তোমাদের যা বলার ছিল, বলেছে কি তা বাংলাদেশ?

সাফিনাজ আরজু এর ছবি
লিখেছেন সাফিনাজ আরজু [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১৫/১২/২০১২ - ৫:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি প্রতিধ্বনি তুলে
নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক,
এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।"---- শামসুর রাহমান

বিজয় দিবস এলে আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর, সবাই কি করেছিলেন এই দিনে। দীর্ঘ ৯ মাসের অত্যাচার, অনাচার, অবিচার, সীমাহীন কষ্ট, সম্মুখ সমরে আজন্ম শত্রু পাকিদের সাথে সাথে পিছন থেকে হামলা করা দেশীয় কেউটেগুলোর ছোবল থেকে প্রতিমুহূর্তে লড়াই করে বেঁচে থাকা, যখন তখন নেমে আসা মৃত্যুভয় শেষে যেদিন সত্যিকার অর্থে বিজয় আসল, সবার মনের অবস্থা কি হয়েছিল। সবাই যুদ্ধের ভয়াবহ আঘাতে বিহবলিত, আতঙ্কিত। সব ছাপিয়ে বিজয় এসেছিল। কেমন ছিল সেই অনুভূতি?

সেই সময়ের মুখোমুখি হওয়া আশেপাশের সবাইকে ধরে ধরে আমি কেবলি জানতে চাইতাম কেমন অনুভূতি ছিল সেই দিনের? বড্ডও ইচ্ছে হয় জানতে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বিজয় দিবসে সেই সময় সবার কি শুধুই আনন্দ হয়েছিল, নাকি মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে, শোকের সাগরে ভেসে অনুভব করেছিলেন স্বাধীনতা আসলে কি অসম্ভব মূল্যবান !

"জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছো পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও।
তোমার পরমায়ু বৃদ্ধি পাক আমার অস্তিত্বে, স্বপ্নে,
প্রাত্যহিক বাহুর পেশীতে, জীবনের রাজপথে,
মিছিলে মিছিলে; তুমি বেঁচে থাকো, তুমি দীর্ঘজীবী হও।".... স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর - নির্মলেন্দু গুণ

মেল গিবসন পরিচালিত এবং অভিনীত ব্রেভ হার্ট মুভিটি আমার খুব পছন্দের একটি মুভি। যতবার দেখি ভালো লাগে। শেষ দৃশ্য প্রচণ্ড যন্ত্রণার আর কষ্টের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও যখন উইলিয়াম ওয়ালেস রুপী মেল গিবসন তীব্র অনুভূতিতে ঝড় তোলা শব্দে চিৎকার করে বলে উঠেন ফ্রি--ড--ম... বারবার আমি কেঁপে উঠি, আমি শিউরে উঠি। অনুভব করি, এই হল স্বাধীনতার স্বরূপ। স্বাধীনতা, আমার স্বাধীনতা। আমরা সবাই কবে বুঝবো নিজেদের একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন ভাষা, এত গৌরবময় একটা ইতিহাস থাকাটা আসলে কি ভীষণ গর্বের এবং আনন্দের। যে মানুষগুলোর জন্য এই স্বাধীন দেশটি আমাদের হয়েছে সেই মানুষগুলোর জন্য আমরা কিছুই করিনি, এমনকি কৃতজ্ঞতা স্বীকার পর্যন্ত নয়।

"স্বাধীনতা নামক শব্দটি
ভরাট গলায় দীপ্ত উচ্চারণ করে বারবার
তৃপ্তি পেতে চাই। শহরের আনাচে কানাচে
প্রতিটি রাস্তায়
অলিতে-গলিতে,
রঙিন সাইনবোর্ড, প্রত্যেক বাড়িতে
স্বাধীনতা নামক শব্দটি আমি লিখে দিতে চাই
বিশাল অক্ষরে।"....... বন্দী শিবির থেকে - শামসুর রাহমান

প্রথম যেবার ব্রেভহার্ট দেখেছিলাম, বেশ একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম কিছুদিন। কেবলি মনে হত একাত্তরের সেই উত্তাল দিনগুলোতে ফ্রিডম এর মত নিশ্চয় "জ য় য় য় য় য় বাং লা" এই শব্দটি সবাইকে আলাদা শক্তি দিত, আলাদা প্রেরণা। কি সম্মোহনী একটি শব্দ, কি ভীষণ তেজী একটি শব্দ "জয় বাংলা" - বাংলার জয়, বাংলাদেশের জয়। কোন এক রাতে কারেন্ট চলে গেলে আমি আর আমার বোন বাসায় ছাদে উঠে হাত ধরাধরি করে আকাশের দিকে মুখ তুলে তীব্র শব্দে চিৎকার করেছিলাম জ য় য় য় য় য় বাং লা লা । অনুভূতিটি ভাষায় প্রকাশ করা কখনোই সম্ভব না। আমার কাছে মনে হয় বাংলা ভাষার অন্যতম মধুর শব্দগুচ্ছ হল "জয় বাংলা"।

"যে সব বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী,
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি।"...কবি আব্দুল হাকিম।

আগে বিজয় দিবস এলে আমার আনন্দ হত, আহা, এই দিনে এই বাংলাদেশটা, এই দেশের মাটি, আকাশ, বাতাস, সব কিছু আমার হয়েছিল। আমরা জিতে নিয়েছিলাম এই দেশটি। অসম্ভব কষ্টের বিনিময়ে পাওয়া এই দিনটি, এই দিন তো অবশ্যই আনন্দের দিন। আজকাল বিজয় দিবস আসলে আমার ভয় হয়, আতংক হয়, প্রচণ্ড ক্ষোভ হয়। টিভি চ্যানেল খুললে, সংবাদপত্র পড়লে, ফেসবুক খুললে আবার কি এই ধরনের খবরগুলো দেখব? স্বাধীন বাংলাদেশের কিছু স্বাধীন নাগরিক আজও জানেনা ১৬ ডিসেম্বর কি হয়েছিল, ২৬ মার্চ কি হয়েছিল, ২১ ফেব্রুয়ারী কি হয়েছিল, কোনটা বিজয় দিবস, কোনটা স্বাধীনতা দিবস- নিজেদের কোন ইতিহাস তারা জানেনা। জানার কোন আগ্রহ নাই। না জানার জন্য ভিতরে কোন গ্লানি নাই। কি নির্লজ্জের মত হাসি হাসি মুখ করে না জানার বার্তা ঘোষণা করে। যারা তার দেশকে ভালবাসতে পারেনা, দেশের মাটিকে ভালবাসতে পারেনা এই ধরনের মানুষদের নিয়ে আমার সন্দেহ হয়। এরা কি আসলেই বাংলাদেশী?

একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়, আজ বাংলাদেশের ক্রিকেট দল জয়লাভ করলে যেভাবে সারাদেশ আনন্দে নেচে উঠে, জেগে উঠে। ক্রিকেট যেভাবে সবার ঘর অব্দি পৌঁছেছে, কেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেভাবে সবার ঘরে যেতে পারেনি? মুক্তিযুদ্ধে দেশের প্রায় কমবেশি সব পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েও কেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমরা ভুলে যেতে চেয়েছি???

"কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে
ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,
বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুধে-ভাতে।"...... একটি পতাকা পেলে – হেলাল হাফিজ

পতাকাটি আমরা পেয়েছি, কিন্তু দাম রাখতে পারিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে আজও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পূর্ণ হলনা, নিজেদের সুবিধার জন্য নব্য রাজাকারদের বিশেষ এক শ্রেণীর মানুষ পালন করে চলেছে। দিনে দিনে আরও বেশী করে এই সমস্ত রাজাকার বাহিনী সংগঠিত হচ্ছে।

আজও কত ভূমিহীন মনুমিয়া থাকে, আজও কত বিশ্বজিৎ মারা যায়। কোন যুদ্ধের শিশুকে আমরা সম্মান করিনি। যে সমস্ত মা বোনেরা যুদ্ধে এত বড় ত্যাগ করেছিলেন তাদের "বীরাঙ্গনা" নামক গাল ভরা নাম দিয়েছি, একটু সম্মান দেইনি, একটু ভালবাসা দেইনি। "বীরাঙ্গনা " নামটাই যেন একটা প্রহসন হয়ে থেকে গেছে। আজও পেপার পত্রিকা পড়লে, টিভি দেখলে অনেক বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের বঞ্চনার গল্প শোনা যায়, জীবনযুদ্ধে পরাজয়ের গল্প, ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকার গল্প শোনা যায়।

স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে মুক্তি যোদ্ধারা কিচ্ছু পাননি। এমনকি তাদের অবশ্য প্রাপ্য শ্রদ্ধা এবং সম্মানটুকুও নয়। এই বিশেষ দিনগুলো এলে আমরা বলি- আমরা তোমাদের ভুলবনা। অল্প কিছু মানুষ ছাড়া আমরা আসলেই কি তাদের মনে রেখেছি? একটা বার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছি কি পৃথিবীর বুকে স্বাধীন একটা দেশের মানচিত্র দেবার জন্য আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

খুব আফসোস হয়, আর হয়ত মাত্র একটি প্রজন্ম, হয়ত বছর ত্রিশেক বাকি... তারপরে সেই সোনালি প্রজন্মের ইতিহাসের সাক্ষী এই মানুষগুলো আর থাকবেননা পৃথিবীর বুকে। তাদের উপস্থিতিতে আমরা ইতিহাস বিকৃত করি, তাদের উপস্থিতিতে আমরা তাদের অস্বীকার করি, তারা হারিয়ে গেলে বাকি থাকবে কি কিছু? আজও যদি তাদের গুরুত্ব আমরা না বুঝি আর কবে? আজও যদি তাদের স্বীকৃতি না দেই, তাদের সন্মান না করি তবে আর কবে??

যাদের জন্য আজ গলা চড়িয়ে, মাথা উঁচু করে, বুক টানটান করে বলতে পারি- এই স্বাধীন বাংলাদেশ আমার, বাংলাদেশের মাটি, মানচিত্র আমার, আমাদের- তাদের সবার জন্য রইল সীমাহীন কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা। আমরা তোমাদের ভুলবনা। শুধু বিশেষ দিনগুলোর স্মৃতিতে নয়, আমরা তোমাদের লালন করব আমাদের রক্তে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, আমাদের চেতনায়, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে।

"সাঁঝে যখন কোকিল ডাকে
কারনিসে কি ধুসর শাখে
বারুদেরই গন্ধস্মৃতি
ভুবন ফেলে ছেয়ে
ফুলের গন্ধ পরাজিত
স্লোগান আসে ধেয়ে।
তোমাদের যা বলার ছিল
বলেছে কি তা বাংলাদেশ ?"..... শহীদদের প্রতি – আসাদ চৌধুরী


মন্তব্য

রফিকুন্নবী নয়ন এর ছবি

জয় বাংলা, বাংলার জয়।
কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধ রাতে
নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়

গানটা শুনলেই কেমন জানি গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। কি এক অদ্ভুত ভাললাগা! যুদ্ধের দিন গুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের কানে এই গানের বাণী কি অসম্ভব দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতো, তার সামান্য আভাস এই গানটা শুনলেই পাওয়া যায়।

এই দেশপ্রেমের কথা, আত্মত্যাগের বিরল শোকগাঁথা - সদা জাগরুক থাকুক কোটি প্রাণে, শতাব্দীর পর শতাব্দী।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

এই দেশপ্রেমের কথা, আত্মত্যাগের বিরল শোকগাঁথা - সদা জাগরুক থাকুক কোটি প্রাণে, শতাব্দীর পর শতাব্দী।

চলুক

অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়ার জন্য। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তানিম এহসান এর ছবি

"কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে
ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,
বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।"...... সেটাই। পোস্টে চলুক

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ তানিম ভাই। আমারও তো সেটাই কথা, কত কি হবার ছিল...... মন খারাপ

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- উদাসদা।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বলতে বাধ্য হচ্ছি, কথা যা ছিলো সব মিছে কথা।
লেখাটা প্রাণের মাঝে আবেগ ছড়িয়েছে।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

সেটাই মন খারাপ

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তারেক অণু এর ছবি

চলুক

অনেক কথা বলতে চাই, কিন্তু কণ্ঠ জড়িয়ে আসে-

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

সেটাই, কণ্ঠ জড়িয়ে আসে মন খারাপ

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

মন খারাপ

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

ধুসর জলছবি এর ছবি

আগে বিজয় দিবস এলে আমার আনন্দ হত, আহা, এই দিনে এই বাংলাদেশটা, এই দেশের মাটি, আকাশ, বাতাস, সব কিছু আমার হয়েছিল। আমরা জিতে নিয়েছিলাম এই দেশটি। অসম্ভব কষ্টের বিনিময়ে পাওয়া এই দিনটি, এই দিন তো অবশ্যই আনন্দের দিন। আজকাল বিজয় দিবস আসলে আমার ভয় হয়, আতংক হয়, প্রচণ্ড ক্ষোভ হয়।

আমারও । নিশ্চয়ই এর পরের বিজয় দিবসটা আমরা অন্যরকম ভাবে পালন করব। হাসি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

নিশ্চয়ই এর পরের বিজয় দিবসটা আমরা অন্যরকম ভাবে পালন করব।

নিশ্চয় হবে। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

বিজয় দিবস এলে আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর, সবাই কি করেছিলেন এই দিনে। ..........কেমন ছিল সেই অনুভূতি?

সে কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে এখনও। তখন আমার বয়স ১২ বছর মাত্র, ক্লাস সিক্সের ছাত্র। আমাদের অঞ্চল আগেই মুক্ত হয়ে গেছে। ১৪/১৫ তারিখ থেকে আকাশবানী বেতারে পূর্ব-পাকিস্তানে অবস্থানরত পাক বাহিনীর প্রতি বারংবার আহবান জানানো হচ্ছিল "হাতিয়ার ডাল দো"। এটা বোঝা যাচ্ছিল আত্মসমর্পন অত্যাসন্ন , বিজয় এখন একেবারেই দোরগোড়ায়। ১৬ তারিখ সকাল থেকে সবাই রেডিওর কাছাকাছি ছিল, আমিও। আমার মধ্যে সকাল থেকেই প্রবল খুশির একটা বন্যা বইছিল, জটিলতার বিষয়গুলো বিশদভাবে জানতাম না বলে স্বাধীনতার ব্যাপারে আমার মনে কোন সন্দেহ ছিল না। যুদ্ধের সময় অনেকদিন ভেবেছি একটি স্বাধীন দেশের দিন আসলে কি রকম হবে, সে প্রশ্নের উত্তর লাভ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র! আমার নিজের অনুভূতির বাইরে বড়দের আচরণে আনন্দ বা খুশির তীব্রতা সেভাবে লক্ষ করি নি, যতটা লক্ষ করেছি স্বস্তির ভাব। তার কারন আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল অত্যন্ত চড়া মূল্যের বিনিময়ে, মনের আড়ালে সেসব
বিষয়ও নিশ্চই ছিল।

একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়, আজ বাংলাদেশের ক্রিকেট দল জয়লাভ করলে যেভাবে সারাদেশ আনন্দে নেচে উঠে, জেগে উঠে। ক্রিকেট যেভাবে সবার ঘর অব্দি পৌঁছেছে, কেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেভাবে সবার ঘরে যেতে পারেনি? মুক্তিযুদ্ধে দেশের প্রায় কমবেশি সব পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েও কেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমরা ভুলে যেতে চেয়েছি???

আপনি যদি ৭৪,৭৫ এবং তার পরবর্তী সময়কালে অধিকাংশ মানুষের মনোভাব দেখতেন তাহলে যে কি বলতেন!
সে সময় আমার মনে হতো অধিকাংশ মানুষ যেন স্বাধীনতাকে একটা দায় বলে মনে করছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানসিকভাবে হয়তো ১০/১৫% মানুষ স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল, স্বাধীনতা পরবর্তী অর্থনৈতিক দুরবস্থার কালে এদের মনোভাবের সাথে যুক্ত হয়েছিল আরও অনেক নির্বোধ মানুষ, যাদের ক্ষমতা ছিল না স্বাধীনতার মূল্যটুকু অনুধাবন করার। সুখের বিষয়, সেই সকল নির্বোধদের সন্তান সন্ততিদের অনেকের মধ্যে সেই ষ্টুপিডিটি সঞ্চারিত হয় নি।

স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে মুক্তি যোদ্ধারা কিচ্ছু পাননি। এমনকি তাদের অবশ্য প্রাপ্য শ্রদ্ধা এবং সম্মানটুকুও নয়। এই বিশেষ দিনগুলো এলে আমরা বলি- আমরা তোমাদের ভুলবনা। অল্প কিছু মানুষ ছাড়া আমরা আসলেই কি তাদের মনে রেখেছি? একটা বার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছি কি পৃথিবীর বুকে স্বাধীন একটা দেশের মানচিত্র দেবার জন্য আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

কে যেন বলেছিলেন-বাঙালী দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝে না। হয়তো কথাটা সত্যি!

আব্দুল্লাহ এ.এম.

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আপনার মন্তব্য পড়ে নির্বাক হয়ে রইলাম। কিছু বলার নাই আসলে। প্লিজ আপনার অভিজ্ঞতাগুলো লিখেন, আমাদের জানতে দিন।

সে সময় আমার মনে হতো অধিকাংশ মানুষ যেন স্বাধীনতাকে একটা দায় বলে মনে করছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানসিকভাবে হয়তো ১০/১৫% মানুষ স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল, স্বাধীনতা পরবর্তী অর্থনৈতিক দুরবস্থার কালে এদের মনোভাবের সাথে যুক্ত হয়েছিল আরও অনেক নির্বোধ মানুষ, যাদের ক্ষমতা ছিল না স্বাধীনতার মূল্যটুকু অনুধাবন করার।

আসলেই ৭৪, ৭৫ এবং তার পরবর্তী সময়কালে দেশের যে অবস্থা হয়েছিল সেটা নিয়ে কোথাও সেইভাবে তেমন কিছু লেখা নেই, যেখানে সবার এত কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতাকে বুক দিয়ে আগলিয়ে রাখার কথা, দেশটি পুনর্গঠনের চিন্তা ভাবনা করার কথা সেখানে পুরা উল্টা পথে চলেছিলাম আমরা বেশ কিছুদিন। সেই সময়গুল অন্যরকম ছিল, সেই সময়ের গল্প জানতে ইচ্ছে করে।
আসলেই বাঙালী দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝেনা। মন খারাপ
ভালো থাকবেন।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তাপস শর্মা এর ছবি
সাফিনাজ আরজু এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

শাব্দিক এর ছবি

চলুক

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অমি_বন্যা এর ছবি

লেখায় অজস্র তারকা। অনেক কষ্টে অর্জিত এই মহান স্বাধীনতার মুল্য দেয়ার সেই ক্ষমতা আর বোধ আমাদের জাগ্রত হোক, কোটি কোটি মানুষের ভিড় ঠেলে এই মহান দিনে সেই কামনাই করছি।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

অনেক কষ্টে অর্জিত এই মহান স্বাধীনতার মুল্য দেয়ার সেই ক্ষমতা আর বোধ আমাদের জাগ্রত হোক, কোটি কোটি মানুষের ভিড় ঠেলে এই মহান দিনে সেই কামনাই করছি

চলুক
হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

ক্যাপ্টেন নিমো এর ছবি

বাংলাদেশ একদিন সব বলবে। আগে কীট পতঙ্গ গুলি নিপাত যাক।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

কীট পতঙ্গ গুলি নিপাত যাবার আগেই না পুরো ইতিহাস বিকৃত হয়ে যায় এই ভয়টাই পাচ্ছি, চারিদিকে যা শুরু হয়েছে। মন খারাপ

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

সাবেকা  এর ছবি

চলুক

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

রংতুলি এর ছবি

চলুক

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

ভাবনা এর ছবি

চলুক চলুক
ভাল লাগল

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।