অ্যাডামের স্বর্গীয় প্রতিশোধ
--------------------------
অনেক অনেক আগের কথা। বিগব্যাং এর ধাক্কা ঈশ্বর তখনো সামলে উঠতে পারেননি। একেতো পাশের নরকের মত গরম হয়ে আছে চারপাশ, তার উপর স্বর্গে নেই কারেন্ট। থাকবেই বা কী করে, তখনো বিগব্যাং এর দুষ্ট কণাগুলো ইলেকট্রনে পরিণত হতে পারেনি। আর ইলেকট্রন ছাড়া ইলেকট্রিসিটি তৈরী করার ক্ষমতা ঈশ্বরের থাকলেও, তার মাথায় আসেনি। তাই ঈশ্বরের মেজাজ চড়ে আছে।
প্রথম কয়েক মূহুর্তে খুব সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটে গিয়ে থাকবে, ঈশ্বর এটা নিয়ে কারো সাথেই কথা বলেননা। বরং কেউ জিজ্ঞেস করতে আসলে কিছু স্বর্গীয় খিস্তি ঝেড়ে দেন। আর কেউ পবিত্র বাণী মনে করে অর্থ না জেনেই তা টুকতে থাকে। অবশ্য ঈশ্বর যে শুধু অতীতের ঘটনা নিয়ে পড়ে আছেন, তা নয়। স্বর্গে আপাতত অনেক গুলা সমস্যা ও জ্বলজ্বল করছে।
সমস্যা গুলো বুঝতে হলে, আগে স্বর্গের নাগরিক দের সম্পর্কে জানতে হবে। ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হলেও, কাজেকর্মে একটু অলস। নিজের খাবার জন্যে সাকুল্যে একটি আপেল গাছ তৈরী করেছেন। এই একটি আপেল গাছে যেন বাড়তি খাবার মুখ না জোটে, তাই ঈশ্বর স্বর্গের সব নাগরিকদের তৈরী করেছেন রশ্মি দিয়ে। চাঁদ-সূর্য আগেই তৈরী ছিল, ঈশ্বরের ফাই-ফরমায়েশ খেটে এই রশ্মি-নাগরিকদের শক্তি যখনি শেষ হয়ে আসার উপক্রম হত, তাদের কেউ কেউ চাঁদের সামনে, কেউ সূর্যের সামনে গিয়ে নিজেদের রিচার্জ করে নিত। এদেরি একজন ওভারচার্জ হয়ে একদিন ঈশ্বরকে বুদ্ধি দেয়, মাটির কিছু খেলনা তৈরী করার জন্য। সরল হৃদয়ের ঈশ্বর মাটি দিয়ে একজোড়া খেলনা তৈরী করেন। এভাবে স্বর্গে আবির্ভাব ঘটে আমাদের আদিপিতা অ্যাডাম আর আদিমাতা ঈভের। আর অনেকদিন পর ঈশ্বর ক্ষিপ্ত হয়ে ঐ রশ্মি-নাগরিকের উদ্দেশ্য খিস্তি ঝাড়েন, “শয়তান”।
তো এই নতুন মুখ দুইটা ঈশ্বরের মন জুড়ে থাকে। কিন্তু সমস্যা বাধেঁ কয়দিন পর, যখন এরা সারাদিন খালি ক্ষুধা ক্ষুধা বলে চিৎকার করে। তারপর ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে একদিন অ্যাডাম ইডেন গার্ডেন থেকে একটা আপেল চুরি করে খেয়ে ফেলে। তারপর কাহিনী সংক্ষিপ্ত, ঈশ্বর রেগে গিয়ে অ্যাডাম-ঈভ দুইজনকে সাথে একটাও কাপড় নিতে না দিয়ে বিনা বস্ত্রে পৃথিবীতে বহিস্কার করেন। রশ্মি-নাগরিকেরা তীব্র অপমানে তাদের যাত্রা মুহূর্তকে বিভীষিকায় পরিণত করে।
মাটির মানুষ পৃথিবীতে নেমে আসে। ঈভ চারপাশ ঘুরে ঘুরে স্বর্গ-থেকে বহিস্কৃত নানা প্রজাতির প্রাণী শিকার করে আগুনে ঝলসে অ্যাডামের সামনে তুলে ধরে, আর অ্যাডাম দিনরাত শুধু ঈশ্বরের করা অপমানের কথা ভাবতে থাকে। তারপর একদিন তার মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে ওঠে, সে স্বর্গ থেকে লুকিয়ে নিয়ে আসা কলম দিয়ে, বড় আকারের কাঠালপাতায় ঈশ্বরের প্রশংসা-মালা ১ নামে একটা বই লিখে ফেলে। সেখানে ঈশ্বর কত মহান, স্বর্গে খাবার দাবার এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কত প্রাচুর্য তার বিবরণ ফেনিয়ে ফেনিয়ে লিখা থাকে।
ঈশ্বরের পাঠানো এক গোয়েন্দা রশ্মি নাগরিকের মাধ্যমে সেই বইয়ের এক কপি ঈশ্বরের হাতে পৌঁছে যায়। ঈশ্বর খুশিতে আটখানা হয়ে যান। সেই কথা অ্যাডামের কানেও পৌঁছে যায়। স্বর্গের নাগরিক সুবিধায় অভ্যস্ত অ্যাডাম স্বর্গে ফেরার জন্য উঠে পড়ে লাগে। তারপর সে পৃথিবীর সব কাঠাল পাতা উজার করে একের পর এক বই লিখতে থাকে ঈশ্বরের প্রশংসামালা ২, ঈশ্বরের প্রশংসামালা ৩, … । এবারের বইগুলোতে ঈশ্বরের অলৌকিক গুণের কথা ইনিয়ে বিনিয়ে বলা হতে থাকে।
তারপর অনেক বছর যায়। অ্যাডামের আর স্বর্গে ফেরা হয়নি। উত্তরসূরিদের কেউ কেউ অ্যাডামের লিখে যাওয়া বই পড়ে ঠা ঠা শব্দে হাসতে থাকে, কেউ কেউ বইয়ের লেখা গুলিকে গাঁজাখুরি বলে উড়িয়ে দেয়, আর স্বর্গীয় ঈশ্বরকে নিয়ে নাহক ঠাট্টা করতে থাকে। বুড়ো ঈশ্বর অক্ষম আক্রোশে নড়বড়ে দাঁত খিঁচিয়ে আরো কিছু অস্পষ্ট খিস্তি ঝেড়ে যান, আর রশ্মি-নাগরিক দের কেউ কেউ সেটা পরম ভক্তি ভরে টুকতে থাকে।
আর অ্যাডামের অতৃপ্ত আত্মা তখন নাইট্রোজেন চক্রে ঘুরপাক খেতে খেতে ফিক-ফিক শব্দে হাসতেই থাকে।
[একটুস খানি সায়েন্সঃ বিগ ব্যাং এর পরবর্তী কিছু মূহুর্তের বিবরণ বর্তমান বিজ্ঞান এখনো দিতে পারেনি। আর বিগব্যাং এর পর ইলেকট্রন তৈরী হতে কিছুটা সময় লেগে যায় ]
মন্তব্য
সিরিজ চলুক
[একটুস খানি কৈফিয়ত : মন্তব্য করতে দেরি হলো। কিছু কিছু লেখা আছে যেগুলো পড়ার পরেও অনেক সময় অর্থ বুঝতে কিছুটা সময় লেগে যায়]
কুটুমবাড়ি
সিরিজের চিন্তা করাটা মনে হয় একটু উচ্চাভিলাষী হয়ে গেছে আমার তরফ থেকে, দেখা যাক গল্পের গরু কতদূর চড়ে বেড়ায়। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[নিজের অভিজ্ঞতার বাইরে প্রথম লিখা, তাতে হয়ত একটু দুর্বোধ্য হয়ে গিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছেন, তাই ভালো লাগছে ]
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
জেনেসিস নিয়া একটা গল্প লেক্সিলাম।
কাকস্য পরিবেদনা
আপনার জেনেসিস পড়লাম। ঈশ্বর তাইলে বাংলাদেশি ছিলেন
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আমি যা বুঝলাম সেইটা যদি আপনি বুঝিয়ে থাকেন তাইলে ধর্মশালার জনগণ আপনাকে গুপ্তহন্তা করিবেক।
সাত্যকি
নাহ, কেউ কিছু করবেনা। দেখনা সায়েন্স রিলিজিয়ন সব ব্লেন্ড করে কাহিনী ফাঁদলাম। একেবারে 'ধর্মে ও আছি, জিরাফে ও আছি' অবস্থা।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
দাদা, কাত করবেন না, রস গড়িয়ে পড়তে পারে!
--- থাবা বাবা!
হা হা। টিস্যু নিয়ে বসতে হয়যে তাইলে । পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
মজার।
_________________________________________________
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ভালো হইছে। চালিয়ে যেতে থাকুন
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
পড়তে খুব ভালো লাগছে।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
অনেকের কথা কইলেন, কিন্তু আপনার কি মতামত সেইটাতো কইলেন না, চামে চাইপা গেলেন
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
বইয়ের কথায় কি আর অবিশ্বাস করতে পারি সায়েন্স এন্ড রিলিজিয়ন 'কোএক্সিস্ট' ইন মি, পুরাই সুবিধাবাদী ক্রিয়েচার বলতে পারেন
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
সুবিধাবাদী তো কমবেশি সবাই কুন স্টেটে আছুইন?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আছি নর্থ ক্যারোলাইনা তে। আপনি? তবে 'আছুইন' শুনে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে একই স্টেটে ছিলাম
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
হুম!!!
হুম
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।
দেখা যাক কোথাকার জল কোথায় গড়ায়
---আশফাক আহমেদ
দেখি সামনে ঐশী প্রণোদনা আবার কবে আসে
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আদম ঈভের আমলে আগুনাবিষ্কার হইছিলো?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ঈশ্বরের ইচ্ছায় যেকোন কিছু যেকোন সময় সম্ভব।
তবে ওই লাইনটা বাদ দিয়ে দিব, তাতে আগুন আবিষ্কার নিয়ে ও কিছু লিখা যাবে, আবার মানব সভ্যতার কালানুক্রমিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতা ও রক্ষা করা যাবে। ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ নজরুল ভাই।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
মজা পেলাম। তবে স্বর্গ থেকে বহিষ্কৃতি অ্যাডাম-ইভ দম্পতির যাত্রা মুহূর্তকে রশ্মি-নাগরিকেরা কোন তীব্র অপমানে, কেন বিভীষিকায় পরিণত করে সেটা বুঝলাম না।
বানানে কিছু সংশোধন প্রয়োজন। এখানে দেখুন।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
বসরে খুশি করার জন্য হইতে পারে। কথায় আছে না, সূর্যের চেয়ে বালি গরম? অ্যাডাম-ঈভ ঈশ্বরের চোখের মণি বলেও ঈর্ষাজনিত কারণে সুযোগে ঝাল মেটানো হইতে পারে।
অঙ্কুর দিয়েও দেখি বানানের কোন উন্নতিই হচ্ছেনা। ধন্যবাদ লিস্টির জন্য । অন্তত "সমস্যা গুলো > সমস্যাগুলো" সংক্রান্ত কনফিউশন দূর হলো।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আপ্নের বসে আপ্নারে দিয়া এইসব করায় আজকাল? আফসুস...
বসে আমারে দিয়া কিছুই করায় না, সে থাকে তার মত, আমি আমার। তবে তার টি-শার্টের বাণীতো দেখছই, এইসব লেখা দেখে তার তেমন খুশি হওয়ার কথা না
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
এ কেমন ঈশ্বর?
"বিগব্যাং এর ধাক্কা ঈশ্বর তখনো সামলে উঠতে পারেননি। একেতো পাশের নরকের মত গরম হয়ে আছে চারপাশ, তার উপর স্বর্গে নেই কারেন্ট। থাকবেই বা কী করে, তখনো বিগব্যাং এর দুষ্ট কণাগুলো ইলেকট্রনে পরিণত হতে পারেনি। আর ইলেকট্রন ছাড়া ইলেকট্রিসিটি তৈরী করার ক্ষমতা ঈশ্বরের থাকলেও, তার মাথায় আসেনি। তাই ঈশ্বরের মেজাজ চড়ে আছে।"
আপনি তো মানবিক করে ফেললেন!! স্যাটায়ারও জমে নাই!!
"স্যাটায়ার জমে নাই" এর বিরুদ্ধে কিছু বলার মত কনফিডেন্স পাচ্ছিনা
তবে আমি ঈশ্বরকে মানবিক করেই দেখাতে চেয়েছি, সুতরাং আপনার অভিযোগ থেকে ধরে নিচ্ছি অন্তত এই কাজে আমি সফল।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আপনার 'ইতিহাসে' সামান্য একটু ভজঘট আছে ভাই - স্থান আর কাল দু'ক্ষেত্রেই। "ঈশ্বরের প্রশংসা-মালা" এডাম লিখেন নাই - এটা লিখেছেন তাঁর এক বংশধর। তবে হ্যাঁ, মূল বিবরণ এডামেরই। তবে ঘটনাটা আপনি ঠিক পরিস্কার করতে পারেন নাই। আসল ঘটনা হলো এরকম (প্রায় ২০ প্রজন্মের বিশাল ইতিহাস যথাসম্ভব অতি সংক্ষেপে বলছি - তবু ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটালে মাফ করে দিবেন দয়া করে) :-
ইডেন গার্ডেন বা গার্ডেন অফ ইডেন, স্বর্গ - এইসবই কিন্তু আসলে এই পৃথিবীতেই অবস্থিত। আরো সুনির্দিষ্ট ভাবে বললে, এসব বর্তমানের দক্ষিন ইরাকে অবস্থিত ছিল। এই অঞ্চলটার আদি নাম ছিল সুমার। হ্যাঁ, 'সুমেরিও সভ্যতার' সুমার। এই যে 'ইডেন' শব্দটা - এইটা আসলে একটা সুমেরিও শব্দ 'ইডিন' বা 'ইডিনু' থেকে এসেছে, যার অর্থ - তৃণভূমি, উর্বরভূমি, আনন্দময় স্থান, ইত্যাদি। তো মরুভূমি-বেষ্টিত সুমেরিও সভ্যতার মানুষদের কাছে তৃণভূমি, উর্বরভূমি, জলাভূমি "স্বর্গ" বলেই মনে হতো। আর আধুনিক গবেষকরাও 'গার্ডেন অফ ইডেনকে' সুমেরিয়াতে অবস্থিত ছিল বলেই মত দিয়েছেন। বাইবেলের বর্নণার সাথেও সেটা মিলে যায়। তো, এই 'স্বর্গ'-ভূমিরই কোন এক জায়াগায় ছিল "গার্ডেন" অফ ইডেন। সুমেরিও সভ্যতা অনেকগুলি ছোট ছোট 'সিটি-স্টেট' বা 'নগর'-রাষ্ট্রের সমষ্টি ছিল। এরকমই এক নগররাষ্ট্রের নগরপিতা (এজন্যেই হয়তো তাঁকে এখনো 'পিতা' ডাকে অনেকে) তথা রাজা/শাসনকর্তা ছিলেন আমাদের বুড়ো ঈশ্বর। আর ইডেনের বাগান আর কিছুই না - তারই নিজস্ব এস্টেটের একটা অর্চার্ড-টর্চার্ড কিছু হবে। আর এডাম মিঞাঁ ছিল এই এস্টেটের একজন আজন্ম বন্দী দাস, যাদেরকে তখন 'ওয়ার্দু' বলা হতো। এরপরের ঘটনার আপনি প্রায় ঠিকই বিবরণ দিয়েছেন। এডাম ও ঈভ দম্পতি ক্ষুধার ঠ্যালায় এস্টেটের কৃষিপণ্য চুরি করে খেতে গিয়ে ধরা খেয়ে শাস্তিস্বরূপ শুধু ঐ "গার্ডেন অফ ইডেন" থেকেই নয়, খোদ ঐ নগররাষ্ট্র থেকেই বহিষ্কৃত হয়ে মরুভূমিতে নির্বাসিত হন। এটা তাদের পৃথিবীতে "নেমে আসা" নয়, বরং বলা যায় "বেরিয়ে পড়া" (অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থে আনুভূমিক গমন)। মরুভূমিতে তাঁদের দীর্ঘকাল বেদিশা হয়ে ঘুরতে হয়। এসময় তাদের বাচ্চাকাচ্চাও হয়। তো এই ছানাপোনাগুলি যখন মরুভূমির মধ্যে ছেড়া তাঁবুতে শুয়ে শীত আর ভয়ের ঠ্যালায় ঘুমাতে চাইতো না, কান্নাকাটি করতো - তখন তাদের ঘুম পাড়ানোর জন্য এডাম গল্প বলা শুরু করেন। ভূত, জ্বিন, পরীর গল্প। স্বর্গ-নরকের গল্প। এক্ষন চুপচাপ ঘুমায়ে পড় - ঘুমালে স্বগ্গে যাবা। না ঘুমালে - ঐ যে শয়তান আইলো, যমদূত আইলো - নরকে যাবা! স্বর্গের বর্ণনা দিতে গিয়ে নস্টালজিয়ায় তার হয়তো সাবেক বন্দীদশার আবাস গার্ডেন অফ ইডেন-এর কথা মনে পড়ে যায়, আর নরকের বর্ণনায় ছায়াপাত করে সাপ-ব্যাঙ-বিচ্ছু আকীর্ণ কঠোর অগ্নিতপ্ত মরুভূমির পরিবেশ। রাতের পর রাত উনি এমন গল্প বলে গেছেন বাচ্চাদের। পরবর্তীকালে এডাম দম্পতি আরেকটি নগররাষ্ট্রে আশ্রয় পান। এই নগররাষ্ট্রেই তার ছানাপোনারা বড় হয় এবং বংশবিস্তার করে। তারা কিন্তু তাদের গোষ্ঠীপিতার ঘুমপাড়ানি ভূতের গল্পগুলি ভুলে না - এবং গল্পগুলি বংশপরম্পরায় চলতে থাকে। তো, বহুদিন পরে এডামের বংশধরদের মধ্যে, এই নগররাষ্ট্রেই - যার নাম 'ঊর', একজনের জন্ম হয় যার নাম 'এব্রাম'। এই এব্রামও জীবনের একপর্যায়ে তার আদি গোষ্ঠিপিতার মতই নিজ জন্মভূমি 'ঊর' থেকে বহিষ্কৃত হন। ইনিও মরুভূমিতে বেদিশা ঘুরতে ঘুরতে একসময় 'কিনান' নামক এক দেশে এসে পড়েন। এই দেশের রাজা মহামতি ইওহওয়ের আবার খুব রাজা থেকে ঈশ্বর পদে প্রমোশন পাবার লোভ - কিন্তু তাঁর নিজের দেশের আদি কেনানী জনগন এই স্বপ্নকে একদম পাত্তা দিচ্ছে না। তো এই অত্যন্ত রিসোর্সফুল বিদেশিটাকে পেয়ে তাঁর খুব সুবিধা হলো। এব্রামের সাথে তাঁর চুক্তি হলো - তিনি যদি বুড়ো ইওহওয়েকে নিজের ঈশ্বর হিসাবে মেনে নেন, তাহলে এই কিনান দেশটা তার বংশধরদের দিয়ে দিবেন তিনি। এটাকেই বলা হলো "অঙ্গিকৃত ভূমি"। বুদ্ধিমান এব্রাম এই জায়গা থেকেই তার নতুন ডকট্রিন ও ইতিহাস শুরু করলেন -- এডাম থেকে বয়ে আসা উত্তরাধিকাসূত্রে বংশপরম্পরায়-প্রাপ্ত মরুভূমিতে বিতাড়িত অবস্থায় এডামের সেই বাচ্চাদের শোনানো ঘুমপাড়ানি ভয়ের গল্পগুলির সাথে ইওহওয়ে, অঙ্গিকৃত ভূমি, স্বর্গ-নরক - ইত্যাদি মিলিয়ে-মিশিয়ে তিনি মানব সভ্যতার এক অভিনব নতুন ইতিহাস সৃজন করলেন। তবে হ্যাঁ, এই ইতিহাস তিনিও নিজে লিপিবদ্ধ করে যেতে পারেন নাই। এই লিপিবদ্ধ করার কাজটা অনেক পরে তাঁর সুযোগ্য দু'ই বংশধর সম্পন্ন করেছেন। সে আরেক কাহিণি - পোক্ত ঐতিহাসিক সূত্র থেকে বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন। এই হলো আপনার "ঈশ্বরের প্রশংসা-মালা"র প্রকৃত পটভূমি। বাকি যা আপনি লিখেছেন - তা সবই মোটমুটি ঠিকই আছে।
আমি আক্ষরিক অর্থে মুগ্ধ আপনার মন্তব্য পড়ে। ইডেন গার্ডেন যে সুমেরে অবস্থিত সেটা জানতাম যদিও, কিন্তু অ্যাডামের সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা ছিলনা।
এবার নিজের লেখার কৈফিয়তঃ অ্যাডামের হাতে প্রশংসামালা লিখানোটা ইচ্ছাকৃতই, এমনকি ইতিহাসের সাথে কোন মিল রাখার তাগিদ ও বোধ করিনি। একদিন হঠাৎ মনে হল, সায়েন্স আর রিলিজিয়নের কিছু জিনিস নিয়ে ইচ্ছামত কিছু একটা লিখে দেই। এটা আমার প্রথম ফিকশন ধরনের লেখা, লেখার গাঁথুনীতেও বেশ দুর্বলতা রয়ে গেছে, ইতিহাস আর মিথের সাথে ও ঠিক মিলেনি কিছু। সঠিক ইতিহাসটা জানা থাকলে নিঃসন্দেহে অনেক ভালো স্যাটায়ার লিখা যেত, এরপরে এইরকম কোন কিছু লিখলে কিছুটা পড়াশোনা করে নেবার তাগিদ বোধ করছি। আবারো ধন্যবাদ এই বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আরে নাহ্ - আপনার 'কৈফিয়ৎ' দেয়ার কিচ্ছুটি নাই ভাই! আপনার লেখা সর্বাংশে ঠিক আছে এবং অতি চমৎকার হয়েছে !! আপনি বোধহয় আমার মন্তব্যের হাল্কা টোনটা ধরতে পারেননি। আমি আসলে আপনার ভুল ধরার জন্য ভুল ধরিনি !
বরং আমার কৈফিয়ৎটাই দেই -- আপনার লেখা পড়ে দারুণ মজা লাগছিল। পড়তে পড়তে এক পর্যায়ে আমার নিজের কল্পনার পাখাটাও বেশ সুড়সুড় করে উঠলো - কিন্তু অলস বলে নিজে একটা আস্ত নতুন গল্প লিখতেও ইচ্ছে করছিল না। ফলে আপনার গল্পটার মধ্যে জোর করে (সম্পূর্ণ ঠাট্টাচ্ছলে) একটা ফাঁক সৃষ্টি করে - সেই ফাঁকের ভেতর দিয়ে নিজের কল্পনার পাখাটা মেলে দিয়ে আরেকটা গল্পের কাঠামো দাঁড় করানো যায় কিনা তার একটা অক্ষম এক্সপেরিমেন্ট করলাম আরকি!
ইতিহাসের সাথে এ বিষয়ে আমরা কেউই আসলে মিল রাখিনি। তার দরকারও নাই। কারন মূল বিষয়টাই তো অনৈতিহাসিক! এ্যাডাম সংক্রান্ত পুরো ব্যাপারটাই মিথ ও লিজেন্ডের বিষয় - আর 'ইতিহাস' ভিন্ন জিনিষ। আমি শুধু মিথ, লিজেন্ড আর ইতিহাসকে জায়গায় জায়গায় আমার কল্পনা দিয়ে একসাথে বুনে দিয়েছি। আপনিও তা-ই করেছেন। কোনই অসুবিধা নাই। তাছাড়া এ্যাডাম সম্পর্কে আমারও আসলে কিছু জানা নাই - ঐ মিথের বাইরে, যেটা আপনিও জানেন। এ্যাডাম বা ইডেন গার্ডেনের কোন ঐতিহাসিক অস্তিত্ব নেই। বিশেষজ্ঞদের ইডেন গার্ডেনের নির্ণীত লোকেশনটা পুরোপুরি মিথ-জিওগ্রাফির সংমিশ্রণে নির্ণীত একটা মিথিকাল বাগানের জিওগ্রাফিক লোকেশন মাত্র। এর মূল্য ঐ মিথের প্রতীকি মর্মোদ্ধার পর্যন্ত - তার বাস্তব অস্তিত্বে নয়। আর আমি যে নগরপিতা, তার ব্যক্তিগত অরচার্ড, সেখানে তার বন্দী দাস, সেই দাসকে মরুভূমিতে নির্বাসন, সেখানে তার বাচ্চাদের গল্প শোনানো, 'ঊর'-এ গিয়ে সেই দাসের বংশবিস্তার আর বংশপরম্পরায় তার সেই ঘুমপাড়ানি গল্পেরও বংশবিস্তার - এসব একান্তই আমার কল্পনা - এসব 'ইতিহাস' তো নয়ই, এমনকি কোন প্রচলিত 'মিথ', ফোক বা লিজেন্ডও নয় (অন্ততঃ আমার জানামতে)। হয়তো আপনারটার মতই এই কল্পনারও কিছু স্যাটায়ারধর্মী যৌক্তিকতা থাকতে পারে, কিন্তু তার বেশি কিছু নয়। তবে হ্যাঁ, এব্রামের 'ঊর'-এ জন্মগ্রহণ ও সেখান থেকে পরবর্তীতে 'কিনানে' গমন বা ঈশ্বর ইওহ্ওয়ের সাথে তাঁর ইশ্বরত্ব মানার বদলে 'প্রমিজড ল্যান্ডের' চুক্তি - এগুলির প্রথমাংশটা হয়তো কিছুটা মিথমিশ্রিত ইতিহাস বা ইতিহাসমিশ্রিত মিথ (ঊর ও এব্রামের প্রসঙ্গে প্রদত্ত উইকিপিডিয়ার লিঙ্কগুলি দ্রষ্টব্য) এবং পরের অংশটা পুরোটাই প্রচলিত মিথ - আমার কল্পনা নয়।
আমিতো পুরাটাই বিশ্বাস করে নিচ্ছিলাম আপনার প্রায়-ইতিহাসও অনেক ভালো লেগেছে।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
বাপ্রে! এত গোপন সংবাদ পান কই?
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
মজারু। আরো লেখেন।
ধন্যবাদ কৌস্তুভ।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
খাসা। চালিয়ে যা...
খাসা। চালিয়ে যা...।
ধন্যবাদ হে জ্ঞানী!
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
দারুণ। চলুক।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
নতুন মন্তব্য করুন