কেমন হবে ওবামার আগামী চার বছর? কেন এই প্রশ্ন? কারন এর সাথে জড়িত রয়েছে শুধু আমরা যারা আমেরিকাতে থাকি তারা নয়, প্রায় সমস্ত পৃথিবীর মানুষের ভাল-মন্দ। আমরা পছন্দ করি আর না করি - বর্তমানে এটাই হচ্ছে সত্য। কথাটা একটু হয়তো বিশ্লেষণ করা দরকার। আমেরিকা সামরিক দিক থেকে অন্য অনেক দেশের চাইতে শক্তিশালী। কিন্তু ওসামা বিন লাদেন বা তার নামধারী সামান্য কয়েকজনের দল দেখিয়ে দিয়েছে অনেক কম শক্তি নিয়েও বড় শক্তিকে অসুবিধায় ফেলা যায়। ফলে আমেরিকার মত দেশের পক্ষে সারা পৃথিবীকে একটা বড় টালটমাল অবস্থাতে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব না। একটা উদাহরন দেখাই - কোন কারনে যদি আমেরিকা বা ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমন শুরু করে তবে তখনি তেলের স্বাভাবিক সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে। পৃথিবীর বর্তমান জ্বালানী ব্যবস্থার একটা বড় পরিবর্তন আসা তখন খুবই স্বাভাবিক। এর পর একটা 'চেইন-রিএকশন'-এর মত অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে যেটা হয়তো এখন আমাদের চিন্তারও বাইরে। বর্তমান পৃথিবীর সব কিছু এমনি ভাবে একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে আছে যে কোথাও কিছু ঘটলে কম বেশী সবাইকে প্রভাবিত করবে।
আর একটা উদাহরন দিই। বর্তমানে আমেরিকা ১৫ ট্রিলিয়ন ডলার ধার করে বসে আছে। তা সত্বেও আমেরিকার স্টক-মার্কেটে স্টকের দাম বেড়ে চলেছে। কেন এই বৃদ্ধি? কারন হচ্ছে অন্যরা তাদের স্বার্থেই খেয়াল রাখবে যাতে আমেরিকার স্টক-মার্কেট যেন ভেঙ্গে না পড়ে। এমনি ভাবে সারা পৃথিবীর সব দেশ এখন কম বেশী একে অন্যের সাথে জড়িত। সেই জন্যেই আমাদের বোঝার এই প্রচেষ্টা - কেমন চালাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আগামী চারটি বছর। কোন দিকে পরিচালিত করবে সে শুধু আমেরিকা নয় - সমস্ত পৃথিবীকে।
চার বছর আগে যখন ভোট দিয়ে এসে জেনেছিলাম ওবামার বিজয়ের সংবাদ তখন অনেকের মতই খুব খুশী হয়েছিলাম। 'ওবামার জয়' নামে একটা লেখা চার বছর আগে আমার ব্লগে লিখেছিলাম। আজ আবার সেটা পড়ে দেখলাম - কতটা সঠিক ছিল আমার সেদিনের চিন্তাধারা। চার বছর আগে দেওয়া ওবামার যে কথাগুলি আজও রাখা হয়নি সেগুলি হচ্ছেঃ
১) 'গুয়ানতানামো বে' কারাগার বন্ধ করা।
২) 'গ্লোবাল ওয়ারমিং' বা বিশ্বের পরিবেশ রক্ষার জন্যে 'ক্যাপ এবং ট্রেড' চালু করা।
৩) বিদেশ থেকে ওসুধ আমদানীর অনুমতি দান।
৪) গর্ভপাত আইনে স্বাক্ষর দান।
৫) ইমিগ্রেশন আইনের পরিবর্তন আনা।
যে কাজ গুলি ওবামা করতে পেরেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ
১) 'সবার জন্যে স্বাস্থ-রক্ষা বিল'-এ স্বাক্ষর করা।
২) ইরাকে যুদ্ধ বন্ধ করে সব সৈন্য ফিরিয়ে আনা।
৩) বিন লাদেন-কে হত্যা করা।
৪) টেররিস্ট সন্দেহে আটক ব্যক্তিদের উপর বন্ধী অবস্থায় অত্যাচার বন্ধ করা।
৫) সমকামীদের অধীকার কিছুটা মেনে নেওয়া।
৬) আনবিক অস্ত্র কমাবার লক্ষে 'স্টার্ট' চুক্তি সাক্ষর করা।
আরও অনেক কিছু হয়তো করা সম্ভব ছিল কিন্তু বিরোধী দলের প্রচন্ড বাধার কারনে করা যায়নি। বাইরে থেকে আগে অতটা বুঝতাম না, আমেরিকাতে এত দিন থেকে এখন বুঝি আসলে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কতটা সীমাবদ্ধ। এ ছাড়া ওবামা যখন ক্ষমতা গ্রহন করে তখন আমেরিকা এক বিরাট অর্থনৈতিক বিপর্জয়ের মুখে। সেই বিপর্জয় থেকে ফিরে আসতে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে ওবামার। কংগ্রেসের বাধার কারনে হাত-পা বাঁধা হয়ে গেছে ওবামার।
আগামী চার বছরে অবস্থার যে বেশী পরিবর্তন হবে তা মনে হবার কারন নেই। কংগ্রেস এখনো রিপাব্লিকানদের হাতে। তাদেরকে হাতে নিয়ে কাজ করতে পারা খুব সহজ হবে না। সামান্য একটু 'গান-কন্ট্রোল' আইন পরিবর্তনের জন্যে কতটা অসুবিধা পেতে হচ্ছে ওবামাকে। 'মেসিন-গান' জাতীয় কিছু বন্ধুক বিক্রী করা যাবে না আর বন্দুকের কার্টিজে এক সাথে ১০টার বেশী গুলি রাখা যাবে না - সামান্য এইটুকু পাশ করাতে ওবামাকে যতেষ্ট কষ্ট করতে হচ্ছে।
তবে খেয়াল করেছি ওবামার একটা বিশেষ বৈশিষ্ট আছে - প্রয়োজনে সে যথেষ্ট ছাড় দিতে সক্ষম। তার ২০ বছরের ধর্মগুরু রেভারেন্ড রাইটকে তার নির্বাচনে জেতার স্বার্থে সে যে ভাবে ত্যাগ করেছিল ভবিষ্যতে যে ওবামা আরও কিছু তেমনি সহজে ত্যাগ করবে না - তা বলা মুশকিল।
আমার জানতে ইচ্ছা হয় ওবামার এককালীন বন্ধু-স্থানীয় পাকিস্তানী রেস্টুরেন্ট শ্রমিক সাদিক, যার সাথে অনেক দিন ওবামা এক সাথে থেকেছে - সে যদি কখনো ওবামার সাথে দেখা করতে আসে - তবে কি পুরানো দিনের দুই বন্ধু এক সাথে বসে বেয়ার খেতে খেতে পুরানো দিনের গল্প করবে?
মন্তব্য
ওবামার পুরানা বন্ধুর গল্প হোক তাহলে ..
ওবামার আরো কিছু উল্লেখযোগ্য অবদান:
১) জর্জ বুশের কালো আইন প্যাট্রিয়ট অ্যাক্টের সম্প্রসারণ।
২) National Defense Authorization Act পাশ করা, যার বলে মিলিটারি যে কাউকে এমন কি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিককে বিনা বিচারে আটকে রাখতে পারবে।
৩) যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকসহ যে কাউকে বিনা বিচারে হত্যার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের দ্বারা সংরক্ষণ করা।
৪) ড্রোন হামলার পরিমাণ বুশের তুলনায় ছয়গুণ বৃদ্ধি করা ও সরকারের নাগরিক অধিকার লংঘনের উপর নজর রাখা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের উপর চড়াও হওয়া।
শেষ প্যারাটা ঠিক বুঝলাম না??
১. ওবামার বন্ধু সাদিককে নোবেল দেওয়া হৌক।
২. হারাম বিয়ার পানের অপরাধে সাদিককে দোররা মারা হৌক।
নুবেল পাইতে হৈলে বিয়ারে কাম হবে না। হোয়াইট ওয়াইন খাইতে হবে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বারেক ভাই জিন্দাবাদ!!
সাদিককে নিয়ে একটা পোষ্ট হোক।
নতুন মন্তব্য করুন