একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী: উদ্দেশ্য এবং বিধেয়

আসাদুজ্জামান রুমন এর ছবি
লিখেছেন আসাদুজ্জামান রুমন (তারিখ: শনি, ১৫/১২/২০০৭ - ১১:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তারা চলে রাতের আঁধারে। খাকীপোষাকি ঊর্দূ উচ্চারণকারী সেনাদলের সাথে 'বাঙালী নিধন মিশন'-এ যায় তারা। সামরিক জীপের শক্তিশালী হেডলাইটের আলোর পিছনে থেকে চিনিয়ে দেয় তারা মুক্তিকামী বাঙালী দামালকে। মেজর সাহাব, কর্ণেল সাহাব আর লেফটেনেন্ট সাহাবদের মনোরঞ্জনে যোগান দেয় বাঙালী মা-বোনদের। মোহাম্মদপুরের অবাঙালী বাসিন্দাদের হাত তালি দিয়ে অনুপ্রাণিত করে নিজেরই প্রতিবেশী, বন্ধুর সর্বস্ব লুণ্ঠনে। কুরবানীর পশুর মতো জবাই করে জাতির বেসামরিক শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। নতুন দেশের সূচনা লগ্নে জনরোষ থেকে বাঁচতে নিজেকে পুলিশে সোপর্দ করে কিংবা পালিয়ে যায় দূরে। ফিরে আসে অন্য ফিকিরে, অন্য সময়, অন্য কারো বদাণ্যতায়। একে একে ভেতরে পশুর হিংস্রতা লালনকারী সবাই এক পতাকা তলে শামিল হয়, শুরু হয় ইসলামের নামে রাজনৈতিক মোর্চার পথচলা। ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদদের কাঁধে চেপে তারা ক্ষমটার সিটাডেলে যায়। নিজের দারা-পুত্র-পরিবার দ্বারা শাখা-প্রশাখা ব্যাপ্তি করে রাস্ট্রের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনে। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মহড়া শুরু করে তারা। একাত্তরের জনমানুষের মুক্তির সংগ্রামকে আখ্যায়িত করে সিভিল ওয়্যার বলে। এখানেই থেমে থাকেনা তারা, ক্রমে তাদের অশুভ-নোংরা হাত ছুঁতে চেষ্টা করে জাতির শ্রেষ্ঠ অধ্যায়ের রূপকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান। তারা, দেশদ্রোহী, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী, ঘৃণিত রাজাকার, আলবদর, আলশামস, জামাত-এর সক্রিয়,নিষ্ক্রি য় অনুসারী এবং সহমত পোষণকারীরা। তারা একটা স্বাধীন দেশের বুকে দাঁড়িয়ে সে দেশেরই বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেয়। তারা জানে, সেদিন সেই একাত্তরে যেমন তারা পার পেয়েগিয়েছিলো, এবারো পেয়ে যাবে। অনেক বড় অপরাধ করেও যেমন দালালদের সহযোগিতায় দেশের রাস্ট্রক্ষমতায় বসতে পেরেছিলো, আবারো পারবে। তাদের কিছুই হবে না, কেউ তাদের রুখতে পারবে না, তারা বাংলাদেশের প্রতিটি বর্গইঞ্চি মাটি চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে যেমনটা খেয়েছিলো চৌদ্দশ বছর আগে আবু লাহাবের স্ত্রী নবী (সাঃ) এর এক সাহাবীর কলিজা!

ভয়েস অব আমেরিকার আয়োজনে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কলইন প্রোগ্রামটি শুনুন।
সরকার ইচ্ছে করলেই যে কাজটি করতে পারে, কেনো সে কাজটি সরকার করছে না? কে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামনে যার কাছে সাড়ে সাত কোটি প্রাণের দাবী মুখ থুবরে পড়ে যাচ্ছে অপমানিত হয়ে!


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

রাষ্ট্র এখন যে অবস্থানে দাড়িয়ে সেখান থেকে স্বেচ্ছায় তারা কিছু করা দূরে থাক খুনীদের বরং নিরাপত্তা দেবে। রাষ্ট্রকে এই কাজে বাধ্য করতে পারে জনগণ। সঙ্কটটা সেখানেই। জনগণ ভোটের রাজনীতির ধ্বজাধারীদেরকে বিশ্বাস করছে না অভিজ্ঞতার জাযগা থেকে।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সেই । নেতৃত্ব ও সংগঠনের সংকট ।
সাধারন মানুষ এখনো এই দাবীতে সোচচার,এই দাবীতে মানুষ আবারো সশস্ত্র হতে দ্বিধা করবেনা- এটা প্রমানিত হয়েছে '৯২ এ গন আদালতের সময়ে । স্বউদ্যোগে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত নির্মুল কমিটি গঠিত হয়েছিল ।
----------------------------------------
পাখীটা উড়ে যেতেই চাঁদ উঠে পড়লো-
আজো সেই রক্তমাখা মুন্ডুটাই উঠলো ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এই সঙ্কটটা কিন্তু সরল নয়। গণরোষের চাপে অনেক সঙ্কটই উড়ে যায় ইতিহাস বলে ....তবে অনেক ক্ষেত্রেই তাকে গণিতের নিয়মে সমাধান করতে হয়। গণরোষকে ন্যুনপক্ষে ধারণ করার যোগ্যতা কোন সংঘের থাকতে হবে। অন্ততপক্ষে তার আপাত: রাজনৈতিক ক্ষতি মেনে নিয়ে। ১৯৭২ থেকেই দেখা যাচ্ছে পলিটিক্যাল হেজিমনি শর্টরান লুঠপাটকেই একমাত্র পলিসি হিসাবে গ্রহণ করছে। এই বৃত্তটা কাউকে ভাঙতে হবে।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

না সরল নয় অবশ্যই । গনরোষকে ধারন করে পরিবর্তন ঘটানোর মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা যাদের আছে তারা শর্টরান লুটপাটকেই মোক্ষজ্ঞান করেছে,এখনো করছে । এছাড়া আর কোনো ঘোষিত,অঘোষিত এজেন্ডা কিংবা টার্গেট তাদের নেই ।
অবশ্য শ্রেনী চরিত্র অনুযায়ী এদের তাই হওয়ারই কথা । তবে অতীতে এদেরকে প্রভাবিত করে কাজ আদায় করার মতো নিউক্লিয়াস ছিলো ।
----------------------------------------
পাখীটা উড়ে যেতেই চাঁদ উঠে পড়লো-
আজো সেই রক্তমাখা মুন্ডুটাই উঠলো ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।