ঢাকা থেকে আসা তাজিনডংমুখী দলটি বগালেক পৌঁছায় বিকাল সাড়ে তিনটা নাগাদ। ভ্রমণের প্রথম অংশের চিত্র-ব্লগ পাওয়া যাবে এখানে।
বগালেকে অল্পক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আর বগালেকের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে অভিযাত্রীরা পদব্রজে যাত্রা শুরু করে কেওক্রাডং এর পাদদেশে ছোট্ট গ্রাম দার্জিলিং পাড়ার দিকে। গোধূলি পেরিয়ে পাহাড়ে যখন অন্ধকার নেমে এল, তখন তারা দার্জিলিং পাড়ায় পা ফেলল। ছোট্ট বম গ্রাম দার্জিলিং পাড়া। শুনশান নিস্তব্ধতা চারিদিকে। কারবারীর ঘরে রাতের আশ্রয় মিলল, গাইড বেলালের প্রচেষ্টায়। নৈশ ভোজের মেনু ছিল, পাহাড়ী কচুর ঝোল আর লাল চালের ভাত সাথে পাহাড়ী ঝাল মরিচ। সময়টা মধ্য মার্চ হলেও কনকনে ঠান্ডা আর হাড় কাঁপানো বাতাস অবাক করল অভিযাত্রীদের। এ যেন বাংলাদেশের বাইরের কোন জনপদ। রাতে কারবারীর ঘর থেকে পাওয়া কম্বল ব্যবহার না করে উপায় ছিল না।
ভোর হল। সূর্য ওঠার আগেই অভিযাত্রীরা বাক্স-পেঁটরা গুছিয়ে রওনা হল কেওক্রাডং এর দিকে। দার্জিলিং পাড়া থেকে আধঘন্টার পায়ে হাঁটা দুরত্বে দেশের তৃতীয়(বহু দিন প্রথম স্থানের অধিকারী - তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া) সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পা ফেলার আগেই সূর্য উঠে গেল। কেওক্রাডং শিখর জয়ের আনন্দে আনন্দিত অভিযাত্রীদের দীর্ঘ ফটোসেশন চলল এখানে। তারপর উল্টোদিকের পথ বেয়ে তারা পৌঁছে গেল, ম্রো গ্রাম পাসিং পাড়ায়। সকালের চা টা পাসিং পাড়ায়ই হল। সূর্য ততক্ষণে বেশ গনগনে মেজাজে চলে গেছে। চা খেয়ে খোশমেজাজে অভিযাত্রীরা বেরিয়ে পড়ল বাকলাই পাড়ার পথে। চারিদিকে এখন জুমের আগুনে পোড়া পাহাড়। থাইক্যং পাড়ার উপকন্ঠে এসে একটা চমৎকার বিশ্রামাগার মিলল। পাহাড়ের খাঁজে স্যাঁতসেঁতে সবুজ ছাউনি। শরীর ও মনকে চাঙা করে আবার পথচলা আরম্ভ হল। এবার ক্যাপিটাল হিল নামের এক ভয়াল দর্শন পাহাড় অতিক্রম করতে হল। এক-দেড় ফুট চওড়া পায়ে চলা পথ ঊর্ধমুখে উঠে গেছে নির্বিকার ভাবে। একপাশে হাজারফুটি খাদ আর থেকে থেকে জুমে পোড়া পাহাড়ে তখনো জ্বলে থাকা আগুনের অসহ্য উত্তাপ। সবমিলিয়ে খুব উপভোগ্য ছিল না হাঁটাটা। উপরন্তু পানির অভাব দলের সবার বোধশক্তিকে নিস্তেজ করে দিচ্ছিল। ঘন্টা দুয়েক হাঁটার পর সেই নরক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি মিলল। এবার ঘন বনের ভেতর দিয়ে পথ। বন পেরোতেই অদূরে আকাশের গায়ে গর্বিত তাজিনডং শৃংগের দেখা মিলল। তার সামান্য নিচেই পাহাড়ের কোলে দেখা যাচ্ছিল অভিযাত্রীদের দ্বিতীয় দিনের গন্তব্য - বাকলাই পাড়া।
১ - পরিশ্রান্ত অভিযাত্রীরা দার্জিলিং পাড়ায়
২ - দার্জিলিংপাড়ায় রাতের আশ্রয় - কারবারীর ঘরে
৩ - কেওক্রাডং চূড়ায় সূর্যোদয়ের পর
৪ - কেওক্রাডং চূড়ায় ছাউনি!
৫ - কেওক্রাডং জয়ের আনন্দ
৬ - দার্জিলিং পাড়া - কেওক্রাডং চূড়া থেকে
৭ - পাসিং পাড়ায় ম্রো কুটির
৮ - জুমের আগুনে ঝলসানো পাহাড়
৯ - বিশ্রামরত দু'জন জুমিয়া চাষী
১০ - পাহাড়ের কোলে বিশ্রামাগার
১১ - যাত্রা বিরতি
১২ - ক্যাপিটাল হিল পেরোনোর পর বিধ্বস্ত অভিযাত্রীদল
১৩ - বাকলাই পাড়ার উপকন্ঠে - দূরে তাজিনডং
(চলবে...)
মন্তব্য
৬ ও ৮ নম্বর ছবি দুটো কেন যেন বেশি ভালো লাগলো।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধন্যবাদ রণদা। আশা করি পরবর্তী পর্বেও ভালো লাগার মত কিছু ছবি পাবেন।
খেতে কেমন, লিখলেন না যে! আন্দাজও করতে পারছি না
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
খেতে দূর্দান্ত ছিল। শুধু লবণ ছিটানো ভাতও তখন অমৃতের মত লাগার কথা। সেখানে তরকারীর সাথে ভাত, সাথে মরিচ - রীতিমত রাজভোগ।
আমারও খুব যাবার ইচ্ছা পায়ে হেটে তাজিনডং। জানিনা কবে হবে?
আপনার লেখা দারুণ হচ্ছে ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
অনেক ধন্যবাদ কীর্তিনাশা ভাই।
তাজিনডং যাবার জন্যে ইচ্ছা থাকাটাই যথেষ্ট। সাথে উপযুক্ত ভ্রমণসংগী আর সামান্য শারীরিক ফিটনেস থাকলে কথাই নেই!
নামটি কী বাকলাই পাড়া, নাকি বাকতলাই (ত-এ ল যুক্ত) পাড়া?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
যতদূর জানি, বাকলাই পাড়া। ( সূত্রঃ তাজিনডং ভ্রমণের পূর্ববর্তী আর্টিকেল এবং স্থানীয় অধিবাসী, সেনা সদস্যদের মুখে শোনা )
"ত-এ ল যুক্ত" নামের একটা গ্রাম অবশ্য বাকলাই পাড়ার পরেই আছে। তার নাম - সিমৎলাপি পাড়া।
লেখা ছবি ভ্রমন বর্ননা সবই খুব চমৎকার হয়েছে।
পাহাড়ী কচুতে গলা চুলকায় কিনা বলেননি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অনেক ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী ভাই। গলা চুলকায়নি। খেতে ভীষণ উপাদেয় ছিল।
এক যাত্রায় আমাদের বেলায় কেওক্রাডং-এর ওপারের পাহাড়ে যেতে সেনা অনুমতি মেলেনি। সে তুলনায় আপনারা অনেক সৌভাগ্যবান।
এই পর্বের লেখাগুলো আরো বর্ণনাময় হলে পড়তে আরো ভালো লাগতো। ছবিগুলো খুব সুন্দর!
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
পাসিং পাড়া মুরং নয় বম পাড়া। রুমানা পাড়া থেকে বেশ কিছু পরিবারকে সরিয়ে এই পাড়াটি গড়া হয় কয়েক বছর আগে।
বাকলাই হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত হলেও আসলে পাড়াটির নাম বাকত্-লাই। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় এমন নামে অসংখ্য প্রার্থির পোস্টার দেখেছি।
নতুন মন্তব্য করুন