১
বেদচর্চিত যুগে, ব্রাহ্মণ শাসিত সমাজে বসে চার্বাক বলেছিলেন, "ভন্ড, ধূর্ত আর নিশাচরেরাই বেদের কর্তা"। সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন "বিশ্বজগৎ নিজের নিয়মেই ভাঙে, গড়ে, তার জন্য সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের দরকার নেই"। নৈতিকতার পাশব মানদণ্ড লোভ আর ভয়ের অসারতা তুলে ধরে বলেছিলেন, "স্বর্গ, নরক, পুনর্জন্ম বলে কিছু নেই, আত্মা অবিনশ্বর নয়"। প্রাচীন ভারতের বস্তুবাদী এই দর্শন গ্রন্থিত হয়েছিল। যুক্তিতর্ক দিয়ে ঈশ্বরকে নাই করে দেয়া দর্শনের কপালে যা জোটা স্বাভাবিক, চার্বাক দর্শনের বইগুলো পুড়িয়ে দেয়া হলো।
তাই বলে ভারতবর্ষের মানুষ প্রশ্ন করা থামিয়ে দেয়নি। কারণ বইতো শুধু কাগজে লিখা হয় না, মানুষের মননে যে চিন্তাধারা গেঁথে যায় সেটা কাগজ পুড়িয়ে ছাই করে ফেলা যায় না। মাধবাচার্য চৌদ্ধ শতাব্দীতে চার্বাক দর্শনের কিছু পান্ডুলিপি খুঁজে পেলে চার্বাক দর্শনের কাগুজে বিলুপ্তিরও অবসান ঘটে।
২
এথেন্সের বাজারে দাঁড়িয়ে এক পাগলাটে বুড়ো তরুণদের নানা প্রশ্ন করে ব্যতিব্যস্ত করে তুলতেন, কিন্তু কোন প্রশ্নের উত্তর নিজে দিতেনা না। শুধু প্রতি প্রশ্নের উত্তরের জবাবে আরেকটা প্রশ্ন, তার জবাবে আরেকটা প্রশ্ন, এই ভাবে উত্তরদাতা নিজেই পৌঁছে যেতো চূড়ান্ত সত্যে। বুড়োর সংস্পর্শে এসে তরুণেরা প্রশ্ন করতে শিখে যায়, আর শিখে যায় প্রশ্নের মালা গেঁথে উত্তর খুঁজে পেতেও। মানুষ প্রশ্ন করতে শিখে গেলে সবচেয়ে বিপদে পড়ে যায় দেবতারা, ঈশ্বরেরা। কিংবা তাদের পৃথিবী প্রতিনিধি শাসকেরা। আর তাই প্রচলিত দেব দেবীর অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে ফেলার অভিযোগে তার হাতে তুলে দেয়া হয় বিষের পেয়ালা।
সক্রেটিসের দেহ নিথর হয়ে গেলেই তার প্রশ্নগুলো হারিয়ে যায় না। তার অগুণতি শিষ্যের, বিশেষত প্লেটোর ডায়লগের মাধ্যমে সক্রেটিসের প্রশ্নগুলো এই দুই হাজার বছর পরেও টিকে থাকে।
৩
প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটল ভাবতেন শুধু ভেবে ভেবেই বিজ্ঞানের সব রহস্যের উত্তর বের করে ফেলা সম্ভব, তার জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা তথ্য প্রমাণের ঝক্কিতে যাওয়ার কোন দরকার নেই। সমসাময়িক দর্শনের হর্তাকর্তা অ্যারিস্টটলের চিন্তাভাবনার মানবীয় ভুল তাই পরীক্ষা নিরীক্ষার ঊর্ধে থেকে বিশ্বজগতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রশ্নগুলোর নিদারুণ ভুল উত্তর হিসেবে রয়ে যায় পশ্চিমা দর্শনে। আর এই ভুল জ্ঞান খ্রিস্ট ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্বে ঢুকে গেলে মানবীয় ভুল পরিণত হয় ঈশ্বরের বাণীতে।
গ্যালিলিও তার গ্যালিলিওস্কোপে চোখ রেখে বুঝে যান সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে না, আর ক্যাথলিক চার্চের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সেটা প্রকাশও করে ফেলেন। অ্যারিস্টটলের মানবীয় ভুলকে ঈশ্বরের বাণী মনে করে উন্মত্ত মূর্খের দল গ্যালিলিওকে সীসার প্রকোষ্ঠে বন্দী করে বৃদ্ধ বয়সে তার মুখ দিয়ে জবানবন্দী আদায় করিয়ে ছাড়ে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে না। একই রকম তত্ত্ব দেয়ার অপরাধে কোপার্নিকাসকে ইউরোপ জুড়ে ক্যাথলিক চার্চের তাড়া খেয়ে বেড়াতে হয়, আর জিওর্দানো ব্রুনোকে পুড়ে মরতে হয় আগুনে।
ব্রুনো পুড়ে মরলেও, তার তত্ত্ব মরে না। আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বৃদ্ধ গ্যালিলিওকে জোর করে তার তত্ত্বকে অস্বীকার করতে বাধ্য করলেও পৃথিবী আজো সূর্যের চারদিকেই ঘুরে চলছে।
৪
দার্শনিক হাইপেশিয়া আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরীতে বিজ্ঞান চর্চা করতেন, বিজ্ঞান শিক্ষা দিতেন। তার শিষ্যদের মাঝে যেমন ছিল প্যাগান তেমনি ছিল খ্রিস্টান। একেতো নারী, তার উপর বিজ্ঞান চর্চা করছেন, কাজ করছেন গ্রহ নক্ষত্রের গতিপথ নিয়ে। সদ্যযুবক খ্রিস্ট ধর্ম তাই এই মহিহশীর কর্মক্ষেত্র আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরীতে আগুন ধরিয়ে দেয়, পুড়িয়ে দেয় তার সংগ্রহের সব বই আর তার নিজস্ব কাজের সব কাগজপত্র। তারপর নৃশংস ভাবে হত্যা করে হাইপেশিয়াকে।
হাইপেশিয়ার অসমাপ্ত কাজ অনেকটা হারিয়েই যায়। কিন্তু তার কাজগুলো অসমাপ্ত থাকে না, গ্যালিলিও, কেপলার, ব্রুনোর হাতে পৃথিবী আর সূর্যের সম্পর্কের একটা সত্য বিবরণ ঠিকই বেরিয়ে আসে। ধর্মগুলোর প্রাণপন চেষ্টার পরেও নারীরা ধীরে হলেও জ্ঞানবিজ্ঞানের সব শাখায় এগিয়ে আসছে।
৫
হাতেগোনা কিছু নাস্তিক আছে বাংলাদেশে। ছোটবেলা থেকেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্কুলের মাধ্যমেই ধর্ম দিয়ে মগজ ভর্তি করে দেয়ার পরেও কিছু ছেলেমেয়ে দলছুট হয়ে নাস্তিক হয়ে যায়। তারা অসংগতি দেখলে প্রশ্ন করে, কেউ ঠান্ডা মাথায় যুক্তি দিয়ে সেই অসংগতি ধরিয়ে দিতে চেষ্টা করে, কেউ বা হাস্যরস আর ব্যাঙ্গকৌতুকের মাধ্যমে সেই অসংগতিগুলো ধরিয়ে দেয়। প্রশ্ন করার স্বভাব মানুষ হিসাবে আমাদের উত্তরাধিকার। অন্য লাখ খানেক ব্লগারের সাথে তারাও বাংলা ব্লগে লিখে। তারা যে শুধু নাস্তিকতা নিয়েই লিখে তা নয়, সাহিত্য বিজ্ঞান যার যেটা প্রিয় তাই নিয়ে লিখে, বরং অনেকেরই লেখার বিষয় নাস্তিকতাও নয়।
অথচ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সেক্যুলার বাংলাদেশে এই প্রশ্ন করার অপরাধেই মাঝে মাঝেই কেউ বাড়ি ফেরার পথে ধারালো অস্ত্রের কোপ খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে, কেউ প্রাণ হারায়, কেউ হুমায়ুন আজাদের মত অর্ধমৃত হয়ে যায়। হুমায়ুন আজাদ মরে গেলেও তার বইগুলো দিনে দিনে আরো শক্তিশালী হতে থাকে, তার লেখা এই ঝঞ্ঝামুখর বাংলাদেশে আরো বেশি করে প্রাসঙ্গিক হতে থাকে।
৬
বাংলাদেশের নাস্তিক ব্লগারদের নিয়ে সরকারের এত দিন কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। সম্প্রতি অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আর ব্লগারদের আন্দোলনে শাহবাগের গণজাগরণ থেকে রাজাকারদের ফাঁসি আর জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করার দাবী উঠার পরেই হঠাৎ করে নাস্তিকেরা ধর্মীয় মৌলবাদী আর সরকারের রোষানলে পড়ে গেছে। তাদের অপরাধ বাংলাদেশের আস্তিক নাস্তিক সব তরুণের সাথে গলা মিলিয়ে জামায়াত নিষিদ্ধ আর যুদ্ধাপরাধের ঠিকঠাক বিচারের দাবী করা।
ধর্মীয় মৌলবাদীদের এই গোস্যার কারণ সহজেই বুঝা যায়, নানা নামে থাকলেও তারা যে আসলে ছদ্মবেশে জামায়াতে ইসলামী সেটা নানা ঘটনা থেকেই পরিস্কার। যেটা বুঝা দুস্কর, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগ কেন এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ধর্মীয় মৌলবাদীদের সাথে তাল মিলিয়ে নাস্তিক/মুক্তমনা ব্লগারদের উপর এই দমন নিপীড়ন শুরু করেছে! জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে নিজেদের মাত্রাতিরিক্ত ধার্মিক প্রমাণ করতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ সরকার যেন ভুলে না যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে হেঁটে তারা শুধু এগিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির দিকেই। ভবিষ্যত বাংলাদেশ শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী জামায়াতে ইসলামীকেই ঘৃণাভরে মনে রাখবে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বেঈমানী করা আওয়ামী লীগকেও যথোপযুক্ত ঘৃণার সাথে মনে রাখবে।
আজকে হয়ত দেশকে চল্লিশ বছর পিছিয়ে দিচ্ছেন, তবু আশা রাখি, আমার জীবৎকালে না হলেও এক দিন এই দেশ আবার মানুষের হবে।
মন্তব্য
আজ সারাদিন ধরে এইরকম কথারা মাথার মধ্যে ভিড় করে আসছিল। আপনার লেখায় সব এক জায়গায় পেয়ে গেলাম। খুব ভাল লাগল।
ধন্যবাদ আপনাকে।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
এসব কী বল? আমার মত কলেমা পড়ে লাইনে চলে আস।
*শিরোনামটা 'পোড়ে' না হলে ভাল হত?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আমার লাইন হয়ে যায় আঁকাবাঁকা। ঠিক করে দিলাম।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
--- ডুপ্লি ---
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
বাংলাদেশের চিন্তাশীলদের জন্যে অতি জরুরি হয়ে পড়েছে ধর্মের কারসাজির ব্যাপারে সচেতন হবার পাশাপাশি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বুঝে ওঠা। তাহলে আওয়ামী লীগ কেনো এমন করছে তা বুঝতে সমস্যা হবার কথা না। স্কেপটিক তো কোনো পক্ষেরই ‘ঘোষিত’ অবস্থানকে বিশ্বাস করবে না, তাদের ইনসেন্টিভ, তার ইনটেনশান বোঝার েচষ্টা করবে।
কয়দিন আগেই অনেক রাষ্ট্র একসাথে মিলে মিটিং করেছে কীভাবে অনলাইন অ্যাক্টিভিটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটা স্রেফ বিদেশ ঘুরে আসা নয়। রাষ্ট্র ব্যবস্থা আটঘাট বেঁধেই নেমেছে সর্বত্র অনলাইন অ্যাক্টিভিটি নিয়ন্ত্রণে। এর ক্ষমতা গত বেশ ক বছরে বেশ ভালো বোঝা হয়ে গেছে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলোর।
সরকারের এবারের উদ্দেশ্য বিটিআরসির ব্লগ নিয়ন্ত্রণ সেলটা কার্যকর করা। মূল উদ্দেশ্য এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে জনমত যাতে বেড়াছেড়াভাবে বেড়ে না যায়। কিন্তু একেবারে নগ্নভাবে শুধু সেই উদ্দেশ্যে একে ব্যবহার করলে এই নিয়ন্ত্রণ সেল তার গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। একে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে এর পক্ষে জনমত প্রয়োজন। তো অনলাইন অ্যাক্টিভিটি নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সবচেয়ে উচ্চরব কিন্তু ধর্মবাদীরাই। তারা বহু আগে থেকেই বিটিআরসির সালিশীকে তাল দিয়ে আসছিলো। নাস্তিকরা অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ছিলো। এবার ধর্মবাদীদের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠির কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করছে। নাস্তিকদের (বাকস্বাধীনতার) পক্ষে জনমত অত্যল্প সেটা বলাই বাহুল্য। একেবারে ক্ষুদ্র একটা গোষ্ঠি, যাদের পক্ষে বলার কেউই নেই, তাদের দিয়ে নিয়ন্ত্রণ শুরু করাটাই সবচেয়ে কার্যকর নয় কি?
একসময়ে নাস্তিকদের মাঝেও দেখবেন এই নিয়ন্ত্রণ সেলের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়ে যেতে পারে। আমরা অনলাইনের হুমকি ধামকি বাটপারি খবরদারি এইসব নিজেরা অনলাইনেই মোকাবিলা করতাম। এখন বিরুদ্ধ মতধারীকে সহজে সাইজ করার এই সেল থাকায় আমাদেরই অনেকে দেখবেন ওই সেলের কাছেই অভিযোগ ঠুকে দিতে দৌড়ে দৌড়ে যাবে। নাস্তিক অভিযোগ করবে ছাগুদের বিরুদ্ধে, ছাগু অভিযোগ করবে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে (মোটাদাগে বলছি)। ক্লাসিক বানরের পিঠাভাগ কেইস। ছাগুরা আশায় থাকবে এই সেল সবসময়ে তাদের পক্ষেই কাজ করবে, নাস্তিকরাও তা-ই আশা করবে। ব্লগ নিয়ন্ত্রণ সেলের গ্রহণযোগ্যতা এইভাবে সর্বমহলেই প্রতিষ্ঠা পাবে। প্রতিষ্ঠিত এই সেলকে সরকার তখন মাঝে মাঝে ব্যবহার করবে একান্ত নিজের প্রয়োজন। প্রায়ই এতো এতো নিয়ন্ত্রণের ঘটনা ঘটবে যে একটা দুটো এমন কেইস ধরা কঠিন হবে।
এটা একেবারে ছককষে কেউ করছে বা করবে এমন ভাবা জরুরি নয়। এটা ক্ষমতার চরিত্রের অংশ। এর বিস্তার ও বিকাশের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মানুষ দীর্ঘসময় ধরে এইধরনের সেলের অস্তিত্বের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করলে সরকার বেশিদিন এই পন্থা চালাবে না, অন্যপথ দেখবে। তাতে লাভ বৈ ক্ষতি হবে না। তবে আমরা নিজেরাই এটা ব্যবহার করা শুরু করে দিলে, সময় মতো এটা আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার তো হবেই।
এনলাইটেনমেন্টের চিন্তকদের কাজ নিয়ে পড়তে পারেন। ওনারা পুরোহিত ও শাসক উভয়ের ব্যাপারে স্কেপটিক ছিলেন। ধর্মের ব্যাপারে যে মোহমুক্ত, শাসনব্যবস্থার কল্যাণময়তার ব্যাপারে মোহমুক্তি তার জন্যে সহজ। ভুলত্রুটি তারা সহজে নির্ণয় করতে পারে। ছাগুদের ভোলানো এর চেয়ে সহজ। ফলে নাস্তিক ধরে ছাগুদের ভোলানো হচ্ছে এমনটাও ভাবা যেতে পারে।
"কয়দিন আগেই অনেক রাষ্ট্র একসাথে মিলে মিটিং করেছে কীভাবে অনলাইন অ্যাক্টিভিটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।" -- জানতাম না তো, কোথায়, কী ফোরামে?
ব্লগ নিয়ন্ত্রণের সরকারী চিন্তা আগে থেকেই আছে মানছি, তবে কেন জানি একে ব্লগ নিয়ন্ত্রণের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার চেয়ে ইলেকশনের আগে আগে আওয়ামী লীগের মৌলবাদী ভোট প্যানিক বলেই মনে হচ্ছে।
"এনলাইটেনমেন্টের চিন্তকদের কাজ নিয়ে পড়তে পারেন।" -- আপনার কোন সাজেশান আছে (বই বা ব্লগ)?
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
গুগল তো এটা নিয়ে সবাইকে মেইলও দিয়েছিলো। রুদ্ধদার বৈঠক ছিলো।
Google attacks UN's internet treaty conference
Controversial UN Internet Treaty Approved After United States Walks Out
মানছি, ইনসেনটিভের কথা ভাবলে সেটাই জরুরি। তবে লংটার্ম লাভের কথা ভাবার লোকেরাও আছে এখানে। যেমন দায়িত্বশীল ব্লগের পক্ষের ব্যবসায়ীরা। এইরকম একটা সেলের অস্তিত্ব তাদের জন্যে সুবিধাজনক। অনলাইন মিডিয়া আগামীদিনের বিরাট ব্যবসার উৎস। কম্পিটিশানকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে মনোপলি ক্ষমতার ব্যবহার করা ছাড়া কর্পোরেট মিডিয়ারও বা উপায় কী? পাঁচ লক্ষ টাকার লাইসেন্স আরোপে সেটা অনেকটাই করা গেছে। এটা আরেকটা পেরেক। ইন্টারনেট হলো স্পন্টেনিয়াস অর্ডারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ, যেটা কেউ ডিজাইন করে না, যেখানে কারও একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা কাজ করে না। শাসন ব্যবস্থা এখানে অচল। ব্যবসাও এখানে প্রকৃতই অবাধ (laissez faire)। এখানে বাংলানিউজ২৪ও আছে, নোয়াখালির স্থানীয় খবরের ওয়েবসাইটও আছে। এটা শাসন ব্যবস্থার অনুকূল নয়। ফলে এখানে হস্তক্ষেপ (intervention) অবধারিত। আর ব্যবসায় intervention করা হয় কর্পোরেটদের সুবিধা করে দেয়ার জন্যেই। যদিও লোকে ভাবে যে সরকার ব্যবসায় intervention করে কর্পোরেটদের একহাত নিতে।
লেখকের নাম বললে জন লক, ভলতেয়ার, চার্লস ব্যারন দে মনটেস্কু, ডেভিড হিউম, থমাস জেফারসন, থমাস পেইন। এদের লেখাংশ পড়তে মনোযোগ দিলে ক্ষতি হবে না।
লেখার কথা বললে ছোট লেখা দিয়ে শুরু করতে বলবো।
যেমন, মুক্তমনার রৌরব থমাস পেইনের কমন সেন্স-এর একটি অংশ অনুবাদ করেছিলেন। কাজের হবে।
ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট বা স্টেট চার্চ সেপারেশানের উপরে থমাস জেফারসনের এই ছোট্ট নোটটা অবশ্য পাঠ্য। একটু কঠিন হতে পারে বিভিন্ন ইতিহাসের কারণে, কিন্তু স্টেট চার্চ সেপারেশনের মূল উদ্দেশ্য, এর পেছনের চেতনাটা এখানে পরিষ্কার। ধর্মের পাশাপাশি রাষ্ট্রের উপরেও সমান স্কেপটিসিজম থেকে এই সেপারেশন। এটা শুধু ধর্মের হাত থেকে রাষ্ট্রকে বাঁচানোর জন্যে নয়, রাষ্ট্রের হাত থেকেও ধর্মকে বাঁচানোর জন্যে। ধর্ম ক্ষমতার মনোপলির ব্যবহারের ফলে হেরাসিকে পানিশ করতে পারতো। ধর্মের দাঁত নখ ভেঙে গেলো সেপারেশানের কারণে। বহু ভিন্ন ধারা উপধারার বর্ধনে ধর্মের মুক্তি ঘটলো। ধর্ম সেখানে এখন মূলত অসহিংস ধারণা। এটাই তো ধর্মের মুক্তি নাকি?
ফলে একটু ধৈর্য্য নিয়ে এটা পড়া যেতে পারে এনলাইটেনমেন্টের সেক্যুলারিজমের প্রকৃত মর্মটা উপলব্ধি করার জন্য। কয়েকটা কথা কোট করি -
থমাস জেফারসনের একটা বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করি -
আপনার পাঠ শুভ হোক।
কোন ধর্মের আওতার ভিতরে থেকে আদৌ কি Enlightenment সম্ভব? মুসলমানদের মধ্যে Enlightenment হয়নি, কারণ ইসলামী ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে যেয়ে সংস্কারের কথা কেউ বলতে পারেন নি। আর আমরা তো এখনও হিজরি সন গণনা করি; এটা ১৪৩৪ হিজরি। Enlightenment-এর জন্য আরও কয়েকশ' বছর অপেক্ষা করা লাগবে।
কেবল ধর্মকে দুষে লাভ নেই। পশ্চিমে স্টেট চার্চ সেপারেশানের আগ পর্যন্ত হেরাটিকদের পোড়ানো গলা কাটা চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে সেটেলাররা শাসনব্যবস্থার ব্যাপারে প্রচণ্ড সংশয়ের কারণে এমন কি ধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও ধর্মের নামে শাসকের বলপ্রয়োগের ব্যাপারে অনীহ হতে পেরেছিলো সহজে। কিন্তু অনেকদিন এক জায়গায় সেটল্ড জাতিগোষ্ঠির মধ্যে সেটা আরেকটু কঠিন, কারণ তাদের মধ্যে গোষ্ঠিপ্রবণতা প্রবল। এস্টাবলিশমেন্টের ব্যাপারে তাদের দীর্ঘ ঐতিহাসিক আস্থা থাকে। এনলাইটেনমেন্ট পশ্চিমে প্রয়োগ সহজ হয়েছিলো অর্থনীতির বিকাশের কারণে, শিল্প বিপ্লবের কারণে।
ফলে এখানে অনেক প্যারামিটার আছে। ইসলামের বয়স একটা ফ্যাক্টর। আরও ফ্যাক্ট হলো আমাদের শাসকদের মনমানসিকতা, আমাদের জনগোষ্ঠির মনমানসিকতা, আমাদের অর্থনৈতিক বিকাশ। ব্যবসা ও অর্থনীতির ক্ষমতা আছে স্বাভাবিকভাবে জনগোষ্ঠির পরিবর্তন সাধনের। দেশের অনেক শহরে বিশবছর আগের আর এখনের মেয়েদের পোশাক ও চলাফেরার স্বাধীনতার কথা চিন্তা করুন। এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানোর যুগ প্রায় পার হয়ে এসেছে। কিন্তু অতোটা বিকশিত হয় নি যে জনগোষ্ঠি বাকস্বাধীনতার মতো ব্যাপারটা উপলব্ধি করবে। কথার কারণে যে শরীরে আঘাত করা যায় না তেমনটা উপলব্ধি করে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার ধান্ধায় ধর্মান্ধ মুসলমানও তার হোটেলে গণেশের মূর্তি বসায়। বৃহদাংশ জনগোষ্ঠির কাছে যখন ব্যবসার ধান্ধাটা মিছিলে যাওয়ার চেয়ে সবসময়েই বেশি লাভজনক হবে, অর্থনীতি যখন এই পরিমাণ ধান্ধা সরবরাহ করার ক্ষমতা রাখবে, ধর্ম নিয়ে রাজপথের রাজনীতির প্রকোপ কমবে। ঘরে বসে দুটো গালি দিয়ে আবার কাজে মনোযোগ দিবে। কোনো সরকার তখন এ নিয়ে রাজনীতি করে এখনের মতো ইমপ্যাক্ট পাবে না।
And yet it moves
সেই।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
সক্রেটিসের দেহ নিথর হয়ে গেলেই তার প্রশ্নগুলো হারিয়ে যায় না। তার অগুণতি শিষ্যের, বিশেষত প্লেটোর ডায়লগের মাধ্যমে সক্রেটিসের প্রশ্নগুলো এই দুই হাজার বছর পরেও টিকে থাকে।
সত্যি বলছি ইদানিং পত্রিকা পড়লেই গালি দিতে ইচ্ছা করে। সমস্যা হলো জীবনে কখন তেমন করে গালি দেই নাই বলে গালিও খুঁজে পাই না। আপনি যে মাথা ঠান্ডা রেখে এত স্পষ্ট করে মনের ভাব প্রকাশ করেছেন এইটা একটা বিশাল ব্যাপার।
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
নতুন মন্তব্য করুন