- “আর তুই কিছু করলি না, তুই তাদের কেন পেটালি না?”
রওশনের এই প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ রইলাম আমি। রাগে-ক্ষোভে ফুসছিল সে। এই ছিল রওশন - চিরকাল অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো ছিল তার স্বভাব। বিশেষ করে দুর্বলের পক্ষে সবলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে কখনো পিছ'পা হত না রওশন। আমি তখনো সম্পূর্ণ সত্যটা রওশনকে বলতে পারিনি, কিন্তু ও আমাকে কতোটা ভালোবাসে, আমার জন্য ভাবে, আমার যন্ত্রণা আর অপমান ওকে কতটা ছুঁয়ে গিয়েছিল সেটা বুঝতে পেরে মনটা আনন্দে ভরে উঠেছিল। আমার নিজের কোন ভাই ছিল না, থাকলে কি সেও এমনি ভাবে রওশনের মত আমার পাশে এসে দাঁড়াত?
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে রওশন আর আমি একই কক্ষে থাকতাম। আমাদের সঙ্গে আর ছিল শামস (শামস আহাদ, বর্তমানে কানাডা প্রবাসী), ও তখনো কাঁদছিল। একটা-দু'টো চড়-থাপ্পরের শারিরীক আঘাতের চেয়ে অপমানটা ওকে বিদ্ধ করেছিল বেশি। রওশন মানতে পারছিল না তার একই কক্ষের বাসিন্দা, দুই বন্ধুকে প্রিফেক্টরা অন্যায় ভাবে মারধর করেছে, অপমান করেছে - অথচ তার বন্ধুরা প্রতিবাদ করেনি, পাল্টা আঘাত করেনি। শারিরীকভাবে রওশন আমাদের চেয়ে আকারে ছোট ছিল, কিন্তু মানসিকভাবে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সাহসী। অবশ্যই ওর হৃদয়টা ছিল অনেক বড়।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান-কে হত্যার অভিযোগে যে ১৩ জন আর্মি অফিসারের ফাঁসি হয় তাদের এক জন ছিল আমার ছোটবেলার এই অকৃতিম বন্ধু রওশন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর রওশন ইয়াজদানী ভূঁইয়া, বীর প্রতীক-কে এই ভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশে পুরস্কৃত করলাম আমরা ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে।
জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত যুদ্ধ করে গেছে রওশন। গলায় আটকানো ফাঁসির রশিতে যখন শরীর ঝুলছে তখনও সে বেঁধে রাখা পা দিয়েই অন্ধকূপ বেয়ে ওঠার চেষ্টা করে তার মৃত্যুকে বিলম্বিত করেছে এবং কষ্ট পেয়েছে। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে এটা ছাড়া আর কি আশা করা যায়?
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের কথা - ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর। দত্তনগর কৃষি ফার্মে রওশন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল সেখানকার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত একটি ঘাঁটি তিন দিক থেকে একযোগে আক্রমণ করে। একসময় রওশনের বাবা দত্তনগর সরকারি কৃষি পরীক্ষাগারে কাজ করতেন এবং রওশন অনেকটা সময় কাটিয়েছে এই স্থানে। ফলে এই জায়গার রাস্তা-ঘাট সব হাতের নখের মত জানা ছিল তার। দত্তনগর কৃষি ফার্ম চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার অন্তর্গত। জীবননগর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা। বেশ বড় এলাকা নিয়ে অবস্থিত ছিল এই কৃষি ফার্ম। এই খানে একটি ঘাঁটি বসিয়েছিল পাকিস্তানী বাহিনী। এখান থেকে পাকি সেনারা সহযোগী রাজাকারদের নিয়ে সীমান্ত এলাকায় টহল দিত। তাই রওশন ও তার সহযোগীদের উদ্দেশ্য ছিল সীমান্ত এলাকা থেকে পাকিস্তানী সেনাদের বিতাড়ন করা। মুক্তিযোদ্ধারা ছিল তিনটি দলে বিভক্ত। একটি দল তেঁতুলিয়ার দিক থেকে, দ্বিতীয় দল নারায়ণপুরের দিক থেকে ও তৃতীয় দল হাসনাবাদের দিক থেকে দত্তনগর কৃষি ফার্মের ক্যাম্পে সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। এই ত্রিমুখী আক্রমণে পাকিস্তানী সেনারা দিশেহারা হয়ে যায়। এই যুদ্ধে রওশন অসীম সাহস ও রণকৌশল প্রদর্শন করে। দুই-তিন ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকিস্তানী সেনাদের প্রবল প্রতিরোধ ভেঙে যায়। তখন তারা পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। এই যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এই ছিল মুক্তিযোদ্ধা রওশনের এক পরিচয়। অথচ রওশন কখনো আর্মিতে যোগ দিতে চায়নি। সে চিরকালই চেয়েছিল একজন কৃষক হতে - একজন আদর্শ কৃষক। যার জন্যে ফৌজদারহাট থেকে পাশ করে ১৯৬৫ সালে অন্য বন্ধুরা যখন আর্মিতে ঢোকার জন্যে আইএসএসবি পরীক্ষা দিচ্ছি, বা ঢাকার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে, তখন আমাদের মধ্যে একমাত্র রওশনই যোগ দেয় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
একজন আদর্শ কৃষক হয়ে সে চাষের জন্য ট্রাক্টর, টিলার, সেচ পাম্প এবং উন্নতমানের বীজ ব্যবহার করে তার আদর্শ খামারকে অন্য কৃষকদের সামনে অনুসরনীয় করে তুলতে চেয়েছিল। এটাই ছিল তার স্বপ্ন। ছুটিতে আমরা ট্রেনে তখনকার রাজশাহী এক্সপ্রেসে করে বাড়ি ফিরতাম। চট্টগ্রাম থেকে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে পৌঁছানোর আমাদের ভ্রমণটা হতো ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়ের। রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কলেজ প্রশাসন আমাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছিল। এর ফলে আমরা একটা তৃতীয় শ্রেণীর কামরা শুধু আমাদের জন্যে রিজার্ভ করে ভ্রমণ করতাম। ভ্রমণের শেষ পর্যায়ে যখন বাকি সবাই নেমে যেত, তখন রওশন, হাবিব আর আমি থাকতাম ওই কামরার শেষ যাত্রী। এই সময়টাতে আমরা আমাদের নিজেদের চিন্তা ও স্বপ্নগুলো ভাগাভাগি করার সুযোগ পেতাম একে অন্যের সাথে। রওশনের বাবা দত্তনগরে দেশের বৃহত্তম কৃষি খামারের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন তখন। সেখানকার খামারে ট্রাক্টর চালানোর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা আমাদেরকে বলতো রওশন। সবসময় সে বলতো তার স্বপ্নের খামারের কথা। এছাড়া অসাধারণ সুন্দর ভাবে বাঁশি বাজাতো সে। গভীর রাতে ও যখন বাঁশিটা বের করে সুর তুলতো, আমরা তখন ওর স্বপ্নের খামারের কথা ভাবতাম। একটা শষ্য ভরা আদিগন্ত ধানের ক্ষেতে পূর্নিমা রাতে দাঁড়িয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে রওশন আর আমরা সবাই তার পাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তার বাজনা শুনে আমাদের নিজেদের কল্পনার রাজত্বে ঘুরে বেড়াচ্ছি - এই ছিল আমাদের তখনকার সুন্দর স্বপ্ন।
যখন পাকিস্তান আর্মি ২৫ শে মার্চে তাদের হত্যাযজ্ঞের তান্ডব-লীলা শুরু করল তখন আর নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারল না রওশন। মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল সে। নিজ এলাকায় প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারীতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিল। সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হল। তখন তাকে সহ আরো বেশ কয়েক জন যুবককে উচ্চতর ট্রেনিং দেয়ার জন্য ভারতের কুচবিহারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর ১১ নম্বর সেক্টরের মানকারচর সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করে রওশন। কোদালকাঠির যুদ্ধে যথেষ্ট রণকৌশল প্রদর্শন করে। অক্টোবর মাসে ৮ নম্বর সেক্টরের বানপুর সাবসেক্টরে যোগ দেয়। এরপর দত্তনগর যুদ্ধে তার উল্লেখযোগ্য ভুমিকার জন্যে নভেম্বর মাসের শেষ দিকে তাঁকে দ্বিতীয় বাংলাদেশ ওয়ারকোর্সে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওয়ারকোর্সের প্রশিক্ষণ চলা অবস্থায় দেশ স্বাধীন হয়। মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য রওশন ইয়াজদানী ভূঁইয়াকে 'বীর প্রতীক' খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ৪১। যেহেতু সেনাবাহিনীতে রওশন যোগ দিয়েছিল দেরিতে, তাই তার বন্ধুরা যখন কর্নেল বা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, তখন সে ছিল মেজর পদ মর্যাদায়।
জিয়া হত্যা ঘটনার পর যখন চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন সে ছিল জেনারেল মনজুরের স্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে। মঞ্জুরের পতনের পর যখন অন্যরা দলত্যাগ করে নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে ব্যস্ত, তখন দুর্বলের পাশে এসে দাঁড়াবার চিরকালের অভ্যাসমত রওশন ওই পরিবারটির জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিল। ততক্ষনে মনজুরকে হত্যা করা হয়েছে। যখন অন্যরা মনজুরকে ছেড়ে এরশাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে, রওশন তখন পরিত্যাক্ত জেনারেলের পরিবারকে রক্ষার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।
রওশন ইয়াজদানীসহ অন্যান্য বন্দী অফিসারদের ওপর অমানুষিক অত্যাচারের নানা বিবরন পরে শুনেছি - জানিনা তার কতটা সত্য। প্রচন্ড মার, দু'হাতের সব ক'টা নখ উপড়ে ফেলা (জেষ্ঠ্য অফিসারদের বিশেষ করে), বৈদ্যুতিক শক, জননেন্দ্রিয় দিয়ে কাঁচের রড প্রবেশ করানো, হেন কোন নির্যাতন নেই যা করা হয়নি, যত দিন পর্যন্ত না তারা মন গড়া সাক্ষ্যে সাক্ষর করেছে।
তদন্ত শেষে সংক্ষিপ্ত সাক্ষ্য তৈরি করে চার্জ সিট দেয়া হয়, যার ওপর ভিত্তি করে চট্টগ্রাম জেলে গোপন কোর্ট মার্শালে (যেখানে বেসামরিক আইনজীবীদের উপস্থিতি ছিল নিষিদ্ধ) তাদের বিচার শুরু হয়। পৈশাচিক অত্যাচার ও নির্যাতনের মাধ্যমে নেয়া মনগড়া সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ছিল এই বিচারের প্রহসন। এদের মধ্যে ১২ জন সামরিক অফিসারের জেনারেল কোর্ট মার্শালের প্রহসনের গোপন বিচারে ২৩শে সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়, যার মধ্যে ছিল আমার ঘনিষ্ট বন্ধু রওশন ইয়াজদানী ভূঁইয়া, বীর প্রতীক। মেজর রওশন ইয়াজদানী যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির রশিতে ঝুলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। আমার জন্মভূমি যশোরেই আমার প্রিয় বন্ধুর প্রথম নামাজে জানাজা হয় বাদ জোহর ওয়াপদা কলোনী মসজিদে। এত কাছে, তবে তার সাথে আর শেষ দেখা হল না। তার সাথে আমার আর কলেজের দিনগুলোর পর দেখা হয়নি। একবার আমি ময়মনসিংহে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে গিয়েছিলাম, কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে সে তখন সেখানে ছিল না।
এত বছর পরেও আমি এখনো রওশনের একটা স্মৃতিই বয়ে বেড়াই। যে স্বপ্নের সাম্রাজ্যটা ওর কখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি, একটা আদিগন্ত ধানের ক্ষেতে পূর্নিমা রাতে দাঁড়িয়ে ও বাঁশি বাজাচ্ছে। কিন্তু এক সময় এই সুখের চিত্রটি মুছে গিয়ে স্মৃতিতে ভেসে উঠে ফাঁসির দড়ির প্রান্তে অসহায়ভাবে ঝুলন্ত আমার প্রিয় বন্ধুর মুখ। নিরবে নিজের চোখের পানিটুকু মোছা ছাড়া ওই সময় আমি আর কিছুই করতে পারিনা।
মন্তব্য
ধন্যবাদ। ছবিগুলো আসছে না।
বাকরুদ্ধ
এই পোস্টটি এবং এখানে লিঙ্ক দেয়া পোস্টটি কোনটি পড়েই ১৯৮১ সালের ঘটনায় মেজর রওশন ইয়াজদানী ভূঁইয়ার ভূমিকাটি স্পষ্ট হয়নি। দয়া করে বিষয়টি আরো বিস্তারিত বলুন। তাঁর কোন অপরাধ না থেকে থাকলে সামরিক আদালতে দেয়া তাঁর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে এখনো আইনী লড়াইয়ের অবকাশ আছে। সেক্ষেত্রে তিনি ফিরে না আসলেও তাঁর প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে সেটি প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের (যারা জীবিত আছে) বিচারের মুখোমুখি করা যাবে। বিচার চলাকালীন সময়ে তাঁর হেভিওয়েট বন্ধুদের নীরবতার কারণ কী? এই বিষয়ে কি কিছু বলবেন?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমারও তা-ই ধারণা।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ষষ্ঠ পাণ্ডব ভাই এর সাথে সম্পূর্ণ একমত। তাঁর কোন অপরাধ না থেকে থাকলে সামরিক আদালতে দেয়া তাঁর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে এখনো আইনী লড়াইয়ের অবকাশ আছে। এই বিষয়ে আপনি কিছু বলুন।
জিয়াউর রহমান হত্যা মামলায় ১২ জন সেনা কর্মকর্তার কোর্ট মার্শালে বিচারে তাঁদের ফাঁসির আদেশ হয়। মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে সাজাপ্রাপ্ত সামরিক অফিসারগণ হাইকোর্টে, বিচারপতি ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি লতিফুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। আসামীপক্ষের কৌশলী ছিলেন, ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ, ড: জহির, সিরাজুল হক প্রমূখ। সে সময়ে এই বিষয়টি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
এ বিষয়ে দুটি কথা।
আসামী পক্ষ রিট মামলার বক্তব্যে দাবি করেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন করে কোর্ট মার্শালে অন্যায় ভাবে তাঁদেরকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে হয়েছে।
অপর পক্ষে এটর্নি জেনারেল কে, বাকের তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১০২ অনুচ্ছেদের ৫ উপ-অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোর্ট মার্শাল, প্রতিরক্ষা শৃঙখলা বাহিনী সংক্রান্ত আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের রিট মামলা দাখিল করার কোন এখতিয়ার নেই।
এ বিষয়ে আমার পিতা, বিচারপতি লতিফুর রহমানকে একটি বিশেষ বিষয়ের উদাহরণ দেখিয়ে রিট আবেদনটি গ্রহন করতে বলেছিলেন। (তখন জনমনে বিশ্বাস ছিল, অন্যায়ভাবে সামরিক বাহিনীতে মুক্তি যোদ্ধাদের হত্যা করা হচ্ছ)। উদাহরণটি ছিলো, আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জন, এফ, কেনেডীর একটি উক্তি। তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর, জনগণের উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন,'মানুষের বাঁচার অধিকার ঈশ্বরপ্রদত্ত। কোন দেশের সংবিধান বা কোন ধরনের আইন দ্বারা তা রহিত করা অন্যায়।'
যাই হোক, বেঞ্চের উভয় বিচারপতিই মাঝে মধ্যে অজানা কোন জায়গা থেকে টেলিফোনে তাঁরা হুমকি পাচ্ছিলেন, সত্বর কেসটি নিস্পত্তি করে দেবার জন্য। তদানিন্তন সেনা প্রধান, মে:জে: হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের আগ্রহের কথাও তাঁরা জানতে পেরেছিলেন। তাই সত্বর তাঁরা মামলাটি নিস্পত্তি করে দিয়েছিলেন। (সূত্র: পৃ:৩৯, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিনগুলি ও আমার কথা'। লেখক: বিচারপতি লতিফুর রহমান)।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
এইগুলা খোলাসা করার সময় চলে এসেছে। প্রথম আলোর যেসব সাংবাদিক কোন কাজ না পেয়ে ফটোশপে বিদ্যা বানামের ছবিতে নিয়ে ঘষাঘষি করে তাদের এসব কাজে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। ওরা কিছু করে খাক!
১) আমি পরে যতখানি জানতে পেরেছি তাতে বুঝেছি এই হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল না রওশন। মঞ্জুরের মত সেও জানতো না যে মতি ঐ ভাবে জিয়াকে মেরে ফেলবে।
২) মঞ্জুরের পরিবারের সবাইকে নিরাপদ স্থানে নেবার কাজটা স্বেচ্ছায় নিজের উপর নিয়েছিল সে। পরে মেজর তালেবুল মাওলার কাছে আত্মসমার্পন করে রওশন। মেজর মাওলা ক্যাপ্টেন থাকা আবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামে মেজর ইয়াজদানীর সরাসরি অধীনে GSO-III ছিল। রওশন যদি মনে করত সে যতেষ্ঠ অপরাধী তা হলে ভারত বর্ডারের অত কাছে এসে এভাবে মাওলার হেফাজতে নিজেকে তুলে দিত না।
৩) আইনের বিচার দেশে দেশে ভিন্ন হতে পারে। আমেরিকাতে 'Due process' এবং 'Due diligence' আইনের বিচারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনাব কবির আহমেদ যে কথা উল্লেখ করেছেন সেটা খুবই খাটি। চট্টগ্রামে কোর্ট-মার্শাল বিচারের নামে বিচারের প্রহসন হয়েছে সে ব্যাপারে দ্বিমত নেই।
৪) আইনের চোখে সে দোষী কি না, তার চাইতে আমার কাছে বড় কথা - সে আমার বন্ধু। একজন ভাল মানুষ এবং এক জন ত্যাগী নিস্বার্থ মুক্তিযোদ্ধাকে তার নিজের দেশে ফাঁশির দড়িতে ঝুলিয়ে মারা - সেটা আমি কিছুতেই মানতে পারি না।
৫) রওশন ছিল তার মায়ের বড় ছেলে। তার মা রওশন আরা আজও বেঁচে আছেন। তার দেশের বাড়ী সিরাজগঞ্জ শহরের মালশাপাড়া কবরস্থানে রওশনের কবর। সেখানেই অন্য চার সন্তানের সাথে একান্নবর্তী হয়ে আছেন রওশনের বৃদ্ধা মা। সন্তান হারানোর শোকে মুহ্যমান হয়ে নীরবে নিভৃতে কাঁদেন তিনি। ছেলের এই প্রহসনমূলক গোপন বিচারের রায়ে ফাঁসির মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গেছেন তিনি।
৬) রওশন তার জীবনে বিয়ে করার সুযোগ তখনো পায়নি, তাই অকৃতদার হিসাবেই মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে তার। আগের সরকারের আমলে আইন ছিল, মৃত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাবেন তার স্ত্রী। আর তার স্ত্রী না থাকলে ভাতা দেওয়ার বিধান ছিল না। তবে সে আইনের এখন পরিবর্তন হচ্ছে। এখন স্ত্রী না থাকলে বৃদ্ধা মা পাবেন ভাতা। তবে শেষ পর্যন্ত মা বেঁচে থাকা অবস্থায় বীরপ্রতীকের ভাতা এবং প্রহসনমূলক বিচারের নামে হত্যার পুনঃবিচার দেখে যেতে পারবেন কিনা বলা কঠিন।
এই ব্যাপারে কেউ যদি আগ্রহী হন তবে রওশনের বর্তমান 'প্রোবোনো' আইনজীবি এহসানের সাথে নীচের ঠিকানাতে যোগাযোগ করে দেখতে পারেনঃ
Ehsanur Rahman (Ehsan)
Attorney at Law
Law Office of Ehsan
One Arena Place
7322 Southwest Freeway, Suite 1910
Houston, Texas 77074
Mobile: (281) 851-0003
Telephone (713) 524-1207
“Justice in the future cannot be achieved unless the injustice of the past is addressed.”
সাইফ শহীদ
নতুন মন্তব্য করুন