আমার তখন বেশী দিন হয়নি আমেরিকা বাসের। ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকি। আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা তখনও বাংলাদেশে ভিসার অপেক্ষায়। কোরবানীর ঈদের দিন কাটাবার আহবান পেলাম এক বন্ধুর কাছ থেকে। বন্ধুপত্নি আতিথীয়তায় কোন ত্রুটি রাখলেন না। এমনকি স্বামীকে বললেন যে কোরবানীর গোস্ত যেন আমাকে বেশী করে দেওয়া হয়।
আমি প্রতিবাদ জানালাম - আমি গোস্ত নিয়ে কি করবো ভাবি, আমি তো রান্না করতে পারিনা, বরং গরীবদেরকে বিলি করে দেন।
- এখানে গরীব কোথায় পাব, সে জন্যেই তোমাকে দেবার কথা বলছে ও। - আমার বন্ধু জানালো।
সকালে আমরা কয়েক জন মিলে গেলাম ৩০ মাইল দূরের কসাই খানাতে । উদ্দেশ্য কোরবানীর গরু কেনা ও জবাই করা। ছোট বেলা থেকে বাড়ীতে ঈদের সময় পশু কোরবানী দেখে আসছি। ফলে কোরবানী নিয়ে কখনো বেশী চিন্তা করিনি। আমেরিকাতে অবশ্য বাড়ীতে কোরবানী করা সম্ভব নয়, তাই কসাইখানার দারস্থ হতে হয়।
ছোটবেলায় আমাদের বাড়ীতে অবশ্য সাধারণত খাসি জবাই করা হতো। কখনো একটি, কখনো দু'টি। এখন যেমন প্রতিযোগিতা হয় কে কত বেশী টাকার পশু জবাই করছে, তখন তেমনটা ছিল না। সাধারণত ঈদের কয়েক দিন আগে আমরা গরু-খাসির হাট থেকে খাসি কিনে নিয়ে আসতাম। বাড়ীর কাঠাল গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করে কয়েকদিন ধরে খুব হৈ চৈ করে ছাগলকে খাওয়াতাম। আমার ছোট বোন আর আমি - দু'জনে পালা করে ছাগলকে খাওয়াতাম।
ঈদের দিন সকালে গোছল করে পাজামা-পাঞ্জাবী পরে না খেয়েই আব্বার সাথে ঈদগা ময়দানে যেতাম। রোজার ঈদে অবশ্য সকালে সেমাই, জর্দা, ইত্যাদি মিষ্টি খেয়ে যেতাম নামাজ পড়তে। আমরা শিখেছিলাম - "খেয়ে ঈদ, না খেয়ে বকরি ঈদ"। কোরবানীর ঈদকে বকরি ঈদ বলে জানতাম। তবে 'বকরি' মানে যে ছাগল, তাও জানতাম না। 'ঈদুল আজহা' বলাটা চালু ছিল না। এটা মাত্র ৫০ বছরের আগের ঘটনা। জানিনা, আজকের মানদন্ডে তখন আমরা 'কম মুসলমান' ছিলাম কিনা।
পাড়ার মসজিদের মৌলভী সাহেব একটা মস্ত বড় জবাই করার ছুরি নিয়ে বাড়ী বাড়ী ঢু মারতেন। তিনি আসছেন দেখলেই আমরা খাসির গলায় বাধা দড়ি হাতে ধরে টেনে নিয়ে আসতাম খাসিকে বাড়ীর সামনের মাঠে। খুব পারদর্শী ছিলেন মৌলভী সাহেব। সাধারনত এক পোচেই জবাই করে ফেলতেন। যে ছাগলটা এই কয়েক মুহূর্ত আগেও খুশী মনে কাঠাল পাতা চিবাচ্ছিল, জবাইয়ের পর নিস্তব্ধ হয়ে পরে থাকতো মাটিতে। তার কাটা গলা থেকে তখনো লাল রক্ত মাটিতে ঝরে পড়ছে। প্রতি বছর দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম, তাই কখনও খারাপ লাগেনি ঐ দৃশ্য। তারপর কয়েক জন মিলে ধরাধরি করে বাড়ীর মধ্যে এনে গোয়ালের কড়ির সাথে ছাগলের পা বেধে ঝুলিয়ে দিতাম। অন্যদের সাথে মিলে আমিও একটি ছুরি হাতে লেগে যেতাম ছাগলের গায়ের ছাল ছাড়াতে। খারাপ বোধ করতাম কি? মনে হয় না। মুসলমান ঘরে জন্মাবার কারনে মানসিকতা এমন ভাবেই গড়ে উঠেছিল।
আমেরিকার সব কিছুই বড় আকারের। ক্যালিফোর্নিয়ার এই কসাইখানা ছিল চিনো এলাকায় - বিরাট জায়গা নিয়ে। কাছাকাছি আসার আগে থেকেই আমরা গাড়ীতে বসে গোবরের তীব্র গন্ধ পেতে থাকলাম নাকে। আগে থেকেই বলা ছিল। স্লটারহাউসের পাশে ঘেরা এলাকায় অনেক গরু বিচরন করছে। আমাদেরকে তাদের মধ্যে থেকে একটি গরু পছন্দ করতে বলা হলো। আমার বন্ধু বেছে বেছে ৩/৪ বছরের একটি তাগড়া বাছুর পছন্দ করলো। আমাকে জানালো কম বয়সের গরুর মাংশের স্বাদই আলাদা। বাছুরটা তখন কাঠের ঘেরা মাঠের মধ্যে বেশ মনের আনন্দে এদিক ওদিক ছোটা ছুটি করে বেড়াচ্ছে। আমরা খানিক্ষণ তার ছোটাছুটি দেখলাম।
এখানকার নিয়ম অনুসারে গরুর মাথায় প্রথমে স্টান্ট বোল্টের গুলি করা হয়। তারপর আমাদের ইচ্ছামত জবাই করলে মানা নেই। আমরা সাথে আমাদের 'কসাই মৌলভী' নিয়ে গিয়েছিলাম। গুলিবিদ্ধ এবং মৃত বা প্রায় মৃত গরুর গলায় ছুরির পোচ বসিয়ে জবাই কোরবেন তিনি। এর ফলে আইনও মানা হলো আবার ধর্মও মানা হলে। সত্যি আমাদের মাথায় কত বুদ্ধি।
আমাদের পছন্দের গরুর আগে আরো ৪/৫ টি গরু ছিল লাইনে। আমেরিকাতে সব কিছু সুন্দর ভাবে লাইন করে করতে হয়। এমনকি মরার জন্যে গরুকেও লাইন বেধে দাঁড়াতে হয়। এ জন্যেই কি এরা এত উন্নত?
কসাইখানার বিরাট বিল্ডিং-এর ভিতরে চলবে এই হত্যাযজ্ঞ - সেখানে আমাদের প্রবেশাধিকার নেই। আমরা বিল্ডিং-এর বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি আর আমাদের পছন্দের বাছুরকে দেখছি। পশু প্রবেশের পথের একদিকে দেওয়াল ও অন্য দিকে লোহার রেলিং। পথটা এমনই সরু যে কোন মতে শুধু সামনে যাওয়া যায়। আমাদের বাছুরের সামনে তখন আর মাত্র ৩ টি গরু। এতক্ষণ ঠিক মতো সামনে এগুচ্ছিল সে। হঠাৎ করে যেন বুঝতে পারলো কি হতে যাচ্ছে। পিছিয়ে আসতে চাইলো, কিন্তু তার পিছনে তখন আরো কয়েকটি গরু লাইনে। সামনে যাওয়া ছাড়া পথ নেই। এবার চেষ্টা করলো পাশ দিয়ে বের হতে। কিন্তু এক দিকে দেওয়াল এবং অন্য দিকে শক্ত করে দেওয়া লোহার রেলিং। কিছুতেই বের হবার পথ নেই। আমি খুব কাছে দাঁড়িয়ে দেখছি। দেওয়ালের সাথে ঘাড় বাঁকা করে খুব জোরের সাথে ঘুরতে চাইলো। তার চামড়া ছুলে রক্ত বের হয়ে আসলো - তবুও ঘুরতে পারলো না। প্রায় ১৫ মিনিট এক টানা প্রচেষ্টা চালিয়ে গেল। তারপর হঠাৎ করে প্রচেষ্টা বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে গেল বাছুরটা। আমি অবাক হয়ে দেখলাম বাছুরের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরে পড়ছে। আর কোন শব্দ না, আর কোন প্রচেষ্টা না, আর কোন প্রতিবাদ না - যেন ভাগ্যের হাতে নিজেকে সপে দিয়ে চুপচাপ কাঁদছে সে।
আমি এর আগে কোন গরুকে কাঁদতে দেখিনি। অবাক হয়ে দেখলাম মৃত্যু পথযাত্রী এই গরুর নীরব কান্না। আমার ঈদের আনন্দ সব দূর হয়ে গেল। সড়ে এলাম সেখান থেকে।
কিছুক্ষণ পরে শুনলাম প্রত্যাশিত সেই গুলির শব্দ।
মন্তব্য
ভালো লাগছে স্মৃতিচারণ, সিরিজ চলুক...
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
এমিল,
আমেরিকাতে প্রতি বছর ১০০ কোটি পশু জবাই করা হয়। সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশী কসাইখানা আছে এখানে। সব কসাইখানাতে যে পশুদের কম কষ্ট দিয়ে মারা হয় তা নয়।
এখানে কয়েকটি লিঙ্ক দিলাম - হয়তো ভাল লাগবে না দেখতে। মনে প্রশ্ন আসে - কে মানুষ আর কে পশু।
উন্নত দেশের কসাইখানা
পাকিস্তানে গরু জবাই
আমরা কত সভ্য
সাইফ শহিদ
http://www.saifshahid.com
সাইফ শহীদ
আমি ছোটবেলা থেকেই পশু জবাইয়ের ব্যাপারটা এড়িয়ে চলি। আমেরিকাতে আসার পরে কোনদিনও র্যাঞ্চে কোরবানী দিতে যাই নি যদিও বাসার তিন/চার মাইলের মধ্যেই র্যাঞ্চ আছে।
কোরবানির পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে অমানবিক মনে হয়। ছোটবেলায় একবার কোরবানির আগের রাতে একটা গরুর চোখে পানি দেখেছিলাম। জানিনা ব্যাপারটার কোন ব্যাখ্যা আছে কীনা, কিন্তু আমার মনে হয়েছিল আসন্ন মৃত্যুদন্ডের ভয়েই সেটা ঘটেছিল।
আমি একটা ভিডিও দেখি নি আপনার দেওয়া, এগুলো থেকে যত পারি দূরেই থাকি। তবে পাকিস্তানিদের যেহেতু মানুষ জবাই করার অনেক রেকর্ড আছে, ওদের গরু জবাইটাও যে ভয়াবহ হবে সেটাও বুঝতে পারি।
ধর্মের খুঁটিনাটি বিষয় সম্বন্ধে কোন ধারণা নেই আমার, তবুও মনে হয় পশু হত্যার বদলে সমপরিমাণ অর্থ দান করে দিলেও চলে। হয়ত আমরা যখন আরেকটু সভ্য হব তখন এই ফতোয়া দেবেন কোন ধর্মগুরু।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
তাসনীম ভাই,
আপনি কি এই টাকা দেয়ার ব্যাপারটা শুধু কুরবানি ঈদের ক্ষেত্রে বলতে চাচ্ছেন? (যদিও ধর্মে এ সম্মন্ধে কী বলা আছে আমার সেই ধারণা নেই)।
তবে আমার কথা হচ্ছে, পশু জবাই কিন্তু বছরের প্রতিটা দিনই হচ্ছে। এগুলা একটু আড়ালে হয় আর কুরবানিরটা আমরা নিজেরাই করি। সুতরাং টাকা দিয়ে আসলে এর কোনো সল্যুশন নেই। তেমনি ধর্ম দিয়েও পাওয়া যাবে না। মূল ব্যাপার হচ্ছে আমরা মানুষরা হলাম ইকোসিস্টেমের পিরামিডের একদম টপে থাকা মাংসাশি প্রানি। তাই মানুষকে টিকে থাকার জন্য পশু হত্যা করতেই হবে। হয় খাওয়ার জন্য নাহয় শিকারী পশু থেকে বাঁচার জন্য। আরেকটা ব্যাপার হল, ধরা যাক মানুষ গরু খাওয়া বাদ দিল। সেক্ষেত্রে গরুর যে অভার পপুলেইশন হবে সেটা ইকোসিস্টেমের ব্যালান্স নষ্ট করবে। সুতরাং আমি বা আপনি না চাইলেও মানুষকে নির্দিষ্ট মাত্রায় পশু হত্যার মত অমানবিক কাজ করতেই হবে। আর এটা প্রাকৃতিক ভাবেই হচ্ছে। যদিও আপনি আমার চেয়ে অনেক ভাল জানেন এগুলো তারপরও হঠাৎ করে বলতে ইচ্ছা হল। (এক সময় এই সব আজাইরা তর্ক করেছিলাম)।
অনন্ত
পশু হত্যাও মানবিক উপায়ে করা যায়। আমার ধারণা কুরবানিটা নির্মম একটা পদ্ধতি যেটার প্রকাশ্যতাটা আমি ঠিক হজম করতে পারি না। আমি নিজেও মাংস খাই এবং পশু হত্যার প্রয়োজনীয়তাটাও বুঝতে পারি। পশু হত্যা বছর ধরেই হয়, এজন্য কুরবানির সময় হয়ত এটা না করে অর্থটা দান করলেই বরং ভালো। আমি নিজেও এটা করি এখন।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
অনন্ত
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
অনন্ত,
কোনটা আপনার কাছে ইকোসিস্টেম মনে হলো? মানুষ খুবই স্বার্থপর একটা প্রাণী এটা মেনে নিতে এত কষ্ট হলেও কষ্টটা পাওয়া দরকার. খোড়া যুক্তি দেবেন না উল্টো. যেদিন থেকে মানুষ কৃষি ব্যবস্থা চালু করলো সেদিন থেকেই সেটা ইকোসিস্টেম এর বাইরে চলে গিয়েছে. তাও প্রকৃতি সেটা বেলেন্স করে নিয়েছে কোনো রকমে. কিন্তু এই অতি মাংসাশীতা আর বিলাস সেটাকে বেলেন্স এর বাইরে নিয়ে যাচ্ছে. পৃথিবীর ইতিহাসে কখনো ১০০ কোটির বেশি মানুষ ছিল না. গত ১০০ বছরে সেটা ৬০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে. আর গুনিতক হারে বেড়েছে মানুষের ভোগের সীমা. আপনি কি মনে করেন এই এত জনসংখ্যা বৃদ্ধি আর তার ভোগ সামাল দেয়া খুব ইকোসিস্টেম্যাটিক?
http://en.wikipedia.org/wiki/Environmental_effects_of_meat_production
দয়া করে এটা পরে দেখবেন, মাংশ উত্পাদন টা খুব প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া না সো ইকোসিস্টেম এর কথা আসে না. একদমই না. ১ কেজি মাংশ উত্পাদনে যতটুকু কাচামাল ব্যায় হয় তা দিয়ে মোটামুটি কয়েকশ মানুষের পানি আর খাদ্যের চাহিদা মেটানো যায়. আবার বলে বসবেন না যে মানুষের জন্য প্রানিজ আমিষ না হলে সব মারা যাবে.
"The myth that animal protein is essential in the human diet was based on the studies of rats. The World Health Organisation revised it’s protein scoring tables in 1991 after research on humans demonstrated that plant protein was perfectly adequate.
But not only is it adequate, decades of good research shows that eating a whole foods plant-based diet, minimising refined foods, salt and animal fat, avoiding meat eggs and dairy products leads to the greatest health and the lowest incidence of heart disease, cancer and other western lifestyle induced diseases."
এত এত দক্ষিন ভারতীয়রা সফটওয়ার ডেভেলপ করছে নিশ্চই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে নয়. আর আমি নিজের সামনেই তো একজন কে দেখেছি. বুয়েট এ আমার সুপারভাইজর তাহের আলী স্যার ছোটবেলাটা বাদে সারা জীবন ভেজিটারিয়ান. উনার বয়সের যে কারোচে সবল ছিলেন অনেক অসুখ নিয়েও. সো মাংশ না খেলে মানুষ মারা যায় না.
আর এই লক্ষ লক্ষ গরু গুলোকে ইকোসিস্টেমএর বাইরে এনে কৃত্রিম ভাবে গড়ে বড় করা হচ্ছে এবং ওভারপপুলেটেড করা হচ্ছে. সো মোটেও বেলেন্স নষ্ট হবে না এবং আমাদের "এত কষ্ট করে" এদের কে না মারলেও চলবে. আর প্রাকৃতিক ভাবে যে হচ্ছে না সেটা তো বললামই.
ধন্যবাদ
ইগল,
আমি যা বলতে চেয়েছি তা হল, প্রাকৃতিকভাবে কিভাবে ইকোসিস্টেম সাম্যাবস্থায় থাকে। আপনি শুরু করেছেন যখন মানুষ এই সাম্যাবস্থার উপর হস্তক্ষেপ করা শুরু করে তার পরে। সেখান থেকে আমি আপনার সাথে একমত। আপনার প্রশ্নের কারণে আমিও বিভিন্ন ভাবে সার্চ করে জেনেছি যে এই কৃত্রিমভাবে পশু সম্পদ উৎপাদন পরিবেশের জন্য শুধু ক্ষতিকরই না এটা গ্লোবাল অয়ার্মিং এর দায়ী তালিকায় পাঁচ নম্বরে দাঁড়িয়ে।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে পশু হত্যা কিন্তু চলবেই, আমি বা আপনি না চাইলেও। তাই আমাদের কাজ হবে মানবিক দিক গুলোর পাশাপাশি বাস্তবতার নিরিখে কিভাবে সবচেয়ে এফিশিয়েন্ট উপায়ে এই প্রক্রিয়াগুলোর সমাধান করা যায় তা খোজা, যাতে পরিবেশের দূষণ সর্বনিম্ন হয়।
আর পশু হত্যা বিষয়ে আমার চিন্তাভাবনা আমি নিচে একটি মন্তব্যে করেছি। একই সাথে, এ বিষয়ে নিচে দেয়া মাহবুব লিলেন ও দুর্দান্তদা এর মন্তব্যের সাথেও আমি একমত।
ধন্যবাদ আপনাকে।
অনন্ত
অনন্ত,
ধন্যবাদ আপনাকেও। কিছু মনে করবেন না প্লিজ। লেখাটা পড়ে আর লিঙ্কগুলো দেখে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল খুব। আপনার কথাগুলো সত্যি এবং তার সাথে এও সত্যি যে আমাদের ভোগ এর পরিমান অনেক বেড়ে গেছে। এখানে অনেকেই বলেছেন তাদের ছোটবেলায় আমরা যতটা এখন দেখি তারচেয়ে পশুহত্যা অনেক কম ছিল। আর এর ফল তো আমাদেরও পোহাতে হচ্ছে। আগেতো এখনকার মত এত হৃদরোগ, রক্তচাপ আর স্থুলতার প্রাদুর্ভাব ছিলনা। আমিও আপনার সাথে একমত যে আপনি আমি চাই বা না চাই এটা চলতেই থাকবে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবেও যদি আমরা মাংস খাওয়া একটু কমাতে পারি আখেরে লাভটা নিজের স্বাস্থ্যেরই হবে। আর অবুঝ গরু, মুরগি, ছাগল, শুকর গুলোর প্রাণও কিছু রক্ষা পাবে। সাথে বিপুল পরিমান শস্য আমেরিকান গরুদের পেটে যাওয়ার বদলে আমাদের মত গরীব দেশের লোকেদের পেটে যাওয়ার আশাও করতে পারি। আর পরিবেশ রক্ষা তো আছেই। অনেক বেশি আশা করে ফেললাম বোধয়...
ভালো থাকবেন।
আরও কারো কি এমন অভিজ্ঞতা আছে?
সাইফ শহিদ
http://www.saifshahid.com
সাইফ শহীদ
আমি কোরবানির দিন সকালে গরুর চোখে পানির দাগ দেখেছি। আমার ধারণা ছিল গৃহপালিত প্রাণী গরু পরিচিত পরিবেশ না পেয়ে কাঁদছে। পোষা কুকুরের বেলায় এমনটা দেখেছি।
আমি অনেক ঘটনার কথা শুনেছি এবং পড়েছি যে মানুষ তার মৃত্যুর আগে বুঝতে পারছে যে মৃত্যুর ক্ষণ এগিয়ে আসছে। পশুদের জন্যও এটা অসম্ভব নয়।
সাইফ শহিদ
http://www.saifshahid.com
সাইফ শহীদ
মালয়েশিয়াতে পশুসম্পদ নাকি সীমিত, সে কারণে শুনেছি তারা কুরবানি দেয় মহল্লাভিত্তিক, মানে এক পাড়ায় একটা জবাই হয়, সবাই এসে টুকিটাকি খায়। সত্যাসত্য জানি না।
আপনার কাঁঠালপাতা খাওয়ানোর অভিজ্ঞতা আমার সাথে মিলে গেলো। আমি জন্মে অবধি দেখে আসছি আমরা একটা বা দুটা খাসি কুরবানি দিচ্ছি। অনেকগুলো বছর ঐ খাসির পরিচর্যার দায়িত্ব আমার ঘাড়েই চাপতো। আশপাশ থেকে কাঁঠালপাতা যোগাড় করে খাসিকে খাওয়ানো একটা খুব আনন্দদায়ক কাজ ছিলো। ঢাকায় চলে আসার পর কুরবানি একটা বিরক্তিকর নোংরা অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে।
ভেবেছিলাম ছাগল আর কাঁঠালপাতাকে শৈশবের সিন্দুকেই তালাবন্দী করে রাখবো। রাখতেও পারতাম।
কিন্তু তারপর ব্লগিং শুরু করে দিলাম ...
দীর্ঘশ্বাস।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
লেখাটা পড়ে মন খারাপ হলো। তারপর
এটা পড়ে ভাবলাম সত্যিই ভাগ্যবান আমরা।
হিমু,
আমি আমার উপরের অভিজ্ঞতার পর থেকে গরু খাসির মাংস খাওয়া প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছি। ঐ কোরবানীর বাছুরের নীরব কান্নার ছবি আমি এক যুগ পরে আজও মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি।
আমারও দীর্ঘশ্বাস।
সাইফ শহিদ
http://www.saifshahid.com
সাইফ শহীদ
সাইফ ভাই, আমি যদি ভুল না বুঝে থাকি তো হিমুর দীর্ঘশ্বাস ভিন্ন কারণে
পিপিদার সাথে সহমত।
আমি গরু-খাসির মাংস না খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি গত কয়েক মাস যাবৎ, কিন্তু পারি না। বহুদিন এটাসেটা খেয়ে টিকে থাকার পর একদিন হের চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে হামলা করি। ঐদিন ফাটিয়ে গরুর মাংস দিয়ে রাঁধা তেহারি খাই।
কিন্তু মুরগি বা গরু বা খাসি জবাইয়ের দৃশ্যটা সহ্য করার মতো নয়। এখানে দোকানে চাক চাক মাংস সাজানো থাকে, মোটামুটি টাটকা, আমরা ওজন মাপিয়ে কিনে এনে রেঁধে খাই। এটা হয়তো "সভ্যতা", যাবতীয় নিষ্ঠুর জিনিসকে চোখের আড়ালে সরিয়ে রাখা।
আমি মনে করি আমাদের শিশুদেরও এই জবাইয়ের দৃশ্যগুলো থেকে দূরে রাখা উচিত।
ক্লাস সেভেন পর্যন্ত আমি মোটামুটি আনন্দের সাথেই কুরবানি দেখতাম। কিন্তু সেবারের কুরবানিতে গরু জবাই করতে কসাই (মৌলভি মনে হয়) গরু আর মানুষের হাত দুইটা একবারেই কুরবানি করতে চেয়েছিল। সেই লোকটা তার কাটা হাত নিয়ে ভয়ার্ত চোঁখে দৌড়াচ্ছিল। তার পিছে পিছে অন্যান্য মানুষও ছিল। গরুটাকেও দেখি কাটা গলা নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। পরে আবার তাকে শুইয়ে জবাই করা হল। সেবারই ভাল মত লক্ষ্য করলাম জবাইয়ের পরো গরুটা থেকে থেকে জানান দিচ্ছিল যে সে এখনো বেঁচে আছে। এরপর থেকে আমি আর কখনোই কুরবানির সময়ে কাছে থাকি না।
আপনি যে ভিডিও লিঙ্ক দিলেন এগুলো দেখতে হলে চিত্ত অনেক কঠিন হওয়া লাগে। আমি আম্রিকায় এসে হালাল-হারামের ফ্যাকড়ায় পরে অনেক ভিডিও দেখেছি। আমার কাছে যা মনে হয়েছে একটা পশুকে যে পদ্ধতিতেই জবাই বা মারা করা হোক না কেন তা অমানবিক। মূলত, হত্যা মানেই অমানবিক; তা যে কোন প্রাণীর জন্য যে কোন পরিস্থিতে প্রযোজ্য।
অনন্ত
অনন্ত,
খুজতে গিয়ে আমি আরও এমন কতগুলি ভিডিও দেখলাম যে বাকি দিনটা বেশ মন খারাপ হয়ে থাকলো।
সহমত।
সাইফ শহিদ
http://www.saifshahid.com
সাইফ শহীদ
- বাড়িতে খাসী জবার হতো আমাদের। আরও মজার ব্যাপার হলো, আপনি পঞ্চাশ বছর আগে যেমন করে কাঁঠাল পাতা খাওয়াতেন তাদের, আমার বড় ভাই আর আমি ঠিক সেভাবেই কাঁঠাল পাতা খাওয়াতাম আমাদের খাসীকে। সবচেয়ে মজা হতো যখন হাট থেকে খাসী কিনতে যেতাম। হাটে গিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করা হতো কোন খাসী পছন্দ! আমি পছন্দের ব্যাপারে আজীবনই কাঁচা। যা দেখি, সবই পছন্দ হয়। কিন্তু সব তো আর কেনার মতো সামর্থ্য আমার বাবার ছিলো না। শেষমেশ আমার বড় ভাইয়ের পছন্দের খাসী কেনা হতো।
সেই খাসী ছুটিয়ে বাড়ি ফিরতাম খুশিতে নাচতে নাচতে। তারপর সাথে দু'চারজন সাগরেদ নিয়ে প্রায় বিকেলে পথের ধারে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যেতাম। ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে খাসীকে গোসলও করানো হতো। এই কাজটা করতো ভাইয়া আর তার সাথের দুয়েকজন। আমি আব্বার সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম কেবল। আমার ঐখানে এক্সেস ছিলো না। কতো কিছু যে মিস করেছি সাইজের কারণে!
নামাজের পর প্রতি ঈদে খাসী কুরবানির সময় ভাইয়া কাঁদতো।
এক বকরী ঈদে হলো বিশাল এক সমস্যা। নামাজের পর যখন ইয়া বড় ছুরি হাতে মৌলভি আসছেন খাসী জবাই করতে, তখন ভাইয়ার দেখি এজ ইউয্যুয়াল কান্না কান্না ভাব। মৌলভী সাহেব আমাদের বাড়িতে ঢুকতেই ভাইয়া দৌঁড়ে গিয়ে খাসীর গলা জড়িয়ে ধরে অঝোর কান্না শুরু করে দিলো। সে কিছুতেই খাসী জবাই করতে দিবে না! মহামুছিবত। মৌলভী সাহেব হাতের ছুরি ফেলে রেখে এবার লেগে গেলেন ভাইয়াকে বুঝাতে। কিন্তু তার এক কথা, "আমার খাসী আমি জবো করতে দিমু না!" আমি আবার ছোটবেলায় ভাইয়ার ব্যাপক ফ্যান ছিলাম। ভাইয়ার কান্না দেখে আমিও আর ঠিক থাকতে পারলাম না। বুঝলাম আমারও কিছু করা উচিৎ। কিন্তু ভাইয়া তো গলা ধরে রেখেছে, আমি ধরবো কই? আমি দৌড়ে গিয়ে খাসীর পেছনের ঠ্যাঙ ধরে গলা ছেড়ে চিৎকার, "ভাইয়ের খাসী জবো করতে দিমু না!"
অবশ্য আমার কান্নার পরে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আমার কান্না দেখে ভাইয়া খাসী ছেড়ে আমাকে সামাল দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে! আর সেই ফাঁকে মৌলভী সাহেব বাকিদের সহায়তায় কাজ সেরে ফেলেন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভাইয়া এখন কি করেন?
সাইফ শহিদ
http://www.saifshahid.com
সাইফ শহীদ
- এখন মনে হয় আর কাঁদে না। উল্টো মেয়েকে কোলে নিয়ে সম্ভবত বলে, "হাম্বা দেখো মা, হাম্বা দেখো!"
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ছোট বেলায় কোরবানীর দিনে গরু/খাসী জবাইয়ের সময় মৌলভী সাহেব এবং কসাইদের সাথে আমাকেই দাড়িয়ে থাকতে হতো। এই অমানবিক হত্যাযজ্ঞ আমি মনে-প্রাণে কখনোই সমর্থন করি নি। জবাইয়ের সময় মৌলভী সাহেব যখন দোয়া দরুদ পড়তেন আমি তখন মনে মনে একটা প্রার্থনাই করতাম, সৃষ্টিকর্তা তুমি যদি থেকে থাক তাহলে আমার একটা প্রার্থনা কবুল কর, আমাকে যেন আর কখনো এভাবে কোন প্রাণীর জীবন নিতে না হয়।
আমি জানি পৃথিবীতে প্রতিদিন কোটি কোটি প্রানী হত্যা করা হচ্ছে যাদের মাংস প্রসেসড হয়ে চলে আসছে আমাদের প্লেটে। তারপরও কুরবানীর পুরো প্রক্রিয়াটি আমার কখনোই ভালো লাগে নি। প্রতিদিন লাশকাটা ঘরে হাজার হাজার মৃত মানুষের পোস্টমার্টেম করা হচ্ছে, আমি চাইলেই কি একটা পোস্ট মার্টেম করতে পারব? যার যা কাজ, তার তা-ই করা মানায়। কসাইদের কাজ হলো প্রানী কেটে মাংস বিক্রি করা, কোরবানী ইদ আসলে পুরো ঢাকা শহরটাই যেন কসাইখানা হয়ে যায়।
১২ বছর বিদেশে আছি, কোনদিন কুরবানী দিতে যাই নি, যাওয়ার প্রয়োজনও অনুভব করি নি। ইদানিং আমার বউ সুর তোলা শুরু করেছে ছেলে-পুলেকে শেখানোর জন্যে হলেও নাকি কুরবানী দেয়াটা দরকার। আমার মতামত এ ব্যাপারে পরিস্কার, আমার ছেলে-পুলেরা না হয় কুরবানীটা সারা জীবনে না-ই শিখল তাতে কিইবা আসে যায়।
আপনার সিরিজটি বেশ হচ্ছে।
ছোটকালে কোরবানীর আগে পশুর চোখে কান্না আমিও দেখেছি। পাশাপাশি কোরবানি হয় বলে ওরা দেখতে পায় ও বোঝে। এ নিয়ে সমবয়সীদের সাথে বিতর্কও হয়েছে - কেউ বলেছে তাদের গোসল করানো হয় বলে চোখ ভেজা থাকে। কিন্তু আমি পানি গড়িয়ে পড়তে দেখেছি।
বড় হয়ে একসময় ঘেন্না ধরে গেল এসব নিয়ে। আমার এক শ্রদ্ধেয় গুরু বকরী ঈদের সময় গ্রামে চলে যেতেন - এসব থেকে দুরে থাকার জন্যে। আমারও ইচ্ছে হত উধাও হয়ে যেতে - কিন্তু বাড়ির বড় ছেলে বলে মাংস বিলানোর দায়িত্বভার আমার পড়ত। পালাবার উপায় নেই। এরপর শুরু করলাম নানা টালবাহানা। জবাই করার সময়টুকু নিজেকে দুরে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখতাম - পরে আব্বা জিজ্ঞেস করলে আক্ষেপ করতাম - আহা জবাইয়ের সময় থাকতে পারলাম না (কিন্তু হাফ ছেড়ে বাঁচতাম)।
জার্মানি থাকাকালীন সময়ে এসব থেকে দুরে থাকা গেছে অনায়াসে - কারন ওইখানে শহর থেকে অনেক দুরে গিয়ে স্লটার হাউজে গিয়ে কোরবানি করতে হয় - আমি যেতাম না।
ইন্দোনেশিয়ায় এসে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশের সভ্যতা দেখে আমি মুগ্ধ। এখানে কিছু রাস্তায় খোলাভাবে কোরবানি পশু বিক্রি হয়। কিন্তু কোরবানীর দায়িত্ব মসজিদের। সবাই পশু কিনে মসজিদে দেয় বা টাকা দিয়ে দেয়া। সেখানে নাম ধরে ধরে একসাথে জবাই হয় - বাইরে থেকে একবিন্দু রক্ত দেখা যায় না - রাস্তাঘাট পরিষ্কার। এক স্বদেশী জানাল - সে ছাগল কিনে দিয়েছিল মসজিদে - তার ভাগের মাংস এসেছে - গরু ছাগল মেশানো। অর্থাৎ মসজিদ সব মাংস এক সাথে করে ফেলে। আমাদের বাড়ির কাজে সহায়তাকারী মেয়েটিকে দেখলাম মসজিদ থেকে মাংস নিয়ে আসল তার আইডি কার্ড দেখিয়ে (যদিও সে এই এলাকার নয়) - হাতে অমোচনীয় কালি লাগানো তার - কি সুন্দর ব্যবস্থা - মসজিদ দায়িত্ব নিচ্ছে সুষ্ঠুভাবে দরিদ্রদের বিলানোর।
অনেকে প্রবাসী দেশে প্রবীণ আত্মীয় স্বজনদের ঘাড়ে কোরবানীর দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। এসব অমানুষিক কাজের পরিবর্তে আমি টাকা বিলিয়ে দেয়াই উপযুক্ত মনে করি।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
রেজওয়ান,
ধন্যবাদ ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কে জানাবার জন্যে। আমারও খুব ভাল অভিজ্ঞতা এই দেশটি সম্পর্কে। আমি অবশ্য শুধু জাকার্তা ও বান্দুং - এই দুটি শহরে গেছি - তাও অনেক দিন আগে। ভাল লেগেছে দেখে যে একই সাথে মুসলমান, হিন্দু, খৃষ্টান ও চাইনীজরা মিলে মিশে আছে।
সম্প্রতি উগ্রবাদী মুসলমানদের খৃষ্টান বিরোধী আন্দোলনের কথা শুনে দুঃখ পেলাম।
সাইফ শহিদ
http://www.saifshahid.com
সাইফ শহীদ
আহ, কী চমৎকার ব্যবস্থা... আমাদের দেশে এটা চালু করবে- এমন কেউ নাই...
_________________________________________
সেরিওজা
যখন আমরা মাছ এবং মাংস খাই তখন নিজের হাতে হত্যা করি বা না করি আমরা কিন্তু প্রাণী হত্যার সাথে যুক্ত হয়ে যাই
গলায় কাটলে তা মানবিক (প্রাণবিক) না মাথায় গুলি করলে মানবিক এই কথাগুলো আমার কাছে বেশ হাস্যকর মনে হয়
হত্যা তো হত্যাই
নিহত হবার পরে কোনো প্রাণীরই আর মনে থাকে না কতটা কষ্ট পেয়ে কিংবা কতটা আরামে মৃত্যু হয়েছে তার
০২
সব প্রাণীকেই হত্যা করার পরে চামড়া ছিলে কেটে টুকরা টাকরা করে সেদ্ধ করে খায় মানুষ
তার মধ্যে আবার বিধিসম্মত আর বিধিবিরোধী কী থাকতে পারে আমি বুঝি না
০৩
কেউ প্রাণীদের প্রতি দরদি হলে তার শাকসবজি খাওয়াই ভালো
(যদিও গাছপালাও প্রাণী সুতরাং সেখানেও প্রাণি হত্যা আর রান্না করার কাজ গুলো থেকে যাবে)
হত্যা (জবাই) তো কাউকে করতে হবে। সবাই এতো বেশী সংবেদনশীল যে মোটামুটি অশিক্ষিত হুজুরকেই এই কাজ করতে হয়। মন্তব্যে অনেকেই হুজুরের বিরাট চুরি (!!) হাতে প্রানী হত্যার উদ্যেশ্যে আগমনের কথা বলেছেন। প্রত্যেকদি লক্ষ-লক্ষ হাঁস-মুরগী হত্যা হয় শুধু খাওয়ার উদ্যেশ্যে। কিন্তু সবদোষ হুজুরের কেন?? সবাই ইয়াম-ইয়াম করে মাংস খাবে আর দোষটা যাবে হুজুরের উপর।
পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকটি দেশে (সিষ্টেমের ভুল) প্রকাশ্যভাবে কুরবানী হয়। সেটা দেখেই ছোটদের না অগুনিত বড়দেরও প্রান কাপে (আমি নিজে কুরবানীর সময় সামনে যাই না)।
আমাদের সিস্টেমটা বদলানো উচিত।
সহমত @ মাহবুব লীলেন
কোরবানীর পশুকে কাঁদতে দেখেছি বহু বহুবার।
কি মাঝি, ডরাইলা?
''ভেবেছিলাম ছাগল আর কাঁঠালপাতাকে শৈশবের সিন্দুকেই তালাবন্দী করে রাখবো। রাখতেও পারতাম।
কিন্তু তারপর ব্লগিং শুরু করে দিলাম ...
দীর্ঘশ্বাস।''
কোরবানির ঈদ আমার মোটেই ভাল লাগেনা, প্রতি ঈদেই গরু/খাসির সাথে আমার সেইরকম খাতির হয়ে যায়...তারপর যথারীতি কাঁদতে বসতে হয়। বোকা আমি চলার সময় পিঁপড়েও বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করি। ছোটবেলা থেকেই তৃণভোজী মেয়ে হিসেবে কুখ্যাতি (!!) আছে... মানুষ কেনো গাছকে ব্যাথা দিয়ে ফল-সবজি পাড়ে, শুধু ঝরে যাওয়া ফল কেনো খায় না টাইপ উদ্ভট প্রশ্ন আমি এখনো মাকে করি আর বকা খাই...
তারপরও যোগফল বলে- আমি একজন নিষ্ঠুর মানুষ !!
''চৈত্রী''
প্রশ্ন না করলে, সমাধান আসবে কোথা থেকে?
তৃণভোজী মেয়ে হওয়া কিন্তু খারাপ না।
সাইফ শহিদ
http://www.saifshahid.com
সাইফ শহীদ
লিঙ্কগুলো দেখে গা গুলাচ্ছে!!
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
দুঃখিত। আরো কিছু ক্লিপ আমি দেখেছি, যার লিঙ্ক দিই নাই - দেখে আমারও খুব খারাপ লেগেছে।
সাইফ শহিদ
http://www.saifshahid.com
সাইফ শহীদ
যে পশুর চোখ আছে, চোখের কোনায় আশ্রুগ্রন্থি আছে, তাদের চোখ থেকে অশ্রু নানান কারনে বেরুতে পারে। তবে জগতের সকল জীবজন্তুই মৃত্যুভয় বা ব্যাথাজনিত কারনে অশ্রু বিসর্জন করতে পারে কিনা, এটা নিয়ে কি বিতর্ক শেষ হয়ে গেছে?
----
কোরবানীর ঈদের কয়েক লাখ গরুর রক্ত আমাদের বিচলিত করে। তাহলে ভরা বরষায় আমরা যে লাখে লাখে ইলিশমাছের বংশ নাশ করি, তাতে কে বিচলিত হই না? গরুর সুরমারেখা সুন্দর চোখের অশ্রুতে যদি আমাদের মাংসরুচি ঘুচে যায়, তাহলে চোখ খুবলে নেয়া কই মাছের মাথা চূষতে বা ইলিশের পেটি থেকে সযত্নে তার পাঁজরের হাড় (কাটা) ছাড়িয়ে নিই কিভাবে? অথবা ধরুন এই যে গরমের দিনে আইসক্রীম খাচ্ছি, সেটাতে যে ডিমগুলো (মানে একটি মুরগির অনাগত সন্তান) খাচ্ছি, অথবা এই যে এক লোকমা ভাতে কতগুলো শিশু ধান গাছের জীবন নাশ হচ্ছে, অথবে এই যে পালং-টমেটো-বেগুনের সব্জী খাচ্ছি - সেটাতে কি এইসব গাছের মারাত্মক অংগহানি বা প্রাকৃতি বংশবৃদ্ধি রহিত হয় না? অথবা এই গত উইকেন্ড এ আমি আমার কমোড পরিস্কার করলাম, তাতে আমার ঢালা ক্লোরিনে কি অগণিত লাখ কোটি অনুজীব (তাতে কি, জীবন ই তো!) ধ্বংস হয়ে যায়নি?
এটা জীবনের স্বাভাবিক জমা খরচের হিসাব। একটি প্রানী বেঁচে থাকবে, তার সেই বেচে থাকা সম্ভব করতে অন্য কিছু প্রানীর জীবন যাবে।
যেহেতু স্টার ট্রেকের স্পক নই, তাই আমরা শুধু যুক্তি দিয়ে আমরা ভাবি না। আমাদের আবেগ আমদের দিয়ে একটি সীমানা টানিয়ে নেয়। তবে একএকজন মানুষের সীমানা এক এক রকম হবে, এটাও স্বাভাবিক। আমার কাছে (১) একজন মানুষ আরেকজন মানুষের চোখে অশ্রু আনছে না, (২) ছোট বড় যে আকারেরই হোক, জীবন মাত্রই মূল্যবান, তার অকারন অপচয় করা শাস্তিযোগ্য অন্যায় - এটাই ন্যুনতম গ্রহনযোগ্যতা।
বাকিটা যার যেমন অভিরুচি।
----
(কোরবানী নিয়ে আমার এই মন্ত্যব্যের বাকীটুকু আর সেটা কোট করে পিপিদার প্রতিমন্তব্য কেম্নে জানি ভেনিশ হইয়া গেল, তাই নিচের অংশ আবার টেরাই দিলাম)
নিখাদ ধর্মের নির্দেশ মানলে কোরবানী ওয়াজীব। মানে সামর্থ থাকলে করতে হবে, নাইলে নাই। যে লোক নামাজ রোজার মত ফরযে আইনই রেগুলার করে না সে যে ধর্মপরায়নতা ফলাইতে কোরবানী দেয়না সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং বাংলাদেশে কোরবানী যে একটা জাতীয় অপচয় তাতে আমার কোন সন্দেহ নাই।
কোন এক চক্রে পড়েছিল মনে হয়
যাই হোক, আবার মন্তব্যটা দেই তাহলে:
ঠ্যাঁং ছেড়ে দিয়ে লাঠি নিয়েই আমরা সবসময় লাফালাফি করি। প্রবাসেও প্রায় অনুরূপ একটা ব্যাপার দেখে আমি খুবই কনফিউজড হই-- টাইট জিন্সের সাথে মাথায় হিজাব।
সহমত।
সাইফ শহিদ
http://www.saifshahid.com
সাইফ শহীদ
সহমত।
সাইফ শহিদ
http://www.saifshahid.com
সাইফ শহীদ
অনেক গুলা মন্তব্য দেখলাম। একটা কথা লেখার লোভ সামলাতে পারছিনা। কুরবাণী ঈদে পশু কুরবাণী করতে কষ্ট হবে, মায়া লাগবে এমনটিই হবার কথা ছিল, নয় কি। ঈদের দু'দিন আগে গিয়ে মেলা টাকা দিয়ে পশু কিনে জবেহ দিয়ে ফেল্লেই ওয়াজিব পালন হলো-এ ব্যাপারটায় আমার যথেস্ট সন্দেহ আছে। আরও অনেক ব্যাপার আছে যা আমরা পাশ কাটিয়ে যাই, আমাদের যা ভাল লাগে আমরা তাই করি, ধর্মে কী বল্ল সেটাকে সুবিধে মত নিজের মত করে বুঝে নিতে পারলেই কেল্লা ফতে। যা হোক বেশী ভ্যাজর ভ্যাজর করছি না, আমি নিজেও দিগ্গজ নই। আর যতদূর জানি কষ্ট না দিয়ে পশু-পাখি জবেহ করাই ধর্মিও নিয়ম।
শাফি।
নতুন মন্তব্য করুন