ত্রাক কথিত ম্যাগ্রোগিয়া সুসমাচার

সজল এর ছবি
লিখেছেন সজল (তারিখ: শুক্র, ১১/০৪/২০১৪ - ১:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভূমিকা
মহামতি জাতকের মতই ইতিহাসের নানা বাঁকে উদিত হয়েছেন মহামতি ম্যাগ্রোগিয়া। ইতিহাসের প্রেমিক মহামতি ত্রাক তাঁর সেই সব কীর্তি লিখে রেখেছেন ছাগচর্মে। সেই ছাগচর্মেগ্রন্থিত ইতিহাসের অসমাপ্ত চুম্বকাংশ এখানে।

জেনেসিস
ঈশ্বর অ্যাডামের দুষ্ট ছবি দেখার বদভ্যাস দূর করার জন্য ঈভকে বানালেন। ঈভ আর অ্যাডামের মাঝে ভালোবাসা হবে, স্বর্গের টিভিরূমে আর কোন দুষ্ট ছবি চলবে না এই ভেবে ঈশ্বর সুখনিদ্রায় মগ্ন। ইডেন গার্ডেনে বেড়াতে গেলেন ফেরেশতা ম্যাগ্রোগিয়া। তার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে ঘর ছেড়ে পালালেন ঈভ। লজ্জায় সুইসাইড করলেন অ্যাডাম। ম্যাগ্রোগিয়া নতুন নাম নিলেন অ্যাডাম। পৃথিবীর বুকে স্বর্গ নামালেন অ্যাডাম নামধারী ম্যাগ্রোগিয়া আর ঈভ।

ইভোলিউশন
বুকের আর লেজের কাছের পাখনাগুলো বেশ শক্ত লাগে ম্যাগ্রোগিয়ার। শুরুর অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতেই ব্যাপারটার সুবিধাও বুঝে যান তিনি। এক মন্থর সন্ধ্যায় মসৃণ পেটির এক মাছিনিকে পটিয়ে নিজের গর্তে নিয়ে যাবেন এমন সময় কোথা থেকে এক সুশ্রী চেহারার মাছ এসে হাজির। ম্যাগ্রোগিয়া তার লেজের কাছে শক্ত পাখনাটাতে সব শক্তি জোগাড় করে সজোড়ে হাঁকান প্রতিদ্বন্দী মাছের তলপেটিতে। সেই শুরু, তারপর একের পর এক মাছিনিকে পটিয়ে নিজের ডেরায় তুলেন ম্যাগ্রোগিয়া, বাকি মাছেরা সাহস করে তার সাথে আর প্রতিদ্বন্দিতা করতে আসে না। তবে তলে তলে মাছেরা জোট বাঁধতে থাকে ম্যাগ্রোগিয়ার বিরুদ্ধে। প্রিয়তমা এক মাছিনীর কল্যাণে সেই খবর একদিন জেনে যান ম্যাগ্রোগিয়া। তারপর এক বিষণ্ণ সন্ধ্যায় চেনা পানির পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে চারপায়ে হেঁটে ডাঙায় উঠে আসেন ম্যাগ্রোগিয়া।

প্যানজিয়া
৩০০ মিলিয়ন বছর আগের কথা। সত্তর ভাগ পানির উপর ভাসমান বিশাল একখন্ড স্থলভাগের উপর শুয়ে রোদ পোহাচ্ছেন ম্যাগ্রোগিয়া। সূর্যের আলোতে এই স্থলভাগটা চকমক করছে। প্রচণ্ড মুগ্ধ হলেন ম্যাগ্রোগিয়া, ভালোবেসে এই ভুখন্ডের নাম রাখলেন নিজের নামের সাথে মিল রেখে, প্যানগিয়া। ভবিষ্যতের অকাটমূর্খ বিজ্ঞানীরা একে ভুল উচ্চারণে ডাকবে প্যানজিয়া। দিনের পর দিন একাকিত্ব সইতে না পেরে প্রচণ্ড ক্ষোভে ম্যাগ্রোগিয়া প্যানজিয়াকে একদিন টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেলতে চাইবেন, শুরু হবে কন্টিনেন্টাল ড্রিফট

গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের জন্মকথা
ম্যাগ্রোগিয়া তার সূচনা করা কন্টিনেন্টাল ড্রিফটের একটা পরিণতি দেখার জন্য অপেক্ষা করলেন প্রায় ২৮০ মিলিয়ন বছর। তারপর ঘুরে ঘুরে মহাদেশগুলো দেখতে লাগলেন। উত্তর অ্যামেরিকার কলোরাডোতে এসে চারদিকে শুকনো জমি দেখে ভবিষ্যতের প্রাণীদের কথা ভেবে তার বুকটা হু হু করে উঠলো। ম্যাগ্রোগিয়া ঠিক করলেন এখানে একটা খাল খনন করতে হবে। একা হাতে খাল খনন করলেন তিনি। সেই খালের বিশালত্ব দেখে ভবিষ্যতের মানুষ একে ডাকে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।

ডাইনোসরের দুর্মতি
নিজের নামের ভূখন্ড প্যানগিয়ার বুকে একটু ঘাসের চাদর বিছিয়ে গলফ খেলবেন, এটুকুই শুধু চেয়েছিলেন ম্যাগ্রোগিয়া। কিন্তু তা হতে দিলোনা দুষ্ট ডায়নোসরের দল। হয়ত গলফ খেলে ক্লান্ত হয়ে একটা গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন ম্যাগ্রোগিয়া, হঠাৎ করে ছায়াপ্রদ সেই গাছ সমূলে উপরে দুপুরের খাওয়া সেরে নিলো টাইটানোসরাস। সবুজ ঘাসের বুকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হোলে বলটা ফেলবেন শেষ শটে, এমন সময় ঘাসের বুকে হুটোপুটি করে চষা জমি বানিয়ে দিলো টির‍্যানোসোরাস পরিবার। ত্যাক্ত বিরক্ত ম্যাগ্রোগিয়া তাই একদিন জুপিটারের টানে পৃথিবী কাছে ঘেষে দূরে চলে যাওয়া একটা প্রমাণ আকারের উল্কাকে পৃথিবীর বুকে টেনে আনলেন। কয়েক হাজার বছর পর থেকে ম্যাগ্রোগিয়া'র গলফ খেলায় আর কেউ বাঁধা দিতে পারলো না।


মন্তব্য

খেকশিয়াল এর ছবি

হাহাহাহা মিজান, পিষে ফ্যালো

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

সজল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ঈশ্বর অ্যাডামের দুষ্ট ছবি দেখার বদভ্যাস দূর করার জন্য ঈভকে বানালেন? নাকি ঈশ্বর নিজের দুষ্টছবি দেখার লালসা পূরণ করার জন্য ঈভকে বানালেন?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সজল এর ছবি

ওরে নাস্তিক, ঈশ্বরের নামে মন্দ কথা বইল না। এমনোতো হইতে পারে ম্যাগ্রোগিয়াই ঈশ্বর?

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হো হো হো
প্রথম ইতিহাস আমার শেষ ইতিহাস, জীবন ইতিহাস আমার মরণ ইতিহাস

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সজল এর ছবি

ইতিহাসকে ভালোবাসা করে ছেড়ে দিছে মহামতি ত্রাক

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

নির্ঝর অলয় এর ছবি

দুর্দান্ত সজলদা! হো হো হো

সজল এর ছবি

দেঁতো হাসি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

সবজান্তা এর ছবি

হাহাহাহা... চমৎকার সুসমাচার। ইভোলিউশনের প্যারাটা পড়ে সবচে বেশি মজা লাগলো। আরো চলবে তো, নাকি?

সজল এর ছবি

ত্রাকেরতো থামাথামি'র নাম নাই, সুসমাচারো আরো চলবে মনে হয় দেঁতো হাসি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

দীনহিন এর ছবি

চলুক

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

সজল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক, আগ্রহভরে পড়ছি। হাসি

সজল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

বাহ! পৃথিবীর জন্মকথা এতদিন কেউ বলেনি কেন!! পরের পর্ব আসবে নিশ্চয়ই!!

____________________________

সজল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আশা রাখি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

তাহসিন রেজা এর ছবি

দারুণ, পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

সজল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।