আধাফুঠ উঁচুতে উঠে গেছে যেন মাঠ। চোরকাঁটার সেই গালিচা মাড়িয়ে আমরা ফুটবল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতাম। দলে-মলে যেত চোরকাঁটার বাদামি সৌন্দর্য। চোরকাঁটাও মুখ বুজে এ অন্যায় মেনে নেয় না। প্রতিশোধ নেয় কাঁটার মতো ফল আমাদের পোশাকে বিঁধিয়ে দিয়ে। অস্বস্তি লাগে তাতে। কিছুটা চুলকায়ও। কিন্তু পোশাক থেকে খুঁটে খুঁটে চোরকাঁটা ছাড়ানোর যে মজা, তার কাছে সামান্য অস্বস্তি চুলকানি কিছুই নয়। অনেক সময় ইচ্ছে করেই চোরকাঁটার দঙ্গলে পা ডুবিয়ে পোশাক গেঁথে নিতাম। খুঁটে-বেছে কাঁটা ছাড়াবার ওই মজাটুকুর লোভে। শুধু স্কুলে মাঠেই নয়, বিকেলে নদীর ধারে খেলতে যেতাম। সেখানেও চোরকাঁটার রাজত্ব। তবে আমাদের দাপাটের কাছে হার মেনে কয়েকদিনেই রাজ্য ছেড়ে করুণ পরিণতি বরণ করতে হত চোরকাঁটাদের।
বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় চোরকাঁটা দেখা যায়। শহর-গাঁয়ে সমানভাবে। স্কুল মাঠের পুরোটাই দখল করে নেই জংলি এই ঘাসটা।
তবে সারাবছর ওর দিক ফিরেও তাকায় না কেউ। তবে বিকেলে যে ঘাসের ওপর বসা হয়, তার জন্য ময়লা হাত থেকে রক্ষা পায় পোশাক, সে-ই ঘাসগুলোই চোরকাঁটা গাছের মুল অংশ। কিন্তু বর্ষার আগে ঠিক নিজেকে মেলে ধরতে পারে না চোরকাঁটা। তারপর পুরো বর্ষা ও শরৎকাল জুড়েই ওদের অস্তিত্ব জানান দেয় চোরকাঁটা।
চোরকাঁটা ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। তাই এদের উচ্চতা পরিমাপ করা যায় না ঠিকভাবে। কারণ কাণ্ড থেকে ডালপালা বের হলেই সেটা শুয়ে পড়ে মাটিতে। শাখা-প্রশাখার প্রতিটা গিঁট থেকে শিকড় গজায়। সেসব শিকড় শক্তভাবে গেঁথে যায় মাটিতে। অর্থাৎ জমাট ঘাসের একটা সবুজ গালিচা তৈরি করে চোরকাঁটারা। চোরকাটার কাণ্ড ও ডালপালার মধ্যে পার্থক্য বের করা কঠিন। কাণ্ড ও ডালপালা সাদাটে সবুজ। চ্যাপ্টা আকৃতির। কাণ্ড বা ডালপালার বেড় ১-২ মিলিমিটার মাত্র। কাণ্ড ও শাখা প্রশাখার ভারে আধা ইঞ্চি দূরত্বে একটা করে গিঁট বের হয়। গিঁটের গোড়া থেকে একটা করে বের হয় লম্বা পাতা। কাণ্ডের গায়ে পাতার বোঁটা শাড়ির মতো পেঁচিয়ে থাকে।
পাতা সবুজ রংয়ের। লম্বা। দৈর্ঘ্য ১-৩ ইঞ্চি। প্রস্থ ২ মিলিমিটার। একটা মধ্য-শিরা দৈর্ঘ্য বরাবর পাতাকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। পাতা খুবই পাতলা।
কাণ্ড ও শাখা প্রশাখা রসালো। তবে নরম নয় চিমটে টেনে ছিড়তে শক্তি লাগে।
চোরকাঁটা বলে আমরা যে জিনিসটাকে চিনি, সেগুলো লেগে থাকে একটা লম্বা শীষের গায়ে। এটাই মূলত চোরকাটার পুষ্পমঞ্জুরি। মঞ্জুরি আধা থেকে এক ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। মঞ্জুরি বহুপুষ্পক। প্রতিটা মঞ্জুরির শীর্ষভাগ অনেকগুলো চোরকাঁটা থাকে। চোরকাঁটা মূলত ফল। ধান ও গমের মতো আকার দেখা যায় চোরকাঁটার। তারপর ফলের গায়ে ছোট ছোট সাদা সাদা ফুল বের হয়। ফুল খুবই ক্ষুদ্র। ফুলের আকার আকৃতি পরিমাপ করা কঠিনতম কাজ। ফুলের পরাগায়নের ওপর নির্ভর করে ফল পুষ্ট না অপুষ্ট হবে। ঠিক ধান ও গমের মতো। ফুলের তুলনায় ফল বেশ বড়। লম্বাটে। বাদামি রংয়ের। ফলের আগার দিকে তীক্ষè শুঁঙ্গ থাকে। এ কারণেই ফলটা কাঁটার আকৃতি পায়। ফলের ভেতরে ধানের চালের মতো বিচি থাকে। তবে বিচি চালের থেকে অনেক ছোট চিকন এবং লম্বাটে। বিচি এক বীজপত্রি।
চোরকাঁটা মূলত বর্ষজীবী তৃণ। বর্ষার শুরুতে এদের মঞ্জুরি বড় হতে শুরু করে। শরতের শেষ পর্যন্ত চোরকাঁটার ফুল-ফল বীজের কার্যক্রম চলে।
স্থানীয় নাম : ভাটুই, চোরকাঁটা
ইংরেজি নাম : Lesser spear grass, Mackie's pest, pilipiliula.
বৈজ্ঞানিক নাম : Chrysopogon aciculatus.
আগের পর্ব : বাংলার তরু লতা গুল্ম-৪৫ : কালোকেশি
মন্তব্য
[ খেলা দেখতে দেখতে লিখলেন নাকি? চোরাকাঁটা নিয়ে চোরাপোস্ট! ]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আগে লেখা ছিল, খেলা দেখতে দেখতে পোস্ট করলাম।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
আপনার লেখা পড়তে পড়তেই ছোটবেলার অনেক কথা হুড়মুড় করে ঘিরে ধরল। তবে আমার আর আমার দোস্তদের ক্ষেত্রে ঘটনা ছিল একেবারে উলটো; খেলা শেষে প্যান্ট আর মোজা থেকে চোরকাঁটা তোলা আমারা কখনোই উপভোগ করিনি, বরং শাস্তির মত লাগত।
লিখেছেনঃ
এই কা- কি কাণ্ড?
বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথায় কোথায় হয় এই চোরকাঁটা?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
আসলে অামার অন্যবন্ধুদের ভালো লাগত কিনা জানি না, আমারটা শুধু বললাম।
হ্যাঁ, ওটা ‘কাণ্ড’ বিজয় থেকে কনভার্টের সময় ‘ণ্ড’ উধাও হয়ে গেছে। যেগুলো চোখে পড়েছিল সেগুলো ঠিক করে দিয়েছি।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ছবিগুলো দেখে মনে পরে গেল সেই বিখ্যাত গানটি-
"যদি হই চোর কাঁটা ওই শাড়ির ভাঁজে........."
গৌতম হালদার
দুষ্টু না হলে এই কথা কি কেউ মুখে আনে.....
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
আমাদের দিকে হুকুনে বলে
মানকচু
আমাদেরো।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
যাক আরেকটা নাম জানা হলো।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
হা হা হা। চোরকাঁটা! নাও, এখন বাছো বসে অথবা দাঁড়িয়ে![img]DSCN0913 by Kabir Ahmed 26, on Flickr[/img]
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ধন্যবাদ কবীর ভাই।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
পড়েছি আগেই লেখাটা, মন্তব্য করা হয়ে ওঠেনি। চোরকাঁটাকে আমাদের এলাকায় বলে ‘ওকড়া’। খুব জব্দ হতাম ছোটবেলায়, স্কুলে যাবার পথে কাপড়ে গেঁথে গেলে তো আর কথাই থা্কতো না। চোরকাঁটার ডগা দিয়ে প্রদীপের সলতে বানানো যায়!
দেবদ্যুতি
একটা ভুল হয়ে গেছে, চোরকাঁটা দিয়ে নয়-কাশফুল দিয়ে সলতে বানানো যায়। মানে আমি তো যার কাছে শুনেছি, ভেবেছি চোরকাঁটার কথাই বলেছে কিন্তু আজ আবার শুনতে গিয়ে শুনি-কাশফুল! ক্ষমা...
দেবদ্যুতি
ক্ষমার কথা কী বলছেন। নতুন একটা নাম জানলাম আপনার কল্যাণে।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
প্রেম কাটা নামে চিনি। কলেজে কারো কাপড়ে লেগেছে দেখলে তাকে সারা দিন ক্ষেপানো হতো-"কি কোন চিপায় চাপায় গেসিলা,হুম ? প্রেম কাটা লাগাইলা ।।হুম।।।।
এ্যানি মাসুদ
প্রেম কাঁটা, রোমান্টিক নাম!
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
নতুন মন্তব্য করুন