বাংলার তরু লতা গুল্ম ৪৪ : পটপটি

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল গাফফার রনি [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২৭/০৬/২০১৫ - ৫:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

IMG_3646
বাঙালির শৈশব স্বার্থক করতে নানা রঙের সাজাতে বুনো গুল্ম লতার ভূমিকা ব্যাপক। কিছু কিছু উদ্ভিদ এদিক থেকে একটু বেশিই এগিয়ে। গাঁয়ের ছেলেমেয়েরা খেলনা নিয়ে খেলার সুযোগ কম পায়। কিন্তু প্রকৃতিতে কী খেলনার অভাব! বিশেষ করে ঘর গেরস্থালির খেলায় বুনো গুল্ম লতা, বুনো ফুল ফুলের ভূমিকা বিরাট। রান্নাবাটির খেলায় কাঁঠাল পাতা ছিল আমাদের টাকা-পয়সা। কালকসিন্দার ফল হলো কাঁচকলা। তেলের অভাব মেটাতাম ভেন্নার বীজ বেঁটে। শিয়ালকাঁটার কা- কেটে হতো সবজি, পানসে পিপলের কাণ্ড হলো চিংড়ি মাছ। আরও কত কী যে ছিল, এখন আর অত সবের নাম মনে নেই। তবে কাঁচা ঝাল হিসেবে একটা জিনিসই ব্যবহার করতাম পটপটির ফল। যার ভালো নাম রুয়েলিয়া। রুয়েলিয়ার ফল নিয়ে ছিল বিরাট আগ্রহ। কাঁচা পাকা দুই রকম ফলেই আমাদের আগ্রহ। কাঁচা ফল দিয়ে বানাতাম কাঁচা মরিচ। তবে বলে রাখি, রুয়েলিয়র ফল কিন্তু মোটেও ঝাল নয়। তবু কল্পনার রঙে তাকে ঝাল বানাতে আপত্তি কোথায়!
রুয়েলিয়া বুনো গুল্ম, একেবারে দুষ্প্রাপ্য নয়। কিন্তু তবুও এর ফল সহজে পাওয়া যেত না। কারণ ওগুলো সাবাড় করার জন্য আমাদের মতো ছেলেমেয়ের অভাব ছিল না। ফল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও ফুল নয়। ফুল দেখতে সাদামাটা। অবশ্য সেটা কিশোর চোখে। আজ চোখ বদলেছে। তাই রূপ বদলেছে রুয়েলিয়ার ফুলেরও। রীতিমতো মুগ্ধ করার মতো এক ফুল।

IMG_1841
রুয়েলিয়া বর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। বারোমাসি বলা চলে। বুনো ঝোপের আড়ালে, পরিত্যক্ত ফসল ক্ষেত, বাঁশবাগানে ঝোপের আড়ালে এদের দেখা মেলে। রুয়েলিয়া প্রকৃতির বড্ড লাজুক মেয়ে, তাই যেখানে-সেখানে এদের দেখা মেলে না। একটা জংলা মতো ছায়াঘেরা পরিবেশে এরা ভালো জন্মায়। ছোট্ট গুল্ম। উচ্চতা ১ থেকে ২ ফুট মাত্র। কাণ্ড শক্ত। কার বেড় কয়েক মিলিমিটার মাত্র। কাণ্ড থেকে চার পাঁচটা ডাল বের হয়। কাণ্ড সবুজ রঙের।

DSC00785
রুয়েলিয়ার পাতা সবুজ রঙের। উপবৃত্তাকার। নরম। খুব পাতলা নয়। কিছুটা মখমলের মতো। পাতার উভয় পিঠে ও ডালে সাদা সাদা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শুঁঙ্গ আছে। তবে শুঁঙ্গ বিষাক্ত নয়। পাতার বোঁটা থেকে শীর্ষ ফলক পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২ ইঞ্চি। প্রস্থ ১ ইঞ্চি। কাণ্ড ও ডালের ৩-৪ ইঞ্চি দূরে দূরে একটা করে গিঁঠ থাকে। প্রতিটা গিঁঠ থেকে ৩-৪টা পাতা বের হয়।

IMG_1832
রুয়েলিয়ার ফুল নীলচে সাদা। এক পাঁপড়ির। মাইকের মতো দেখতে। তবে পাঁচটা ফলকে বিভক্ত। তারা আকৃতির। গাছের তুলনায় ফুল বেশ বড়ই বলতে হবে। দু-ইঞ্চি মতো লম্বা হয় ফুল। ফুলের ব্যাস দেড় ইঞ্চি। মঞ্জুরি একপুষ্পক। প্রতিটা পাতার গোড়ায় একটা করে ফুল ফোটে।
আগেই বলেছি রুয়েলিয়ার ফল ছোটদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে। ফল দেখতে অদ্ভুত। আর দশটা ফলের মতো গোলাকার নয়। ঠিক যেন বর্ষার ফলা। ফলায় যেমন চিকন বাট থাকে। আগাটা তার তুলনায় চওড়া। রুয়েলিয়ার ফল সেরকম। ছবি দেখলে বুঝতে পারবেন।

DSC00786
কাঁচাফল সবুজ রংয়ের। বোঁটার গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ০.৭৫ থেকে ১ ইঞ্চি লম্বা হয়। ফল চ্যাপ্টা। চওড়া ২-৩ মিলিমিটার। কিন্তু গোড়ার দিকে ১ মিলিমিটারও নয়। ফল পাকলে ধূসর বাদামী। পাকা ফলও খুব পছন্দের। পাকা ফল পানিতে ফেললে পটপট শব্দ করে ফেটে যায়। তাই এর আরেক নাম পটপটি। আসলে ফল চার চেম্বারে ভাগ করা। পানির সংস্পর্শে এলে চেম্বারগুলো দ্রুত ফোটে আলাদা হয়ে যায়।

IMG_2002
প্রতিটা চেম্বারের ভেতর আট দশটা করে পাতলা বিচি আছে। বিচি অনেকটা মরিচ কিংবা টমেটোর বিচির মতো। ততটাই ছোট এবং পাতলা। বীজ দ্বিবীজপত্রী। বর্ষার শুরুতেই বীজ থেকে চারা গজায়। শেষ দিকে এসে ফুল ফল ধরে।
এদেশের যত্রতত্র দেখা গেলেও, পটপটি কিন্তু এই এদেশের উদ্ভিদ নয়। এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার গায়ানা, পেরু ও কলম্বিয়া। ষোড়শ শতককে স্প্যানিশ মিশনারি ফাদার ফারনান্দোর জাহাজে চেপে এদেশে আসে পটপটি। মোঘল সম্রাটদের বাগানেও এই বুনো উদ্ভিদটি জায়গা করে নেয়।
স্থানীয় নাম : পটপটি
ইংরেজি নাম : Popping pod.
বৈজ্ঞানিক নাম : Ruellia tuberosa.
বাংলার তরু লতা গুল্ম ৪৩ : গোবুরা


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বাহ্, সুন্দর সব ছবি। আর কিছু তথ্যও জানা হল। চলুক

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

পটপটি আগে দেখি নাই। দেখার সুযোগ করে দেবার জন্য ধন্যবাদ রনি ভাই।

একটা জিনিস অবশ্য বুঝলাম না, মিশনারী ফাদাররা এই গাছ/বীজ ভারতবর্ষে নিয়া আসল কেন? এটার কী মশলা বা ভেষজ কোন উপযোগীতা আছে?

---- মনজুর এলাহী ----

তারেক অণু এর ছবি

কত কিছুজে জানছি! কত কিছুই যে জানার আগেই হারিয়ে যাবে-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।