড়ল জংলার ভেতরে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে এক মোহনীয় ফুল। তারপর কতবার বন-বাদাড়ে-এর দেখা পেয়েছি তার ইয়াত্তা নেই। তবে শেষ কবে দেখেছি তা এখন স্মৃতি হাতড়েও বলতে পারব না। আসলেই কী হারিয়ে গিয়েছিল এই অপরুপ প্রকৃতিশোভা? হয়তো বা। অথবা হয়তো মন থেকে মুছে গিয়েছিল বলেই চোখের সামনে থাকলেও মনের দৃষ্টিতে ধরা পড়েনি।
কেঁউ-এর সাথে পুর্নমিলনের পর পর কুদ্দুস কাকাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, গাছের নামটা কী? তিনি বলতে পারেননি। গায়ের অনেক মুরুব্বিকেও শুধিয়েছি। তারাও অপারাগ। কিছুদিন আগে আামার খালার বাড়ির উঠোনে ফূলবাগানে একটা চারা দেখলাম। খালাতো ভাই পারভেজকে জিজ্ঞেস করলাম নামটা। ও বলল, দোলনচাপা। কিন্তু কেন জানি মনে ধরল না। দোলন চাপা আমি দেখিনি। তাই নিশ্চিত হতে পারছি না ও ঠিক বলেছে কিনা। গুগলে সার্চ দিয়ে, অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মার প্রকৃতিসমগ্র ঘেঁটে নিশ্চিত হলাম ওটা দোলনচাপা নয়। তাহলে কী নাম এর?
সমাধাটা এলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. হাসনা বেগমের ভেষজ উদ্ভিদের গুনাবলী নামের বই থেকে। কেঁউ--এটা কোনো নাম হতে পারে সে কথাও জানলাম এই প্রথম। বাড়তি এবং জরুরি পাওনা হিসেবে পেলাম বৈজ্ঞানিক নামটাও।
কেঁউ বহুবর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। সাধারণত ছায়াযুক্ত স্থানে ও ঘন ঝোপ-ঝাড়ের ভেতরে স্যাঁতসেঁতে জায়গায় জন্মায়। গাছ ঝোপালো। শিকড় থেকেই অনেক ডালপালা বেরিয়ে ঘন ঝোপ সৃষ্টি করে। কেঁউ ঝোপ ৫-৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কাণ্ডের রং সবুজ। শক্ত। কাণ্ডের শীর্ষপ্রান্তে ১-২টা ডাল বের হয়। কাণ্ড ১-১.৫ ইঞ্চি মোটা হয়।
কেঁউ গাছের পাতার রং সবুজ। উপবৃক্তাকার, একপক্ষল পাতার বোঁটা ঠিক আর দশটা উদ্ভিদের বোঁটার মত নয়। বরং ফিতার মত। ফিতাকৃতির বোঁটা কাণ্ডের গায়ে শাড়ির মত পেঁচিয়ে থাকে। পাতা মসৃণ। পাতা ৫-১০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। মাঝ বরাবর পাতার প্রস্থ ৩-৪ ইঞ্চি। পাতার সামান্য পুরু, নরম। পাতার নিচের দিকটা পশমের মতো লোমে ঢাকা।
কেঁউয়ের ফুল অসম্ভব সুন্দর। তবে যেটাকে ফুল বলছি সেটা ঠিক ফুল নয়, পুষ্ণমঞ্জরি। পুষ্পমঞ্জিরি গুচ্ছ আকারে থাকে এবং এর রং লাল।
মঞ্জরিতেও ত্রিকোণাকার পাতলা পাপড়ি আছে। প্রতিটা ত্রিকোণের ভেতর থেকে একটা করে মাইকাকৃতির সাদা ফুল ফোটে। ফুলের তেমন গন্ধ নেই। মৌসুমি ফুল, বর্ষার শেষ দিকে ফুল ফোটে।
ফুল থেকে ফল হয় কিনা সঠিক জানি না। কন্দমূল জাতীয় উদ্ভিদ, তাই মূল থেকেই এর বংশবিস্তার ঘটে।
কেঁউ-এর বৈজ্ঞানিক নাম : Costus speciosus (Koening) Sm.
আগের পর্ব : বাংলার তরু-লতা-গুল্ম-২৩ : মোরগফুল/মোরগঝুটি
মন্তব্য
ভাল লেগেছে। তবে মনে হয় একটু তাড়াহুড়ো হয়েছে। আপনার লেখা আরও বেশী সাজানো থাকে।
আমার কাছে মঞ্জরি বেশী ভাল লেগেছে 'মাইকাকৃতির' ফুল থেকে!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
আমারো...
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
আপনার এই সিরিজ বেশ ভালো লাগে। ছোটবেলায় একটা ফল খেতাম নাম ছিলো কাউফল। খেতে লটকনের মত, কিন্তু আরো বড় সাইজের। যতদূর মনে পরে কমলা রঙের। আপনার শিরোনাম দেখে ভেবেছিলাম কাউফলকেই কেঁউ লিখেছেন বুঝি।
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
কাউ ফলের নাম আমিও শুনেছি, দেখেছিও, কিন্তু কেমন দেখতে মনে করতে পারছি না।
ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
"কেঁউ" নামটা খুব মজার। এই উদ্ভিদের কি কোন ধরনের ব্যবহার আছে?
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
কচি অবস্থায় এটা সব্জী হিসেবে বেশ উপাদেয়
তাই! জানতাম না তো...
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
জানি না, ভেষজ ব্যবহারটা হাসনা বেগমের বই থেকে জানলাম, কিন্তু লক্ষ্য করেছেন বোধহয় কোন উদ্ভিদের ভেষজ গুণ সম্পর্কে আমি লিখিনা।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
ভাল লাগল। অন্যান্য বারের মত।
(তবে এইবারে লেখার মধ্যে আমার নাম নিয়েছেন দেখে টুস্ খানিক বেশী ভাল লাগল )
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ।
(তাই তো অজান্তেই কহন আপনার নাম নিয়েছি আগে খেয়াল করিনি তো!
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
বেশ বেশ
facebook
ধন্যবাদ।
কোথায় গুম গুম হয়েছেন? দেখা নেই কেন?
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
প্রকৃতি নিয়ে আপনার সব লেখাই পড়ি, ভালোলাগে চারপাশের অপরিচিত হয়ে যাওয়া ভুবন কে জানতে। ছেলেবেলার মত ও তারাও আজ স্মৃতিময় হয়ে যাচ্ছে। লেখা চলুক
মাসুদ সজীব
ধন্যবাদ এখনো অনেকদিন চলবে। ভালো থাকবেন।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
নতুন মন্তব্য করুন