কমপক্ষে এবার তো না বলি...

সাফিনাজ আরজু এর ছবি
লিখেছেন সাফিনাজ আরজু [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২০/১২/২০১৩ - ৩:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটি গল্প দিয়ে শুরু করি...

বছর পনের আগের কথা। তখনও অনেক ছোট আমি, ক্লাস সেভেন কি এইট এ পড়ি। সেই সময়ে প্রতিদিন গভীর আগ্রহে সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতাম, কখন আব্বা অফিস শেষে বাসায় ফিরবে। প্রতি রাতে খাবার পরে আব্বা আমাদের তিন ভাই বোন কে নিয়ে গোল হয়ে বসতেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতেন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ,কখনো বা নিছক রুপকথা,গল্প বলার ফাঁকে ফাঁকে নানান রকম দুষ্টুমি ও করতেন, আবার মাঝে মাঝে নিজ থেকেই যুদ্ধের দিনগুলোর গল্প বলতে থাকতেন...সেই সময় আমার ছোট ভাই আবিরের বয়স হবে বছর তিনেক/চারেক।

আব্বার গল্প শুনে তেমন কিছু ওর বুঝার কথা না, তবুও যেন খুব বুঝতে পারছে সব কিছু এমন ভাব নিয়ে চোখ বড় বড় করে সব গল্প শুনত আর মাঝে মাঝে বিজ্ঞের ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে থাকতো... আমরা তখন খুব মজা পেতাম ওর মাথা নাড়া দেখে। ওর ভাব দেখে মনে হত ও যেন গল্প গুলো নিজের মত করে অনুভব করছে।

একদিনের ঘটনা থেকে বুঝতে পারলাম আবির শুধু যে মাথা নাড়ে তা নয়, ও অনেক কিছু ওর মতন করে বুঝতেও পারে। আবির সাধারনত মুখ ফুটে ওর পছন্দের কথা কখনো তেমন বলতনা, অন্য বাচ্চাদের মত কিছু চাইতো না বা কিছু নেবার জন্য জেদ করতো না। এমন সময়ে একদিন পাশের বাসার এক ওর বয়সি বাচ্চার হাতে একটি বল দেখে আমাকে এসে প্রথম বলল বলটা ওর ভালো লেগেছে... কিন্তু একবারও বলল না যে বলটা সে নিতে চাই... তো আমি ভাবলাম পণ্ডিত সাহেব যখন মুখ ফুটে বলেছে বলটা ওর পছন্দ, তখন ওকে তো বলটা দিতেই হবে। একদিন স্কুল শেষে ওকে নিয়ে দোকানে গেলাম। বল হাতে পেয়ে দেখি আমার ভাইটার মুখ খুশিতে ঝলমল করছে, যখন দাম দিতে যাবো, হঠাৎ ও দোকানদারকে গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করে বসে, বলটা পাকিস্তানের কিনা। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম ওর প্রশ্ন শুনে।

কেবল ভাবছিলাম জানতে চাইব কেন সে এমন প্রশ্ন করল তার আগেই দোকানদার সাহেব মনের আনন্দে বলে উঠে-”নাও বাবু নাও, এটা পাকিস্তানের বল, খুব ভালো বল”।
শোনা মাত্র আমার ভাই বল ফেরত দেয়, সে পাকিস্তানের কোন জিনিষ নেবেনা, সত্যি সত্যি সে কোনভাবেই বলটা নেইনি আর, যদিও আসলে বলটা ছিল চীনের। পরে দেখি গায়ে লেখা, মেড ইন চায়না ,অনেক বলেছিলাম ওকে...বিশ্বাস করতে পারেনি। বিশ্বাস একবার উঠে গেলে মনে হয় আর ফেরত আসেনা। সেদিন আমি খুব অবাক হয়েছিলাম ওর কাণ্ডে, খুশিও। আব্বার কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর গল্প শুনে শুনেই আবির নিজের মত করে বুঝে নিয়েছিল পাকিস্তানের কোন জিনিষ আমরা ব্যবহার করতে পারিনা।

সেই বলের ঘটনার পর থেকে ওকে নিয়ে হয়েছিলো মহা মুশকিল, নিজে তো তখনও পড়তে পারেনা তাই যেখানে যায়, যা খায়, বা যা কিছু কিনে সব জায়গায় একই প্রশ্ন করে, এটা কি পাকিস্তানের তৈরি? আর আমাদের বুদ্ধিমান দোকানদার ভাইদের কল্যাণে আবির বেচারার আর তেমন কিছুই নেওয়া হয়না বা খাওয়া হয়না। সে সময় বাজারে আসল পাকিস্তানের তৈরি সেজান জুস, সব বাচ্চারা সেজান জুস খাই, টি ভি তে ধুমায়ে অ্যাড দেয় আর আমার ভাই খালি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখে... বুঝতে পারি ওর খেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু ইচ্ছেটাকে কখনই পাত্তা দেইনি সে...আজ পর্যন্ত না।

আমাদের পরিবারের কেউ কখনও পাকিস্তানের তৈরি কোন পণ্য কিনেনি, কিনেনা আর জানি কিনবেও না। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও যুদ্ধকালীন সময়ে নানাভাবে উনাদের সাহায্য করেছেন। ছোট থেকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের এত গল্প শুনে মানুষ হয়েছি আমরা মুক্তিযুদ্ধ হৃদয়ে ধারন করতে শিখেছি। কিন্তু আবিরের ব্যাপারটা ছিল আলাদা। ওর বয়স তখন এত কম ছিল যে সেই বয়সে কোন কারনে এত খানি সংযম দেখানো আসলেই খুব কঠিন ব্যাপার।

আবিরের গল্প দিয়ে শুরু করলাম কারন আমার সবসময় মনে হয় মানুষ তার প্রাথমিক এবং প্রধান শিক্ষা আসলে পরিবার থেকে পায়। যখন আবেগ অনেক বেশী ছিল আর যুক্তি কম কাজ করত তখন আমার কেবলি মনে হত যে দেশে ত্রিশ লক্ষ মানুষ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, তিন লক্ষ মা বোন ধর্ষিত হয়েছেন, আরও লাখ লাখ মানুষ যুদ্ধে আহত হয়েছেন, ঘরহারা হয়েছেন, সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন, ঠিকমত খবর নিলে হয়ত দেখা যাবে যুদ্ধে প্রায় প্রতিটা পরিবারই কোন না কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ছিল, সেই দেশের মানুষ যুদ্ধের পরে কিভাবে এত সহজে অতীত ভুলে গেল,যুদ্ধের দিনগুলোর বিভীষিকা ভুলে যেতে পারল, কিভাবে ধীরে ধীরে ইতিহাস বিকৃত হতে দিল, ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করল!!!

তখন এই সহজ হিসেবটা মাথায় ঢুকত না, এখন ঢুকে। হয়ত আমার হিসেব ভুল হতে পারে তবুও মনে হয় যুদ্ধের সময়েই পাকিস্থানিরা খুব সুক্ষভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু করে গেছিল ১৪ই ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবী হত্যার মধ্যে দিয়ে... এর পরে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, বঙ্গবন্ধুর সাধারন ক্ষমা ঘোষণা , ৭৫ সালে সপরিবারে উনাকে হত্যা করা, ৭৬ সালে রাজাকারদের পুনর্বাসন, ৭৭ এ মন্বন্তর , সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা, এই সব ডামাডোলে মানুষ হয়ত ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরে গেছে আর তার সাথে হয়ত যোগ হয়েছিল সাধারন মানুষের ধর্মীয় ভয়(একান্তই নিজস্ব ধারনা)।

যেখানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ই রাজাকারদের পুনর্বাসনের প্রতিষ্ঠাতা সেখানে যে বাংলাদেশের ইতিহাস খুব সহজেই বিকৃত করার চেষ্টা করা হবে বারবার এটা সহজেই অনুমেয়।
তবু কিন্তু ইতিহাস চাপা পড়েনি। কিছু রাজনৈতিক দলের শত চেষ্টা, কিছু ভেকধারী সুশীলের স্লো পইজনিং সত্ত্বেও কিছু মানুষ কখনোই ইতিহাস ভুলে নি, ভুলতে দেয়নি, হৃদয়ে ধারন করে রেখেছে।

আমার এই বোকাশোকা মাথায় কখনোই ঢুকেনি কিভাবে বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটে পাকিস্তান সাপোর্ট করে, কিভাবে পাকিস্তানের ক্রিকেটারেরা বাংলাদেশের মাটিতে এসে সাপোর্টারদের দেখে অনুভব করে যে তারা পাকিস্তানেই আছে। কিভাবে পাকিস্তানি ড্রেস কেনার জন্য হামলিয়ে পড়ে, কিভাবে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে মেহেরজানের মত সিনেমা হয়, কিভাবে কিছু মানুষ পাকিদের তার ভাই বলে বুকে জড়ানোর জন্য অস্থির হয়, আমি আসলেই কোনদিন বুঝিনি।

এই বিষয়গুলো নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে গেলে শুনতে হয়েছে খেলার সাথে যেন রাজনীতি না মেশায়। মুক্তিযুদ্ধ সে তো আমাদের অস্তিত্ব, খেলার জন্য আমরা আমাদের অস্তিত্ব কেই মিথ্যে করব, করেছি, করছি... কেন ???কিভাবে??

আজ যদি বাংলাদেশের জাতীয় কোন হিরো (ক্রিকেট, ফুটবল, সিনেমা, লেখক যে কোনভাবেই হতে পারে) কোনভাবে আমার পরিবারের কারো কোন ক্ষতি করে জ্ঞানত বা অজ্ঞানত তখন কি আমরা খেলার সাথে পরিবার মিশাবেন না বলে সেই হিরোর জয়গান গাইতে পারব। আমি জানি পারবনা, এমনকি দুর্ঘটনাবশত কোন অন্যায় করে থাকলেও আমাদের ভিতর থেকেই আসবেনা। তাহলে কেন পাকিস্তানের গুনগান আমরা সারাক্ষণ গাইতে থাকি???

এর আগে অনেকবার ভারতীয় সকল পণ্য বর্জন নিয়ে অনেকে অনেক লিখেছে, অনেক মিটিং , মানববন্ধন, অনেক আন্দোলন ও হয়েছে। (সেখানে আমার সমর্থন ও রয়েছে। ভারতীয় জিনিষে বাজার ছেয়ে যাক এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।) কিন্তু তার আগে কেন আমরা পাকিস্থানের সাথে কূটনৈতিক বা ব্যাবশায়িক কোন সম্পর্ক ছিন্ন করিনি(যেখানে তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি) আমি জানিনা।

কেন আমরা সবাই বুঝিনা এটা আমাদের দেশ, নিজেদের দেশ... আমাদের বাংলাদেশ। এই দেশের জল হাওয়াতে আমরা বড় হয়েছি, এদেশের টাকায় আমরা পড়াশুনা করেছি, যে কোন বিপদে আপদে যে দেশ কে আমরা পাশে পাব, কাছে পাব সেটা বাংলাদেশ। যে ভাষায় আমরা সবচেয়ে সুন্দর ভাবে সহজ ভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারব সেটা বাংলা ভাষা। যে দেশ কখনও আমাদের ফিরাবে না, পরম মমতায় বুকে টেনে নিবে সবসময় সেই দেশ শুধুমাত্র আমাদের বাংলাদেশ।

আর সেই দেশ কে যেই দেশ ১৯৭১ সালে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, যারা আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, যারা আমাদের ত্রিশ লক্ষ স্বজন নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল, যারা আজও সেই হত্যাকাণ্ডের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চায়নি, যারা এখনও আমাদের অভ্যন্তরীণ বাপারে নাক গলাতে চেষ্টা করে, দেশদ্রোহী রাজাকারদের সহায়তা করে কিভাবে আমরা সেই দেশের গুণগান গাইতে পারি? আমাদের বিবেকে বাধেনা আমাদের স্বজনদের হত্যাকারীর সাথে হাত মিলাতে, তাদের জয়গান গাইতে??
কিভাবে আমরা সেই দেশের সাথে কোন সম্পর্ক রাখি, কিভাবে আমরা জেনে শুনে সেই দেশের সালওয়ার কামিজ, কুর্তা সহ আরও অন্যান্য জিনিষ কিনতে পারি, পণ্য ব্যবহার করতে পারি???

আমরা ৭১ দেখিনি, আমাদের ইতিহাস সঠিকটুকু জানার কথা ছিল বাংলাদেশের সূচনা লগ্ন থেকেই, হয়ত অনেকেই জানিনি বা জানতে চাইনি এতদিন ...কিন্তু আমরা ২০১৩ দেখেছি... রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়া দেখেছি, দেখছি, তাদের ধৃষ্টতা দেখেছি, কাদের মোল্লার ভি দেখেছি, তার প্রতিবাদে শাহবাগে সকল শ্রেণীর সাধারন মানুষের প্রতিবাদ দেখেছি, গন জাগরন মঞ্চ দেখেছি, সবার দাবীতে স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে দেশদ্রোহী বেঈমান রাজাকার কাদের মোল্লার ফাঁসি দেখেছি। আমরা যারা আগে কোন ইতিহাস জানিনি, জানতে চাইনি, ইতিহাস এড়িয়ে থেকেছি তারাও আজ ২০১৩ তে এসে জানছি। ইতিহাসের তলা থেকে আজ কসাই কাদের, দেইল্লা রাজাকার, বাচ্চু রাজাকার, মুজাহিদদের কীর্তি কলাপ উঠে এসেছে, যারা আগে জানত না, তারাও এখন জানে ৭১ সালে রাজাকারদের ভূমিকা, আর সাথে পাকি বাহিনির নৃশংসতা। এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে, এতদিনেও কি আমরা নিজের দেশ টাকে ভালবাসতে শিখবনা? পূর্ব পুরুষদের ঋণ শোধ করার চেষ্টা করবনা? নিজের দেশটাকে মন প্রান দিয়ে ভালবাসবনা?? এখন কি তবে আমরা সম্মিলিত ভাবে পাকিস্থানের সাথে সকল রকম সম্পর্ক বর্জন করতে পারিনা???
সকল রাজাকারের জন্য তাদের প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে পারিনা???
জামাত শিবির কে দেশের স্বার্থে দেশ থেকে বিতারন করতে পারিনা???

আমার তিন বছরের ছোট্ট ভাই যদি সে সময় কিছু না বুঝেই পাকিস্থানকে বর্জন করতে পারে, আমরা তবে এত বড় হয়েও কেন পাকিস্তান আর দোসরদের বর্জন করতে পারবনা???


মন্তব্য

আয়নামতি এর ছবি

আপনা ছোট ভাইটির জন্য উত্তম জাঝা!

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আপনাকে অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি
ভাল থাকবেন।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

ঈয়াসীন এর ছবি

ভাল লাগলো সাফিনাজ।
দুঃখের বিষয় কি জানেন, আমাদের কোনো জাতীয় ইস্যুতে আমরা এখন আর এক হতে পারিনা। বিভাজন আজ স্পষ্ট। তবে একদিক দিয়ে এই বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ভালই হয়েছে। মানুষ চেনা যাচ্ছে।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

সেই ভাইয়া, এখন আসলেই মানুষ চেনা যাচ্ছে ।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

ঈয়াসীন ভাই, আমরা কি কখনো এক ছিলাম? অনন্ত আমার মনে হয় না। ৭১ এ সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলো না, বরং বিরাট একটা অংশ ধর্মীয় অজ্ঞতা কিংবা গোঁড়ামির কারনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলো না। আজো আমরা এক নই, কেন আমরা এক হতে পারি না। কিংবা প্রশ্ন আসতে পারে কি করলে আমরা এক হতে পারবো। আমার মতে আমাদের এক হতে সবচেয়ে বড় বাধা যেটি সেটি হলো ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধতা। এটাই আসল ব্যবধানটা গড়ে দিয়েছে। ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করেন, অসম্প্রদায়িক একটি সমাজ/রাষ্ট্র গড়ে তুলেন দেখবেন জাতীয় ইস্যুতে আর ভেদাভেদ তেমন থাকবে না।

মাসুদ সজীব

অমি_বন্যা এর ছবি

আবিরের এই শুভবোধটির জন্য ভালবাসা রইলো।
পাকি প্রেমে কিছু দর্শক এমনই মশগুল যে , মাঝে মাঝে অনেক দর্শক বিশাল প্ল্যাকার্ডে লেখে' আফ্রিদি ম্যারি মি' । বুঝিনা এই দেশে বেড়ে উঠেও এমন পাকি প্রেমী ক্যাম্নে হয় ।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

এই ধরণের মানুষরা কোনদিন নিজের দেশটাকে ভালবাসতে শিখলনা, শিখবেনা।
এরা পাকিস্তানে চলে গেলেই তো পারে।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তিথীডোর এর ছবি

চলুক
এই শুভবোধ পরিবার ছাড়া সাধারণত জন্মায় না।
গপ্পো লিখতে গিয়ে বানানো যায় বটে রাজাকারের মেয়ে বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। আসল অবস্থা ধরা পড়ে ছাগুরাইন মারডালা কিংবা মেহবুবা ম্যাডামদের দিকে তাকালেই।

চরম উদাসের এই উক্তিটা আসলেই বাঁধাই করে রাখার মতো---

একটা মানুষের চোখের সামনে তার অন্তঃসত্ত্বা মা, বাবা, বোন, দুই বছরের ভাইকে মারার বেদনা, নিজ চোখের সামনে নিজ কন্যার ধর্ষিত হতে হতে মৃত্যুবরণ করতে দেখার বেদনা, নিজ কন্যার মস্তকবিহীন লাশ ঝুলতে দেখার বেদনা আমি যদি পশু হয়ে অনুভব করতে পারি, কেউ কেউ মানুষ হয়ে কেন সেটা পারেনা?

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

একমত তিথী।
আসলেই বাঁধাই করে রাখার মতো.........

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- অণুদা।
কেমন আছেন?
নানান ঝামেলা্য় ছিলাম, লেখা হয়নি। মন খারাপ
দেখি এখন থেকে নিয়মিত লিখব হয়ত। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তারেক অণু এর ছবি

অনেকদিন পর লিখলেন, নিয়মিত লেখা আসুক

বাউলিয়ানা এর ছবি

...মানুষ তার প্রাথমিক এবং প্রধান শিক্ষা আসলে পরিবার থেকে পায়।

খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। শুভবুদ্ধি ছড়িয়ে যাক আমাদের সবার মাঝে।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

হাসি
শুভবুদ্ধি ছড়িয়ে যাক আমাদের সবার মাঝে।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনার ভাইটির জন্য কোলাকুলি

আব্বাও খুব ছোটকাল থেকেই পাকি-বর্জনের শিক্ষাটা আমাদের দু'ভাইবোনের মাথায় বেশ করে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন... সেখান থেকেই টের পাই এই শিক্ষাটা আসা উচিৎ পরিবার থেকেই, খুব দৃঢ়ভাবে...

আফসোস, আমাদের আশেপাশের পরিবার গুলোর অনেকটিতেই যতটা ভয়ঙ্কর ভাবে নিজস্ব ধর্মীয় গন্ডির বাইরের মানুষকে ঘৃনা করতে শেখানো হয়, তাঁর ১% হারেও আমাদের দেশটার কথা শোনানো হয়না... মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আমাদের আশেপাশের পরিবার গুলোর অনেকটিতেই যতটা ভয়ঙ্কর ভাবে নিজস্ব ধর্মীয় গন্ডির বাইরের মানুষকে ঘৃনা করতে শেখানো হয়, তাঁর ১% হারেও আমাদের দেশটার কথা শোনানো হয়না..

মন খারাপ জানিনা কেন এমন হয়। এসব দেখলে খুব খারাপ লাগে। সত্যি জানিনা কিভাবে মানুষের এইসব অসুস্থ চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন আসবে।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

স্যাম এর ছবি

অনেকদিন পর লিখলেন -

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

দেখি এবার নিয়মিত হতে পারি কিনা। ইয়ে, মানে...
ভালো আছেন স্যামদা?

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ভাই এর প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা থাকল।

আমার মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে যে দুটো বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ সে দুটো আমরা পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি। প্রথমটি হলো সু-শিক্ষা। আমাদের বেশিভাগ বাবা-মা খুব একটা শিক্ষিত না, আর যা একটু পড়ালেখা জেনেছেন কিন্তু সেটা তারা দেশের ইতিহাস জানার জন্যে ব্যয় করেন নি। শিক্ষাই যেখানে অপ্রতুল সেখানে সু-শিক্ষা মরীচিকা। আর দ্বিতীয়টি হলো ধর্মীয় গোঁড়ামি। বাংলাদেশের প্রায় সব মুসলিম পরিবারে কমপক্ষে একটি করে বই পাবেন কেয়ামতের আগে পরে, বেহেস্তের চাবিকাঠি, খোয়াবনামা প্রভৃতি। কিন্তু সেখানে পাবেন না দেশের ইতিহাসকে জানার, মুক্তিযুদ্ধকে জানার কোন বই। বিজ্ঞান, সাহিত্য আরো অনেক দূরের বিষয়। ধর্মকে পোশাকের মতো নিত্যদিনের অভ্যেস হিসাবে গড়ে তুলতে ছোট ছোট শিশুদের মক্তব্যে পাঠানো হয় প্রতিদিন, জানানো হয় ইসলামের ইতিহাস, নবীদের ইতিহাস।(ধর্ম শিক্ষা পাক সেটা নিয়ে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু সেটার পাশাপাশি দেশের ইতিহাস জানবে না এটা কেমন কথা) কিন্তু কোথাও তো ছোটবেলায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো হয় না কিংবা এতকাল জানানো হয়নি। মুক্তিযুদ্ধকে পোশাকের মতো এঁটে দেওয়া হয়নি শরীরে, বুনো দেওয়া হয়নি রক্তশ্রোতে। পরিবারগুলো এটা করার কথা কিন্তু পরিবারগুলো সেটা করেনি, করেনি রাষ্ট্র কিংবা সমাজ কেউই। ছোটবেলাই যদি আদর্শ, নীতি গঠনের মূল ভিত্তি হয় তাহলে তো আমরা সেটাকে ফাঁকা রেখে দিয়েছি। ধর্ম কখনো মানুষকে আদর্শ আর নীতিবান করে না। যদি করত তাহলে বাংলাদেশ হয়ে ওঠতো আদর্শের তীর্থস্থান। (ধর্ম নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই, চারিদিকে অনুভূতিওয়ালা মানুষের ভিড় এখন) ছোটবেলা থেকে দেশপ্রেম জাগ্রত না করিয়ে আমরা আশা করছি সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করবে, মুক্তিযু্দ্ধকে প্রগাঢ় ভাবে ভালোবাসবে। বাবা-মা ই যেখানে জানে না ঠিক মতো ইতিহাস সেখানে সন্তানের মাঝে কি করে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তুলবে? তাই আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রসার হয়নি, প্রসার ঘটেছে অন্ধ ধর্মান্ধবাদ আর গুজববাদ।

তবে আশার কথা হলো সেই আধাঁর কাটতে শুরু করেছে, এখনকার বাবা মা রা তরুন, তারা মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবাসে তাই তাদের যে প্রজন্ম বেড়ে উঠছে তারা জানবে সত্যিকার ইতিহাস, কারন বাবা মাই তাদেরকে জানাবে। এখনকার বাবা মা অনেক বেশি সচেতন। জয় আমাদের হবেই, হয়তো একটু সময় লাগবে এইটুকু। জয় বাংলা।

মাসুদ সজীব
মাসুদ সজীব

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আপনার দীর্ঘ মন্তব্যর জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আসলে এই সমস্যার বিস্তার অনেক দূর- কোনটা রেখে কোনটা বলি।
আপনার কথায় পুরোপুরি একমত, প্রায় প্রতিটা পরিবারেই ধর্মের কোন না কোন বই থাকবেই যেখানে নিজের দেশ, জাতীয় বীর, দেশের ইতিহাস সব অনুপস্থিত।
বাংলাদেশের খুব কম পরিবারেই খুব কম মানুষই জানে আমাদের বীরশ্রেষ্ঠদের নাম, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান, বঙ্গবন্ধুর অসামান্য কীর্তি, যুদ্ধে রাজাকারদের ভূমিকা ।
মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে খুব কৌশলেই আমাদের ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। তবে এটাও সত্যি সেই আধাঁর কাটতে শুরু করেছে। নতুন প্রজন্মের বাবা মারা আগের চেয়ে অনেক বেশী সচেতন।
স্বপ্ন দেখছি, আশা করছি জয় একদিন আমাদের হবেই হবে।
জয় বাংলা। ভাল থাকবেন।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

সকল কিছুর (ভালো এবং মন্দ) শুরু পরিবার থেকেই ----

____________________________

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আসলেই তাই।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।