মারিয়া তার নতুন কেনা গাড়ীর সাথে একটা ভাড়া করা ট্রেইলারে তার সব মাল-পত্র নিয়ে খুব ভোরে রওয়ানা হয়ে গেল ক্যালিফোর্নিয়ায় পথে। আমার সাথে আর দেখা হল না। যাবার আগে অবশ্য এসেছিল তার মা আর ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্যে। শুধু আমার সাথেই দেখা হলো না। এমনকি আমাকে সে বলেনি যে শেষ পর্যন্ত আমার মতই কম্পুউটার বিজ্ঞান লাইন বেছে নিয়েছে সে এবং ক্যালিফোর্নিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর জন্যে এই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
এক যুগ আগে এমনি ভাবে গাড়ীর সাথে একটা ভাড়া করা ট্রেইলারে আমাদের সব মালামাল তুলে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে গাড়ী চালিয়ে এখানে এসেছিলাম আমরা। শুরু করতে একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল। ফলে এখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত আড়াইটা বেজে গিয়েছিল। প্রায় ১৪ ঘন্টা গাড়ীতে থাকতে হয়েছিল সবাইকে। সবারই বেশ কষ্ট হয়েছিল সেদিন, বিশেষ করে বাচ্চাদের। মারিয়া আর আজকে বাচ্চা নেই, একাই সে এই দূরের পথে সাহস করে চলতে শিখেছে।
তার পুরানো গাড়ীটা দেখলাম বাড়ীর সামনে পার্ক করে রেখে গেছে। গাড়ীর ভিতরে তার এক কালের প্রিয় সাদা টেডী বেয়ারটা রাখা। আমার মেয়ে এখন বড় হয়ে গেছে - টেডী বেয়ারের সঙ্গ আর দরকার হয় না ঘুমাতে যাবার সময়। আস্তে করে গাড়ীর গায়ে একটু হাত ছোয়ালাম। মনে মনে প্রার্থনা করলাম যেন সে নিরাপদে এই ৮০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তার গন্তব্যে ঠিক মত পৌঁছাতে পারে। আমার মন ছুটে গেলো তার গন্তব্যের কাছাকাছি স্থানে - ১২ বছর আগের এক দিনে।
আগে আমি দো'তলার এক বেড রুমের একটা এপার্টমেন্টে থাকতাম। এবার দুই বেড রুমের একটা এপার্টমেন্ট নিলাম এবং নীচের তলায়, কারণ সাঈদকে নিয়ে সিড়ি ভেঙ্গে দো'তলাতে ওঠা সম্ভব হত না। আমাদের এপার্টমেন্টের পাশেই ছিল ছোট একটা সুইমিং পুল। এই সামান্য আয়োজন দেখেই মমতাজ আর মারিয়া খুব খুশী হল। আসলে এই 'খুশী' হওয়া শব্দটি কত আপেক্ষিক।
ক্যাথি শুনে খুশী হয়ে মারিয়ার জন্যে নিজের টাকা দিয়ে একটা স্কুলের ব্যাগ কিনে দিল। ব্যাগটা মারিয়ার পছন্দ হল। সে এটাই ব্যবহার করা শুরু করলো স্কুলের বই ও অন্যান্য জিনিস সাথে নিয়ে স্কুলে যাবার সময়। সকালে আমি মারিয়াকে সাথে নিয়ে আধা-মাইল হেটে নিকটবর্তী স্কুলের বাস থামার স্টপে যেয়ে দাঁড়াতাম এবং মারিয়া বাসে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম। ফেরার পথে আমাদের এপার্টমেন্টে থাকতো ঐ স্কুলেরই এক ছেলে, তার সাথে ফিরতো মারিয়া। ক্যাথিই এই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। স্কুলটা ছিল আমাদের এপার্টমেন্ট থেকে প্রায় পাঁচ মাইল দূরে। মারিয়া যদিও তার বয়েসের তুলনায় যথেষ্ট স্মার্ট ও বুদ্ধিমান মেয়ে, কিন্তু সবে বাংলাদেশ থেকে এসে সম্পূর্ণ নতুন এক পরিবেশে অভ্যস্থ হওয়া খুব একটা সোজা ব্যাপার ছিল না।
আমেরিকাতে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ফ্রি লাঞ্চ দেওয়া হয়, যদি তাদের বাবা-মায়ের আয় একটা নির্দিষ্ট পরিমানের নীচে হয়। যদিও আমি তখন তেমন কিছু আয় করতাম না, তবে সেই আয় ফ্রি লাঞ্চের জন্যে 'কোয়ালিফাই' করতাম না। মমতাজ একটা ছোট কৌঁটায় কিছু স্ন্যাক জাতীয় জিনিস মারিয়ার সাথে পাঠিয়ে দিত। দুপুরে অধিকাংশ ছাত্ররা যখন বেশ ভাল ভাল খাবারের লাঞ্চ খাচ্ছে, তখন তার টিফিন বাক্স খুলে এই সব জিনিস খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত করতে হতো মারিয়াকে। বাড়ীতে ফিরতে ফিরতে আড়াইটা-তিনটা বেজে যেত - তখন সে দেরীতে ডাল, ভাত, তরকারী দিয়ে তার বাংলাদেশী লাঞ্চ খেত। সকাল ৮ টায় শুরু হত তার ক্লাশ, ফলে ৭ টার মধ্যে উঠে রেডী হয়ে সামান্য কিছু ব্রেকফাস্ট খেয়ে স্কুলের জন্যে রওয়ানা হতে হত তাকে। সামান্য যে স্ন্যাক তার মা তার সাথে পাঠাতো সেটা পরিমানে এমন কিছু ছিল না। মারিয়া চিরকালই খুব ভাল মেয়ে। বাবা-মায়ের সামার্থ সম্পর্কে ধারণা ছিল তার। ফলে কখনো স্কুলে খাবার কিনে খাওয়ার জন্যে অতিরিক্ত টাকা চায়নি সে আমাদের কাছ থেকে। তবে উঠতি বয়েস তখন তার, স্কুল থেকে যখন ফিরতো তখন তাকে প্রায় দেখতাম বেশ ক্ষুধার্ত। মাঝে মাঝে আমার বন্ধের দিনে দেখতাম স্কুল থেকে ফিরেই সে বলছে - "মম, তাড়াতাড়ি খেতে দাও। আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে।"
এক দিন ফেরার পথে মারিয়া তার বাস মিস করলো। স্কুলে বেশ কয়েকটা বাস ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ীতে আনা-নেবার জন্যে। একই রকম দেখতে হলুদ রং সব বাস গুলির। মারিয়া ভুল বাসে চড়ে বসেছিল। যখন তার ভুলটা আবিস্কার হল, ততক্ষণে তার নির্দিষ্ট বাস ছেড়ে গেছে। সাধারনত প্রাথমিক বা মিডল স্কুলে কম বয়েসী ছাত্র-ছাত্রীদের আসা-যাবার ব্যাপারে বেশী খেয়াল করা হয় এবং স্কুল কর্তপক্ষের কেউ থাকে এ সব ব্যাপারে নজর রাখার জন্যে। হাই স্কুলে ধরে নেওয়া হয় সবাই বেশ বড় হয়েছে এবং নিজের আসা-যাবার ব্যাপারে স্বাবলম্বী। ফলে মারিয়াকে সাহায্য করার জন্যে ওই সময় স্কুলে তেমন কেউ ছিল না। তবুও মারিয়া বুদ্ধি করে প্রিন্সিপালের অফিস থেকে ফোন করে তার মাকে খবর দিতে পেরেছিল তার এই অবস্থা জানিয়ে।
মা তাকে বলেছে - "তুমি চিন্তা করো না। আমি তোমার বাবাকে ফোন করে দিচ্ছি। সে এখনি যেয়ে তোমাকে নিয়ে আসবে।"
যখন মমতাজ ফোন করে এই অবস্থা আমাকে জানালো, তখন আমি রেস্টুরেন্টে 'হোস্ট'কে বিদায় দিয়ে তার কাজ সামাল দিচ্ছি। একটু বড় রেস্টুরেন্টে সাধারনত 'রাশ-আওয়ার'-এ, যেমন দুপুর ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সময়ে, গ্রাহকদেরকে অভর্থনা জানাবার জন্যে বিশেষ এক কর্মচারীকে নিয়োগ করা হয় এই কাজের জন্যে। গ্রাহকদেরকে তাদের নির্দিষ্ট টেবিল পর্যন্ত পৌঁছানোই মূলত এদের কাজ। দুপুর দেড়টার পর সাধারনত ভিড় কমে যায়। কিছুটা টাকা বাঁচাবার প্রচেষ্টা হিসাবে আমি তখন হোস্টকে বিদায় দিয়ে নিজেই সেই কাজটি করছি আমার অন্যান্য তদারকি কাজের সাথে সাথে। ২ টার পর সাধারনত খুব কম লোক আসে লাঞ্চ করার জন্যে। কোন হোস্ট না থাকলেও সাধারনত অন্যান্য সার্ভাররা কোন গ্রাহক আসতে দেখলে তাকে নিয়ে গিয়ে বসাবে। ফলে যদি আমি কিছুক্ষণের ব্রেক নিয়ে মারিয়ার স্কুলে যেয়ে তাকে নিয়ে আসি তবে আমার কাজের তেমন কিছু ক্ষতি হবে না।
পাশের ঘরে আমার বসের অফিস। সেখানে যেয়ে আমার অবস্থাটা বুঝিয়ে বললাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে মারিয়াকে নিয়ে আসার জন্যে কিছুক্ষনের জন্যে আমাকে যেতে দিতে আপত্তি করবে না সে। এমনকি হয়তো সে নিজেই যেয়ে মারিয়াকে নিয়ে আসতে পারে। হাজার হলেও সে শুধু আমার বস নয়, আমার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সহপাঠিও বটে। ক্যালিফোর্নিয়া আসার পর সেই আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে অভর্থনা করে সোজা নিয়ে তার বাড়ীতে উঠিয়েছিল এবং এক মাস তার বাড়ীতেই ছিলাম। তার স্ত্রী যত্ন নিয়ে আমার জন্যে ডিনার রান্না করেছে তখন।
- এখন তুমি কি করে যাবে? রেস্টুরেন্ট ম্যানেজ করবে কে তা হলে?
- সার্ভাররা আছে, আমি না ফেরা পর্যন্ত তারাই ম্যানেজ করতে পারবে। - বললাম আমি।
- না। সার্ভারদেরকে বিশ্বাস করা যায় না। - আলোচনার সমাপ্তি টানলো বস।
আমি ফিরে এলাম। নিজেকে খুব ছোট মনে হল। আমেরিকা আসার আগে, বিগত ১০ বছর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে নিজের কম্পুউটার কোম্পানী চালিয়েছি। অনেকেই কাজ করতো সেখানে। তার আগে বেক্সিমকো কম্পুউটারস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেছি। তার আগে বেক্সিমকোর এক জন সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে অনেক বছর কাজ করেছি। আমার মনে পরে না কারও প্রয়োজনে বা বিপদে কখনো কাউকে ছুটি দিতে আপত্তি জানিয়েছি আমি। আমেরিকার কোম্পানীতে কি এতটাই মানবিকতাবোধ শুন্যতা নিয়ে কাজ করতে হবে?
যখন আমার পরিবার এখানে আসেনি, তখন আমি দিনে ১২-১৩ ঘন্টা কাজ করেছি সপ্তাহে ৬ দিন করে এবং এ ব্যাপারে কখনো কোন কথা উঠায়নি। আমি জানতাম যে আমার বস-বন্ধু এক ধরনের সুযোগ নিচ্ছে আমার উপরে, কিন্তু ভাবতাম হাজার হলেও সে আমার বন্ধু, আমার যতটা সম্ভব তাকে যাহায্য করা উচিৎ। তাছাড়া একলা ছিলাম আমি - অতিরিক্ত সময় কাজে ব্যায় করতে খারাপ লাগতো না।
মমতাজকে ফোন করে অবস্থাটা জানালাম।
- তুমি কি বলো, চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চলে আসবো?
- বোকামী কোর না। দেখি আমি কি করতে পারি। পরে আবার ফোন করবো।
আমার মনে পড়ল - ঢাকাতে এক বার আমার জ্বর হয়েছিল। সময়টা ৭০ দশক। মমতাজ ফোন করলো আমার তখনকার বস সোহেলকে। সে তখনি তার ছোট ভাই সালমানকে পাঠাল আমাকে দেখার জন্যে। সাথে করে এক ডাক্তার নিয়ে আমাদের বাড়ীতে এলো সালমান। এই ধরনের একে অপরের প্রতি সহানুভূতি থাকার কারনে মাত্র ৩ জন কর্মচারী নিয়ে শুরু করে পরে ২০ হাজারের বেশী লোকের গ্রুপে পরিনত হতে পেরেছিল বেস্কিমকো।
সাধারনত দুপুরের এই সময়টাতে আমি আমার লাঞ্চ করতাম। বাবুর্চী জানতে চাইল আমার খাবার তৈরী করবে কিনা। আমি তাকে অপেক্ষা করতে বললাম।
আমি মারিয়ার কথা ভাবছিলাম - আমার ছোট্ট এই মেয়েটা - ক্ষুধার্ত এবং সম্পূর্ণ একাকী - এক নতুন দেশের নতুন পরিবেশে অধীর আগ্রহে জনশূণ্য স্কুলের সিড়িতে বসে একাকী অপেক্ষা করছে - এই স্থির বিশ্বাস নিয়ে যে বাবা এসে তাকে উদ্ধার করবে।
আমি যখন রেস্টুরেন্টের সব গ্রাহকদের খাবারের তদারকি করছি, তখন আমার নিজের মেয়ে না খেয়ে ক্ষুধায় অস্থির হয়ে আমার পথ পানে চেয়ে বসে আছে।
আমি জীবনে কখনো এতটা অসহায় বোধ করিনি।
মমতাজ সেদিন সোজা ছুটে গিয়ে অবস্থা বর্ণনা করে ক্যাথির সাহায্য চেয়েছে। তার সব কাজ ফেলে ক্যাথি তখন মমতাজকে সাথে নিয়ে স্কুলে যেয়ে মারিয়াকে উদ্ধার করে এনেছে। এ সাহায্যের জন্যে ক্যাথির প্রতি চিরকৃতজ্ঞ আমি।
সেদিন থেকেই কি মারিয়া বুঝে গেছে যে বাবাকে কিছু বলা আর না বলাতে খুব একটা আসে যায় না?
মন্তব্য
সাইফ ভাই, ঢাকার কর্পরেট হাউসগুলো এখন ওরকম হয়ে গেছে। আমাদের ঝোঁক শুধুই ঋণাত্মকে, তা জীবনযাত্রাতেই হোক, কি কর্পরেট কালচার
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
মেয়ের বাবা হিসেবে আপনার আকুতি ভালোই বুঝি...বাবা মানেই হয়ত আশ্রয়। হৃদয় ছুঁয়ে গেল আপনার লেখা।
আমি সৌভাগ্যবান, আমি আমেরিকাতে সব সময়েই ভালো বস ও সহকর্মী পেয়েছি। আমার দ্বিতীয় কন্যার জন্মের পরে, দুই মেয়ে এবং স্ত্রী সবাই নানান অসুখে অসুস্থ হয়ে পড়ে, অফিসের সাপোর্ট না থাকলে সেই বিপর্যয় অতিক্রম করা দুঃসাধ্য হত।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
সাইফ ভাই, ছুঁয়ে গেলো খুব। আমার মেয়ের ২ বছর হবে আগামীকাল। ভবিষ্যতটাই যেন মনে হলো ভেসে উঠলো
লেখাটা পড়ে খুব মনখারাপ হয়ে গেল। মার সাথে যখন ফোনে কথা বলি, কান্না পায় না। কিন্তু জানিনা কেন বাবার সাথে একটু কথা বললেই, খুব কান্না পায়। আমি তাড়াতাড়ি কাজ আছে বলে ফোন রেখে দেই। হয়ত আপনার মেয়ে সেই কান্নাটা লুকানোর জন্যই আপনাকে না বলে চলে গেছে।
আপনার এই সিরিজটা এত অন্যরকম ভাল। আপনি ভাল থাকুন আর অনেক লিখুন আমাদের জন্য।
লেখাটা মন ছুঁয়ে গেল সাইফ ভাই।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সচল জাহিদ ব্লগস্পট
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
এটা গল্প হলেই ভালো হতো, শেষটায় মন খারাপ করে দিলেন।
আপনার এই সিরিজটা বেশ ভালো লাগছে সাইফ ভাই।
বন্ধু-বস এর আচরণে যারপরনাই ক্ষুব্ধ হলাম।
আপনার কন্যারত্নটির জন্যে অশেষ শুভকামনা,
সমবেদনা।
হাসলাম, কারণ আমার কিছু স্মৃতি মনে পড়ল, বিদেশের স্কুল নিয়ে। আর বাবার আর আমাদের কিছু কথা মনে পড়ল। বিশেষ করে আমি যখন বাবাকে প্রথমবার বিদায় দিয়েছিলাম, অনেকটা জোর করেই, আর বাবাও বলবে না বলবে না করেই বেশ রোবটিক ওয়েতে আমাকে বলেছিল - এই প্রথম একা রেখে যাচ্ছি কিন্তু... আমিও তার মতোই রোবটিক ওয়েতে শুনেও শুনি নাই ভাব করে কাজে চলে গেছিলাম... আফসোস, সবাই বড় হয়ে যাই, না চাইলেও...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
বাচ্চারা এত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়! আশ্চর্য!
অনেক সময় না বলা কথায় অনেক ভালবাসা লুকিয়ে থাকে। আপনার মেয়ে যে আপনাকে আইডল মনে করে সেটা বোঝা যায় তার গ্র্যাজুয়েশন এর মেজর সিলেকশন দেখে। এই সিরিজটা চলতে থাকুক পাঠকের ভালোবাসায়।
আহ। কিছু বলতে পারি না।
বাড়ীতে রেখে আসা মানুষদের কথা মনে পড়ে, হাওয়াই আড্ডায় যাদের ছেড়ে উড়াল দিতে হলো। এখন বছরে তিনবছরে দেখা হয় কয়দিনের জন্য। কিন্তু সে কি আর সেই আগের মতন?যেখান ছেড়ে আসা, আর কোনোদিনই কি সেইখানটায় ফেরা যায়?
ভালো থাকুক আপনার কন্যা, সুখ ও সফলতা লাভ করুক।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
পড়ে কষ্টই পেলাম কেন জানি।
ভালো লাগলো । কিছু মনে করবেন না এমনি জানতে চাওয়া, ঢাকায় এত ভালো চাকরী অথবা নিজের কোম্পানী ছেড়ে ভিন্ন দেশে এসে অন্য ট্র্যাক এ জব করা - কিভাবে মূলায়ন করছেন ?
একজন বাবার অনুভূতি...
ছুয়ে গেলো..
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
সাইফ ভাই, আপনার মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখার জন্যে ধন্যবাদ। এতোটা যান্ত্রিক জীবন আমার ভালো লাগেনা। একজন বাবার কষ্ট আপনি যেভাবে ব্যাক্ত করলেন তাতে আর কিছু বলার মতো ভাষা থাকেনা।
রাতঃস্মরণীয়
ঝাপঁসা চোখে শেষটুকু পড়লাম...আহা...মন খারাপ করেন না, মেয়ে বলে জানি বাবারা মেয়েদের কত আপন। আর আপনি যে এক অসাধারন বাবা সেটা আপনার লেখা পড়লেই বোঝা যায়। হয়তো কোন ঝামেলাই মেয়ে দেখা করতে পারেনি?
আমার বাবা মারা যান যখন আমি ১০, সারা জীবন শুধু অধীর, অস্থির হয়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করে গেলাম...এখনো করি
- মেঘলা
কর্তপক্ষের> কর্তৃপক্ষের টাইপো
সাইফ ভাই, অসাধারণ লিখেছেন। বাংলাদেশের কর্পোরেট হাউজগুলোও এখন অনেকটাই এরকম হয়ে গেছে। তারপরেও আপনার বন্ধু বসের ব্যবহার খুবই আহত করলো। যাই হোক, আপনার অশ্রুভেজা লেখা পড়ে আপনার কন্যার প্রতি কিছুটা অভিমান হলেও আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সে যখন সন্তানের জননী হবে সে অবশ্যই তার এই বয়সের অসংখ্য ভুল বুঝতে পারবে।
একটা কথা বলি অন্য কিছু মনে করবেন না...মাঝে মাঝে এই ব্লগে আসি... অলখ আমেরিকা'র নতুন কোন লেখা আসছে কি না সবার আগে দেখি...আপনার প্রায় লেখা গুলো যদিও একই কিন্তু অনুভূতি গুলো সম্পূর্ন ভিন্ন...ভাল থাকবেন সব সময়...
[রাহাত]
অসহায় অবস্থাগুলোই ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়।
দ্রুতগতির জীবন সংসারের জন্য কষ্টদায়ক ... ...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
আবার মন খারাপ করে দিলেন সাইফ
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
জানুয়ারি থেকে আমার মেয়ে স্কুলে যাবে... লেখাটা ছুঁয়ে গেলো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনার এই সিরিজটা আমার প্রিয়, অনেকের মতই।
বাবা- জিনিষটা এখন অস্থির লাগে। বাবার সাথে সম্পর্ক নেই প্রায় ৪ বছর। কারণ, তিনি আমার মা-কে বাড়ি থেকে বের করে দিছেন। নিজের জিদ বজায় রাখতে। তার অনুভূতিগুলো বুঝি। কিন্তু, এখন আর ভাল্লাগেনা। আজ সকালেও তার সাথে অনেক বাজে আচরণ করেছি। আমি একটুতেই অপরাধবোধে ভুগি, কিন্তু এই মানুষটার ক্ষেত্রে না। অনেকেই বলে, এখন তিনি আছেন বলে এমন করতে পারতেছো, না থাকলে কাঁদবা। কিন্তু আমি ধৈর্য্য হারিয়েছি এই ২৮ বছর বয়সে।
নিজেও হয়তো একদিন বাবা হবো, তাই ভয় লাগে।
তবে, আপনাদের মত বাবা-দের গল্পো পড়লে খুব কষ্ট হয়।
কিসসু ভাল্লাগেনা।
ভাল থাকবেন।
বাবার সঙ্গে চ্যাট করতে করতে এক ফাঁকে পড়ে গেলাম...
উত্তরটা মনে হয় আনন্দী আপাই সুন্দর করে দিতে পেরেছেন।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
অসাধারণ! হৃদয় ছুয়ে গেছে লেখাটা।
অনন্ত
লেখা ভালো লেগেছে বলতেও খারাপ লাগছে।
বাবা এবং কন্যা ভালো থাকুক
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
মেয়েরা বাবার সাথে অভিমান করবে না তো আর কার সাথে করবে।
এটাই তো একমাত্র জায়গা যেখানে নির্দ্বিধায় আবদার করা যায়, অভিমান করা যায়। কারণ মেয়েরা জানে তাঁদের বাবারা নিস্বার্থভাবে তাদের সমস্ত কিছু পূরণ করবে। একটা মেয়ে জীবনের প্রতিটা ধাপে এক একজন মানুষের কাছে এক একরকম। কেবল বাবার কাছেই সে জন্ম থেকে শেষ দিনটা পর্যন্ত তাঁদের মনের বিশাল রাজ্যের অতি আদরের রাজকুমারী।
লেখা পড়ে একবার ভেবে দেখলাম বাবাকে এজীবনে কতবার কতভাবে কি কি কষ্ট দিয়েছি। সংখ্যাটা কিছু কম না!
দৃশা
লেখাটা খুব মন ছুঁয়ে গেল। আপনার বন্ধুর উপরে মেজাজ চরম খারাপ হইল। একটা জিনিস লক্ষ করেছি, দেশি কেউ ক্ষমতা পেলেই দায়িত্বশীলতা যেন একটু বেশিই দেখায়। অথচ ২ নাম্বারি করার জন্যে আমাদের নাম কম না। এজন্যে গত ৫ বছর ধরে আমি পারতপক্ষে দেশী মানুষ এড়িয়ে চলি। আপনার মেয়েকে লেখার লিংকটা পাঠিয়ে দিন, অভিমান কমে যাবে।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
বাংলাদেশের অধিকাংশ বেসরকারী কর্পোরেটে একই অবস্থা। আমি কাজ করি টেলিকমে, ভেন্ডর ইঞ্জিনিয়ার - এইখানে অবস্থা আরো ভয়াবহ। না ঘুমিয়ে না খেয়ে কত্ত কাজ করেছি টানা ২২ ঘন্টা, ৩২ ঘন্টা... কিন্তু দাদা অসুস্থ হাসপাতালে প্রতিদিন যেতে পারি নাই , আম্মুর অপারেশান এর একদিন পরই বাসায় একা রেখে অফিসে আসতে হয়েছে, প্রিয় বন্ধুদের কতো বিয়ে মিস করেছি, এখন আর পরিবারের সদস্যরা কিছু প্রত্যাশা করে না। মাঝে মাঝে বাসায় ফিরে দেখি সবাই কোনো আত্মীয় এর বাসায় বেড়াতে গেছে, আমি জানিই না, জানিয়েই লাভ কি আমাকে? ভাগ্যিস বিয়ে করি নাই এখনো, তাই এখনো ঝাড়ি খাওয়া থেকে রেহাই আছে।
সাধারনত লেখা পড়েই যাই, কমেন্ট করা হয় না।
এই লেখায় কমেন্ট না করে পারলাম না।
নতুন মন্তব্য করুন