প্রোলগ
শেষ বিকেলের সূর্য দিগন্তের দিকে ঝাঁপ দিচ্ছে মাত্র। ঝাঁকের সামনের পাখিটা বাতাসের ঝাপটায় কিছুটা কাবু হয়ে আসে, তাকে স্বস্তি দিতে পিছন থেকে এগিয়ে আসে অন্য একটা পাখি। জায়গাবদল সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই উত্তরের আকাশ থেকে ভেসে আসে এক পশলা আগুনের ঝড়। ভি-শেইপের ঝাঁকটা থেকে টুপটুপ করে ঝলসানো পাখি পড়তে থাকে নীচে। মাটি স্পর্শ করার আগেই তাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য এগিয়ে আসে একটা বিশাল জিভ।
ড্রগনের পায়ের দুইটা বিশাল আঁশের খাঁজে হাত রেখে কোনমতে ঝুলে আছে খালিসি, পাখি পুড়ানো আগুন পুরোটাই বয়ে যায় তার উপর দিয়ে। ড্রাগনব্লাড বলে তার শরীর অক্ষত থেকে গেলেও সোনালি চুল আর ভ্রু কিছুটা কালচে হয়ে আসে। ক্লান্ত, ক্ষুব্ধ খালেসি অনুনয়ের চোখে উপরের দিকে তাকান, তার দৃষ্টি মিলে ড্রগনের পিঠে বসা হাইস্প্যারোর চোখে। ড্রাগনের আগুনে পুড়ে খালেসির পোশাকের কিছুটা পুড়ে গেছে, আর তা দেখে চমকে উঠে "শেইম, শেইম" বিড়বিড় করতে করতে সুদূর দক্ষিণে চোখ সরিয়ে নেয় হাই স্প্যারো।
১
নানা যুদ্ধ-বিবাদের পরে কিংস ল্যান্ডিং-এর সিংহাসনে বসেছেন খালিসি। তিন ড্রাগনের আগুনের মুখে ঝামেলা করে সুবিধা হবে না বুঝতে পেরে খালেসির আনুগত্য স্বীকার করে সুখে শান্তিতে আছে ওয়েস্টেরসের ছোট-বড় নানা হাউজগুলি।
হোয়াইট ওয়াকারদের খবর নেই অনেক দিন, আরিয়ার ভাষায়, “Global warming came for House Walker”। ওয়ালের দুর্ধর্ষ নাইটস ওয়াচ অনেক দিন হলো বাজেটের অভাবে বিলুপ্ত, তারা দলছাড়া হয়ে কোথায় আছে তা জানার কোন উপায় নেই। অনেক যুদ্ধের স্বাক্ষী ওয়ালে "ব্রাভোসের ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট", "রেড প্রিস্টের ওয়াজ সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান" ইত্যাদি কিছু বিক্ষিপ্ত দেয়াল লিখন বাদে আর কোন কর্মকান্ড নেই।
তিন তিনটা তাগড়া ড্রাগন থাকায় এত দিন ধর্মটর্মকে তেমন একটা পাত্তা দিতে হয়নি খালেসিকে। দীর্ঘদিনের শান্তি ড্রাগন সহ সবাইকে কিছুটা নরম করে দিয়েছে বলেই কিনা খালেসি হাই স্প্যারো আকাশপথে উড়িয়ে আনতে তার তিন ড্রাগনসহ রওয়ানা দেন সেপ্ট্রি অফ হাটহাজারিতে। হাই স্প্যারো খুশি হয় বেশ, তবে বিপত্তি বাঁধে বসার আয়োজনে। মেয়ে মানুষের ড্রাগন চালানোর নিষেধ আছে বুক অফ সেভেনে। আবার বেগানা মেয়েমানুষের সাথে এক ড্রাগনে চড়ে আসা সম্ভব নয়। সমাধান হয় ড্রগনের পিঠে চড়ে হাই স্প্যারো আর পায়ে ঝুলে খালিসি ফিরবে কিংস ল্যান্ডিং-এ।
বাকি দুই ড্রাগনের পিঠে চড়ে রওয়ানা দেয় ছোট-বড়-মাঝারি চড়ুইরা।
২
হাইস্প্যারোর কিংস ল্যান্ডিং-এ আসার খবরে চার দিকে সাড়া পড়ে যায়। রাজ্যের গ্র্যান্ড মাইস্টার এরশাইল অনেক অনুনয় বিনয় করে তার শহরে যাত্রাবিরতি নিয়ে যেতে বলে। হাই স্প্যারো তার ডাকে সারা দিলে কঞ্জুস এরশাইল তাদের জন্য শুধু কয়েকটা খিরা কেটে নিয়ে আসে। তিন ড্রাগনের জন্য নিয়ে আসে তিনটা মেঠো ইঁদুর।
নিজের এস্টাবলিশমেন্টের সেরা পারফর্মারদের হাই স্প্যারোর খেদমতের জন্য বরাদ্দ রেখে দেয় লিটল ফিঙ্গার। সেই খবর পেয়ে নব্বুই-ঊর্ধ্ব হাই স্প্যারোর পারফরম্যান্সের নিশ্চয়তা দিতে সাপের মাংসের হালুয়া মাটির হাঁড়িতে ভরে নৌকায় করে কিংস ল্যান্ডিং-এর পথে রওয়ানা দেয় ডর্নিশ প্রিন্সেরা। শান্তির পর থেকেই তারা "মেক লাভ, নট ওয়ার" নীতি বেছে নিয়েছে। সাপের বিষ বর্ষায় মেখে সব সময় যুদ্ধের পাঁয়তারা করে বেড়ানো ডর্নিশরা সাপজাত নানা কবিরাজি ব্যবসায় মন দিয়ে ওয়েস্টেরসের সবচে ধনী রাজ্যে পরিণত হয়েছে।
খালিসি পুরো ল্যানিস্টার হাউজকে কিংস ল্যান্ডিং থেকে ওল্ডটাউন লন্ডনে তাড়িয়ে দিলেও, সেখান থেকে ল্যানিস্টার হাউজের প্রতি অনুগতদের হাই স্প্যারোর যথাযথ যত্নআত্তি করার নির্দেশ ভেসে আসে সার্সির পাঠানো র্যাভেনের পায়ে।
৩
আনসালিডরা সমুদ্র পেরিয়ে ওয়েস্টেরসে এলেও খালিসির কোন যুদ্ধে তাদেরকে কাজে লাগানো যায়নি। সমর প্রশিক্ষণে ভীতিজাগানিয়া আনসালিডরা বাস্তবের যুদ্ধে এসে হঠাৎ করে হারানো গোলকের স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। যুদ্ধ শেষ হলে ফিরে আসে তাদের সাহস। নিজেদের নাম পাল্টে তারা রাখে ইউনুক গ্যাং।
হাই স্প্যারোর আগমন পথে মোতায়েন করা হয় আনসালিডদের গ্যাঙকে। হাইস্প্যারোর আগমনের প্রতিবাদ করতে আসাদের তীব্র গালিগালাজের মুখে ভাগিয়ে দেয় তারা। তাদের গালির সন্ত্রাসে আর চড়ুইদের আগমনের উত্তেজনায় রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে চরম বিশৃঙ্খলা।
৪
শহরে চড়ুই আসে। সেপ্ট অফ বেইলরের বিশাল প্রান্তরে থতমত করে নামে তিন ড্রাগন। চড়ুইদের আগমনে পুরা শহর ভেঙ্গে ভিড় জমেছে সেপ্টের আসে পাশে। বেইলরের বানানো উপাসনালয়ের বিশাল আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে কিংস ল্যান্ডিং এর প্রজাদের দিকে নজর দিয়ে হাই-স্প্যারোর মুখটা হাসিতে ভরে যায়। পাশে থাকা এরশাইল এই হাসির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলে ড্রাগনলাইট।
সেই হাসি কয়েক মূহুর্ত স্থায়ী হয় মাত্র। ভিড়ের মাঝে দক্ষিণের শহর কিংস ল্যান্ডিং-এর অগুনতি নারীর অর্ধাবৃত শরীরের দিকে তার নজর স্থির হয়। ফেলে আসা সেপ্টের আশেপাশের গাছে ঝুলে থাকা অর্ধ-উলঙ্গ তেঁতুল আর বাদুর আর নানা পাখির ঠোটে তাদের নাজেহাল হওয়ার কথা মনে করে হাই স্প্যারোর দৃশ্যত চোখে আর চোখের আড়ালে জিভে জল চলে আসে। নব্বুই-ঊর্ধ্ব হাই স্প্যারোর চোখেমুখে জল এসেই সব থেমে যায় না, তার হৃদকম্প, রক্তচাপ বেড়ে টেড়ে গিয়ে গড অফ ডেথকে চোখের সামনে দেখতে পান হাই স্প্যারো। ছোট চড়ুইরা হঠাৎ গর্জে উঠে, ডেথ অফ গডের মুখের সামনে থেকে হাই স্প্যারোকে ছিনিয়ে নিয়ে তারা বলে "নট টুডে"। হাই স্প্যারোর দুর্দশার জন্য দায়ী খোসাছাড়া তেঁতুলের প্রতি তাদের ক্ষোভ দানা বেঁধে একটা বিস্ফোরক মূহুর্তের জন্ম হয়, নিমেষে অর্ধ-অনাবৃত নারীদের উপর চড়াও হয় পদব্রজ চড়ুইদের ঝাঁক।
চড়ুইদের ধাওয়া খেয়ে তাড়াহুড়া করে কয়েক স্তরের খোসায় ঢুকে মেয়েরা।
এপিলগ
রাতারাতি খোসা বানানোর বায়না পেয়ে হু হু করে বড়লোক হয়ে যায় অনেক দরজি। টাকার সাথে আসে সম্মানের পিয়াসা, তাই অনেক দর্জিই নিজের ভাঙ্গা বাড়ি সারিয়ে নিয়ে নিজেদের হাউজ বলে দাবী করে বসে। কাকতালীয় ভাবে রাতারাতি গজিয়ে উঠা প্রতিটা দর্জি হাউজই নিজেদের সিজিল হিসাবে তেঁতুল বেছে নিলে শুরু হয় দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধ "ওয়ার অফ টেন টেইলর্স" এর।
*খালিসির দুবলা ড্রাগন এর খালিসির সাথে এর কোন মিল নেই
মন্তব্য
হা হা, মজা পাইলাম।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
নতুন মন্তব্য করুন