পাট দেখেননি কিংবা পাটগাছ চেনেন না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। পাটের ফল দেখেছেন, এমন মানুষের সংখ্যা শতকরা ১০ ভাগেরও কম। আর পাটের ফুল দেখেছেন কিনা, এ প্রশ্ন করলে সংখ্যা নির্ঘাত আরও কমবে।
এবার ভাগ্যক্রমে পাটের ফুল ও ফল পেয়ে গেলাম। বহুদিন এ দুটো জিনিস দেখা হয় না। আসলে মৌসুমে যে পাটের চাষ করা হয়, সেই পাট অনেক বড় হয়্। ৮-১০ ফুটের মতো। কিন্তু আঁশের মৌসুমে পাটের ফুল-ফল হয় না। কেন হয় না তা জানা নেই। তাহলে পাটের বীজ আসে কোথা থেকে?
বীজ পাটের জন্য মৌসুম শেষে আবার পাটের চাষ করা হয়। সেই পাট বেশি বড় হয় না। ২-৩ ফুট মাত্র উচ্চতা। পাতাগুলোও অনেক ছোট ছোট হয়। শরৎকালে বীজের জন্য পাটের চাষ করতে দেখতাম অনেককে। এখন এটা একেবারেই কমে গেছে।
পুজোর ছুটি ছিল তিনদিন। ভাবলাম ঢাকায় শহরে আটকে না থেকে গ্রাম থেকে ঘুরে আসি। পাখিদের ছবি-টবি যদি তোলা যায়। কিন্তু সে গুড়ে বালি। কোনও এক রহস্যময় কারণে পাখিরা একদম গা ঢাকা দিয়েছে। ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। মন ভালো করে দিল কলাইয়েরে ফুল। খেয়ালই ছিল না, হেমন্ত এসে গেছে। কলাই ফুলের সৌন্দর্য্ ঝটকায় ফিরিয়ে নিয়ে গেল স্মৃতমেদুর ছেলেবেলিায়। দুরন্ত শৈশব কানে কানে আউড়ে গেল সুফিয়া কামালের নস্টালজিক কবিতা—
সকাল বেলায় শিশির ভেজা
ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে
হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়
শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে।
আরও এল সাথে সাথে
নুতন গাছের খেজুর রসে
লোভ দেখিয়ে মিষ্টি পিঠা
মিষ্টি রোদে খেতে বসে।
হেমন্ত তার শিশির ভেজা
আঁচল তলে শিউলি বোঁটায়
চুপে চুপে রং মাখাল
আকাশ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায়।
হলুদ রঙা কলাই ফুল মাঠ আলো করে রেখেছে। কিন্তু তার সৌন্দর্য্ও যেন ম্লান করে দিয়েছে আরেকটি ফুল। কলাই খেতের এখানে সেখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট ছোট্ট কিছু পাটগাছ। তার গায়ে সোনালী হলুদ ফুলের দ্যুতি।
বুকের ভেতরটা ছলকে উঠল। কতদিন দেখিনি এই ফুল। বড্ড আফসোস ছিল, এর ছবি আমার কাছে নেই বলে। হাতে ক্যামেরা, আমাকে আর ঠেকায় কে?
নানা ভঙ্গিমায় ফুলের ছবি নেওযার পর আফসোসটা আরও বাড়ল। পাটের ফলের ছবি নেই যে! তখন মনে হলো, ফুল যখন আছে, খুঁজে-পেতে ফলও পাওয়া যেতে পারে।
হলোও ঠিক তাই। ফলধারী একটা গাছও পেয়ে গেলাম। পুজোর ছুটিটা আর মাটি হলো না।
মন্তব্য
প্রথমে ভাবছিলাম, এখন আবার পাট এল কোথা থেকে? পাটের সিজন তো গত! কিন্তু বীজ পাটের জন্য আবার পাটচাষ হয়, এই বিষয়টাই জানা ছিল না।
পোস্টটি আপনার অন্য পোস্টের মত নয়, আকারে ছোট হয়ে গেছে, গল্প বা স্মৃতিচারনও অনুপস্থিত, তবে হেমন্তের শুরুতে আবাহনী কবিতাটি হেমন্তের হাওয়া বুলিয়ে দিয়ে গেল যেন। পাটের ফুল ও ফল এবং কলাই ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, রনি ভাই!
।।।।।।।।।
অনিত্র
গাছপালার কথা যত ভালো লাগে, আপনার প্যাশন দেখতে তার চেয়েও ভালো লাগে। চালিয়ে যান।
আঁশের মৌসুমে পাটের ফুল বা ফল হয় না, এ কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করি। আঁশের জন্য পাটগাছ কেটে ফেলা হয় একটু তাড়াতাড়ি কিন্তু সেই গাছকেই যদি আরও কিছুদিন রেখে দেয়া হয়, হলদে রঙের ফুল আসে গাছে আর সেই সাথে ছোট গোল গোল ফল। তবে তাতে বোধহয় সোনালি আঁশের কদর কমে। খুব কম খেতেই অতটা সময় রেখে দেয়া হয় পাট। পরে যে পাট চাষ করা হয় তাকে আমাদের অঞ্চলে বলে ‘মারা শাক’। আঁশের ব্যাপারটা এখানে নেই বলেই হয়তো ফুল ও ফলের দেখা মেলে সহজে। তবে এমন লম্বা ফল আমি দেখিনি, চোখ এড়িয়ে গেছে বোধহয়।
পোস্টটা ছোট আর দারুণ।
দারুন...
স্বয়ম
নতুন মন্তব্য করুন