শহীদলিপির ইতিহাস - যে ভাবে শুরু

সাইফ শহীদ এর ছবি
লিখেছেন সাইফ শহীদ (তারিখ: শুক্র, ১৪/০৫/২০১০ - ৪:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৫২ সালে আমার বয়েস ৪/৫ বছর। ফলে ২১শে ফেব্রুয়ারীর কোন স্পষ্ট স্মৃতি নেই। তবে একটু বড় হবার পর থেকে দেখতাম, ঐ দিন খুব ভোরে ছাত্ররা খালি পায়ে হেটে হাতে ফুল নিয়ে স্থানীয় শহীদ মিনারে মিছিল করে যাচ্ছে। একটু বড় হলে আমিও তাদের সাথে যাওয়া শুরু করলাম। শীতের ঐ ভোরে উঠে সবার সাথে দল বেধে খালি পায়ে হাটার মধ্যে কেমন যেন একটা আলাদা উত্তেজনা অনুভব করতাম। চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় মিছিল করার সূযোগ ছিল না, কিন্তু আমার মনে আছি আমি একাকী পিছনের পাহাড়ে উঠে ভাষা শহীদদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলী জানাতাম।

১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ – এ চার বছর যখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র – তখন প্রতিটি শহীদ দিবসে শহীদ মিনারে যেতাম প্রভাত ফেরীতে যোগ দিয়ে। শেষের বছরগুলিতে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হবার কারনে আরও ব্যাস্ততায় কাটতো ঐ দিনটি। ফলে ১৯৮৫ সালে যখন লন্ডন থেকে কম্পিউটারে প্রথম বাংলায় চিঠি লিখে পাঠালাম ঢাকাতে আমার মাকে, তখন একটা নামই শুধু মনে এসেছিল – তাই এ প্রচেষ্টার নামকরণ করলাম “শহীদলিপি”।

শহীদলিপি - ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলী

আজ ২৫ বছর পরে শহীদলিপির ইতিহাস লিখতে বসে দেখছি আমার জীবনের অনেক ঘটনাই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে এই ইতিহাসের সাথে। ফলে কিছুটা অপ্রসাংগিক হলেও, সেই সব ঘটনার কিছু কিছু উল্লেখ করতে বাধ্য হচ্ছি এখানে।

সবে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলাকে এক মাত্র রাষ্ট্র ভাষা ঘোষনা করা হলেও এর ব্যবহার তখনও অনেকটা সীমিত। আমি তখন নতুন গঠিত বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোতে চাকরী করি। আমরা তখন নানা বিদেশী কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশে তাদের এজেন্ট হবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই সূত্রে বেশ কিছু বিদেশী কোম্পানীর লোকের সাথে আমার যোগাযোগ এবং বেশ অনেকের সাথে কিছুটা বন্ধুত্বও হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে সুযোগ হল প্রথম বিদেশে যাবার। সুইজারল্যান্ড, হলান্ড, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ইত্যাদি দেশে যাবার সূযোগ পেলাম। কম্পুউটারের ব্যবহার দেখলাম বিভিন্ন স্থানে।

১৯৮০ সালে যখন বিলাতে হোম কম্পুউটার হিসাবে ZX-80 মাত্র ৫০ পাউন্ডের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে জানলাম তখন উঠে পরে লাগলাম আমার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যে ঐ কম্পুউটার একটা সংগ্রহ করতে। আমার এক বিদেশী বন্ধুর মাধ্যমে একটি ZX-81 মডেলের কম্পুউটার যখন হাতে পেলাম তখন খুবই উৎসাহিত বোধ করলাম। এত বেশী সময় ব্যয় করতে থাকলাম তার সাথে যে আমার স্ত্রী রীতিমত হিংসা করতো লাগলো ঐ বস্তুটাকে। ঠাট্টা করে সতীন বলে ডাকা শুরু করলো আমার ঐ সখের কম্পুউটারকে।
ZX-81ZX-81

এর মেমরীতে ছিল মাত্র ৮ কিলোবাইট রম। মনিটরের বদলে বাড়ীর টিভির সাথে তার সংযোগ করে ডিসপ্লে দেখতে হতো। এই সামান্য মেমরীতেই সিসটেমস ভ্যারিয়েবলস, স্ক্রীন ইমেজ, প্রোগ্রাম এবং ডাটার স্থান সংকুলন করতে হতো। ক্যাসেট টেপ রেকর্ডার সংযোগ করে ডিস্কের বিকল্প হিসাবে কাজ করতে হতো। তবে সিনক্লিয়ার বেসিক নামে একটা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ছিল। আমি এর সাথে একটা ১৬ কিলোবাইট মেমরী এক্সটেনশন যোগ করে মহা উৎসাহে প্রোগ্রামিং-এর কাজে লেগে গেলাম। টিভির স্ক্রীনে বাংলায় একটা “ব” লিখতেই প্রায় সমস্ত মেমরী লেগে গেল। তবু মনে হল যেন বিরাট কিছু একটা করতে পেরেছি। কম্পুউটারে বাংলা একটা অক্ষর লিখতে পেরেছি – এটা কি সামান্য ব্যাপার?

তখনকার দিনে টেলেক্স মেসিন বলে একটা জিনিস ছিল। বিদেশের সাথে আমাদের অফিসের যোগাযোগের জন্যে এটা ব্যবহৃত হত। এটা চালাবার জন্যে একজন টেলেক্স অপারেটর ছিল। তার কাজ দেখে দেখে আমি শিখে নিয়েছিলাম কি ভাবে টেলেক্স বা টেলিপ্রিন্টার মেসিন চালাতে হয়। একদিন অপারেটরের অনুপস্থিতিতে এক দরকারী সংবাদ আমিই টাইপ করে পাঠিয়ে দিলাম। ফলে কোম্পানীতে সবাই ভেবে নিল যে যন্ত্রপাতির উপর আমার অনেক দখল। এর ফলে যখন কোম্পানীতে প্রথম কম্পুউটার কেনা হলো তখন অনেকটা স্বাভাবিক ভাবেই এটার ভার আমার উপর এসে পড়লো।

বাংলাদেশে তখন খুব কম কম্পুউটার ব্যবহার হত। আনবিক শক্তি কমিশনের একটা IBM 1620 মেইন ফ্রেম কম্পুউটার ছিল। এছাড়া সামান্য কয়েকটি বড় ব্যাংক মিড-রেঞ্জের কম্পুউটার ব্যবহার করতো। পিসি তখন সবে চালু হয়েছে। আমাদেরকে কে যেন পরামর্শ দিল কম্পুউটার ব্যবহার করে আমাদের কোম্পানীর হিসাবপত্র রাখতে। কারণ নতুন স্বাধীন দেশে আমাদের কোম্পানীর প্রবৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছিলো না আমাদের একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট। আমেরিকার তৈরী পিসি আর্কাইভ কম্পুউটার কেনা হল। তখনকার দিনে এটার দাম ছিল ৬০০০ ডলার – বেশ অনেক টাকা। একই সাথে আমেরিকার কোম্পানী পিচ-ট্রির তৈরী একাউন্টিংয়ের সফটওয়ার আসলো।

আমার উপর ভার পড়লো বাক্স থেকে খুলে কম্পউটারটি চালু করার। আমাদেরকে ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে এটি একটি সহজ কাজ। যখন সব কিছু কেবল ইত্যাদি সংযোগ করে কম্পুউটার চালু করবো, তখন কোম্পানীর সব ডিরেক্টর এবং একিজকিউটিভরা এসে আমার ঘরে ভীড় করে দাঁড়িয়েছে। চট করে ম্যানুয়ালের পাতায় চোখ বুলিয়ে দেখলাম ঠিকই আছে সব কিছু। মনে মনে বিসমিল্লাহ বলে যখন সুইচ অন করলাম তখন দেখলাম মনিটরের সবুজ বাতি জ্বললেও কোন লেখা ফুটে উঠলো না স্ক্রীনে। যদিও আমাকে কেউই কিছু বলেনি, তবু আমার মনে হলো এ যেন আমারই অক্ষমতা যে আমি কম্পুউটারটি চালু করতে পারিনি। মোটা মোটা ম্যানুয়াল দু’টি সাথে করে বাসায় নিয়ে যেয়ে প্রায় সারারাত ধরে পড়লাম। পরের দিন অন্তত স্ক্রীনে মেমরী ডাম্প করতে পারলাম। সাহস করে ঘোষনা দিলাম এই কম্পুউটারের মাদার বোর্ড খারাপ। আমেরিকার কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করা হল। তারা রাজী হল তাদের সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠাতে আরও হাজার খানেক ডলারের বিনিময়ে। আমাদের রাজী না হয়ে উপায় ছিল না। আমি ফোন করে সেই ইঞ্জিনিয়ারকে বললাম সে যেন সাথে করে একটা মাদার বোর্ড নিয়ে আসে।
pcpc

প্রথমে সে আমাকে বেশী পাত্তা দিতে চায়নি। সে বললো এর আগে কখনো তাদের কোন কম্পুউটারের মাদার বোর্ড খারাপ হয়নি। আমি বললাম হয়তো তাই, তবে যেহেতু এখানে কোন স্পেয়ার পাবার সম্ভবনা নেই তাই অতিরিক্ত মাদার বোর্ড সাথে আনলে কোন ক্ষতি নেই। পরে দেখা গেল আমার কথাই ঠিক – মাদার বোর্ড বদল করতে হল। এর পর অনেকটা স্বাভাবিক ভাবেই কম্পুউটার বিভাগের ভার আমার উপর এসে পড়লো।

পিচ-ট্রি সফটওয়ারটি লেখা হয়েছিল বেসিক ল্যাংগুয়েজে। তখনও কম্পাইলারের ব্যবহার এতোটা চালু ছিল না, ফলে সোর্স-কোড ইন্টারপ্রেটারের সাহায্যে চালিয়ে এই প্রোগ্রাম ব্যবহার করতে হতো। খুবই ধীর গতিতে চলতো এই প্রোগ্রাম। আমার মনে আছে, ট্রানজেকশন পোষ্টিং করার পর ট্রায়াল-ব্যালান্স পেতে আমরা সারা রাত কম্পুউটার চালু করে রেখে দিতাম। এক লাইন প্রিন্ট করার পর কয়েক মিনিট চুপ-চাপ বসে থাকতো কম্পুউটার – ভাব খানা যেন চিন্তা করছে এর পর কি লিখবে – তার পর আবার আর এক লাইন লিখে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

আমেরিকান নিয়মে সংখ্যা লেখা হতো মিলিয়ন, হাজার, ইত্যাদির পর ‘,’ চিহ্ন দিয়ে, অথচ বাংলাদেশে আমরা সংখ্যা লিখি কোটি, লাখ, হাজার, ইত্যাদির পর ‘,’ ব্যবহার করে। আমাকে একজন প্রশ্ন করলো – এটা ঠিক করা যাবে কিনা।

- কেন যাবে না? – চিন্তা না করেই উত্তর দিলাম আমি।

ভেবেছিলাম, যেহেতু সোর্স-কোড আছে, সামান্য কয়েকটা স্থানে ‘,’-এর অবস্থান বদলে দিলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। পরে দেখা গেল আমাদেরকে হাজার হাজার লাইন সোর্স-কোড চেক করতে হচ্ছে এই সামান্য কাজটুকু করতে যেয়ে। তবে এর ফলে আমার একটি লাভ হলো – বেসিক প্রোগ্রামটি আরও ভালভাবে জানার সুযোগ হল। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোরট্রান ও এ্যাসেম্বলী ল্যাংগুয়েজের উপর কয়েকটি সর্ট কোর্সে অংশ নিলাম। এগুলি যে খুব একটা কাজে এসেছে তা নয়, তবে নিজে থেকে আরও শিখতে আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।

এরপর শ্রীলংকার কলম্বোতে একটা কম্পুউটার কোর্স করার সুযোগ এলো। আমাদের কোম্পানী থেকে দু’জন যোগ দিলাম সেখানে। আরও চোখ খুলে গেল বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা জানতে পেরে। বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন লেখক ও সাটেলাইট কমুনিকেশনের স্বপ্নদ্রষ্টা আর্থার চালর্স ক্লার্ক [২০০১: এ স্পেস ওডেসী - তার অন্যতম বিখ্যাত বই] তখন শ্রীলংকায় বাস করেন। তার লেখা নতুন উপন্যাস তিনি কম্পুউটার মডেমের মাধ্যমে নিউ ইয়র্কে তার পাবলিশার্সের অফিসে পাঠাতে চাচ্ছিলেন। আমাদের ট্রেনিংয়ের একজন আমেরিকান ইনসট্রাক্টর এই কাজে জড়িত ছিলেন। ক্লার্কের বাড়ীতে যাবার সময় আমাকেও সাথে নিলেন। দেখলাম কি ভাবে হাজার মাইল দূরে ডাটা পাঠানো হয়। আর্থার ক্লার্কের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলারও একটা সুযোগ হলো।

আমাদের অফিসে একটা বাংলা টাইপ-রাইটার ছিল – তবে ব্যবহার খুব একটা হতো না। আমি একদিন তাতে একটি চিঠি লিখতে যেয়ে দেখলাম – আমার নিজের নামটিই ঠিক ভাবে লেখা যাচ্ছেনা। ‘সাইফু’ পর্যন্ত লিখে অনেক চেষ্টা করেও একটা ভাল ‘দ্দ’ লিখতে সক্ষম হলাম না। পাশাপাশি দু’টি ‘দ’ হাফ-স্পেস দিয়ে লেখার পর মনে হল কেমন যেন দু’টি অক্ষর একে অপরের সাথে ধাক্কাধাক্কি করছে। এটি ছিল মুনির-অপটিমা টাইপ-রাইটার। একটু খতিয়ে দেখলাম – শহীদ মুনির চৌধুরী যতেষ্ঠ প্রজ্ঞা ও কৌশল প্রয়োগ করেছেন এই টাইপ-রাইটার সৃষ্টিতে। এই পরিসরের যান্ত্রিক টাইপ-রাইটারের পক্ষে এর চাইতে বেশী কিছু করা হয়তো সম্ভব হতো না। তবুও নিজে একজন যন্ত্র-প্রকৌশলী হয়ে আমার মেনে নিতে কষ্ট হল যে যন্ত্রের কারণে ভাষাকে বিকৃত করতে হবে। মাথায় ঘুরতে থাকলো – কি করে এই টাইপ-রাইটারের উন্নতি করা যায়। কোন সহজ সমাধান বের করতে পারলাম না। তখন হঠাৎ খেয়াল হল – আচ্ছা কম্পুউটার দিয়ে কেন আমি বাংলা লিখিনা? তখনকার দিনে এটার কোন বাবসায়িক সম্ভাবনা ছিল না – কারণ কম্পুউটারের মূল্য সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তাই আমার এই প্রচেষ্টার কথা তেমন কাউকে না জানিয়েই নিজে থেকে এর উপর কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

এই সময় অযাতিত ভাবে একটা সুযোগ এলো জাপানে যাবার। আমি শুনেছিলাম জাপানীরা নাকি তাদের ভাষা ব্যবহার করে কম্পুউটারে। আমরা ‘সোর্ড কম্পুউটারর্স’ নামে একটা জাপানী কোম্পানীর বাংলাদেশে এজেন্ট নিযুক্ত হলাম এবং তাদের অপারেটিং সিস্টেমের উপর ট্রেনিং নিতে টোকিও-তে গেলাম। তখনও মাইক্রোসফটের DOS অপারেটিং সিসটেম এক চেটিয়া বাজার দখল করেনি। এটা হয়তো অনেকের জানা নেই – এক্সেল, ডাটাস্টার, ইত্যাদি প্রোগ্রামের আগে সোর্ডের ‘পিপ’ ছিল প্রথম স্প্রেডসীট প্রোগ্রাম।

জাপানে যেয়ে জাপানী ভাষা সম্পর্কে জানলাম যে তারা সাধারনত ৩ টি ভিন্ন বর্ণমালা ব্যবহার করে তাদের ভাষাতে লিখতে। হিরাগানা ও কাটাকানায় ব্যবহৃত অক্ষরের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম। তবে যখন চীনা কাঞ্জি অক্ষর তাদের ভাষায় লিখতে হয় তখন ব্যাপারটা আরো জটিল হয়ে পড়ে। আগে জাপানী লেখা হতো উপর থেকে নীচে এবং ডান দিক থেকে শুরু করে বায়ে আসতো লেখা। পরে শুরু হল ইংরেজীর মত বা থেকে ডানে লেখা। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে থেকে জাপানে ব্যবহার হয়ে আসছে চীনা কাঞ্জি অক্ষর। এদের সংখ্যা কয়েক হাজার (আমাকে বলা হল ৫০,০০০ থেকে ১০০,০০০ হতে পারে মূল কাঞ্জি অক্ষরের সংখ্যা), তবে ১৯৮১ সালে জাপানী সরকার আইন করে প্রায় ২০০০-এর মত কাঞ্জি অক্ষর সাধারন জাপানী ভাষাতে ব্যবহারের জন্যে অনুমোদন করে। এই ‘জয়ো কাঞ্জি তালিকা’ প্রাথমিক স্কুল থেকে শিক্ষা দেওয়া হয়। তবে JIS অনুসারে ৬,০০০-এর বেশী কাঞ্জি ব্যবহার করা যায়।
কম্পুউটারে অন্য দুই বর্ণমালা ব্যবহার করে কাঞ্জি অক্ষরটা বানান করলে, কম্পুউটার নিজে থেকে সেটাকে কাঞ্জি হরফে পরিবর্তন করে ডিসপ্লে করে। যখন একই বানানে একাধিক কাঞ্জি অক্ষর সৃষ্টির সম্ভাবনা, তখন কম্পুউটার বিভিন্ন অপশন ডিসপ্লে করে এবং তার থেকে সঠিক কাঞ্জি অক্ষরটা ব্যবহারকারী নির্বাচিত করে। ইংরেজী কী-বোর্ডের তুলনায় তাদের কী-বোর্ডটাও বেশ বড় এবং বিশেষ ভাবে বানানো।

আমি বিশেষ চেষ্টা করে সোর্ড কোম্পানীর প্রেসিডেন্ট তাকাওশী সিনার সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করলাম। তাকে বুঝিয়ে বললাম আমি কি করতে চাই। বাংলাদেশে বাংলার সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরলাম। রাজী হলেন তিনি আমাদেরকে সহযোগিতা করতে। বললেন প্রথমত আমাকে দু’টি কাজ করতে হবে -

১) বাংলাতে যতগুলি অক্ষর ব্যবহার হয় তার একটি বিস্তারিত তালিকা তৈরী করে প্রতিটি অক্ষর সম-আকারের একটি ৮X৮ বা ১৬X১৬ গ্রিডের মধ্যে প্লট করতে হবে, যাতে এর উপর ভিত্তি করে ক্যারেকটার জেনারেটর রম তৈরী করা যায়।

২) বাংলা কী-বোর্ডের একটি প্রমিত লে-আউট তৈরী করে দিতে হবে।

আমাকে আরও বললেন – বাংলা ক্যারেকটার জেনারেটর রম তৈরী করতে অর্ধেক মিলিয়ন (৫ লাখ) ডলার খরচ হতে পারে। আমি বলে আসলাম সেটাতে কোন অসুবিধা হবে না। মিলিয়ন ডলার সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারনা ছিল না তখন।

১৯৮৩ সালের শেষের দিক তখন। জাপান থেকে দেশে ফিরে জোরে সোরে কাজে লেগে গেলাম। প্রিন্টিং প্রেস থেকে ১৬X১৬ ঘরের ব্লাঙ্ক টেমপ্লেট ছাপিয়ে নিলাম। আমার সহকর্মী গ্রাফিস আর্টিষ্ট আশরাফকে লাগিয়ে দিলাম বিভিন্ন অক্ষরের আকার অনুসারে প্রতিটি অক্ষরের জন্যে একটি করে ঘরের গ্রিড পূরণ করতে। দুই টাকা দিয়ে কেনা প্রথম শ্রেনীর পাঠ্য বিদ্যাসাগরের বর্ণমালা বই অনুসরণ করে সব স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জন বর্ণ আমরা মেট্রিক্সে লিপিবদ্ধ করতে লাগলাম।

যেহেতু তখনও আমার লক্ষ্য কম্পুউটারের জন্যে একটা বাংলা ক্যারেকটার জেনারেটর রম তৈরী করা এবং প্রপোরশনাল স্পেসিং-এর ধারনা তখনও দানা বাধেনি – তাই আমি চেষ্টা চালিয়ে গেলাম একটা সম্পূর্ণ অক্ষর তালিকা প্রস্তুত করার জন্যে। এখানে অক্ষর তালিকা বলতে আমি শুধু স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জন বর্ণ এবং যুক্তাক্ষরকে বোঝাচ্ছি না – ঐ সব যুক্তাক্ষরের সাথে স্বরবর্ণের যে সব অক্ষর যুক্ত হতে পারে এবং এক যুক্তাক্ষরের সাথে অন্য এক বা একাধিক যে সব অক্ষর যুক্ত হতে পারে – এ সব যুক্তাক্ষরের সম্পূর্ন তালিকা বুঝাচ্ছি।

যশোরে আমার বাবার একটি প্রিটিং প্রেস ছিল এবং আমি সখ করে সেখানে কম্পোজ করা, মেসিন চালানো, ইত্যাদি শিখেছিলাম। তখন শীশার অক্ষর ব্যবহার হতো কম্পোজ করার জন্যে। কম্পোজ করতে হতো ডান দিক থেকে বাদিকে একটার পর একটা শীশার অক্ষর সাজিয়ে। অক্ষরগুলো উল্টো ভাবে লেখা ছিল, যাতে ছাপাবার পরে সেটা বা দিক থেকে ডান দিকে লেখা দেখা যায় এবং অক্ষরগুলিও ঠিক ভাবে পড়া যায়। এর ফলে উল্টো ভাবে লেখা পড়তে আমি বেশ অভ্যস্ত ছিলাম। অর্থাৎ অক্ষরের স্বরূপ যাই হোক, সহজে পড়তে পারতাম আমি।

উল্টো লেখাউল্টো লেখা

এছাড়া ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় বাংলার উপর ভিত্তি করে আমি আমার নিজের ব্যবহারের জন্যে এক ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে ডায়েরী লিখতাম, যাতে অন্যরা কেউ আমার ডায়েরী পড়তে না পারে। এর ফলে আমি বেশ সহজেই যে কোন চিহ্ন ব্যবহার করা বাংলা সহজেই পড়তে পারতাম। আমার এই গুনটা পরে বিশেষ কাজে এসেছে যখন ম্যাকের সম্পূর্ণ অপারেটিং সিসটেম বাংলায় রূপান্তরিত করেছি। অন্য কাউকে দেখানোর আগে আমার এই কাজটি অ্যাপেল কম্পুউটারকে জানিয়েছি এবং তারা বাংলায় রূপান্তরিত সিসটেম দেখে আপত্তি তো করেইনি, বরং উৎসাহিত করেছে আমাকে। যা হোক এটা হচ্ছে পরের ঘটনা।

সাংকেতিক বাংলাসাংকেতিক বাংলা

প্রিটিং প্রেসে বাংলা অক্ষরের সংখ্যা ছিল অনেক – চার কেস ভর্তি। তবে আমার ছোটবেলার প্রিটিং প্রেসের এই অভিজ্ঞতা থেকে সহজে বের করতে পারলাম না বাংলা ক্যারেকটার জেনারেটর রম-এ মোট কতটা অক্ষরের স্থান রাখতে হবে। ভাবলাম বাংলা একাডেমীতে গেলে নিশ্চয় খুব সহজে এ খবরটা পাবো। প্রচন্ড শক পেলাম যখন জানলাম আসলেই কেউ সঠিক ভাবে বলতে পারছেন না এই সংখ্যাটি কত হবে। ব্যাপারটি একটু বুঝিয়ে বলি। বাংলা যুক্তাক্ষরের সংখ্যা বলতে আমি মূল অক্ষরের সাথে অন্য অক্ষরের সংযোগ, তা স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণ যেটাই হোক না কেন, – সেটাকে বোঝাচ্ছি। কিন্তু কেউই সঠিক করে বলতে পারলেন না যে এভাবে সৃষ্ট অক্ষরের মোট সংখ্যা কত হবে। যেহেতু প্রতিটি যুক্তাক্ষর কম্পুউটারের স্মৃতিতে বেশ খানিকটা জায়গা দখল করবে, তাই যে যুক্তাক্ষরগুলি লেখা যায় অথচ বাংলা ভাষায় ব্যবহার হয়না, সেগুলির জন্যে কোন স্থান রাখার প্রয়োজন নেই। যেমন ‘ক্মি’ ও ‘ক্মী’ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে (তাও বেশ অপ্রচলিত শব্দে), কিন্তু ‘ক্মৌ’ বা ‘ক্মৃ’ ব্যবহারকারী কোন শব্দ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঢাকার বাংলা একাডেমী থেকে শুরু করে, ও অন্য সব প্রতিষ্টানে অনেক খোঁজ করেও, যখন প্রচলিত যুক্তাক্ষরের কোন সঠিক তালিকা পেলাম না, তখন বাধ্য হয়ে নিজেরা একটা তালিকা প্রস্তুত করা শুরু করলাম। এই পরিশ্রমে আমার একটি বিশেষ লাভ হলো যে অনেক নতুন বাংলা শব্দ শিখলাম।

এ ব্যাপারে বেক্সিমকোতে আমার সহকর্মী অমিনুল হককে কাজে লাগিয়ে দিলাম। একটা মোটা রেজিট্রি খাতাতে আমরা বাংলা অক্ষরের তালিকা লিপিবদ্ধ করতে থাকলাম। প্রায় ৭০০ অক্ষরের তালিকা হয়ে গেল। এর পর দেখি নতুন অক্ষর সহজে খুঁজে পাচ্ছি না। ঘোষনা করে দিলাম আমাদের তালিকার বাইরে বিদ্যমান কোন নতুন যুক্তাক্ষরের খোঁজ দিতে পারলে ১০ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আরও নতুন কিছু যুক্তাক্ষরের খোজ পেলাম এভাবে। তারপর পুরস্কারের অঙ্ক বাড়িয়ে ২০ টাকা করলাম। এভাবে শেষ পর্যন্ত প্রায় ১২০০ যুক্তাক্ষরের তালিকা প্রস্তুত হল। এই তালিকা অনুযায়ী স্বরবর্ণ, ব্যাঞ্জনবর্ণ, যুক্তাক্ষরগুলি ও স্বর-চিহ্ন গুলি প্লট করা শুরু করলো আশরাফ। তার বন্ধু রশীদ এবং আলমের সহযোগিতা পেয়েছিল সে এই কাজে। তারা সবাই আর্ট কলেজের ছাত্র ছিল এক সময়।

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অক্ষর ও যুক্তাক্ষরের পূর্ণ তালিকা

.
প্রথমে আমার ইচ্ছা ছিল বাংলা টাইপ রাইটারকে ভিত্তি হিসাবে দাঁড় করিয়ে বাংলা কম্পুউটারের কী-বোর্ড তৈরী করবো। কিন্তু অচিরেই অনুধাবন করলাম সেটা করলে বোকামী করা হবে। যন্ত্রের সীমাবদ্ধতার কারনে ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু টাইপ-রাইটারে করা সম্ভব হয় না, যেগুলি সহজেই কম্পুউটারে করা সম্ভব। কী-বোর্ডে কোন অক্ষর কোথায় বসবে তা নির্ভর করা উচিত কোন অক্ষর কি পরিমান ব্যবহার হয় তার উপর। প্রিন্টিং প্রেসের অক্ষর বিন্যসে দেখেছিলাম যে সব চাইতে বহুল ব্যবহৃত ‘ া’ , ‘ে’, ‘ি’ ইত্যাদি হাতের সামনের নীচের কেসের ঠিক মধ্যস্থানে রাখা হয়েছে। এছাড়াও কোনটা কোনটা যুক্তাক্ষর হবে এবং তাদের বিন্যাসের উপরও নির্ভর করবে কী-বোর্ডে বিভিন্ন অক্ষরের অবস্থান। তখনও কিছু কিছু সংবাদ পত্রে ( যেমন ইত্তেফাক) এবং বিভিন্ন ছাপানো বইতে সাধু ভাষা ব্যবহার করা হতো। সাধু ভাষা থেকে সরে যেয়ে চলিত ভাষা ব্যবহার করলে যে অক্ষর বিন্যাসে কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে না – তাতেও খুব একটা নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। এছাড়া আমাদের বাংলা ভাষায় অনেক তৎসম ও তদ্ভব শব্দ ব্যবহার চলে আসছে রবীনদ্রনাথের সময়ের আগে থেকে। পরে পাকিস্তানী সময়ে চেষ্টা চলেছিল ঐ সব শব্দ কম ব্যবহার করা এবং অধিক সংখ্যায় আরবী ও ফারসী শব্দ বাংলাতে ব্যবহার করা। সুতরাং আমরা কোন দিকে যাচ্ছি তার উপরও কিছুটা নির্ভর করবে কোন কোন অক্ষর বেশী ব্যবহার হবে। তাই নতুন করে একটা সমীক্ষা চালালাম বাংলা অক্ষরের ব্যবহারের হিসাব নিতে। বিভিন্ন প্রকারের নমুনা লেখা – যেমন খবরের কাগজের খবর, টেন্ডার নোটিশ, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, অফিসের চিঠি, ব্যাক্তিগত চিঠি, পাঠ্য বইয়ের পৃষ্ঠা, ইত্যাদি থেকে কোন অক্ষর কতবার ব্যবহৃত হয়েছে তার একটা গড় হিসাব নেওয়া হল।
অক্ষরের ব্যবহারের উপর ফ্রিকোয়েন্সি এনালাইসিস করে যে জিনিসটা নজরে এলো সেটা হচ্ছে বাংলাতে সব চাইতে বেশী ব্যবহৃত প্রথম ২৪টি অক্ষর হচ্ছে নিচের তালিকা মত ব্যবহারের শতকরা হিসাবে :

শতকরা হিসাবে বাংলা অক্ষরশতকরা হিসাবে বাংলা অক্ষর

অনেক চিন্তা করে নতুন আকারের বড় করে বাংলা কী-বোর্ড [যেমন জাপানীরা ব্যবহার করতো, বা বাংলা টাইপ-সেটিং মেসিন লাইনো-টাইপে বা মনো-টাইপে ব্যবহার করা হতো] বানাবার চাইতে প্রচলিত ইংরেজী কী-বোর্ডকে বাংলা কী-বোর্ডে রূপান্তরিত করাই বেশী যুক্তিযুক্ত মনে হলো। বাংলা বর্ণমালায় মূল অক্ষরের সংখ্যা ৪৮ টি। এর মধ্যে ব্যঞ্জনবর্ণে ৩৬টি অক্ষর এবং স্বরবর্ণে ১২টি (অথবা ১১ টি)। সুতরাং কী-বোর্ডের একটি কী দিয়ে যদি দু’টি অক্ষর প্রকাশ করা যায় তা হলে ইংরেজী কী-বোর্ডের অক্ষরের ২৬টি কীর মধ্যে মাত্র ২৪টি কী ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বাংলা বর্ণমালা প্রকাশ করা সম্ভব।

আমার প্রথম প্রচেষ্টা এভাবেই ছিল। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো যে যুক্তাক্ষর তৈরীর কাজটি কম্পুউটার নিজে থেকে করতো। এর ফলে ‘স্ত্রী’ লিখতে হলে আমি পরপর ‘স’ ‘ত’ ‘র’ ও ‘ঈ’ অক্ষরের কী-তে চাপ দিতাম এবং এরপর একবার ‘খালি ঘরে’ (স্পেস বার) চাপ দিতাম। খালি ঘরে চাপ দেবার অর্থ কম্পুউটারকে জানানো যে, যে ক’টা অক্ষরের কী-তে চাপ দিয়েছি সেগুলি দিয়ে একটা যুক্তাক্ষর বানাও। এ রকম একটা ব্যবস্থা না রাখলে কম্পুউটারের পক্ষে বোঝা সম্ভব না যে আমি ‘ক’ ও ‘ই’ চেপে ‘কই’ না ‘কি’ লিখতে চাচ্ছি। আপাতঃ দৃষ্টিতে এই ব্যবস্থাটা খুব কার্যকর মনে হলেও এর দু’টি প্রধান অসুবিধার জন্যে শেষ পর্যন্ত এই পদ্ধতিকে বাদ দিতে হলো। প্রথম অসুবিধা হল অতি অধিক সংখ্যক বার খালি ঘরে চাপ দেওয়া। আমরা সাধারণত টাইপ রাইটার বা ইংরেজী কম্পুউটার ব্যবহার করার সময় প্রতি শব্দের শেষে একবার করে খালি ঘরে চাপ দেই। অথচ এখানে প্রতি অক্ষর বা যুক্তাক্ষরের পর একবার করে খালি ঘরে চাপ দিতে হচ্ছে। যুক্তাক্ষর বানাবার পরে খালি ঘরে চাপ দিতে অতটা খারাপ লাগে না, তবে যুক্তাক্ষরহীন অক্ষরের পর বারবার খালি ঘরে চাপ দিতে বিরক্তি এসে যায় এবং ভুল করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

এই সমস্যা এড়িয়ে যেতে আর একটা পদ্ধতি চেষ্টা করেছিলাম। সেটা হচেছ যুক্তাক্ষরহীন অক্ষর সাধারণ ভাবে, অর্থাৎ খালি ঘরে চাপ ছাড়া, টাইপ করলেই হবে ; শুধু যুক্তাক্ষরের বেলায় – যুক্তাক্ষর শুরু করার আগে একটা এবং যুক্তাক্ষর গঠন করার পরে আর একটা বিশেষ কী চাপতে হবে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে যেয়ে দেখা গেল যে খুব মনযোগ দিয়ে টাইপ না করলে এতে প্রায় ভুল হচ্ছে এবং ফলে এর গতি খুবই শ্লথ।

তখনকার দিনের কম্পুউটারে প্রসেসিং স্পিড এবং মেমরী স্পেস দু’টিই এখনকার দিনের তুলনায় অনেক কম ছিল। ফলে কম্পুউটারে ব্যবহার করতে যেয়ে দেখা গেল যে সামান্য কয়েক শত অক্ষরের পর কম্পুউটারের গতি শ্লথ হয়ে আসছে এবং তার স্মৃতিতে স্থান সংকুলান হয়ে দাড়াচ্ছে একটা বড় সমস্যা। আরও দ্রুত গতির এবং অধিক শক্তিশালী কম্পুউটার সহজলভ্য ক্রয় সীমার আওতায় না আসা পর্যন্ত এই পদ্ধতি ব্যবহার আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এই সব কারনে, যদিও আমি এটাকে একটি ইন্টেলিজেন্ট পদ্ধতি হিসাবে গন্য করেছিলাম – শেষ পর্যন্ত তখনকার কাজের জন্যে বাদ দিতে বাধ্য হলাম।

( চলবে … )


মন্তব্য

শরতশিশির এর ছবি

শহীদ আঙ্কেল, খুব খুশি হয়েছি যে আপনি আমাদের অনুরোধ রেখেছেন। তাসনীম ভাই আর মডারেটরদেরও ধন্যবাদ, আপনার সিরিজটি এখানে প্রকাশের ব্যবস্থা করে দিয়ে। যত বেশী এই ইতিহাস আমরা জানতে পারবো, হোক সে আরও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মেও, তত আমাদের মঙ্গল। We have the right to know the 'real' thing, not something fragmented and made-up.

ভাল থাকবেন। হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

যত বেশী এই ইতিহাস আমরা জানতে পারবো, হোক সে আরও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মেও, তত আমাদের মঙ্গল।

এই পোস্টে নিয়মের ব্যতিক্রম করা হয়নি দেখতে পাচ্ছি। পোস্টে একটা উল্ল্যেখ যোগ্য অংশ সচলায়তনে প্রথম প্রকাশিত।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

শরতশিশির এর ছবি

মুর্শেদ, যেটার কথা বলছি, সেটা তো আর পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মুখস্থ করে নেই। এই অদল-বদল করে, আরও তথ্য যোগ করে দেওয়ার কথা আমরা আগেই শহীদ আঙ্কেল্কে বলেছিলাম, নীতিমালা রক্ষার খাতিরেই। আঙ্কেল সেটাই করেছেন। হাসি

পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় আছি। সাক্ষাৎকারটি যেমন আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছিলো 'শহীদলিপি'-র ইতিহাস জানতে, সিরিজটাও সেরকম একটা 'মাস্টারপিস' হয়ে উঠবে।

দেরীতে হলেও, আপনার পরের প্রজন্ম থেকে অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা জানবেন, শহীদ আঙ্কেল। মাই হ্যাটস অফ টু ইউ!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

তাসনীম এর ছবি

অসাধারণ, চলুক।

অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করব পরের পর্বগুলোর জন্য। আমি খুবই আনন্দিত যে ইতিহাসগুলো লিপিবদ্ধ হচ্ছে, নতুন প্রজন্মের জন্য এগুলো প্রচুর উৎসাহ যোগাবে সুনিশ্চিত।

++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সাইফ শহীদ এর ছবি

এই লেখাটি সম্পাদনা করার আগেই পোষ্ট হয়ে গিয়েছে, সে জন্যে দুঃখিত। সচলায়তনে এটি আমার প্রথম পোষ্ট, তাই এই ভুল। সম্পাদনা করতে যেয়ে দেখি 'অতিথি' হিসাবে সেই ক্ষমতা আপাতত আমার নেই। এখানে কিছু চার্ট, ছবি ও লিঙ্ক দেয়া বাকী। পরে সুযোগ হলে শুধরিয়ে নেবার চেষ্টা করবো।

সাইফ শহিদ

http://www.saifshahid.com

সাইফ শহীদ

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সচলায়তনে লেখাটি পোস্ট করার জন্য। অনুগ্রহ করে ছবি গুলো ইমেইল করে দিলে আমরা পোস্ট করে দিবো।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মামুন হক এর ছবি

অসাধারণ!লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ এই ইতিহাস আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য।

দ্রোহী এর ছবি

অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি পরবর্তী পর্বগুলোর জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ, একেই বলে অধ্যবসায়! আপনাকে সালাম। একটা নতূন সিস্টেম প্রবর্তনের পিছনে যে কত চিন্তাভাবনা আর কত পরিশ্রম প্রয়োজন হয়, তা বোধগ্ম্য হচ্ছে। ব্যক্তিগত উৎসাহ আর সদিচ্ছা না থাকলে নিশ্চয়ই কেউ এতকিছু করতে পারে না।

টাকার বিনিময়ে যুক্তাক্ষর সংগ্রহটা মজা লাগল, ৭০০ থেকে একেবারে ১২০০! আশা করি সেগুলি সংরক্ষিত আছে।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। রাজনীতিবিদরা 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' বলা পর্যন্তই, কিন্তু আপনাদের মত কর্মঠ মানুষরাই আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং যাবেন, আপনাদের এই প্রচেষ্টা আর অবদানের কথা লিপিবদ্ধ থাকা উচিত।

-লাবণ্য-

অতিথি লেখক এর ছবি

শহীদ আংকলকে ধন্যবাদ সচলায়তনে লেখার জন্য............. আর সচলায়তনকে ধন্যবাদ এই গরুত্বপূর্ণ ইতিহাস আমাদের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়ার জন্য। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

নবীন পাঠক

shahriarsajib@gmail.com

বিবেকহীন বিবেক এর ছবি

আপনি অসম্ভব ভালো লেখেন। পরবর্তী পর্বের জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছি।

বোহেমিয়ান এর ছবি

চলুক
_________________________________________

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

সুমন চৌধুরী এর ছবি
অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

স্যালুট!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌এই দেশে যারা কোন কিছুর ভিত্তি নির্মান করে তারা প্রায়ই আত্মপ্রচারবিমুখ হয় এবং থাকে চুপচাপ।

কিন্তু যারা সেটি কুড়িয়ে নিয়ে বাসায় গিয়ে ধুয়ে মুছে শোকেসে রাখে, তারা অবিরাম চীৎকার করে জাতির কানের পোকা বের করে ফেলে পাইসি পাইসি.......ইউরেকা ইউরেকা!!! এইসব টোকাই লোকজনকে নিয়ে আমরা বিব্রত হলেও সরকার যে এখনো বিব্রত হয়নি তা স্পষ্ট। অজ্ঞান লোকজনে সরকার ভরপুর এতে কোন সন্দেহ নেই আর।

আপনার কীর্তি এতদিন ধরে জানতাম না সেটি আমাদের ব্যর্থতা এবং হয়তো আপনার প্রচার বিমুখতা। মোস্তফা জব্বারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ আপনাদেরকে আড়াল থেকে খুঁজে বের করতে আমাদের চেতনায় আঘাত করার জন্য।

........আর আপনাকে কি বলবো, বাংলা টাইপের একজন আদিম স্থপতিকে দাঁড়িয়ে স্যালুট! লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রণদীপম বসু এর ছবি

দারুণ হচ্ছে শহীদ ভাই !
সচলায়তনে স্বাগতম। সিসিবি-তে আপনার লেখা পড়েছি। লেখায়ও দারুণ হাত আপনার।

আবারো প্রমাণ হচ্ছে, ইতিহাস কেউ পাল্টাতে পারে না, যেভাবে নিজের জন্ম-ঘটনাকেও কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। অথচ....হা হা হা !

অনেক ধন্যবাদ শহীদ ভাই। আপনাকে এখানে পেয়ে ভালো লাগছে। ভালো থাকবেন।
পরবর্তী পর্বের জন্য বেশি অপেক্ষায় রাখবেন না আশা করি।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

যুধিষ্ঠির এর ছবি

দারুণ লাগলো। অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করবো পরের পর্বের জন্য। ভালো থাকুন গুনী মানুষ।

গৌতম এর ছবি

অনেক আগ্রহ নিয়ে লেখাটি পড়া শুরু করলাম। পড়তে পড়তে কখন যে শেষ হয়ে গেল টেরই পেলাম না! পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য আরও অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মেহদী হাসান খান এর ছবি

এত সীমাবদ্ধতার মাঝে কী ভয়ানক দৃঢ় সংকল্প নিয়ে শহীদলিপি ডেভেলপ করা যায় আজকে সেটা আমাদের জন্য চিন্তা করাও কষ্টকর।

স্যালুট!

সচলে আমার প্রথম প্রিয় পোস্টে যোগ করলাম। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকবো।

অতিথি লেখক এর ছবি

এক কথায় অসাধারণ। আমার অনেক দিন থেকেই বাংলা কম্পিউটিং এর ইতিহাস জানতে ইচ্ছে করছিল, এইটা পড়ে এত ভাল লাগল! আর আপনার লিখা সুন্দর-সাবলীল, পড়ে শান্তি পেলাম। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।


ছেড়া পাতা
ishumia@gmail.com

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

লিখতে থাকুন।

--------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

স্যালুট এবং কৃতজ্ঞতা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রানা মেহের এর ছবি

মোস্তফা জব্বার কি এই লেখা পড়েছেন?

লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা রইলো
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ। কম্পিউটারে বাংলা লেখার ইতিহাস পড়তে খুব রোমাঞ্চ লাগছে। আপনি লিখেছেনও চমৎকার। অনেক শ্রদ্ধা রইল।

কৌস্তুভ

বর্ষা এর ছবি

সত্যিকারের ইতিহাসের প্রচার দরকার সব মিডিয়াতেই...চমৎকার। আর লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

অতিথি লেখক এর ছবি

টুপি খুলে সম্ভাষন জানাচ্ছি।

যদিও কম্পিউটার রিলেটেড এবং জাপানি ভাষা নিয়ে লিখিত কিছু অংশ মাথার উপ্রে দিয়ে গেছে, তবুও বাকি সিরিজের অপেক্ষায় রইলাম।

ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ। আমার কেন যেন মনে হয় আমরা যারা নিজেদের এখন তরুণ প্রজন্ম বলে দাবী করি তারা সবকিছুতে শুধু শর্টকাট খুঁজি। বিখ্যাত হতে চাই।
অসাধারণ। এরকম লেখা তারুণ্যকে উস্কে দেয়
___________
ত্রিমাত্রিক কবি
E-mail:

আনন্দ খান এর ছবি

অনুপ্রাণিত হবার মত লেখা। এত বড় একটা কাজ করার পরেও কোন দাম্ভিকতা, কোন অহংবোধ নেই লেখনীতে - ব্যাপারটা অনুসরণীয়।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
__________________________________________________
আনন্দে থাকি, আনন্দে রাখি

___________________________________________________
আনন্দে থাকি, আনন্দে রাখি

আতিকুর রহমান সুমন এর ছবি

অসাধারন! পরবর্তী পর্বগুলোর অপেক্ষায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।