আলিফ লায়লা (হাজার রাত) যে আসলে 'আলিফ লায়লা ওয়া লায়লানে'(হাজার এবং এক) সেটা সবাই জানে শওকত ওসমানের বরাতে। কিন্তু 'আলিফ লায়লা ওয়া লায়লানে' যে আসলে 'আলিফ লায়লা ওয়া লায়লাতিন' (হাজার ও দুই) সেটা জানে ক'জন?
কি ছিল সেই হাজার দুই নম্বর রাতের গল্পটা? উই আর তেলাপোকাদের ফেভারিট অংশগুলো বাদ দিলে যা থাকে তা মোটামুটি এই--
========================================
আমার চক্ষে চোখ পড়িতেই হাতিম তায়ী কহিয়া উঠিল, “শাহজাদী! ইয়াকুত-মার্জান এই জীবনে বহু দেখিয়াছি, পাকা জহুরির চোখ আমার, কিন্তু তোমার চক্ষে যে রোশনি দেখিলাম তা কোহ-ই-নূরকেও হার মানাইলো যে!”
আমি মনে মনে খুশি হইলেও বাহিরে ডাট দেখাইবার জন্য কহিলাম, “ন্যাকড়াবাজি কোরনা তো!”
হাতিম চটিয়া গেল, “ন্যাকড়াবাজি? কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা, আর আমি করলেই ন্যাকড়াবাজি?”
আমি আমার বোঁচা নাকটা উপরে তুলিয়া আবার এক ঝটকায় নামাইয়া আনিয়া কহিলাম, “হ।“
আমি আড়চোখে দেখিলাম হাতিম বেদম চটিয়া গেছে। চটিয়া গেলে তাহার ফর্সা গালখানা আপেলের মতন লাল হইয়া যায়। আমার দেখিতে বড়ই ভাল লাগে।
হাতিম তোতলাইতে তোতলাইতে বলিল, “তার মানেত-তুত-তুমি আমার ভ্যাব-ভ্যালেন্টাইন হইবে না? আমার সাথে বল ড্যান্সে যাজ-যাইবে না?”
আমি কটাক্ষ করিয়া কহিলাম, “তোমার ভ্যা-ভ্যা-ভ্যা-ভ্যালেন্টাইন হইব?”
সে আরও রাগিয়া গেল, “দেখ শাহজাদী, আমি কিক-কিন্তু সিরিয়াস। তুমি না গেলে আমি পাপ-পার্বতী প্যাটেলকে নিয়াই চলিয়া যাইব কিক-কিন্তু।“
এইবার আমি মাইন্ড খাইলাম। পার্বতী প্যাটেল? একটা শাড়ি পড়া কাল্লু মেয়ের সহিত আমার তুলনা? গোস্বা করিয়া কহিলাম, “তা-ই যাও না, দুই জনকে মানাইবে ভাল।“
হাতিম কীয়ৎক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকাইয়া থাকিয়া চোখের পাতাগুলি সরু করিয়া কহিল, “শাহজাদী, এই তোমার শেষ কথা?”
আমি কিছু না বলিয়া গটগট করিয়া হাঁটিয়া চলিয়া আসিলাম।
কিন্তু সত্যি বলতে কি, বাসায় ফিরিয়া কেমন গিলটি ফিলিং হইতেছিল। খামাখাই উহাকে ক্ষ্যাপাইলাম। হাতিম ছেলেটা বোকাসোকা হইলেও লোক মন্দ নয়। আব্বা-হুজুর তাহাকে বলতে গেলে বিনা পয়াসায় খাটাইয়া লন। সে কিচ্ছুটি রা করে না।
আমি সরি-টরি সমেত একটা খৎ লিখিয়া আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত বাঁদী পরীবানুর হাতে করিয়া পাঠাইয়া দিলাম হাতিমের কাছে। বল-নাচের পার্টনার পাইতে আমার, পরীস্থানের শাহজাদীর, কোন সমস্যা নাই। কিন্তু কি দরকার উহাকে ঘাটাইয়া? গোস্বা করিয়া চলিয়া-টলিয়া গেলে অড জব করিবার লোক পাওয়া মুশকিল হইবে।
পরীবানু ঘণ্টাখানেক বাদে আসিয়া কহিল, আত্মগরবী হাতিম তায়ী স্রেফ না করিয়া দিয়াছে। কহিয়াছে আমার ব্যাপারে নাকি তাহার কোনই ইন্টারেস্ট নাই। রাগে আমার গা জ্বলিতে লাগিল।
সেই রাতে আমি ঘুমাইতে পারি নাই।
পরদিন দুপুরেও না।
সন্ধ্যাবেলা। ডে-লাইট সেভিঙ্গের বদৌলতে অন্ধকার নামিতে নামিতে রাত আটটা বাজিয়া গিয়াছে। আমি আধো-আলো আধো অন্ধকারের মধ্যে বারান্দায় বসিয়া আমার ওয়ান্ডখানা লইয়া লটর-চটর করিতেছিলাম আর হাতিম তায়ীকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায় তাহাই ভাবিতেছিলাম। কয়টা মশা কানের কাছে পিনপিন করিতেছিল। ভারী সুরেলা গলা, তাই তাড়াইতে মন চাহিতেছিল না।
এইভাবে বোধহয় ঘণ্টাখানেক পার করিয়া দিয়াছি, একটু তন্দ্রামতও আসিয়াছে, হঠাৎ শুনি হাসির আওয়াজ। আমি প্রথমে ভাবিলাম মশাগুলা হাসিতেছে। কিন্তু কান পাতিয়া শুনিয়া দেখিলাম উহারা গানেই মশগুল। তাহলে কি জিন-ভূত জাতীয় কিছু? আমি আয়াতুল কুরসী পড়িয়া বুকে ফুঁ দিলাম।
ঐ যে, আবার। এইবার আরেকটু স্পষ্ট। মনে হইল বাগানের দিক থেকে আসিতেছে। আমি অবাক হইলাম। এরকম বিচ্ছিরি ভাবে তো এই মহলের কেউ হাসে না! আমার ভীষণ গা ছমছম করিতেছিল। তথাপি বাগানের গেটটা আলগোছে খুলিয়া শব্দ অনুসরণ করিয়া আগাইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝিলাম মস্ত বড় ভুল করিয়াছি।
বাসার স্যান্ডেল পড়িয়াই বাগানে নামিয়া পড়িয়াছি! চারিদিকে কাদা-মাটি-ঘাস-গোবর, ছি! আমার নাড়ি উল্টাইয়া আসিল।
কিন্তু ঐ যে, আবার হাসি। বাগানের ঈষাণ কোণে যেখানে আব্বাজানের আঙ্গুর মাচাগুলা আছে, সেখানটায় দাঁড়াইয়া কেউ অমন বিটকেলে ভঙ্গিতে হাসিতেছে। এখন স্পষ্ট শুনিতে পাইতেছি তার কণ্ঠস্বর। কিন্তু ওকি? একজন তো নয়। দুইজন! আমি কান পাতিয়া শুনিলাম, একটা নারীকণ্ঠ আর একটা পুরুষকণ্ঠ। দুইজনে মিলিয়া প্রাণ খুলিয়া হাসিয়া লইতেছে। যেন রোজ কেয়ামতের আগে আর হাসিবার ফুরসত মিলিবে না।
প্রেমিক-প্রেমিকার কুহর শুনিয়াছ আবু নওয়াস? না শুনিয়া থাকিলে নাই।
আমি পা টিপে টিপে কাছাকাছি গিয়া উহাদের দিকে আমার ড্রাগন-হার্টস্ট্রিং কোরের ওয়ান্ডটা তাক করিয়া চীৎকার করিয়া উঠিলাম, “লুমোস!”
ওয়ান্ডের আগা হইতে সবুজাভ এল-ই-ডি রশ্মি নির্গত হইয়া পুরো বাগানের কোণ আলোকিত করিয়া তুলিল। দেখি আঙ্গুরের মাচায় হেলান দেয়া পরীস্থানের সম্মানিত অতিথি হাতিম আর তাহার বাহুলগ্না…এ কে?
“পরীবানু!”
আমার বিস্মিত চোখের সম্মুখ হইতে বেত্রাহত কুকুরের মতন দৌড়াইয়া পালাইল আমার বিশ্বস্ত বাঁদী পরীবানু আর মুখে-চোখে শিকারীর স্পটলাইটের আলোয় ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া হরিণে-শাবকের এক্সপ্রেশন লইয়া দাঁড়াইয়া রইল হাতিম।
আমি বোধহয় অনেক জোরে চীৎকার করিতেছিলাম কারণ আড়চোখে দেখিলাম আমার পরী-রক্ষীরা ছুটিয়া আসিতেছে। আমি সৎবিৎ ফিরিয়া পাইয়া হাতিমকে কহিলাম, “মহলের একটা বাঁদীর সাথে…এর সাজা তুমি পাইবে।“
ওমা, যেই না একথা বলিয়াছি, হাতিম একেবারে বাঘের মত ফুঁসিয়া উঠিল, “প্রেম করা যদি পাপ হয় শাহজাদী, তবে হ্যাঁএএ, আমি পাপী!”
আমি আর নিজেকে সামলাইতে পারিলাম না। বিকৃত কণ্ঠে চীৎকার করিয়া উঠিলাম…কি চীৎকার করিয়াছিলাম তাহা ঠিক মনে নাই, মাথার ঠিক ছিল নাতো। কিন্তু সাথে সাথে আমার রক্ষী-পরীরা হাতিমের উপর ঝাপাইয়া পড়িল। আমি শুধু শুনিলাম হাতিম চীৎকার করিতেছে, “মণি-মুক্তা, হীরা-জহরৎ দিয়ে সব কেনা যায় শাহজাদী, কিন্তু হাতিমের প্রেম, না-না-না-”
(পাণ্ডুলিপি এইখানে ছিন্ন)
মন্তব্য
আইডিয়াটা চমৎকার। আপনার লেখা আমার খুব ভাল্লাগে। এখন একটা খাঁটি সাইফাই ছাড়েন
মুখফোড়ের ক্যারিয়ার ক্রমশ বিপন্ন হইতেছে জাঁহাপন ...
না বস মুখফোড়ের ভাত মারনের মতো কেউ এখনো এই পরগণায় নাই...
মুখফোড় এক পিসই তৈরি হইয়াছেন। তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ...তাহার আগে বা পরে আর কেউ আসিবেন না...
ব্যাপক মজা পেলাম..
- প্রথম থেকেই মিটিমিটি হাসতেছিলাম। কিন্তু শাহজাদীর লুমোস শুনে আর পারলাম খ্যাক খ্যাক করে হেসে দিলাম।
বেশ মজাদার গল্প হৈছে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বেশ ভালো লেখেন তো আপনি!
খূব ভাল লাগল
হাতিমের ফোন নাম্বার দেয়া যাবে?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আমারো আধুনিক মুখা এবং আদমচ্রইতের কথা মনে পর্লো...
হাতিমকে নিয়ে পরশুরামের একটা মজার গপ আসে, পইড়া নিয়েন...
_________________________________________
সেরিওজা
খুবই ফাটাফাটি কনসেপ্ট। বেশ মজা নিয়ে পড়লাম।
অবশ্য ধুগোদার মত কইরা হাসতে পারি নাই, আমারই ব্যর্থতা। আমি আসলে দুইটা শব্দ বুঝি নাই - 'ওয়ান্ড' আর 'লুমোস'!
এই দুইটা বুঝাইয়া দিলে খ্যাক খ্যাক কইরা হাসব নিশ্চিত!
=====================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
হায় হায় আপনি তো অর্ধেক গল্পই মিস করলেন তাইলে। ওগুলা হ্যারি পটারীয় ম্যাজিকেল শব্দ। ওয়ান্ডের বাংলা হয় জাদুর কাঠি, আর লুমোস হচ্ছে ওয়ান্ডের আগায় বাত্তি জ্বালানোর ভয়েস কমান্ড।
-----------------------------------------------------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে আমার প্রাণের কাছে চলে আসি, বলি আমি এই হৃদয়েরে; সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
হাহাহা, আসলেই মিস হয়ে গেল। এখনো কত কিছু জানার আছে দুনিয়াতে!!
ধন্যবাদ সাবিহ।
===================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
আর ওয়ান্ড হলো যাদুকরদের হাতে যে খর্বাকার একটা কাঠি মতো জিনিষ থাকে ঐটা। ম্যাজিক ওয়ান্ড বলে খুব সম্ভবত।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমি আসলেই একটা ইয়ে!
==================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
ভাল্লাগছে, নেক্সট!
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
দূর্দান্ত লিখছেন বস... চালায়া যান...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এক কথায় চমকপ্রদ। আরো লেখা চাই
আপনার তো দেখি চমৎকার সেন্স অফ হিউমার! কিন্তু, গল্পটা শেষ হয় নাই তো! আসল কাহিনী তো আসবে এর পরে, হাতেইম্যার কী করুণ হাল হলো সেটা বলবেন না আমাদের?? আহা, একটা বেশ ট্র্যাজেডি হবে মনে হচ্ছে
ধৈর্য নাই, আপু, ধৈর্য নাই...
আহা...চলুক না বলে দৌড়াক বলি...
-----------------------------------------------------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে আমার প্রাণের কাছে চলে আসি, বলি আমি এই হৃদয়েরে; সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
জটিলস্য হইয়াছে! পরের পর্ব জলদি নামান!
===অনন্ত ===
যাঃ এভাবে কেঊ গল্প শেষ করে!!! কোন মানে হয় সাবিহ !!! দারুন লিখেছেন।
খাসা হইয়াছে!!
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বলচেন?
হাহাহাহা! 'লুমোস'! এইখানে এসে আমিও খ্যাক খ্যাক করে হেসে দিলাম!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
আরে, দারুণ লিখেছেন তো, কী ভাবে মিস করে গেছিলাম কে জানে!
নতুন মন্তব্য করুন