শিকারী কাপুরুষ

সজল এর ছবি
লিখেছেন সজল (তারিখ: সোম, ০২/০৩/২০১৫ - ১২:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শিকারের শখ অনেকের, কিন্তু সাহস হাতে গোণা কয়েকজনের। যদিও শিকারের আত্মরক্ষার তেমন কোন উপায় নেই, তবুও বন্দুকের রিকয়েল কিংবা গুলির আলগা ফুলকি ছুটে পেলব ত্বকে দাগ বসিয়ে দিতে পারে। কিংবা কোমল মনের কেউ নিষ্ঠুর বলে ভর্ৎসনা করতে পারে। ইত্যাদি নানা ভয়ে বেশিরভাগ শিকারপিয়াসু দূরে দাঁড়িয়ে অন্যের শিকার দেখে ভিকারিয়াস আনন্দ পায়। তবে কেউ কেউ শিকারের দেহ নিথর হয়ে এলে লোকলজ্জা ও অস্ত্রের ভয় কাটিয়ে উঠে। তারাও অংশ নিতে চায় শিকারে। মৃত শিকার দৌড়ে পালাবে না এইটুকু নিশ্চয়তা তাদের রক্তের গতি দ্রুত করে দেয়। তারা হাতে তুলে নেয় বর্শার মত তুলনামূলক নিরাপদ কোন অস্ত্র। তারপর নিথর শিকারের দেহে গায়ের সবটুকু জোর দিয়ে, সবটুকু আক্রোশ ঢেলে দিয়ে বসিয়ে দেয় সেটা গুহামানবের উন্মত্ততায়।

শিকারের মৃতদেহ হয়ত অস্ত্রের জোরে কিছুটা হলেও নড়ে উঠে, আর বিভৎস আত্মতৃপ্তির রেখা ছড়িয়ে পড়ে তাদের এ কান থেকে ও কানে। কেউ কেউ তার মগজের চেয়ে লাখগুণ শক্তিশালী স্মার্টফোন বের করে সময়ে বিলীন হয়ে যাওয়া অণ্ডকোষের কাছের পকেট থেকে। তারপর শিকারের উপর ডান না বা পা তুলবে সে নিয়ে কিছুক্ষণ দ্বিধায় ভুগে ক্রমান্বয়ে দুই পা তুলেই একটার পর একটা সেলফি তুলে বিচার করে কোনটা লাইক বেশি টানবে। তাতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে শিকারের লাশটাকে পা দিয়ে উলটে অন্যভাবে সাজিয়ে তারপরে আবারো চলে পুরো সেলফি তুলার প্রক্রিয়া। রিগর মর্টিসের জন্য খুব তাড়াতাড়ি করেই ছবি তুলতে হয়, তা নাহলে পছন্দের শট পাওয়া যায় না।

এই ঘাতকদের সবাই শুধু নিজের মনের আনন্দেই মৃতদেহ শিকার করে তা না। কেউ কেউ আলফা মেইল শিকারীর নজরে পড়ার দুর্দম্য আকাঙ্খায়, মূল শিকারীর চেয়েও নিজেকে হিংস্র দেখানোর প্রত্যাশায় এই উৎসবে অংশ নেয়। তারা ইতোমধ্যে মৃত শিকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ ঘোষণা করে। ধারালো অস্ত্রে ভয় লাগলে তারা শিকারের গায়ের হাড় খুলে সেটা দিয়েই তাকে আবার মারার চেষ্টা চালায়।

কেউ কেউ হান্টার-হান্টেড সোসাইটিতে হান্টেড হতে না চেয়ে আলফা হান্টারের গুডবুকে থাকার জন্য মৃত শিকারে অংশ নেয়।

কেউ ক্ষুধার্ত শিকারীর সামনে দিয়ে শিকারের ছুটে যাওয়া ঠিক হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নানা দার্শনিক চিন্তাভাবনার পরে শিকারের ভয়াবহ নৈতিক স্খলনের প্রমাণ পেয়ে দর্শনগত দায় থেকে শিকারের মৃতদেহে কিছু কোপ দিয়ে আসে।

ইট-কাঠের জঙ্গলে বুনো শিকার পাওয়া কঠিন। তাই শিকারীরা নাস্তিক শিকার করে। সিপিগ্যাং হেফাজতের মন জয় করে তাদের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মৃতনাস্তিকের জীবিত বাবা-মা তুলে গালিগালাজ করে মৃত শিকারে অংশ নেয়। অঞ্জন রায় তার সংখ্যালঘুত্বের অপরাধ ঘুচিয়ে তার নিজের শিকার হওয়া ঠেকাতে নাস্তিকদের দেশের সব সমস্যার মূল বলে তুমুল বকে দিয়ে মৃত নাস্তিকের ঠান্ডা রক্তে হাত ভিজিয়ে নেন একটু। পিনাকী ফুকো-দেরিদা আর নানা উচ্চারণ-অসম্ভব নানা দার্শনিকের চিন্তার ধারাবাহিকতা বিচার করে হঠাৎ করে হারিয়ে যান মানুষে মানুষে হানাহানি নিয়ে গভীর চিন্তায় আর সৃষ্টির শুরু থেকে নিহত সবার নাম মনে করতে। দর্শনের সীমা ছাড়িয়ে বিজ্ঞানের মাঠে পৌঁছে তিনি ফতোয়া দেন, শিকারে বাঁধা না দেয়াটা বিজ্ঞানসম্মত।

এই মৃত-শিকারীরা না জানলেও মূল শিকারী জানে, সহজ শিকার ফুরিয়ে এলে শিকারের কোটা পূরণে এরাও কাজে লাগবে বেশ।


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

লেখার শিরোনামটা খানিকটা বিভ্রান্তিকর লাগল। কাপুরুষকে শিকার করা হচ্ছে বলে ভ্রম হতে পারে কারো কারো। শব্দের অবস্থান বদলে দেয়া যেতে পারে হয়ত!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সজল এর ছবি

অবস্থান বদলে দিলাম।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ক্ষোভ থেকে লেখা, বুঝতে পারা যায়! লেখা আসুক।
ক্ষোভ কমে এলে আরো গুছিয়ে সমালোচনার লেখাও আসুক। অভিজিৎ দা'র মৃত্যু অনেক মুখোশ খুলেছে, তালিকা থাকা দরকার।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অন্যকেউ এর ছবি

"....... যেদিন ওরা আমাকে হত্যা করতে এলো, সেদিন কথা বলার জন্য আর কেউ বাকি ছিলো না।"

শাণিত লেখনী চলতে থাকুক। ঐ তো তাদের একমাত্র আতঙ্ক।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেকেই পিঠ বাঁচাচ্ছে। এটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে এখন।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

নিজেকে বাচানোর নিরাপদ অস্ত্র হলো দুই গালে ও মাথায় ধর্মীয় লেবাস পরিধান করা । তাহলে কোন শিকারী আর শিকার করবে না!!!

----------
রাধাকান্ত

এক লহমা এর ছবি

"এই মৃত-শিকারীরা না জানলেও মূল শিকারী জানে, সহজ শিকার ফুরিয়ে এলে শিকারের কোটা পূরণে এরাও কাজে লাগবে বেশ।" - না কি ওরাও জানে, ভালো মতই জানে! আর সেইজন্যই ক্রমাগত সহজ শিকার দাগিয়ে বেড়ায়, যাতে নিজেদের শিকার হয়ে যাওয়াটা আরো কিছুটা ঠেকিয়ে রাখা যায়।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।