গ্রামীণ বনে এখনও শিয়ালই রাজা। তবে টলমল করছে তাদের রাজত্ব। স্রেফ বুদ্ধির জোরেই এতবড় প্রাণী আজও টিকে আছে বাংলার মাঠে। কিন্তু আর কদিন? দশ কি বিশ বছর পরে বাংলার মাঠে শিয়াল আর দেখা যাবে কিনা সন্দেহ। তবে শিয়ালের টিকবে কি টকবে না, সে তর্কে এখন যাব না। শিয়ােলের বুদ্ধি নিয়ে পণ্ডিতের পিছে ও হাঁড়িচাছা শিয়াল শিরোনামে দু-দুটো লেখা পোস্ট করেছিলাম সচলায়তনে। আজ অন্যগল্প।
ছোটকালে নানার মুখে শিয়ালদের নানা কীর্তি-কাহিনী শুনেছি। এখন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ও ডিসকভারির কল্যাণে সেসব গল্পের বাস্তব রূপ দেখতে পাই।
নানাদের গ্রামটা এখনও জঙ্গলে ঠাঁসা। ব্রিটিশ আমলে গহীন অরণ্য ছিল। মেছো বাঘ, গেছো বাঘ, ভালুক, ভাম, বন্য বরাহদের আস্তানা ছিল বনজুড়ে। একদিন নানা মাঠে গিয়ে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখেন। দুটো শিয়াল আক্রমণ করেছে একটা ধাড়ি বন্য শুকরকে। শুকরটা তার তিন-চারটে ছানা নিয়ে আস্তানায় শুয়ে ছিল। শিয়ালের টার্গেট ধাড়ি নয়, ছানা। একট শিয়াল সন্তপর্ণে এগিয়ে যায় বন্য বরাহর নাক বরাবর। ধাড়িটা বুঝে ফেলে শিয়ালের মতলব। সে কিছুতেই আস্তানা ছেড়ে নড়ে না। তখন শিয়াল আরও এগিয়ে যায়। একেবারে ধাড়ির কোল থেকে বাচ্চা ছিনিয়ে নেবার উপক্রম! তখন বাধ্য হয়ে ধাড়িটা শিয়ালটাকে তাড়া করে। এই সুযোগ অন্য শিয়ালটা একটু আড়ালে ছিল। সে বেরিয়ে এসেই একটা শুকর ছানা নিয়ে পালায়।
শুকরটা আস্তানা ছেড়ে বেশিদূর যায় না। শিয়ালকে কিছুদূর তাড়িয়ে দিয়ে আসে। ফিরে দেখে আরেকটা শিয়ালা তার ছানা নিয়ে পালাচ্ছে। ‘শুকরের গো’ বলে কথা! প্রাণপণে সে তখন এই শিয়ালটাকে ধাওয়া করে। ততক্ষণে আগে ধাওয়া খাওয়া শিয়ালটা ফিরে এসে আরেকটা ছানা নিয়ে পালায়।
নানার মুখে শুনেছি শিয়ালগুলো এভাবে সবকটা শুকরছানা দুদিনের মধ্যেই গায়েব করে দেয়।
সেদিন কাছাকাছি একটা দৃশ্য দেখে গল্পটা মনে পড়ে গেল। গতমাসে বাড়ি গিয়েছিলাম। ক্যাননের নতুন একটা ক্যামেরা কিনেছি। ট্রাইপডও নিয়ে নিলাম একটা। কম্প্যাক্ট ক্যামেরায় জুম করে ছবি তুলতে গেলে ট্রাইপড ছাড়া চলেই না। এবার শুধু গাছ-গাছালির জন্য বাড়ি যাচ্ছি না। পাখির ছবি তোলারও ইচ্ছা আছে। শিয়ালের ছবি তোলার ইচ্ছেটাও ঘুরপাক খচ্ছিল। বর্ষাকাল হলে তবুও সম্ভাবনা ছিল কিছুটা। কিন্তু বসন্তে অসম্ভব ব্যাপার।এখন শিয়াল কমে গেছে। দেখা পাওয়াটাই দুর্লভ ব্যাপার। যদিও সন্ধেবেলায় মাঝে মাঝে দেখা যায়। কিন্তু দূর থেকে কম আলোতে ছবি নেওয়া একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু এভাবে শিয়ালের ছবি পেয়ে যাব, ভাবিনি!
১ এপ্রিল ২০১৫। বিকেল তখনও হয়নি। আকাশে মেঘের ঘনঘটা কয়েকদিন ধরেই। ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা মাথায় নিয়ে চললাম গাঁয়ের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে। সকালে সেখানে একটা শাহবুলবুলি পাখি দেখে এসেছি। কিন্তু ছবি নিতে পারিনি। আজকাল এই পাখিটা বড় দুর্লভ হয়ে উঠেছে। তাই আবার ওই মাঠে অভিযান। এদিকটাই বড় বড় বাগান আছে, আছে শিমুল গাছ। হরিয়ালেরও বড় আড্ডা নাকি এদিকে। তাই একবারে অনেকগুলো ছবি নেওয়া যাবে। আমার সাথে আছে খালাতো ভাই শাহেদ।
ইছামতীর পাড়ে বড় বাগানটায় এসে শাহেদ চেঁচিয়ে উঠল, ‘ভাইয়া শিয়াল!’
দ্রুত কাঁধ থেকে ট্রাইপড নামাতে নামাতে একটা শিয়ালা ধীরপায়ে জঙ্গলের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ফেলল। আসলে শিয়ালদুটো এসেছিল ছাগল কব্জা করতে। একপাল ছাগল চরছিল বাগানটার পাশেই একটা ঘেসো জমিতে। রাখালটা গিয়েছিল শ্যালো ম্যাশিনে পানি খেতে। এই ফাঁকে শিয়াল দুটো আক্রমণ করে। কিন্তু টের পেয়ে যায় রাখাল। তার হাতে বাঁশের লাঠি। হৈ হৈ করে তেড়ে আসে। কিন্তু শিয়াল দুটোর ভাব দেখে মনে হলো, রাখালকে পরোয়া করছে না। লাঠি হাতে তেড়ে আসতে দেখে শিয়ালদুটো এগোয়। তবে দুটো দুদিকে। একটা গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ঝোপের আড়ালে। কিন্তু আরেকটার কোনও তাড়া আছে বলে মনে হলো না। কিছুটা এগুচ্ছে আর থামছে। ঘুরে দেখে নিচ্ছে ছাগলগুলোর অবস্থা। হঠাৎ আমাদের দেখে দুঃসাহসটা আর দেখাতে পারল না। কারণ, উত্তর দিকে রাখাল, দক্ষিণে আমরা। শিয়াল কিছুতেই ছাগল নিয়ে পালাতে পারত না। কিন্তু শিয়ালটা যদি আমার মনের কথা জানতে পারত, তাহলে দুজন মিলে শুকরছানা ধরার মতো করে একটা ছাগল ঠিকই কব্জা করত। আমি চাচ্ছিলাম শিয়াল ছাগল ধরে নিয়ে যাক। মানুষ বন জঙ্গল উজাড় করে বন্য প্রাণীদের অধিকার ধুলিস্যাৎ করেছে। এখন ওরা যাবে কোথায়, খাবে কী? তাই মানুষের পোষা প্রাণীতে ওদের ভাগ ন্যায্য বলে আমি মনে করি।
কিন্তু শিয়ালটা সে ঝুঁকিতে গেল না। সঙ্গীটা না পালালে কী করত জানি না। সেও ধীরে, খুব ধীরে একরাশ হতাশা নিয়ে বাঁশবনের ভেতরে ভাট-আশশ্যাওড়ার জঙ্গলে হারিয়ে গেল। তবে যাবার আগে আমাকে দিয়ে গেল মহামূল্যবান একটা ছবি।
মন্তব্য
ইয়ে কামারু মইরা গেল... আর শিয়ালেরা রাহাজানি শুরু কইরা দিল?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সোহাগপুরের শিয়াল এখন মজারুতে আছে, নধর দেহখানীতে তেল-চর্বি সমেত মাংস তো কম নহে
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
ছোটবেলায় গ্রামে দেখা যেত তবু এক-দুইটা, রাতে আওয়াজ দিয়ে জানান দিত। এখনতো কেবল গল্প।
স্বয়ম
এখনও পুরেপুরি গল্প হয়নি। বাড়ি গেলে শুনতে পাই। জোসনা রাতে এখনও শিয়ালের সভা বসে। তবে কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে--এটা সত্যি
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
আরও কিছুকাল হয়তো এখানে-সেখানে শিয়াল দেখা যাবে!
হুম, কতদিন নিশ্চিত করে বলা যায় না।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
আহা!! ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল। যদিও আমি অতীব ছোট হওয়ার কারনে শিয়ালের কথা মনে নাই তবুও দাদীর মুখে শুনতাম শিয়ালের গল্প। আজ অনেকদিন পড়ে পড়লাম আবার।
“শিয়াল আর বেজি” গল্প এখনও আমিাদের এলাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্প।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
আহা!! ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল। যদিও আমি অতীব ছোট হওয়ার কারনে শিয়ালের কথা মনে নাই তবুও দাদীর মুখে শুনতাম শিয়ালের গল্প। আজ অনেকদিন পড়ে পড়লাম আবার। - এন জে শাওন
আপনি শিয়াল দেখতে এত কষ্ট করে গ্রামে গেলেন, আর আমি ঢাকাতেই সন্ধ্যা হতেই দলবদ্ধ শিয়ালের কত হুক্কা হুয়া শুনেছি একসময়! ক'দিন আগে শ্রীমঙ্গলে গিয়ে শিয়ালের দলকে সারি দিয়ে কুচকাওয়াজ করে ডাবল মার্চ মেরে যেতে দেখেছি!
****************************************
শিয়ালের ডাক শুনতে গ্রামে যাইনি। আমার বাড়িই তো গ্রামে। তবে শিয়ালের সবচেয়ে বড় আড্ডা দেখেছি, যশোর বিমানবন্দর এলাকায়।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
বেচারা শিয়াল!
পশু-পাখি-গাছপালার প্রতি আপনার মমতা'টা সত্যি ভালো লাগবার মত একটা ব্যাপার
ধন্যবাদ
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
"ধাড়ি" কি শুকরের অন্য নাম ?
এ্যানি মাসুদ
ইতিমধ্যে এক বা একাধিকবার মা হয়েছে এমন যেকোনও চারপেয়ে জন্তুকে বাংলাদেশের বৃহত্তর যশোর-কুষ্টিয় আর গোটা পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা ধাড়ি বলে। গুপি-গাইন বাঘা বাইন সিনেমাার ৪ মিনিট দুই সেকেন্ড ধাড়ি কথাটা ব্যবহার করা হয়েছে। দেখে নিতে পারেন এখানে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির বাংলা ভার্সনেও প্রায়ই দেখি ধাড়ি শব্দটা ব্যবহার করা হচ্ছে।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
চমৎকার তথ্য। নতুন কিছু জেনে ভাল লাগছে। ধন্যবাদ ।
এ্যানি মাসুদ
অফ টপিকঃ রনি ভাই যখন জবাব অংশে লিখি তখন বক্সের উপরে কোন বার দেখা যায় না। যেমন আমি কোন ফরমেটে লিখব অভ্র,ফোনেটিক ইত্যাদি নিয়ে। আমি লেপ্টপের কি পেডে "esc" পরিবর্তন করে বাংলা লিখি। কিন্তু কিছু অক্ষর যেমন "অ'" ঁ" এগুলো দিতে পারিনা। এখন যা করলাম তা হল লেপ্টেপ ডাউনলোডেড বাংলা প্যাড এ লিখে তারপর এখানে paste করলাম। ঐ বা্রটা আসে না কেন? বা কিভাবে আনবো ? একটু হেল্প করতে পারেন।
নতুন মন্তব্য করুন