[ভূমিকা - তিন ঘন্টার বেশী হয়ে গেল, তবু হিক্কা ওঠা বন্ধ হচ্ছে না দেখে 'আর্জেন্ট কেয়ার' ডাক্তারের স্মরনাপর্ণ হলাম। তার আগে অবশ্য আমি নাক চেপে নিশ্বাস বন্ধ করে চেষ্টা করেছি হিক্কা বা হেচকি বন্ধ করার। বেশ কিছু পানি খেয়েও দেখলাম কোন লাভ হল না। রক্তে কার্বনডাইঅক্সাইডের পরিমান বাড়িয়ে ফেলতে পারলে এটি তখন শরীর থেকে হিক্কা উঠা বাদ দিয়ে অতিরিক্ত কার্বনডাইঅক্সাইডকে বের করতে ব্যস্ত হওয়ার কথা। এক ঠোঙ্গার মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে নিশ্বাস নিলে নাকি কার্বনডাইঅক্সাইড বেশী ঢুকে শরীরে। কাজ হল না।
প্রায় বিশ বছর আগে এমনি এক অবস্থায় পড়ে ঢাকার পিজি হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল প্রায় এক সপ্তাহ। পরে জেনেছি ওই সময়ই আমার প্রথম 'হার্ট এট্যাক'-টি হয়েছিল। আমার এক বেলজিয়ান ডাক্তার বন্ধু আমাকে হাসপাতালে দেখতে এসে পরে আমাকে বলেছিল আমার এই হিক্কা খাওয়া দেখে সে ভেবেছিল আমি হয়তো আর বাঁচবো না। সে যাত্রায় অবশ্য তেমন কিছু ক্ষতি ছাড়াই রক্ষা পেয়েছিলাম। পিজি হাসপাতালের ডিরেক্টর তখন আমার এক বন্ধু মানুষ। তার কৃতিত্বেই বেঁচেছি সেবার।
এরপর আমেরিকা আসার পর আবিস্কার হল আমার হৃদযন্ত্রের রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালীর তিনটি কাজ করছে না। তারপর দিনই সার্জারী করল ডাক্তারেরা। হাসপাতালের বিল এলো বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৮০ লাখ। ঢাকাতে সম্ভবত একই অপারেশন ৫ লাখ টাকার মধ্যে হয়ে যেত। ভাগ্যিস ঐ সময় আমার মেডিকেল ইন্সিওরেন্স ছিল এবং তারাই প্রায় সমস্ত টাকাটা দিল। এর পর আরও পাঁচ বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে ঐ মেরামত করা তিনটি রক্তনালীর মধ্যে দু'টি আর কাজ করছে না। যখন 'আর্জেন্ট কেয়ার' ডাক্তার এই ইতিহাস শুনলো তখনই এম্বুলেন্স ডেকে আমাকে হাসপাতালে পাঠাতে চাইল।
হাসপাতালে যাবার সাথে সাথে আমাকে ভর্তি করে নিল। এর পরের ঘটনা আমার খুব একটা স্পষ্ট মনে পরে না। হিক্কা থামাবার জন্যেই বোধ হয় একটা ইঞ্জেকশন দিয়েছিল তার পরে শুধু মনে আছে আমি সজোরে ফ্লোরে পড়ে গিয়েছিলাম এবং ব্যাথায় কেঁদেছিলাম - এটুকুই মনে আছে। পরে জেনেছিলাম অনেক কিছু টেস্ট তারা করেছিল আমার উপর যার কোন স্মৃতি নেই আমার। ওই সময় আমি দেখলাম আমার মাথার নীল উলের টুপি খুলে তার ভিতর থেকে আমি একটু নীল উল বের করে আকাশে ঊড়িয়ে দিলাম। ঐ সামান্য একটু উল থেকে আরো নীল উল তৈরী হল। ক্রমে সারা আকাশ ঐ নীল উলে ভরে গেল। আমার খুব ভাল লাগলো। মনে হল একটু পরে আমিও যেন ঐ উলের মতই ভাসতে থাকবো। মনে চিন্তা এলো - আচ্ছা এটাই কি মৃত্যু? মৃত্যুতো তা হলে ভয়ের বা কষ্টের না...
আমার এক বন্ধুকে ফোন করে - "কেমন আছিস দোস্ত" জিজ্ঞাসা করলে সে বলে - "বোর্ডিং কার্ড হাতে নিয়ে বসে আছি, ডাক পড়লেই ফ্লাইটে উঠবো।" তার কথায় তখন হাসতাম। বুঝলাম এখন থেকে আমিও তার মত বোর্ডিং কার্ড হাতে নিয়ে বসে আছি। আমার আর নতুন করে কিছু পাবার নেই, কাউকে ভয় করারও নেই। আমার 'ইনিংস' আমি খেলেছি।
কি করতে পারি তাহলে এখন এই অপেক্ষার সময়টাতে? কাউকে খুশী করার চেষ্টা না করে, জীবনে যেভাবে যেটাকে দেখেছি - সেই ছোট ছোট ঘটনাগুলি আমার বিস্মৃতির অন্তরালে চলে যাবার আগে এখানে লিপিবদ্ধ করলে কেমন হয়? সেই প্রচেষ্টাতেই এই সিরিজ - "স্রবন্তী স্মৃতিপট।"
এখানকার অনেক কথাই অনেকের ভাল লাগবে না। দেশে থাকলে হয়তো এভাবে লিখতাম না। কিন্তু কারও ভাল লাগা আর না লাগায় কি আর আসে যায় এখন? আমার 'ইনিংস'-তো শেষ।]
মওলানা ভাসানীকে প্রথম যখন দেখি তখন আমার বয়স ১২-১৪ বছর হবে। সঠিক সনটি এখন মনে নেই, তবে সম্ভবত ৫০ দশকের ঘটনা এটি। আমি আর আমার এক বন্ধু আমরা দু'জনে স্কুলে যাচ্ছি হেটে হেটে। তখন স্কুল শুরু হত সকাল দশটায়। আমরা সকালে রীতিমত গরম ভাত খেয়ে স্কুলে যেতাম। এক মাইলের বেশী দূরে ছিল স্কুল। আমরা যশোরের ভৈরব নদীর উপরের এক ব্রীজ পার হয়ে দড়াটানা হয়ে লালদীঘির কাছে জেলা স্কুলে যাচ্ছিলাম। শুনেছি যখন ব্রীজ ছিল না তখন ফেরী নৌকায় অতিক্রম করতে হত এই নদী। একটা মোটা দড়ি বাঁধা থাকতো নদীর দুই কূলে এবং সেই দড়ি ধরে টেনে টেনে নৌকা যাওয়া আসা করতো লোক পাড়াপাড়ের জন্যে। সেই থেকে এই স্থানের নাম হয়েছিল 'দড়াটানা'। এক সময় নাকি এই ভৈরব নদী দিয়ে বড় বড় জাহাজ আসতো। আমার স্মৃতিতে অবশ্য কচুরীপানায় ভর্তি এক শীর্ণকায় খালের মতই ছিল এই নদী।
দড়াটানা থেকে দক্ষিণ দিকে হেঁটে গেলে হাতের বাঁদিকে ছিল টাউন হল আর ডান দিকে কালেক্টরী ভবন ও জজ কোর্ট। আর একটু এগোলে হাতের বাঁদিকে 'লাল দিঘী' পুকুর এবং ডান দিকে যশোর জেলা স্কুল। সমগ্র বাংলার প্রাচীনতম বিদ্যালয়সমূহের অন্যতম ছিল আমাদের এই স্কুল। আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন ১০০ বছরের বেশী বয়েস ইতিমধ্যে হয়ে গেছে এই স্কুলের।
দড়াটানাতেই বাধা পেলাম। এক দল পুলিশ দেখলাম রাস্তা বন্ধ করে পাহারা দিচ্ছে। পাশের লোকদের প্রশ্ন করে জানলাম মওলানা ভাসানী নাকি মিছিল করে এদিকে আসছেন এবং তাকে বাধা দেবার জন্যেই এই পুলিশ সমাগম। ভাসানীকে দেখার ইচ্ছা ছিল, তাই আমরাও দাঁড়িয়ে গেলাম রাস্তার পাশে। একটু পরেই দেখলাম শ'খানেক মানুষের পুরাভাগে লুঙ্গি পড়া, মাথায় টুপি এবং দেখতে 'চাষার মত' এক লোক এবং তার পিছে পিছে বাকী সবাই আসছে। বেশ অবাক হলাম - এই অতি সাধারণ মানুষটাই তা'হলে মওলানা ভাসানী?
পুলিসের কিছু অফিসার তাদের রাস্তা অবরোধ করে দাঁড়াল। তারা বলতে চাইল শান্তি-শৃংখলা যেন নস্ট না হয় সে জন্যেই তারা ভাসানীকে এই রাস্তা দিয়ে আর যেতে দিতে পারে না। আমরা স্পষ্ট শুনলাম জোরালো গলায় অনেকটা ধমকের সুরে ভাসানী পুলিসদের বলছেন - 'শান্তি-শৃংখলা নস্ট করতে চাইলে কি এই সামান্য কয়েকজনকে নিয়ে আসতাম? তাহলে কয়েক হাজার লোক সাথে নিয়ে মিছিল করে আসতাম। পথ ছাড়, আমার সময় নষ্ট করো না।'
কি আশ্চার্য, ভাসানীর এই ধমক খেয়ে সুর সুর করে পথ ছেড়ে সড়ে দাঁড়াল পুলিসের দল। সাথের লোকদেরকে সাথে নিয়ে সোজা হেটে জেলা কতৃপক্ষের কাছে তার প্রতিবাদ লিপি পৌঁছে দিতে গেলেন মওলানা ভাসানী। সেই দিন থেকেই আমার মনের মধ্যে এক বিশেষ স্থান করে নিলেন তিনি।
এরপর যখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন যুক্ত হয়ে গেলাম ছাত্র রাজনীতিতে। সিরাজ শিকদার পাশ করে বের হবার পর তার স্থলে আমি হলাম ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি। আমরা তখন একই সাথে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা এবং আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ব্যস্ত। '৬৮-'৬৯ ছিল ভীষন উত্তেজনায় ভরা প্রতিদিন। তথাকথিত 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মমলা' থেকে মুজিবকে উদ্ধার করা গেলেও সার্জেন্ট জহুরুল হককে বাঁচাতে পারলাম না আমরা। এলিফেন্ট রোডের কাছে তার বাড়ীর কাছে জড় হয়েছি তখন আমরা কয়েক হাজার ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। কফিনে ঢাকা তার মৃত্যুদেহ দেখে আমাদের মাথায় তখন আগুন ধরে গেছে। আইয়ুবকে আর আমরা এক দিনের বেশী থাকতে দিতে চাই না। তার প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠকে যেন কেউ অংশ না নেয় তার জন্যে আমরা ঊঠে-পরে লাগলাম। "গোলটেবিলে যায় যারা, আইয়ুবের দালাল তারা" - সারা দিন ধরে বিভিন্ন রাস্তায় এই শ্লোগান দিয়ে ফিরলাম। রাতে হলে ফিরে এসে দেরীতে খেয়ে সবে হাত ধুচ্ছি তখন মেনন ভাই এসে হাজির। তিনি জানালেন যদিও ভাসানী প্রথম থেকেই গোলটেবিলে অংশগ্রহনের বিরোধিতা করে আসছিলেন এবং অন্যান্য নেতাদেরকেও অংশ না নেবার জন্যে অনুরোধ জানিয়েছেন, ছাড়া পাবার পর মুজিব তাকে বুঝিয়েছে যে যদি কোন ফল লাভ নাও হয় তবুও আমাদের অংশ নেওয়া উচিত এই গোলটেবিল মিটিং-এ।
যদিও ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনে ভাসানী সর্ব প্রথম উচ্চারণ করেছিলেন পাকিস্তানের শাষক গোষ্টিকে যে "পূর্ববাংলা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকদের দ্বারা শোষিত হতে থাকলে পূর্ববঙ্গবাসী তাদের 'সালামু ওআলায়কুম' জানাতে বাধ্য হবে।" কিন্তু মুজিব কখন চাননি পাকিস্তানকে বিভক্ত করতে। এখন মেনন ভাই চান যে আমরা যেন আমাদের শ্লোগান বদলে গোলটেবিলের পক্ষে জনমতকে গঠন করি।
আমি সরাসরি নাকচ করলাম তার প্রস্তাব। আমি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম পরপর কয়েক বছর। সুন্দর করে যুক্তি-তর্ক দিয়ে বিতর্ক করতে জানতাম। তাই উল্টা মেনন ভাইকে বুঝিয়ে দিলাম মুজিবের কথা আমাদের শোনা উচিত নয় এবং বর্তমান এই অবস্থাতে কারই উচিত নয় আইয়ুবের সাথে মিটিং করা। এমনকি এটাও বললাম যে এত কিছুর পরও যদি ভাসানী গোলটেবিলে যোগ দেয় তবে আমরা তাকে প্রকাশ্যে আইয়ুবের দালাল বলবো। আর কিছু কথা না বলে ফিরে গেলেন মেনন ভাই। পরের দিন শুনলাম ভাসানী তার আগের সিদ্ধান্তে ফিরে গেছেন এবং পাকিস্তানে যাচ্ছেন না।
২৬শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯ তারিখে গোলটেবিল আলোচনাতে শুধু শেখ মুজিব গেলেন অংশ নিতে এবং ব্যর্থ হয়ে ফিরলেন। ঠিক এক মাস পরে পাকিস্তানের লৌহমানব এবং প্রথম ফিল্ড মার্শাল প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান তার ১০ বছরের কুক্ষিগত করা ক্ষমতা হস্তান্তর করলেন ইয়াহিয়া খানের কাছে। আমি এখনও জানিনা ভাসানীর মত পরিবর্তনে আমার যুক্তি-তর্ক কোন কাজ করেছিল কিনা অথবা ভাসানী মেনন ভাইকে পাঠিয়ে শুধু সাধারণ ক্যাডারদের মনভাব জানতে চাইছিলেন।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে মওলানা ভাসানীর সঠিক মূল্যায়ন কখনই করা হয়নি। এর একটা কারণ বোধ হয় তিনি অন্য রাজনীতিকের থেকে ভিন্ন ছিলেন। বর্তমানে আমাদের দেশের রাজনীতিকেরা শাড়ি পরতে বেশী পছন্দ করেন, বৃটিশ আমলে দামী স্যুট পরতে পছন্দ করতেন জিন্নাহ, লিয়াকত আলি, সারোয়ার্দী, ইত্যাদি। পাকিস্তান হবার পরও সেটাই বেশী চালু ছিল। মুজিব ইন্সিওরেন্স কোম্পানীতে চাকরী করার সময় ট্রাউজার পড়লেও পরে রাজনীতিতে এসে পাজামা-পাঞ্জাবী পড়া শুরু করেছিলেন। ভাসানীই এক মাত্র নেতা যিনি সাধারনের পোষাক লুঙ্গি এবং পাঞ্জাবী পড়তেন।
ভাসানী ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা। এর মূলে বেশী অবদান ছিল তার জীবন কাহিনী ও বিশেষ অবস্থাতে গড়ে ওঠা। ভাসানী সম্ভবত ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার যখন বয়স পাঁচ-ছয় বছর, তখন তাঁর বাবা এবং তার কয়েক বছর পর মা ও ভাইবোন মহামারিতে মারা যান। সেই থেকে তিনি আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে গিয়ে মিশে যান কোটি কোটি সাধারণ মানুষের সঙ্গে, যাদের অধিকাংশই কৃষক, ক্ষেতমজুর, জেলে, তাঁতি, কামার, কুমার, মাঝি প্রভৃতি। দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও তাদের শোষণ-নিপীড়ন বন্ধের প্রতিজ্ঞা নিয়েই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ভাসানী।
কৈশোর ও প্রথম যৌবনের বহুদিন তার কাটে দরিদ্র কৃষকের কুঁড়েঘরে, তাঁতির তাঁতঘরে, জেলের নৌকায়, কামার ও কুমারের পর্ণকুটিরে। তাদের সঙ্গে মিশে তিনি দেখতে পান, দুই বেলা তাদের চুলায় আগুন জ্বলে না। তারা ভাত পায় না। তারা সুদখোর মহাজনের ঋণের জালে কেঁচিকলে ইঁদুরের মতো আটকে পড়েছে। ওদিকে জমিদারের শোষণ ও অত্যাচার। সেই শোষণ-অত্যাচার থেকে বাঁচতে ভিটে-মাটি, থালা-ঘটি-বাটি সব তুলে দিতে হচ্ছে মহাজনের হাতে।
কুড়ি শতকের শুরুতে তিনি যখন রাজনীতিতে প্রবেশ করেন, তখন জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করতেন খুব বড় সামন্তপ্রভু, রাজা-মহারাজা, নবাব, ব্যারিস্টার, নামকরা আইনজীবী অথবা অভিজাত পরিবারের মানুষ। তাঁদের বিপরীতে ভাসানী ছিলেন এক গ্রাম্য যুবক, যাঁর প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার দৌড় প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত - বলতে গেলে অশিক্ষিত।
কিশোর বয়সেই তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট হন। খেলাফত আন্দোলন ও কংগ্রেসের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। সেই বয়সেই তিনি গরিব কৃষক প্রজার লড়াইয়ে শরিক হয়ে জেল খাটেন। কৃষক প্রজা আন্দোলনের কারণে এক সময় জন্মভূমি সিরাজগঞ্জ ছেড়ে ১৮৯৭ সালে তিনি যান আসামে। আসামে তিনি কৃষক প্রজা আন্দোলন গড়ে তোলেন ভাসান চরকে কেন্দ্র করে। ইসালামিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭-এ দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে অধ্যয়ন করে আসামে ফিরে আসেন। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করে খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহন করে দশ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯২৬-এ আসামে প্রথম কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সুত্রপাত ঘটান। ১৯২৯-এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নাম রাখা হয় "ভাসানীর মাওলানা।" এরপর থেকে তার নামের শেষে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়।
১৯৪৪ সালে মাওলানা ভাসানী আসাম প্রাদেশিক মুসলীম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বাংলা ও আসামের সেতুবন্ধনের উদ্যোগী ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, বাংলা-আসাম সমন্বয়ে ঢাকাকে রাজধানী করে একটি দেশ হোক। কিন্তু ভারত সরকার তার এই প্রয়াসকে বিপজ্জনক মনে করে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। অবশেষে কারামুক্ত হয়ে ১৯৪৮ সালে নবগঠিত পাকিস্তানে চলে আসেন। এরপর পাকিস্তানের জন্য এ অঞ্চলের মানুষ যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে লড়েছিল, তা যখন ভেঙে চুরমার হতে শুরু করল তখন তিনি সবার আগে সোচ্চার হলেন। ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে ব্যবস্থাপক সভার কার্যাবলি বাংলায় পরিচালনা করার জন্য স্পিকারের কাছে দাবি জানান এবং এই দাবি নিয়ে পীড়াপীড়ি করেন।
বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের জনবিরোধী কার্যকলাপের ফলে মওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালে ঢাকার টিকাটুলিতে মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলন আহ্বান করেন। মওলানা ভাসানী ছিলেন ঐ সভার প্রধান অতিথি। এর ফল স্বরূপ ২৩ জুন পূর্ববঙ্গের প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক দল "পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ" গঠিত হয়। মওলানা ভাসানী সর্বসম্মতিক্রমে এই দলের সভাপতি নির্বাচিত হন।
তিনি তাঁর সুবিস্তৃত পাণ্ডিত্য, সুগভীর জ্ঞান, অতুলনীয় প্রজ্ঞা, মেধা এবং অপরিসীম ধৈর্য, কর্মক্ষমতা ও দূরদর্শিতাকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ ও দশের জন্য তথা বিশ্বমানবতার কল্যাণে নিয়োগ করেছিলেন। বস্তুতপক্ষে তাঁর সমগ্র জীবনটাই উৎসর্গ করে ছিলেন মানবতার কল্যাণে। চিরত্যাগী এই মহান নেতা ছিলেন সব লোভ-লালসা এবং ক্ষমতা লিপ্সার উর্ধে। তিনি কখনো কোন রাষ্ট্র ক্ষমতার দিকে ঝুকেননি। তা সত্তেও তিনি ছিলেন নিপীড়িত, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত জনগণের মুকুটহীন সম্রাট এবং শতাব্দীর মহানায়ক।
১৯৭০ সনে পূর্ব পাকিস্তানে প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্ণিঝড় হলে দুর্গত এলাকায় ত্রান ব্যবস্থায় অংশ নেয়ার জন্য ভাসানীর ন্যাপ প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান। ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ দাবি উত্থাপন করেন ভাসানী। আজ যে অহেতুক কে প্রথম স্বাধীনতা ঘোষনা করেছিল এবং কে ছিল স্বাধীনতার ঘোষক তা নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক হয় তার কি আসলেই কোন প্রয়োজন আছে?
ভাসানীর রাজনৈতিক ধারা ছিল তাঁর নিজস্ব। তিনি তার সারা জীবন সমাজের অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। জীবনের শেষ দিকেও তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ন্যায়সংগত।' অতি সাধারণ বেশভূষা, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি পরে, ছেঁড়া মাদুর বা চাটাই বিছানো মাটির দাওয়ায় বসে অবহেলিত মানুষের সুখ-দুঃখের খবর নেয়া এই শুভ্র পুরুষ মওলানা ভাসানী কি আবার ফিরে আসবেন এই বাংলায়?
মন্তব্য
ভূমিকার ব্যপারে আর কি বলব, সুস্থ্য থাকুন আরও অনেক অনেক দিন এই কামনাই করি। দেশ ভরে গেছে নির্লজ্জ সব হায়না আর তার ছানাপোনা দিয়ে। আপনার মতো আপনার জেনারেশনের মূল্যবান মানুষগুলো যেন থাকে অনেক দিন।
চরম উদাস,
শুধু বাংলাদেশেই নয়, অন্য দেশগুলিতেও এখন দেখি অঢেল টাকা না থাকলে রাজনীতিক হওয়া যায় না। হয়তো ভাসানীদের দিন একেবারে শেষ হয়ে গেছে।
অনেক ধন্যবাদ, শুভ কামনার জন্যে।
সাইফ শহীদ
আপনি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হাতে নিয়েছেন। আশা করি লিখে যেতে পারবেন। আপনি সুস্থ থাকুন এই দোয়া করি।
ছবিটা আসছে না। একটু দেখেন কেন আসছেনা।
প্রকৃতিপ্রেমিক,
ছবিটা আবার দেবার চেষ্টা করলাম। এবার দেখছি দু'বার এসেছে। আপাততঃ এই থাকুক।
ধন্যবাদ শুভকামনার জন্যে।
সাইফ শহীদ
সুস্থ থাকুন এই কামনা রইল।
ভাসানীকে নিয়ে শামসুর রাহমানের একটা কবিতা শেয়ার করছি।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
তাসনীম,
ধন্যবাদ শামসুর রাহমানের এই কবিতাটা শেয়ার করার জন্যে। অনেক দিন আর কবিতা পড়া হয়ে ওঠেনি। সময়ের বড্ড টানাটানি এখন।
সাইফ শহীদ
ভূমিকাটা পড়ে খুব মন খারাপ হলো। ভালো থাকুন অনেক দিন- এই প্রার্থনা রইলো।
আশা করি শেখ মুজিবকে নিয়েও কোনো একটা পর্বে বিস্তারিত লিখবেন।
আপনাকে সচল দেখে ভালো লাগছে (কবে হয়েছেন খেয়াল করি নি)...... অভিনন্দন!
তানভীর,
জানি এই সত্যটা মানতে হয়তো এখন কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ভুললে চলবে না ব্রিটিশ শাষনের নাগ-পাশ থেকে ছুটতে সারওয়ার্দী ও মুজিবের অবদানের কথা।
অন্যভাবে দেখো - মুজিবের তো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবার কথা, বিপুল ভোটে নির্বাচনে জয়লাভ করার পর। ঐ মুহূর্তে তিনি পাকিস্তান বিভক্ত করতে চাইবেন কেন?
আমার জন্যে শুভ কামনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
সাইফ শহীদ
প্রশ্ন না করে পারলাম না (আশা করি কিছু মনে করবেন না), দাবি আর ঘোষণা কি এক? আর, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিএনপি যে মিথ্যাচার করে, তার প্রতিবাদ করা কি 'অহেতুক'?
সুস্থ থাকুন।
সাম্য,
'দাবী' আর 'ঘোষনা' এক জিনিস নয়। ক্ষমতাতে যাবার আগে মানুষ 'দাবী' করে আর ক্ষমতা পাবার পরে 'ঘোষনা' দেয়।
সাইফ শহীদ
চমৎকার লাগল লেখাটা। অভিজ্ঞতার আলোকে এমন আরও লেখা পড়ার অপেক্ষায়।।।
স্বপ্নখুঁজি,
চমৎকার লাগার জন্যে অনেক ধন্যবাদ। ভাসানীর একটা কথা এখনো মনে পরে, সেটা হচ্ছে - 'ভোট নয় ভাত চাই।' এমন ভাবে আর কাউকে বলতে শুনিনি।
আমরা এখন ভুলে গেছি, কিন্তু 'আওয়ামী লীগ', 'যুক্তফ্রণ্ট', 'ন্যাপ' - সবার জন্মই কিন্তু হয়েছিল ভাসানীর হাতে।
সাইফ শহীদ
আপনি কি আরো লিখবেন না?? কিছুই তো বললেন না সে ব্যপারে। আরও পড়তে চাই, দয়া করে লিখুন।
বনের রাজা টারজান,
ধন্যবাদ এই আগ্রহের জন্যে। এখন পর্যন্ত ইচ্ছা আছে এই সিরিজে প্রতি সপ্তাহে একটা করে লেখা দিতে। জানিনা কত দিন পারবো।
সাইফ শহীদ
দোয়া করি ,ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
লিখতে থাকুন আমাদের জন্য ,নিজের অভিজ্ঞতার ঝাপি উজাড় করে।
আশা করি (বিশ্বাস করতে ভয় লাগে) আপনি "দাবি আর ঘোষণার" জালে আটকে জাবেন্না।
আমরা বড্ড আজব!!!!!! "দাবি আর ঘোষণার" ঘোল খেতে খেতে ৪০ বছরে ৪১ বার টাকার নকশা পাল্টাই,
আর ফি বছর নাম পরিবর্তনের সাপ-লুডু খেলি।
হাস্যকর ।
পুেপ,
"৪০ বছরে ৪১ বার টাকার নকশা পাল্টাই" - সত্যিই কি?
শুভ কামনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
সাইফ শহীদ
ঘটনা সত্য
মার্চ ,তারিখ মনে নাই,কালের কণ্ঠে পরেছিলাম।
আপনি যে এই নতুন সিরিজটা লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার জন্য আপনাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ। আশা করি সিরিজের শতক পূর্তি হউক। আর আপনি সুস্থ শরীরে তুমুল গতিতে লেখা চালিয়ে যান।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
শিশিরকণা,
আমি নিজেকে সুস্থই মনে করি - নইলে রোজ সকালে সাড়ে ৫টায় উঠে দিন শুরু করা থেকে শুরু করে ১৩০ মাইল গাড়ী চালিয়ে ৮/৯ ঘন্টা কাজ করতে পারতাম কি?
অনেক ধন্যবাদ রইল "অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ" জানাবার জন্যে।
সাইফ শহীদ
সুস্থ স্বাভাবিক শরীর মন নিয়ে বেঁচে থাকুন আরও অনেক দিন এই কামনা রইল!
আর আমার একটা অভিযোগ, আপনারা কেন রাজনীতি ছেড়ে দিলেন? সেই জন্যই হয়ত আজ দেশে্র রাজনীতিতে এই দুরবিত্তায়ন!
তোফায়েল মিয়াজী,
আমাদের সময় 'ছাত্র রাজনীতি' আর 'রাষ্ট্র রাজনীতির' মধ্যে একটা তফাৎ ছিল। ব্যক্তিগত ভাবে আমি রাজনীতি করতে চাইনি। আমি সব সময় চেয়েছিলাম একজন প্রকৌশলী হতে এবং তাই হয়েছি।
সাইফ শহীদ
সুস্থ থাকুন, এই প্রত্যাশা। অনেক কিছু জানতে পারলাম। লেখা চালু থাকুক।
অনেক ধন্যবাদ রইল, মাহফুজ।
সাইফ শহীদ
দ্রূত আরোগ্য় লাভ করুন, এই কামনা করি।
***
৬৫ ও ৭১ এর যুদ্ধকালে ভাসানির অবস্থান ও করমকান্ড নিয়ে যদি কিছু বলতেন। বইপত্র বা ইন্টারনেটে এই দুটি বড় মাইলফলক সময়ে তার সম্বন্ধে একপেশে কথাই শুধু পড়তে পাই।
দুর্দান্ত,
'৬৫-তে ভাসানীর বয়েস ৮৫ বছর এবং '৭১-এ তিনি ৯০ পার করেছেন। এর মধ্যেই তিনি 'খামোস' বলে সরকারকে ধমক দিয়েছিলেন তার কথা একটু খোঁজাখুঁজি করলে পেয়ে যাবে আশা করি।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুব একটা জানি না ঐ সময়ে ভাসানীর কর্মকান্ড। '৭১-এ ভারতে আশ্রিত বা আটক(?) ছিলেন এই টুকু শুধু জানি।
সাইফ শহীদ
সুসাস্থ কামনা করছি।
আপনি ভাই এটম বোমা। প্লিস ভাই একটু স্লো ফাইটেন। ১৯৬৯ জন্ম আমার। বেড়ে ওঠার সময় থেকে শুধু বিকৃত ইতিহাস শুনে আসছি। কেউ কাউকে মূল্যায়ন করছেনা। ভাষানীর প্রতি আমার আগ্রহ সবচে বেশী। যখনই কোন লেখা দেখি চেখে দেখি আমার মহান মানুষটাকে। কোনদিন রাজনীতিতে জড়িত ছিলামনা। আশাকরছি আপনার লেখায় অনেক কিছু পাব।
সেদিন সাপ্তাহিক ঠিকানে যাদু মিয়ার মেয়ের লেখা পড়ছিলাম। ভাষানী সাহেব নাকি বলেছিলেন মুজিব যদি ৭ই মার্চ সাধিনতার ঘোষনা না দেয় তা হলে উনি চিটাগাং থেকে এসে পল্টনে সাধিনতার ঘোষনা দিবেন। কিন্তু চিটাগাং থেকে মিটিং করে অজ্ঞাত কারনে আর ঢাকাতে ফিরেন নাই। উনি নাকি নৌকা নিয়ে কোথায় চলে গিয়েছিলেন। আর উনি নাকি মাঝে সাঝে এটা করতেন। সে সময়টা তিনি নাকি নিরুদ্যেশ থাকতেন। এব্যাপারে জানা থাকলে একটু পরিস্কার কিছু লিখেন।
আর একটা ব্যপার জানতে চাই আপনার কাছে। শেখ মুজিব ২৫শে মার্চ পালিয়ে না গিয়ে বিক্ষুব্দ জনতাকে দিক নির্দশনা দিয়ে ধরা দেওয়াটাকে আপনি কিভাবে মুল্যায়ন করেন। আমার জানতে চাওয়ার কারন আওয়ামিলীগ পন্থীদের দাবি তখন ধরা দেওয়াটা ছিল ভাল। না হলে পাকুদের অত্যাচার হত ভয়াবহ। আবার বিনপি'পন্থীরা বলে শেখ সাহেব কাপুরুষের মত ধরা দিয়েছিলেন বিক্ষুব্দ জনতাকে কোন নির্দেশনা নাদিয়ে। এ বাপ্যারটাতে আপনার মূল্যায়ন কি?
আমি বলতে চেয়েছি দিকনির্দশনা না দিয়ে। দুই জায়গাতেই ভুলটা হয়েছে।
মামুনুর রশিদ,
না ভাই, আমি কোন বোমা-টোমা নই। আমি নিতান্তই সাধারণ এক মানুষ। জন্মভূমি থেকে ১২,০০০ মাইল দূরে বসে দেশের এই 'অসম উন্নতি' দেখে মনটা মাঝে মাঝে খুব খারাপ হয়ে যায় - এই আর কি।
আপনার শেষ প্রশ্নের উত্তর আলাদা এক লেখাতে দেবার ইচ্ছা রইল। খুবই সংগত এই প্রশ্ন। অনেক ধন্যবাদ।
সাইফ শহীদ
একজন ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সভাপতি। সম্ভবত, সিরাজ সিকদারের একজন ঘনিষ্ঠ সহকর্মী। তারপরে প্রচ্ছন্ন ভাবে হলেও "ভাসানীই আসল স্বাধীনতার ঘোষক" এমন তথ্যের দাবীদার। তো, ভাসানী যখন ৭০ এই দাবী করলেন, এরপরে সে দাবী থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের দুরত্ব কতটুকু ছিল? বা, আপনারা স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে তখন মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ঠিক কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? আসলে এরকম 'পশ্চিম পাকিস্থানের সাথে আর থাকবোনা" এমন চিন্তা মুজিবও করেছিলেন এবং তা ধারণ করতেন ৬০ এর দশকের গোড়ার দিকেও-- স্বাক্ষী হচ্ছেন এন্থনী ম্যাসকারেনহাস।
যাহোক আপনার ভাষ্য থেকেই বুঝলাম যে, একজন মুজিবের কথাতে ভাসানীর রাজনৈতিক অবস্থান (যা্র স্বপক্ষে তার দলের ক্যাডাররা দূর্দান্ত আন্দোলন করে চলেছেন) পরিবর্তীত হয় এবং মেনন সাহেব আপনাদের কাছে যান সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা জানাতে, এবং আরও দু'এক দিন পরেই আবার ভাসানী তার পূর্বের অবস্থানে ফিরে যান (হয়তো আপনার যুক্তি-তর্ক শুনেই)--- এই দ্বিধাগ্রস্থতা দিয়ে কি ভাই "৭০ এর স্বাধীনতার দাবী" এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়? যাহোক, বঙ্গবন্ধু ও ভাসানীর কথোপকথনের সেই অংশটুকু দেখতে পারেন এম,আর,আক্তার মুকুলের 'মুজিবের রক্ত লাল' বইয়ে।
মুজিব কখনও চাননি পাকিস্থানকে বিভক্ত করতে! এর বিপক্ষে কখনও প্রমাণ খুঁজেছেন? আমার জানামতে এই মুজিবই স্বাধীন বাংলাদেশের দাবীর সমর্থনে বিদেশী দূতাবাসগুলোতেও গোপনে দূত পাঠাতেন, তাদের মনোভাব জানতেন, সহায়তা চাইতেন এবং এই তথ্যটুকু কিসিঞ্জার লিখে পাঠান প্রেসিডেন্ট নিক্সনকেও।
পাকিস্থান সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হোয়াইট পেপার বলে সিরাজ সিকদার ২৬ মার্চের অনেক আগেই স্বাধীনতার ঘোষণাও করে দিয়েছিলেন নাকি! এ ব্যাপারে আপনার জানা থাকলে সেটারও সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারেন এই চলমান স্মৃতিকথায় এবং তদানুযায়ী, স্বাধীনতার সত্যকারের ঘোষক সংক্রান্ত একটা ফতোয়াও দেবার কথা শক্তভাবে বিবেচনায় রাখতে পারেন।
নীচের অংশটুকু আমার নিজস্ব মূল্যায়নের ভিত্তিতে করা, অবশ্যই আপনার দাবী নয়--
আপাতত, আপনার "নির্মোহ"(!) অথচ আবেগী এবং ৭০ এর ছাত্রইউনিয়নের আওয়ামী (ও মুজিব) বিরোধীতার প্রভাবযুক্ত ইতিহাস চর্চার ক্লাসে একজন ব্যাকবেঞ্চার হয়ে বসলাম। যদিও ব্যাকবেঞ্চার, তবে শিখতে আগ্রহী। চলতে থাকুক আপনার ক্লাস
(সিসিফাস)
সিসিফাস,
ভাসানী এবং মুজিবের মধ্যে একটা বিশেষ সম্পর্ক সব সময়ই ছিল। ভুললে চলবে না, ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ পাচ বছর ভাসানী ও মুজিব একত্রে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া সে যুগে অন্য দলের লোকদেরকে এখনকার মত 'শত্রু' হিসাবে গন্য করা হত না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র লীগের নুরুন্নবী, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) গ্রুপের ফয়জুল আকবর এবং আমি কখনো নিজেদেরকে ঘনিষ্ট বন্ধু ছাড়া অন্য কিছু ভাবিনি। এদের সাথে আমার এখনও যোগাযোগ আছে। বর্তমানের 'পোলারাইজড বাংলাদেশে' এই ধরনের সম্পর্ক আর হয় কিনা আমি জানি না।
কাজী জাফরের একটা লেখাতে পড়েছিলাম - "মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক জীবনে শেখ মুজিবের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে অনেক কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে ন্যাপ গঠনের পর্যায় থেকে মুজিব মওলানার রাজনৈতিক প্রয়াসকে নানাভাবে বাধা দিতে সচেষ্ট থেকেছেন। কিন্তু সঙ্কটকালে ঠিকই মওলানার কাছে ছুটে গেছেন। মওলানা সব কিছু ভুলে অপত্য স্নেহে তাকে অভিষিক্ত করেছেন। ১৯৬৯ সালে জেল থেকে মুজিবকে মুক্ত করতে তিনি যেমন শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছেন, তেমনি সত্তরের নির্বাচনে শেখ মুজিবের নিরঙ্কুশ বিজয়ের ক্ষেত্রেও তার কৌশলী ভূমিকা ছিল নির্বাচন থেকে সরে আসার মাধ্যমে। আবার স্বাধীনতা-পরবর্তী দুঃশাসন, অপশাসনের বিরুদ্ধেও তিনি ছিলেন সবচেয়ে সোচ্চার। এ রকম মিশ্র সম্পর্কের মধ্যেও শেখ মুজিবের প্রতি তার অতুলনীয় স্নেহ ছিল। এটা বুঝতে পারি ১৯৭৪ সালে এক ঈদের সময়। এ উপলক্ষে আমি তার জন্য নতুন কাপড় নিয়ে যাই। পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, টুপি ও স্যান্ডেল। তিনি হাতে নিয়ে পছন্দ করলেন ও খুব খুশি হলেন। বললেন, তোমার এই কাপড় আমি ঈদের দিন বিকেলে পরব। প্রশ্ন করলাম : ‘হুজুর বিকেলে কেন?’ বললাম : ‘সকালে পরে নামাজে যাবেন।’ মওলানা বললেন : ‘সকালে যে মুজিবের দেয়া পাঞ্জাবি পরতে হবে। সতের বছর ধরে ঈদের সময় মুজিব আমাকে নতুন কাপড় দেয়। এমনকি সে জেলে থাকলেও পাঠায়। সে যে আমার সবচেয়ে প্রিয় সেক্রেটারি ছিল।’
সাইফ শহীদ
আমার উদ্দ্যেশ্য অবশ্যই মুজিব-ভাসানীর সম্পর্কের উপর আলোকপাত করা নয়, বরংচ আপনার দেওয়া কিছু তথ্য এবং স্বাধীনতার আন্দোলন নিয়ে আপনার স্মৃতিচারণের বিপরীতে আমার বক্তব্য তুলে ধরা। যাহোক, আপনি মুজিব-ভাসানীর সম্পর্ক নিয়ে কথা বললেন—
হ্যাঁ, রাজনীতিক কাজী জাফরের মুখের কথায় দেখালাম মাওলানা ভাসানীর উদারতা। যাহোক, আমি আপনার সেই বক্তব্য থেকেই তুলে আনছি মুজিবের উদারতা। একটা ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করলাম— আপনার ব্যাক্তি জীবনে নিজের পয়সা খরচ করে ১৭ বছর ধরে আপনি কাকে ঈদের সময় নিয়মিত উপহার দিবেন? নিশ্চই এমন কাউকে যাকে আপনি শ্রদ্ধা করবেন, তাই নয় কি? মুজিব যদি টানা ১৭ বছর (জেলবন্দী বা মুক্ত মুজিব) মাওলানা ভাসানীকে ঈদের উপহার দিয়ে থাকে তবে উদারতাটা মুজিবেরও। এখানে ভাসানীর স্নেহকে ছাপিয়ে আরো যা উঠে আসে তা ভাসানীর প্রতি মুজিবের সবসময়কার শ্রদ্ধা।
ভাসানীকে নিয়ে বই লিখে ফেলা জনাব আবুল মকসুদ বলেন (ভারবাটিম বলতে পারছিনা)— ৭৪/৭৫ এর সময় মাওলানা ভাসানী যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে ছিলেন তখন অসুস্থ ভাসানীর জন্য খাবার যেতে ধানমন্ডী ৩২ নম্বর থেকে! যাহোক, মুজিবের আরও অনেক উদারতার নমুনাই আছে— যেমন, এই উদারতার ছোঁয়া পল্লীকবি জসিমউদ্দিনের মেয়ের জামাই ব্যারিষ্টার মৌ-দুধও পেয়েছেন; মুজিব শাসন আমলে মৌ-দুধ (মওদুদ) উদারতা (জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেলিনে, জেলে ছিলেন দূর্নীতির কারণে) পেয়েছিলেন তার শশুড় পল্লীকবি জসিমউদ্দিনের অনুরোধেই। শুধু মুজিবই ভাসানীর জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছিলেন— এমন সরলীকরণ মন্তব্য সম্ভবত অতীত রাজনৈতিক প্রভাব ও (সম্ভবত অতীত) ক্ষোভমিশ্রিত অনুভূতি থেকে মুক্ত হয়ে কখনই করা সম্ভব নয়।
আপনি রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার তুলে আনলেন, এ সম্পর্কে কিছু বলি। আওয়ামীলীগ থেকে বের হয়ে যখন ন্যাপ গঠন হলো, তখন থেকেই পূর্ব পাকিস্থানের রাজনীতিতে ন্যাপ ও আওয়ামীলীগ প্রতিপক্ষ। ৬৯ এর গণভ্যুত্থ্যানে ভাসানীর ভূমিকা অনস্বীকার্য, কিন্তু এই ৬৯ এর বাস্তবতা তৈরীতে মুজিবের ৬-দফা নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটা আরও বেশী অনবদ্য। এ সময়টাতে অবশ্যই ৬-দফা নিয়ে মুজিব-তাজউদ্দিনদের সারা দেশ চষে বেড়ানোর সময়ও ভাসানী ও ন্যাপ বা অন্যান্য বামপন্থী রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচী সক্রিয় ছিল। বাস্তবতা ছিল এরকম— মুজিব যেখানেই ৬-দফা নিয়ে বলতেন, সেখানেই গ্রেফতার হতেন। কিন্তু তিনি থামাননি তাঁর ৬-দফার যাত্রা। উপায়ন্তর না দেখে পাকিস্থানের সামরিক শাসকেরা শেষ পর্যন্ত মুজিবকে নন-বেইলেবল ধারায় গ্রেফতার করে ৬-দফা ভিত্তিক রাজনৈতিক প্রচার চালাবার জন্য, জেলে প্রেরণ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য। ভাসানীর রাজনৈতিক কর্মসূচীতে এসময়টাতেও ছিল। কিন্তু বাঙালি ভাসানী বা অন্য বামরাজনীতির মাঝে নয়, মুজিবের ৬-দফাতেই নিজেদের অধিকারের নিশ্চয়তা খুঁজে নেয় এবং সেটাকেই গ্রহণ করে। আর ঠিক এখানেই ন্যাপ ভিত্তিক রাজনীতির পরিপূর্ণ পরাজয় এবং অপমৃত্যূ ঘটে।
মুজিবের আওয়ালীগের কাছে তদানীন্তন ন্যাপ ও বামদের এই রাজনৈতিক পরাজয়ের ক্ষত ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দগদগে ছিল। তাইতো, মুক্তিযুদ্ধ একটি দীর্ঘকালের যুদ্ধ হবে এবং তার নেতৃত্ত্ব ক্রমেই আওয়ামীলীগের হাতছাড়া হয়ে পুরোপুরি পিপলস ওয়ার হয়ে একসময় তা ন্যাপ ও অন্যান্য লেফটিস্টের হাতে যাবে (অনেকটা নক্সালদের আদলে), এমন আশাতে অনেক ন্যাপ নেতাও ১৯৭১ চেষ্টা চালিয়েছেন, অপেক্ষায় থেকেছেন। কিন্তু বাস্তবতা সে রাস্তায় হাঁটেনি। হয়তো এজন্যই দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ন্যাপের অতীত রাজনৈতিক পরাজয়কে মেনে নেওয়া অনেকের পক্ষেই স্বাধীন বাংলাদেশে সহজ ছিলনা এবং আজও সহজ নয়!
ভাসানীর রাজনীতিতে মুজিবের প্রতিবন্ধকতা তৈরীর কথা বললেন— হ্যাঁ, ১৯৭৪ এ ইউ,এফ (ইউনাইটেড ফ্রন্ট) গঠন করার পর ভাসানী যখন স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে সমাজবাদী, লেনিনবাদী ও সমমনাদের নিয়ে তুমুল আন্দোলন শুরু করার চেষ্টা করেন তখন সেই রাজনৈতিক কর্মসূচীকে মুজিব বাধা দেন এবং এরপর ১৯৭৪ এর জুন মাস থেকেই ভাসানী টাঙ্গাইল কেন্দ্রিক জীবন-যাপনে বাধ্য হন। ১৯৭৪ তো শুনলেন— তবে ১৯৭৩ বাদ থাকবে কেনো? ১৯৭৩ এর ডিসেম্বারে মাওলানা ভাসানী তার এক বিবৃতিতে ন্যাপ (ভাসানীর) সমর্থন দান করেন সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে শুরু হওয়া “দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে” যেখানে সিরাজ সিকদার বাহিনী জোরপূর্বক সরকারী বাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছিল তাদের “দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের” প্রস্তুতি হিসেবে। আর এ সময়কার সকল ব্যাংক লুট, থানা লুট এবং আওয়ামীলীগের সদস্যদের হত্যার কথা স্বীকার করেছিল সিরাজ সিকদার বাহিনী নিজেরাই! এটাকে আত্মসীকৃত অপরাধ বলতে পারেন। আওয়ামী সদস্যদের যারা খুন করেছে, ব্যাঙ্ক লুট করছে এবং যারা “দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ” করছে, তাদেরকে ভাসানী সমর্থন দিয়ে কোন মহত কাজটি সেদিন করেছিলেন? এটা কি মুজিবের সরকারের জন্য তৈরী ভাসানী কোন প্রতিবন্ধকতা নয়? [তথ্যসূত্রঃ তালুকদার মণিরুজ্জামান, বি,এন,পির পোষ্য কোঠায় জাতীয় অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাঃবি]
আমার মনে হয় উত্তাল ৭১ এর পূর্বের রাজনীতিতে আওয়ামীলীগের রাজনীতির কাছে ন্যাপের পরাজয়ের ক্ষত ন্যাপের অনেকেরই শুকায় নাই আজতক— সেই সাথে আরও আছে মুজিবের আজীবন কমিউনিস্ট (আসলে চীনপন্থী কমিউনিস্ট) বিরোধীতা। আর মুজিব ও আওয়ামীলীগের কাছের রাজনৈতিক পরাজয় ভুলতে পারেনি দেখেই অনেক ভাসানীপন্থীই ৭৫ পরবর্তীকালের সেনাশাসন আমলগুলোতে নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে, সকল ন্যায়-নীতি বিসর্জন দিয়ে পুরোনো পরাজয়ের অশ্লীল প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা করে গেছেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন। কে জানে, হয়তো তাদের অনেকের কাছেই গোলাম আজমের চেয়ে মুজিব ও আওয়ামীলীগ বেশী অপরাধী, এবং মুজিব-ই তাদের আজীবনের শত্রু!
শুভকামনা। বিদায়।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আপনার অধিকাংশ লেখা পড়েই মন ভাল হয় শুধু 'অলখ আমেরিকা - এক অসহায় বাবার কাহিনী' এই লেখাটা ছাড়া। আজকের লেখার ভুমিকা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। সুস্থ থাকবেন সাইফ ভাই।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
জাহিদ,
মন খারাপ কেন? ভাসানীর ৯৬ বছরের তুলনায় আমি তো এখনো তরুন - তাই না?
সাইফ শহীদ
সঠিক ইতিহাস খুঁজছিলাম অনেকদিন ধরে, তাকে নিয়ে নানান জায়গায় ভিন্ন রকম মূল্যায়ন দেখে আশাহত হচ্ছিলাম। আপনার লেখাটা পড়ে আসলেই অনেক ভালো লাগছে। প্লিজ, লিখতে থাকুন। দলিল হয়ে থাকুক।
আপনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
চিলতে রোদ,
ইতিহাস লেখার সাহস আমার নেই। এটা বরং অন্ধের হাতী দেখার মত। সামান্য যেটুকু দেখার সৌভাগ্য হয়েছে এই জীবনে সেটাই অন্যদের সাথে ভাগ করে নেওয়া। অনেক ধন্যবাদ শুভ কামনার জন্যে।
সাইফ শহীদ
আপনার অসুস্থতার কতা জেনে খারাপ লাগল। ভালো থাকবেন এই কামনা করি।
মাহবুব,
অনেক ধন্যবাদ এই সহমর্মিতার জন্যে। অতটা চিন্তার কিছু এখনও হয়নি আশা করি।
সাইফ শহীদ
ইনিংস আরো আরো লম্বা হবে এই কামনাই করি। প্রযুক্তির এই যুগে সেঞ্চুরি তো হতেই পারে
পুরাতন অসুখের আরোগ্য কঠিন হয়তবা। তবে আশার কথা এই: অসুখ পুরাতন বলেই অভ্যস্থ হয়ে যাওয়া সহজ।
অফ টপিক: মূল লেখাটা 'ভালো না লাগা পর্যায়ের' ধোঁয়াটে লাগল।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
অনিন্দ্য রহমান,
দেখা যাক আর এক ইনিংস ব্যাট করতে পারি কিনা।
তবে মৃত্যুকে ভয় না করে যদি বন্ধু ভাবা যায় তবে কিন্তু জীবনটা অনেক বেশী সহনীয় হয়ে যায়।
সাইফ শহীদ
আপনার লেখা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। সুস্থ থেকে আর অনেক লিখুন এই কামনায়।
জিয়াউর,
অনেক ধন্যবাদ এই শুভ কামনার জন্যে।
সাইফ শহীদ
চমৎকার েলখা........... আমরা আরও জানেত চাই।
নবীন_পান্থ,
ধন্যবাদ, চেষ্টা করবো যতটুকু পারি।
সাইফ শহীদ
এইরকম দৈনিক একটা করে একলাখ পোস্ট চাই আপনার। ততদিনতো আছেনই, তারপরে আবার দেখা যাবে।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
কল্যান,
১০০,০০০ / ৩৬৫ = ২৭৩ বছর
তার মানে কোন ছুটি না নিয়ে ২২৮৬ সাল পর্যন্ত লিখে যেতে হবে।
একটু বেশী হয়ে গেল না দাবীটা?
সাইফ শহীদ
আপনার দৈহিক অসুস্থ্যতার কথা জেনে খারাপ লাগলো। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো শীঘ্র এই থেকে মুক্তি পান। এর চাইতেও বেশি শুভ কামনা রইলো যেন আপনি শীঘ্র মনের অসুস্থ্যতা থেকে মুক্তি পান। জ্ঞানপাপী হয়ে ইতিহাস বিকৃতি ঘটানোটাও এক প্রকার অসুখ, মনের অসুখ!
আপনিই তো সেই লোক যিনি দাবি করেছেনঃ পাকিস্তান রেডিওতে শেখ মুজিবের ৭ মার্চ, ১৯৭১ ভাষণ শুনেছেন যেখানে 'জয় পাকিস্তান' শব্দটি ছিল! আমি আমার কাছের ৫-৬ ব্যক্তির সাথে কথা বলেছি যারা পাকিস্তান রেডিওতে ভাষণটি শুনেছিলে্ন এবং এর কোন অংশেই 'জয় পাকিস্তান' কিংবা 'জিয়ে পাকিস্তান' পান নি!!
দেবাশিস মুখার্জি
[db.mukherjee.blog@gmail.com]
আপনার কাছে একটা প্রস্ন- যেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপনি পলিটিক্স করেছেন সেই মার্কিন সম্রাজ্যবাদকে বাঁচার জন্য বেছে নিলেন কেন ?
আপনাকে দেখে ৬৯/৭০ এ দেয়ালে লেখা একটা শ্লোগান মনে পড়লো । শ্লোগানটা ছিলো -
মার্কিনীদের কোলে / মাওবাদীরা দোলে ।
সিরাজ শিকদার কে নিয়ে কিছু বলেন প্লিজ । আমি নিজেও বুয়েটের স্টুডেন্ট। শিকদারের সম্পর্কে তার পরিচিত বা সমসাময়িক কারও কাছ থেকে তার কথা জানতে চাই।
নতুন মন্তব্য করুন