ভবিষ্যৎ অস্থিরতা রোধে নীতিমালার পরিমার্জন এবং কিছু কথা

সচলায়তন এর ছবি
লিখেছেন সচলায়তন (তারিখ: বুধ, ১৬/০৬/২০১০ - ৫:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সচলায়তনের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করে কিছু বিষয়কে কলহের কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষণ ও আলোচনার আলোকে নীতিমালায় কিছু প্রয়োজনীয় সংশোধনী অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।

সচলায়তনের বিশ্লেষণে সমস্যার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে নিচের বিষয়সমূহঃ

  • মেটাব্লগিংয়ের ফলে একটি বিষয়ের দীর্ঘস্থায়ী এবং তিক্ত আলোচনা
  • পারস্পরিক সম্মানের অভাব থেকে উদ্ভুত অশোভন পোস্ট বা মন্তব্য
  • অন্তরালের রাজনীতির ফলে দলবদ্ধ আক্রমণ

মেটাব্লগিং

মেটাব্লগিং-এর একটি সরল সংজ্ঞা হতে পারে, ইতিমধ্যে প্রকাশিত কোনো ব্লগের প্রতিক্রিয়ায় এমন কোনো পোস্ট, যার বক্তব্য মূল পোস্টের মন্তব্য আকারেই আসতে পারে। নতুন পোস্টের যৌক্তিকতা নিরূপণে সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঠকের মতামতের ভূমিকা অনস্বীকার্য, তবে এই প্রসঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মডারেটররা সংরক্ষণ করেন।

কোনটি মেটাব্লগিং নয়, তা সংজ্ঞায়ন তুলনামূলক ভাবে সহজ। কোনো আলোচনা, যাতে অন্য একটি ব্লগের মূল বিষয়কে আরো সাধারণভাবে ও সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে, কিংবা যাতে ব্লগটিতে পরিবেশিত কোনো ধারণা বা মতামতের পূর্ণাঙ্গ সমালোচনা করা হয়েছে, তা মেটাব্লগিং নয়। এক্ষেত্রে মেটাব্লগের সংজ্ঞা নিরূপণে রেফারেন্সের সংখ্যা নয়, বরং নতুন পোস্টটির প্রয়োজনীয়তা, স্বকীয়তা, ও তাৎপর্য প্রাথমিক ভাবে বিবেচিত হবে।

মেটাব্লগ নির্ধারণে লক্ষ করবেন যে, যে পোস্টটি পড়ে আপনার মাথায় লেখার একটি ধারণা তৈরি হয়েছে সেটা সেই পোস্টেই মন্তব্য আকারে দেয়া যায় কিনা। মন্তব্যের আকার যাই হোক পোস্টের মন্তব্যে সেটা আসতে পারলে সেখানেই সেটাকে প্রকাশ করুন।

সচলায়তনে মেটাব্লগিং নিরুৎসাহিত করার পেছনে বিভিন্ন প্রকার বিবেচনা কাজ করে।

প্রথমত, একটি পোস্ট মূলত তার লেখকের অধিকার। প্রাসঙ্গিক মন্তব্য সেই পোস্টেই প্রকাশ করার মাধ্যমে লেখককে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়। যদি অতি-দীর্ঘ মন্তব্য কিংবা বহু-সংখ্যক মন্তব্যের কারণে মূল পোস্টে মত প্রকাশ সহজ না হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে মূল পোস্টেই এই বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হওয়া উচিত।

দ্বিতীয়ত, একটি বিষয় নিয়ে স্বল্প সময়ে একাধিক পোস্ট প্রকাশিত হলে আলোচনা একটি সীমিত গণ্ডির মধ্যে ঘুরপাক খায় এবং তদ্জনিত বিশৃঙ্খলা প্রায়শ ব্যক্তিগত সংঘাতে রূপ নেয়। লক্ষ করবেন, কার্যকারিতা বাড়ানোর খাতিরে সচলায়তনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাগুলো স্বল্প সংখ্যক পোস্টে সীমিত রাখা হয়।

তৃতীয়ত, মেটাব্লগিং-এর চর্চা চলতে থাকায় ইদানীং দেখা যায় যে একটি পোস্টে মডারেটররা কোনো মন্তব্যের সুযোগ রহিত করলে অন্য একটি পোস্টে এই আলোচনা অনভিপ্রেত পুনর্জন্ম নেয়।

চতুর্থত, ব্লগ নিয়ে ব্লগিং-এর জন্য এক প্রকার মেটাব্লগিং হয়ে থাকে যা আপাতদৃষ্টে সদুদ্দেশ্য থেকে শুরু হলেও শেষত কোনো সুফল নিয়ে আসে না। প্রতিটি মানুষ কিছু মৌলিক ব্যাপারে আপোষহীন। একটি অনলাইন লেখক সমাবেশ হিসেবে সচলায়তনের উদ্দেশ্য, সচলায়তনের মূল বিষয়ের সাথে একমত কিছু মানুষকে তাদের নিজেদের মধ্যকার ছোটোখাটো মতপার্থক্যের উর্ধ্বে, সহাবস্থানের উপযোগী একটি পরিবেশ তৈরি করা। ব্লগ নিয়ে ব্লগিং করতে গেলে লেখার মান নয়, বরং লেখকের চরিত্রই মূল আলোচ্যে পরিণত হয়ে যায়।

উল্লেখকৃত কারণগুলো ছাড়াও মেটাব্লগিং-এর বিভিন্ন কুফলের আলোকে সচলায়তন মেটাব্লগিং-এর বিপক্ষে একটি শক্ত মনোভাব পোষণ করে। এ-কারণেই ভবিষ্যতে মেটাব্লগিং-এর চর্চা রোধকল্পে মডারেশন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পারস্পরিক সম্মানের অভাব

সহব্লগারের প্রতি অসম্মানজনক ও অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনা সম্প্রতি সচলায়তনে প্রকট রূপ নিয়েছে। নীতিমালায় এ সর্ম্পকে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিষয়টি ভঙ্গ করেছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সচল। এ-ব্যাপারে এখন থেকে প্রথম সতর্কতা হিসেবে ৭ দিন ও দ্বিতীয় সতর্কতা হিসেবে এক মাসের জন্য সংশ্লিষ্ট সদস্যকে মডারেশনের আওতায় আনা হবে। তৃতীয়বার একই কাজ করলে সংশ্লিষ্ট সদস্যকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মডারেশনের আওতায় আনা হবে। উপরন্তু, অসম্মানজনক কাজটিকে কেউ সম্মতি জানালে তাঁকেও অনুরূপ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

এক সচলের লেখা, মন্তব্য, মতাদর্শ, কিংবা কার্যবিধি অন্য সচলের কাছে অগ্রহণযোগ্য বিবেচিত হতেই পারে। এই আপত্তির কারণ যত যৌক্তিকই হোক না কেন, আপত্তি প্রকাশের পন্থা হিসেবে সহসচলের প্রতি রূঢ় আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য সচলায়তনের প্রতিটি পোস্ট ও মন্তব্যে আপত্তি জানান নামে একটি অপশন আছে। এই অপশনটির চর্চা করে মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষণের কথা পুনর্বার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যথাসাধ্য চেষ্টা সত্ত্বেও আপত্তিকর সব কিছু মডারেটরদের তাৎক্ষণিক নজরে আসে না। সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে মডারেটররা পাঠকের আপত্তি নিষ্পত্তি করে থাকেন। আপনাদের যেকোনো আপত্তি লিখিত আকারে ইমেইল করুন contact এট sachalayatan ডট com ঠিকানায়, কিংবা স্রেফ “আপত্তি জানান” বাটনটি ক্লিক করুন। অতঃপর মডারেটরদের পরষ্পরের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ও সুযোগ দিন। এই প্রক্রিয়া সমাপ্তির আগে কেউ অসম্মানজনক আচরণ করলে তাঁকে নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্টকালের জন্য মডারেশনের আওতায় আনা হবে।

সচলায়তন বিষয়ক রাজনীতি ও অনধিকারচর্চা

আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ করেছি যে সচলায়তনের সঞ্চালনপদ্ধতি নিয়ে কথিত উদ্বেগ থেকে অনেকেই পর্দার অন্তরালে অনধিকারচর্চায় লিপ্ত হয়েছেন। সচলায়তন সম্পর্কে আপনার যাবতীয় শঙ্কা, স্বপ্ন, ও জিজ্ঞাসা সরাসরি মডারেশনে ইমেইল করুন। বিগত সময়ে যৌক্তিক পরামর্শের ভিত্তিতে সচলায়তন তার নীতিমালা ও পরিচালনায় অনেক মৌলিক পরিবর্তন এনেছে। এই পরীক্ষিত পথ এড়িয়ে সচলায়তন মডারেশনকে উৎখাত, উচ্ছেদ, বা প্রতিস্থাপনের চেষ্টা পণ্ডশ্রম মাত্র। ভবিষ্যতে কেউ এ-ধরনের কেউ লিপ্ত থাকার আভাস বা প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁর অ্যাকাউন্ট মডারেশনের আওতায় আনা হবে।

সচলায়তনের নীতিমালায় দলবদ্ধ আক্রমণ কঠোর ভাবে নিরুৎসাহিত হওয়া সত্ত্বেও আমরা আরও পর্যবেক্ষণ করেছি যে কিছু ব্লগার গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে মডারেটরদের আক্রমণ করে থাকেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, যেকোনো সদস্যের ব্লগার অস্তিত্ব ও মডারেটর অস্তিত্ব সম্পূর্ণ স্বাধীন। কোনো ব্লগারের মন্তব্যকে মডারেটরের সিদ্ধান্ত বলে চিত্রিত করা, একক ব্লগারকে মডারেশনের সকল সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী করা, contact এট sachalayatan ডট com-এ ইমেইলের পরিবর্তে কোনো পোস্টে মডারেটরের কাছে উগ্রভাবে জবাবদিহি চাওয়া, ইত্যাদির বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে কঠোর ব্যবস্থা গৃহীত হবে। একই সাথে কোনো ব্লগার মডারেটরসুলভ আচরণ করলে তার মন্তব্যে "আপত্তি জানান" বাটনটির সদ্ব্যবহার করে এ ব্যাপারটি মডারেটরদের দৃষ্টিগোচরে আনার অনুরোধ করা যাচ্ছে।

আমরা আরও লক্ষ করেছি যে, কিছু অতিথি স্বল্প সংখ্যক ব্লগ লিখেই উস্কানিমূলক ও নীতিনির্ধারনী মন্তব্য দিতে শুরু করেছেন। অতিথিদের মনে রাখতে হবে যে সচলায়তনে আপনার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত তিনটি – লেখালেখি করা, সামাজিক উদ্যোগে সাথী হওয়া, এবং সুস্থ মিথস্ক্রিয়া। উস্কানিমূলক বা নীতিনির্ধারনী মন্তব্য, কোন্দলে জড়িয়ে পড়া, ইত্যাদি অতিথিদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। ভবিষ্যতে এ-ধরনের কর্মকাণ্ডের শাস্তি হিসেবে অতিথি অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করার কথা বিবেচনা করে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি স্বল্প ব্যবহৃত প্রায় ত্রিশটি অতিথি অ্যাকাউন্ট বিভিন্ন কারণে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে, যার মধ্যে এ কারণটি একটি।

রেটিং পদ্ধতির অসদ্ব্যবহারের ব্যাপারে মডারেটরদের কাছে নিয়মিত অভিযোগ আসে। দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণের পর দু'জন সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো। এঁদের একজন নির্দিষ্ট কয়েকজন সচলের পোস্টে নির্বিচারে এবং ত্বরিত গতিতে "১" রেট করতেন। তাঁর অ্যাকাউন্টটি অনির্দিষ্টকালের জন্যে মডারেশনের আওতায় আনা হলো। অপরজন সম্প্রতি তর্কের সূত্র ধরে অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে একাধিক সচলের দুই ডজনেরও বেশি পোস্টে "১" রেট করেছেন, যা সচলসুলভ আচরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। আগামী এক মাস তাঁর রেটিং অধিকার রহিত করা হলো। ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটলে তাঁর অ্যাকাউন্টটিও অনির্দিষ্টকালের জন্যে মডারেশনের আওতায় আনা হবে।

পরিশেষে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির সাথে যারা জড়িত, তাঁরা উপরোক্ত তিনটি অসদাচরণের উদাহরণ রেখেছেন। এঁদের বিভিন্ন মাত্রার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের বিষয়টি মডারেটরদের আলোচনাধীন রয়েছে। মডারেটরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্তে উপনীত হলে বিষয়টি আপনাদের জানানো হবে।

সচল থাকুন, সচল রাখুন।

ধন্যবাদ।


মন্তব্য