পাহাড়ের প্রতি আমার আজন্ম ভালবাসা। পাহাড়ের সবুজ উপত্যকা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে । সেটা দেশেই হোক আর বিদেশেই হোক। বছর দুই আগে, দেশে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা রাঙ্গামাটিতে গেলাম ৩য় বারের মত, বলা যায় এক আড়াই দিনের ঝটিকা সফর। ১ম বার যখন রাঙ্গামাটি যাই তখন ক্লাস টেনের প্রি টেস্ট হওয়ার আগে আগে। সে যাই হোক, অনেক দিন ধরে ছবিগুলো আজকে মোবাইল হার্ড ডিস্কে খুঁজে পেলাম। আমি জানি সচলে আমার চেয়ে অনেক ভাল আলোকশিল্পী আছেন। আমার ছবি তোলার হাত মোটামুটি। ছবি দেখতে অনেক ভাল লাগে, মনে হল সচলায়তনে আর আগের মত বিশাল ফেলুদার লালমোহন গাঙ্গুলির জায়ান্ট অমনিবাস সাইজের ভ্রমণ কাহিনী কিংবা ভ্রমণ আলোক চিত্র আসছে না, তাই চেষ্টা করে দেখি,
রাঙ্গামাটি শহরে প্রথম দিন বিকালে বাস থেকে নেমেই, যাওয়া পরলো জেলাপ্রশাসকের বাংলো এর দিকে। সেখান থেকেই বিকেলবেলার রোদ্দুর মাখা লেক । রাঙ্গামাটিয়ের একটি বিষয় বেশ মজার, বহু আগে থেকেই এটা ভিআইপি শহর। কারন এখানে কোন রিকসার কোন বালাই নেই।
জানি না, আগে এক সময় রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ ক্যালান্ড্রারের পাতায় দেখে আহ উহ করতাম। কিন্তু বাস্তবে দেখতে অতো আহামরি ভাল লাগেনি কোন বারই, কারণ এর আশেপাশে শয়ে শয়ে ট্রলার, স্পীড বোটের ছড়াছড়ি। আর নানা কিসিমের ফেরিওয়ালা তো আছেই। আগে অবশ্য এই রকম ছিল না। সেই ঝুলন্ত ব্রিজ থেকে তুললাম, এই ছবি দুটো,
শেষ বিকেলের আলোতে
পরের দিন সকালবেলা ছিল হরতাল, ভাবছেন দুই বছর আগের দিনের ঘটনা কিভাবে মনে রেখেছি, কারণ সেই দিনের প্লান ছিল শহর থেকে নৌ-পথে বরকল যাত্রা। বাংলাদেশের বিরোধী দল গুলো রাস্তায় যত পিকেটিং করুক, পানির উপরে এখনো পিকটিং করার মত স্মার্ট হয়নি। তাই , কিন্তু সকাল বেলা বন ভান্তে টা মিস করা তো উচিত হব্যে না।
বন ভান্তের নৌকা ঘাট থেকে সকালবেলার কাপ্তাই লেক
আমাদের ট্রলারওয়ালা মনে হয় নেভাল আর্কিটেক্ট, গুনে গুনে চারজন মানুষের বসা যায় এরকম একটি ট্রলার নিয়ে সে হাজির। আমি সিওর, চান্স পেলে স্বল্প খরচে নাসা কিভাবে মঙ্গলে মানুষ যাওয়ার উপযোগী সস্তা রকেট বানানোর যদি টেন্ডার ডাকে, আমার এই ট্রলারওয়ালা টপ ২০ এর মধ্যে থাকবে।
সকালবেলা আস্তে আস্তে আমরা রাঙ্গামাটি বনরুপা বাজার ছেড়ে মূল লেক এ পরছি
সকাল বেলার রোদে লেকের পানি চক চক করছে,
বরকলে যাওয়ার পথে এরকম ছোট ছোট দ্বীপের দেখা মিলবে।
একটা ব্যাপার প্রচণ্ড খারাপ লাগে, যখন দেখি মানুষ ইচ্ছে মত লেকের পানিতে চিপসের খোসা, বিস্কুটের প্যাকেট ফেলছে। বিকেল বেলা যখন ফিরে আসছি, লেকের পানিতে আগের ট্রলার এর এগিয়ে চলা,
এই ছবিটা তোলা হয়েছে পেদা টিং টিং রেস্তোরা এর উপরের পাহাড় থেকে। ভর পেট খেয়ে আমাদের চারজনের
মধ্যে তিনজনের কোন পাহাড় বাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু আমাদের একজনের আমার সামিট করার সখ। কি আর করা
পাহাড়ের চূড়া থেকে আশেপাশের পাহাড় আর অরণ্য
তারপর নিচের দিকে চোখ পড়তেই মনে হলো আমাদের দেশটা আসলেই স্বপ্নপুরী। এ তো সুন্দর দেশ আর কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারেন ?
মন্তব্য
লেখা আর ছবি-দুইই চমৎকার; বিশেষ করে জলের উপর রোদ ঝিকমিক ছবিগুলো.... জীবনে একবারই রাঙামাটি আর বান্দরবানের পাহাড় দেখা হয়েছে, মনে পড়ল।
দেবদ্যুতি
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
........................................................
গোল্ড ফিসের মেমোরি থেকে মুক্তি পেতে চাই
শুধু আমি না, আমার সাথে পুরো জাতি
ধন্যবাদ আপনাকে, হুম সেটাই...এতো সুন্দর আমাদের দেশটা, কিন্তু কি করে রেখেছি আমরা , আপনার গল্প লেখার হাত তো অসাধারণ
........................................................
গোল্ড ফিসের মেমোরি থেকে মুক্তি পেতে চাই
শুধু আমি না, আমার সাথে পুরো জাতি
খুব সুন্দর ছবি। আহা কত্ত সুন্দর দেশ! তবু মানুষের মন ভরে না।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
আহা কি সুন্দর সব ছবি, রাঙামাটি গিয়েছিলাম ২০০০ এ, আপনার এই লেখা আবার যাবার সাধ জাগালো
গুডরিডস
জানেন, জীবনে প্রথমবার রাঙ্গামাটি আমিও গিয়েছিলাম ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে । দেশে গেলে আমার প্রাণ একনো আঁকুপাঁকু করে রাঙ্গামাটির জন্য। তবে এখন আর সেই রং খুঁজে পাইনা, অনেক কিছু যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে
........................................................
গোল্ড ফিসের মেমোরি থেকে মুক্তি পেতে চাই
শুধু আমি না, আমার সাথে পুরো জাতি
আসলেই তাই, ভ্রমণে পছন্দসই সঙ্গী না পেলে জমে না। একদল যাই শুধু শপিং করতে, এদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া যন্ত্রণা
........................................................
গোল্ড ফিসের মেমোরি থেকে মুক্তি পেতে চাই
শুধু আমি না, আমার সাথে পুরো জাতি
[ আহা গিয়েছিলাম এখানে, ঝুলন্ত ব্রিজটা দেখা হয়নি কিছু বলদ সহযাত্রীর জন্য। ]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
একটা সময়ে গিয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ মানুষকে প্রকৃতির হুমকি মনে করে তার অস্তিত্ব বিলোপ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। আমারও তাই ইচ্ছে, কত সুন্দর জায়গা বাট মনুষ্য জাতটা বিনাশ করে দিচ্ছে সকল সৌন্দর্যকে।
-------
রাধাকান্ত
নতুন মন্তব্য করুন