ফিনিসেরা জাতি হিসেবে বেশ শান্ত, চুপচাপ, লাজুক। এতটাই বেশী যে তামপেরে তে আসার পরে আমি মাঝে মাঝে তাদের নীরবতায় হাঁপিয়ে উঠতাম। হয়ত বাসে করে কোথাও যাচ্ছি, বাসের ভীতর সবাই নট নড়ন নট চড়ন হয়ে বসে আছে। দুই একজনের ফিসফাস কথা ছাড়া বাসের ভিতরে থম ধরা নীরবতা। কারো মুখে হাসি নাই।
তামপেরে এসেছিলাম এক শরতের শেষ ভাগে। কিছু বুঝে উঠার আগেই হুড়মুড় করে শীত বাবাজী এসে হাজির হয়েছিল। অসম্ভব ঠাণ্ডা, চারিদিক অদ্ভুত সাদা আর তার মাঝে আশে পাশের মানুষগুলোর এই মৌন ব্রত দেখতে দেখতে আমি হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করত ”ঘাও” বলে কারো উপরে লাফ দিয়ে পরে তাকে চমকে দেই, গোমড়া মুখে একটু হাসি ফুটাই। কিন্তু তাই কি আর হয়, তবে তার মাঝেও আশায় বুক বেঁধেছিলাম, সামনে ক্রিসমাস, তারপরে নিউ ইয়ার... তখন নিশ্চয় সকলের উচ্ছ্বসিত চেহারা আর প্রান ভরা হাসি দেখতে পাব...
কিন্তু কিসের কি, যেই লাউ, সেই কদু। ক্রিসমাস এগিয়ে আসছিল, অল্প কিছু আলোকসজ্জা আর দোকান পাটে সামান্য বেশী ভিড় ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছিলনা। ভাবলাম ঠিকাছে, নিশ্চয় ক্রিসমাসের আগের দিন... কিন্তু আবারও আমাকে বেকুব করে দিয়ে ২৪ তারিখ দুপুর ১২ টা থেকে ২৫ তারিখ সারাদিন বাস চলাচল বন্ধ থাকল। শুধু বাস নয় দোকানপাট সহ সবই বন্ধ থাকল। খুব আশা নিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম উৎসবের আমেজ, সবার হৈ চৈ, হা হা, হি হি, লাফালাফি, অকারনে চিৎকার... সেই জায়গাই বাস বন্ধ থাকায় সারাদিন শুয়ে বসে ঘুমিয়ে আর মুভি দেখেই আমার দিন কাটল।
ক্রিসমাসের কয়দিন পরেই থার্টি ফার্স্ট নাইট, আলোকসজ্জা হল, বাতি জ্বলল, মহা সমারোহে আতসবাজি দেখতে গেলাম। প্রচুর পরিমানে আতসবাজিও ফুটল। শুধু সেই উৎসবের আমেজের কমতিটা কিছুতেই কাটল না... হাজার হাজার মানুষ লেকের ধারে জমা হয়েছে, খুব চমৎকার আতসবাজি হচ্ছে, অল্প কিছু মানুষ ছাড়া সবাই চুপচাপ দেখছে। এটা কোন কথা হল, একটু চিৎকার দিবেনা, লাফাবেনা, এ ওর গায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বেনা? আসলে আমি হয়ত নিজের অজান্তেই দেশীয় স্টাইলের উৎসবের আমেজ খুঁজছিলাম।
যাই হোক, মাসের পরে মাস কেটে যাচ্ছিল। দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ছিল, প্রায় সময় সূর্যের আলো পাচ্ছিলাম শুধু বরফটা কিছুতেই গলছিলনা। এপ্রিল মাসের এক তারিখেও যখন ধুমায়ে স্নো পড়ল, আমি বুঝে গেছিলাম... এই সাদার হাত থেকে আর বুঝি আর নিষ্কৃতি নাই। কিন্তু আমার ধারনা ভুল প্রমান করতেই এপ্রিলের শেষ দিকে এসেই বরফ হুড়মুড় করে গলা শুরু হল। আর তার সাথে সাথে মানুষগুলোর নীরবতার বরফও গলে যেন জল হল। এবার আমার অবাক হবার পালা। মনের আনন্দে লক্ষ্য করলাম এখন সবাই যখন তখন হেসে উঠে, বাসের মধ্যে জোরে জোরে গান বাজে, এখানে সেখানে ছোট ছোট মেলার মতন দোকান পাট বসা শুরু হল। সবার ভিতরে কি এক উৎসবের ছোঁয়া!
এর মাঝে খেয়াল করলাম যেখানে সেখানে , বিভিন্ন সুপার মার্কেটে রং বেরঙের, বিভিন্ন ডিজাইনের, ইয়া বড় বড় সব গ্যাস বেলুন, অদ্ভুত অদ্ভুত সব মুখোশ, নানান রঙের চুল, অন্যরকম সব পোশাক বিক্রি হচ্ছে। বেলুন আমাকে সব সময়েই খুব আকর্ষণ করে, আর এত রকমের বেলুন- স্পাইডার ম্যান, নাল্লে পু, ঘোড়া, গাড়ি, সিন্ড্রেলা, সূর্য মুখী ফুল সব রকমের বেলুনই পাওয়া যাচ্ছে। আমিও নড়ে চড়ে বসে দুইটা বেলুন কিনে ফেললাম। বুঝলাম কিছু একটা হতে যাচ্ছে।
এবার এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম- কি হতে যাচ্ছে? সে আকর্ণ হেসে জবাব দিল, তুমি এখনও জাননা, খুব সামনেই যে ভাপ্পু উৎসব। চেপে ধরলাম পুরো বিষয়টা ঠিকমত খুলে বলার জন্য। যা শুনলাম তা খুবই মজার।
ভাপ্পু হচ্ছে ফিনিসদের সবচেয়ে বড় প্রানের উৎসব। অনেকটা আমাদের পহেলা বৈশাখের মত। দুই দিন ব্যাপি এই উৎসব শুরু হয় এপ্রিল মাসের ৩০তারিখ সন্ধ্যায় এবং শেষ হয় ১লা মে। ৬০/৭০ এর দশকে ১লা মে অন্যান্য দেশের মত ফিনল্যান্ডেও লেবার ডে বা শ্রমিক দিবস হিসেবেই পালিত হত, ফিনিস ক্যালেন্ডারও এখনও সেটার পক্ষেই কথা বলে, কিন্তু বেশ অনেকদিন যাবত ৮০এর দশকের শেষভাগ থেকেই ভাপ্পু পুরোপুরি হয়ে গেছে শুধুই স্টুডেন্টদের উৎসব। এটি আসলে এক ধরনের বসন্তের আগমনী উৎসব বা বসন্ত বরন উৎসবও বটে।
আমার স্থানীয় বন্ধুর কাছে যা শুনলাম তাতে মূল ব্যাপারটা হল প্রতি বছর যে সমস্ত স্টুডেন্টরা উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বা কলেজ শেষ করে। ভাপ্পুর দিনে তাদের মাথায় সাদা রঙের টুপি পড়িয়ে সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই টুপিও কিন্তু যখন তখন পড়া যাবেনা। ৩০শে এপ্রিল সন্ধ্যা ৬ টায় অফিসিয়ালি টুপি পড়ানোর উৎসবের পরেই কেবল মাত্র সব ছাত্র ছাত্রী টুপি মাথায় টুপি তুলতে পারবে।
ফিনল্যান্ডের বড় বড় শহরগুলোতে যেমন হেলসিংকি, তামপেরে, তুরকু- প্রায় হাজার দশেকের বেশী লোক অংশগ্রহন করে এই টুপি উৎসবে, এমনকি টেলিভিশনেও দেখানো হয়ে থাকে। টুপি পড়ানোর উৎসবটা আসলে হয়ে থাকে বিভিন্ন মূর্তির মাথায় টুপি পড়ানোর মধ্যে দিয়ে। যেমন হেলসিংকিতে মার্কেট স্কয়ারে অবস্থিত হাভিস আমান্দা নামক ন্যুড মূর্তির মাথায় টুপি পড়ান দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তামপেরে তে ন্যুড মূর্তি কাউপ্পিয়াসের মাথায় টুপি পড়ান হয় । বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন মূর্তির মাথায় টুপি পড়ানোর পর পরেই সকল ছাত্র ছাত্রী নিজেদের মাথায় সাদা টুপি তুলে, একে অপরকে আলিঙ্গন করে, চিৎকার করতে থাকে, জোরে জোরে হুইশেল, বাঁশি ফুঁকতে থাকে। সবার মুখে শোনা যায়- হুইভা ভাপ্পুয়া বা হাউস্কা ভাপ্পুয়া মানে হল শুভ হোক ভাপ্পু অথবা হ্যাভ আ নাইস ভাপ্পু। অনেকটা আমাদের দেশীয় শুভ বসন্ত, শুভ ফাল্গুন, শুভ নববর্ষ এর মত ব্যাপার সাপার আর কি।
ভাপ্পুতে স্টুডেন্টদের সুনির্দিষ্ট ড্রেস কোড থাকে। সেটা হল আপাদমস্তক ওভারঅল। সেই ওভারঅলে আবার নাকি যত বেশী নোংরা হবে, যত বেশী আঁকি বুকি আর ব্যাচ লাগানো থাকবে তত ভালো, মজা তত বেশী।
৩০শে এপ্রিল রাতভোর স্টুডেন্টদের হৈ হুল্লোড়ের পর ১লা মে তে সবাই সেন্টারে জমা হয়, সেখানে বিভিন্ন মেলার মত দোকানপাট বসে, সরকারীভাবে র্যালি হয়, এখানে ওখানে ধোঁয়া উঠা খাবার, বিভিন্ন বাঁশির আওয়াজ, মুখোশসহ লেকের ধারে, পার্কে সবাই পিকনিকের আমেজে শুয়ে বসে থাকে।
১) পিকনিকের আমেজে সবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে এলোমেলো বসে থাকা।
ভাপ্পুর আরেকটা দিক হল, এই দিন থেকেই সবাই বসন্ত বা সামারের পোশাক পড়া শুরু করে আনুষ্ঠানিক ভাবে। ফিনল্যান্ডে শীতকাল এত দীর্ঘ যে আলাদাভাবে বসন্ত আসলে টের পাওয়া যায়না। মে মাসের শুরুতেও গাছে পাতা আসেনা, ফুল তো অনেক দুরের ব্যাপার। তাই এই ভাপ্পুর পর থেকেই সবাই বসন্ত, গ্রীষ্ম সব এক সাথে পালন শুরু করে।
সব শুনে আমি আহ্লাদিত হলাম, দারুন সব ব্যাপার স্যাপার তো। এইটা কোনভাবেই মিস করা যাবেনা, টুপি পড়ান থেকে শুরু করে, দোকানপাট, খাবার দাবার সব আমার দেখা চাই। আমার দুর্ভাগ্য, অসুস্থতার কারনে ৩০শে এপ্রিল সন্ধ্যা ৬ টায় টুপি পড়ান আর দেখতে যেতে পারিনি। কিন্তু তাতে কি, মে মাসের প্রথম দিনে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই রউনা দিলাম সিটি সেন্টারের উদ্দেশে। নামেই বসন্ত উৎসব বাইরে বরফ গললেও তখনও বেশ ঠাণ্ডা। সেন্টারের বেশ আগেই শুনলাম গাড়ি এবার অন্য দিক দিয়ে চলে যাবে। পুরো সিটি সেন্টারে সমস্ত রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ।
২) সিটি সেন্টারে প্রধান সড়কে মানুষজনের ভিড়।
গাড়ি থেকে নেমেই দেখি চারিদিকে অনেক মানুষ, স্টুডেন্টদের সহজেই চেনা যায় তাদের ওভারঅলের জন্য। ডিপার্টমেন্ট অনুযায়ী ওভার অলের রং ভিন্ন। সবার মাথায় সাদা ক্যাপ, কারো কারো মুখে মুখোশ, কম বেশী প্রায় সবারই হাতে মজার মজার সব বেলুন, কেউ বা আবার হুইশেল বাজাচ্ছে মনের আনন্দে। কার্নিভালের মত উৎসবের আমেজ চারিদিকে, সবার হাসি হাসি চেহারা।
রাস্তায় ততক্ষনে বেশ ভিড় হয়ে গেছে। আমি ভিড় ঠেলে সামনে এগুলাম। কিছুদুর গিয়েই দেখতে পেলাম কাউপ্পিয়াসের মাথায় টুপি পড়ান হয়েছে গত সন্ধ্যাতেই। বেশ লাগছিল মাথায় টুপি পরিহিত ভদ্রলোকটিকে দেখতে।
৪) গ্রাজুয়েশনের টুপি পরিহিত কাউপ্পিয়াস।
৫)সামনে থেকে তোলা কাউপ্পিয়াস বাবাজীর ছবি।
আমার খুব মজা লাগছিল আশে পাশের এই উৎসবের আমেজ দেখতে। চারিদিকে এত বেলুন, মাঝে মাঝে মুখেও এসে বাড়ি দিচ্ছিল কিছু বেলুনের ঝাঁক।
বেলুনের ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে দেখি অপেক্ষমান জনতা লেকের ধারে শোভাযাত্রার অপেক্ষায় রয়েছে। বাইরে তখন হঠাৎ বাতাসের বেগ বেড়েছে।
৮) শোভাযাত্রার অপেক্ষায় অপেক্ষমান জনতা।
৯) কাউপ্পিয়াসের মূর্তির পিছনের লেক। এই লেকের ধার ধরেই লোকজন সার বেঁধে র্যালির অপেক্ষায় ছিল।
খুব বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হলনা , অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই র্যালি এসে হাজির। চমৎকার ছন্দবদ্ধভাবে মিউজিকের তালে তালে কাউপ্পিয়াসের মূর্তির সামনে দিয়ে লেকের ধার ধরে সিটি সেন্টারে গিয়ে র্যালি শেষ হল।
১০) পুলিশি প্রহরায় ভাপ্পু উৎসব বরন শোভাযাত্রা ।
১২) পেছন থেকে তোলা শোভাযাত্রার ছবি।
আমিও পায়ে পায়ে র্যালির পিছন পিছন চারিপাশ দেখতে দেখতে সিটি সেন্টারে গিয়ে হাজির হলাম। সেই অনুভূতিটি আসলেই খুব অন্যরকম ছিল, বারবার দেশের পহেলা বৈশাখের কথা মনে পড়ছিল। চারিদিকে যেন রঙের মেলা বসেছে। বিভিন্ন খাবারের দোকানপাট, নানান রকমের পরচুলা, মুখোশ, বিভিন্ন রকমের খেলনা আর বহুবিধ খাবারের দোকান চারিপাশে। বাটার দিয়ে কড়া করে ভাজা মুইক্কু মাছ, স্যামন মাছ আর সসেজের গন্ধে পুরো এলাকাটা মৌ মৌ করছিল। যদিও ভাপ্পুর স্পেশাল খাবার হল তিপ্পালেইপা এবং বিভিন্ন ধরনের ডোনাট কিন্তু বিভিন্ন খাবারের স্টলে প্রায় সবধরনের খাবারই পাওয়া যাচ্ছিল।
১৩) ভাপ্পু উৎসবে পতপত করে উড়তে থাকা ফিনল্যান্ডের জাতীয় পতাকা।
১৪) মেয়রের কার্যালয়ে উড়তে থাকা পতাকা।
ভাপ্পুর স্পেশাল খাবার তিপ্পালেইপাও আসলে এক বিশেষ ধরনের বদখত চেহারার কড়া করে ভাজা ডোনাট। এই ডোনাটের উপর দিয়ে আবার বেশ করে চিনি ছড়ান থাকে। তিপ্পালেইপা কিন্তু ভাপ্পু উৎসবের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই বিভিন্ন সুপার মার্কেটে পাওয়া যায়। অনেকে আবার বাসাতেও বানিয়ে থাকে, এছাড়াও ভাপ্পুর দিন সিটি সেন্টারে অস্থায়ী গজান প্রায় সকল খাবারের দোকানেই এই ডোনাট পাওয়া যায়। ভাপ্পুতে যে শুধু বিশেষ খাবার পাওয়া যায় তাই নয়, বিশেষ এক ধরনের পানীয়ও ভাপ্পু উৎসব পালনে অপরিহার্য। সিমা নামক বাদামী বর্ণের এই বিশেষ পানীয়টি ঘরে যেমন প্রস্তুত হয়ে থাকে তেমন ভাবে বিভিন্ন সুপার মার্কেট গুলোতেও কিনতে পাওয়া যায়। সিমা দেখতে অনেকটা বিয়ারের মতই, প্রস্তুতপ্রণালীও কম বেশী একই রকম। সিমা তীব্র মিষ্টি সাদের আর লেবু লেবু গন্ধযুক্ত। সিটি সেন্টার জুড়ে চলমান মানুষের অনেকের হাতেই সিমার বোতল দেখা যাচ্ছিল।
১৫) বিভিন্ন খাবারে সজ্জিত খাবারের দোকান।
ততক্ষনে দুপুর প্রায় আসন্ন, আকশে সূর্য থাকলেও বাতাস বেশ ঠাণ্ডা, অনেকেই ইতিমধ্যে বিভিন্ন খাবারের দোকানে ঢুকে খাওয়া দাওয়া শুরু
করেছে। আমিও গুটি গুটি পায়ে এক স্টলে ঢুকে মুইক্কু মাছ ভাজা আর সব্জির অর্ডার দিলাম। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আশে পাশের মানুষের খুশি খুশি তৃপ্ত হাসিমুখ দেখতে বেশ লাগছিল। খেয়াল করে দেখলাম বসন্ত আসার সাথে সাথে তাদের গোমড়া চেহারাগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
১৭) মুইক্কুর পাশের ডেকচিতে আলু, সবজি আর সসেজ ভাজি।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে এবার সেন্টার জুড়ে ছোট বড় গজিয়ে উঠা মেলা সদৃশ দোকান গুলোতে ঘুরতে বের হলাম। যেখানেই যাই সেখানেই দেখি বেলুনের সমারোহ। বেলুন দেখলে কেন যে মাথা নষ্ট হয়ে যায় আমার বুঝিনা, ঘুরতে ঘুরতে আরও বড় বড় দুটো বেলুন কিনলাম। আগেই হাতে দুটো বেলুন নিয়ে ঘুরছিলাম এবার হল চারটে। এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি শেষে মেলার শেষ প্রান্তে গিয়ে দেখি সেখানে বাচ্চাদের খেলার জন্য অস্থায়ীভাবে রবার আর প্লাস্টিকের তৈরি এক বড়সড় খেলনাঘর, যার উপরে বাচ্চারা মনের সুখে লাফাতে পারবে। টিপে টুপে দেখলাম বেশ নরম সরম। আফসোস বড় মানুষ প্রবেশ নিষিদ্ধ ভিতরে, তাই আর যাওয়া হলনা।
২০) মেলায় ভিতরে হরেক রকম মুখোশ আর খেলনার দোকান।
২১) ক্যান্ডি কেনায় মগ্ন এক বালক।
সব ঘুরে দেখা শোনার পর ভাবলাম এবার বাসায় ফিরে যাই, তাছাড়া ততক্ষনে অসুস্থ শরীরে রীতিমত ঠাণ্ডা লাগা শুরু হয়েছে। এবার ঘরে ফেরার পালা। কিন্তু যে বাসস্টপ থেকে বাস ছাড়বে তা অনেক দূরে কেননা সেন্টারের বাস চলাচল বন্ধ। অগত্যা কি আর করা, পা দুটি ভরসা। ফেরার পথে লেকের ধার দিয়ে যখন ফিরছিলাম দেখি অনেক মানুষ লেকের পাড়ে জমা হয়ে গভীর মনোযোগে কি যেন দেখছে। আর তাছাড়া মাঝে মাঝে দূর থেকে বেশ চিৎকার ভেসে আসছে। কৌতূহলী হওয়াতে ঠেলে ঠুলে লেকের একদম ধারে গিয়ে হাজির হলাম। এবার একজনকে জিজ্ঞেস করলাম ঘটনা কি। ঘটনা শুনে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ। ঘটনা হল সদ্য গ্রাজুয়েট ছেলেমেয়েদের মধ্যে যাদের আগ্রহ, উত্তেজনা এবং সাহস বেশী, সরকারী সহযোগিতায় এবং স্টুডেন্ট ইউনিয়নের উদ্যোগে তাদের ক্রেনে করে লেকের পানিতে গলা পর্যন্ত চুবান হয়। এভাবেই তারা তাদের তীব্র আনন্দ উদযাপন করে থাকে। শুনে আমি এত অবাক হয়েছিলাম যে কি বলব বুঝতে পারছিলামনা। বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে তাকিয়ে তাদের পানিতে চুবানোর দৃশ্য দেখলাম। তাপমাত্রা তখন মাত্র ৩ ডিগ্রী হবে। পানিতে নামার সময় সবাই খুব উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করছিল, অনেকের হাতেই ছিল সিমা কিংবা বিয়ারের বোতল। পানি অসম্ভব ঠাণ্ডা হবার কথা কিন্তু তাদের আনন্দের চিৎকার দেখে একবারও মনে হয়নি তাদের বিন্দুমাত্র কষ্ট হচ্ছে।
২৪) দূর থেকে তোলা ক্রেনে করে লেকের পানিতে চুবানোর দৃশ্য।
২৫) ক্রেনের মাথায় খাঁচা বেঁধে পানিতে নামান হচ্ছে।
২৬) কাছ থেকে পানিতে নামানর দৃশ্য।
দেশ থেকে আসার পর মাঝে এই মাসগুলোতে যে নিঃসঙ্গতা আর নীরবতা বুকে চেপে বসেছিল ভাপ্পু উৎসব এক নিমিষেই তা উড়িয়ে নিয়েছিল। দীর্ঘ শীত আর অন্ধকারের অবসন্নতা সব পলকেই ভুলে গিয়েছিলাম। পহেলা বৈশাখের দিনে খুব মিস করেছিলাম ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলাকা, প্রানের উৎসব। ভাপ্পুর উৎসব যেন সেই আমেজ কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিয়েছিল। সব শেষে বেশ মনের আনন্দেই সেদিন বেলুনগুলো সব আকাশে উড়িয়ে দিয়ে আমি ঘরে ফিরেছিলাম।
মন্তব্য
ভাল লাগল
অনেক অনেক ফ্রেশ
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
আপনার লেখা দিন দিন মজা থেকে মজারু হচ্ছে :)।
লিখতে থাকুন, আমরা পড়তে থাকব।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
পড়তে যখন থাকবেন তখন তো লিখতেই হয়।
কিন্তু আপনার লেখা কই?
অবচেতন মনের পরে আর তো কিছু পেলাম না। রন্টুর কাণ্ড কারখানা আরও শুনতে চাই।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
আমি তো পাঠক।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
ইল্লি রে, বল্লেই হল, আফনের লেখা ভালু পাই। এক দফা এক দাবি নতুন নতুন লেখা চাই।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
আমিও এক ঠান্ডির দেশে থাকি তো, জানি ব্যাপারটা । স্প্রিংয়ের আভাষ দেখা দিলেই মানুষের মন স্প্রিংয়ের মত জেগে উঠে । আদতে, আমরা তো সব প্রকৃতির সন্তান
দারুন ব্যাপারতো...শুধু টুপি ?!?!
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
সেটাই।
হয় শুধুই টুপি পড়ায়, বেচারা হাভিস আমান্দা আর কাউপ্পিয়াস।
তাও কপাল যে বছরে একবার হলেও টুপি পড়তে পারে। বাকি সময় তো এমনি এমনি থাকে। কি শীত আর কি গরম।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
তথ্যবহুল, তবে তথ্য ভারে রচনা ন্যুজ নয়; রসও আছে ঢের। ভাল। শুভ কামনা রইলো আরেক ফিনল্যান্ড বাসীর পক্ষ থেকে।
।।।।।।। ঈয়াসীন
অনেক ঈয়াসীন ভাই।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
লেখা ভাল হয়েছে, এবারের ছবিগুলো কিন্তু খুব সুবিধের হয় নি, আশা করি পরেরগুলো আরও ভাল হবে।
আতসবাজি ফোটানোর সময় দেখা হবে-
facebook
কিতা করতাম অনুদা, আমি তো ফটুক তুলতে পারিনা। আর এই ছবিগুলো যখন তুলেছিলাম এমনি এমনি তুলেছিলাম শুধু সাটার টিপে গেছি কিছু স্মৃতি রাখার জন্য।
এখন সবার ছবি দেখে কিছু শিখার টেরাই করতাছি আর কি।
আতসবাজি ফোটানোর সময় দেখা হবে--
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
জবের হয়েছে। মুইক্কু মাছে কি আঁইশ-টাইশ নাই?
শাটার ক্লিক করতে করতেই ফটুরে।
হ্যাপি নিউ ইয়ার অগ্রিম।
হাছা কইতাছেন জবের হইছে?
মুইক্কু মাছে অল্প বিস্তর আঁইশ-টাইশ আছে, আমার শুধু ভাজা মাছ টাই খেতে ভালো লাগে। রান্না করা মুইক্কু অত বেশী মজা না।
আপনাকেও দেরীতে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
নতুন বছরে আপনার আরও অনেক নতুন নতুন লেখা চাই।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ওহ্, দারুণ সব ছবি ! লেখা ভাল লেগেছে।
অনেক অনেক অনেক ফ্রেশ ।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
স্যামদা, ভালু আছেন?
নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল।
পড়ার এবং দুইটা আঙ্গুল উঠানর জন্য অনেক ।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
দারুন লেখা আর ছবি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ রাতঃস্মরণীয়দা।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
বেশ ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
লেখা পড়ে মজা পেলাম, ছবিও সুন্দর!
ভাপ্পু উৎসবটাও আসলে দেখার মতই। ফিনিসেরা জাতি হিসেবে এমনিতে এত বেশী চুপচাপ যে ভাপ্পুর দিনে ওদের দেখে অবাক হতে হয়- ওরাও উৎসব করতে জানে তাহলে।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল আপু।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
আরজু আপা, এখানে আমার একটি মন্তব্য কোন এক অজানা কারণে বাগে খেয়ে ফেলেছে। যাই হোক, লেখা দুর্দান্ত, ছবিও ঝকঝকে। লাগে রাহো আরজু!
-মনি শামিম
অনেক ধন্যবাদ মনি ভাই। কিন্তুক আমি তো ছবি তুলতে পারিনা।
তবুও আপনার এত সুন্দর মন্তব্যর জন্য আপনার জন্য একটা ঝকঝকে
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
গুছিয়ে লিখেছেন। তবে ছবিগুলো ছুডু ছুডু হয়েছে। সচলে দেবার সময় ছবির উইডথ ৭০০ পিক্সেল করে দেবেন, তাহলে ঠিক হবে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ কৌদা,
আসলে আমিও ভাবছিলাম ছবিগুলো বেশ ছুডু ছুডু লাগে। এবার থেকে ৭০০ করেই দিব।
সচলে আপনাদের সবার এত সুন্দর সুন্দর ছবি দেখে সিরিয়াসলি ছবি তুলতে মন চাইছে।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
সামনের বছরে ইয়োরোপ যাওয়ার ইচ্ছা আছে, আপনার লেখা পড়ে আর ছবি দেখে ভাপ্পু উৎসব দেখার ইচ্ছে হলো।
'সমারোহ' হবে মনে হয়।
ফারাসাত
চলে আসেন। ভাপ্পু আসলেই বেশ মজার উৎসব। আমার তো খুব পছন্দ।
ইয়ে, আপনি ঠিকই বলেছেন ফারাসাত ভাই।
সমারোহ হবে।
লেখা খুব ভালো লাগলো। ভাপ্পু শুনে মনে পড়ে গেল একটা উপকথা, এইখানে আছে। মূল গল্পে ঐ সুন্দরী কিশোরীর নাম ছিলো ভাপ্পু।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অনেক ধন্যবাদ তুলিপু। আপনার গল্পটা পড়লাম, দারুন গল্প।
মনে হয় এই ভাপ্পু উৎসব থেকেই সেই কিশোরীর নাম ভাপ্পু ছিল।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
নতুন মন্তব্য করুন