মেয়েটাকে আগেও দেখেছি, কিন্তু ঠিক ভাবে পরিচিত হবার সুযোগ আসেনি। রাস্তায় দেখা হলে এখানকার ভদ্রতা মত একটু হাসি অথবা 'হাই' বলে সম্ভাসন ছাড়া আর তেমন কিছু কথাবার্তা হয়নি। আজ দেখলাম দুই হাতে দু'টো 'ষ্টারবাকস্'-এর কফি নিয়ে আমার পিছু পিছু পার্কিং লটের এলিভেটর দিয়ে নামছে সে। আমি আগে ছিলাম, তাই দরজা খুলে দরজার পাল্লা ধরে দাড়ালাম তার জন্যে।
- অনেক ধন্যবাদ - সুন্দর একটা হাসি দিল সে।
- সকালে কি এক সাথে দুই কাপ কফি না হলে চলে না? - আমি সুযোগ পেলেই সবার সাথে ছোট খাট কথা বলে থাকি।
- আসলে দ্বিতীয় কাপটা আমার জন্যে কেনা না।
- বল কি? তুমি কি আমার মনের ইচ্ছা বুঝতে পেরে আমার জন্যে এই অতিরিক্ত 'ষ্টারবাকস্'এর কফিটি কিনেছো?
- খাবে তুমি?
- নিশ্চয়। - হাত বাড়িয়ে দিলাম আমি।
কফির কাপটি এক হাতে নিয়ে অন্য হাতটি বাড়ীয়ে দিলাম পরিচয় পর্বের জন্যে।
- আমি সাইফ।
- আমি ক্রিষ্টিনা। আই,টি-তে কাজ করি।
- আরে আমিও তো আই,টি-তে কাজ করি।
- হ্যাঁ, তোমার ই-মেইল আমি দেখেছি।
এবার ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটির দিকে। বেশ সুন্দর দেখতে মেয়েটি, বয়েস ৩০শের উপর হবে - অনুমান করলাম। বেশ লম্বা ঘন চুল পিঠের উপর ছড়ানো - অনেকটা আগেকার দিনের বাঙ্গালী মেয়েদের মত। আমার সমান লম্বা, কিন্তু মনে হলো এক্সারসাইজ করার ফলে পেটা শরীর।
- কার জন্যে কিনেছিলে এই অতিরিক্ত কফি? - আমার কাপে একটা চুমুক দিয়ে হাটতে হাটতে প্রশ্ন করলাম।
- জানতে চাও?
- শুনি।
- এক জন হোমলেস মানুষের জন্যে।
অবাক হলাম তার কথা শুনে। আমেরিকার হোমলেস হচ্ছে অনেকটা আমাদের দেশের ভিকারীর সমপর্যায়ের মানুষ।
- অফিসে আসার পথে সাধারনত আমি 'ষ্টারবাকস' হয়ে আসি। ওখানেই দেখি প্রায় প্রত্যেকদিন বসে আছে ওই হোমলেস লোকটি। নিজের থেকে কখনো কিছু চায় না। একদিন কি মনে হলো, অতিরিক্ত এক কাপ কিনে তাকে অফার করলাম। হাত বাড়িয়ে নিলো লোকটি। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিন আমি তার জন্যে এই অতিরিক্ত কাপ কিনি। আজ কেন জানি না লোকটাকে দেখলাম না সেখানে, তাই এই দুই কাপ দেখছো। - বললে ক্রিষ্টিনা।
- আমিও তো আজ হাত বাড়িয়ে নিলাম। এখন থেকে কি তা হলে আমিও রোজ তোমার কফির জন্যে আশা করে থাকতে পারি?
আমার দিকে তাকিয়ে আর একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে এলিভেটরে উঠে তার অফিসের দিকে রওয়ানা দিল ক্রিষ্টিনা।
এর পর যখনই তার সাথে দেখা হয়েছে - আগ বাড়িয়ে এসে আমার সাথে কথা বলেছে। তার অত্যন্ত ভদ্র ব্যবহার প্রতিবার আমাকে মুগ্ধ করেছে। একজন হোমলেস মানুষের প্রতি ক্রিষ্টিনার এই সহানুভুতির কাহিনীও আমাকে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছে।
একদিন দুপুরে লাঞ্চের ব্রেকে এলিভেটরে ঢুকছি এমন সময় দেখি ক্রিষ্টিনাও সেখানে।
- কোথায় যাচ্ছ? - জিজ্ঞাসা করলাম।
- আজ ভাবছি 'থাই ক্রিস্টাল' রেস্টুরেন্টে যাবো।
- তোমার সাথে যোগ দেব? খাওয়াবে? আমিও কিন্তু এক ধরনের হোমলেস মানুষ।
- নিশ্চয়। চল আমার সাথে।
আমরা দু'জন হাটতে হাটতে কাছের এই থাই রেস্টুরেন্টে গেলাম। থাই এবং চাইনীজ খাবার আমার বেশ পছন্দ। খেতে খেতে বেশ কিছু জানলাম ক্রিষ্টিনার জীবন সম্পর্কে। তার বাবা-মার মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল না। এর প্রভাব ক্রিষ্টি্নার উপরেও পড়েছে। সহজে কারও সাথে কোন রিলেশনশীপে যেতে ভয় পেতো সে। প্রায় ৩০ বছর একাকী থাকার পর, এক জনের সাথে তিন বছর 'লিভ টুগেদার' করার পর, বছর খানেক হল বিয়ে করেছে তাকে। দু'জনেই ভাল চাকরি করে এবং ভাল আয় করে। তার কথা শুনে আমার মনে হল - আমেরিকান সুখী পরিবারের প্রতিচ্ছবি এরা।
- নিজেকে 'হোমলেস' ভাব কেন? - এবার প্রশ্ন করলো আমাকে।
- নিজের জন্মভূমি, 'হোমল্যান্ড' ছেড়ে এসেছি - এটা কি এক ধরনের 'হোমলেসনেস' না?
- তা হলে তো আমেরিকার বেশীর ভাগ লোকই হোমলেস'। কেউ হয়তো বা কয়েক পুরুষ আগে এসেছে, আর কেউবা পরে।
- তোমার পূর্ব-পুরুষরা কথা থেকে এসেছে?
- তারা এসেছিল পোলান্ড ও হ্যাঙ্গেরীর এক বর্ডার এলাকা থেকে। খুব গরীব ছিল, খেতে পারতো না। - অম্লান মুখে বলে গেল সে।
আমেরিকার এই একটা অদ্ভুত জিনিস। নিজের পূর্ব-পুরুষদের দারিদ্রতা ও অসহায় অবস্থা স্বীকার করতে কেউ লজ্জ্বা পায়না। বরং মনে হয় এতে যেন তারা গর্ববোধ করছে।
- এর পর আর আমার কাছে থেকে 'হোমলেস' দাবী করে খেতে পারবে না - হাসতে হাসতে ক্রিষ্টিনা বললো।
- ঠিক আছে, এর পরের বার আমিই না হয় তোমাকে খাওয়াবো।
ক্রিষ্টিনার সাথে এক ধরনের বন্ধুত্ব হয়ে গেল আমার। ঠিক হলো এক দুই মাস পর পর আমরা এই ভাবে একসাথে লাঞ্চ করবো। তাকে আমার ভাল লাগার আর একটি কারণ হল, সে জন্মেছে আমার মেয়ে বনীর মৃত্যুর মাত্র এক মাস পরে। তার দিকে তাকিয়ে আমি চিন্তা করার চেষ্টা করলাম, বেঁচে থাকলে বনীও আজ এত বড় হতো, এত বুদ্ধিমান ও সুন্দরী হতো।
ক্রিষ্টিনা নিজেকে 'সোসালিষ্ট' বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। আমেরিকাতে অনেকে আবার 'সোসালিষ্ট' হওয়াটা খুব একটা স্বাভাবিক চোখে দেখে না। 'কমুনিষ্ট' হলে তো থাকাই মুশকিল। নাগরিকক্ত্বের আবেদনে পরিস্কার ভাবে উল্লেখ করতে হয় যে কোন 'কমুনিষ্ট' সংগঠনের সাথে কোন সংস্পৃষ্ঠতা না থাকার কথা। আমার মানদন্ডে যদিও এখানকার ডান আর বায়ের মধ্যে তফাৎটা খুবই কম মনে হয়। অফিসের কাছের এক সিনেমা হলে মাইকেল মুরের সিনেমা 'ক্যাপিটালিজমঃ এ লাভ স্টোরি' চলছিল। এক দিন অফিসের পর ক্রিষ্টিনার সাথে সিনেমাটা দেখতে গেলাম। দু'জনেরই ভাল লাগলো সিনেমাটা। সিনেমা শেষে আমরা খেতে ঢুকলাম পাশের এক রেষ্টুরেন্টে। খেতে খেতে ক্রিষ্টিনা হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করলোঃ
- আচ্ছা, তুমি কয়জন সত্যিকারের সুখী দম্পতী দেখেছো?
- তাইতো, একটু চিন্তা করে উত্তর দিতে হবে। তুমি কত জনকে দেখেছো?
দুই আঙ্গুল দিয়ে শূন্য চিহ্ন বানিয়ে দেখালো আমাকে।
- কেন তোমরা সুখী না? - জিজ্ঞাসা করলাম আমি।
- এখন আর ঠিক বুঝতে পারছি না।
- এখনও এক বছর পুরা হয়নি তোমাদের বিয়ের। এটা কি বলছো তুমি?
- তোমরা কি সুখী? - এবার সোজাসুজি আক্রমণ করে আমাকে প্রশ্ন করলো সে।
- আহা, আমাদের কথা বাদ দাও। প্রায় চল্লিশ বছর সুখে-দুঃখে আমরা এক সাথে পার করে দিলাম। আমাদের সুখের সজ্ঞা এখন অনেক বদলে গেছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভাল থাকলেই আমরা নিজেদেরকে সুখী মনে করি।
খাওয়া বন্ধ করে অনেকক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো সে। আমাকে বোঝার চেষ্টা করল। টেবিলের উপর রাখা আমার হাতের উপর আস্তে করে তার হাত রেখে জিজ্ঞাসা করলোঃ
- সত্যি করে বলতো, আবার কি তোমার নতুন করে সুখী হতে ইচ্ছা করে না?
- মানুষের সব ইচ্ছা কি পূরণ হয়?
- পূরণের কথা বলছি না, ইচ্ছা হয় কিনা জানতে চাচ্ছি।
- হয়তো হয়। - বলতে বাধ্য হলাম।
- আমার যদি আবার নতুন করে সুখ খুঁজতে ইচ্ছা হয়, সেটা কি অন্যায়?
- না, অন্যায় হবে কেন?
- আচ্ছা বলো তো, সত্যিকারের গভীর ভালবাসা ছাড়া কি সুখী হওয়া যায়?
আমি বুঝলাম কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে তার সংসারে। আমি মেয়েটার ভাল চাই, চাই সে সুখী হোক। কিন্তু সে তো এখনো স্বপ্নের দুনিয়াতে আছে। কি বলবো আমি তাকে? আমেরিকাতে শতকরা ৫০% ভাগের বেশী বিয়ে, বিয়ের সামান্য কয়েক বছরের মধ্যে ভেঙ্গে যায়। ফলে অনেকে আজকাল বিয়েই করেনা এই ভয়ে, অথবা কয়েক বছর ধরে 'লিভ টুগেদার' করে নিজেদেরকে ভাল ভাবে জানতে ও চিনতে চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে কি সমস্যা কমছে? মনে তো হয় না। একটা কাগজে আমার ওয়েব-পেজের ঠিকানা লিখে দিলাম তাকে। বললাম - "আমার ওয়েব-পেজে ভালবাসার উপরে আমার কি ধারণা সেটা লেখা আছে। পড়ে দেখতে পারো।"
আমার ঐ লেখাতে মোটামুটি এটাই বলতে চেয়েছিলাম যে - মানুষের মস্তিস্কে কিছু বিশেষ কেমিকেলের প্রভাবে প্রেমের অনুভুতির সৃষ্টি হয় মনে। আমরা হয়তো মনে করি যে আমরা জেনে শুনে এবং অনেক বিচার বিবেচনা করে প্রেমে পড়ি - আসলে হয়তো ব্যাপারটি তেমন নয়।
আমার লেখা পড়ে পরের দিন আমাকে একটা ই-মেইল পাঠালো সে - "তোমার লেখা পড়ে খুব ভাল লাগলো। তোমার সাথে এ ব্যাপারে আরও আলাপ করতে চাই।"
পরের সপ্তাহে ছিল আমার জন্মদিন। সে যখন শুনলো যে বাবা-মায়ের এক মাত্র পুত্র হবার কারণে ছোট বেলায় খুব জাক-জমক করে আমার জন্মদিন উৎযাপিত হত, কিন্তু এখন কিছুই করা হয়না - এমনকি আমার স্ত্রীও আমাকে রেষ্টুরেন্টে নিয়ে ডিনার খাওয়ায় না বা বাড়ীতে বিশেষ কিছু রান্না করে না - তখন বলল - "তোমার আপত্তি না থাকলে এবার আমি তোমাকে রেষ্টুরেন্টে নিয়ে ডিনার খাওয়াবো।"
- আমার কোন আপত্তি নেই। 'হোমলেস' লোকেরা ডিনারের দাওয়াত পেলে কি কখনো না বলে?
দু'জনেই হাসলাম এই কথাতে।
ক্রিষ্টিনা ততদিনে আলাদা হয়ে তার স্বামীর বাড়ী ছেড়ে তার এক বান্ধবীর বাড়ীতে থাকা আরম্ভ করেছে। সেখান থেকে আমার ট্রাকে উঠিয়ে নিলাম তাকে। এর আগে এক দিন তার ছোট টু-সিটার স্পোর্টস কারে সে আমাকে ঘুরিয়েছিল। তখন কথা প্রসঙ্গে বলেছিল ট্রাক চালাতে বেশী ভাল লাগে তার। তাই তার হাতে আমার ট্রাকের চাবী দিয়ে চালাতে বললাম। বুঝলাম খুব খুশী হল এই সুযোগ পেয়ে। গাড়ীর ব্যাপারে অনেক কিছু জানে সে। একটু চালাবার পরেই বললো - "তোমার গাড়ীর চাকার এলাইমেন্ট ঠিক নেই, ঠিক করা দরকার।" আমিও জানতাম সেটা। গাড়ীটা সব সময় হয় বা দিকে অথবা ডান দিকে টানতে থাকে চালাবার সময়। আমার আলসামী আর কিপ্টামির জন্যে এই কাজটা করা হয়ে ওঠেনি।
গাড়ীর মিউজিক কনসোল চালু করে সিডির বোতামে চাপ দিল। সুমনা বর্ধনের গান ছিল সেখানে। বাংলা গান বুঝবেনা ভেবে বললাম - "ডাশবোর্ডের গ্লোভ কম্পার্টমেন্টে কিছু ইংরেজী গানের সিডি আছে।"
- সুন্দর গান। আমার ভাল লাগছে। বদলাবার দরকার নেই।
- এ গানের কথাটা আমার খুব প্রিয়। 'ভাসবাসা অনেক বড় এক শব্দ, কেউ বোঝে, কেউ বোঝে না'। কিন্তু তুমি তো কিছু বুঝতে পারছো না। ভাল লাগছে কেন?
- তুমি কি সব সময় বুঝে গান শোনো?
- না, তা নয়। তবে সত্যি ভাল লাগছে, না শুধু আমাকে খুশী করার জন্যে বলছো এটি?
- তোমাকে খুশী করে আমার লাভ?
- কে জানে? তোমাদের আমেরিকান ভদ্রতা হয়তো।
- তুমি আমেরিকান নও?
- এক পুরুষে কি খাটি আমেরিকান হওয়া যায়?
- চেষ্টা করতে থাকো।
- তাই তো করছি। দেখছো না আমি এখন একজন খাটি আমেরিকানের মত স্ত্রীকে ছাড়াই কম বয়েসী একজন সুন্দরী মেয়ের সাথে ঘুরছি।
কপট শাসনের ভঙ্গীতে এবার আমার দিকে কটমট করে তাকালো ক্রিষ্টিনা।
খেতে বসে নিজে থেকেই আমাকে জানালো তার ইচ্ছা তিনটি বাচ্চার মা হবার। এখানে আমেরিকান আর বাঙ্গালী মেয়ের মধ্যে খুব একটা তফাৎ দেখলাম না।
- আমার বাবাকে বুঝতে আমি ভুল করেছি জীবনে। - হঠাৎ করে বললো।
- কি রকম? - জানতে চাইলাম আমি।
- আমার নানা ছিলেন সিনেটর, সেই হিসাবে আমার বাবার পরিবার গরীব এবং তিনি এমন কিছু ছিলেন না। যদিও আমার মা ভালবেসে তার স্কুলের সুইট-হার্ট, আমার বাবাকে, বিয়ে করে। তাদের মধ্যে সুখ ছিল না। সব সময় ঝগড়া হতো। পরে আমার বাবা খুব কম কথা বলতেন। চুপ করে থেকে ঘরে বসে মদ খেয়ে কাটিয়ে দিতেন তার সময়। আমি মনে করতাম, তিনি আমাকে ভালবাসেন না। আমিও ঘৃনা করতাম তাকে। শুধু তিনি মারা যাবার পর আমি তাকে বোঝার চেষ্টা করেছি। আমার মা-ও হয়তো এখন করে।
- আসলে আমরা সবাই একই আবর্তে ঘু্রছি।
- তোমার মাকে নিয়ে লেখা গল্পটা পড়ে আমি খুব অভিভুত হয়েছি। সত্যি, কিছু কিছু ভুল আছে - যেগুলি জীবনে আর শোধরাবার সুযোগ আসেনা। কিন্তু তোমার লেখায় প্রেমের সজ্ঞা আমার ভাল লাগেনি। মানতে কষ্ট হচ্ছে।
- তোমার বয়সে আমারও এমন মনে হতো। তবে বেশী চিন্তা করোনা। এটা আমার কথা না, শুধু কিছু বিশেষজ্ঞের ধারনা - হয়তো ভুলও হতে পারে। তুমি তো জানো, 'বিশেষজ্ঞ' মানে হচ্ছে 'বিশেষ' ও 'অজ্ঞ'।
- তা হলে কি করা উচিৎ?
- তোমার মন তোমাকে যে পথে যেতে বলে, সেটাই অনুসরণ করো।
মনে হল আমার কথা গভীর ভাবে চিন্তা করছে সে।
ক্রিষ্টিনা জানালো তার মনের সুখ ও দুঃখের কথা মাঝে মাঝে সেও একটা ব্লগে লেখে। তার লেখা ব্লগের ঠিকানাটা আমাকে দিল। রাত্রে বসে বসে পড়লাম।
"আমি বসে বসে দেখছি সে এখন সবজিগুলি কাটছে, রান্না করার জন্যে। আজ সে কাজ থেকে ফিরতে এক ঘন্টা দেরী করেছে। অপেক্ষা করতে করতে ততক্ষণে আধা গ্লাস স্কচ আমার পেটে ঢুকে পড়েছে। বাড়ী এসে সে অনুরোধ করেছে তাকে সঙ্গ দেবার, যতক্ষণ তার রান্না শেষ না হয়। তাই আমি টিভি বন্ধ করে, অন্ধকার লিভিং রুমে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে, রান্না ঘরে চলে এসেছি।
আমি তাকে কয়েকটা প্রশ্ন করলাম নিজেদের মধ্যে কথা বার্তা চালু রাখতে - যাতে তাকে সঙ্গ দেওয়া সহজ হয়। কিন্তু তার উত্তরগুলো মনে হলো উচু পর্বত থেকে শিলা খন্ডের নীচের খাদের গভীরে পড়ার মত; যাকে অনুসরণ করা যায় না। টেবিলে যেখানে আমি বসে আছি - আমার সামনে দেখছি ফ্রিজের উপরের শিল্পকর্ম - যার মধ্যে আছে সংবাদপত্রের ক্লিপিং, বিভিন্ন 'স্মারক চুম্বক' ... তাদের মধ্যে আছে গ্রেসল্যান্ড, মাদ্রিদ, বাডেন-বাডেন - যে সব জায়গাতে আমরা এক সাথে গেছি। আরও আছে তার ছেলে মেয়েদের কিছু ছবি, তাদের স্কুলের অতি সাধারণ রিপোর্ট-কার্ড, লাস ভেগাসে তোলা তার ছোট ছেলের সাথে তার ছবি, যেটা তারা রেডি হবার আগেই তোলা হয়েছিল - হা হয়ে রয়েছে তাদের মুখগুলি ঐ ফটোতে।
আমি অনুভব করছি, আমি খুবই একাকী। মুহূর্তের জন্যে বুকে একটা ব্যাথা অনুভব করলাম। ড্রিংকের গ্লাসটা হাত বাড়িয়ে তুলে নিলাম।
সে ব্রকলির (এক ধরণের সবজি) ফুলগুলি কাটার পর ব্রকলির গোড়াগুলি কাটতে লাগল, তাতে কিছু পিয়াজ, রশুন এবং 'ফ্রোজেন ফেক চিকেন' যোগ করল। আমি আমার নোট বই থেকে যখন মুখ তুলে আবার তাকালাম, সে তখন খুব পরিপাটি করে 'জুকিনি' (অনেকটা ঢেড়স ধরনের সবজি) কাটছে। আমি ভাবলাম, সে তখন কথা বলছে না - এটা কি এই জন্যে, যাতে আমি তার ছুরি চালাবার পারদর্শীতার দিকে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকি (কোন এক কারণে সে এই গুনের জন্যে সব সময় প্রসংশা আশা করে)।
তার প্রতি রাগে আমার চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে। আমার হৃদয়ের ব্যাথা তার প্রতি শতগুন বেশী করে ছুড়ে দিতে ইচ্ছা করছে - কিন্তু হাজার হলেও সে আমার জন্যে এখন ডিনার তৈরী করছে। কিছুই করতে পারছিনা আমি।
"হয়ে গেছে" - বলে সে, যখন তার রান্না করা শেষ। চুলার বার্ণার নিভিয়ে দিয়ে, প্লেট বের করে সে। সে তার খালি ওয়াইন গ্লাস ঠেলে দেয় কাউন্টারে রাখা বোতলের দিকে, তারপর ওয়াইন ঢালে গ্লাসে। আমার স্কচ প্রায় শেষ, শুধু সামান্য একটু তলানীর আভাস দেখা যায় আমার নানার দেওয়া তার সিনেটর হবার সময়ের স্মারক গ্লাসে।
খাবারের সুন্দর ঘ্রাণ ভেসে আসে। আমি জানি এটা তার ভালবাসার নিদর্শণ - আমার জন্যে খাবার রান্না করে দেওয়া। যখন এটা চিন্তা করি - আমার চোয়ালে মৃদু কাঁপুনি অনুভব করি - যেন এখনি চোখ থেকে পানি বেড়িয়ে আসবে। কারণ এই ধরনের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ তো আমি চাইনা। এটা তো ভালবাসার ধুক ধুকে আগুন না, অথবা সাহিত্য কর্মের রেফারেন্স না, অথবা অকৃতিম ভালবাসা ভরা চোখে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা না। এটা হছে সবজি, নকল মুরগির মাংস এবং 'মিনিট রাইস' - খেতে ভাল, কিন্তু আমার জন্যে এটাই যতেষ্ঠ নয়।"
ক্রিষ্টিনার লেখা পড়ে বুঝলাম, এখনো ভালবাসার এক অলীখ স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলেছে সে। আমি মেয়েটার সুখী জীবন কামনা করি। কিন্তু কিই বা করতে পারি আমি। জীবনটা যে তার একান্তই নিজের।
[ কিছুদিন পরে শুনলাম তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেছে। ]
মন্তব্য
ভালোবাসার ক্ষেত্রেও মনে হয় সময় নিয়ে বেশি গন্ডগোল হয়। ব্যস্ততা মানুষকে অসহনশীল করে তোলে, সহজেই ভুল বোঝাবুঝির দিকে নিয়ে যায়। আবার আলস্যও একই কাজ করে। দুইটার ব্যালেন্স রাখাই কঠিন।
লেখা যথারীতি দারুণ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অছ্যুৎ বলাই,
লেখা পছন্দ করার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
শেষ হলো না গল্পটা।
আখতার,
এটাতো ঠিক গল্প না - যে শেষ করতে হবে। তোমার জ্ঞাতার্থে জানাই - কিছুদিন আগে ক্রিষ্টিনা পেরু বেড়াতে যেয়ে সেখানকার এক ছেলের সাথে আলাপ হবার পর প্রেমে পড়ে গেছে। আমাকে দু'জনের একসাথে তোলা ছবি পাঠিয়েছে।
তার সাথে শেষ যখন দেখা হয়েছে তখন দেখেছি স্প্যানিস শিখছে 'রোসেটা স্টোনের' সিডির সাহায্যে। স্পানিসের বদলে যদি বাংলা শিখতে দেখতাম তবে কি 'গল্পটা' আরও ভাল শেষ হতো?
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
সাইফ,
এক ভালবাসার পাত্রকে বিদায় করে কি আরেকজনকে ভালবাসা যায়?
ভালবাসা কি এতই ঠুনকো?
আমরা নিজকে ঠকাচ্ছি নাতো?
"স্পানিসের বদলে যদি বাংলা শিখতে দেখতাম তবে কি 'গল্পটা' আরও ভাল শেষ হতো?"
এ প্রশ্নের উত্তর "না"
ঝরঝরে লেখা, দারুণ লাগল। আমার মনে হয়, আসলে আমেরিকানরা অতি অল্পতেই বিরক্ত হয়ে যায়, তাই তখন একে অপরের সবকিছুতেই বিরক্ত হতে থাকে, আর তার লেজ ধরে ছাড়াছাড়ি। এর পাশাপাশি চাওয়া পাওয়ার দাবীও অনেক বেশি। এরকম লোক যেমন আছে, সেই সাথে দীর্ঘদিন ধরে এক ছাদের নিচে আছে, এমন পরিবারও একদম কম নয়।
লেখায় ৫তারা
অফ টপিকঃ আপনার কাছ থেকে ৭১ এর সময়ের ঢাকা নিয়ে কিছু লেখা পাবার আশায় হা করে বসে আছি, যদি ভুলে গিয়ে থাকেন, তাই আবার মনে করিয়ে দিলাম
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
সাইফ তাহসিন,
আমরা বাঙ্গালীরা কি কম রগচটা?
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ('৬৫-'৬৯) পলাশী থেকে নিউ মার্কেট আসার পর রিক্সাওয়ালা আট আনার ভাড়ার জায়গায় এক টাকা চেয়েছিল, তাই আমি তখন তাকে একটা চড় মেরেছিলাম [যে জন্যে এখনও আমি অনুতপ্ত এবং সেই অচেনা রিক্সাওয়ালার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী]। এমন বিরক্তের চিহ্ন কিন্তু এখানে খুবই কম দেখা যায়।
অফ টপিক প্রসঙ্গে - কথাটা ভুলিনি, তবে সব সব অভিজ্ঞতা তুলে ধরার মত সময় কি এখন এসেছে? ক্যাডেট কলেজ ব্লগে লেখা 'ভিন্ন জানালা দিয়ে দেখা' কেমন লেগেছে?
৫ তারার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
সাইফ তাহসিন,
আমরা বাঙ্গালীরা কি কম রগচটা?
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ('৬৫-'৬৯) পলাশী থেকে নিউ মার্কেট আসার পর রিক্সাওয়ালা আট আনার ভাড়ার জায়গায় এক টাকা চেয়েছিল, তাই আমি তখন তাকে একটা চড় মেরেছিলাম [যে জন্যে এখনও আমি অনুতপ্ত এবং সেই অচেনা রিক্সাওয়ালার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী]। এমন বিরক্তের চিহ্ন কিন্তু এখানে খুবই কম দেখা যায়।
অফ টপিক প্রসঙ্গে - কথাটা ভুলিনি, তবে সব সব অভিজ্ঞতা তুলে ধরার মত সময় কি এখন এসেছে? ক্যাডেট কলেজ ব্লগে লেখা 'ভিন্ন জানালা দিয়ে দেখা' কেমন লেগেছে?
৫ তারার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
যথারীতি দারুণ লাগলো।
সংসার ভাঙ্গার হার শুধু আমেরিকা নয়, বাংলাদেশেও বাড়ছে। আমার ধারণা এটা সারা দুনিয়াতেই বেড়েছে বিগত কয়েক দশকে। সমাজের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা আমাদের ব্যক্তি জীবনে প্রবেশ করবে এটা আশ্চর্য নয়। ব্লগের অল্প পরিসরে এই লেখায় সুন্দর সেটা ফুটে উঠেছে। দু'জন ভালো মানুষও একসাথ থাকতে ব্যর্থ হতে পারে, প্রচুর ভালোবাসা থাকলেও।
সংসারের সবচেয়ে জরুরী গুণ মনে হয় কম্প্যাটিবিলিটি এবং লো এক্সপেক্টেশন। অনেকেই দেখি অলীক স্বপ্ন নিয়ে সংসার শুরু করতে, স্বপ্ন যত অলীক বাস্তবতা ততই রুক্ষ ঠেকে। জীবন নিয়ে বাস্তব ধারনা আসতে আসতে মানুষের লাইফের প্রাইম টাইমটাই চলে যায় কখনো কখনো...
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
এমিল,
খুব সুন্দর লিখেছো।
বড়ই সত্য কথা। একটা অনুরোধ - পারলে তোমার খুব কাছে থেকে দেখা মানুষদের মধ্যে যাদেরকে মনে করো দীর্ঘদিন ধরে সুখে সংসার করছে - তাদের সম্পর্কে কিছু লেখ।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
খুব সহানুভূতির সাথে চরিত্রগুলো ফোটান আপনি।
কৌস্তুভ,
সাধারনত সংবেদনশীল মানুষেরা অন্যের ব্যাপারে সহজে সহানুভূতিশীল হতে পারে। যেমন গুন তোমার মধ্যেও আমি দেখি।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
বলছেন? প্রশংসার জন্য অনেক ধন্যবাদ, সাইফ ভাই।
এ সিরিজের নিয়মিত পাঠক আমিও, এ পর্বটা একটু বেশি ভাল্লেগেছে!
অলীক স্বপ্ন আর রূঢ় বাস্তবতার হিসেবনিকেশ আজকাল বড্ড খটমটে ঠেকে...
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তিথীডোর,
"বেশি ভাল্লেগেছে" কেন? প্রেমের গল্প বলে?
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
হাঃহাঃ,
নাহ্ ভাইয়া, প্রেমের গপ্পো বলে নয়...
উদ্ধৃতি
"নিজের 'হোমল্যান্ড' ছেড়ে এসেছি, এটা কি একধরনের 'হোমলেসনেস' নয়?"
প্রবাসজীবন আমাকে টানে না বলেই হয়তো এ অংশটা খুব পছন্দ হলো!
ধন্যবাদ
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
লেখাটি ভাল লাগলো। তো আপনার এরকম ঘুরে বেড়ানোতে ভাবীর কি মতামত?
আর
এটা ইংরেজিতে কিভাবে বললেন?
অজানা অদ্ভুত গন্তব্যের দিকে ছুটছি তো সকলেই। সময়ের সাথে নিজের মতামত গুলো পালটায়। কয়েকদিন ধরেই ভাবছি, পুরনো বাংলা দ্বিতীয় পত্র বইয়ের ভাবসম্প্রসারণ-টাই ঠিক~ ভোগে সুখ নয়, ত্যাগেই সুখ।
জীবনে যে যতই 'স্যাক্রিফাইস' করে সুখে থাকতে পারবে, সেই সুখই সবচেয়ে বড় সুখ! মানে, কোন না কোন ক্ষেত্রে স্যাক্রিফাইস করা টা বাধ্যতামূলক, সেটাতে সুখ খুঁজে নেবার অদ্ভুত প্রচেষ্টাই!
জনৈক আরাফাত,
আপনার কথাগুলো অনেক চিন্তার জন্ম দেয়। মানুষের এই চিন্তাশক্তি অনেকাংশে দায়ী তার 'সুখ' বিনষ্ট করার পিছনে। আমরা যদি নিজেদেরকে অন্যান্য প্রাণীদের সাথে তুলনা করি, তাহলে 'সুখের আকাক্ষাটা' অন্য রকম হতে পারে। যে কর্মী পিপড়ার জন্ম হয় শুধু কাজ করে মরে যাবার জন্যে - তার কি সুখের জন্যে কোন আকুতি নেই? না থাকলে, কেন নেই?
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
ভালোবাসা ভালো না। কিন্তু, স্বপ্নভঙ্গ প্রচণ্ড কষ্টের। কোনটা বেছে নেবো?
অতএব, দিল্লির লাড্ডু খেয়েই পস্তানো যাক। কিন্তু, আনজীবনের ছবি লেখা ভিনদেশে ডালভাত হলেও আমাদের জন্যে বড্ড ঝামেলার। সন্তানের মুখ চেয়েও আপনার মতো অনেকে খুশি হওয়ার চেষ্টা করে।
আপনার কি মনে হয়? কষ্টকর দাম্পত্য বহমান রাখা (ধরে নিই, এক্ষেত্রে প্রেমাভাব মূল দায়িক) আর অন্য জীবন গড়ার চেষ্টা- কোনটা গ্রহণীয়? সন্তানটা ফ্যাক্টর ধরছি না, ধরুন সন্তান আছে।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
মণীন্দ্র,
বড় কঠিন কঠিন প্রশ্ন আপনার। 'মহাস্থবির' অনেক উচ্চমার্গের ব্যক্তি। তাকে কিছু বলার মত জ্ঞান আমার নেই। এমনকি 'জাতক'-এর গল্পও আমি খুব একটা পড়ার সুযোগ পাইনি [আরব্য রজনীর সহস্র রাত্রির কিছু 'দ্বিতীয় হাত' কাহিনী ছাড়া]।
আপনি লিখেছেন - "সন্তানটা ফ্যাক্টর ধরছি না, ধরুন সন্তান আছে।" আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, এটা একটা বড় ফ্যাক্টর। ক্রিষ্টিনার যদি নিজের সন্তান থাকতো, তবে আমি হয়তো জোর দিতাম সংসার টিকিয়ে রাখার জন্যে।
শেষ কথা হলো - 'জীবনটা আপনার' - আপনার সব সিদ্ধান্তের ফলাফল আপনাকেই ভোগ করতে হবে - ভাল বা খারাপ। বাইরে থেকে উপদেশ দেওয়া সহজ - কিন্তু কেউ কি সত্যি অন্য জনের মনের চিন্তা-ভাবনা, সুখ-দুঃখ সঠিক ভাবে বুঝতে পারে?
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
মণীন্দ্র,
দেবযানীকে বিদায়ের সময় কচ কি বলে ছিল মনে আছে কি?
"আমি বর দিনু দেবী
তুমি সুখী হবে,
ভুলে যাবে সর্ব গ্লানি
বিপুল গৌরবে"
[বহুদিন আগের পড়া এই লাইনগুলি হঠাৎ মনে পড়ল - ভুল উদ্ধৃতি দিলে দুঃখিত]
সময়ের সাথে অনেক কিছু বদলে যাবে।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
কমেন্ট না করেই পড়ি বেশীরভাগ পোস্ট । তবু এ লেখায় কমেন্ট করছি একটা টোটাল অফটপিক নিয়ে । আমাদের এক বন্ধু লন্ডন যাবার ভিসা জোগাড় করার পর থেকেই তার সম্ভাব্য বান্ধবীকে নিয়ে আমাদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা । কাল্পনিক একটা নামও জোগাড় হয়-"ক্রিস্টিনা"!!!আড্ডার বিষয়বস্তু তখন ঘুরেফিরে ক্রিস্টিনা কেন্দ্রিক এবং বন্ধুর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর আমরা বাকিরা!!!!!! কিন্তু, ব্যাটা পুরো ফাউল মেরে শূন্যহস্তে ব্যাক টু দ্যা প্যাভিলিয়ন । হায় ক্রিস্টিনা!!!!! বহুদিন পর।।
পোস্ট ভাল লাগলো।।
"অর্বাচীন",
গল্পটা শেয়ার করার জন্যে ধন্যবাদ। বন্ধুর সাথে লন্ডন গেলেই যে 'অতঃপর তাহারা সুখে-শান্তিতে ঘর করিতে থাকিল' - তা হয়তো নাও হতে পারতো। তবুও আপনার বন্ধু এবং 'আপনাদের ক্রিস্টিনার' স্বপ্নভঙ্গের জন্যে খারাপ লাগছে।
কমেন্ট করার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
বরাবরের মতই অদেখা আমেরিকার আরেকটা গল্প। লেখা ভাল লাগল সাইফ ভাই।
অনেক ধন্যবাদ, বাউলিয়ানা।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
ভালাবাসাটা মনে হয় দুটি মানুষের পাস্পরিক চর্চার ব্যাপার। কোথাও পড়েছিলাম কি না এখন মনে পড়ছে না যে, ভালোবাসা টবে লাগানো চারা গাছের মতই। একে সতেজ আর বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা। দুটি মানুষের কেউ যদি ভাবেন যে তিনিই কেবল ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য সেটা যেমন প্রত্যাশিত নয়, তেমনি কারো ভালাবাসাকে নিজের দিকে গতিশীল করতে নিজকেও কমবেশি ভালোবাসা বিলাতে হবে বৈকি। কেবল পিতামাতাই হয়তো ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা প্রত্যাশা করেন না। নইলে আর সবার কাছেই এটা বিনিময়যোগ্য হয়তো।
.
___________________________________________
ভাগ্যিস, আমার মনের ব্যাপারগুলো কেউ দেখতে পায় না!
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
জুলিয়ান সিদ্দিকী,
কিছু কিছু সৌভাগ্যবান আছেন যারা এই চারা গাছকে মহীরুহে পরিনত করতে পেরেছেন।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
লেখাটা হৃদয় ছুঁয়েছে। ক্রিস্টিনার ব্লগের লিংকটা কি শেয়ার করা যায়? যেন আমার তার লেখা পড়তে পারি (যদি আপত্তি না থাকে)
সাইফ ভাই, আপনার লেখার হাত চমৎকার। শুধু বানানের দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। আমি জানি টাইপ করার সময় নিজের অজান্তেই অনেক বানান ভুল হয়ে যায়। আমারও এই সমস্যা হয়। সচলায়তনের "প্রায়শ জিজ্ঞাস্য" পাতায় বাংলা বানান পরীক্ষা করার উপায় এই লেখাটা একটু পড়তে পারেন।
সত্যান্বেষী
সত্যান্বেষী হাসান,
ক্রিষ্টিনা তার আসল নাম না। লিঙ্কটা দিলে তার আসল নাম এবং আরও অনেক কিছু হয়তো প্রকাশ পাবে - সেটা কি উচিত হবে? পরে আমি তোমার (তোমার বললাম - ঠিক আছে তো?) ই-মেইলে তার লেখার আরও কিছু এক্সট্রাক্ট পাঠিয়ে দেব।
বানান ভুলের ব্যাপারে মনে করিয়ে দেবার জন্যে ধন্যবাদ। পোষ্টিং-এর পরে দেখলাম শেষের প্যারাগ্রাফে 'অলীক' বানান ভুল হয়ে আছে। 'সম্পাদনা' বোতাম চেপে ঠিক বানান লেখার চেষ্টা করার পরে যখন আবার 'সংরক্ষণ' বোতাম চাপলাম, তখন দেখি সম্পূর্ণ লেখাটা 'ঘচাং' হয়ে গেছে। ফলে আনুমানিক বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই পোষ্টিংটা অদৃশ্য হয়ে ছিল। পরে মডারেটরের ঠিকানা খুঁজে বের করে ই-মেইল করার পর আবার হারান পোষ্টিং ফিরে এলো। এবার দেখলাম শব্দটা 'অলীখ' হয়ে গেছে। যাক পুরা লেখাটা যে আবার 'অলখ' হয়নি সেটাই যতেষ্ট।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
সাইফ ভাই, তুমি বলা একদম ঠিক আছে। আমি এখনও পড়ালেখা করছি, আন্ডার-গ্রাজুয়েট।
লেখা পোস্ট দেওয়ার আগে একবার "প্রিভিউ" বাটনে ক্লিক দিয়ে দেখতে পারেন পোস্ট করার পরে লেখাটা কেমন দেখাবে। এতে করে লেখা পোস্ট পরবর্তী সম্পাদনা করার ঝামেলাটুকু এড়ানো কিছুটা সম্ভব হয়।
সত্যান্বেষী
দারুন মজা পেলাম লাইনটাতে......ক্রিস্টিনার চিন্তাভাবনা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল। এছাড়া বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আপনার চরিত্র ফুটিয়ে তোলার পারঙ্গমতাও অনবদ্য।
সিরিজের পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় থাকছি...
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
কাকুল কায়েশ,
অনেক ধন্যবাদ এই প্রশংসার জন্যে।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
যথারীতি চমৎকার লাগলো। তারা দেবার সামর্থ্য হয়নি। তাই দিতে পারছিনা। আরো লেখা চাই সাইফ সাহেব। ভালো থাকবেন।
মানিক,
লেখা ভাল লেগেছে তাতেই আমার সময় ক্ষেপণ সার্থক। তারার প্রয়োজন নেই আমার।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
সাইফ ভাই,
পড়তে পড়তে লেখার মাঝেই হারিয়ে গেলাম।জীবন থেকে নেয়া গল্পগুলা মনে হয় সত্যিই জীবনকে ছুঁয়ে যায়।
আকাশনীলা,
অনেক ধন্যবাদ। পৃথিবীর সব চাইতে সমৃদ্ধশালী দেশে বাস করেও প্রত্যাশার সাথে মিল না রাখার কারণে কি ভাবে অসুখী হয় মানুষ। আমিও এসব কথা চিন্তা করে মাঝে মাঝে হারিয়ে যাই।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
বলাইদার বলা
আজকের বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে অন্তত পরিবার থেকে কিন্তু ছেলেমেয়েদের পছন্দকে ২০ বছর আগের তুলনায় বেশি প্রাধাণ্য দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তাসনীম ভাইয়ের কথাগুলো আমিও বলতে যাচ্ছিলাম, লো এক্সপেক্টেশন আর কম্প্যাটিবিলিটি, দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে এই বিষয় দুটো ভাবার দরকার। আবার তরুণ প্রজন্মের একজন হিসেবে আমি আরেকটা জিনিস দেখছি, ছেলে-মেয়ে সবার মধ্যেই আজকাল কমিটমেন্টের প্রতি একটা ভীতি যেন কাজ করে, আবার কমিটেড থাকার ব্যাপারেও!
____________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
যাযাবর,
বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা অনেকটা সভ্যতার স্বাভাবিক ক্রমবিকাশের ফলাফল। ভাল বা খারাপ বলে তাকে চিহ্নিত করতে চাইনা। নীচে কয়েকটি দেশের ডিভোর্স রেট দিলাম [আনুমানিক সংখ্যা] -
ভারত - ১.১
জাপান - ১.৯
তুরস্ক - ৬.০
ইটালি - ১০.০
ইসরাইল - ১৪.৮
স্পেন - ১৫.২
সিঙ্গাপুর - ১৭.২
সুইসজারল্যান্ড-২৫.৫
ফ্রান্স - ৩৮.৩
জার্মানী - ৩৯.৪
ইউ, কে - ৪২.৬
রাশিয়া - ৪৩.৩
ফিনল্যান্ড - ৫১.২
ইউ, এস, এ - ৫৪.৮
সুইডেন - ৫৪.৯
বাংলাদেশের রেটিং কোথায় - কেউ কি বলতে পারবে?
শুভেচ্ছান্তে
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
লেখা ভাল লেগেছে। ক্রিস্টিনার অবস্থাটি ভাল লাগেনি।
দুর্দান্ত,
ঠিক বুঝলাম না কথাটা। সহানুভুতি, না এত অল্পে হাল ছেড়ে দেওয়ায় তার প্রতি বিরক্তি?
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
ক্রিস্টিনার যে বিরূপ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছে/যাচ্ছে, সেটা আমার ভাল লাগেনি। তার জন্য সহানুভূতি।
খুব খুব খুবই চমৎকার করে লিখতে পারেন আপনি। সুখ আর ভালোবাসার নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা তো নাই। এটা সবসময়ই মানুষ ভেদে পরিবর্তিত হয়, এমনকি সময়ের সাথেও। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নিজের এই অনুভূতিগুলোকে পারিপার্শিকতার সাথে মানিয়ে নেয়াটা অনেক বড় একটা ব্যাপার।
সবাই সুখি হোক ... ... ...
===============================================
ভাষা হোক উন্মুক্ত
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
অনুপম,
এতটা প্রশংসার জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
আপনার চরিত্র ফুটিয়ে তোলার মুন্সিয়ানায় আমি মুগ্ধ। আপনি গল্প বা উপন্যাস লিখতে পারেন। আর লেখা যথারীতি দুর্দান্ত।
অনন্ত
অনন্ত,
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
সাইফ ভাই, পড়লাম এবং যথারীতি মুগ্ধ হলাম, এর বেশি কিছু বলতে গেলে ঠিকভাবে বলতে পারবো না।
নিজের কিছু অভিজ্ঞতা বলার লোভ কখোনোই সামলাতে পারি না। পোলিশ নারী ইজাবেলা আমার বেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধু অনেক বছর ধরে। স্বামীর সাথে অনেকদিন সম্পর্ক না থাকলেও ছেলেদের কারণে একই বাড়িতে ওরা থাকতো। এরমধ্যে ইসাবেলা কয়েক বছর ধরে প্রেম করতো এফেহান নামের এক টার্কিশ সোলজারের সাথে। ওরা কখনোই একে অপরকে সামনাসামনি দেখেনি কিন্তু ওদের প্রেম ছিলো উন্মাতাল। আর ইজাবেলা প্রতি মাসে একদিনের জন্যে মিলিত হতো এ্যাশ নামের এক ইজিপশিয়ানের সাথে। আমি তার এই ব্যবস্থাপনায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছিলাম। তখন সে আমাকে বুঝিয়ে দিলো যে এফে তাকে স্বপ্ন দেখায় এবং সে স্বপ্ন হচ্ছে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। আর এ্যাশের সাথে তার কোনওরকম প্রেমঘটিত কোনও ব্যাপার নেই কিন্তু এশের সঙ্গ তাকে উজ্জিবীত করে। তাই তার ভাষায় এফে হচ্ছে তার ইন্সপিরেশন আর এ্যাশ হচ্ছে এ্যাট্রাকশন। এখন অবশ্য সবই বদলে গেছে। ডিভোর্স হয়ে গেছে, এফের সাথে সম্পর্ক শেষ আর এ্যাশের সাথে ভালো বন্ধুত্ব রয়ে গেছে। ওর জীবনে নতুন এক বৃটিশ মানুষ এসেছে যে তার ইন্সপিরেশন ও এ্যাট্রাকশান দুটোই। আজব মনে হলেও এটা জীবন।
আর হোমলেসদের যে দূরাবস্থা দেখেছি আমষ্টার্ডামে আর কোপেনহেগেনে, ভাবতে চাই না। আমাদের দেশের বুড়ো মানুষগুলো অনেক ভালো আছেন।
রাতঃস্মরণীয়
ইজাবেলার কাহিনী কিন্তু এখন অনেক খানে বেশ কমন। আপনার এই সব সুন্দর সুন্দর বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা - আরও লেখা দেখতে চাই।
আমার লেখা পড়ে মুগ্ধ হবার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
স্বপ্নে পোলাউ-কোর্মা খাওয়া যায়, সংসার হয় না- এমনটাই মনে হলো।
লেখাতে
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
শাহেনশাহ,
ভুলে গেছো তোমার বাবুর্চী হবার অফার? অসুবিধা কোথায় - নিজেই পোলাউ-কোর্মা রান্না করে খাবে।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
লেখা ভালো লেগেছে কিন্তু লেখার মাঝে সংযুক্ত ছবিটি ভালো লাগেনি।
কমল
কেন কমল? ছবিটা কি দোষ করল? বিয়ের পোষাকে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে চুম্বন দিচ্ছে - এটাতো এ দেশে খুব স্বাভাবিক চিত্র। কত স্বপ্ন তখন দু'জনের মনে। এর চাইতে সুন্দর ছবি কি হতে পারে?
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
১.
বরাবরের মতই আজো আপনার লেখাটি ভাল লাগলো।
২.
আমার মতে সংসার জিনিসটা একধরনের দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা। সংসারের সদস্যদের একে অন্যের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। যতদিন একে অন্যের সিদ্ধান্তগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা রাখা সম্ভব ততদিন সংসারে শান্তি বজায় থাকে।
আমার সংসারের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। আমি যেহেতু পরিবারের কর্তা তাই বড় বড় সিদ্ধান্তগুলো আমি নিই। যেমন: ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের যৌক্তিকতা, আরব-ইসরায়েল সঙ্কট, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উত্তরণের উপায় ইত্যাদি বড় বড় বিষয়গুলোতে আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
অপরপক্ষে ঘরে কী বাজার হবে, কাকে দাওয়াত দেয়া হবে, আমি কী পরবো, কী খাবো ইত্যাদি ছোটখাট বিষয়ের সিদ্ধান্তগুলো গিন্নির দায়িত্ব। ওখানে আমি নাক গলাই না।
কাকস্য পরিবেদনা
এই মন্তব্যে দিতে লগইন করলাম। হাসতে হাসতে শেষ। মিয়া আপনি পারেনও!!!
ভাবিরে সালাম জানায়েন।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
দ্রোহী,
মন খুলে হাসতে যাচ্ছিলাম, তখনই মনে পড়ল একটু আগেই টিভি জোরে হচ্ছে বলে 'মৃদু' ধমক খেয়েছি। সত্যি তোমার ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া তুলনাহীন - আশা করবো অন্যরা তোমার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে।
লেখা ভাল লাগার জন্যে ধন্যবাদ।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
ভাল লাগল অনেক।আসলেই, থিতু হতে পারা মানুষের সংখ্যা আজকাল বেশ কমে আসছে।
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
আপনার 'অলখ আমেরিকা' সিরিজে আগে মন্তব্য করেছি কিনা ঠিক মনে পড়ছে না, কিন্তু পড়েছি সবগুলো পর্বই। সবগুলোই কম বেশি ভালো লাগে, বিশেষ করে পিৎজা ডেলিভারির পর্বটা খুব মনে আছে।
ক্রিস্টিনা, ক্রিস্টিনারা সুখি হোক। এখনকার এই প্রায় হাতের বাইরে চলে যাওয়া গতিশীল সময়ে মানুষ একটু শান্তি পাক।
অনেকদিন পর আবার ঢাকায় থাকতে শুরু করেছি মাস দুয়েক হবে। এর মধ্যেই যে কতগুলো অশান্তির ঘটনা শুনলাম! সবগুলো যে দাম্পত্যবিষয়ক এমনও নয়, কিন্তু বিষয় যাই-ই হোক, এমন সব মাল্টিডাইমেনশনাল সমস্যা যে থই পাওয়া যায় না!
শুনেছি, ভালোবাসায় নাকি কাঠিন্যের কোনো স্হান নাই। তাই কী বলে 'প্রেমে জল হয়ে যাও মিশে'? এই মিশে যাবার প্রক্রিয়ায় দু'জনকেই ছাড় দেবার মানসিকতা দেখাতে হয়(হতেই হবে তা কিন্তু বলছিনা, হলে ভালো) । তালগাছটা 'আমার' না ভেবে 'আমাদের' ভাবতে পারাটা ভালোবাসাকে টেকসই একটা জীবন দেয় বলেই আমার ধারনা। ধর্য্যশীল হওয়াটা ভালোবাসা স্হায়ী হবার পেছনের একটা খুব কার্যকরী উপাত্ত। তবে কী রবার্টব্রুস খুব ভালো প্রেমিক ছিলেন ভাইয়া? হা হা হা হুট করেই এঁর নামটা কেন মাথায় এলো বলতে পারবোনা। আমার জীবনে দেখা খুব সুখী জুটি হলেন আমার মা-বাবা। মায়ের অল্পতেই খুশি হবার অপার ক্ষমতা আর বাবার অসীম ধৈর্য্য হয়ত এর পেছনে শক্তি যুগিয়েছিলো। খোদাই জানেন আমি জানি কেমন হই(দেঁতো হাসি)!
যে মেয়েটা হোমলেস একজন মানুষের জন্য খুব মমতায় প্রতিদিন কফি নিয়ে যেত, সে কতোটাই দরদীমনের মানুষ বুঝতে পারি। এই দরদী মনের মেয়েটার একটা সুখের ঘর হোক। ক্রিষ্টিনার জন্য অনেক শুভ কামনা থাকলো। ভাইয়া, আমার কাছে তো 'জুকিনি' খেতে খানিকটা 'শশার' মত লাগে, আপনি ঢেঁড়স বলে তো বেশ বিপাকেই ফেলে দিলেন! কালই গ্রোসারিতে 'জুকিনি' আনছি দাঁড়ান। আপনার পোষ্ট নিয়ে নতুন করে আর কী বলবো! মুগ্ধ হই বলেই সেই ঘোর আমাকে কত্তো কথা বলিয়ে নেয়, দেখেছে! আমাদের জন্য এরকম আরো লেখা আসতে থাকুন। অনেকক ভালো থাকবেন ভাইয়া।
আয়নামতি, স্নিগ্ধা, অদ্রোহ ও আগ্রহীরা,
আমি সাধারনত চেষ্টা করি প্রতিটি পর্ব যেন এক হাজার শব্দের কাছাকাছি দৌর্ঘের মধ্যে থাকে - এ পর্বটি তার প্রায় দ্বিগুন হয়ে যাওয়ায় সংক্ষিপ্ত করতে যেয়ে হয়তো কতগুলি বিষয় পরিস্কার ভাবে তুলে ধরতে পারিনি। বেশ কতগুলি বিষয় এই লেখা ও বিভিন্ন মন্তব্য থেকে উঠে এসেছে। এখন চেষ্টা করছি সে ব্যাপারে আমার কিছু অভিমত প্রকাশ করতে।
১) বাবা-মায়ের মধ্যে সুখ ও শান্তি না দেখলে সন্তানেরা তাদের জীবনে সেই অশান্তির ছায়া দেখতে থাকে।
২) বাংলাতে আমরা প্রেম ও ভালবাসাকে অনেকটা এক অর্থে ব্যবহার করি। ইংরেজীতে মুলত 'LOVE' শব্দটা দিয়ে অনেক কিছু এক সাথে বোঝানো হয়ে থাকে। যদিও ইংরেজী ভাষাতে সমার্থক এবং ভিন্ন অর্থের আরও কিছু শব্দ ব্যবহার হয়ে থাকে।
৩) 'সুখী সংসারের প্রেম' আর 'উথাল-পাতাল করা লাইলি-মজনুর প্রেম' - আসলে আলাদা জিনিস। বুঝাবার সুবিধার জন্যে আমি যদি লাইলি-মজনু, শিরী-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট এদের প্রেমকে বলি 'প্রেম১', তাহলে বলবো এটা একটা ভীষন ধংসমূখী শক্তি। প্রেম১ 'লজিকাল' বা 'র্যাশনাল' হয় না। এখানে সাংঘাতিক ভাবে 'জেলাসি' [বাংলা কি হবে?] এবং দখলদারীত্ব কাজ করে। ভালবাসার পাত্রী অন্য কারও সাথে হেসে কথা বললে মাথায় আগুন জ্বলে উঠে। আবার তার সামান্য একটু সুখের জন্যে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও যেন আপত্তি থাকে না। এই জন্যে বলছি মানুষ 'সুস্থ মস্তিস্কে' প্রেম১ করতে পারে না।
৪) 'সেক্স'-এর ঠিক সঠিক যুতসই বাংলা নেই। যেটা আছে সেটা ঠিক সব জায়গাতে ব্যবহার করে যায় না। [মেয়ে বাবাকে বলছে - "Dady, you are looking so sexy in this new red shirt" - এটাকে ঠিক বাংলা 'যৌন' শব্দ দিয়ে রূপান্তর করা অসুবিধাজনক]। আপাততঃ এটাকে 'প্রেম২' বলি। সুখী সংসারের জন্যে প্রেম২-এর অবদান কোন ভাবেই ছোট করে দেখা উচিত নয়। আমাদের বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে এটাকে এখনো অনেকটা 'টাবু' বলে গন্য করা হয়।
৫) সুখী সংসারের জন্যে উপরে তাসনিমের মন্তব্য এবং তোমাদের আরও অনেকের মন্তব্য সঠিক। এর সাথে আমি আরও যোগ করতে চাই - একে অপরের উপর আস্থা বা বিশ্বাস এবং দায়িত্ব জ্ঞান খুব প্রয়োজনীয় বিষয়।
৬) সংসারে টাকা-পয়সার অভাবে যেমন অশান্তি হতে পারে তেমনি বেশী টাকা থেকেও অশান্তির সূচনা হতে পারে। একটা মাঝামাঝি অবস্থাতে থাকলে সুখী হবার সম্ভাবনা বেশী।
৭) ছেলে এবং মেয়েরা আপাতঃ সমান সমান হলেও তাদের চিন্তা ও ব্যবহারের মধ্যে বেশ তফাৎ আছে। ["Men are from Mars and women are from Venus" - নামে একটা বই আছে - পড়ে দেখতে পার]। এটা যদি স্বামী ও স্ত্রী বুঝতে পারে তাহলে অনেক সমস্যা কমে যেতে পারে।
৮) সন্তান গ্রহন করার ইচ্ছা না থাকলে, বিয়ে করার আগে দু'বার চিন্তা করা উচিত [এখনতো শুনি বাংলাদেশেও বিয়ে না করে এক সাথে থাকা যায়]। সাধারনত সন্তান হবার পর ভালবাসার রূপের পরিবর্তন ঘটে - সেই ভালবাসাকে আমরা 'প্রেম৩' বলতে পারি।
৯) স্বামী-স্ত্রীর দু'জনেরই উচিৎ একে অপরকে কিছুটা 'স্পেস' দেওয়া। খুব কাছে টানা বা খুব বেশী প্রেম অনেক সময় বিপরীত ফল আনে।
১০) এসব জ্ঞান ৬০ বছরে লাভ করার বদলে, যদি ২০ বছরে লাভ করা যায় - সেটাই ভাল। প্রয়োজনে স্কুল-কলেজের পাঠ্য বিষয় করা উচিৎ।
সবাইকে সুখ কামনা করে -
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
আয়নামতি,
আমি 'জুকিনি' ভাজি ছাড়া খেয়ে দেখিনি - তাই মনে করি তুমি ঠিক বলেছ। আমি অবশ্য ক্রিষ্টিনার লেখা অনুবাদ করার সময় জুকিনির বাইরের আকৃতির কথা মনে রেখে তাকে ঢেড়সের সাথে তুলনা করেছিলাম।
কাঁচা জুকিনি খেতে কেমন লাগে - জানিও আমাদেরকে।
সাইফ শহীদ
নতুন মন্তব্য করুন