সায়েম এবং সায়মা জমজ দু’ভাই বোন। প্রকৃতির অদ্ভুদ খেয়ালের বশে দু’জনেই ছোটবেলা থেকে দূরারোগ্য এক ব্যাধিতে আক্রান্ত। হুইলচেয়ার ছাড়া চলাফেরা দুঃসাধ্য। হাঁটতে পারতো না বলে পড়ালেখা বেশি দূর এগুয়নি তাদের। শিক্ষক যদি স্কুলে যেতে মানা করেন বাবা মা আর কি করবেন। ঘরে বসে এস.এস.সি. টা কোনমতে দেওয়া হলো। তারপর... বাংলাদেশের আরো অনেকের মতোনই তাদের জীবনটা এখন কাটছে চারদেয়ালের আবদ্ধ ঘরেই।
বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণে বড় দু’ছেলে মেয়ে ব্যার্থ হওয়াতে তাঁদের কড়া নজরে বেড়ে উঠছে সায়েম-সায়মার পাঁচ বছরের ছোট বোন সেলিনা। ঢাকা মেডিক্যালে কলেজে চতুর্থ বর্ষে পড়ছে এখন সে। বাবা মায়ের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন এখন তাঁদের ছোট মেয়েকে ঘিরেই। এছাড়া আর উপায়ও বা কি, অন্য দু’সন্তান তো অকর্মার বোঝা হয়ে পড়ে আছে। আর তাই বুঝি ছোট বোন সেলিনার বিয়েটা ভেঙ্গে যাওয়াতে সব দোষ এসে পড়লো বড় ভাই বোনের কাঁধে।
ঠিক এই ভয়টাই সায়েমের ভেতরটাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছিলো যেদিন বোনকে আংটি পড়াতে এসে পাত্র পক্ষের এক সদস্যের চোখে পড়ে যায় তারা। মা পই পই করে বলে দিয়েছিলেন তোরা দু’জন রুম থেকে বেরুবি না খবরদার! কিন্তু তারা কি করবে। প্রবল বাতাসে পর্দা কেঁপে গেলো আর করিডোরের বেসিনে হাত ধুতে এসে পাত্রের বড় বোনের চোখে পড়ে গেলো তারা।
সেদিন তারা কথা পাকা করে যাওয়ার কিছুদিন পর থেকে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছেন কেনো যেনো। বাবার ধারণা হুইলচেয়ারে তাঁদের দেখেই... কেনো তারা এমন ঘরের মেয়েকে নিজের ঘরের পুত্রবধূ হিসেবে নেবেন!
প্রিয় পাঠক, গল্প মনে হলেও এটি সত্য ঘটনা। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের একটি শহরে এই ঘটনা ঘটেছে। শুধু মাত্র ধারণার বশঃবর্তী হয়ে বাবা মা নিজের সন্তানকে অত বড় একটি অপরাধের দায়ে ফেলেছেন। শুধু তাই নয় সন্তানকে কটু কথা শোনাতেও এতটুকুও দ্বিধা করেননি। প্রতিবন্ধীতাই বুঝি তাঁদের সবচেয়ে বড় অপরাধ!
আমার এই লেখাটি যারাই পড়ছেন তাঁদের কাছে আমি তিনটি প্রশ্নের জবাব চাই-
# প্রতিবন্ধীতার স্বীকার ভাই-বোন কি সত্যিই চাইতে পারে তাঁদের আদরের ছোট বোনটির বিয়ে ভেঙ্গে যাক?
# শারীরিক বা নানা কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বাবা মায়ের কিংবা সমাজের বোঝা বলা হয় কেনো এবং তাঁদের এই অবস্থার জন্যে আসলে কারা দায়ী?
# বাবা মা সেলিনাকে যদি শিক্ষিত করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে চান তাহলে সায়েম ও সায়মার জন্যে কেনো একি কথা ভাবলেন না এবং কেনোইবা তাঁদের অপয়া/বোঝা হিসেবে আখ্যায়িত করে অপমানিত করছেন?
মন্তব্য
অবশ্যই না।
এই দুটোর প্রসংগে একসাথে মন্তব্য করছিঃ
দায়ী আমরা, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আমাদের শিক্ষা ( আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক)। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক অবস্থান প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও সামাজিক স্বীকৃতির বিষয়ে উদাসীন। বলতে দ্বিধা নেই যেকোন সমাজে রোজগার করার ক্ষমতা (বর্তমানে বা ভবিষ্যতে) পরিবারে ও সমাজে তার অবস্থানকে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রন করে। ঠিক একারনেই একজন প্রতিবন্ধী আমাদের সমাজে অবহেলিত ও বোঝা সরূপ। এর থেকে পরিত্রানের উপায় দু'টিঃ এক নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন যেটি সময়ের সাথে সাথে উন্নত হবে আর দুই, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। উন্নত বিশ্বের দেশগুলিতে প্রতিবন্ধীদের সকল সুযোগ সুবিধা এমনকি শিক্ষা বৃত্তির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়।
দেখবেন সাবরিনা, একদিন দিন বদলাবে। সেই দিনের প্রত্যাশায়।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
উন্নত বিশের মতোন আমাদের দেশেও সচেতনতা বৃদ্ধি পাক এই প্রত্যাশা।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মায়ার নেশা কাটাতেই এ তীব্র অস্থিরতা
তবু, মায়ার পাহাড়েই আমার নিত্য বসবাস।
হয়তো সত্যিই একদিন ভোর হবে... আবার মনে হয়......
ডাকঘর | ছবিঘর
তবুও সংগ্রাম চালিয়ে যান... আর কিই বা বলব, সত্যিই ভেবে পাইনা...
ডাকঘর | ছবিঘর
আমাকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। নিজে সচেতন হবার পাশাপাশি আপনার কাছের মানুষগুলো শুধু এই বিষয়ে সচেতন করে তুলুন তাহলেই আমার উদ্দেশ্য সফল হবে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মায়ার নেশা কাটাতেই এ তীব্র অস্থিরতা
তবু, মায়ার পাহাড়েই আমার নিত্য বসবাস।
দেশের কোথাও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য একটা টয়লেট পর্যন্ত বানানোর মানসিকতা অর্জন করিনি আমরা। নিজের সন্তানকে শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারো সাথে বা তাদের ভাইবোনদের সাথে বিয়ে দেওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার।
হাজার বছর পরে একদিন সবকিছু বদলাবে। হয়তো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীও সেদিন বদলাবে।
হাজার বছরের প্রতীক্ষায় থাকতে চাই না নানাভাইয়া।
এখুনি সময় পরিবর্তনের...আপনি শুরু করুন, আপনাকে দেখে আপনার কাছের মানুষ এগিয়ে আসবে।
নিজে সচেতন হোন। অন্যকেও সচেতন করে তুলুন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মায়ার নেশা কাটাতেই এ তীব্র অস্থিরতা
তবু, মায়ার পাহাড়েই আমার নিত্য বসবাস।
শাফি।
উত্তর এক - চাইতে পারে না
উত্তর দুই - নিঃসন্দেহে ওরা দায়ী না।
উত্তর তিন - বাবা মার কুসংস্কার ও হীনমন্যতা
আমার গ্রামের একটা প্রতিবন্ধী শিশুর ভয়ানক অবস্থার কথা লিখেছিলাম বেশ আগে। যার কথা মনে পড়লে ব্যক্তি রাষ্ট্র সমাজের সকল সমস্যাকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারি নিমেষে। এখনো হাত কাঁপে লিখতে গেলে....
মানসিকতার পরিবর্তন হবে না যদি সবাই নিজের চারপাশে কিছু না কিছু পরিবর্তন করেন। অন্ততঃ মুখটাকে কাজে লাগানো উচিত।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ঠিক সেটাই চাই আমরা। প্রত্যেকে যদি তার মুখটাকে কাজে লাগায়...পুরো বাংলাদেশজুরে ছড়িয়ে পড়বে আশা করি সচেতনতার বীজ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মায়ার নেশা কাটাতেই এ তীব্র অস্থিরতা
তবু, মায়ার পাহাড়েই আমার নিত্য বসবাস।
চারিদিকে দুঃসহ চিত্র অনেক...। তবু আশাবাদ ছাড়তে চাই না। পরিবর্তন আসবেই...
সহায়ক যাতায়াত এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন প্রয়োজন
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মায়ার নেশা কাটাতেই এ তীব্র অস্থিরতা
তবু, মায়ার পাহাড়েই আমার নিত্য বসবাস।
প্রথম মন্তব্যে সচল জাহিদ বলেই দিয়েছেন যা বলতে চেয়ছিলাম। আমারও বিশ্বাস চিত্রটা সবসময় এইরকমই থাকবেনা নিশ্চয়। এইযে আজ আপনি এর বিরুদ্ধে বলছেন, ভাবছেন, চক্রটা ভাঙতে চাইছেন, এইতো বদলানর প্রক্রিয়া শুরু হয়েই গেছে। এক থেকে একশ, শ' থেকে সহস্র, সহস্র থেকে লক্ষে - ভাবনাটা পৌঁছবেই একদিন।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
এই বাবা মা দুইটারেই ন্যাংটা করে রাস্তার মোড়ে ঝুলায় রাখা উচিত! যৌনাঙ্গ থাকলেই বাচ্চা দিয়ে খালাস! শুওরের দল!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
খুবই মর্মস্পর্শী ঘটনা............এই দুটি ভাই বোন নিজের বাবা মা এর কাছ থেকে যে ব্যবহার পেলো তারা সমাজ ও দেশের কাছে আর কি আশা করবে .............আমরা আশাবাদী একদিন সুর্য উঠবে ...........
। কবে মানুষ হব?
নতুন মন্তব্য করুন