সকাল সকাল ক্লাশ শেষ করে বাসায় ফিরবো ভাবছি এমন সময়
খালামনির ফোন-"কি রে আসবি না? সময় পেলে একটু হলুদ ছোঁয়াবো।" আমি তো মিডের জ্বালায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে মিষ্টিমনির(ছোট খালামনি) বিয়ে। অথচ একসময় কিছুই ভুলার উপায় ছিল না। খালামনির জন্মদিন...নানাভাই নানুর বিবাহ বার্ষিকী...আব্বু আম্মুর বিবাহ বার্ষিকী কিছুই ভুলার উপায় ছিল না। সকালে হোক রাতে হোক একবারের জন্য হলেও আমরা সবাই একসাথে ছোট একটা কেক কাটতাম অথবা নানুর হাতের রান্না গরুর মাংস আর ভুনা খিচুড়ি খেতাম। সবে বরাতের সবচেয়ে আকর্ষনীয় ছিল নানুর হাতের মরিচ বাটা গরুর মাংস ভুনা। গরম গরম চালের রুটি দিয়ে সেই গরুর মাংস ভুনা...না খেলে কেউ বুঝবে না,খেলে কেউ ভুলবে না। আমরা সবাই মজা করে খেতাম আর নানু বরফে হাত ভিজিয়ে চোখের পানি ফেলতেন। এটাও তাঁর কাছে মহা আনন্দের ব্যাপার...আমরা মজা করে খাচ্ছি এটা দেখেই যেন তিনি সুখ পেতেন। আর সবে বরাতের রাতে ঘরের চালে পটকা ফোটানোর মতো মজার দিন হয়ত আর পাবো না।
আম্মুর মামাতো বোন হলেও পাশাপাশি বাসায় ছিলাম বলে হয়ত আমাদের মধ্যে আন্তরিকতা অনেক বেশী ছিল। খালামনিরাও আমাকে অনেক আদর করতো। স্কুল থেকে বাসায় আসার পর আমাদেরই রাজত্ব থাকতো। মিষ্টিমনি আর আমি পিঠাপিঠি ছিলাম বলে আমাদের মধ্যে সারাদিন এটাওটা নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকতো। মিষ্টির কোন জিনিস ভাল হলেও সেটা আমার কাছে খারাপ মনে হতো। তবে মিষ্টির একটা জিনিস খুব ভাল লাগতো। মিষ্টি খুব সুন্দর নাচতো। ও কোন কম্পিটিশনে গেলে আমরা ওই দিকে পা বাড়াতাম না। খালামনি হলে কি হবে মিষ্টি আর আমি একই স্কুলে পড়েছি,একই সাথে গান শিখেছি শেষকালে একই সাথে ব্র্যাক এ পড়েছি। মিষ্টির মনের কথা প্রায়
সবই আমার জানা ছিল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মিষ্টি তার ব্র্যাকের এক ফ্রেন্ডকে,বয়ফ্রেন্ড করেছিল কিছুই টের পাই নি :(।
যদিও আমরা আগের মতো এখন আর একসাথে থাকি না তারপরও আগের মতোই আন্তরিকতার সাথে ফোনের পর ফোন করা হয়। মিষ্টির বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়। আমি ক্লাশের পর ক্লাশ ফাঁকি মারি...ভাবি খালা তো আর বিয়ে বার বার করবে না...! মিষ্টির বিয়ের আগের দিন গুলো অনেক মাজার ছিল...গানে গানে বিয়ের ডালা সাজ়ানো...ছবি তোলা...ফুলে ফুলে ঢোলে ঢোলে নৃত্য...একটু একটু চোখের পানি আর ছোট বেলার মজার দিন গুলি মনে করতে করতে অনেক কিছু মনে পড়ে যাওয়া।
খুব সকালে ভোরের আলো ফোটার আগেই নানাভাই বড় গেইটা খুলে নামায পড়তে যেতেন। সাথে সাথে আমরা ঘুম থেকে উঠে মাথার নিচের বালিশটা মাথার উপরে দিয়ে আবার ঘুমাতাম। ঘড়ির কাটা ছয়টা ছুঁলেই আব্বুর ভাষন শুরু হয়ে যেত। ছুটির দিনগুলো অবশ্য আম্মু ভোর বেলায়ই ডেকে
তুলে ঘুরতে নিয়ে যেত। প্রতিটি ছুটির দিনে আম্মু নতুন নতুন রাস্তা খুঁজে বের করতো। রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে কোনদিন ভেজ়া ঘাসের মাঠ পেয়ে যেতাম ...হাঁটতে হাঁটতে পা ভেজাতাম...সবাই মিলে বরফপানি খেলতাম... তা না হলে শিউলি কুড়িয়ে বাড়ি ফিরতাম। বাড়ি ফিরে সা...রে...গা...মা শেষ করে আব্বুকে wordbook এর পড়া দিতে হতো। এক সপ্তাহের জন্য ৫-১০ পৃষ্ঠার পড়া বলে দেয়া হতো এবং প্রতি শুক্রবার wordbook পড়া দেয়ার মতো মহা যন্ত্রনাদায়ক কাজটা এড়ানোর জন্য আমাদের স্কুলের homework বারিয়ে দিতাম।
আমাদের বাসায় শীতকালটা অনেক মজার ছিল। সব রকমের পিঠা বানানো হতো এক ফুলপিঠা ছাড়া তাও নানুবাড়ি (নরসিংদী) থেকে সময়মত চলে আসতো। বিভিন্ন ডিজাইনের ফুলপিঠা বানিয়ে পাঠাতো নানু আর মামীরা মিলে। একবার বড় খালামনির বিয়ের সময় আমাদের বাসায় ফুলপিঠা বানানোর আয়োজন হয়েছিল তখন আমরা অনেক ছোট ভাসা ভাসা মনে
পড়ে...খেঁজুর কাটা, সুঁ, পাতলা টিন আরও কি কি দিয়ে যেন পিঠার গায়ে ফুল,লতা-পাতা আঁকা হয়েছিল। খুব অবাক হয়ে দেখেছিলাম কিভাবে নানু আম্মু আর খালামনিরা নিমিষেই পিঠার গায়ে নানারকম কারুকার্য করছিল। বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করতে সপ্তাহকাল কারো ঘুম থাকতো না চোখে।
গায়ে হলুদের দিন সারারাত হাতে মেহেদি পরার সাথে সাথে গান, বাজনা, নাটক চলতেই থাকতো। এখন তো খালি কমিউনিটি সেন্টারে যাই আর আসি। যাওয়ার সময় রাস্তার যানজ়ট ঠেলে যাই,আসার সময় বাড়ি ফিরার গাড়ি খুঁজে পাই না। তবে আমাদের মিষ্টি অনেক ভাল সে ২৪ ঘন্টা গাড়ির
ব্যবস্থা রেখেছিল ।
(অনেক দিন পর কিছু লিখার চেষ্টা করলাম কিন্তু স্নৃতিচারন ছাড়া কিছুই বের হল না মাথা থেকে ।)
মন্তব্য
ওয়েলকাম ব্যাক ...
রেগুলার লিখ ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
ok
নাহ্, বিয়ে কিংবা গায়ে হলুদের ছবি ছাড়া পোস্ট কেমন খালি খালি লাগছে। একখানা ছবি জুড়ে দ্যান।
বেশ মিষ্টি লেখা। নিয়মিত লেখা উচিত আপনার।
সেগুলোই আসতে থাকুক। সমস্যা কি?
থাকেন কই আজকাল?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
মেয়েটা এত খারাপ কেন? ১৮০বার গরুর মাংস জপ কইরা এখন তো আমার ক্ষিধা বাড়ায়া দিলো... গরুর মাংস পাই কই?
এখন থেকে গরুর মাংস ছাড়া লেখা দিবেন... ঐটা পড়ার জিনিস না... খাওয়ার বস্তু...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আব্বুর হৃদপিন্ডের সমস্যা দেখা দেয়ার পর থেকে এই জিনিস আমাদের বাসায় কম রান্না করা হয়। আপনার কথা শুনে আমারও ক্ষুধা বেড়ে গেল ...
মিষ্টি লেখা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ভালো... ।
গরুর মাংস খাইয়েন না, খাইলে গরুর মতন হয়ে যাবেণ |
নতুন মন্তব্য করুন