সর্বভুকের কবলে!

কানা বাবা এর ছবি
লিখেছেন কানা বাবা [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০৯/০৪/২০১৩ - ৭:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.

১৯৭১এ আমার দাদার বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো, আমার নানা বাড়ি লুট হয়েছিলো, আমার বাবাকে রাজাকাররা ধরে পাকিস্তানি আর্মির হাতে তুলে দিয়েছিলো, বাবা প্রায় ৬ মাস কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে (চট্টগ্রাম সেন্ট্রাল জেলে) বন্দি ছিলো - কি পরিমাণ টর্চার করা হয়েছিলো সেই ডিটেইলসে নাইবা গেলাম। তাই শাহবাগ যখন শুরু হলো তখন সঙ্গত কারণেই তাতে সমর্থন দিয়েছি। তারও আগে থেকে ব্লগস্ফেয়ার আর ফেসবুকেও সক্রিয় ছিলাম।

অথচ কাঠমোল্লারা যারা কিনা আমাদের ধর্মের প্রতিনিধি, তারাই আমাদের প্রাণের আকুতি না বুঝে ধর্মানুভুতির নামে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলো। গত সপ্তাহে আওয়ামি 'মুসলিম' লীগও ধর্ম ভিত্তিক ভোটের রাজনীতির কারণে ৪ জন ব্লগারকে ধরে নিয়ে গেলো! আওয়ামি লীগ ধরেই নিছে যে আমাদের যাওয়ার জায়গা নাই, তাই এবার অন্য ব্লকে ভোট ধরার ধান্দায় আছে। মধ্যযুগীও মোল্লাদের আবদার পূরণ করতে গিয়ে আমাদের কোরবানি দিয়ে দিলো। এখন যদি রাজনীতি এবং ধর্মের মত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আমার বিতৃষ্ণা আসে তাহলে কি আমাকে খুব বেশি দোষ দেওয়া যাবে?

২.

বাংলাদেশের রাজনীতি করাপ্টেড তা তো জানাই, সেটা আর আমার অনুভূতিকে নাড়া দেয় না। কিন্তু যে ধর্ম মেনে নিয়ে বড় হয়েছি তার প্রতিনিধিরা যখন আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়ায়, তখন খুবই অসহায় লাগে। সর্বগ্রাসী এক নীতি যা কিনা মানুষের আর সব আইডেন্টিটিকে (যেমনঃ জাতীয়তাবাদ, সাংস্কৃতিক পরিচয়) বিলীন করে দেয় এবং ও সর্ব-বিদ্বেষী নীতি যা কিনা অন্য ধর্মের মানুষকে নূন্যতম শ্রদ্ধা দেখায় না (মনে করে বিধর্মিরা হলো গেট-লক বাসের প্যাসেঞ্জার যেই বাসের গন্তব্য ডাইরেক্ট জাহান্নাম!) - এমন এক চরম ধর্মীও দর্শন কাঠমোল্লারা (সাথে কিছু শিক্ষিত/অর্ধশিক্ষিত কাঠ-বলদও আছে) চালু করেছে যে তার ফলাফল সারা পৃথিবীর মডারেট মুসলিমরা ভোগ করছে, এবং ভবিষ্যতে আরও করবে।

অলরেডি, মুসলিমরা পৃথিবীর অন্য ধর্মাবলম্বদিরে থেকে দূরে সরে গেছে, ভবিষ্যতে আরও যাবে। আর ২০০ বছর যাক, তেলের টাকা ফুরাক, আর সাথে বিশ্বব্যাপী মানুষের শিক্ষার হারটা আরেকটু বাড়ুক, তখন মজাটা বুঝা যাবে। তখন হয় মুসলিমদের ঘাড়ের ত্যাড়া রগটা এ্যারোগেন্স, ইগো আর বিগ মাউথ বাদ দিয়ে সোজা হয়ে মিউ-মিউ করে অন্যদের সাথে মিশতে হবে, অথবা সারা বিশ্বের অন্য সব মানুষরা আমাদের ধরে বড়সড় কোন এক চিড়িয়াখানায় কোয়ারেন্টাইন করে রেখে দেবে। সেই ভাগাড় হবে খুব সম্ভবত আরবের মরুভূমি, পাকিস্তান বা আফাগনিস্তান। বাংলাদেশও হতে পারে; দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা মনে হয় সেদিকেই যাচ্ছি।

৩.

আমি মনে করি আমাদের ধর্ম প্রচারের মূল দর্শনের গোড়াতেই বড় ধরনের গলদ আছে, আর তাই এত ঝামেলা, এত বিদ্বেষ, এত অসহিষ্ণুতা! আমি মনে করি ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে সমগ্র Islamic establishment এমন সব Buzzword এর আশ্রয় নিয়েছে যা মুসলিমদেরকে অনেক বেশি Egoistic করে তুলেছে এবং অন্যদের থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। একটু উদাহরণ দিয়ে বলি। যেমনঃ

১। আমাদের বার বার বলা হয় যে আমাদের ধর্ম হলো একমাত্র সত্য ধর্ম, বাকি সব হয় ভুল বা ইসলাম আসার পরে ইনভ্যালিড (আহলে কিতাব ধর্মগুলো)। আর আমাদের ধর্মের চোখে নন-বিবলিক্যাল ধর্মের অবস্থান তো আরও নাজুক। সাথে এটাও হাইলাইট করা হয় যে অন্য ধর্মের মানুষ যেমনই হউক না কেন, সে নিশ্চিত নরকগামী! নরকগামী একজন মানুষকে ঘৃণা করা যায় বা করুণা করা যায়, কিন্তু সমান বলে বুকে টেনে যায় না!

২। আমাদের শেখানো হয় যে আমাদের প্রফেট সর্বশ্রেষ্ঠ প্রফেট এবং মানুষ হিসাবেও তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ - তাকে সৃষ্টি না করলে নাকি আল্লাহ দুনিয়াই সৃষ্টি করত না। মানে হলো বাকি যা আছে - ঈসা, মুসা, গৌতম বুদ্ধ সবই হইলো দুই নম্বর। সর্বশ্রেষ্ঠ প্রফেটের অনুসারী হিসাবে আমরা তো একটু অহম দেখাতেই পারি, তাইনা? বা প্রফেটকে নিয়ে কেউ কিছু বললে তার কল্লা কাটতেই পারি, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের ভক্ত বলে কথা!

৩। আরও একটা পয়েন্ট হলো আমাদের ধর্মে নাকি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্হার সব দেওয়া আছে। এই 'পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্হা'র ধারনাটি বেশ ভয়াবহ, এই দর্শন সর্বভুক হয়েই দেখা দিয়েছে। যেহেতু পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্হা অলরেডি দেওয়া হয়েছে, তাই আর কোন কিছুর দরকার নেই - গণতন্ত্রের নামে বলা যাবে না জনগণই সব ক্ষমতার উৎস, বাঙালি জাতীয়তার নামে পহেলা বৈশাখে হিন্দুয়ানী সাজে বর্ষবরণ করা যাবে না, অথবা পাশে যদি নাস্তিক থাকে তবে তার সাথে এক কাতারে দাড়িয়ে ন্যায়বিচারও চাওয়া যাবে না! সুতরাং, আমাদের ধর্ম দর্শন সর্বভুক হয়েই দেখা দিয়েছে।

(সাইড নোটঃ কোন স্টেশনারি দর্শনই পরিপূর্ণ জীবন হতে পারে না, সময়ের সাথে আপডেট/আপগ্রেড হতেই হবে। ধর্মের সীমাবদ্ধতা মনে হয় এখানেই -ঐশ্বরিক মেনে নিয়ে সময়কে বেঁধে রাখার চেষ্টা করা হয়।)

৪.

আমি ঠিক জানি না যে এ ধরনের 'Sweeping' মতবাদ কি আমাদের ধর্মের নাকি কাঠমোল্লাদের যারা বছরের পর বছর নিজেদের Ego fulfill-এর জন্য এসব দর্শন Highlight করেছে। যে কারণেই হোক না কেন সত্য হলো আমরা একধরনের সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগা শুরু করি (সেটা এই ধরনের Preaching-এর কারণে)। উদারমনা বা চিন্তাশীল মানুষেরা এসব ভাবনাগুলোকে প্রশ্রয় দেয় না বটে তবে বেশিরভাগ ম্যাংগো পাবলিক এড়াতে পারে না। তাদের কেবলই মনে হতে থাকে, আরে আমার প্রফেটইতো সর্বশ্রেষ্ঠ, বা আমার ধর্মইতো একমাত্র সত্য ধর্ম, তাহলে আমরা অনুসারীরাও সর্বশ্রেষ্ঠ; বিধর্মীরা যারা কিনা নিশ্চিত নরকগামী তারা কেন কথা বলতে আসে, কেনইবা আমরা পাপীদের কথা শুনবো! সুতরাং, আমরা মুসলিমরা আরও বেশি জন-বিচ্ছিন্ন হচ্ছি দিনকে দিন এবং ধর্ম দিয়েই মানব চরিতের সব সমস্যা ব্যাখ্যা করার ও সমাধান করার চেষ্টা করছি!

৫.

৫০০ বছর আগে খৃস্টানরাও আমাদের মত ছিলো। তারাও বাইবেলে সব সমস্যার সমাধান খুঁজত। চার্চ ও ধর্মযাজকরা সব কিছুতেই নাক গলাত। ধর্মযাজকরা গ্যালিলিওকে পুড়িয়ে মেরেছিল কেবল বাইবেলের সাথে তার মতবাদ মেলেনি বলে! আজকে তাদের অস্তিত্ব খুঁজেও পাওয়া যায় না কেননা এরা ধর্মের নামে সর্বভুক হয়ে মানুষের সব অনুভূতিকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো।

আমি মনে করি সরকারি দমন পীড়নে বা কাঠমোল্লাদের হুংকারে শাহবাগ মরবে না। এটা এমন এক স্বপ্নের নাম যা কিনা মানুষ সভ্যতার শুরু থেকে দেখে আসছে। আজকে ঝিমিয়ে পরতে পারে, আবার কালকে জাগবে, না হলে ১০০ বছর পরে বা ৫০০ বছর পরে। তবে Long runএ সফল হবেই, কেননা ইতিহাস বলে যে মানব সমাজ অস্বাভাবিকতাকে প্রশ্রয় দেয় না, কোন সর্বভুক-সর্বগ্রাসী নীতিমালাকে গ্রহণ করে না, কোন একক মতবাদের বাড়াবাড়ি মেনে নেয় না, Ultimately একটা Equilibriumএ এসে থিতু হয়। যারা এটা বুঝে না তারাই হারিয়ে যাবে - ঐসব খৃস্টান ধর্মযাজকদের মত। এই অবস্থা এখন আমাদের (মুসলিমদের), সুতরাং আমাদের ধর্মের ভবিষ্যতও এমনই হবে।

এর হাত থেকে নিস্তার কি? এক কথায় বললে বলতে হয় যে আমাদের Egoটা একটু কমাতে হবে, একটু নত হতে শিখতে হবে। সব কিছুতেই নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ না ভেবে কেবল ভাল ভাবলেই চলবে। কিন্তু বলা যত সহজ, করা ততই কঠিন, কেননা এভাবেই আমাদের শেখানো হয়েছে। তাই বলতে হয় যে আমরা এক অদ্ভুত সর্বভুকের কবলে যা থেকে নিস্তার পাওয়া বেশ কঠিন। Bottom line হলো 'একমাত্র', 'সর্বশ্রেষ্ঠ', 'পুর্ণাঁঙ্গ' - এ জাতীয় বিশেষণ বাদ না দিতে পারলে মুক্তি মিলবে না।


মন্তব্য

শুভায়ন এর ছবি

ছবিদুটি সুন্দর চলুক

কানা বাবা এর ছবি

একমাত্র, সর্বশ্রেষ্ঠ, পুর্ণাঁঙ্গ - এ জাতীয় বিশেষণ বাদ না দিতে পারলে মুক্তি মিলবে না।

/----------------------------------------------------
ওইখানে আমিও আছি, যেইখানে সূর্য উদয়
প্রিয়দেশ, পাল্টে দেবো, তুমি আর আমি বোধহয়
কমরেড, তৈরি থেকো,গায়ে মাখো আলতা বরণ
আমি তুমি, আমি তুমি, এভাবেই লক্ষ চরণ।।

Emran   এর ছবি

এই জন্যই আমাদের স্কুলের কারিকুলামে যে বিষয়টা বাধ্যতামূলক করা উচিৎ, সেইটা হল বিবর্তন এবং ডারউইনের থিয়োরি। যখন মুসলমানেরা বুঝতে পারবে যে বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ আর কেঁচোর মধ্যে আসলে কোন পার্থক্য নাই, এবং "আশরাফুল মাখলুকাত" একটা useless, ভুয়া concept, তখন তাদের ego এমনিতেই মাটিতে নেমে আসবে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষা দেওয়ার আগে এই শিক্ষা দেওয়া দরকার। বাংলাদেশের মান অনুযায়ী সেরা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি শিক্ষা দেয়া হয় বুয়েট এবং মেডিকেল কলেজগুলিতে; অথচ ছাগুর সংখ্যা কিন্তু সেসব জায়গায় কম না।

শিশিরকণা এর ছবি

আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি দুই ক্ষেত্রেই দায়ী। আমরা বিজ্ঞানও পড়ি ধর্মের মত করে। বিজ্ঞান বইয়ে লেখা আছে, সুতরাং বিশ্বাস করতে হবে, এইরকমভাবে পড়লে বিজ্ঞান পড়ার কোন মানে নাই। আমরা প্রশ্ন করি না, প্রশ্ন করাকে ভীষণভাবে নিরুৎসাহিত করা হয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়, মূলত শিক্ষকেরা কৌতুহলী প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পেরে অপদস্থ হবেন এই ভয় থেকেই কি বিজ্ঞান কি ধর্ম সব ক্ষেত্রেই শিশুদের প্রশ্ন করলে উলটা ঝাড়ি জোটে কপালে। অথচ বিজ্ঞানকে প্রশ্ন-পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত সত্য বলেই শিখতে হয়, ধর্মগ্রন্থের মত "Because I said so.." এই যুক্তিতে মেনে নিতে হয় না। যুক্তিহীন অন্ধ ধর্মবিশ্বাস তারপরেও কেউ আঁকড়ে থাকতে পারে, কিন্তু দুটোর মাঝে পার্থক্যটা কোথায় সেটা পরিস্কার ভাবে সকলের জানা থাকা দরকার।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভাল্লাগলো। হাসি

সৌরভ কবীর এর ছবি

চলুক চলুক

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

হিজবিজবিজ এর ছবি

ধর্মযাজকরা গ্যালিলিওকে পুড়িয়ে মারেনি। আপনি বোধহয় ব্রুনো বলতে চেয়েছিলেন।

লেখা ভালো লেগেছে।

তারানা_শব্দ এর ছবি

অলরেডি, মুসলিমরা পৃথিবীর অন্য ধর্মাবলম্বদিরে থেকে দূরে সরে গেছে, ভবিষ্যতে আরও যাবে। আর ২০০ বছর যাক, তেলের

টাকা ফুরাক, আর সাথে বিশ্বব্যাপী মানুষের শিক্ষার হারটা আরেকটু বাড়ুক, তখন মজাটা বুঝা যাবে। তখন হয় মুসলিমদের ঘাড়ের ত্যাড়া রগটা এ্যারোগেন্স, ইগো আর বিগ মাউথ বাদ দিয়ে সোজা হয়ে মিউ-মিউ করে অন্যদের সাথে মিশতে হবে, অথবা সারা বিশ্বের অন্য সব মানুষরা আমাদের ধরে বড়সড় কোন এক চিড়িয়াখানায় কোয়ারেন্টাইন করে রেখে দেবে। সেই ভাগাড় হবে খুব সম্ভবত আরবের মরুভূমি, পাকিস্তান বা আফাগনিস্তান। বাংলাদেশও হতে পারে; দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা মনে হয় সেদিকেই যাচ্ছি।

চলুক

লেখাটা খুব ভাল লাগলো।

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

মুজিবর রহমান এর ছবি

মামা দুইটা জিনিস তো পরিষ্কার হইলো না। (১) মানুষ তো যৌক্তিক প্রাণী। সে প্রত্যেকদিন সকালে যে জামাটা পরে, যে আপেলটা খায়, তার পেছনে চেতন বা অবচেতন মনের একটা যুক্তি থাকে। অন্য আরেকটা মানুষের কাছে সেটা অযৌক্তিক হতে পারে তবে প্রথমজনের সেটাই পছন্দ। প্রত্যেক ধর্ম বিশ্বাসী যা বিশ্বাস করে, সেটা তার কাছে পছন্দ/ গ্রহনযোগ্য হয় বলেই তো বেছে নেয়। ফলে তার কাছে তো তার ধর্মই সেরা হবে। এটা আর নতুন কী? (২) মানুষ তো বুদ্ধিমান প্রাণী। বুদ্ধি হলো অস্ত্বিত্ব রক্ষার চেতনা। মানুষের শখ/প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে অন্যান্য সব প্রাণীর অস্ত্বিত্বই যেখানে আজ হুমকির সম্মুখীন (এখন মানুষেরই একটা অংশ আবার প্রানীদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছে) সেখানে কিভাবে বুঝব যে, মানুষ আর কেঁচো সভ্যতা/পৃথিবীর জন্য একই? মানুষের "গ্রেট পাওয়ার" আছে, যেটা একই সাথে "গ্রেট রেসপনসিবিলিটি" নিয়ে আসছে।

সত্যপীর এর ছবি

প্রত্যেক ধর্ম বিশ্বাসী যা বিশ্বাস করে, সেটা তার কাছে পছন্দ/ গ্রহনযোগ্য হয় বলেই তো বেছে নেয়।

মানুষ ধর্ম বেছে নেয়না তাকে সে তার পিতার ধর্ম পায়। বাছাবাছির কিছু নাই।

..................................................................
#Banshibir.

তারিক  এর ছবি

"মানুষ ধর্ম বেছে নেয়না তাকে সে তার পিতার ধর্ম পায় (চাপিয়ে দেয়)। বাছাবাছির কিছু নাই।" - একদম ঠিক!

কানা বাবা এর ছবি

ভাই, আপনার মন্তব্য ঠিক মত বুঝতে পারছি না বলে কি বলবো তা ভেবে পাচ্ছি না

/----------------------------------------------------
ওইখানে আমিও আছি, যেইখানে সূর্য উদয়
প্রিয়দেশ, পাল্টে দেবো, তুমি আর আমি বোধহয়
কমরেড, তৈরি থেকো,গায়ে মাখো আলতা বরণ
আমি তুমি, আমি তুমি, এভাবেই লক্ষ চরণ।।

দ্রোহী এর ছবি

১.

৫০০ বছর আগে খৃস্টানরাও আমাদের মত ছিলো। তারাও বাইবেলে সব সমস্যার সমাধান খুঁজত। চার্চ ও ধর্মযাজকরা সব কিছুতেই নাক গলাত। ধর্মযাজকরা গ্যালিলিওকে পুড়িয়ে মেরেছিল কেবল বাইবেলের সাথে তার মতবাদ মেলেনি বলে! আজকে তাদের অস্তিত্ব খুঁজেও পাওয়া যায় না কেননা এরা ধর্মের নামে সর্বভুক হয়ে মানুষের সব অনুভূতিকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো।

গ্যালিলিও না, পুড়িয়ে মেরেছিল জিওর্দানো ব্রুনোকে। কোপার্নিকাসকে পোড়ানোর আগেই বেচারার ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে গেছিল। আর গ্যালিলিও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের মতো তওবা করে সে যাত্রায় জীবন রক্ষা করেছিল।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখাটিকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে disregard করলাম। সম্মানের সাথে আপনার কিছু তথ্যগত ভুল কি ধরিয়ে দিতে পারি?

১.আপনার ব্যবহার করা 'তাকে সৃষ্টি না করলে নাকি আল্লাহ দুনিয়াই সৃষ্টি করত না' একটা জাল (fabricated) হাদীস। ইসলামধর্মের কোথাও এই কথাটা বলা হয় নাই।
http://blog.omaralzabir.com/2012/12/03/fabricated-hadeet/

২. সূরা আল ইমরান এর ৮৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ

"Say, 'We have believed in Allah and in what was revealed to us and what was revealed to Abraham, Ishmael, Isaac, Jacob, and the Descendants,and in what was given to Moses and Jesus and to the prophets from their Lord. We make no distinction between any of them, and we
are Muslims [submitting] to Him."

'বলুন, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের উপর, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাঁদের সন্তানবর্গের উপর আর যা কিছু পেয়েছেন মূসা ও ঈসা এবং অন্যান্য নবী রসূলগণ তাঁদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে।
আমরা তাঁদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না। আর আমরা তাঁরই অনুগত।'

সতরাং, ঈসা, মুসা দুই নম্বর কথাটায় ভুল আছে।

৩. গৌতম বুদ্ধ নিজেকে কখনো একজন Prophet হিসেবে দাবী করেননি।

''Buddhism started with the Buddha.The word ‘Buddha’ is a title, which means ‘one who is awake’— in the sense of having ‘woken up to reality’. The Buddha was born as Siddhartha Gautama in Nepal
around 2,500 years ago. He did not claim to be a god or a prophet. He was a human being who became Enlightened, understanding life in the deepest way possible.

http://thebuddhistcentre.com/text/who-was-buddha

৪. আর আপনি যদি বোঝাতে চান যে ইসলাম মুসলিমদের অহমবোধ এর শিক্ষা দেয় তাহলে তা ভুল ধারনা। কারণঃ

"And the servants of (Allah) Most Gracious are those who walk on the earth in humility, and when the ignorant address them, they say, "Peace!"

"আর-রহমান এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে,তখন তারা বলে, সালাম।"
(সূরা আল ফুরকান ২৫:৬৩)

ভাইয়া আশা করি ভুল তথ্য প্রচার করবেন না। ধন্যবাদ

Amakakeru Ryu no Hirameki

কানা বাবা এর ছবি

আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আমি খুব একটা ভুল কিছু বলিনি বলেই আমি মনে করি। বরং আপনি হয়তো আমার লেখার মূল ভাবটি ধরতে পারেন নি বলেই আমি মনে করি। আমার লেখা ধর্মতত্ব নিয়ে নয়, ধর্মের সামাজিক ইমপ্যাক্ট নিয়ে। ওভাবে চিন্তা করুন দেখবেন যে আমার কথাগুলো মেক সেন্স করে। আমি তথ্যগুলো বলেছি তার সবই কমন ও প্রচলিত সোসিয়াল কনসেপ্ট - মসজিদে হুজুররা এভাবেই আমাদের বলেছে, ধর্ম ক্লাসে স্যাররা এরকম ধরনাই দিয়েছে, পাবলিকও এভাবেই দেখেছে। আর তাই আপনি খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন যে নাকউঁচা ভাবটা আমাদের মাঝে কতটা প্রবল।

/----------------------------------------------------
ওইখানে আমিও আছি, যেইখানে সূর্য উদয়
প্রিয়দেশ, পাল্টে দেবো, তুমি আর আমি বোধহয়
কমরেড, তৈরি থেকো,গায়ে মাখো আলতা বরণ
আমি তুমি, আমি তুমি, এভাবেই লক্ষ চরণ।।

শিশিরকণা এর ছবি

ধর্মগ্রন্থে যা বলে, আমাদের হুজুররা কি তাই বলে নাকি? যেইটা বললে মানুষের ধর্মানূভুতি এবং অন্যান্য অনুভূতিতে সুড়সুড়ি দেয়া যাবে সেটাই তারা ধর্মের নামে চালিয়ে দেয়।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

স্যাম এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।