• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

সীমান্তরেখা-৭

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল গাফফার রনি [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১৫/০৩/২০১৫ - ৭:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সবপর্ব : সীমান্তরেখো-১, সীমান্তরেখো-২, সীমান্তরেখো-৩, সীমান্তরেখো-৪, সীমান্তরেখো-৫, সীমান্তরেখো-৬

সপ্তম অধ্যায়
ফাগুন মাসে প্রকৃতি সাজে সবুজের গয়নায়। আমগাছে থোকা থোকা মুকুল, বাতাবি গাছের শাখায় কচি পাতা আর সাদা ফুলের মেলা। মন পাগল করা গন্ধ সে ফুলের। পিটালি গাছে এসেছে ছোট ছোট গুটি। কুল গাছে টসটসে পাকা কুল। কাঠ বিড়ালি আর পাখিদের আনাগোনা। বসন্তের স্বচ্ছ বাতাস ধোয়া শুভদিনে সবেদ আলির ঘর আলো করে এল ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান। বংশের প্রদীপ। বেড়ে গেছে হুরমতির কদর। ছমিরন বিবি ভয়ে ভয়ে থাকে কখন কোন অপরাধ ধরা পড়ে।
সদ্যজাত বংশধরকে নিয়েও আহ্লাদের অন্ত নেই সবেদ আর হুরমতির। ছেলেটা একটু চোখ ফুলিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সমিরন। পিঁপড়েয় কামড়াল, মাছিতে জ্বালাতন করছেথ-- ছমিরনকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়। পাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়। সামান্য শব্দে কেঁপে ওঠে ছোট্ট বুকটা-- সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয় ছমিরনকে, ঠোঁট ফোলানোর আগেই বুকে থাবা দিয়ে নিবৃত করতে হয়।
পান থেকে চুন খসানোর জো নেই। কোনো কারণে যদি চিৎকার করে কেঁদে ওঠে ছেলেটা, গালের তুবড়ি ছোটে হুরমতির মুখ দিয়ে-- ‘ভাতারখাগি মাগী, ছোট্ট বাচ্চাডারও সেমলে রাখতি পারে না। দুটো ছেলে-মেয়ে মাগী মানুষ করেলো কী কইরে আল্লাই জানে!’
অবশ্য ঘর-গৃহস্থলির কাজ ছমিরনকে করা লাগে না। লাগে না মানে করতে দেয় না হুরমতি। ওর ধারণা ঘর-গৃহস্থালি রান্না-বান্না দায়িত্ব বুড়িকে দিলে ধীরে-ধীরে সংসারের কর্তৃত্ব আবার তার হতে চলে যাবে। এমনিতেই দুই রাঢ় মাগীদুটো যেভাবে ফুসুর-ফাসুর করে। কী কুমতলব আঁটে কে জানে!
ছেলেটার গায়ের রং কালো। বেশ কালো। তাতে কী বংশের প্রদীপ বলে কথা! কিন্তু প্রদীপ দিয়ে যে আলো জ্বালবে সেকথা ভাবতে ভরসা পায় না ছমিরন। তার ধারণা বড় হয়ে মায়ের মতই হিংসুটে হবে নাতিটা। সেটা বোঝে ওর আচরণ দেখে। মাছি একটা বসতে না বসতেই যেভাবে চিৎকার দেয়। যেন মাকে ডেকে বলছে দেখো, মা, হারামী বুড়িটা বাতাস করছে না। তাই মাছি এসে ঝামেলা করছে।
মাঝে-মাঝে শোধ নিতে মন চায় ছমিরনের। ইচ্ছে করে ছোঁড়ার কানটা টেনে লাল করে দিতে। কিন্তু দমিয়ে রাখে ইচ্ছেটা। ডাইনি বউটা ছেলের লাল কান দেখলে জানে শেষ করে ফেলবে। তবুও একদিন অলক্ষে নাতির গায়ে খুব ছোট্ট একটা চিমটি দেয়। আর যাবে কোথায়! গগনাবীদারী একটা চিৎকার দিয়ে পাড়া মাথায় তোলে ছোঁড়া। বউ কোথায় ছিল, হাঁপাতে-হাঁপাতে এসে ‘আমার সোনার কী হয়েছে, আমার মানিকের কী হয়েছে?’ বলে বুকে তুলে নেয়।
‘কীডা মেরেছে, সোনা, ও রাক্ষসী বুড়িডা।’ বলে কটমট করে তাকায় বুড়ির দিকে। পরের আধঘণ্টা গাইলের তুবড়ি ছোটে।

সবেদ আলি বউকে ভয় পায়। ছেলে জন্ম দেবার পর ভয়টা আরও বেড়েছে। তবে হুরমতি বদলেছে অনেকটা। এখন আর আগের মত গম্ভীর হয়ে থাকে না। তবুও ভয়টা বেড়েছে, বংশের প্রদীপ জ্বালানোর কারণে। সবসময় বউয়ের মন যুগিয়ে চলে। যদিও হুরমতি মা-বোনের নামে খুব বেশি নালিশ করে না। নালিশ করারই বা দরকার পড়বে কেন! যে সমস্যার প্রতিকার হুরমতি নিজেই করতে পারে, সে সমস্যার কথা পুরুষের কানে তুলবার দরকারটা কী। সবেদ আলি বউয়ের মন রাখতে মাঝে মাঝে মা-বোনকে ধমকে দেয়। তবে মাত্রা ছাড়ানো পর্যায়ে কখনোই নয়।

ফাগুন মাসেই মাসে বিয়েটা হয়ে গেল জামশেদুল হকের। জামশেদুল হক মানে মোজাম দেড়ে চতুর্থ আর নবীজান বিবির প্রথম পুত্র। আয়োজনের বহর বিশাল। বিশ বিশখানা গরুর গাড়ি আর দুখানা ঘোড়ার গাড়ির গিয়েছিল বরযাত্রীতে। কোথাও কোথাও অবশ্য বাসের প্রচলন হয়েছে। কিন্তু এদিকটায় বাস এখনো আরাধ্যযান।
কোলকাতা থেকে বিয়ের বাজার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ধুমধামের কমতি ছিল না বিয়েতে। সবচেয়ে খুশির দিন ছিল বোধহয় নবীজান বিবির। মেয়েদের, বাপের মৃত্যুর পর এত আনন্দ আর করেনি কখনও। আজ সত্যিই যেন মরা মেয়ে ফিরে এসেছে। অবশ্য বৌমার বড় বোন তার বড় মেয়ের ক্লাসমেট ছিল।
মাস যেতেই কেমন জানি মনে হয় নবকীজান বিবির। এমেয়ে কিছুতেই তার মেয়ের যোগ্য হতে পারে না। রুপে-গুণে তো নয়-ই, উচ্চতায়. চলনে-বলনে কোনো কিছুতেই নয়। তাঁর মেয়ে কত আধুনিক ছিল, সাইকেল চড়ত, স্কুলে ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হত। কবিতা-গানে পারদর্শী ছিল। কী গলাটাই না ছিল! বসোতির এই মেয়েটা তার নখের যোগ্যও নয়। কেমন যেন ন্যাকা-ন্যাকা, রান্নাটা ঠিক মতো করতে পারে না, চুল বাঁধতে পারে না।
কথাটাও ঠিকমতো বলতে পারে না। বড়-জোর দাসী-বাঁদী হতে পারে। মেয়ে নয়, তবুও বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিল নবীজান বিবি। আধখানা মসুর ডাল ভাঙতে দিয়েছিল, তিন ঘণ্টা ব্যয় করে, আধসের ডাল নষ্ট করে কোনোরকমে উৎরে গেছে। কিন্তু শ্বাশুড়িকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এই বাঁদির মেয়েটাকে এখনই শিখিয়ে পড়িয়ে না নিলে তাঁর ছেলের ভবিষ্যতে খারাবি আছে।
‘ওগো বউ,’ ধমকের সুরে বউমাকে ডাকেন নবীজান বিবি। চমকে ওঠে মেয়েটা, না জানি আজান্তে কী অপরাধ করে ফেলেছে। ‘অত বেলা পর্যন্ত ঘুমুলি চলবে, কত কাজ আছে না? আমি মরলি তো তুমি সংসারডার হাল ধরবা, তাই না? তো এখন থেকেই কিছু কিছু শিখে ন্যাও!’
‘কই মা...আমি তো সকালেই...’ মিনমিন করে বলার চেষ্টা করছিল বউটা।
নবীজান বিবি ধমকে ওঠেন, ‘থাক, থাক.... অত নিজের সুখ্যেত গেতে হবে না। কডায় ওঠো জানা আছে। আজ চারটেয় উঠবা। ধান সেদ্ধ করতে হবে।’
‘আইছা।’
‘যাও এখন, গোয়ালডা আবার ময়লা হয়ে গেছে। গোবরগুলো তুলে এনে লেদি দাও।’
বউটা কথা না বাড়িয়ে চলে যায় গোয়াল ঘরের দিকে।
মোজাম দেড়ে অবশ্য নবীজান বিবির মতো রূঢ় নয়। বরং মেয়েটার জন্য মায়া হয়। পরঘরি মেয়ে। কোথায় বাপের বাড়ি, সেখান থেকে এখানে এসে রয়েছে, শাড়িটাও ঠিক মতো পরতে শেখেনি, এতবড় সংসারের দায়িত্ব ও মেয়ে নেবে কীভাবে! ক’টা দিন মাত্র বিয়ে হয়েছে, ধীরে-ধীরে সব শিখে নেবে। সবকিছুতেই নবীজানের বাড়াবাড়ি। ভালো করে ধমকে দিতে হবে একদিন।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

শুরু থেকেই পড়ছি। পর্বগুলোর মাঝে সময়ের ব্যবধানটা বেশি। একটানা পড়তে পারলে আরো ভালো লাগতো।

স্বয়ম

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আসলে জীবনে হয়ত একাটাই লিখব। তাই সময়টাও এক্টু লাগুগ। তবে পরের দু পর্ব রেডি আছে। পর পর করব ভাবছি।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।