তখনঃ
পি,আই,এ-র টিকিটের দাম ছিল স্টুডেন্ট কনসেশনে মাত্র ২৫ টাকা - ঢাকা-যশোর বিমান ভাড়া। তখন এক ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। তার মানে এখনকার ৫০০ টাকার কমে প্লেনে যেতে পারতাম। এখন মনে হতে পারে কত সস্তা। কিন্তু এটা ছিল আমার এক মাসের হোস্টেলের মেসিং চার্জের কাছাকাছি। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর তখন মাসিক মেসিং চার্জ ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকার মত। তবে বাবার পাঠানো টাকার সাথে স্কলারশিপের টাকা যোগ করার ফলে, টাকার খুব একটা অভাব হবে না বুঝলাম। আমি তখন সবে পরীক্ষা দিয়েছি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হবার জন্যে। বাবা-মা ও বোনদের সাথে ঈদের বন্ধ কাটাবার জন্যে প্লেনে উঠে বসলাম।
ঈদের আগের দিন শেষ বিকেলে আমাদের বাড়ীর পাশে নদীর ধারের মাঠে এসে দাড়ালাম সব ভাই-বোন - ঈদের চাঁদ দেখার জন্যে। মেঘ মুক্ত পরিস্কার আকাশ। আমার ছোট বোন সবার আগে চাঁদ দেখলো। তার নির্দেশিত স্থানে তাকিয়ে আমরাও দেখলাম সুন্দর আধ ফালি চাঁদ পশ্চিম আকাশে উঁকি মারছে। তাড়াতাড়ি হাত তুলে মোনাজাত করলাম, তারপর খুশীতে ফেটে পড়লাম সবাই।
ঈদ ছিল আনন্দের দিন - মূলত একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। ভাই-বোনেরা সবাই নতুন জামা-কাপড় পেলাম ঈদে, কিন্তু আমি লক্ষ্য করলাম, বাবা হাতে কাচা এবং ইস্ত্রী করা তার আগের পাজামা-পাঞ্জাবী পড়েই আমাদের মত সমান আনন্দিত। তিনি অবশ্য মায়ের জন্যে একটা নতুন তাতে বোনা সুতী শাড়ী কিনেছিলেন। গোসল করে সেই শাড়ী পরে মা বাবার সামনে এসে হাসি মুখে দাঁড়ালেন,বাবার চোখে খুশীর ঝলক দেখতে। আমরা একটা সুখী পরিবার ছিলাম।
আমার বড় মামা তার ছেলেদের সাথে করে আমাদের বাড়ীতে এসে আমাদেরকে তাগাদা দিলেন তাড়াতাড়ি করে ঈদের জামাতের উদ্দেশে রওয়ানা হবার জন্যে। নতুন কাপড় পরে, টুপি মাথায় দিয়ে, জায়-নামাজ ভাজ করে বগলের তলায় নিয়ে সবার সাথে আমিও চললাম 'ঈদগা ময়দানের' দিকে। মাত্র এক মাইলের পথ। পথে ভৈরব নদীর উপরে ছোট এক ব্রীজ অতিক্রম করে সবাই পায়ে হেটে এগোলাম আমাদের গন্তব্যে। অনেকের সাথে পথে দেখা হল এবং শুভেচ্ছা বিনিময়ের পালা চললো। আমি অবাক হয়ে দেখলাম এত লোক আমার বাবাকে চেনে এবং শ্রদ্ধার সাথে তাকে সম্মোধন করছে। বাবার স্মৃতিশক্তি প্রখর ছিল - তিনিও দেখলাম সবাইকে নাম ধরে সম্মোধন করছেন এবং তাদের পারিবারের সদস্যদের নাম ধরে কুশালাদি জিজ্ঞাসা করছেন।
ঈদগাও ময়দান ছিল স্থানীয় জজ কোর্ট বিল্ডিং-এর পাশে। অন্য পাশে ছিল সরকারী গার্লস স্কুল। আমরা মাঝামাঝি স্থানে একটা খালি জায়গা পেয়ে সেখানে বিছিয়ে ফেললাম জায়নামাজ ও পাটি এবং চুপচাপ বসে পড়লাম। তখনও নামাজ শুরু হতে বাকী। বাবা আশে-পাশে বসা লোকদেরকে গর্বের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলেন। সম্প্রতি প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে আমি স্টার মার্কসহ প্রথম বিভাগে পাশ করেছি - এই কথাটা বলার সময় মনে হলো গর্বে যেন বাবার বুকটা ফুলে উঠেছে। আমার এই সামান্য সাফল্যে তার এই উচ্ছাস দেখে যেমন অবাক হলাম, তেমনি ভালও লাগলো।
নামাজ তাড়াতাড়ি শেষ হলো, কিন্তু নামাজের পর অনেকক্ষণ ধরে খুতবা হতে থাকলো। আরবীতে মওলানা সাহেব কি বললেন - আমরা কেউ কিছু বুঝলাম না, তবে ভদ্রতা ও সন্মান দেখিয়ে চুপচাপ বসে শুনলাম। মোনাজাতের শেষের দিকে আরবীর বদলে উর্দ্দূ ধরলেন বাঙ্গালী মওলানা সাহেব। এবারও আমি কিছু বুঝলাম না। তবে যেহেতু বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অংশ, হয়তো বা কেউ কিছুটা বুঝে থাকতেও পারে।
নামাজের পরে সবাই উঠে দাঁড়িয়ে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করতে লাগলো। এই জিনিসটা আমার খুব ভাল লাগলো। ইসলামের সত্যিকার রূপ এখানে যেন বেশী ফুটে উঠলো। মানুষ সবাই সমান এবং একে অপরের ভাই। এর চাইতে ভাল বাণী আর কি হতে পারে।
আমি খেয়াল করলাম, প্রতিবারের মতো এবারও বাবা সবার আগে আমার সাথে কোলাকুলি করলেন তারপর অন্যদের সাথে মিলতে লাগলেন। বুঝলাম এটা আমার প্রতি তার প্রচন্ড স্নেহ ও ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।
বাড়ী ফিরে এসে দেখলাম মা তখনো তার নতুন লাল পাড়ের সাদা শাড়ী পরে আছেন। আমি পায়ে হাত দিয়ে মা ও বাবাকে সালাম করলাম। সকালেই সেমাই খেয়ে বাড়ী থেকে বের হয়েছিলাম, এবার আরও কিছু সেমাই ও তার সাথে জরদা ও অন্য কিছু মিস্টি খেলাম। দুই মাইল হাটার পর আবার ক্ষিধে পেয়ে গিয়েছিল।
আমার স্কুলের পুরানো বন্ধু ফারুক এসে হাজির হওয়ায় মা তাকে জোর করে আরও মিস্টি খাইয়ে দিলেন। তারপর আমরা দুই বন্ধু মিলে পাড়ার অন্য বাড়ীতে হাজিরা দিয়ে গেলাম। ঈদের দিনের নিয়ম ছিল পাড়ার সব বাড়ীতে একবার করে ঢু-মারা। সবাই সবার বাড়ীতে আমন্ত্রিত সেদিন। কোন বাড়ীতে ঢু মারা মানেই আবার খাওয়া। সব বাড়ীতে খাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই ঠিক করলাম, যে সব বাড়ীতে আমাদের বয়েসী মেয়েরা আছে, শুধু সেই বাড়ী গুলিতেই ঢু-মারবো আমরা।
পরিচিত কয়েকটা বাড়ীতে যাবার পর ঠিক করলাম এবার সুলতানাদের বাড়ীতে যাবো। সুলতানারা তিন বোন - এবং সবাই দেখতে ভাল (আমাদের ঐ বয়সের চোখে, যখন শরীরে স্টেস্টোরনের লেভেল অনেক বেশী)। তাদের বাড়ীতে এই আমাদের প্রথম গমন। ফারুক বা আমি, আমরা কেউই আগে এদের কোন বোনের সাথে সড়াসড়ি কথা বলিনি। অবশ্য তাদের উপর যে আমাদের চোখ পড়েছে সেটা বোনেরাও জানতো। ফারুকের সাথে তাদের বাবার পরিচয় ছিল, যেহেতু কাছাকাছি তাদের বাড়ী। কিন্তু আমি সাধারনত হোস্টেলে থাকায় আমার সাথে পরিচয় ছিল না। সুলতানার বাবা আমাদেরকে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে তাদের বাড়ীতে নিয়ে বসালেন। ফারুক আমার পরিচয় দেবার সময় উৎসাহের আতিশয্যে বলে ফেললো যে আমি পরীক্ষাতে প্রথম দশ জনের মধ্যে এক জন হয়েছি। সুলতানার বাবা আমার দিকে আগ্রহ ভরে তাকালেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেনঃ
- তোমার কোন ভাইও কি এবার পরীক্ষা দিয়েছে?
- না, ওর কোন ভাই নেই। এক মাত্র ছেলে সে। - আমি কিছু বলার আগেই এবারও ফারুক বলে উঠলো।
- কাল তোমার বাবার সাথে দেখা হয়েছিল। তিনি বললেন সামান্য কয়েকটা মার্কের জন্যে তার ছেলে প্রথম দশ জনের মধ্যে আসতে পারেনি। তাই আমি ভেবেছিলাম হয়তো তোমার আর এক ভাইয়ের কথা বলছেন তিনি।
সুলতানা ও তার বোনেরা কাছে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিল। আমরা খুব তাড়াতাড়ি জরদা আর সেমাই মুখের মধ্যে গুজে দিয়ে কোন একটা অজুহাত দেখিয়ে তাদের বাড়ী থেকে বের হয়ে আসলাম। সেদিনের সেই শিক্ষা আমি আজও মনে রেখেছি - নিজে যা, কখনো তার থেকে বাড়িয়ে বলতে নেই।
দুপুরের পর মিষ্টির বদলে প্রতিবেশীরা গোস্ত-পোলাউ দিতে লাগলো আমাদেরকে। সেদিন অন্তত আধা-ডজন 'ঈদ স্পেশাল লাঞ্চ' খেয়েছিলাম। বিকেল চারটার দিকে সম্পূর্ণ ভরা পেট নিয়ে বাড়ীতে ফিরে এক লম্বা ঘুম।
সত্যিকারের আনন্দের দিন ছিল ঐ সময়ের ঈদের দিন।
এখনঃ
গত রাতে স্থানীয় এক বাংলাদেশী আমাদের টেলিফোনের আনসারিং মেশিনে মেসেজ দিয়ে রেখেছিল যে এখানকার এক মাত্র মসজিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ ঈদ হবে। আমি ভেবেছিলাম আরও দু'দিন পরে ঈদ হবে। আমেরিকার অনেক মসজিদ সৌদি টাকা এবং নিয়ন্ত্রণে চলে। বাংলাদেশের মত সৌদিরা চাঁদ দেখা নিয়ে বেশী মাথা ঘামায় না। এমনকি তারা 'মিলাদ' পড়াকেও সঠিক মনে করে না। অবশ্য এটা নতুন কিছু না। ১৯৭১-এ যখন গ্রাম বাংলার ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষেরা নিষ্ঠুর পাকি আর্মির হাতে জবাই হচ্ছে, মা-বোনেরা 'খাটি মুসলমান বাচ্চা জন্ম দেবার জন্যে' নির্বিচারে ধর্ষিত হছে - তখন সৌদি রাজ পরিবার কোন প্রতিবাদ করেনি। অখন্ড পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। এমন কি বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও বাংলাদেশকে স্বীকতি দেয়নি তারা।
আমার কাছে ধর্ম হচ্ছে আমার জন্ম এবং আমার সামাজিক মূল্যবোধের অংশ। মুসলমান হিসাবে আমি জন্মেছি, তাই চিন্তা করে এবং বুঝে আমার ধর্ম নির্বাচন করতে হয়নি। তাই কেউ যদি এখন এসে আমাকে বলে, আমি ছোটবেলা থেকে যা শিখেছি তা ঠিক ছিল না, তাহলে আমিও তাকে অনেক প্রশ্ন করতে পারি। কোনটা কতটুকু ঠিক, সেটা বলার অধিকার কে রাখে? তাই কেউ যদি এখন বলে যে মিলাদ পড়া ঠিক না, আমি কষ্ট পাই। আমার ছোট বোন মিলাদ পড়া শিখেছিল এবং আমরা খুব গর্ব বোধ করতাম তাই নিয়ে। ছোটবেলায় আমরা একসাথে পাড়ার মসজিদে যেয়ে কায়েদা থেকে শুরু করে বানান করে কোরান শরীফ পড়া শিখেছিলাম। তাই আমেরিকার যে নব্য-মুসলমান বাড়ীতে আজ কাল মিলাদের বদলে 'হালাকার' জন্যে দাওয়াত দেয় - আমি পারত পক্ষে সেখানে যাইনা।
ঈদ উপলক্ষে আমি ইতিমধ্যে ইলেক্ট্রনিকালি ট্রান্সফার করে মমতাজের ব্যাঙ্ক একাউন্টে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি - যাতে সে নিজের এবং ছেলে-মেয়েদের জন্যে নতুন কাপড়-চোপড় কিনতে পারে। আমি এবার আমার বাবার উদাহরণ অনুসরণ করে, কোন নতুন কাপড় ছাড়াই ঈদে খুশী থাকতে মনস্ত করেছি।
গত সন্ধ্যায় আমাদের এক মাত্র ছেলে সাঈদের সীজার্স হয়েছিল। ওষুধের প্রভাবে সারা রাত অজ্ঞানের মত ঘুমিয়েছে। সকালেও সে ঘুম ঘুম অবস্থায় ছিল। কোন মতে তাকে কিছুটা নাস্তা খাইয়ে তার হুইল-চেয়ারে বসিয়ে ভাল করে স্ট্রাপ দিয়ে বেধে দিয়েছি যাতে পথে পড়ে না যায়। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ী এসে তাকে হুইল-চেয়ারসহ উঠিয়ে নিয়ে গেছে তার ডে-কেয়ার রি-হ্যাব সেন্টারে। তাকে বাড়ীতে রাখলে আমাদের একজনকে ছুটি নিয়ে বাড়ীতে থাকতে হবে। ফলে তার কিছুটা কষ্ট হবে জেনেও তাকে পাঠাতে হলো।
মমতাজ আমার চাইতে আগে রওয়ানা হলো তার স্কুলের চাকরীতে। আমি অফিসে যাবার পথে সাঈদের দুপুরের খাবার এক প্রতিবেশীর বাড়ীতে নামিয়ে দিয়ে গেলাম। রি-হ্যাব সেন্টার থেকে ফেরার পথে সাঈদকে সেখানে নামিয়ে দেবে গাড়ী এবং সে সেখানে বসে থাকবে যতক্ষণ না মমতাজ স্কুলের কাজ শেষ করে বাড়ীতে ফেরে। আমি আমাদের প্রতিবেশী মহিলা ডায়ানকে জানিয়ে দিলাম সাঈদের সীজার্সের কথা। ডায়ান কিছু টাকার বিনিময়ে ঐ সময়টা সাঈদকে রাখে। সে মোটামুটি জানে সীজার্স হলে কি করতে হয়। তবু গত মাসে যখন একদিন সাঈদ একাকী তার বাড়ীর সামনে এক চেয়ারে বসে ছিল এবং ডায়ান কি একটা কাজে বাড়ীর ভেতরে, তখন হঠাৎ করে সীজার্স হওয়ায় সাঈদ চেয়ার থেকে মাটিতে পড়ে পাথরে আঘাত পেয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে আঘাত খুব একটা বেশী ছিল না। তবে ডায়ানের ভাষ্য অনুযায়ী সীজার্স-এর কারনে প্রায় নীল হয়ে গিয়েছিল তার শরীর এবং নিশ্বাস নিতে কষ্ট পাচ্ছিল সাঈদ। এই সীজার্স-এর আশংকায় আমরা কখনো তাকে একলা রেখে কোথাও যাই না। তার আজকের এই অবস্থা হতো না যদি বাংলাদেশে জন্মের সময় ক্লিনিকের ডাক্তার ঘুমিয়ে না থাকতো এবং তার নার্স ফোরসেপ দিয়ে টানাটানি করে ডেলিভারীর চেষ্টা করে বাচ্চার মাথায় আঘাত দিয়ে না ফেলতো।
অন্যান্য দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাকে যখন দেখে, তখন সাঈদ তার দুই হাত বাড়িয়ে দেয় আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্যে। ওষুধের প্রভাবে আজ খুবই ক্লান্ত সে। কিছুই করতে চাইলো না।
আস্তে করে বললাম - "বাবা, আজ ঈদের দিন। আমাকে জড়িয়ে ধরবে না? চল আমরা কোলাকুলি করি।"
এখনো কথা বলা শেখেনি সে। ফলে আমার কথা সে বুঝল কিনা - তাও আমি জানলাম না।
এখানকার বসবাসকারী এক ডজন বাংলাদেশী ঠিক করেছে যে এবার তারা সপ্তাহান্তে ঈদ রিউনিয়ন উৎযাপন করবে। সবাই কিছু করে টাকা দেবে এবং রান্না করা খাবার কিনে খাওয়া হবে। এসব খাবার আর ভাল লাগে না আমার। হয়তো মমতাজ যাবে যোগ দিতে আর বাড়ীতে বসে সাঈদের দেখাশোনা করবো আমি।
আমাদের অফিসের হাজার খানেক কর্মচারীর মধ্যে সম্ভবত আমিই এক মাত্র মুসমান। ফলে কেউ এগিয়ে এসে আমাকে ঈদ মোবারক জানাতে আসলো না, আমিও সূযোগ পেলাম না কাউকে ঈদ মোবারক জানাবার। সকালে যখন সাঈদকে বাথরুমে নিয়ে তার দাঁত ব্রাশ করে দিচ্ছি তখন ঢাকা থেকে এক বন্ধু ফোন করেছিলো। তখন কথা বলতে পারিনি। পরে ফোন করলাম তাকে। শুনলাম আজ ২৭ রোজা শেষ করলো তারা। অন্তত আরও দু'দিন পরে ঢাকাতে ঈদ হবে। তাকেও ঈদ মোবারক বলতে পারলাম না।
দুপুরে অফিসের নীচের রেস্তোরা থেকে একটা 'কব সালাদ' কিনে খেলাম। মমতাজ ঈদ উপলক্ষে কিছু একটা রেধেছিল। একটা কন্টেইনারে তার কিছুটা ফ্রিজে রেখে দিতে দেখলাম - রাতে আমার খাবার জন্যে। সাধারনত আমি অফিস থেকে ফিরেই খাই, আর সে আরও দেরীতে বাংলাদেশী স্টাইলে রাত দশটার পর খেতে যায়। ফলে বহু দিন একসাথে বসে খাওয়া হয়নি। ফ্রিজে খাবার রাখা দেখে বুঝলাম - আজও তার ব্যতিক্রম হবে না।
আমি সাধারনত রাতে শুধু একটা আটার রুটি খাই। আসলে এটা ঠিক রুটি না, মেক্সিকান 'টরটিয়া' (Tortilla)। দেখতে ও খেতে ঠিক বাংলাদেশের হাতে বেলা রুটির মত। তবে মেসিনে তৈরী এই রুটি। এত কম খেয়েও বিগত দশ বছরে ৩০ পাউন্ড ওজন বেড়েছে। মনে হয় আমেরিকার বাতাসে ক্যালোরি ভাসে। নিশ্বাস নিলে ওজন বাড়ে। একাই যখন খেতে হবে তখন ভাবলাম, বরং ফ্রিজেই থাক এই খাবার। ঈদ রিউনিয়নের দিন যখন একা বাড়ীতে থাকবো - তখনই এটা খেয়ে নেব। আজও অন্যান্য দিনের মত একটি টরটিয়া খেয়ে ঈদের ডিনার করলাম।
ভালই কাটলো আমার ঈদের দিন - কারও সাথে ঈদ মোবারক বিনিময় না করে, ঈদের নতুন কাপড় না পড়ে এবং ঈদের কোন বিশেষ রান্না না খেয়ে।
আমার ঘরে আমার মায়ের দু'টো পুরানো ছবি টাঙ্গানো আছে। উপরের ছবিতে মা আমাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন, আর নীচের ছবিতে তিনি আমার ছেলে সাঈদকে কোলে নিয়ে আছেন। এই ছবি দু'টির নীচে এসে দাঁড়িয়ে বললাম - "মা, আজ এখানে ঈদ হচ্ছে, তাই বোধ হয় আজ তোমার কথা খুব মনে পড়ছে। ঈদ মোবারক, মা। তুমি আমার জন্যে মন খারাপ করো না। এই পৃথিবীর অনেক মানুষের দুঃখ কষ্টের তুলনায় তোমার ছেলে অনেক ভাল আছে মা। দো'য়া করো তাকে।"
[কয়েক বছর আগের লেখা]
মন্তব্য
বাবা একবার ক্লাস টেনে পড়বার সময় কী মনে করে এক ভদ্রলোককে কলেজে পড়েন বলে পরিচয় দেন। কলেজের নাম ঐ ভদ্রলোকের কলেজের সাথে মিলে যাওয়ায়, অমুক শিক্ষক এখনো আছেন কিনা, নতুন কে কে আছে ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব দিতে হিমশিম খেতে হয়, বাবা অবশ্য ঐ কলেজ সম্পর্কে বেশ ভালই জানতেন, কিন্তু এই ঘটনাটা ছোট থেকে বারবার মনে করায়ে দিতেন আমাদেরকে।
একটা মজার কথা বলি, আমরা এখন এত বড় হয়েও ঐ বাড়ি বাড়ি ঈদের দাওয়াত খাবার কাজটা করে থাকি। যদিও হামলা হয় বন্ধুদের বাড়িতেই প্রতিবেশীদের আর ঐভাবে হামলা করা হয় না এখন।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ইর্ষা করতে ইচ্ছা করছে।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
আপনার লেখা পড়তে খুব ভাল লাগে। চটপট এসে পড়ে গেলাম।
ধন্যবাদ কৌস্তভ। আমিও পড়ে এলাম "সচলত্বের গুহ্যতত্ত্ব" এবং খুব মজা পেলাম।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
পড়ে আসার জন্য অনেক ধন্যবাদ, সাইফ ভাই।
তখন-এখন পারসপেকটিভ এর সাথে, সেখানে-এখানে বললেও সঠিক হবে মনে করি। আপনি কি বলেন?
নিশ্চয় হবে। আরও অনেক কিছু হতে পারতো - একাল-সেকাল, ভোনা-গোস্ত আর মেক্সিকান টরটিয়া, ইত্যাদি, ইত্যাদি। ইস, কি সব মনে করিয়ে দিলেন আবার।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
প্রতিবারের মত এবারো দারুণ লাগলো স্মৃতিচারণ।
আমাদের শহরে প্রায়ই ঈদ হয় দুই দিন, দুই মসজিদের দুই তরিকা। গাধাগুলো ঈদের মত উৎসবও একসাথে মিলে পালন করতে পারে না, বড় সমস্যাগুলো একসাথে সমাধানতো করা দূরের কথা।
প্রবাসের ঈদ বড় নিরানন্দময়, উলটো আরো খারাপ লাগে, অফিস, স্কুল সবই করতে হয়। ইদানীং চেষ্টা করি ছুটি নিয়ে বাসায় পরিবারকে সময় দিতে।
হালাকা হচ্ছে নবতম উৎপাত। রেগুলার লেগেই আছে এই জিনিস। আমি গিয়ে দেখেছি রীতিমত "ফতোয়াবাজি" চলে। মধ্যযুগের আমদানী বেশ ভালোই চলে বাংগালী সমাজে।
সত্যি এভাবে ভাবলে নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে হয়। আশাকরি এবারের ঈদ হবে অনেক আনন্দময়। অগ্রিম ঈদ মোবারক।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
এমিল,
অনেক ধন্যবাদ তোমার এই মন্তব্যের জন্যে। 'হালাকা' কিন্তু আসলে হীব্রু শব্দ। ইহুদীদের ধর্মীয় রীতিনীতির পথ নির্দেশ করে এই 'হালাকা'। বুঝি না কেন এই শব্দের উপর নব্য-মুসলমানদের এতটা আগ্রহ। অবশ্য এখন আর বুঝতে যেয়ে সময় নষ্ট করতে চাই না।
১১ই সেপ্টেম্বরে যে ঈদ হচ্ছে না - সেটা অবশ্য একটা ভাল খবর।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
প্রবাসের ঈদ নিয়ে বোধহয় গত ঈদে সুপান্থদা একটা পোস্ট লিখেছিলেন, মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো পড়ে..
অগ্রিম শুভেচ্ছা রইলো!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তিথীডোর,
শুধু প্রবাস বলে নয় - বয়সের সাথে সাথে ওই ছোটবেলার ঈদের আনন্দ বোধ হয় আর খুজে পাওয়া যাবে না। ভাল থাকো।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
তখনঃ
সকালে ঘুম থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে সবার পরে ওঠা। গোসলে যাওয়ার পর আব্বার চিৎকার, 'নামায তো শুরু হয়ে গেলো'! আম্মার হাউকাউয়ে ত্যাক্ত হয়ে 'কাউয়া গোসল' সেরে বেরিয়ে দেখি সবাই বেরিয়ে গেছে ইতোমধ্যে। আমি আস্তে ধীরে, তাড়াহুড়া করে জামাটামা পরে, জায়নামাজ বগলে চেপে পাঞ্জাবির বোতাম লাগাতে লাগাতে দৌড়ে ইদগাহের দিকে রওনা হতাম। পিছনে আম্মা আবার চিল্লাতো, "আরে কিছু একটা মুখে দিয়া যা!"
ঈদগাহে ঢুকতে হতো সামনের দিক দিয়ে। তো সেদিক দিয়ে ঢুকার সময় উপস্থিত রঙ-বেরঙের সবগুলো টুপি আমার দিকে ঘুরে তাকাতো। ভালো লাগা এক বিব্রতবোধ কাজ করতো তখন। আমি ঢুকতে ঢুকতেই ইমাম সাহেব 'অ্যাটেনশন' হুকুম দিতেন মুসুল্লিদের। আর সবার দাঁড়িয়ে যেতো। আমি পরিমরি করে আবার ছুট লাগাতাম। জায়গা রেডি থাকতো। আমার খুঁজতে হয় নি কখনো, পাবলিকই আমাকে সেখান থেকে ডাকতো। গিয়ে ঠেলাঠেলি করে দাঁড়িয়ে পড়তাম।
নামাজ শেষ হলেই মনে হতো, "আর কতো রে বাবা! এই ম্যারাথন খুতবা শ্যাষ হয় না কা!"
মোনাজাতের পরের ঘটনা মোটামুটি একই।
মজার ব্যাপার হলো, ঈদের সময় আমাদের বাড়ির আশেপাশের সবগুলো বাড়িতেই আমার অঘোষিত দাওয়াত ছিলো। পিঠার। ফুল পিঠার। সব বাড়িতেই আমার জন্য আলাদা করে তুলে রাখা হতো ফুল পিঠা। কোনো বাড়ি মিস হয়ে গেলে সেই বাড়ি থেকে এত্তেলা আসতো মায়ের কাছে। এই ব্যাপারটা চলেছে আমি প্রথমবার দেশ ছাড়ার আগ পর্যন্ত। পরে যখন ফিরেছি, ঈদের সময় সবাই আক্ষেপ করেছে। সেবার আগের মতো করে পিঠা বানিয়ে সবাই আলাদা করে তুলে রেখেছে আমার জন্য। আমি যাই নি দেখে বাড়িতে এসে দিয়ে গেছে। তাঁদের মায়া কিংবা ভালোবাসা দেখে আমি তখন বিব্রত হয়েছি।
এখনঃ
ঈদ কোন দিক আসে কোন দিক দিয়ে যায়, খবরই থাকে না। কোনো ঈদে ঘরে রেগুলার ভাত রান্না করার সময়ই থাকে না, মিস্টান্ন তো দূরের কথা! মা সুযোগ পেলে ফুল পিঠা পাঠাতো আগে। কিন্তু প্রবল ঝাড়িটারি মারার পর সেই অত্যাচার বন্ধ হয়েছে। গত ঈদের দিন মনে আছে ভোর রাত পর্যন্ত রাস্তায় ছিলাম। চাবি ভুলে ফেলে এসেছিলাম এক বাসায়। বাংলাদেশে তখন ঈদের ভোর। আমি রাস্তার পাশে একটা বেঞ্চিতে বসে চোখের সামনে ভোরের আলো ফোটা দেখছিলাম। আর ভাবছিলাম, মানুষের ভালোবাসা পাওয়াটা বিব্রত না, বরং ভাগ্যের ব্যাপার। আমার সেই ভাগ্য আমাকে ছেড়ে পালিয়েছে অনেক বছর হয়।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুসর গোধূলি,
খুবই সুন্দর বর্ণনা। তবে এটাই বোধ হয় জীবন।
এর পরিবর্তে অন্য কিছু কি আসেনি জীবনে?
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
চেনা কথাগুলোকে নতুন করে জানলাম। ছোটবেলা আর বড়বেলার ঈদের মধ্যে ফারাকটা আসলেই যোজন যোজন। ভাল থাকবেন।
-------------------------------
আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
অদ্রোহ,
তোমরাও ভাল থাক - এই কামনা করি। আনন্দের হোক তোমাদের ঈদ।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘোরা হয় না বছর দুয়েক, এলাকায় বাসিন্দা হিসাবে নতুন, কিছু চিনিও না, বসে-শুয়েই কেটে যায় দিনটা
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
এটা কি ঢাকাতে, না ঢাকার বাইরে?
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
আপনার লেখা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
সাথে ধুগো দার বর্ণনাটাও .................
শান্ত,
দুঃখিত মন খারাপ করে দেবার জন্যে। অনেক সময় আমরা নিজেকে নিয়ে এত আচ্ছন্ন থাকি যে অন্যের দিকে তাকাবার সময় থাকে না। আমরা বিনা কারনে অথবা অল্প কারনে মন খারাপ করে বসে থাকি। অথচ চারি পাশে তাকালে বুঝতে পারি - আসলেই আমরা কত সৌভাগ্যবান অন্য অনেকের চাইতে।
আশা করি ঈদের আগেই মন ভাল হয়ে যাবে।
ঈদের সুভেচ্ছা রইল।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
অনেকদিন বলি বলি করেও বলা হয়না-- আপনার লেখার শিরোনামে আপনি একটা হাইফেন দিয়েছেন, ওটা কি হাইফেন হবে না এম-ড্যাস হবে? অর্থাৎ
অলখ আমেরিকা--মা, ঈদ মোবারক
হওয়ার কথা নয়?
সাধারণত একটা "-" দিয়ে হাইফেন বা এন-ড্যাস হয় (যদিও ড্যাস আর হাইফেন এক জিনিস নয়)। - দুটো শব্দকে জোড়া দিয়ে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন "আমেরিকা-মা" যদি লেখা হয়, সেটা পড়তে গেলে মনে হবে "আমেরিকা মায়ের মতো" এরকম কিছু।
আপনি বাংলা বর্ণ নিয়ে একসময় কাজ করেছেন বলেই আপনার কাছ থেকে হয়তো আরো কিছু জানতে পারবো-- এই উদ্দেশ্যেই মন্তব্যটি করলাম
সর্বোপরি "অলখ আমেরিকা"র পরে কোন ড্যাস হবে বলে মনে হয় না। এখানে : হতে পারে। তাই না?
ভালো থাকবেন।
প্রকৃতিপ্রেমিক,
তোমার সূক্ষ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার জন্যে অভিনন্দন। এ ক্ষমতা সবার মধ্যে দেখা যায় না। তুমি ঠিক বলেছো। প্রথমে আমি সিরিজের নাম 'অলখ আমেরিকা' ও প্রতিটি কাহিনীর নামের মাঝে একটা রেখাচিহ্ন দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্থানাভাবের কারণে রেখাচিহ্নের দুই পাশের খালি স্থানটি বাদ দিই [আমি এখন চোখে বেশ কম দেখি, ফলে স্ক্রীনে ডিসপ্লে বড় করে দেখার ফলে অকারনে স্থানাভাব দেখা দেয়]। যদি প্রথম লেখার পরে তোমার আজকের এই মন্তব্য পেতাম তাহলে বরং কাহিনীর নাম ছোট করে সঠিক রেখা চিহ্ন এবং তার দুই পাশে খালি স্থান রাখতাম। তবে এখন এই সিরিজ শেষ হবার পথে। তাই বরং এখন আর পরিবর্তন না করে চেষ্টা করি খাটি বাঙ্গালীর স্বভাবে আজরা তর্ক করে আমিই যে সঠিক সেটা প্রমান করি। [হাসি]
বাংলা ভাষার নিজস্ব যতি চিহ্ন মাত্র দুটি - এক দাঁড়ি ও দুই দাঁড়ি। বাকী সব পরে এসেছে। আমি ভীষন ভাবে বিশ্বাস করি 'ভাষার মালিক ভাষা ব্যবহারকারী জনগণ'। কোন সরকারী প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ সংস্থার অধিকার নেই জনগণের উপরে খবরদারী করার [আমেরিকাতেও এ ভাবে আমেরিকান ভাষার বিকাশ ঘটেছে]।
নীচে বাংলা যতিচিহ্ন সম্পর্কে একটু উদ্ধৃতি দিলামঃ
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই মন্তব্যটিকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করার জন্য এবং এমন প্রশংসার জন্য
দ্বিতীয়ত, আমি কিছুটা আলসেমি আর কিছুটা কী কারণে যেন আগে বলিনি। কিন্তু আজ বলেই ফেললাম
মন্তব্যটি করে যে লাভ হলো তা হচ্ছে আপনার উদ্ধৃত অংশটুকু। এখান থেকে অনেককিছু জানলাম। এটা ঠিক যে ইংরেজীর প্রভাবেই আমি এমন মন্তব্য করেছি। এবার আমাকে বলুন যে রেখাচিহ্ন আপনি কিভাবে দিলেন? আমি তো দিতে পারছি না!
...............................
নিসর্গ
প্রকৃতিপ্রেমিক,
কী-বোর্ডে স্থান সংকুলন না হওয়ায় বাংলা ও ইংরেজী দু'টো ভাষাতেই কিছু কিছু কম্প্রোমাইজ করা হয়ে থাকে। সঠিক 'ড্যাস' ইংরেজীতে ও দেওয়া মুশকিল। ফলে 'হাইফেন' ও 'ড্যাস' একই চিহ্ন দিয়ে ব্যবহার করতে হয়। সাধারনত 'হাইফেন'-এর আগে-পিছে 'স্পেস' বসে না এবং 'ড্যাস'-এ বসানো যায়।
রেখাচিহ্ন দেবার জন্যে উপরের লেখার রেখাচিহ্ন কপি ও পেস্ট করে ব্যাবহার করতে পার। আর যদি অনেকবার ব্যাবহারের দরকার থাকে তবে একটা Wordpad ফাইলে রেখাচিহ্ন এবং এ ধরনের আরও কিছু চিহ্ন ধারণ করে রাখতে পারো। উদ্ধৃতি বা উদ্ধারচিহ্ন (“ ”) একই ভাবে ব্যাবহার করতে পারো।
বাংলা ছাড়াও হিন্দী ও অন্যান্য ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাষায় একই ধরনের ইউনিকোড ব্যবহার হয়। আমার ঠিক জানা নেই এই রেখাচিহ্নের সঠিক কোড নাম্বার কত [এই মুহূর্তে বের করার সময়ও নেই]। সেটাও খুজে দেখতে পার।
আর এক বার বলি - আমার বাংলা জ্ঞান খুবই সামান্য - শুধু নবম শ্রেনী পর্যন্ত। লিখি নিজের আনন্দে। তোমরা যে এ লেখা পড়ে আমার অনুভুতির অংশীদার হও, তাতেই ধন্য হই আমি।
"যে কোন ভাষার মালিক সেই ভাষা ব্যবহারকারী জনগণ"।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
কোলন ও রেখাচিহ্ন নিয়ে আমার একটা বিভ্রান্তি রয়েছে। আমি জানতাম কোনো বিরাম বা যতি চিহ্নের আগে স্পেস বসে না, পরে বসে। কেবল হাইফেনে পরেও স্পেস বসে না। কিন্তু আজকাল নানা জায়গায় কোলন বা রেখাচিহ্নের আগে স্পেস দেয়া হয়। এমনকি কোথাও কোথাও রেখাচিহ্নের আগে বা পরে কোনো স্পেসই দেয়া হয় না। এমনকি বাংলা একাডেমীর একই অভিধানে রেখাচিহ্নের আগে, পরে ও কোথাও স্পেস না দেওয়াও দেখেছি। আমার প্রশ্ন হলো, আমার জানাটা কি ঠিক আছে? নাকি রেখাচিহ্নের ক্ষেত্রে ইচ্ছামত স্পেস দিলেই হয়?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
গৌতম,
উপরে দেওয়া প্রকৃতিপ্রেমিকের মন্তবের জবাব দেখো। ভাষা কখনো 'স্টাটিক' কিছু না, সব সময় এতে পরিবর্তন হচ্ছে বা হতে পারে। তা না হলে লাটিনের মত অবস্থায় যেয়ে পৌঁছাবে।
পৃথিবীর ৭,০০০ ভাষার মধ্যে ৩,৫০০ ভাষা এখন মৃত। ইংরেজী ভাষাতে অনেক গোলমাল আছে এবং উল্টা-পাল্টা ব্যবহারের নজির আছে। তবুও এটা সব চাইতে প্রয়োজনীয় ভাষা বর্তমান দুনিয়াতে।
অন্য দিকে Esperanto ভাষা তৈরী হয়েছিল অনেক চিন্তা-ভাবনা করে। কিন্তু টিকতে পারেনি। হয়তো এর নামও তুমি শোননি। তাই বলি কি grammatically সঠিক এবং syntactically সঠিক হবার জন্যে বেশী চিন্তা না করাই ভাল। তোমার যেটা ভাল লাগবে সেভাবেই লিখবে। ক্ষতি কি? কারণ ভাষার মালিক তো তুমি।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
শহীদ ভাই, আপনার জবাবটা দেখেছি। ভাষার মালিক যে আমরা নিজে এবং ভাষা যে নিত্য পরিবর্তনশীল, সে ব্যাপারে আপনার সাথে পুরোপুরিই একমত।
কিন্তু তারপরও ভাষার একটা নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে, যেটা সময়ের সাথেই পরিবর্তিত হয়। আমি সেই পরিবর্তনের সাথে সাথেই যেতে আগ্রহী, যে কারণে বানান নিয়ে আমার কিঞ্চিৎ আগ্রহ রয়েছে। যে কারণে এই প্রশ্নটি করা সেটি হলো- বাংলা একাডেমীর অভিধানে ড্যাশ-এর আগে ও পরে স্পেস দিতে দেখেছি, আগে স্পেস নেই কিন্তু পরে আছে সেটাও দেখেছি, এমনকি আগে ও পরে কোথাও স্পেস নেই সেটাও দেখেছি।
বাংলা একাডেমী যদি চায় তারা ভাষার গতিশীলতাকে বরণ করতে গিয়ে সময়ে সময়ে পরিবর্তন আনতেই পারে। কিন্তু একই জায়গায় একই বিষয়ের ভিন্ন ভিন্ন উপস্থাপনা কি ভাষার গতিশীলতার পরিবর্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে না? আমরা সবাই যদি নিজেদের মতো করেই লিখতে থাকি, তাহলে সেটির অবস্থা একসময় কোথায় গিয়ে দাড়াবে? এই যেমন, বাংলা একাডেমীর ওই অভিধানটি দেখে বিভ্রান্ত; তখন কি বিভ্রান্তির মাত্রা আরো বাড়বে না?
মজার ব্যাপার হলো, অভিধানে এটি দেখার পর আমি বেশ কয়েকটা ব্যাকরণ বই দেখেছি। তার মধ্যে একটি খোদ এনসিটিবি থেকে বের করা। সেখানেও দেখি ঠিক একই ব্যাপার! এখন কোথায় যাই বলুন তো!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ঈদ মোবারক সাইফ ভাই। সাঈদকেও শুভেচ্ছা।
অনেক ধন্যবাদ তানভীর। তোমাকেও ঈদের সুভেচ্ছা রইল।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
দুপুরের অফিসে ঢোকার পথে দেখি রনি ভাই ফোনে কথা বলতেছেন।কথা না বাড়িয়ে সালাম দিয়ে ভিতরে ঢুকতে যাবো এমন সময় উনি বললেন "সকালে কোথায় ছিলা"!
"কেন ভাইয়া! অফিসেই তো ছিলাম"।
"তুমি মিয়া ঈদের নামাযটা মিস কর্লা"।
শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।"আজকে ঈদের দিন" সেটা পর্যন্ত জানতে পর্যন্ত পার্লাম না।এই আফসুস কই রাখি।
পরে অবশ্য কিছুটা সুসংবাদ পাওয়া গেছে এবং সেটা আমাদের মুসল্মান ভাইদের অন্তহীন কোন্দলের ফল হিসেবে।এই শহরে ঈদের জামাত নাকি কাল্কেও হবে তারপরের দিনও হবে।
টানা তিনদিনব্যাপী ঈদ!!
কালকে ঈদে অংশগ্রহন এখন পর্যন্ত নিশ্চিত।একটা ব্যাপক দাওয়াতী খানাপিনার আশায় আসি।অফিসে বসকে বলে দিছি "কালকে ঈদ, আমার আসতে দেরি হবে"।
এখন সবকিছু ভালোয় ভালোয় মিলে গেলেই হয়!
শিমুল,
আমার এক বন্ধু ঢাকা থেকে এই ছবিটা পাঠিয়েছে। আমাকে সান্তনা দেবার জন্যে। মন খারাপের কোন কারণ নেই।
ঈদের দিনের শুভেচ্ছা রইল।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
নতুন মন্তব্য করুন