বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যাগুলো

সাবরিনা সুলতানা এর ছবি
লিখেছেন সাবরিনা সুলতানা (তারিখ: সোম, ১৬/০১/২০১২ - ১০:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকের আকাশটাও সেদিনের মতোনই। সেই সকাল থেকেই রং বদলাচ্ছে আজো। সেদিন যেমন ঠিক সক্কাল বেলাটায় রোদ্দুর খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছিলো! ক্লান্ত দুপুর শেষে ধীরে ধীরে ধূসর মেঘরঙে ছেয়ে গিয়েছিলো প্রিয় আকাশটা। আর সন্ধ্যা না নামতেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি।
আজকের সকালজুড়েও গনগনে রোদ্দুরের প্রখর উত্তাপ ছেয়ে ছিলো। বেলা যতো গড়াচ্ছে ধীরে ধীরে মেঘলা হয়ে আসছে আকাশ। সন্ধ্যা নামতেই হয়তোবা শুরু হবে বৃষ্টিটা। ঠিক সেদিনের মতোনই। তফাত শুধু এইটুকুই সেদিনের মতোন সন্ধ্যা সাতটা বাজার পরে আজ বৃষ্টির পাশে থাকবে না নীলয়। সেই কবেকার কথা! আজো চোখ বুজলে মনের পর্দার স্বচ্ছ আয়নায় ভেসে আসে সেই সন্ধ্যাটি। মাঝে কতগুলো আষাড় এলো আর গেলো। কিন্তু অনেক বছর আগের সেই আষাড়ে সন্ধ্যাটি বুঝি স্মৃতির পাতায় আটকে গেলো। এমনি করেই যায় বুঝিবা...

সেই সন্ধ্যার আগের দিনটাতেও জ্বরটা প্রবল ছিলো। বিছানা থেকে মাথা তোলার সাধ্যি ছিলো না একেবারেই। সেদিন যা একটু কমেছিলো জ্বরটা। সন্ধ্যের মুখে মা এসে বললেন, আদিত্য এসেছে। সাথে নীলয়। সারা শরীর এক অদ্ভুদ শিহরণে কেঁপে কেঁপে উঠে। যার সাথে এ ক’টা দিন শুধু ফোনেই কথা হলো আজ তাকে সশরীরে দেখতে পাওয়ার অপ্রত্যাশিত আনন্দেই যেনো শরীরটা অনেকখানি সেড়ে গেলো। এক পলকের জন্যে আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে বড্ড এলোমেলো মনে হলো। দু’দিনের জ্বরে মুখটা শুকিয়ে এইটুকুন হয়ে গেছে। পরিচর্যার অভাবে বিবর্ণ-রুক্ষ হয়ে আছে পিঠের উপরে একরাশ চুলের বোঝা। বিছানা ছেড়ে ঝটপট মুখ হাতে পানি দিয়ে নিজেকে ঠিক করে নিতে আর হুইলচেয়ারের চাকায় গড়িয়ে সামনের রুমে যেতে সব মিলিয়ে সময় নিলো মিনিট পনেরো। কিন্তু এইটুকুন সময়েই যেনো হৃদপিন্ড জোরসে লাফিয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছিলো বৃষ্টির।

তারপর ......... প্রথম চোখাচোখি দু'জোড়া চোখের। মূহুর্তটা ভুলতে পারেনি কখনোই। যেনো এই সেদিনের ঘটনা, আজো স্মৃতির এ্যালবামে অমলিন হয়ে আছে। তাকে আসতে দেখেই উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে খৃষ্টিয় কায়দায় প্রণাম দিচ্ছিলো নীলয়। চেহারায় ছড়িয়ে ছিলো মায়াবী সেই হাসিটা। সত্যি-ই যেনো স্বর্গ থেকে স্বয়ং যিশু নেমে এসেছেন! হলুদ চেকের বিস্কিট কালারের সেই শাটর্টি জড়িয়ে ছিলো নীলয়কে। বৃষ্টিভেজা এলোমেলো অবাধ্য চুলগুলো কপালের ওপরে গড়িয়ে পড়ছিলো বারে বারে। আর খানিকবাদে বাদেই নীলয়ের হাতের আঙুলগুলো উঠে যাচ্ছিলো সেখানটায়। সেদিন বৃষ্টির কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো আগেও বহুবার বুঝি সে দেখেছে এই দৃশ্য। এমনটাই যেনো হওয়ার কথা ছিলো। ঠিক এমনি করেই। মূহুর্তের জন্যে যেনো সময়টা থমকে গিয়েছিল। অনন্তকাল ধরে যেনো তারা একে অপরকে চেনে। জানে। বোঝে। কখন কিভাবে যে তাদের অবাধ্য দু' মন এক হয়ে গেলো! বৃষ্টির শত চেষ্টা, বিধি -নিষেধ কোনটাই মন মানেনি। শুধু অনুভব করেছে এই মানুষটার ওপরে প্রবল অধিকারবোধ জন্মেছে তার। অনেক -অনেক কষ্ট দিতে পারে সে এই মানুষটিকে। আবার পরম মমতায় আগলেও ধরতে পারে। নিজের শারীরিক অক্ষমতার কথা ভেবে যদিবা একটু ভয় পেতো। কোথা থেকে নীলয় এসে প্রবল ভালোবাসার জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যেতো ওকে সুদূর স্বপ্নপুরীতে। সেখানে তাদের ঝাউ গাছটার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট নদীর ধারে বসে ইটুস পিটুস গল্পে ডুবে যেতো দু'জনে। রঙ বেরঙের পাখিরা সব উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াতো চারিপাশে। ক্লান্তি লাগলেই বিরাটাকায় বটগাছের ডালে ঝোলানো দোলনায় বসে থাকা, কবিতা আর গান। ঝাউগাছের শনশন আওয়াজ, হাওয়ায় ভেসে আসা পাতার মর্মর ধ্বনি আর নাম না জানা সব পাখিদের কলকাকলীতে মুখরিত হতো সকাল- দুপুর- বিকেলগুলো। সারাদিন সারাবেলা এক অলৌকিক সুরের মূর্ছণায় বুদ হয়ে থাকা। একেই কি বলে সত্যিকারের ভালোবাসা! নতুবা যে বৃষ্টি কবিতার নাম শুনেই পালাতো সে এমন চমৎকার আবৃত্তি কিভাবে করে! গল্প উপন্যাসের বদলে কেনোইবা তার টেবিলে জমা হতে থাকে কবিতার বই! শুধুই কি নীলয়ের পছন্দ বলে!

সারাটা দিনের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতো ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দে। এক ঝটকায় সামনে পড়ে থাকা কডলেসটা তুলে নিতে তার এতোটুকুনোও সময় লাগতো না। রায্যির গল্পের ঝাপি খুলে বসলে পরে সময়ের খবর থাকতো না আর। সে বছর বর্ষা হয়েছিলো সত্যিই দেখবার মতোন। বৃষ্টির সুখ বুঝি আকাশের সহ্য হয়নি। তাই কি, আকাশের যতটুকুন কাঁদবার কেঁদে নিয়েছিলো সেবারই!? আকাশজুড়ে মেঘের ঘনঘটায় নীলয় বৃষ্টিতে ভিজতে চায়। বৃষ্টি বুদ হয়ে থাকতো অঘোর বর্ষনের রিমঝিম শব্দে। তার ধারণা ছিলো মেঘের রঙ বুঝি কালো হয়। মেঘের সত্যিকারের রং তাকে চিনিয়েছিলো নীলয়। তার দেওয়া মেঘ রঙা চাদরটা আজো সযত্নে তুলে রেখেছে বৃষ্টি। এতোগুলো বছরবাদেও সামান্য ঠান্ডা লাগলেই যেটি গায়ে জড়িয়ে উষ্ণতা খুঁজে নেয়। পরম মমতায় যেনো নীলয়ই তাকে আগলে ধরে। ঠিক সেই আগের মতোনই। স্বপ্ন দেখার পদ্ধতিটা নীলয়ের কাছেই শিখেছিলো সে। পৃথিবীকে জয় করার অদম্য ইচ্ছে শক্তিটাও নীলয়ের কাছ থেকেই পাওয়া। ছোট্ট শিশুরা যেমন বাবার হাত ধরে হাঁটতে শেখে। বৃষ্টি নীলয়ের হাত ধরে বাইরের পৃথিবীটাকে চিনতে শিখেছিলো ঠিক তেমনি করেই। চার দেওয়ালের আবদ্ধ জীবন থেকে নিজেকে মুক্ত করে সুদূর নীলিমার নীলে হারিয়ে যেতে শিখেছিলো। নিজের অধিকার সম্বন্ধ্যে সচেতন হতে শিখেছিলো। একজন পরিপূর্ণ মানুষে রুপান্তরিত করেছিলো ওকে নীলয়। তাই বুঝি বৃষ্টির সবচে’ আপন সবচে’ কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলো একমাত্র নীলয়। একাকিত্ব ছিলো যার নিত্য সঙ্গি সেই বৃষ্টির সারাদিনমানের খবর নেওয়ার একজন হলো। পৃথিবীটাকে সুন্দর থেকে সুন্দরতম মনে হতে লাগলো। নীলয়ের সব পছন্দ -অপছন্দকে নিজের করে নিয়েছিলো বৃষ্টি। নিজেকে ঠিক সেভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলো যেভাবে নীলয় চেয়েছিলো। তারপরের সময়গুলো যেনো খুব দ্রুত কাটতে লাগলো। একদিনের সেই ভীতু বৃষ্টিকে নীলয় এতোটাই সাহস দিলো অসম্ভবকে সম্ভব করার উন্মাতাল নেশায় মাতলো বৃষ্টি।

কিন্তু হুইলচেয়ারের চাকায় গড়িয়ে বিয়ের পিড়িতে বসার স্বপ্ন দেখে এক মেয়ে, এটা জেনে সবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এও কি সম্ভব! সে তো সাধারণ মেয়ে নয়। তথাকথিত সমাজ ব্যবস্থা যে তার শরীরে প্রতিবন্ধীতা নামক মোহর লাগিয়ে দিয়েছে। তার কি সাধ্যি স্বাভাবিক জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখে! ভদ্র-শিক্ষিত সেই সমাজ রুখে দাড়ালো অসম এই বিয়ের বিরুদ্ধে। অনেক বাক্-বিতন্ডা, দীর্ঘ যুদ্ধ। অবশেষে একদিন তাদের ভালোবাসার সামাজিক স্বীকৃতিটুকু আদায় করে ছাড়লো দু’জনে। শুরু হলো নতুন সংসার নতুন কিছু স্বপ্ন বুকে নিয়ে। তাদেরচে’ সুখী বুঝি পৃথিবীতে আর কেউ ছিলো না সেদিন। বৃষ্টির মনে হলো পুরো পৃথিবী যেনো তার হাতের মুঠোয়। নীলয়ের হাতে হাত রেখে, নীলয়ের দু’পায়ে হেঁটে বেড়ানোর স্বপ্নে বিভোর বৃষ্টির মন অন্য এক জগৎে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। তার ধারনা দিনগুলো ভালোই কাটছিলো তাদের। যুদ্ধ জয়ের আনন্দে আত্মহারা বৃষ্টি টেরও পেলো না সমাজের সাথে যুদ্ধ করে করে কখন যেনো ক্লান্ত হয়ে উঠেছিলো নীলয়। ক্রমেই দুরত্ব বাসা বাধতে লাগলো দু’জনার মাঝে। অনতিক্রম্য দুঃস্বপ্নের মূহুর্তগুলো অসহনীয় হয়ে উঠছিলো। সমাজ -সংসার সম্পর্কে অজ্ঞ বৃষ্টি বাস্তবতার কষাঘাতে নিঃশেষ হতে হতে প্রাণপনে সজোরে আকড়ে ধরতে চাইলো নীলয়কে। কিন্তু নীলয় যেনো দূর থেকে দূরে - আরো দূরে.......ধীরে ধীরে বিন্দুর মতো হতে হতে হুট করে একদিন সুদূরের ওই সীমানায় মিলিয়ে গেলো।

তারপর .........সময় যেনো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে লাগলো। রিমঝিম বৃষ্টির রেশ কাটতে না কাটতেই শিমূল তূলার শুভ্রতা নিয়ে শরৎ এলো। শীতের বুড়িও একসময়ে সূর্যের প্রখর উত্তাপ থেকে নিজেকে বাঁচাতে পালিয়ে গেলো। আবার আকাশে মেঘের ঘনঘটা। আবারো রিমঝিম বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ। এভাবেই চক্রাকারে ঘুরতে থাকা সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে অনেকগুলো বসন্ত কোথা দিয়ে যেনো হারিয়ে গেলো বৃষ্টির জীবন থেকে। এখন আর তাদের স্বপ্নপুরীতে পাখির কলতান শুনতে পাওয়া যায় না। ঝাউগাছটা কেমোন যেনো শুকিয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। কোথায় যে হারালো তার নীলয়! তাকে আগলে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টায় ব্যার্থ বৃষ্টির দৃষ্টি আজ আকাশে মেঘেদের আঁড়ালে নীলয়কে খুঁজে বেড়ায়। সবুজ পাতাদের আঁড়ালে নীলয়কে খোঁজে। রাস্তার অগুনতি মানুষের ভীড়ে খুঁজে। দীর্ঘ দিন শেষে ক্লান্ত রাত্তিরে বিছানায় তার পাশে শুয়ে থাকা মানুষটার মাঝেও নীলয়ের মায়াবী মুখখানা খুঁজে ফেরে বৃষ্টির করুণ চাউনি। কোথাও নেই নীলয়! আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে আর্তনাদ করে উঠতে চায় বৃষ্টি। প্রাণপনে শরীরের সমস্ত শক্তি আঁকড়ে চিৎকার করে ডাকতে ইচ্ছে হয় নীলয়কে। বড্ড বলতে ইচ্ছে হয়, “শুধু একটিবার ফিরে এসো। পারছি না আমি। তোমায় ছাড়া জগৎ আমার শুণ্যতায় ভরে উঠে।“ কিন্তু গলা চিরে যে একটি শব্দও বেরুতে চায় না!


মন্তব্য

তানিম এহসান এর ছবি

মন খারাপ

তবুও বৃষ্টির ভিড়ে পৃথিবী জাগুক!

তাপস শর্মা এর ছবি

ভালো লাগছেনা কিছু বলতে................................. আমারও 'গলা চিরে যে একটি শব্দও বেরুতে' চাইছেঃ আয় বৃষ্টি ঝেঁপে।

ধূসর জলছবি এর ছবি

আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে কল্পনা করে নিতে, বৃষ্টির কখনও চিৎকার করে ডাকতে হবে না, নিলয় ঠিকই একদিন ওর অশব্দে বলা কথাগুলো বুঝে নিবে, আবার আর একটি অসম্ভবকে সম্ভব করবে, ওরা আবার আর একটা যুদ্ধ জয় করবে। কিন্তু বাস্তব টা কেন যেন সবসময়ই ধূসর হয় । বৃষ্টিদের সাথে এমনি হয় চিরকাল। মনটা খারাপ ছিল, আরও খারাপ হয়ে গেল ।
অফ যা আপনার লেখার হাত অসাধারণ ।

ধূসর জলছবি এর ছবি

চলুক

কল্যাণ এর ছবি

মন খারাপ

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

শাব্দিক এর ছবি

ভাল লাগল।

নীহার এর ছবি

মন খারাপ

আশালতা এর ছবি

ভালো লাগলো। আপনার লেখাগুলোয় খালি মনখারাপি গন্ধ কেন ? এত দারুন লেখেন আপনি, একটা দাঁত বের করানো লেখা দিন না । হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তিথীডোর এর ছবি

এত দারু লেখেন আপনি

সিটিজি পিপল রক্স, অ্যাজ অলওয়েজ! দেঁতো হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নীড় সন্ধানী এর ছবি

অনতিক্রম্য দুঃস্বপ্নের মূহুর্তগুলো পেছনে ফেলে নীলয় আবার ফিরে আসুক বৃষ্টির কাছে................সেই প্রথমদিনের মতো সমাজের কুটিলতা এড়িযে আবারো হাত বাড়িয়ে দিক বৃষ্টির দিকে........ বৃষ্টির এই প্রতীক্ষা সফল হোক।

গল্প গম অইয়ে! হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সন্দেশ এর ছবি

সাবরিনা,
ইমেইল চেক করবেন প্লিজ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অভিনন্দন!

অরফিয়াস এর ছবি

দুঃখগুলোর বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়া .. মন খারাপ

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।