বিড়ালনখা। গাছটা চিনতাম, ফুলটা দেখিনি কখনও কিংবা দেখলেও মনে নেই। সত্যি বলতে গাছটাও খেয়াল করে দেখিনি কোনো দিন। এবারও হয়তো দেখা হত না, ভাগ্যক্রমে হয়ে গেল। অফিস থেকে তিনদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিল মার্চের ১৫ তারিখে। উদ্দেশ্যই ছিল কিছু গাছ পালার ছবি তুলব। এজন্য নতুন ক্যামেরাও কিনে ফেললাম। কিন্তু বাড়ি গিয়ে মনে হলো সময় সুযোগ যখন আছে, দক্ষিণ পাড়ার কুমোরদের (মৃৎশিল্পিদের) কিছু ছবি তুললে ক্ষতি কী। বৃক্ষপ্রেমি স্কুলপড়ুয়া দুই খালাতো ভাইকে নিয়ে চললাম কুমোর পাড়ার দিকে। এক বাঁশবাগানের কাছে এসে খালাতো ভাই পারভেজ বলল, ‘ভাইয়া, ওই মসুরক্ষেতে ধুতরো গাছ আছে।’
আমার সংগ্রহে ধুতরোর কোনো ছবি ছিল না। বললাম, ‘ঠিক আছে ফেরার পথে দেখা যাবে।’
ফেরার পথে সত্যি সত্যিই কতগুলো ধুতরো গাছের দেখা পেলাম। কায়দা করে তুললাম বেশ কয়েকটা ছবি। এবার ফেরার পালা। পারভেজ বলল, ‘সোজা পথ এড়িয়ে বাঁশবাগানের পাশ দিয়ে যদি যায়, তবে পথ খানিকটা কমে।’
তো ধরলাম সেই সোজা পথ। হঠাৎ একটা ক্ষেতের বেড়ায় ফুটে থাকা সুন্দর কিছু ফুলের ওপর চোখ আটকে গেল।
‘বাহ! চমৎকার ফুল তো।’ আনমনে কথাটা বলে ক্যামেরা তাক করলাম সেদিকে। কিন্তু ছবি তুললেও মনের ভেতর খচখচানি রয়েই গেল--গাছটার নাম জানি না যে? ঠিক সেই সময় এক চেনা ভদ্রলোক ওই পথ দিয়ে মাঠ থেকে ফিরছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাস করলাম। ভদ্রলোক বললেন, বিড়ালনখা। এমন নামের কারণও ব্যাখ্যা করলেন তিনি। পরে আসি সেই ব্যাখ্যায়।
বিড়ালনখাকে আগে যতই অবহেলা করি না কেন, এ গাছ যে বহুবার বনেবাদাড়ে, ঝোপে-জঙ্গলে দেখেছি--সে নিশ্চয়তা আমি পাচ্ছি স্মৃতির কাছ থেকে। স্মৃতিই আমাকে জানিয়ে দেয় অজস্রবার এর সাথে জংলা মাঠে পরিচয় হয়েছে।
বিড়ালনখা বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে সব গ্রামেই দেখা যায়। লতা জাতীয় ঝোপালো গাছ। পুরোপুরি লতাও নয় আবার ঝোপাল গুল্মও নয়। মালতীলতার মত বৈশিষ্ট্য অনেকটা
যেহেতু লতা-উদ্ভিদ, তাই আলাদা করে কাণ্ড চিহ্নিত করার কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না। লতার রং সবুজ। লতা বলে প্রতিটা গাছের উচ্চতারও কোনো ধরাবাঁধা সীমা নেই। বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ। লতার গায়ে দেড় থেকে দুই ইঞ্চি দূরে দূরে একটা করে পাতা থাকে।
পাতার রং সবুজ। প্রায় গোলাকার। পাতার বোঁটা থেকে শীর্ষ প্রান্তের দৈর্ঘ্য দেড় ইঞ্চির মত। পাতা পাতলা। বোটা খুবই ছোট, আধা সেণ্টিমিটারের মত হবে। প্রতিটা পাতার বোঁটার গোড়ায় একটা করে বিড়ালের নখের মত বাঁকানো ছোট্ট ছোট্ট কাঁটা থাকে। তাই এর নাম বিড়ালনখা। প্রতিটা কাঁটার দৈর্ঘ্য এক সেণ্টিমিটার মত হবে।
বিড়ালনখার ফুল ভারী সুন্দর দেখতে। ফুলের রং সাদা। চারটে পাপড়ি থেকে। তবে ফুলের সৌন্দর্য পাপড়িতে নয়, কিশোরে। চার পাপড়ির মাঝখানে বেশ বড় বড় বড় ২০/৩০টা কিশোর থাকে। কিশোর গোল করে সাজানো থাকে, অনেকটা শিরীষফুলের মত। কিশোরের রঙ বেগুনিভাব গোলাপি। ফুলে গন্ধ আছে কিনা বলতে পারছি না। এই যাহ, ভুল একটা করেছি গন্ধ না নিয়ে।
প্রতিটা ফুল থেকে বেগুনের মত একটা কের ফল ধরে। ছোট্ট ছোট্ট। নিমের ফলের মত। ফলের রং সবুজ অথবা বেগুনি। ভেতরে বেগুনের বিঁচির মত ছোট্ট ছোট্ট বীজ থাকে। উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া ওপরের ছবিটা ঠিক আমাদের দেশের বিড়ালানখার নয়, তবে প্রজাতিটা এক। বিড়াল নখার ফল-বীজের সাথে হুবহু মিল।
বিড়ালনখা গাছে ফাগুন মাসে ফুল-ফল আসে। চৈত্র বৈশাখে ফল পাকে। বর্ষাকালে ফল থেকে চারা গজার।
বিড়ালনখার বৈজ্ঞানিক নাম জানা ছিল না। ‘বৃক্ষকথা’ নামে ফেসবুক গ্রুপে ছবি পোস্ট করে নামটা জানতে চেয়েছিলেন। কোলকাতার অপর্নাদি জানিয়ে কৃতার্থ করলেন এই অধমকে।
বিড়ালনখার বৈজ্ঞানিক নাম: Capparis Spinosa
আগের পর্ব : বাংলার তরু-লতা-গুল্ম-২৭ : লজ্জাবতী
মন্তব্য
ফলের ভিতরটা দেখতে অনেকটা প্যাশনফ্রুটের মত।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কী জানি ভাই, প্যাশানফ্রুট তো চিনা না
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
আপনার প্রকৃতি বিষয়ক লেখাগুলি সত্যিই বেশ আকর্ষক। আপনার পোস্টগুলো থেকে অনেক নতুন কিছু তরু-লত-গুল্ম ইত্যাদির সাথে পরিচিত হয়েছি। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, প্রতিটা লেখায় প্রাসঙ্গিক ছবি সংযোজণ। লেখা চলুক।
ধন্যবাদ, পৌঢ়দা, আগে ছবি মোবাইলে ছবি তোলার সময় এমন কোনো সিরিজ চালু করব সেরকম চিন্তা মাথায় ছিল না, তাই প্রাসঙ্গিক ছবি সংযোজন কঠিন হয়ে যেত, এখন ছবিই তুলি সিরিজটার চিন্তা করে।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
বরাবরের মতই, খুব ভাল লাগল।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
কাছাকাছি গেলে খামচি দেবে নাকি গাছটা?
নতুন মন্তব্য করুন